الركن الأول: شهادة أن لا إله إلا الله وأن محمداً رسول الله.
প্রথম স্তম্ভ ঃ “আল্লাহ ছাড়া কোন সত্য উপাস্য নেই এবং মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আল্লাহর রাসূল” এ স্যা দেওয়া।
এ দু’ স্যা ইসলামে প্রবেশ পথ, ও তার মহান স্তম্ভ। কোন ব্যক্তি মুসলিম হতে পারবে না যতন না সে এ দু’ স্যা মুখে উচ্চারণ করবে ও স্যাদ্বয়ের দাবী অনুযায়ী আমল করবে।
আর এ স্যা দানের মাধ্যমেই এক কাফির মুসলিম হয়ে যায়।
১- معنى شهادة أن لا إله إلا الله:
১Ñ আল্লাহ ছাড়া কোন সত্য উপাস্য নেই এই স্যা দানের অর্থ ঃ
আর তা হলো ঃ এর অর্থ জেনে ইহা মুখে উচ্চারণ করা, প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য ভাবে এর দাবী ও চাহিদা অনুযায়ী আমল করা, আর এর অর্থ না জেনে এবং এর দাবী অনুযায়ী আমল না করে শুধু মুখে পাঠ করা সকলের ঐক্যমতে কোন উপকারে আসেনা। বরং তার বিরূদ্ধে হুজ্জত হবে।
আর (لا إله إلا الله)লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ এর অর্থ হলো ঃ এক আল্লাহ সুবহানাহু ও তা‘আলা ছাড়া প্রকৃত পে কোন সত্য মা‘বুদ-উপাস্য নেই।
এ কালেমার দু’টি রুক্ন রয়েছে। (النفي والإثبات)আন্নাফি-অস্বীকৃতি জানানো, ওয়াল ইছবাত-স্বীকৃতি জানানো।
অর্থাৎ-আল্লাহ ছাড়া সব কিছুর উপাসনা অস্বীকার করা, এবং সে উপাসনা একমাত্র অদ্বিতীয় আল্লাহর জন্য সাব্যস্ত করা, যার কোন অংশীদার নেই। তাগুতের অস্বীকার করাও এই কালেমার অন্তর্ভুক্ত।
তাগুত-হলো ঃ আল্লাহকে ছেড়ে মানুষ, পাথর, বৃ ও প্রবৃত্তি ইত্যাদির পূঁজা-উপাসনা করা। আর তাকে (তাগুতকে) ঘৃণা করা ও তা হতে নিজেকে মুক্ত ঘোষণা করাও এ কালেমার অন্তর্ভুক্ত।
অতঃপর ঃ যে ব্যক্তি এই কালেমা মুখে উচ্চারণ করেছে অথচ আল্লাহ ছাড়া যে সকল বস্তুর ইবাদাত করা হয় তা অস্বীকার করে নাই সে এই কালেমার দাবী পূরণ করে নাই।
এ প্রসংগে আল্লাহ তা‘আলা বলেন ঃ
وإلهكم إله واحد لا إله إلا هو الرحمن الرحيم [سورة البقرة، الآية: ১৬৩].
অর্থ ঃ তোমাদের ইলাহ্-উপাস্য হলেন এক ও অদ্বিতীয়, আর সে মহান করুনাময় দয়ালু ব্যতীত সত্যিকার কোন মা‘বুদ- উপাস্য নেই। [সূরা আল-বাক্বারাহ-আয়াত-১৬৩]
তিনি আরো বলেন ঃ
لا إكراه في الدِّين قد تبين الرشد من الغي فمن يكفر بالطاغوت ويؤمن بالله فقد استمسك بالعروة الوثقى لا انفصام لها والله سميع عليم[سورة البقرة، الآية: ২৫৬].
অর্থ ঃ দ্বীন সম্পর্কে জোর-জবরদস্তি নাই, সত্য পথ ভ্রান্ত পথ হতে সুস্পষ্ট হয়েছে। যে তাগুতকে অস্বীকার করবে ও আল্লাহকে বিশ্বাস করবে সে এমন এক মযবূত হাতল ধরবে যাহা কখনও ভাঙ্গবে না। আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞানী। [সূরা আল-বাক্বারাহ-আয়াত-২৫৬]
আর (الإله)ইলাহ্ এর অর্থ ঃ ইলাহ্ অর্থ সত্য মা‘বুদ-উপাস্য।
আর যে ব্যক্তি এই বিশ্বাস করে যে ইলাহ্-উপাস্য হলেন তিনি যিনি সৃষ্টিকর্তা, রিযিকদাতা, বা নতুন কিছু আবিস্কারে মতাশীল, এর দ্বারাই ঈমান সৌন্দর্য লাভ করে, ইবাদাতের মাধ্যমে আল্লাহর একাত্বতা ঘোষণা করা ছাড়াই।
সে ব্যক্তির (لا إله إلا الله) লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ “আল্লাহ ছাড়া সত্য কোন উপাস্য নেই” মুখে উচ্চারণ করে ইসলামে প্রবেশ করা দুনিয়াতে কোন উপকারে আসবে না। আর আখিরাতে স্থায়ী শাস্তি হতে এই কালেমা তাকে মুক্তি দিবে না।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন ঃ
قل من يرزقكم من السماء والأرض أمن يملك السمع والأبصار ومن يخرج الحي من الميت ويخرج الميت من الحي ومن يدبر الأمر فسيقولون الله فقل أفلا تتقون[سورة يونس، الآية: ৩১].
অর্থ ঃ বল ঃ কে তোমাদেরকে আকাশ ও পৃথিবী হতে জীবনোপকরণ সরবরাহ করে অথবা শ্রবণ ও দৃষ্টি শক্তি কার কর্তৃত্বাধীন ? কে জীবিতকে মৃত হতে নির্গত করে এবং কে মৃতকে জীবিত হতে নির্গত করে এবং কে সকল বিষয় নিয়ন্ত্রণ করে ? তখন তারা বলবে ঃ আল্লাহ। বল ঃ তবুও কি তোমরা সাবধান হবেনা ? [সূরা য়ূনুস-আয়াত-৩১]
তিনি আরো বলেন ঃ
ولئن سألتهم من خلقهم ليقولن الله فأنىّ يؤ فكون
[سورة الزخرف، الآية:৮৭].
অর্থ ঃ যদি তুমি তাদেরকে জিজ্ঞাসা কর, কে তাদেরকে সৃষ্টি করেছে, তারা অবশ্যই বলবে ঃ আল্লাহ। তবুও তারা কোথায় ফিরছে ?। [সূরা আল-যুখ্রুফ-আয়াত-৮৭]
২- شروط كلمة التوحيد:
২Ñ কালেমায়ে তাওহীদ এর শর্তসমূহ ঃ
(১) ইতিবাচক ও নেতিবাচক ভাবে অর্থ জানা, যা অজ্ঞতার পরিপন্থী।
নেতিবাচক হলো আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো জন্য ইবাদাত সাব্যস্ত না করা। আর ইতিবাচক হলো তা (ইবাদাত) এককভাবে তাঁর জন্য সাব্যস্ত করা। তাঁর কোন অংশীদার নেই তিনিই একমাত্র ইবাদাতের মালিক ও হক্বদার।
(২) এই কালেমার প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস রাখা, যা সন্দেহের পরিপন্থী।
অর্থাৎ ঃ এই কালেমার দাবীর প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস রেখে আন্ত-রিকভাবে নিশ্চিত হয়ে মুখে উচ্চারণ করা।
(৩) এই কালেমাকে মনে প্রাণে গ্রহণ করা, যা প্রত্যাখ্যাণের পরিপন্থী।
আর তা হলো এই কালেমার সকল দাবী-চাহিদা ও তার বক্তব্য গ্রহণ করা। সংবাদ সমূহের প্রতি বিশ্বাস রাখা, আদেশ সমূহ পালন করা। নিষেধ সমূহ হতে বিরত থাকা। কুরআন ও হাদীসের দলীল পরিত্যাগ ও অপব্যাখ্যা না করা।
(৪) অনুগত হওয়া, যা ছেড়ে দেওয়ার পরিপন্থী। আর তা হলো এই কালেমা যে সকল বিধানের নির্দেশ দিয়েছে তা প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য ভাবে আনুগত্য করা।
(৫) (এই কালেমাকে) সত্য জানা, যা মিথ্যার পরিপন্থী। আর তা হলো বান্দা এই কালেমাকে সত্য জেনে অন্তর হতে উচ্চারণ করবে।
এই কালেমা পাঠ কারীর অন্তর তার কথা মোতাবেক হবে, এবং তার বাহ্যিক অবস্থা আভ্যান্তরীণ অবস্থার মুয়াফিক হবে।
অতঃপর যে ব্যক্তি এই কালেমা মুখে উচ্চারণ করেছে আর তার দাবীকে অস্বীকার করেছে নিশ্চয়ই তার এই মুখে উচ্চারণ তার কোন কাজে আসবে না, যেমন মুনাফিকদের অবস্থা ছিল। তারা এই কালেমা মুখে উচ্চারণ করতো অন্তরে অস্বীকার করতো।
(৬) পূর্ণ একনিষ্টতা থাকা, যা শিরকের পরিপন্থী। আর তা হলো বান্দা আমলকে নেক নিয়াতের দ্বারা শিরকের সকল প্রকারের গ্লানি হতে মুক্ত রাখবে।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন ঃ
وما أمروا إلا ليعبدوا الله مخلصين له الدين حنفاء
[سورة البينة، الآية: ৫].
অর্থ ঃ তারা তো আদিষ্ট হয়েছিল আল্লাহর আনুগত্যে বিশুদ্ধচিত্ত হয়ে একনিষ্ঠভাবে ইবাদাত করার। [সূরা আল-বায়্যিনা-আয়াত-৫]
(৭) এই কালেমার সাথে মুহাব্বাত-ভালবাসা রাখা, যা বিদ্বেষের পরিপন্থী।
আর ইহা বাস্তবায়িত হবে, এই কালেমাকে, তার দাবীকে, তার নির্দেশিত বিধানকে এবং যারা এই কালেমার শর্ত মোতাবেক চলে তাদেরকে ভাল বাসার মাধ্যমে। আর উল্লেখিত কথা গুলোর বিপরীত কথার সাথে বিদ্বেষ রাখার মাধ্যমে।
এর নিদর্শন হলো ঃ আল্লাাহর প্রিয় বস্তুকে প্রাধান্য দেওয়া, যদিও তা প্রবৃত্তির বিরোধ হয়। আর আল্লাহর যা অপছন্দ তা অপছন্দ করা, যদিও তার দিকে প্রবৃত্তি ধাবিত হয়। আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সাথে যাদের বন্ধুত্ব রয়েছে তাঁদের সাথে বন্ধুত্ব রাখা। আর আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সাথে যাদের শত্র“তা রয়েছে তাদের সাথে শত্র“তা রাখা।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন ঃ
قد كانت لكم أسوة حسنة في إبراهيم والذين معه إذ قالوا لقومهم إنا برآء منكم ومما تعبدون من دون الله كفرنا بكم وبدأ بيننا وبينكم العداوة والبغضاء أبداً حتى تؤمنوا بالله وحده [سورة الممتحنة، الآية: ৪].
অর্থ ঃ তোমাদের জন্য ইব্রাহীম ও তাঁর অনুসারীদের মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ, তারা তাদের সম্প্রদায়কে বলেছিল, তোমাদের সঙ্গে এবং তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে যার ইবাদাত কর তার সঙ্গে আমাদের কোন সম্পর্ক নাই। আমরা তোমাদেরকে মানি না। তোমাদের ও আমাদের মধ্যে শুরু হল শত্র“তা ও বিদ্বেষ চিরকালের জন্য, যতন না তোমরা এক আল্লাহর প্রতি ঈমান আন। [সূরা আল-মুম্তাহানা-আয়াত-৪]
তিনি আরো বলেন ঃ
ومن الناس من يتخذ من دون الله أنداداً يحبونهم كحب الله والذين أمنوا أشدّ حباّ لله سورة البقرة، الآية:১৬৫].
অর্থ ঃ তথাপি কেহ কেহ আল্লাহ ছাড়া অপরকে আল্লাহর সমক্যরূপে গ্রহণ করে এবং আল্লাহকে ভাল বাসার ন্যায় তাদেরকে ভালবাসে, কিন্তু যারা ঈমান এনেছে আল্লাহর প্রতি তাদের ভালবাসা দৃঢ়তম। [সূরা আল-বাক্বারাহ-আয়াত-১৬৫]
আর যে ব্যক্তি ইখলাস ও ইয়াকীনের সাথে (لا إله إلا الله) লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ, “আল্লাহ ছাড়া সত্য কোন মা‘বুদ নেই” একথা বলবে এবং সকল পাপাচার, বিদ‘আত, ছোট শিরক ও বড় শিরক হতে মুক্ত থাকবে, সে দুনিয়াতে পথভ্রষ্ট হতে হিদায়াত পাবে। আর আখিরাতে শাস্তি হতে নিরাপত্তা পাবে। তার উপর জাহান্নাম হারাম হয়ে যাবে।
এই শর্ত গুলো পূর্ণ করা বান্দার উপর আবশ্যক। আর এই শর্ত গুলো পূর্ণ করা অর্থ হলো যে, এই শর্ত গুলো একজন বান্দার জীবনে সমাবেশ ঘটা এবং তা জানা অত্যাবশ্যক হওয়া। তবে ইহা মুখস্থ করা জরূরী নয়।
আর এই মহান কালেমা (لا إله إلا الله) (লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু) হলো তাওহীদুল উলুহীয়্যাহ, যা তাওহীদের প্রকার সমূহের মধ্যে অত্যন্ত গুরুত্ব পূর্ণ এক প্রকার তাওহীদ, এ বিষয়েই নাবীগণ ও তাঁদের সম্প্রদায়ের মাঝে মতনৈক্য সংঘটিত হয়েছিল। আর এরই বাস্তবায়নের জন্যে রাসূলগণকে প্রেরণ করা হয়েছিল।
যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন ঃ
ولقد بعثنا في كل أمة رسولا أن اعبدوا الله واجتنبوا الطاغوت [سورة النحل، الآية: ৩৬].
অর্থ ঃ আল্লাহর ইবাদাত করার ও তাগুতকে বর্জন করার নির্দেশ দেওয়ার জন্য আমরা তো প্রত্যেক জাতির মধ্যেই রাসূল পাঠাইয়াছি। [সূরা আল-নাহ্ল-আয়াত-৩৬]
তিনি আরো বলেন ঃ
وما أرسلنا من قبلك من رسول إلا نوحي إليه أنه لا إله إلا أنا فاعبدون سورة الأنبياء، الآية: ২৫].
অর্থ ঃ আমরা তোমার পূর্বে যে রাসূলই প্রেরণ করেছি তাঁর নিকটে এই ওহী অবতীর্ণ করেছি যে, আমি ব্যতীত অন্য কোন সত্য মা‘বুদ নেই, সুতরাং তোমরা আমারই ইবাদাত কর। [সূরা আল-আম্বিয়া,আয়াত-২৫]
আর যখন শুধু তাওহীদ বলা হবে, তখন তা হতে মুরাদ-উদ্দেশ্য হবে তাওহীদুল উলূহীয়্যাহ।
تعريف توحيد الألوهية: তাওহীদুল উলূহীয়্যাহ এর সংজ্ঞা ঃ নিশ্চয়ই আল্লাহ তাঁর সকল সৃষ্টি জীবের উলূহীয়াত ও উবূদীয়াতের মালিক, তিনি এককভাবে ইবাদাতের মালিক তাঁর কোন শরীক নেই এই স্বীকৃতি দেওয়া।
أسماؤه : তার (তাওহীদুল উলূহীয়্যার) নাম সমূহ ঃ এই তাওহীদকে তাওহীদুল উলূহীয়্যাহ বা ইলাহীয়্যাহ বলা হয়েছে কারণ একনিষ্টভাবে ইহা নিছক তা‘আল্লুহ (تأله) এর উপর প্রতিষ্ঠিত। একক আল্লাহর জন্য অধিক ভাল বাসাকে তা‘আল্লুহ বলা হয়।
নিুে বর্ণিত নাম গুলো তাওহীদুল উলূহীয়্যার নাম ঃ
(ক) তাওহীদুল ইবাদাহ বা উবূদীয়াহ ঃ কারণ ইহা এক আল্লাহর জন্য ইবাদাত হওয়ার উপর প্রতিষ্ঠিত।
(খ) তাওহীদুল ইরাদা ঃ কারণ ইহা আমলের দ্বারা আল্লাহর সন্তষ্টি কামনার উপর প্রতিষ্ঠিত।
(গ) তাওহীদুল কাছদ ঃ কারণ ইহা এক আল্লাহর জন্য ইবাদাতকে একনিষ্ঠ অত্যাবশ্যক করে এমন একক ইচ্ছার উপর প্রতিষ্ঠিত।
(ঘ) তাওহীদুত ত্বলাব ঃ কারণ ইহা আল্লাহর কাছে একনিষ্ঠভাবে চাওয়ার উপর প্রতিষ্ঠিত।
(ঙ) তাওহীদুল আমল ঃ কারণ ইহা আল্লাহ তা‘আলার জন্য আমলকে একনিষ্ঠ করার উপর প্রতিষ্ঠিত।
حكم توحيد الألوهية: তাওহীদুল উলূহীয়্যাতের হুকুম বা বিধান ঃ তাওহীদুল উলূহীয়্যাহ সকল বান্দাদের উপর ফরয। বান্দারা কেবল মাত্র এর দ্বারাই ইসলামে প্রবেশ করে। আর এর প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস ও আমল করলেই জাহান্নাম হতে মুক্তি পাবে। প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তির উপর এ বিশ্বাস এবং এ মোতাবেক আমল করা সর্ব প্রথম ওয়াজিব। আর এর দ্বারাই দাও‘আত ও শিা শুরু করা সর্ব প্রথম ওয়াজিব। যারা এর বিপরীত ধারণা করে তারা এতে মতনৈক্য করেছে।
কুরআন ও হাদীসে এর ফারযিয়াতের নির্দেশ রয়েছে। আল্লাহ এরই বাস্তবায়নের জন্য সৃষ্টিজীব সৃষ্টি করেছেন এবং কিতাব সমূহ অবতীর্ণ করেছেন।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন ঃ
قل إنما أمرت أن أعبد الله ولا أشرك به إليه أدعو وإليه مآب[سورة الرعد، الآية:৩৬].
অর্থ ঃ বল ঃ আমি তো আল্লাহর ইবাদাত করতে ও তাঁর কোন শরীক না করতে আদিষ্ট হয়েছি। আমি তাঁরই প্রতি আহ্বান করি এবং তাঁরই নিকট আমার প্রত্যাবর্তন। [সূরা রা‘দ-আয়াত-৩৬]
তিনি আরো বলেন ঃ
وما خلقت الجن والإنس إلا ليعبدون [سورة الذريات، الآية: ৫৬].
অর্থ ঃ আমি সৃষ্টি করেছি জ্বিন এবং মানুষকে এই জন্য যে, তারা আমারই ইবাদাত করবে। [সূরা আয্-যারিয়াত-আয়াত-৫৬]
নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মুআয (রাযিআল্লাহু আনহু) কে বলেন ঃ
((إنك تأتي قوماً من أهل الكتاب فليكن أول ما تدعوهم إليه شهادة أن لا إله إلا الله، فإن هم أطاعوك لذلك فأعلمهم أن الله افترض عليهم خمس صلوات في كل يوم وليلة؛ فإن هم أطاعوك لذلك فأعلمهم أن الله افترض عليهم صدقة تؤخذ من أغنيائهم فترد على فقرائهم)) الحديث، [أخرجه البخاري ومسلم].
অর্থ ঃ (হে মুআয রাযিআল্লাহু আনহু) তুমি আহলে কিতাব সম্প্রদায়ের নিকট যাচ্ছো। সর্ব প্রথম তাদেরকে (লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহুÑ) আল্লাহ ছাড়া কোন সত্য মা‘বুদ নেই-এই দিকে আহ্বান কর। যদি তারা এই দাও‘আত গ্রহণ করে তোমার আনুগত্য করে, তখন তুমি তাদেরকে জানাও যে, আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের উপর দিনে-রাতে পাঁচ ওয়াক্ত নামায ফরয করেছেন। যদি তারা ইহা গ্রহণ করে, তখন তুমি তাদেরকে জানাও যে, আল্লাহ তোমাদের উপর যাকাত ফরয করেছেন, ইহা ধনীদের কাছ থেকে নেওয়া হবে এবং দরিদ্রদেরকে দেওয়া হবে। আল-হাদীস, [বুখারী ও মুসলিম]
এই তাওহীদ যাবতীয় আমল সমূহের মধ্যে অধিকতর উত্তম আমল ও অধিক পাপ মোচন কারী। এ ব্যাপারে ইমাম বুখারী ও মুসলিম সাহাবী ইত্বান (রাযিআল্লাহু আনহু) হতে নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) থেকে হাদীস বর্ণনা করেছেন ঃ
((فإن الله حرم على النار من قال: لا إله إلا الله يبتغي بذلك وجه الله))
অর্থ ঃ নিশ্চয়ই আল্লাহ ঐ ব্যক্তির জন্য জাহান্নামকে হারাম করেছেন যে, ব্যক্তি আল্লাহর সন্তষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে লাÑইলাহা ইল্লাল্লাহ বলেছে।
(চ) সমস্ত রাসূলগণের এই কালেমার উপর ঐক্যমত ঃ
সমস্ত রাসূলগণ তাঁদের সম্প্রদায়কে কালেমা লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ এর দিকে দাও‘আত দানে এবং ইহা হতে বিমুখের ভয় প্রদর্শনের ব্যাপারে একমত ছিলেন।
যেমন কুরআন কারীমে অনেক আয়াতে এর বর্ণনা এসেছে।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন ঃ
وما أرسلنا من قبلك من رسولٍ إلا نوحي إليه أنه لا إله إلا أنا فاعبدونِ [سورة الأنبياء، الآية: ২৫].
অর্থ ঃ আমরা তোমার পূর্বে যে রাসূলই প্রেরণ করেছি তাঁর নিকটে এই ওহী অবতীর্ণ করেছি যে, আমি ব্যতীত অন্য কোন সত্য মা‘বুদ নেই, সুতরাং তোমরা আমারই ইবাদাত কর। [সূরা আল-আম্বিয়া-আয়াত-২৫]
রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এই কালেমার দিকে দাও‘আত দানে নাবীদের একমতের এক সুন্দর দৃষ্টান্ত বর্ণনা করেছেন।
তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন যে ঃ
((الأنبياء إخوة لعلات، أمهاتهم شتى ودينهم واحد))
অর্থ ঃ নাবীগণ এক অপরে বৈমাত্রেয় ভাই ছিলেন। তাঁদের মা ভিন্ন ছিল, আর দ্বীন একছিল।
সকল নাবীদের মূল দ্বীন ছিল একই তা হলো তাওহীদ, যদিও শরী‘আতের অন্যান্য বিধি-বিধান ভিন্ন ছিল। যেমন কখনো ছেলে-মেয়ে মায়ের দিক হতে ভিন্ন হয়, আর তাদের পিতা এক।
৩- معنى شهادة أن محمداً رسول الله:
৩ Ñ মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আল্লাহর রাসূল এই স্যা দানের অর্থ ঃ
(ক) নিশ্চয়ই মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আল্লাহর রাসূল এ স্যা দানের অর্থ হলো ঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যা আদেশ করেছেন তা পালন করা, যে সব খবর দিয়েছেন তা সত্য বলে বিশ্বাস করা, এবং যেগুলি সম্পর্কে নিষেধ ও সতর্ক করেছেন সেগুলি থেকে বিরত থাকা, আর একমাত্র তিনি যে বিধান দান করেছেন সেমত আল্লাহর ইবাদাত করা।
(খ) মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আল্লাহর রাসূল এ স্যা বাস্তবায়ন ঃ
মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আল্লাহর রাসূল এ স্যা বাস্তবায়ন হবে ঈমান ও পূর্ণ ইয়াকীন দ্বারা। নিশ্চয়ই মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসূল, যাকে সকল মানব ও জ্বিন জাতীর নিকট প্রেরণ করেছেন। তিনি শেষ নাবী ও রাসূল। নিশ্চয়ই তিনি আল্লাহর নৈকট্যর্জনকারী বান্দা। তাঁর মাঝে উলূহীয়্যাতের কোন বৈশিষ্ট নেই। তাঁর অনুসরণ করা, তাঁর আদেশ নিষেধের সম্মান করা। কথায়, কাজে ও বিশ্বাসে তাঁর সুন্নাতকে আঁকড়ে ধরা।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন ঃ
قل يا أيّها النّاس إنِّي رسول الله إليكم جميعاً [سورة الأعراف، الآية: ১৫৮].
অর্থ ঃ বল ঃ হে মানুষ ! আমি তোমাদের সকলের জন্য আল্লাহর রাসূল। [সূরা আল-আ‘রাাফ-আয়াত-১৫৮]
তিনি আরো বলেন ঃ
وما أرسلناك إلا كافة للناس بشيراً ونذيراً [سورة سبأ، الآية: ২৮].
অর্থ ঃ আমরা তো তোমাকে সমগ্র মানবজাতির প্রতি সুসংবাদ্দাতা ও সতর্ককারীরূপে প্রেরণ করেছি। [সূরা সাবা-আয়াত-২৮]
তিনি আরো বলেন ঃ
ما كان محمد أبا أحدٍ من رجالكم ولكن رسول الله وخاتم النبيين [سورة الأحزاب، الآية: ৪০].
অর্থ ঃ মুহাম্মাদ তোমাদের মধ্যে কোন পুরুষের পিতা নহে, বরং সে আল্লাহর রাসূল এবং শেষ নাবী। [সূরা আল-আহ্যাব-আয়াত-৪০]
তিনি আরো বলেন ঃ
قل سبحان ربّي هل كنت إلاّ بشراً رّسولاً [سورة الإسراء، الآية: ৯৩].
অর্থ ঃ বল ঃ আমার প্রতিপালক পবিত্র ! আমি কেবলমাত্র একজন মানুষ যাকে রাসূল বানানো হয়েছে। [সূরা আল-ইস্রা-আয়াত-৯৩]
উক্ত স্যা নিুে বর্ণিত বিষয় গুলোকে অন্তর্ভুক্ত করে ঃ
প্রথমত ঃ তাঁর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) রিসালাতের স্বীকৃতি দেওয়া ও অন্তরে তার বিশ্বাস রাখা।
দ্বিতীয়ত ঃ এর উচ্চারণ করা ও মুখের দ্বারা প্রকাশ্য ভাবে এর স্বীকৃতি দেওয়া।
তৃতীয়ত ঃ যে সত্য তিনি নিয়ে এসেছেন তা অনুসরণ করা, এবং যে বাতিল বিষয় সমূহ নিষেধ করেছেন তা বর্জন করা।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন ঃ
فآمنوا بالله ورسوله النبيّ الأمي الذي يؤمن بالله وكلماته واتبعوه لعلكم تهتدون [سورة الأعراف، الآية:১৫৮].
অর্থ ঃ সুতরাং তোমরা ঈমান আন আল্লাহর প্রতি ও তাঁর বার্তাবাহক উম্মী নাবীর প্রতি, যে আল্লাহ ও তাঁর বাণীতে ঈমান আনে এবং তোমরা তাঁর অনুসরণ কর যাতে তোমরা হিদায়াত প্রাপ্ত হতে পার। [সূরা আল-আ‘রাফ-আয়াত-১৫৮]
চতুর্থত ঃ রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যে সব খবর দিয়েছেন তা সত্য বলে বিশ্বাস করা।
পঞ্চমত ঃ জান, মাল, ছেলে-মেয়ে, পিতা-মাতা, ও সকল মানুষের ভালবাসার চাইতে তাঁকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে) অধিক ভালবাসা। কারণ তিনি আল্লাহর রাসূল, আর তাঁকে ভালবাসাই হলো আল্লাহর ভালবাসার অন্তর্ভুক্ত।
আর তাঁর প্রকৃত মুহাব্বাত হল তাঁর আদেশ সমূহের আনুগত্য করে তাঁর নিষেধ সমূহ হতে বিরত থেকে তাঁর অনুসরণ করা। তাঁকে সাহায্য করা, তার সাথে বন্ধুত্ব রাখা।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন ঃ
قل إن كنتم تحبّون الله فاتبعوني يحببكم الله ويغفر لكم ذنوبكم [سورة آل عمران،الآية: ৩১].
অর্থ ঃ বল ঃ তোমরা যদি আল্লাহকে ভালবাস তবে আমাকে অনুসরণ কর, আল্লাহ তোমাদেরকে ভালবাসবেন এবং তোমাদের অপরাধ মা করবেন। [সূরা আলি-ইমরান-আয়াত-৩১]
নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন ঃ
((لا يؤمن أحدكم حتى أكون أحب إليه من والده وولده والناس أجمعين)) [متفق عليه من حديث أنس - -.].
অর্থ ঃ তোমাদের কেহ পূর্ণ মু‘মিন হতে পারে না যতন আমি তার নিকট তার পিতা-মাতা, ছেলে-মেয়ে ও সকল মানুষের চেয়ে অধিকতর প্রিয় না হবো। [ইমাম বুখারী ও মুসলিম এই হাদীসটি আনাস (রাযিআল্লাহু আনহু) হতে বর্ণনা করেছেন]
আল্লাহ তা‘আলা বলেন ঃ
فالّذين آمنوا به وعزّروه ونصروه واتبعو النور الذي أنزل معه أولئك هم المفلحون [سورة الأعراف،الآية:১৫৭].
অর্থ ঃ সুতরাং যারা তাঁর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে, তাঁকে সম্মান করে, তাঁকে সাহায্য করে এবং যে নূর তাঁর সাথে অবতীর্ণ হয়েছে উহার অনুসরণ করে তাঁরাই সফলকাম। [সূরা আল-আ‘রাফ-আয়াত-১৫৭]
ষষ্টত ঃ তাঁর সুন্নাতের প্রতি আমল করা। তাঁর কথাকে সকলের কথার উপর প্রাধান্য দেওয়া, নির্দ্বিধায় তা গ্রহণ করা। তাঁর শরী‘আত মোতাবেক বিধান পরিচালনা করা এবং তাঁর প্রতি
সন্তুষ্ট থাকা।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন ঃ
فلا وربِّك لا يؤمنون حتىّ يحكموك فيما شحر بينهم ثم لا يجدوا في أنفسهم حرجاًُ مما قضيت ويسلّموا تسليماً [سورة النساء، الآية:৬৫].
অর্থ ঃ কিন্ত না, তোমার প্রতিপালকের শপথ ! তারা মু‘মিন হবে না যতন পর্যন্ত তারা তাদের নিজেদের বিবাদ-বিস্মবাদের বিচার ভার তোমার উপর অর্পণ না করে, অতঃপর তোমার সিদ্ধান্ত সমন্ধে তাদের মনে কোন দ্বিধা না থাকে এবং সর্বান্তকরণে উহা মানিয়া না লয়। [সূরা আন-নিসা-আয়াত-৬৫]
৪- فضيلة الشهادتين:
৪- স্যা দ্বয়ের ফযিলত ঃ
কালেমায়ে তাওহীদ এর অনেক ফযিলত রয়েছে যা কুরআন হাদীসে বর্ণনা করা হয়েছে, তার কিছু ফযিলত নিুে বর্ণিত হল ঃ
(ক) ইহা ইসলামের প্রথম স্তম্ভ, দ্বীনের মূল, মিল্লাতের ভিত্তি, এর দ্বারাই বান্দা সর্ব প্রথম ইসলামে প্রবেশ করে। এর বাস্ত-বায়নের জন্যই আসমান জমিনের সৃষ্টি।
(খ) ইহা জান মাল হিফাযতের কারণ, যে ব্যক্তি ইহা উচ্চারণ করবে তার জান মাল হিফাযতের কারণ হয়ে দাঁড়াবে।
(গ) সাধারণ ভাবে ইহা সর্ব উত্তম আমল, অধিক পাপ মোচন কারী, জান্নাতে প্রবেশ ও জাহান্নাম হতে মুক্তির কারণ। যদি আসমান ও জমিন এক পাল্লায় রাখা হয় আর লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ অপর পাল্লায় রাখা হয় তবে “লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ” এর পাল্লা ঝুঁকে যাবে বা ভারী প্রমাণিত হবে।
তাই ইমাম মুসলিম উবাদাহ (রাযিআল্লাহু আনহু) হতে মারফু‘ হাদীস বর্ণনা করেছেন ঃ
((من شهد أن لا إله إلا الله وأن محمداً عبده ورسوله حرّم الله عليه النّار))
অর্থ ঃ যে ব্যক্তি এই স্যা প্রদান করবে যে, আল্লাহ ছাড়া কোন সত্য উপাস্য নেই এবং মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁর বান্দা ও রাসূল, আল্লাহ তার জন্য জাহান্নাম কে হারাম করে দিবেন।
(ঘ) আর ইহাতে যিকির, দু‘আ ও প্রশংসা সন্নিবেশিত রয়েছে। দু‘আউল ইবাদাহ ও দু‘আউল মাসআলা এর অন্তর্ভুক্ত। আর এ যিকির অধিক মাত্রায় পাওয়া যায় এবং ইহা অতি সহজে অর্জন করা যায়। ইহা পবিত্র কালেমা, দৃঢ় হাতল, কালেমাতুল ইখলাস, এর বাস্তবায়নের জন্য আসমান জমিনের সৃষ্টি। এর জন্যই সৃষ্টি জীবের সৃষ্টি, রাসূলগণের প্রেরণ, কিতাব সমূহের অবতীর্ণ, এরই পরিপূর্ণতার জন্য ফরয ও সুন্নাত প্রবর্তন হয়েছে। আর এরই জন্য জিহাদের তরবারী উমুক্ত করা হয়েছে।
প্রথম স্তম্ভ ঃ “আল্লাহ ছাড়া কোন সত্য উপাস্য নেই এবং মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আল্লাহর রাসূল” এ স্যা দেওয়া।
এ দু’ স্যা ইসলামে প্রবেশ পথ, ও তার মহান স্তম্ভ। কোন ব্যক্তি মুসলিম হতে পারবে না যতন না সে এ দু’ স্যা মুখে উচ্চারণ করবে ও স্যাদ্বয়ের দাবী অনুযায়ী আমল করবে।
আর এ স্যা দানের মাধ্যমেই এক কাফির মুসলিম হয়ে যায়।
১- معنى شهادة أن لا إله إلا الله:
১Ñ আল্লাহ ছাড়া কোন সত্য উপাস্য নেই এই স্যা দানের অর্থ ঃ
আর তা হলো ঃ এর অর্থ জেনে ইহা মুখে উচ্চারণ করা, প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য ভাবে এর দাবী ও চাহিদা অনুযায়ী আমল করা, আর এর অর্থ না জেনে এবং এর দাবী অনুযায়ী আমল না করে শুধু মুখে পাঠ করা সকলের ঐক্যমতে কোন উপকারে আসেনা। বরং তার বিরূদ্ধে হুজ্জত হবে।
আর (لا إله إلا الله)লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ এর অর্থ হলো ঃ এক আল্লাহ সুবহানাহু ও তা‘আলা ছাড়া প্রকৃত পে কোন সত্য মা‘বুদ-উপাস্য নেই।
এ কালেমার দু’টি রুক্ন রয়েছে। (النفي والإثبات)আন্নাফি-অস্বীকৃতি জানানো, ওয়াল ইছবাত-স্বীকৃতি জানানো।
অর্থাৎ-আল্লাহ ছাড়া সব কিছুর উপাসনা অস্বীকার করা, এবং সে উপাসনা একমাত্র অদ্বিতীয় আল্লাহর জন্য সাব্যস্ত করা, যার কোন অংশীদার নেই। তাগুতের অস্বীকার করাও এই কালেমার অন্তর্ভুক্ত।
তাগুত-হলো ঃ আল্লাহকে ছেড়ে মানুষ, পাথর, বৃ ও প্রবৃত্তি ইত্যাদির পূঁজা-উপাসনা করা। আর তাকে (তাগুতকে) ঘৃণা করা ও তা হতে নিজেকে মুক্ত ঘোষণা করাও এ কালেমার অন্তর্ভুক্ত।
অতঃপর ঃ যে ব্যক্তি এই কালেমা মুখে উচ্চারণ করেছে অথচ আল্লাহ ছাড়া যে সকল বস্তুর ইবাদাত করা হয় তা অস্বীকার করে নাই সে এই কালেমার দাবী পূরণ করে নাই।
এ প্রসংগে আল্লাহ তা‘আলা বলেন ঃ
وإلهكم إله واحد لا إله إلا هو الرحمن الرحيم [سورة البقرة، الآية: ১৬৩].
অর্থ ঃ তোমাদের ইলাহ্-উপাস্য হলেন এক ও অদ্বিতীয়, আর সে মহান করুনাময় দয়ালু ব্যতীত সত্যিকার কোন মা‘বুদ- উপাস্য নেই। [সূরা আল-বাক্বারাহ-আয়াত-১৬৩]
তিনি আরো বলেন ঃ
لا إكراه في الدِّين قد تبين الرشد من الغي فمن يكفر بالطاغوت ويؤمن بالله فقد استمسك بالعروة الوثقى لا انفصام لها والله سميع عليم[سورة البقرة، الآية: ২৫৬].
অর্থ ঃ দ্বীন সম্পর্কে জোর-জবরদস্তি নাই, সত্য পথ ভ্রান্ত পথ হতে সুস্পষ্ট হয়েছে। যে তাগুতকে অস্বীকার করবে ও আল্লাহকে বিশ্বাস করবে সে এমন এক মযবূত হাতল ধরবে যাহা কখনও ভাঙ্গবে না। আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞানী। [সূরা আল-বাক্বারাহ-আয়াত-২৫৬]
আর (الإله)ইলাহ্ এর অর্থ ঃ ইলাহ্ অর্থ সত্য মা‘বুদ-উপাস্য।
আর যে ব্যক্তি এই বিশ্বাস করে যে ইলাহ্-উপাস্য হলেন তিনি যিনি সৃষ্টিকর্তা, রিযিকদাতা, বা নতুন কিছু আবিস্কারে মতাশীল, এর দ্বারাই ঈমান সৌন্দর্য লাভ করে, ইবাদাতের মাধ্যমে আল্লাহর একাত্বতা ঘোষণা করা ছাড়াই।
সে ব্যক্তির (لا إله إلا الله) লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ “আল্লাহ ছাড়া সত্য কোন উপাস্য নেই” মুখে উচ্চারণ করে ইসলামে প্রবেশ করা দুনিয়াতে কোন উপকারে আসবে না। আর আখিরাতে স্থায়ী শাস্তি হতে এই কালেমা তাকে মুক্তি দিবে না।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন ঃ
قل من يرزقكم من السماء والأرض أمن يملك السمع والأبصار ومن يخرج الحي من الميت ويخرج الميت من الحي ومن يدبر الأمر فسيقولون الله فقل أفلا تتقون[سورة يونس، الآية: ৩১].
অর্থ ঃ বল ঃ কে তোমাদেরকে আকাশ ও পৃথিবী হতে জীবনোপকরণ সরবরাহ করে অথবা শ্রবণ ও দৃষ্টি শক্তি কার কর্তৃত্বাধীন ? কে জীবিতকে মৃত হতে নির্গত করে এবং কে মৃতকে জীবিত হতে নির্গত করে এবং কে সকল বিষয় নিয়ন্ত্রণ করে ? তখন তারা বলবে ঃ আল্লাহ। বল ঃ তবুও কি তোমরা সাবধান হবেনা ? [সূরা য়ূনুস-আয়াত-৩১]
তিনি আরো বলেন ঃ
ولئن سألتهم من خلقهم ليقولن الله فأنىّ يؤ فكون
[سورة الزخرف، الآية:৮৭].
অর্থ ঃ যদি তুমি তাদেরকে জিজ্ঞাসা কর, কে তাদেরকে সৃষ্টি করেছে, তারা অবশ্যই বলবে ঃ আল্লাহ। তবুও তারা কোথায় ফিরছে ?। [সূরা আল-যুখ্রুফ-আয়াত-৮৭]
২- شروط كلمة التوحيد:
২Ñ কালেমায়ে তাওহীদ এর শর্তসমূহ ঃ
(১) ইতিবাচক ও নেতিবাচক ভাবে অর্থ জানা, যা অজ্ঞতার পরিপন্থী।
নেতিবাচক হলো আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো জন্য ইবাদাত সাব্যস্ত না করা। আর ইতিবাচক হলো তা (ইবাদাত) এককভাবে তাঁর জন্য সাব্যস্ত করা। তাঁর কোন অংশীদার নেই তিনিই একমাত্র ইবাদাতের মালিক ও হক্বদার।
(২) এই কালেমার প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস রাখা, যা সন্দেহের পরিপন্থী।
অর্থাৎ ঃ এই কালেমার দাবীর প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস রেখে আন্ত-রিকভাবে নিশ্চিত হয়ে মুখে উচ্চারণ করা।
(৩) এই কালেমাকে মনে প্রাণে গ্রহণ করা, যা প্রত্যাখ্যাণের পরিপন্থী।
আর তা হলো এই কালেমার সকল দাবী-চাহিদা ও তার বক্তব্য গ্রহণ করা। সংবাদ সমূহের প্রতি বিশ্বাস রাখা, আদেশ সমূহ পালন করা। নিষেধ সমূহ হতে বিরত থাকা। কুরআন ও হাদীসের দলীল পরিত্যাগ ও অপব্যাখ্যা না করা।
(৪) অনুগত হওয়া, যা ছেড়ে দেওয়ার পরিপন্থী। আর তা হলো এই কালেমা যে সকল বিধানের নির্দেশ দিয়েছে তা প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য ভাবে আনুগত্য করা।
(৫) (এই কালেমাকে) সত্য জানা, যা মিথ্যার পরিপন্থী। আর তা হলো বান্দা এই কালেমাকে সত্য জেনে অন্তর হতে উচ্চারণ করবে।
এই কালেমা পাঠ কারীর অন্তর তার কথা মোতাবেক হবে, এবং তার বাহ্যিক অবস্থা আভ্যান্তরীণ অবস্থার মুয়াফিক হবে।
অতঃপর যে ব্যক্তি এই কালেমা মুখে উচ্চারণ করেছে আর তার দাবীকে অস্বীকার করেছে নিশ্চয়ই তার এই মুখে উচ্চারণ তার কোন কাজে আসবে না, যেমন মুনাফিকদের অবস্থা ছিল। তারা এই কালেমা মুখে উচ্চারণ করতো অন্তরে অস্বীকার করতো।
(৬) পূর্ণ একনিষ্টতা থাকা, যা শিরকের পরিপন্থী। আর তা হলো বান্দা আমলকে নেক নিয়াতের দ্বারা শিরকের সকল প্রকারের গ্লানি হতে মুক্ত রাখবে।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন ঃ
وما أمروا إلا ليعبدوا الله مخلصين له الدين حنفاء
[سورة البينة، الآية: ৫].
অর্থ ঃ তারা তো আদিষ্ট হয়েছিল আল্লাহর আনুগত্যে বিশুদ্ধচিত্ত হয়ে একনিষ্ঠভাবে ইবাদাত করার। [সূরা আল-বায়্যিনা-আয়াত-৫]
(৭) এই কালেমার সাথে মুহাব্বাত-ভালবাসা রাখা, যা বিদ্বেষের পরিপন্থী।
আর ইহা বাস্তবায়িত হবে, এই কালেমাকে, তার দাবীকে, তার নির্দেশিত বিধানকে এবং যারা এই কালেমার শর্ত মোতাবেক চলে তাদেরকে ভাল বাসার মাধ্যমে। আর উল্লেখিত কথা গুলোর বিপরীত কথার সাথে বিদ্বেষ রাখার মাধ্যমে।
এর নিদর্শন হলো ঃ আল্লাাহর প্রিয় বস্তুকে প্রাধান্য দেওয়া, যদিও তা প্রবৃত্তির বিরোধ হয়। আর আল্লাহর যা অপছন্দ তা অপছন্দ করা, যদিও তার দিকে প্রবৃত্তি ধাবিত হয়। আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সাথে যাদের বন্ধুত্ব রয়েছে তাঁদের সাথে বন্ধুত্ব রাখা। আর আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সাথে যাদের শত্র“তা রয়েছে তাদের সাথে শত্র“তা রাখা।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন ঃ
قد كانت لكم أسوة حسنة في إبراهيم والذين معه إذ قالوا لقومهم إنا برآء منكم ومما تعبدون من دون الله كفرنا بكم وبدأ بيننا وبينكم العداوة والبغضاء أبداً حتى تؤمنوا بالله وحده [سورة الممتحنة، الآية: ৪].
অর্থ ঃ তোমাদের জন্য ইব্রাহীম ও তাঁর অনুসারীদের মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ, তারা তাদের সম্প্রদায়কে বলেছিল, তোমাদের সঙ্গে এবং তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে যার ইবাদাত কর তার সঙ্গে আমাদের কোন সম্পর্ক নাই। আমরা তোমাদেরকে মানি না। তোমাদের ও আমাদের মধ্যে শুরু হল শত্র“তা ও বিদ্বেষ চিরকালের জন্য, যতন না তোমরা এক আল্লাহর প্রতি ঈমান আন। [সূরা আল-মুম্তাহানা-আয়াত-৪]
তিনি আরো বলেন ঃ
ومن الناس من يتخذ من دون الله أنداداً يحبونهم كحب الله والذين أمنوا أشدّ حباّ لله سورة البقرة، الآية:১৬৫].
অর্থ ঃ তথাপি কেহ কেহ আল্লাহ ছাড়া অপরকে আল্লাহর সমক্যরূপে গ্রহণ করে এবং আল্লাহকে ভাল বাসার ন্যায় তাদেরকে ভালবাসে, কিন্তু যারা ঈমান এনেছে আল্লাহর প্রতি তাদের ভালবাসা দৃঢ়তম। [সূরা আল-বাক্বারাহ-আয়াত-১৬৫]
আর যে ব্যক্তি ইখলাস ও ইয়াকীনের সাথে (لا إله إلا الله) লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ, “আল্লাহ ছাড়া সত্য কোন মা‘বুদ নেই” একথা বলবে এবং সকল পাপাচার, বিদ‘আত, ছোট শিরক ও বড় শিরক হতে মুক্ত থাকবে, সে দুনিয়াতে পথভ্রষ্ট হতে হিদায়াত পাবে। আর আখিরাতে শাস্তি হতে নিরাপত্তা পাবে। তার উপর জাহান্নাম হারাম হয়ে যাবে।
এই শর্ত গুলো পূর্ণ করা বান্দার উপর আবশ্যক। আর এই শর্ত গুলো পূর্ণ করা অর্থ হলো যে, এই শর্ত গুলো একজন বান্দার জীবনে সমাবেশ ঘটা এবং তা জানা অত্যাবশ্যক হওয়া। তবে ইহা মুখস্থ করা জরূরী নয়।
আর এই মহান কালেমা (لا إله إلا الله) (লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু) হলো তাওহীদুল উলুহীয়্যাহ, যা তাওহীদের প্রকার সমূহের মধ্যে অত্যন্ত গুরুত্ব পূর্ণ এক প্রকার তাওহীদ, এ বিষয়েই নাবীগণ ও তাঁদের সম্প্রদায়ের মাঝে মতনৈক্য সংঘটিত হয়েছিল। আর এরই বাস্তবায়নের জন্যে রাসূলগণকে প্রেরণ করা হয়েছিল।
যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন ঃ
ولقد بعثنا في كل أمة رسولا أن اعبدوا الله واجتنبوا الطاغوت [سورة النحل، الآية: ৩৬].
অর্থ ঃ আল্লাহর ইবাদাত করার ও তাগুতকে বর্জন করার নির্দেশ দেওয়ার জন্য আমরা তো প্রত্যেক জাতির মধ্যেই রাসূল পাঠাইয়াছি। [সূরা আল-নাহ্ল-আয়াত-৩৬]
তিনি আরো বলেন ঃ
وما أرسلنا من قبلك من رسول إلا نوحي إليه أنه لا إله إلا أنا فاعبدون سورة الأنبياء، الآية: ২৫].
অর্থ ঃ আমরা তোমার পূর্বে যে রাসূলই প্রেরণ করেছি তাঁর নিকটে এই ওহী অবতীর্ণ করেছি যে, আমি ব্যতীত অন্য কোন সত্য মা‘বুদ নেই, সুতরাং তোমরা আমারই ইবাদাত কর। [সূরা আল-আম্বিয়া,আয়াত-২৫]
আর যখন শুধু তাওহীদ বলা হবে, তখন তা হতে মুরাদ-উদ্দেশ্য হবে তাওহীদুল উলূহীয়্যাহ।
تعريف توحيد الألوهية: তাওহীদুল উলূহীয়্যাহ এর সংজ্ঞা ঃ নিশ্চয়ই আল্লাহ তাঁর সকল সৃষ্টি জীবের উলূহীয়াত ও উবূদীয়াতের মালিক, তিনি এককভাবে ইবাদাতের মালিক তাঁর কোন শরীক নেই এই স্বীকৃতি দেওয়া।
أسماؤه : তার (তাওহীদুল উলূহীয়্যার) নাম সমূহ ঃ এই তাওহীদকে তাওহীদুল উলূহীয়্যাহ বা ইলাহীয়্যাহ বলা হয়েছে কারণ একনিষ্টভাবে ইহা নিছক তা‘আল্লুহ (تأله) এর উপর প্রতিষ্ঠিত। একক আল্লাহর জন্য অধিক ভাল বাসাকে তা‘আল্লুহ বলা হয়।
নিুে বর্ণিত নাম গুলো তাওহীদুল উলূহীয়্যার নাম ঃ
(ক) তাওহীদুল ইবাদাহ বা উবূদীয়াহ ঃ কারণ ইহা এক আল্লাহর জন্য ইবাদাত হওয়ার উপর প্রতিষ্ঠিত।
(খ) তাওহীদুল ইরাদা ঃ কারণ ইহা আমলের দ্বারা আল্লাহর সন্তষ্টি কামনার উপর প্রতিষ্ঠিত।
(গ) তাওহীদুল কাছদ ঃ কারণ ইহা এক আল্লাহর জন্য ইবাদাতকে একনিষ্ঠ অত্যাবশ্যক করে এমন একক ইচ্ছার উপর প্রতিষ্ঠিত।
(ঘ) তাওহীদুত ত্বলাব ঃ কারণ ইহা আল্লাহর কাছে একনিষ্ঠভাবে চাওয়ার উপর প্রতিষ্ঠিত।
(ঙ) তাওহীদুল আমল ঃ কারণ ইহা আল্লাহ তা‘আলার জন্য আমলকে একনিষ্ঠ করার উপর প্রতিষ্ঠিত।
حكم توحيد الألوهية: তাওহীদুল উলূহীয়্যাতের হুকুম বা বিধান ঃ তাওহীদুল উলূহীয়্যাহ সকল বান্দাদের উপর ফরয। বান্দারা কেবল মাত্র এর দ্বারাই ইসলামে প্রবেশ করে। আর এর প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস ও আমল করলেই জাহান্নাম হতে মুক্তি পাবে। প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তির উপর এ বিশ্বাস এবং এ মোতাবেক আমল করা সর্ব প্রথম ওয়াজিব। আর এর দ্বারাই দাও‘আত ও শিা শুরু করা সর্ব প্রথম ওয়াজিব। যারা এর বিপরীত ধারণা করে তারা এতে মতনৈক্য করেছে।
কুরআন ও হাদীসে এর ফারযিয়াতের নির্দেশ রয়েছে। আল্লাহ এরই বাস্তবায়নের জন্য সৃষ্টিজীব সৃষ্টি করেছেন এবং কিতাব সমূহ অবতীর্ণ করেছেন।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন ঃ
قل إنما أمرت أن أعبد الله ولا أشرك به إليه أدعو وإليه مآب[سورة الرعد، الآية:৩৬].
অর্থ ঃ বল ঃ আমি তো আল্লাহর ইবাদাত করতে ও তাঁর কোন শরীক না করতে আদিষ্ট হয়েছি। আমি তাঁরই প্রতি আহ্বান করি এবং তাঁরই নিকট আমার প্রত্যাবর্তন। [সূরা রা‘দ-আয়াত-৩৬]
তিনি আরো বলেন ঃ
وما خلقت الجن والإنس إلا ليعبدون [سورة الذريات، الآية: ৫৬].
অর্থ ঃ আমি সৃষ্টি করেছি জ্বিন এবং মানুষকে এই জন্য যে, তারা আমারই ইবাদাত করবে। [সূরা আয্-যারিয়াত-আয়াত-৫৬]
নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মুআয (রাযিআল্লাহু আনহু) কে বলেন ঃ
((إنك تأتي قوماً من أهل الكتاب فليكن أول ما تدعوهم إليه شهادة أن لا إله إلا الله، فإن هم أطاعوك لذلك فأعلمهم أن الله افترض عليهم خمس صلوات في كل يوم وليلة؛ فإن هم أطاعوك لذلك فأعلمهم أن الله افترض عليهم صدقة تؤخذ من أغنيائهم فترد على فقرائهم)) الحديث، [أخرجه البخاري ومسلم].
অর্থ ঃ (হে মুআয রাযিআল্লাহু আনহু) তুমি আহলে কিতাব সম্প্রদায়ের নিকট যাচ্ছো। সর্ব প্রথম তাদেরকে (লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহুÑ) আল্লাহ ছাড়া কোন সত্য মা‘বুদ নেই-এই দিকে আহ্বান কর। যদি তারা এই দাও‘আত গ্রহণ করে তোমার আনুগত্য করে, তখন তুমি তাদেরকে জানাও যে, আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের উপর দিনে-রাতে পাঁচ ওয়াক্ত নামায ফরয করেছেন। যদি তারা ইহা গ্রহণ করে, তখন তুমি তাদেরকে জানাও যে, আল্লাহ তোমাদের উপর যাকাত ফরয করেছেন, ইহা ধনীদের কাছ থেকে নেওয়া হবে এবং দরিদ্রদেরকে দেওয়া হবে। আল-হাদীস, [বুখারী ও মুসলিম]
এই তাওহীদ যাবতীয় আমল সমূহের মধ্যে অধিকতর উত্তম আমল ও অধিক পাপ মোচন কারী। এ ব্যাপারে ইমাম বুখারী ও মুসলিম সাহাবী ইত্বান (রাযিআল্লাহু আনহু) হতে নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) থেকে হাদীস বর্ণনা করেছেন ঃ
((فإن الله حرم على النار من قال: لا إله إلا الله يبتغي بذلك وجه الله))
অর্থ ঃ নিশ্চয়ই আল্লাহ ঐ ব্যক্তির জন্য জাহান্নামকে হারাম করেছেন যে, ব্যক্তি আল্লাহর সন্তষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে লাÑইলাহা ইল্লাল্লাহ বলেছে।
(চ) সমস্ত রাসূলগণের এই কালেমার উপর ঐক্যমত ঃ
সমস্ত রাসূলগণ তাঁদের সম্প্রদায়কে কালেমা লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ এর দিকে দাও‘আত দানে এবং ইহা হতে বিমুখের ভয় প্রদর্শনের ব্যাপারে একমত ছিলেন।
যেমন কুরআন কারীমে অনেক আয়াতে এর বর্ণনা এসেছে।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন ঃ
وما أرسلنا من قبلك من رسولٍ إلا نوحي إليه أنه لا إله إلا أنا فاعبدونِ [سورة الأنبياء، الآية: ২৫].
অর্থ ঃ আমরা তোমার পূর্বে যে রাসূলই প্রেরণ করেছি তাঁর নিকটে এই ওহী অবতীর্ণ করেছি যে, আমি ব্যতীত অন্য কোন সত্য মা‘বুদ নেই, সুতরাং তোমরা আমারই ইবাদাত কর। [সূরা আল-আম্বিয়া-আয়াত-২৫]
রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এই কালেমার দিকে দাও‘আত দানে নাবীদের একমতের এক সুন্দর দৃষ্টান্ত বর্ণনা করেছেন।
তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন যে ঃ
((الأنبياء إخوة لعلات، أمهاتهم شتى ودينهم واحد))
অর্থ ঃ নাবীগণ এক অপরে বৈমাত্রেয় ভাই ছিলেন। তাঁদের মা ভিন্ন ছিল, আর দ্বীন একছিল।
সকল নাবীদের মূল দ্বীন ছিল একই তা হলো তাওহীদ, যদিও শরী‘আতের অন্যান্য বিধি-বিধান ভিন্ন ছিল। যেমন কখনো ছেলে-মেয়ে মায়ের দিক হতে ভিন্ন হয়, আর তাদের পিতা এক।
৩- معنى شهادة أن محمداً رسول الله:
৩ Ñ মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আল্লাহর রাসূল এই স্যা দানের অর্থ ঃ
(ক) নিশ্চয়ই মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আল্লাহর রাসূল এ স্যা দানের অর্থ হলো ঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যা আদেশ করেছেন তা পালন করা, যে সব খবর দিয়েছেন তা সত্য বলে বিশ্বাস করা, এবং যেগুলি সম্পর্কে নিষেধ ও সতর্ক করেছেন সেগুলি থেকে বিরত থাকা, আর একমাত্র তিনি যে বিধান দান করেছেন সেমত আল্লাহর ইবাদাত করা।
(খ) মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আল্লাহর রাসূল এ স্যা বাস্তবায়ন ঃ
মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আল্লাহর রাসূল এ স্যা বাস্তবায়ন হবে ঈমান ও পূর্ণ ইয়াকীন দ্বারা। নিশ্চয়ই মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসূল, যাকে সকল মানব ও জ্বিন জাতীর নিকট প্রেরণ করেছেন। তিনি শেষ নাবী ও রাসূল। নিশ্চয়ই তিনি আল্লাহর নৈকট্যর্জনকারী বান্দা। তাঁর মাঝে উলূহীয়্যাতের কোন বৈশিষ্ট নেই। তাঁর অনুসরণ করা, তাঁর আদেশ নিষেধের সম্মান করা। কথায়, কাজে ও বিশ্বাসে তাঁর সুন্নাতকে আঁকড়ে ধরা।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন ঃ
قل يا أيّها النّاس إنِّي رسول الله إليكم جميعاً [سورة الأعراف، الآية: ১৫৮].
অর্থ ঃ বল ঃ হে মানুষ ! আমি তোমাদের সকলের জন্য আল্লাহর রাসূল। [সূরা আল-আ‘রাাফ-আয়াত-১৫৮]
তিনি আরো বলেন ঃ
وما أرسلناك إلا كافة للناس بشيراً ونذيراً [سورة سبأ، الآية: ২৮].
অর্থ ঃ আমরা তো তোমাকে সমগ্র মানবজাতির প্রতি সুসংবাদ্দাতা ও সতর্ককারীরূপে প্রেরণ করেছি। [সূরা সাবা-আয়াত-২৮]
তিনি আরো বলেন ঃ
ما كان محمد أبا أحدٍ من رجالكم ولكن رسول الله وخاتم النبيين [سورة الأحزاب، الآية: ৪০].
অর্থ ঃ মুহাম্মাদ তোমাদের মধ্যে কোন পুরুষের পিতা নহে, বরং সে আল্লাহর রাসূল এবং শেষ নাবী। [সূরা আল-আহ্যাব-আয়াত-৪০]
তিনি আরো বলেন ঃ
قل سبحان ربّي هل كنت إلاّ بشراً رّسولاً [سورة الإسراء، الآية: ৯৩].
অর্থ ঃ বল ঃ আমার প্রতিপালক পবিত্র ! আমি কেবলমাত্র একজন মানুষ যাকে রাসূল বানানো হয়েছে। [সূরা আল-ইস্রা-আয়াত-৯৩]
উক্ত স্যা নিুে বর্ণিত বিষয় গুলোকে অন্তর্ভুক্ত করে ঃ
প্রথমত ঃ তাঁর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) রিসালাতের স্বীকৃতি দেওয়া ও অন্তরে তার বিশ্বাস রাখা।
দ্বিতীয়ত ঃ এর উচ্চারণ করা ও মুখের দ্বারা প্রকাশ্য ভাবে এর স্বীকৃতি দেওয়া।
তৃতীয়ত ঃ যে সত্য তিনি নিয়ে এসেছেন তা অনুসরণ করা, এবং যে বাতিল বিষয় সমূহ নিষেধ করেছেন তা বর্জন করা।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন ঃ
فآمنوا بالله ورسوله النبيّ الأمي الذي يؤمن بالله وكلماته واتبعوه لعلكم تهتدون [سورة الأعراف، الآية:১৫৮].
অর্থ ঃ সুতরাং তোমরা ঈমান আন আল্লাহর প্রতি ও তাঁর বার্তাবাহক উম্মী নাবীর প্রতি, যে আল্লাহ ও তাঁর বাণীতে ঈমান আনে এবং তোমরা তাঁর অনুসরণ কর যাতে তোমরা হিদায়াত প্রাপ্ত হতে পার। [সূরা আল-আ‘রাফ-আয়াত-১৫৮]
চতুর্থত ঃ রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যে সব খবর দিয়েছেন তা সত্য বলে বিশ্বাস করা।
পঞ্চমত ঃ জান, মাল, ছেলে-মেয়ে, পিতা-মাতা, ও সকল মানুষের ভালবাসার চাইতে তাঁকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে) অধিক ভালবাসা। কারণ তিনি আল্লাহর রাসূল, আর তাঁকে ভালবাসাই হলো আল্লাহর ভালবাসার অন্তর্ভুক্ত।
আর তাঁর প্রকৃত মুহাব্বাত হল তাঁর আদেশ সমূহের আনুগত্য করে তাঁর নিষেধ সমূহ হতে বিরত থেকে তাঁর অনুসরণ করা। তাঁকে সাহায্য করা, তার সাথে বন্ধুত্ব রাখা।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন ঃ
قل إن كنتم تحبّون الله فاتبعوني يحببكم الله ويغفر لكم ذنوبكم [سورة آل عمران،الآية: ৩১].
অর্থ ঃ বল ঃ তোমরা যদি আল্লাহকে ভালবাস তবে আমাকে অনুসরণ কর, আল্লাহ তোমাদেরকে ভালবাসবেন এবং তোমাদের অপরাধ মা করবেন। [সূরা আলি-ইমরান-আয়াত-৩১]
নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন ঃ
((لا يؤمن أحدكم حتى أكون أحب إليه من والده وولده والناس أجمعين)) [متفق عليه من حديث أنس - -.].
অর্থ ঃ তোমাদের কেহ পূর্ণ মু‘মিন হতে পারে না যতন আমি তার নিকট তার পিতা-মাতা, ছেলে-মেয়ে ও সকল মানুষের চেয়ে অধিকতর প্রিয় না হবো। [ইমাম বুখারী ও মুসলিম এই হাদীসটি আনাস (রাযিআল্লাহু আনহু) হতে বর্ণনা করেছেন]
আল্লাহ তা‘আলা বলেন ঃ
فالّذين آمنوا به وعزّروه ونصروه واتبعو النور الذي أنزل معه أولئك هم المفلحون [سورة الأعراف،الآية:১৫৭].
অর্থ ঃ সুতরাং যারা তাঁর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে, তাঁকে সম্মান করে, তাঁকে সাহায্য করে এবং যে নূর তাঁর সাথে অবতীর্ণ হয়েছে উহার অনুসরণ করে তাঁরাই সফলকাম। [সূরা আল-আ‘রাফ-আয়াত-১৫৭]
ষষ্টত ঃ তাঁর সুন্নাতের প্রতি আমল করা। তাঁর কথাকে সকলের কথার উপর প্রাধান্য দেওয়া, নির্দ্বিধায় তা গ্রহণ করা। তাঁর শরী‘আত মোতাবেক বিধান পরিচালনা করা এবং তাঁর প্রতি
সন্তুষ্ট থাকা।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন ঃ
فلا وربِّك لا يؤمنون حتىّ يحكموك فيما شحر بينهم ثم لا يجدوا في أنفسهم حرجاًُ مما قضيت ويسلّموا تسليماً [سورة النساء، الآية:৬৫].
অর্থ ঃ কিন্ত না, তোমার প্রতিপালকের শপথ ! তারা মু‘মিন হবে না যতন পর্যন্ত তারা তাদের নিজেদের বিবাদ-বিস্মবাদের বিচার ভার তোমার উপর অর্পণ না করে, অতঃপর তোমার সিদ্ধান্ত সমন্ধে তাদের মনে কোন দ্বিধা না থাকে এবং সর্বান্তকরণে উহা মানিয়া না লয়। [সূরা আন-নিসা-আয়াত-৬৫]
৪- فضيلة الشهادتين:
৪- স্যা দ্বয়ের ফযিলত ঃ
কালেমায়ে তাওহীদ এর অনেক ফযিলত রয়েছে যা কুরআন হাদীসে বর্ণনা করা হয়েছে, তার কিছু ফযিলত নিুে বর্ণিত হল ঃ
(ক) ইহা ইসলামের প্রথম স্তম্ভ, দ্বীনের মূল, মিল্লাতের ভিত্তি, এর দ্বারাই বান্দা সর্ব প্রথম ইসলামে প্রবেশ করে। এর বাস্ত-বায়নের জন্যই আসমান জমিনের সৃষ্টি।
(খ) ইহা জান মাল হিফাযতের কারণ, যে ব্যক্তি ইহা উচ্চারণ করবে তার জান মাল হিফাযতের কারণ হয়ে দাঁড়াবে।
(গ) সাধারণ ভাবে ইহা সর্ব উত্তম আমল, অধিক পাপ মোচন কারী, জান্নাতে প্রবেশ ও জাহান্নাম হতে মুক্তির কারণ। যদি আসমান ও জমিন এক পাল্লায় রাখা হয় আর লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ অপর পাল্লায় রাখা হয় তবে “লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ” এর পাল্লা ঝুঁকে যাবে বা ভারী প্রমাণিত হবে।
তাই ইমাম মুসলিম উবাদাহ (রাযিআল্লাহু আনহু) হতে মারফু‘ হাদীস বর্ণনা করেছেন ঃ
((من شهد أن لا إله إلا الله وأن محمداً عبده ورسوله حرّم الله عليه النّار))
অর্থ ঃ যে ব্যক্তি এই স্যা প্রদান করবে যে, আল্লাহ ছাড়া কোন সত্য উপাস্য নেই এবং মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁর বান্দা ও রাসূল, আল্লাহ তার জন্য জাহান্নাম কে হারাম করে দিবেন।
(ঘ) আর ইহাতে যিকির, দু‘আ ও প্রশংসা সন্নিবেশিত রয়েছে। দু‘আউল ইবাদাহ ও দু‘আউল মাসআলা এর অন্তর্ভুক্ত। আর এ যিকির অধিক মাত্রায় পাওয়া যায় এবং ইহা অতি সহজে অর্জন করা যায়। ইহা পবিত্র কালেমা, দৃঢ় হাতল, কালেমাতুল ইখলাস, এর বাস্তবায়নের জন্য আসমান জমিনের সৃষ্টি। এর জন্যই সৃষ্টি জীবের সৃষ্টি, রাসূলগণের প্রেরণ, কিতাব সমূহের অবতীর্ণ, এরই পরিপূর্ণতার জন্য ফরয ও সুন্নাত প্রবর্তন হয়েছে। আর এরই জন্য জিহাদের তরবারী উমুক্ত করা হয়েছে।