الصلاة.
দ্বিতীয় রুক্ন ঃ আস্সলাত (নামায)।
নামায ইবাদাত সমূহের মধ্যে অত্যন্ত গুরুত্ব পূর্ণ ইবাদাত। এর ফরয হওয়ার দলীল অত্যন্ত সুস্পষ্ট, ইসলাম এ বিষয়ে খুব বেশী গুরুত্ব আরোপ করেছে। সুতরাং ইবাদাত সমূহে নামাযের ফযিলত ও তাৎপর্য কতটুকু তা বর্ণনা করেছে। আর ইহা বান্দা ও তার প্রভুর মাঝে সম্পর্ক সৃষ্টি কারী, ইহা প্রতিষ্ঠার দ্বারা বান্দা তার প্রভুর আনুগত্য প্রকাশ করে।
১- تعريفها:
১- নামাযের সংজ্ঞা ঃ
لغة: - শাব্দিক অর্থ ঃ নামাযের শাব্দিক অর্থ দু‘আ, এই অর্থ কুরআনে ব্যবহৃত হয়েছে।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন ঃ
وصلّ عليهم إنّ صلاتك سكن لهم[سورة التوبة،الآية: ১০৩].
অর্থ ঃ তুমি তাদের জন্য দু‘আ কর, তোমার দু‘আ তাদের জন্য চিত্তস্বস্তকর। [সূরা আত্তাওবাহ-আয়াত-১০৩]
واصطلاحاً:- পারিভাষিক অর্থ ঃ ইহা এমন এক ইবাদাত যা বিশেষ কিছু কথা ও কর্মকে শামিল করে, আল্লাহু আকবার দ্বারা শুরু হয়, আস্সালামু আলাইকুম দ্বারা শেষ হয়।
والمراد بالأقوال : কথা হতে উদ্দেশ্য হল ঃ আল্লাহু আকবার বলা, ক্বিরাত, তাসবীহ, ও দু‘আ ইত্যাদি পাঠ করা।
والمراد بالأفعال: - কর্ম দ্বারা উদ্দেশ্য ঃ ক্বিয়াম-দাঁড়ানো, রুকু করা, সিজ্দা করা ও বসা ইত্যাদি।
২- أهميتها لدى الأنبياء والرسل عليهم الصلاة والسلام:
২- নাবী ও রাসূলগণের (আলাইহিমুস্ সালাম)-নিকট এর গুরুত্ব ঃ
আমাদের নাবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর প্রেরণের পূর্বের আসমানী দ্বীন সমূহে নামায বিধিবদ্ধ ছিল। ইব্রাহীম (আলাইহিস্ সালাম) তাঁর প্রভুর কাছে নিজের ও স্বীয় বংশধরের নামায প্রতিষ্ঠার দু‘আ করেন।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন ঃ
ربِّ اجعلني مقيم الصلاة ومن ذُرّيتي [سورة إبراهيم،الآية: ৪০].
অর্থ ঃ হে আমার প্রতিপালক ! আমাকে সালাত কায়েমকারী কর এবং আমার বংশধরদের মধ্য হতেও। [সূরা ইব্রাহীম-আয়াত-৪০]
আর ইসমাঈল (আলাইহিস্ সালাম) তাঁর পরিবারকে নামায প্রতিষ্ঠার আদেশ করেছিলেন।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন ঃ
وكان يأْمر أهله بالصلاة والزكاة [سورة مريم، الآية: ৫৫].
অর্থ ঃ সে তাঁর পরিজনবর্গকে সালাত ও যাকাতের নির্দেশ দিত। [সূরা মারয়াম-আয়াত-৫৫]
আল্লাহ তা‘আলা মূসা (আলাইহিস্ সালাম) কে সম্বধন করে বলেন ঃ
إنّني أنا الله لا إله إلا أنا فاعبدني وأقم الصلاة لذكري [سورة طه، الآية:১৪].
অর্থ ঃ আমিই আল্লাহ, আমি ব্যতীত কোন ইলাহ্ নেই। অতএব আমার ইবাদাত কর এবং আমার স্মরণার্থে সালাত কায়েম কর। [সূরা তাহা-আয়াত-১৪]
আল্লাহ তা‘আলা নামায আদায়ের ব্যাপারে তাঁর নাবী ঈসা (আলাইহিস্ সালাম) কে আদেশ করেছেন।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন ঃ
وجعلني مباركاً أين ما كنت وأوصاني بالصلاة والزكاة مادمت حياً [سورة مريم،الآية:৩১].
অর্থ ঃ যেখানেই আমি থাকি না কেন তিনি আমাকে বরকতময় করেছেন, তিনি আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন যতদিন জীবিত থাকি ততদিন সালাত ও যাকাত আদায় করতে। [সূরা মারয়াম-আয়াত- ৩১]
আল্লাহ আমাদের নাবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর মি‘রাজ ও ইস্রার রাত্রিতে আসমানে নামায ফরয করেছেন। আর নামায ফরয কালে পঞ্চাশ ওয়াক্ত ছিল। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা হালকা করে পাঁচ ওয়াক্ত করেছেন। ইহা আদায়ে পাঁচ ওয়াক্ত, কিন্তু ছুয়াবে পঞ্চাশ ওয়াক্ত।
والصلوات الخمس هي: - পাঁচ ওয়াক্ত নামায তা হলো ঃ ফজর, যোহর, আসর, মাগরিব ও ঈশা, এর উপর সকল মুসলমানদের ঐক্যমত প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
৩- دليل مشروعيتها:
৩- সালাত-নামায প্রবর্তনের দলীল ঃ
নামাযের প্রবর্তনতা প্রমাণিত হয়েছে একাধিক দলীল দ্বারা। নিুে তার কিছু বর্ণনা করা হল ঃ
প্রথমত ঃ কুরআন হতে ঃ
আল্লাহ তা‘আলা বলেন ঃ
وأقيموا الصلاة وآتوا الزكاة [سورة البقرة، الآية: ৪৩].
অর্থ ঃ তোমরা সালাত কায়েম কর ও যাকাত প্রদান কর। [সূরা আল-বাক্বারাহ-আয়াত-৪৩]
তিনি আরো বলেন ঃ
إن الصلاة كانت على المؤمنين كتابا موقوتاً [سورة النساء، الآية: ১০৩].
অর্থ ঃ নির্ধারিত সময়ে সালাত কায়েম করা মু‘মিনদের জন্য অবশ্য কর্তব্য। [সূরা আন-নিসা-আয়াত-১০৩]
তিনি আরো বলেন ঃ
وما أمروا إلا ليعبدوا الله مخلصين له الدين حنفاء ويقيموا الصلاة ويؤتوا الزكاة [سورة البينة، الآية:৫].
অর্থ ঃ তারা তো আদিষ্ট হয়েছিল আল্লাহর আনুগত্যে বিশুদ্ধচিত্ত হয়ে একনিষ্টভাবে তাঁর ইবাদাত করতে এবং সালাত কায়েম করতে ও যাকাত দিতে। [সূরা আল-বায়্যিনা-আয়াত-৫]
দ্বিতীয়ত ঃ হাদীস হতে ঃ
(১) ইবনে উমার (রাযিআল্লাহু আনহুমা) হতে বর্ণিত হাদীস, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন ঃ
((بني الإسلام على خمس، شهادة أن لا إله إلا الله، وأن محمداً رسول الله، وإقام الصلاة وإيتاء الزكاة، وحج البيت، وصوم رمضان)) [متفق عليه].
অর্থ ঃ ইসলাম পাঁচটি স্তম্ভের উপর প্রতিষ্ঠিত। আল্লাহ ছাড়া কোন সত্য মা‘বুদ নেই, মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আল্লাহর রাসূল এ স্যা দান করা। নামায প্রতিষ্ঠা করা। যাকাত প্রদান করা। বায়তুল্লাহ শরীফের হাজ্জ করা। রামাযানের রোযা রাখা। [বুখারী ও মুসলিম ]
(২) উমার বিন খাত্তাব (রাযিআল্লাহু আনহু) এর হাদীস, যাতে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন ঃ
((الإسلام أن تشهد أن لا إله إلا الله وأن محمداً رسول الله - -، وتقيم الصلاة وتؤتي الزكاة، وتصوم رمضان وتحج البيت إن استطعت إليه سبيلاً )) [رواه مسلم].
অর্থ ঃ ইসলাম হলো, আল্লাহ ছাড়া সত্য কোন মা‘বুদ নেই এবং মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আল্লাহর রাসূল এ স্যা দেওয়া, নামায প্রতিষ্ঠা করা, যাকাত প্রদান করা, রামাযান মাসের রোযা রাখা, সামর্থ্য থাকলে বায়তুল্লাহ এর হাজ্জ করা।
[মুসলিম শরীফ]
(৩) ইব্নে আব্বাস (রাযিআল্লাহু আনহুমা) এর হাদীস ঃ
((أن النبي - - بعث معاذاً إلى اليمن فقال: ادعهم إلى شهادة أن لا إله إلا الله وأن محمداً رسول الله، فإن هم أطاعوك لذلك فأعلمهم أن الله افترض عليهم خمس صلوات في كل يوم وليلة)) [متفق عليه].
অর্থ ঃ নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মুআয (রাযিআল্লাহু আনহু) কে ইয়ামানে প্রেরণ করলেন এবং (তাঁকে) বল্লেন ঃ যে, তুমি তাদেরকে (আহলে কিতাবদেরকে) (লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহুÑ) আল্লাহ ছাড়া কোন সত্য মা‘বুদ নেই এবং মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আল্লাহর রাসূল এই স্যা দানের দিকে আহ্বান কর। যদি তারা এই দাও‘আত গ্রহণ করে তোমার আনুগত্য করে তবে তুমি তাদেরকে জানাও যে, আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের উপর দিনে-রাতে পাঁচ ওয়াক্ত নামায ফরয করেছেন। [বুখারী মুসলিম ]
তৃতীয়ত ঃ ইজমা ঃ
সকল মুসলমান পাঁচ ওয়াক্ত নামায ফরয হওয়ার উপর একমত হয়েছেন। আর ইহা ইসলামের ফরয সমূহের অন্যতম একটি ফরয।
৪- الحكمة في مشروعيتها:
৪- সালাত-নামায প্রবর্তনের পিছনে হিক্মাত ঃ
একাধিক হিক্মাত ও রহস্যকে সামনে রেখে নামায প্রবর্তন করা হয়েছে। নিুে তার কিছু ইঙ্গিত করা হলো ঃ
(১) আল্লাহ তা‘আলার জন্য বান্দার দাসত্ব প্রকাশ করার ল্েয, সে তাঁর দাস, এই নামায আদায়ের দ্বারা মানুষ উবূদীয়াতের অনুভূতি লাভ করে, এবং সে সর্বদায় তাঁর সৃষ্টি কর্তার সাথে সম্পর্ক স্থাপন করে থাকে।
(২) এই নামায তার প্রতিষ্ঠা কারীকে আল্লাহর সাথে সুদৃঢ় সম্পর্ক স্থাপন কারী ও সর্বদায় স্বরণ কারী করে রাখে।
(৩) নামায তার আদায় কারীকে নির্লজ্জ ও অন্যায় কাজ হতে বিরত রাখে, আর ইহা বান্দাকে পাপ ভুল-ত্র“টি হতে পবিত্র করার মাধ্যম।
জাবির বিন আব্দুল্লাহ (রাযিআল্লাহু আনহুমা) এর হাদীসই তার প্রমাণ।
তিনি বলেন ঃ রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন ঃ
((مثل الصلوات كمثل نهر جار يمر على باب أحدكم يغتسل منه كل يوم خمس مرات))[رواه مسلم].
অর্থ ঃ পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের উপমা ঐ প্রবহমান নদীর ন্যায় যা তোমাদের কারো দরজার পাশ দিয়ে বয়ে গেছে, তথায় সে প্রতি দিন পাঁচ বার গোসল করে। [মুসলিম শরীফ]
(৪) নামায অন্তরের তৃপ্তি, আতœার শান্তি, ও মুক্তি দানকারী ঐ বিপদ-আপদ হতে যা তাকে কলুষিত করে। এ জন্যই ইহা রাসূলের র্কুরাতুল আইন-নয়ন সিক্তকারী। নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যখন কোন কঠিন কাজের সম্মুখীন হতেন, তখন তিনি নামায আদায়ের দিকে ছুটে যেতেন। এমনকি তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলতে থাকতেন ঃ
((يا بلال أرحنا بالصلاة)) [ أخرجه أحمد].
অর্থ ঃ হে বিলাল ! নামাযের দ্বারা তুমি আমাকে শান্তি দাও। [আহ্মাদ ]
৫- من تجب عليه الصلاة:
৫- কাদের উপর নামায ফরয ঃ
প্রত্যেক প্রাপ্ত বয়স্ক জ্ঞানী মুসলিম ব্যক্তির উপর নামায ফরয। চাই পুরুষ হোক বা নারী হোক। কাফিরের উপর নামায ফরয নয়। এর অর্থ-দুনিয়াতে সে এর আদিষ্ট নয়, কারণ তার কুফরী অবস্থায় তার প থেকে ইহা শুদ্ধ হবেনা। তবে ইহা ছেড়ে দেওয়ার কারণে আখিরাতে তাকে শাস্তি দেওয়া হবে। কারণ ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে ইহা আদায় করা তার জন্য সম্ভব ছিল, কিন্তু সে তা করে নাই।
এর প্রমাণ আল্লাহর বাণী ঃ
ما سلككم في سقر. قالوا لم نك من المصلين. ولم نك نطعم المسكين. وكنا نخوض مع الخائضين. وكنا نكذب بيوم الدين. حتى أتانا اليقينُ [سورة المدثر، الآية: ৪২-৪৭].
অর্থ ঃ তোমাদেরকে কিসে সাকার নামক জাহান্নামে নিপে করেছে ? উহারা বলবে, আমরা মুসল্লীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলাম না, আমরা অভাবগ্রস্থকে আহার্য দান করতাম না, এবং আমরা আলোচনাকারীদের সহিত আলোচনায় নিমগ্ন থাকতাম। আমরা কর্মফল দিবস অস্বীকার করতাম, আমাদের নিকট মৃত্যুর আগমণ পর্যন্ত। [সূরা আল-মুদ্দাছ্ছির-আয়াত-৪২-৪৭]
আর বাচ্চাদের উপরও ফরয নয়। কারণ সে মুকাল্লাফ-প্রাপ্ত বয়স্ক নয়। পাগলের উপরও ফরয নয়। ঋতু ও নিফাস গ্রস্থ মহিলাদের উপরও ফরয নয়। কারণ শরী‘আত তাদের হতে এর বিধান তুলে নিয়েছে, ইহা আদায়ে বাঁধা প্রদান কারী নাপাকির কারণে।
বাচ্চা সে ছেলে হোক বা মেয়ে হোক তার বয়স যখন সাত বছর হবে তখন তার অভিভাবকের উপর তাকে নামাযের আদেশ দেওয়া আবশ্যক। আর যখন তার বয়স দশ বছর হবে তখন নামায আদায় না করলে তার অভিভাবকের উপর তাকে প্রহার করা আবশ্যক। হাদীসে এর বর্ণনা এসেছে। যাতে সে তা আদায়ে অভ্যস্ত ও আগ্রহী হয়।
৬- حكم تارك الصلاة:
৬ - সালাত-নামায ত্যাগ কারীর বিধান ঃ
যে ব্যক্তি নামায ছেড়ে দিল সে ইসলাম হতে বহিস্কৃত হয়ে গেল এবং কুফরী করলো।
ইসলামের মৌলিক বিধি-বিধান হতে মুর্তাদ ব্যক্তিদের
অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেল। কারণ আল্লাহ তা‘আলা তার উপর যে বিধি-বিধান ফরয করেছেন তা ছেড়ে দিয়ে সে তাঁর নাফারমানী করেছে। তাই তাকে তাওবার আদেশ দেওয়া হবে। যদি তাওবা করে ও নামায প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ফিরে আসে তবে ভাল, অন্যথায় সে ইসলাম হতে মুর্তাদ হয়ে যাবে। তার গোসল, কাফন, জানাযার নামায পড়া, মুসলমানদের কবরে দাফন করা নিষেধ। কারণ সে তাদের (মুসলমানদের) অন্তর্ভুক্ত নয়।
৭- شروطها:
৭ - সালাতের-নামাযের শর্ত সমূহ ঃ
(১) ইসলাম-মুসলিম হওয়া।
(২) জ্ঞানবান হওয়া।
(৩) ভাল-মন্দ পার্থক্যের জ্ঞান থাকা।
(৪) নামাযের সময় উপস্থিত হওয়া।
(৫) নিয়াত করা।
(৬) ক্বিব্লা মুখী হওয়া।
(৭) সতর ঢাকা, পুরুষের সতর নাভী হতে হাঁটু পর্যন্ত। আর মহিলা তার স¤পূর্ণ শরীরই নামাযে সতর, তার মুখ ও হাতের তালুদ্বয় ছাড়া।
(৮) মুসল্লির কাপড়, শরীর ও নামায পড়ার স্থান হতে নাপাকি দূর করা।
(৯) হাদছ দূর করা, আর ইহা-নাপাকি হতে অযু গোসল করে পবিত্র হওয়াকে বুঝায়।
৮- أوقاتها:
৮ - সালাতের-নামাযের সময় ঃ
(১) যোহর নামাযের সময় ঃ সূর্য ঢলে যাওয়া হতে-অর্থাৎ মধ্য আকাশ হতে সূর্যের পশ্চিম দিকে ঢলে যাওয়া হতে নিয়ে প্রত্যেক বস্তুর ছায়া তার সমপরিমাণ হওয়া পর্যন্ত।
(২) আসর নামাযের সময় ঃ যোহর নামাযের সময় চলে যাওয়া হতে নিয়ে প্রত্যেক বস্তুর ছায়া তার দ্বিগুন হওয়া পর্যন্ত। আর তা হল সূর্য হলদে হওয়া সময় পর্যন্ত।
(৩) মাগরিব নামাযের সময় ঃ সূর্য ডুবা হতে নিয়ে লালিমা দূরীভূত হওয়া পর্যন্ত। আর তা হল ঐ লালটে ভাব যা পশ্চিম আকাশে সূর্য ডুবার পর প্রকাশিত হয়।
(৪) ঈশার নামাযের সময় ঃ মাগরিবের নামাযের সময় চলে যাওয়া হতে অর্ধ রাত্রি পর্যন্ত।
(৫) ফজর নামাযের সময় ঃ ফজরে সানী প্রকাশ হওয়া থেকে নিয়ে সূর্য উদয় হওয়া পর্যন্ত।
এর প্রমাণ আব্দুল্লাহ বিন আমর (রাযিআল্লাহু আনহু) এর হাদীস, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন ঃ
((وقت الظهر إذا زالت الشمس وكان ظل الرجل كطوله مالم يحضر العصر، ووقت صلاة المغرب مالم يغب الشفق، ووقت صلاة العشاء إلى نصف الليل الأوسط، ووقت صلاة الصبح من طلوع الفجر مالم تطلع الشمس، فإذا طلعت الشمس فأمسك عن الصلاة---)) الحديث.[رواه مسلم].
অর্থ ঃ যোহরের সময় ঃ যখন সূর্য ঢলে যাবে, মানুষের ছায়া তার সমপরিমাণ হবে। আসরের নামাযের সময় হওয়া পর্যন্ত থাকবে। আর মাগরিবের নামাযের সময় সূর্য ডুবা হতে নিয়ে লালিমা পর্যন্ত। আর ঈশারের নামাযের সময় মাগরিবের নামাযের সময় চলে যাওয়া থেকে মধ্য রাত্রি পর্যন্ত। আর ফজরের নামাযের সময় ফজর প্রকাশিত হওয়া থেকে সূর্য উদিত হওয়া পর্যন্ত, আর তখন (সূর্য উদয়ের সময়) নামায পড়া হতে বিরত থাক। আল-হাদীস, [মুসলিম শরীফ]
৯- عدد ركعاتها:
৯- ফরয নামাযের রাকা‘আতের সংখ্যা ঃ
ফরয নামাযের রাকা‘আতের সংখ্যা সর্বমোট সতের রাকা‘আত। নিুে তার তালিকা দেওয়া হল ঃ
(১) যোহর ঃ চার রাকা‘আত।
(২) আসর ঃ চার রাকা‘আত।
(৩) মাগরিব ঃ তিন রাকা‘আত।
(৪) ঈশা ঃ চার রাকা‘আত।
(৫) ফজর ঃ দু’ রাকা‘আত।
যদি কোন ব্যক্তি ইচ্ছাকৃত ভাবে এই রাকা‘আতের সংখ্যায় বাড়ায় বা কমায় তবে তার নামায বাতিল হয়ে যাবে। আর যদি তা ভুলবশতঃ হয় তবে তা সিজ্দায় সাহুর দ্বারা পূর্ণ করবে। এই সংখ্যা মুসাফির ব্যক্তির জন্য নয়। তার জন্য চার রাকা‘আত বিশিষ্ঠ নামায গুলো দু’ রাকা‘আতে কছর করে পড়া মুস্তাহাব। এই পাঁচ ওয়াক্ত নামায তার নির্ধারিত সময়ে পড়া মুসলিম ব্যক্তির উপর ওয়াজিব, যদি কোন শারয়ী অজর (যেমন-নিদ্রা, ভুলে যাওয়া, ভ্রমণে যাওয়া,) না থাকে। যে ব্যক্তি নামায আদায় না করে ঘুমিয়ে যাবে বা ভুলে যাবে সে তা পড়ে নিবে যখন স্বরণ হবে।
১০- فرائضها:
১০- নামাযের ফরয সমূহ ঃ
(১) সামর্থ্য থাকলে দাঁড়ানো।
(২) তাক্বীরে তাহ্রীমাহ।
(৩) সূরা ফাতিহা পাঠ করা।
(৪) রুকু‘ করা।
(৫) রুকু‘ হতে উঠে সোজা হয়ে দাঁড়ানো।
(৬) সাত অঙ্গের উপর সিজ্দা করা।
(৭) সিজ্দা হতে উঠা।
(৮) শেষ বৈঠকে তাশাহ্হুদ পড়া।
(৯) তাশাহ্হুদ কালে বসা।
(১০) নামাযের এই রুক্ন গুলো সম্পাদনে স্থিরতা বজায় রাখা।
(১১) এই রুক্ন গুলো ধারাবাহিক ভাবে আদায় করা।
(১২) ডানে ও বামে দুই সালাম প্রদান করা বা সালাম ফিরানো।
১১- واجباتها:
১১- নামাযের ওয়াজিব সমূহ ঃ
নামাযের ওয়াজিব সমূহ আটটি ঃ
প্রথম ঃ তাক্বীরে তাহ্রীমার তাক্বীর ছাড়া নামাযে অন্যান্য তাক্বীর সমূহ।
দ্বিতীয় ঃ ((سمع الله لمن حمده))(সামিয়াল্লাহু লিমান হামিদা) বলা। আর ইহা ইমাম ও একাকী নামায আদায় কারীর জন্য ওয়াজিব। তবে মুক্তাদী ইহা পাঠ করবে না।
তৃতীয় ঃ ইমাম, মুক্তাদী ও একাকী নামায আদায় কারী সকলের উপর ((ربناولك الحمد)) (রাব্বানা ওয়ালাকাল হাম্দ) বলা ওয়াজিব।
চতুর্থ ঃ রুকুতে ((سبحان ربي العظيم)) (সুব্হা-না রাব্বিয়াল আজীম) বলা।
পঞ্চম ঃ সিজ্দায় ((سبحان ربي الأعلى)) (সুব্হা-না রাব্বিয়াল আ‘লা) বলা।
ষষ্ঠ ঃ দু’সিজ্দার মাঝে ((رب غفر لي)) (রাব্বিগ ফিরলী) বলা।
সপ্তম ঃ প্রথম বৈঠকে তাহিয়্যাত পড়া, আর তা হলো ঃ
((التحيّات لله والصلوات والطيبات، السلام عليك أيها النبي ورحمة الله وبركاته، السلام علينا وعلى عباد الله الصالحين، أشهد أن لا إله إلا الله، وأشهد أن محمداً عبده ورسوله))
উচ্চারণ ঃ আত্তাহিয়্যা-তু লিল্লা-হি ওয়াস্ সালা-ওয়া-তু ওয়াত্ তাইয়্যেবা-তু, আস্সালা-মু আলাইকা আইউ হান্নাবিয়্যু ওয়া রাহ্মাতুল্লা-হি ওয়া বারাকা-তুহ। আস্সালা-মু আলাইনা-ওয়া আ‘লা-ইবাদিল্লা-হিস্ স-লিহীন। আশ্হাদু আল্লা-ইলা-হা ইল্লাল্লাহু ওয়াশ্ হাদু আন্না মুহাম্মাদান আব্দুহু ওয়া রাসূলুহ।
বা অনুরূপ প্রমাণিত তাহিয়্যাত পাঠ করা।
অষ্টম ঃ প্রথম বৈঠকের জন্য বসা। আর যারাই ইচ্ছাকৃত ভাবে এই ওয়াজিব সমূহের কোন একটি ওয়াজিব ছেড়ে দিবে তাদেরই নামায বাতিল হয়ে যাবে।
আর যে ব্যক্তি ইহা ছেড়ে দিবে অজ্ঞতা বা ভুল বঃশত সে সাহু সিজ্দা দিবে।
১২- صلاة الجماعة:
১২ - জামা‘আতে নামায ঃ
মাসজিদে জামা‘আতের সাথে পাঁচ ওয়াক্ত নামায পড়া মুসলিম ব্যক্তির উপর আবশ্যক। এতে সে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও ছাওয়াব অর্জন করতে পারবে।
একা নামায পড়ার চাইতে জামা‘আতে নামায পড়ার ছাওয়াব সাতাশ গুণ বেশী।
ইব্নে উমার (রাযিআল্লাহু আনহুমা) এর বর্ণিত হাদীসে আছে, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন ঃ
((صلاة الجماعة أفضل من صلاة الفذ بسبع وعشرين درجة)) [متفق عليه].
অর্থ ঃ জামা‘আতে নামায পড়া, একা নামায পড়ার চাইতে সাতাশ গুণ (ছাওয়াব) বেশী। [বুখারী ও মুসলিম ]
তবে মুসলিম রমণীর নিজ বাড়ীতে নামায পড়া জামা‘আতে নামায পড়ার চাইতে উত্তম।
১৩- مبطلاتها:
১৩- নামায বাতিল (নষ্ট) কারী বিষয় সমূহ ঃ
নিুে বর্ণিত কর্ম সমূহের যে কোন একটি কর্ম সম্পাদনের দ্বারা নামায বাতিল হয়ে যাবে।
(১) ইচ্ছাকৃত পানাহার করা।
যে ব্যক্তি নামায অবস্থায় পানাহার করবে তার উপর ঐ নামায পুনরায় পড়া আবশ্যক হওয়ার উপর উলামাগণের ইজমা রয়েছে।
(২) নামাযের মাসলাহাতের (কল্যাণ মূলক) বহির্ভূত এমন বিষয়ে ইচ্ছাকৃত কথা বলা।
এ ব্যাপারে যায়েদ বিন আরকাম (রাযিআল্লাহু আনহু) বলেন ঃ ((كنا نتكلم في الصلاة))
অর্থ ঃ আমরা নামাযে কথা বলতাম, আমাদের কেহ কেহ নামাযে তার পাশের সাথীর সাথে কথা বলতো।
এমতাস্থায় নিুের আয়াত অবতীর্ণ হল ঃ
وقوموا لله قانتين [سورة البقرة، الآية: ২৩৮].
অর্থ ঃ আল্লাহর উদ্দেশ্যে তোমরা বিনীতভাবে দাঁড়াবে।
[সূরা আল-বাক্বারাহ-আয়াত-২৩৮]
((فأمرنا بالسكوت ونهينا عن الكلام))
[رواه البخاري و مسلم].
অর্থ ঃ অতঃপর আমরা চুপ থাকার আদেশ প্রাপ্ত হলাম। আর কথা বলা হতে নিষেধ প্রাপ্ত হলাম। [বুখারী ও মুসলিম]
এমনিভাবে ইজমা সংঘটিত হয়েছে ঐ ব্যক্তির নামায ফাসেদ হওয়ার ব্যাপারে যে, নামাযে তার মাসলাহাতের বহির্ভূত ব্যাপারে ইচ্ছাকৃত কথা বলবে।
(৩) ইচ্ছাকৃত অনেক বেশী কাজ করা। আর অধিক কাজের পরিমাণ নির্ণয় করার মানদন্ড হল ঃ নামাযির দিকে দৃষ্টি পাত কারীর নিকট মনে হবে যে, সে নামাযের মাঝে নয়।
(৪) বিনা অজরে ইচ্ছাকৃত নামাযের কোন রুক্ন বা শর্ত ছেড়ে দেওয়া। যেমন বিনা অযুতে নামায পড়া, বা ক্বিবলা মুখী না হয়ে নামায পড়া। অর্থাৎ ক্বিবলা ছেড়ে অন্য দিক হয়ে নামায পড়া।
এ ব্যাপারে ইমাম বুখারী ও মুসলিম হাদীস বর্ণনা করেছেন ঃ নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ঐ বেদুঈনকে বলেছেন, যে তার নামায সুন্দর করে পড়তে পারে নাই।
((ارجع فصل فإنك لم تصلّ)) (অর্থ ঃ ফিরে যাও নামায পড়, কেননা তুমি নামায পড় নাই।)
(৫) নামাযে হাঁসা। কারণ হাঁসি দ্বারা নামায বাতিল হয়ে যাওয়ার উপর ইজমা সংঘটিত হয়েছে।
১৪- أوقات النهي عن الصلاة:
১৪- নামাযের নিষিদ্ধ সময় সমূহ ঃ
(১) ফজর নামাযের পর হতে নিয়ে সূর্য উঠা পর্যন্ত।
(২) ঠিক দুপুর সময়।
(৩) আসর নামাযের পর হতে সূর্য ডুবা পর্যন্ত।
এই সময় সমূহে নামায পড়া মাক্রুহ হওয়ার উপর দলীল হল উক্ববা বিন আমির (রাযিআল্লাহু আনহু) এর হাদীস, তিনি বলেন ঃ
((ثلاث ساعات كان رسول الله- - ينهانا أن نصلي فيهن وأن نقبر فيهن موتانا، حين تطلع الشمس بازغة حتى ترتفع، وحين يقوم قائم الظهيرة حتى تميل الشمس، وحين تضَّف الشمس للغروب حتى تغرب)) [رواه مسلم].
অর্থ ঃ রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাদেরকে তিন সময়ে নামায পড়তে ও আমাদের মৃত্যু ব্যক্তিদেরকে দাফন করতে নিষেধ করতেন।
(১) সূর্য স্পষ্ট ভাবে উদিত হওয়ার সময় হতে নিয়ে তা (উর্ধে উঠা) পর্যন্ত।
(২) ঠিক দুপুরে সূর্য উঁচু হওয়া হতে নিয়ে সূর্য ঢলে যাওয়া পর্যন্ত।
(৩) সুর্য অস্তমুখী হওয়া থেকে নিয়ে তা ডুবা পর্যন্ত। [মুসলিম ]
আরো দলীল হলো আবু সাঈদ (রাযিআল্লাহু আনহু) এর হাদীস, নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন ঃ
(( لا صلاة بعد صلاة العصر حتى تغرب الشمس، ولا صلاة بعد صلاة الفجر حتى تطلع الشمس)) [متفق عليه].
অর্থ ঃ আসরের নামাযের পর হতে নিয়ে সূর্য ডুবা পর্যন্ত, ফজরের নামাযের পর হতে নিয়ে সূর্য উদিত হওয়া পর্যন্ত কোন নামায নাই। [বুখারী ও মুসলিম]
১৫- إجمال صفة الصلاة:
১৫- নামাযের পদ্ধতির সংপ্তি বর্ণনা ঃ
মুসলিম ব্যক্তির উপর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর অনুসরণ করা ওয়াজিব।
নামায পড়ার পদ্ধতিও তাঁর অনুসরণের অন্তর্ভুক্ত।
কারণ তিনি বলেছেন ঃ
((صلوا كما رأيتموني أصلي)) [رواه البخاري].
অর্থ ঃ তোমরা নামায পড়, যে ভাবে আমাকে নামায পড়তে দেখেছ। [বুখারী মুসলিম ]
নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যখন নামায পড়ার ইচ্ছা করতেন, আল্লাহ তা‘আলার সামনে দাঁড়াতেন।
অন্তরে নামাযের নিয়্যাত করতেন, নিয়্যাত মুখে উচ্চারণ করার ব্যাপারে তাঁর প হতে কোন হাদীস বর্ণিত হয় নাই।
আর (الله أكبر) “আল্লাহু আক্বার” বলে তাক্বীর দিতেন। এই তাক্বীরের সাথে তাঁর হস্তদ্বয় উত্তোলন করতেন দুই কাঁধ সমপরিমাণ, আর কখনো কখনো দুই কানের লতি পর্যন্ত। তাঁর ডান হাত বাম হাতের উপর রেখে বুকের উপর ধারণ করতেন।
নামায আরম্ভ করার দু‘আ সমূহের যে কোন একটি দু‘আ দিয়ে নামায শুরু করতেন তন্মধ্যে এটি।
(سبحانك اللهم وبحمدك وتبارك اسمك وتعالى جدك ولا إله غيرك)
উচ্চারণ ঃ সুব্হা-নাকা আল্লাহুম্মা ওয়া বিহাম্দিকা ওয়া তাবা-রাকাস্মুকা ওয়া তা‘আ-লা যাদ্দুকা ওয়ালা-ইলা-হা গাইরুকা।
অর্থ ঃ হে আল্লাহ ! আপনার প্রশংসার সহিত পবিত্রতা বর্ণনা করছি। আপনার নাম মহিমান্বিত, আপনার সত্ত্বা অতি উচ্চে প্রতিষ্ঠিত, আর আপনি ছাড়া ইবাদাতের যোগ্য কোন উপাস্য নেই।
এই দু‘আটি নামায আরম্ভ করার দু‘আ সমূহের অন্তর্ভুক্ত। তার পর সূরা ফাতিহার সাথে আরো একটি সূরা পড়তেন। তার পর হস্তদ্বয় (প্রথম বারের ন্যায়) উত্তোলন করে তাক্বীর দিয়ে রুকুতে যেতেন, আর রুকুতে পিঠ সোজা করে রাখতেন, এমনকি যদি নিজের পিঠের উপর পানির পাত্র রাখা হত, তবে তা স্থীর থাকতো।
(سبحان ربي العظيم) “সুবহা-না রাব্বিয়াল আযীম” তিন বার পড়তেন।
অতঃপর হস্তদ্বয় উত্তোলন করে মুখে (سمع الله لمن حمده، ربنا ولك الحمد) “সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ রাব্বানা ওয়া-লাকাল হাম্দ” বলে রুক‘ু হতে উঠে স্থীর হয়ে দাঁড়াতেন। অতঃপর তাক্বীর বলে সিজ্দা করতেন, সিজ্দা অবস্থায় নিজ হস্তদ্বয় নিজ বরে পার্শ্ব দ্বয় হতে দূরে রাখতেন, এতে বগলের শুভ্র প্রকাশিত হয়ে যেত। তাঁর সাত অঙ্গ নাক সহ কপাল, তালুদ্বয়, হাঁটুদ্বয়, পাদ্বয়ের মাথা, মাটিতে রেখে সিজ্দা করতেন, (سبحان ربي الأعلى) “সুব্হা-না রাব্বিয়াল আ’লা” তিনবার বলতেন। অতঃপর ডান পা খাড়া রেখে সকল আঙ্গুলের মাথা ক্বিবলা মুখী করে আল্লাহু আকবার বলে বাম পার উপর বসতেন। আর এই বৈঠকে,
(رب اغفرلي وارحمني واجبرني وارفعني واهدني وعافني وارفعني)
উচ্চারণ ঃ রাব্বিগ্ফিরলি ওয়ার হাম্নী ওয়াজাবরিনী ওয়ার ফা‘নী ওয়াহ্দিনী ওয়া আ‘ফিনী ওয়ার ফা‘নী।
এই দু‘আ তিনবার পড়তেন। অতঃপর আল্লাহু আক্বার বলতেন ও সিজ্দা করতেন। অতঃপর দ্বিতীয় রাকা‘আতের জন্য তাক্বীর দিতেন। নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) প্রত্যেক রাক‘আতে অনুরূপ করতেন। অতঃপর দু’ রাকা‘আতের পর যখন প্রথম বৈঠকের জন্য বসতেন তখন বলতেন,
((التحيّات لله والصلوات والطيبات، السلام عليك أيها النبي ورحمة الله وبركاته، السلام علينا وعلى عباد الله الصالحين، أشهد أن لا إله إلا الله، وأشهد أن محمداً عبده ورسوله))
উচ্চারণ ঃ আত্তাহিয়্যা-তু লিল্লা-হি ওয়াস্ সালা-ওয়া-তু ওয়াত্ তাইয়্যেবা-তু, আস্সালা-মু আলাইকা আইউ হান্নাবিয়্যু ওয়া রাহ্মাতুল্লা-হি ওয়া বারাকা-তুহ। আস্সালা-মু আলাইনা-ওয়া আ‘লা-ইবাদিল্লা-হিস্ স-লিহীন। আশ্হাদু আল্লা-ইলা-হা ইল্লাল্লাহু ওয়াশ্ হাদু আন্না মুহাম্মাদান আব্দুহু ওয়া রাসূলুহ।
তার পর তাকবীর দিয়ে দন্ডায়মান হয়ে দু’ হাত উত্তোলন করতেন। (তৃতীয় রাকা‘আতের জন্য) আর ইহা নামাযের চতুর্থ স্থান যেখানে নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) হস্তদ্বয় উত্তোলন করেছেন। তার পর নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যখন শেষ বৈঠকের জন্য তা হলো মাগরিবের তৃতীয় রাক‘আতের শেষে বা যোহর, আসর, ও ঈশার চতুর্থ রাক‘আতের শেষে-বসতেন তখন তাওর্য়ারুক করে বসতেন।
বাম পা ডান পায়ের নলীর নীচ দিয়ে বের করে দিয়ে ডান পা কিব্লা মুখী অবস্থায় খাড়া রেখে নিতম্বের উপর বসতেন। হাতের সমস্ত আঙ্গুল বন্ধ রাখতেন, শুধু শাহাদাত আঙ্গুল তার প্রতি দৃষ্টি রেখে ইশারা বা নাড়ানোর জন্য খোলা রাখতেন। অতঃপর যখন তাশাহুদ শেষ করতেন তখন ডান দিকে আস্সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ ও বাম দিকে আস্সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ বলে সালাম ফিরাতেন। এমনকি তাঁর গালের শুভ্রতা প্রকাশ পেয়ে যেতে।
নামাযের এই পদ্ধতি রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়সাল্লাম) এর অনেক হাদীসে বর্ণিত হয়েছে।
ইহা নামাযের বিধান সমূহের কিছু বিধান যার উপর কর্মের সঠিকতা নির্ভর করে, আর তার (বান্দার) যদি নামায ঠিক হয়ে যায় তবে তার সকল কর্ম ঠিক হয়ে যাবে। আর যদি নামায নষ্ট-ফাসেদ হয়ে যায় তবে তার সকল কর্ম নষ্ট-ফাসেদ হয়ে যাবে। আর কিয়ামাত দিবসে সর্ব প্রথম বান্দার নামাযের হিসাব নেওয়া হবে যদি সে ইহা পুরোপুরি ভাবে আদায় করে তবে সে আল্লাহর সন্তষ্টি লাভের মাধ্যমে উত্তীর্ণ হবে। আর যদি সে ইহা হতে কিছু ছেড়ে দেয় তবে সে ধ্বংস হবে। আর নামায (মানুষকে) বেহায়াপানা ও অন্যায় কাজ হতে বিরত রাখে। আর ইহা মানব আতœার রোগের চিকিৎসা যাতে ইহা (আত্মা) হীন স্বভাব হতে পরিস্কার পরিছন্ন হতে পারে।
দ্বিতীয় রুক্ন ঃ আস্সলাত (নামায)।
নামায ইবাদাত সমূহের মধ্যে অত্যন্ত গুরুত্ব পূর্ণ ইবাদাত। এর ফরয হওয়ার দলীল অত্যন্ত সুস্পষ্ট, ইসলাম এ বিষয়ে খুব বেশী গুরুত্ব আরোপ করেছে। সুতরাং ইবাদাত সমূহে নামাযের ফযিলত ও তাৎপর্য কতটুকু তা বর্ণনা করেছে। আর ইহা বান্দা ও তার প্রভুর মাঝে সম্পর্ক সৃষ্টি কারী, ইহা প্রতিষ্ঠার দ্বারা বান্দা তার প্রভুর আনুগত্য প্রকাশ করে।
১- تعريفها:
১- নামাযের সংজ্ঞা ঃ
لغة: - শাব্দিক অর্থ ঃ নামাযের শাব্দিক অর্থ দু‘আ, এই অর্থ কুরআনে ব্যবহৃত হয়েছে।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন ঃ
وصلّ عليهم إنّ صلاتك سكن لهم[سورة التوبة،الآية: ১০৩].
অর্থ ঃ তুমি তাদের জন্য দু‘আ কর, তোমার দু‘আ তাদের জন্য চিত্তস্বস্তকর। [সূরা আত্তাওবাহ-আয়াত-১০৩]
واصطلاحاً:- পারিভাষিক অর্থ ঃ ইহা এমন এক ইবাদাত যা বিশেষ কিছু কথা ও কর্মকে শামিল করে, আল্লাহু আকবার দ্বারা শুরু হয়, আস্সালামু আলাইকুম দ্বারা শেষ হয়।
والمراد بالأقوال : কথা হতে উদ্দেশ্য হল ঃ আল্লাহু আকবার বলা, ক্বিরাত, তাসবীহ, ও দু‘আ ইত্যাদি পাঠ করা।
والمراد بالأفعال: - কর্ম দ্বারা উদ্দেশ্য ঃ ক্বিয়াম-দাঁড়ানো, রুকু করা, সিজ্দা করা ও বসা ইত্যাদি।
২- أهميتها لدى الأنبياء والرسل عليهم الصلاة والسلام:
২- নাবী ও রাসূলগণের (আলাইহিমুস্ সালাম)-নিকট এর গুরুত্ব ঃ
আমাদের নাবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর প্রেরণের পূর্বের আসমানী দ্বীন সমূহে নামায বিধিবদ্ধ ছিল। ইব্রাহীম (আলাইহিস্ সালাম) তাঁর প্রভুর কাছে নিজের ও স্বীয় বংশধরের নামায প্রতিষ্ঠার দু‘আ করেন।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন ঃ
ربِّ اجعلني مقيم الصلاة ومن ذُرّيتي [سورة إبراهيم،الآية: ৪০].
অর্থ ঃ হে আমার প্রতিপালক ! আমাকে সালাত কায়েমকারী কর এবং আমার বংশধরদের মধ্য হতেও। [সূরা ইব্রাহীম-আয়াত-৪০]
আর ইসমাঈল (আলাইহিস্ সালাম) তাঁর পরিবারকে নামায প্রতিষ্ঠার আদেশ করেছিলেন।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন ঃ
وكان يأْمر أهله بالصلاة والزكاة [سورة مريم، الآية: ৫৫].
অর্থ ঃ সে তাঁর পরিজনবর্গকে সালাত ও যাকাতের নির্দেশ দিত। [সূরা মারয়াম-আয়াত-৫৫]
আল্লাহ তা‘আলা মূসা (আলাইহিস্ সালাম) কে সম্বধন করে বলেন ঃ
إنّني أنا الله لا إله إلا أنا فاعبدني وأقم الصلاة لذكري [سورة طه، الآية:১৪].
অর্থ ঃ আমিই আল্লাহ, আমি ব্যতীত কোন ইলাহ্ নেই। অতএব আমার ইবাদাত কর এবং আমার স্মরণার্থে সালাত কায়েম কর। [সূরা তাহা-আয়াত-১৪]
আল্লাহ তা‘আলা নামায আদায়ের ব্যাপারে তাঁর নাবী ঈসা (আলাইহিস্ সালাম) কে আদেশ করেছেন।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন ঃ
وجعلني مباركاً أين ما كنت وأوصاني بالصلاة والزكاة مادمت حياً [سورة مريم،الآية:৩১].
অর্থ ঃ যেখানেই আমি থাকি না কেন তিনি আমাকে বরকতময় করেছেন, তিনি আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন যতদিন জীবিত থাকি ততদিন সালাত ও যাকাত আদায় করতে। [সূরা মারয়াম-আয়াত- ৩১]
আল্লাহ আমাদের নাবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর মি‘রাজ ও ইস্রার রাত্রিতে আসমানে নামায ফরয করেছেন। আর নামায ফরয কালে পঞ্চাশ ওয়াক্ত ছিল। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা হালকা করে পাঁচ ওয়াক্ত করেছেন। ইহা আদায়ে পাঁচ ওয়াক্ত, কিন্তু ছুয়াবে পঞ্চাশ ওয়াক্ত।
والصلوات الخمس هي: - পাঁচ ওয়াক্ত নামায তা হলো ঃ ফজর, যোহর, আসর, মাগরিব ও ঈশা, এর উপর সকল মুসলমানদের ঐক্যমত প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
৩- دليل مشروعيتها:
৩- সালাত-নামায প্রবর্তনের দলীল ঃ
নামাযের প্রবর্তনতা প্রমাণিত হয়েছে একাধিক দলীল দ্বারা। নিুে তার কিছু বর্ণনা করা হল ঃ
প্রথমত ঃ কুরআন হতে ঃ
আল্লাহ তা‘আলা বলেন ঃ
وأقيموا الصلاة وآتوا الزكاة [سورة البقرة، الآية: ৪৩].
অর্থ ঃ তোমরা সালাত কায়েম কর ও যাকাত প্রদান কর। [সূরা আল-বাক্বারাহ-আয়াত-৪৩]
তিনি আরো বলেন ঃ
إن الصلاة كانت على المؤمنين كتابا موقوتاً [سورة النساء، الآية: ১০৩].
অর্থ ঃ নির্ধারিত সময়ে সালাত কায়েম করা মু‘মিনদের জন্য অবশ্য কর্তব্য। [সূরা আন-নিসা-আয়াত-১০৩]
তিনি আরো বলেন ঃ
وما أمروا إلا ليعبدوا الله مخلصين له الدين حنفاء ويقيموا الصلاة ويؤتوا الزكاة [سورة البينة، الآية:৫].
অর্থ ঃ তারা তো আদিষ্ট হয়েছিল আল্লাহর আনুগত্যে বিশুদ্ধচিত্ত হয়ে একনিষ্টভাবে তাঁর ইবাদাত করতে এবং সালাত কায়েম করতে ও যাকাত দিতে। [সূরা আল-বায়্যিনা-আয়াত-৫]
দ্বিতীয়ত ঃ হাদীস হতে ঃ
(১) ইবনে উমার (রাযিআল্লাহু আনহুমা) হতে বর্ণিত হাদীস, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন ঃ
((بني الإسلام على خمس، شهادة أن لا إله إلا الله، وأن محمداً رسول الله، وإقام الصلاة وإيتاء الزكاة، وحج البيت، وصوم رمضان)) [متفق عليه].
অর্থ ঃ ইসলাম পাঁচটি স্তম্ভের উপর প্রতিষ্ঠিত। আল্লাহ ছাড়া কোন সত্য মা‘বুদ নেই, মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আল্লাহর রাসূল এ স্যা দান করা। নামায প্রতিষ্ঠা করা। যাকাত প্রদান করা। বায়তুল্লাহ শরীফের হাজ্জ করা। রামাযানের রোযা রাখা। [বুখারী ও মুসলিম ]
(২) উমার বিন খাত্তাব (রাযিআল্লাহু আনহু) এর হাদীস, যাতে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন ঃ
((الإسلام أن تشهد أن لا إله إلا الله وأن محمداً رسول الله - -، وتقيم الصلاة وتؤتي الزكاة، وتصوم رمضان وتحج البيت إن استطعت إليه سبيلاً )) [رواه مسلم].
অর্থ ঃ ইসলাম হলো, আল্লাহ ছাড়া সত্য কোন মা‘বুদ নেই এবং মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আল্লাহর রাসূল এ স্যা দেওয়া, নামায প্রতিষ্ঠা করা, যাকাত প্রদান করা, রামাযান মাসের রোযা রাখা, সামর্থ্য থাকলে বায়তুল্লাহ এর হাজ্জ করা।
[মুসলিম শরীফ]
(৩) ইব্নে আব্বাস (রাযিআল্লাহু আনহুমা) এর হাদীস ঃ
((أن النبي - - بعث معاذاً إلى اليمن فقال: ادعهم إلى شهادة أن لا إله إلا الله وأن محمداً رسول الله، فإن هم أطاعوك لذلك فأعلمهم أن الله افترض عليهم خمس صلوات في كل يوم وليلة)) [متفق عليه].
অর্থ ঃ নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মুআয (রাযিআল্লাহু আনহু) কে ইয়ামানে প্রেরণ করলেন এবং (তাঁকে) বল্লেন ঃ যে, তুমি তাদেরকে (আহলে কিতাবদেরকে) (লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহুÑ) আল্লাহ ছাড়া কোন সত্য মা‘বুদ নেই এবং মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আল্লাহর রাসূল এই স্যা দানের দিকে আহ্বান কর। যদি তারা এই দাও‘আত গ্রহণ করে তোমার আনুগত্য করে তবে তুমি তাদেরকে জানাও যে, আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের উপর দিনে-রাতে পাঁচ ওয়াক্ত নামায ফরয করেছেন। [বুখারী মুসলিম ]
তৃতীয়ত ঃ ইজমা ঃ
সকল মুসলমান পাঁচ ওয়াক্ত নামায ফরয হওয়ার উপর একমত হয়েছেন। আর ইহা ইসলামের ফরয সমূহের অন্যতম একটি ফরয।
৪- الحكمة في مشروعيتها:
৪- সালাত-নামায প্রবর্তনের পিছনে হিক্মাত ঃ
একাধিক হিক্মাত ও রহস্যকে সামনে রেখে নামায প্রবর্তন করা হয়েছে। নিুে তার কিছু ইঙ্গিত করা হলো ঃ
(১) আল্লাহ তা‘আলার জন্য বান্দার দাসত্ব প্রকাশ করার ল্েয, সে তাঁর দাস, এই নামায আদায়ের দ্বারা মানুষ উবূদীয়াতের অনুভূতি লাভ করে, এবং সে সর্বদায় তাঁর সৃষ্টি কর্তার সাথে সম্পর্ক স্থাপন করে থাকে।
(২) এই নামায তার প্রতিষ্ঠা কারীকে আল্লাহর সাথে সুদৃঢ় সম্পর্ক স্থাপন কারী ও সর্বদায় স্বরণ কারী করে রাখে।
(৩) নামায তার আদায় কারীকে নির্লজ্জ ও অন্যায় কাজ হতে বিরত রাখে, আর ইহা বান্দাকে পাপ ভুল-ত্র“টি হতে পবিত্র করার মাধ্যম।
জাবির বিন আব্দুল্লাহ (রাযিআল্লাহু আনহুমা) এর হাদীসই তার প্রমাণ।
তিনি বলেন ঃ রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন ঃ
((مثل الصلوات كمثل نهر جار يمر على باب أحدكم يغتسل منه كل يوم خمس مرات))[رواه مسلم].
অর্থ ঃ পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের উপমা ঐ প্রবহমান নদীর ন্যায় যা তোমাদের কারো দরজার পাশ দিয়ে বয়ে গেছে, তথায় সে প্রতি দিন পাঁচ বার গোসল করে। [মুসলিম শরীফ]
(৪) নামায অন্তরের তৃপ্তি, আতœার শান্তি, ও মুক্তি দানকারী ঐ বিপদ-আপদ হতে যা তাকে কলুষিত করে। এ জন্যই ইহা রাসূলের র্কুরাতুল আইন-নয়ন সিক্তকারী। নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যখন কোন কঠিন কাজের সম্মুখীন হতেন, তখন তিনি নামায আদায়ের দিকে ছুটে যেতেন। এমনকি তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলতে থাকতেন ঃ
((يا بلال أرحنا بالصلاة)) [ أخرجه أحمد].
অর্থ ঃ হে বিলাল ! নামাযের দ্বারা তুমি আমাকে শান্তি দাও। [আহ্মাদ ]
৫- من تجب عليه الصلاة:
৫- কাদের উপর নামায ফরয ঃ
প্রত্যেক প্রাপ্ত বয়স্ক জ্ঞানী মুসলিম ব্যক্তির উপর নামায ফরয। চাই পুরুষ হোক বা নারী হোক। কাফিরের উপর নামায ফরয নয়। এর অর্থ-দুনিয়াতে সে এর আদিষ্ট নয়, কারণ তার কুফরী অবস্থায় তার প থেকে ইহা শুদ্ধ হবেনা। তবে ইহা ছেড়ে দেওয়ার কারণে আখিরাতে তাকে শাস্তি দেওয়া হবে। কারণ ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে ইহা আদায় করা তার জন্য সম্ভব ছিল, কিন্তু সে তা করে নাই।
এর প্রমাণ আল্লাহর বাণী ঃ
ما سلككم في سقر. قالوا لم نك من المصلين. ولم نك نطعم المسكين. وكنا نخوض مع الخائضين. وكنا نكذب بيوم الدين. حتى أتانا اليقينُ [سورة المدثر، الآية: ৪২-৪৭].
অর্থ ঃ তোমাদেরকে কিসে সাকার নামক জাহান্নামে নিপে করেছে ? উহারা বলবে, আমরা মুসল্লীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলাম না, আমরা অভাবগ্রস্থকে আহার্য দান করতাম না, এবং আমরা আলোচনাকারীদের সহিত আলোচনায় নিমগ্ন থাকতাম। আমরা কর্মফল দিবস অস্বীকার করতাম, আমাদের নিকট মৃত্যুর আগমণ পর্যন্ত। [সূরা আল-মুদ্দাছ্ছির-আয়াত-৪২-৪৭]
আর বাচ্চাদের উপরও ফরয নয়। কারণ সে মুকাল্লাফ-প্রাপ্ত বয়স্ক নয়। পাগলের উপরও ফরয নয়। ঋতু ও নিফাস গ্রস্থ মহিলাদের উপরও ফরয নয়। কারণ শরী‘আত তাদের হতে এর বিধান তুলে নিয়েছে, ইহা আদায়ে বাঁধা প্রদান কারী নাপাকির কারণে।
বাচ্চা সে ছেলে হোক বা মেয়ে হোক তার বয়স যখন সাত বছর হবে তখন তার অভিভাবকের উপর তাকে নামাযের আদেশ দেওয়া আবশ্যক। আর যখন তার বয়স দশ বছর হবে তখন নামায আদায় না করলে তার অভিভাবকের উপর তাকে প্রহার করা আবশ্যক। হাদীসে এর বর্ণনা এসেছে। যাতে সে তা আদায়ে অভ্যস্ত ও আগ্রহী হয়।
৬- حكم تارك الصلاة:
৬ - সালাত-নামায ত্যাগ কারীর বিধান ঃ
যে ব্যক্তি নামায ছেড়ে দিল সে ইসলাম হতে বহিস্কৃত হয়ে গেল এবং কুফরী করলো।
ইসলামের মৌলিক বিধি-বিধান হতে মুর্তাদ ব্যক্তিদের
অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেল। কারণ আল্লাহ তা‘আলা তার উপর যে বিধি-বিধান ফরয করেছেন তা ছেড়ে দিয়ে সে তাঁর নাফারমানী করেছে। তাই তাকে তাওবার আদেশ দেওয়া হবে। যদি তাওবা করে ও নামায প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ফিরে আসে তবে ভাল, অন্যথায় সে ইসলাম হতে মুর্তাদ হয়ে যাবে। তার গোসল, কাফন, জানাযার নামায পড়া, মুসলমানদের কবরে দাফন করা নিষেধ। কারণ সে তাদের (মুসলমানদের) অন্তর্ভুক্ত নয়।
৭- شروطها:
৭ - সালাতের-নামাযের শর্ত সমূহ ঃ
(১) ইসলাম-মুসলিম হওয়া।
(২) জ্ঞানবান হওয়া।
(৩) ভাল-মন্দ পার্থক্যের জ্ঞান থাকা।
(৪) নামাযের সময় উপস্থিত হওয়া।
(৫) নিয়াত করা।
(৬) ক্বিব্লা মুখী হওয়া।
(৭) সতর ঢাকা, পুরুষের সতর নাভী হতে হাঁটু পর্যন্ত। আর মহিলা তার স¤পূর্ণ শরীরই নামাযে সতর, তার মুখ ও হাতের তালুদ্বয় ছাড়া।
(৮) মুসল্লির কাপড়, শরীর ও নামায পড়ার স্থান হতে নাপাকি দূর করা।
(৯) হাদছ দূর করা, আর ইহা-নাপাকি হতে অযু গোসল করে পবিত্র হওয়াকে বুঝায়।
৮- أوقاتها:
৮ - সালাতের-নামাযের সময় ঃ
(১) যোহর নামাযের সময় ঃ সূর্য ঢলে যাওয়া হতে-অর্থাৎ মধ্য আকাশ হতে সূর্যের পশ্চিম দিকে ঢলে যাওয়া হতে নিয়ে প্রত্যেক বস্তুর ছায়া তার সমপরিমাণ হওয়া পর্যন্ত।
(২) আসর নামাযের সময় ঃ যোহর নামাযের সময় চলে যাওয়া হতে নিয়ে প্রত্যেক বস্তুর ছায়া তার দ্বিগুন হওয়া পর্যন্ত। আর তা হল সূর্য হলদে হওয়া সময় পর্যন্ত।
(৩) মাগরিব নামাযের সময় ঃ সূর্য ডুবা হতে নিয়ে লালিমা দূরীভূত হওয়া পর্যন্ত। আর তা হল ঐ লালটে ভাব যা পশ্চিম আকাশে সূর্য ডুবার পর প্রকাশিত হয়।
(৪) ঈশার নামাযের সময় ঃ মাগরিবের নামাযের সময় চলে যাওয়া হতে অর্ধ রাত্রি পর্যন্ত।
(৫) ফজর নামাযের সময় ঃ ফজরে সানী প্রকাশ হওয়া থেকে নিয়ে সূর্য উদয় হওয়া পর্যন্ত।
এর প্রমাণ আব্দুল্লাহ বিন আমর (রাযিআল্লাহু আনহু) এর হাদীস, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন ঃ
((وقت الظهر إذا زالت الشمس وكان ظل الرجل كطوله مالم يحضر العصر، ووقت صلاة المغرب مالم يغب الشفق، ووقت صلاة العشاء إلى نصف الليل الأوسط، ووقت صلاة الصبح من طلوع الفجر مالم تطلع الشمس، فإذا طلعت الشمس فأمسك عن الصلاة---)) الحديث.[رواه مسلم].
অর্থ ঃ যোহরের সময় ঃ যখন সূর্য ঢলে যাবে, মানুষের ছায়া তার সমপরিমাণ হবে। আসরের নামাযের সময় হওয়া পর্যন্ত থাকবে। আর মাগরিবের নামাযের সময় সূর্য ডুবা হতে নিয়ে লালিমা পর্যন্ত। আর ঈশারের নামাযের সময় মাগরিবের নামাযের সময় চলে যাওয়া থেকে মধ্য রাত্রি পর্যন্ত। আর ফজরের নামাযের সময় ফজর প্রকাশিত হওয়া থেকে সূর্য উদিত হওয়া পর্যন্ত, আর তখন (সূর্য উদয়ের সময়) নামায পড়া হতে বিরত থাক। আল-হাদীস, [মুসলিম শরীফ]
৯- عدد ركعاتها:
৯- ফরয নামাযের রাকা‘আতের সংখ্যা ঃ
ফরয নামাযের রাকা‘আতের সংখ্যা সর্বমোট সতের রাকা‘আত। নিুে তার তালিকা দেওয়া হল ঃ
(১) যোহর ঃ চার রাকা‘আত।
(২) আসর ঃ চার রাকা‘আত।
(৩) মাগরিব ঃ তিন রাকা‘আত।
(৪) ঈশা ঃ চার রাকা‘আত।
(৫) ফজর ঃ দু’ রাকা‘আত।
যদি কোন ব্যক্তি ইচ্ছাকৃত ভাবে এই রাকা‘আতের সংখ্যায় বাড়ায় বা কমায় তবে তার নামায বাতিল হয়ে যাবে। আর যদি তা ভুলবশতঃ হয় তবে তা সিজ্দায় সাহুর দ্বারা পূর্ণ করবে। এই সংখ্যা মুসাফির ব্যক্তির জন্য নয়। তার জন্য চার রাকা‘আত বিশিষ্ঠ নামায গুলো দু’ রাকা‘আতে কছর করে পড়া মুস্তাহাব। এই পাঁচ ওয়াক্ত নামায তার নির্ধারিত সময়ে পড়া মুসলিম ব্যক্তির উপর ওয়াজিব, যদি কোন শারয়ী অজর (যেমন-নিদ্রা, ভুলে যাওয়া, ভ্রমণে যাওয়া,) না থাকে। যে ব্যক্তি নামায আদায় না করে ঘুমিয়ে যাবে বা ভুলে যাবে সে তা পড়ে নিবে যখন স্বরণ হবে।
১০- فرائضها:
১০- নামাযের ফরয সমূহ ঃ
(১) সামর্থ্য থাকলে দাঁড়ানো।
(২) তাক্বীরে তাহ্রীমাহ।
(৩) সূরা ফাতিহা পাঠ করা।
(৪) রুকু‘ করা।
(৫) রুকু‘ হতে উঠে সোজা হয়ে দাঁড়ানো।
(৬) সাত অঙ্গের উপর সিজ্দা করা।
(৭) সিজ্দা হতে উঠা।
(৮) শেষ বৈঠকে তাশাহ্হুদ পড়া।
(৯) তাশাহ্হুদ কালে বসা।
(১০) নামাযের এই রুক্ন গুলো সম্পাদনে স্থিরতা বজায় রাখা।
(১১) এই রুক্ন গুলো ধারাবাহিক ভাবে আদায় করা।
(১২) ডানে ও বামে দুই সালাম প্রদান করা বা সালাম ফিরানো।
১১- واجباتها:
১১- নামাযের ওয়াজিব সমূহ ঃ
নামাযের ওয়াজিব সমূহ আটটি ঃ
প্রথম ঃ তাক্বীরে তাহ্রীমার তাক্বীর ছাড়া নামাযে অন্যান্য তাক্বীর সমূহ।
দ্বিতীয় ঃ ((سمع الله لمن حمده))(সামিয়াল্লাহু লিমান হামিদা) বলা। আর ইহা ইমাম ও একাকী নামায আদায় কারীর জন্য ওয়াজিব। তবে মুক্তাদী ইহা পাঠ করবে না।
তৃতীয় ঃ ইমাম, মুক্তাদী ও একাকী নামায আদায় কারী সকলের উপর ((ربناولك الحمد)) (রাব্বানা ওয়ালাকাল হাম্দ) বলা ওয়াজিব।
চতুর্থ ঃ রুকুতে ((سبحان ربي العظيم)) (সুব্হা-না রাব্বিয়াল আজীম) বলা।
পঞ্চম ঃ সিজ্দায় ((سبحان ربي الأعلى)) (সুব্হা-না রাব্বিয়াল আ‘লা) বলা।
ষষ্ঠ ঃ দু’সিজ্দার মাঝে ((رب غفر لي)) (রাব্বিগ ফিরলী) বলা।
সপ্তম ঃ প্রথম বৈঠকে তাহিয়্যাত পড়া, আর তা হলো ঃ
((التحيّات لله والصلوات والطيبات، السلام عليك أيها النبي ورحمة الله وبركاته، السلام علينا وعلى عباد الله الصالحين، أشهد أن لا إله إلا الله، وأشهد أن محمداً عبده ورسوله))
উচ্চারণ ঃ আত্তাহিয়্যা-তু লিল্লা-হি ওয়াস্ সালা-ওয়া-তু ওয়াত্ তাইয়্যেবা-তু, আস্সালা-মু আলাইকা আইউ হান্নাবিয়্যু ওয়া রাহ্মাতুল্লা-হি ওয়া বারাকা-তুহ। আস্সালা-মু আলাইনা-ওয়া আ‘লা-ইবাদিল্লা-হিস্ স-লিহীন। আশ্হাদু আল্লা-ইলা-হা ইল্লাল্লাহু ওয়াশ্ হাদু আন্না মুহাম্মাদান আব্দুহু ওয়া রাসূলুহ।
বা অনুরূপ প্রমাণিত তাহিয়্যাত পাঠ করা।
অষ্টম ঃ প্রথম বৈঠকের জন্য বসা। আর যারাই ইচ্ছাকৃত ভাবে এই ওয়াজিব সমূহের কোন একটি ওয়াজিব ছেড়ে দিবে তাদেরই নামায বাতিল হয়ে যাবে।
আর যে ব্যক্তি ইহা ছেড়ে দিবে অজ্ঞতা বা ভুল বঃশত সে সাহু সিজ্দা দিবে।
১২- صلاة الجماعة:
১২ - জামা‘আতে নামায ঃ
মাসজিদে জামা‘আতের সাথে পাঁচ ওয়াক্ত নামায পড়া মুসলিম ব্যক্তির উপর আবশ্যক। এতে সে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও ছাওয়াব অর্জন করতে পারবে।
একা নামায পড়ার চাইতে জামা‘আতে নামায পড়ার ছাওয়াব সাতাশ গুণ বেশী।
ইব্নে উমার (রাযিআল্লাহু আনহুমা) এর বর্ণিত হাদীসে আছে, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন ঃ
((صلاة الجماعة أفضل من صلاة الفذ بسبع وعشرين درجة)) [متفق عليه].
অর্থ ঃ জামা‘আতে নামায পড়া, একা নামায পড়ার চাইতে সাতাশ গুণ (ছাওয়াব) বেশী। [বুখারী ও মুসলিম ]
তবে মুসলিম রমণীর নিজ বাড়ীতে নামায পড়া জামা‘আতে নামায পড়ার চাইতে উত্তম।
১৩- مبطلاتها:
১৩- নামায বাতিল (নষ্ট) কারী বিষয় সমূহ ঃ
নিুে বর্ণিত কর্ম সমূহের যে কোন একটি কর্ম সম্পাদনের দ্বারা নামায বাতিল হয়ে যাবে।
(১) ইচ্ছাকৃত পানাহার করা।
যে ব্যক্তি নামায অবস্থায় পানাহার করবে তার উপর ঐ নামায পুনরায় পড়া আবশ্যক হওয়ার উপর উলামাগণের ইজমা রয়েছে।
(২) নামাযের মাসলাহাতের (কল্যাণ মূলক) বহির্ভূত এমন বিষয়ে ইচ্ছাকৃত কথা বলা।
এ ব্যাপারে যায়েদ বিন আরকাম (রাযিআল্লাহু আনহু) বলেন ঃ ((كنا نتكلم في الصلاة))
অর্থ ঃ আমরা নামাযে কথা বলতাম, আমাদের কেহ কেহ নামাযে তার পাশের সাথীর সাথে কথা বলতো।
এমতাস্থায় নিুের আয়াত অবতীর্ণ হল ঃ
وقوموا لله قانتين [سورة البقرة، الآية: ২৩৮].
অর্থ ঃ আল্লাহর উদ্দেশ্যে তোমরা বিনীতভাবে দাঁড়াবে।
[সূরা আল-বাক্বারাহ-আয়াত-২৩৮]
((فأمرنا بالسكوت ونهينا عن الكلام))
[رواه البخاري و مسلم].
অর্থ ঃ অতঃপর আমরা চুপ থাকার আদেশ প্রাপ্ত হলাম। আর কথা বলা হতে নিষেধ প্রাপ্ত হলাম। [বুখারী ও মুসলিম]
এমনিভাবে ইজমা সংঘটিত হয়েছে ঐ ব্যক্তির নামায ফাসেদ হওয়ার ব্যাপারে যে, নামাযে তার মাসলাহাতের বহির্ভূত ব্যাপারে ইচ্ছাকৃত কথা বলবে।
(৩) ইচ্ছাকৃত অনেক বেশী কাজ করা। আর অধিক কাজের পরিমাণ নির্ণয় করার মানদন্ড হল ঃ নামাযির দিকে দৃষ্টি পাত কারীর নিকট মনে হবে যে, সে নামাযের মাঝে নয়।
(৪) বিনা অজরে ইচ্ছাকৃত নামাযের কোন রুক্ন বা শর্ত ছেড়ে দেওয়া। যেমন বিনা অযুতে নামায পড়া, বা ক্বিবলা মুখী না হয়ে নামায পড়া। অর্থাৎ ক্বিবলা ছেড়ে অন্য দিক হয়ে নামায পড়া।
এ ব্যাপারে ইমাম বুখারী ও মুসলিম হাদীস বর্ণনা করেছেন ঃ নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ঐ বেদুঈনকে বলেছেন, যে তার নামায সুন্দর করে পড়তে পারে নাই।
((ارجع فصل فإنك لم تصلّ)) (অর্থ ঃ ফিরে যাও নামায পড়, কেননা তুমি নামায পড় নাই।)
(৫) নামাযে হাঁসা। কারণ হাঁসি দ্বারা নামায বাতিল হয়ে যাওয়ার উপর ইজমা সংঘটিত হয়েছে।
১৪- أوقات النهي عن الصلاة:
১৪- নামাযের নিষিদ্ধ সময় সমূহ ঃ
(১) ফজর নামাযের পর হতে নিয়ে সূর্য উঠা পর্যন্ত।
(২) ঠিক দুপুর সময়।
(৩) আসর নামাযের পর হতে সূর্য ডুবা পর্যন্ত।
এই সময় সমূহে নামায পড়া মাক্রুহ হওয়ার উপর দলীল হল উক্ববা বিন আমির (রাযিআল্লাহু আনহু) এর হাদীস, তিনি বলেন ঃ
((ثلاث ساعات كان رسول الله- - ينهانا أن نصلي فيهن وأن نقبر فيهن موتانا، حين تطلع الشمس بازغة حتى ترتفع، وحين يقوم قائم الظهيرة حتى تميل الشمس، وحين تضَّف الشمس للغروب حتى تغرب)) [رواه مسلم].
অর্থ ঃ রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাদেরকে তিন সময়ে নামায পড়তে ও আমাদের মৃত্যু ব্যক্তিদেরকে দাফন করতে নিষেধ করতেন।
(১) সূর্য স্পষ্ট ভাবে উদিত হওয়ার সময় হতে নিয়ে তা (উর্ধে উঠা) পর্যন্ত।
(২) ঠিক দুপুরে সূর্য উঁচু হওয়া হতে নিয়ে সূর্য ঢলে যাওয়া পর্যন্ত।
(৩) সুর্য অস্তমুখী হওয়া থেকে নিয়ে তা ডুবা পর্যন্ত। [মুসলিম ]
আরো দলীল হলো আবু সাঈদ (রাযিআল্লাহু আনহু) এর হাদীস, নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন ঃ
(( لا صلاة بعد صلاة العصر حتى تغرب الشمس، ولا صلاة بعد صلاة الفجر حتى تطلع الشمس)) [متفق عليه].
অর্থ ঃ আসরের নামাযের পর হতে নিয়ে সূর্য ডুবা পর্যন্ত, ফজরের নামাযের পর হতে নিয়ে সূর্য উদিত হওয়া পর্যন্ত কোন নামায নাই। [বুখারী ও মুসলিম]
১৫- إجمال صفة الصلاة:
১৫- নামাযের পদ্ধতির সংপ্তি বর্ণনা ঃ
মুসলিম ব্যক্তির উপর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর অনুসরণ করা ওয়াজিব।
নামায পড়ার পদ্ধতিও তাঁর অনুসরণের অন্তর্ভুক্ত।
কারণ তিনি বলেছেন ঃ
((صلوا كما رأيتموني أصلي)) [رواه البخاري].
অর্থ ঃ তোমরা নামায পড়, যে ভাবে আমাকে নামায পড়তে দেখেছ। [বুখারী মুসলিম ]
নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যখন নামায পড়ার ইচ্ছা করতেন, আল্লাহ তা‘আলার সামনে দাঁড়াতেন।
অন্তরে নামাযের নিয়্যাত করতেন, নিয়্যাত মুখে উচ্চারণ করার ব্যাপারে তাঁর প হতে কোন হাদীস বর্ণিত হয় নাই।
আর (الله أكبر) “আল্লাহু আক্বার” বলে তাক্বীর দিতেন। এই তাক্বীরের সাথে তাঁর হস্তদ্বয় উত্তোলন করতেন দুই কাঁধ সমপরিমাণ, আর কখনো কখনো দুই কানের লতি পর্যন্ত। তাঁর ডান হাত বাম হাতের উপর রেখে বুকের উপর ধারণ করতেন।
নামায আরম্ভ করার দু‘আ সমূহের যে কোন একটি দু‘আ দিয়ে নামায শুরু করতেন তন্মধ্যে এটি।
(سبحانك اللهم وبحمدك وتبارك اسمك وتعالى جدك ولا إله غيرك)
উচ্চারণ ঃ সুব্হা-নাকা আল্লাহুম্মা ওয়া বিহাম্দিকা ওয়া তাবা-রাকাস্মুকা ওয়া তা‘আ-লা যাদ্দুকা ওয়ালা-ইলা-হা গাইরুকা।
অর্থ ঃ হে আল্লাহ ! আপনার প্রশংসার সহিত পবিত্রতা বর্ণনা করছি। আপনার নাম মহিমান্বিত, আপনার সত্ত্বা অতি উচ্চে প্রতিষ্ঠিত, আর আপনি ছাড়া ইবাদাতের যোগ্য কোন উপাস্য নেই।
এই দু‘আটি নামায আরম্ভ করার দু‘আ সমূহের অন্তর্ভুক্ত। তার পর সূরা ফাতিহার সাথে আরো একটি সূরা পড়তেন। তার পর হস্তদ্বয় (প্রথম বারের ন্যায়) উত্তোলন করে তাক্বীর দিয়ে রুকুতে যেতেন, আর রুকুতে পিঠ সোজা করে রাখতেন, এমনকি যদি নিজের পিঠের উপর পানির পাত্র রাখা হত, তবে তা স্থীর থাকতো।
(سبحان ربي العظيم) “সুবহা-না রাব্বিয়াল আযীম” তিন বার পড়তেন।
অতঃপর হস্তদ্বয় উত্তোলন করে মুখে (سمع الله لمن حمده، ربنا ولك الحمد) “সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ রাব্বানা ওয়া-লাকাল হাম্দ” বলে রুক‘ু হতে উঠে স্থীর হয়ে দাঁড়াতেন। অতঃপর তাক্বীর বলে সিজ্দা করতেন, সিজ্দা অবস্থায় নিজ হস্তদ্বয় নিজ বরে পার্শ্ব দ্বয় হতে দূরে রাখতেন, এতে বগলের শুভ্র প্রকাশিত হয়ে যেত। তাঁর সাত অঙ্গ নাক সহ কপাল, তালুদ্বয়, হাঁটুদ্বয়, পাদ্বয়ের মাথা, মাটিতে রেখে সিজ্দা করতেন, (سبحان ربي الأعلى) “সুব্হা-না রাব্বিয়াল আ’লা” তিনবার বলতেন। অতঃপর ডান পা খাড়া রেখে সকল আঙ্গুলের মাথা ক্বিবলা মুখী করে আল্লাহু আকবার বলে বাম পার উপর বসতেন। আর এই বৈঠকে,
(رب اغفرلي وارحمني واجبرني وارفعني واهدني وعافني وارفعني)
উচ্চারণ ঃ রাব্বিগ্ফিরলি ওয়ার হাম্নী ওয়াজাবরিনী ওয়ার ফা‘নী ওয়াহ্দিনী ওয়া আ‘ফিনী ওয়ার ফা‘নী।
এই দু‘আ তিনবার পড়তেন। অতঃপর আল্লাহু আক্বার বলতেন ও সিজ্দা করতেন। অতঃপর দ্বিতীয় রাকা‘আতের জন্য তাক্বীর দিতেন। নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) প্রত্যেক রাক‘আতে অনুরূপ করতেন। অতঃপর দু’ রাকা‘আতের পর যখন প্রথম বৈঠকের জন্য বসতেন তখন বলতেন,
((التحيّات لله والصلوات والطيبات، السلام عليك أيها النبي ورحمة الله وبركاته، السلام علينا وعلى عباد الله الصالحين، أشهد أن لا إله إلا الله، وأشهد أن محمداً عبده ورسوله))
উচ্চারণ ঃ আত্তাহিয়্যা-তু লিল্লা-হি ওয়াস্ সালা-ওয়া-তু ওয়াত্ তাইয়্যেবা-তু, আস্সালা-মু আলাইকা আইউ হান্নাবিয়্যু ওয়া রাহ্মাতুল্লা-হি ওয়া বারাকা-তুহ। আস্সালা-মু আলাইনা-ওয়া আ‘লা-ইবাদিল্লা-হিস্ স-লিহীন। আশ্হাদু আল্লা-ইলা-হা ইল্লাল্লাহু ওয়াশ্ হাদু আন্না মুহাম্মাদান আব্দুহু ওয়া রাসূলুহ।
তার পর তাকবীর দিয়ে দন্ডায়মান হয়ে দু’ হাত উত্তোলন করতেন। (তৃতীয় রাকা‘আতের জন্য) আর ইহা নামাযের চতুর্থ স্থান যেখানে নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) হস্তদ্বয় উত্তোলন করেছেন। তার পর নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যখন শেষ বৈঠকের জন্য তা হলো মাগরিবের তৃতীয় রাক‘আতের শেষে বা যোহর, আসর, ও ঈশার চতুর্থ রাক‘আতের শেষে-বসতেন তখন তাওর্য়ারুক করে বসতেন।
বাম পা ডান পায়ের নলীর নীচ দিয়ে বের করে দিয়ে ডান পা কিব্লা মুখী অবস্থায় খাড়া রেখে নিতম্বের উপর বসতেন। হাতের সমস্ত আঙ্গুল বন্ধ রাখতেন, শুধু শাহাদাত আঙ্গুল তার প্রতি দৃষ্টি রেখে ইশারা বা নাড়ানোর জন্য খোলা রাখতেন। অতঃপর যখন তাশাহুদ শেষ করতেন তখন ডান দিকে আস্সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ ও বাম দিকে আস্সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ বলে সালাম ফিরাতেন। এমনকি তাঁর গালের শুভ্রতা প্রকাশ পেয়ে যেতে।
নামাযের এই পদ্ধতি রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়সাল্লাম) এর অনেক হাদীসে বর্ণিত হয়েছে।
ইহা নামাযের বিধান সমূহের কিছু বিধান যার উপর কর্মের সঠিকতা নির্ভর করে, আর তার (বান্দার) যদি নামায ঠিক হয়ে যায় তবে তার সকল কর্ম ঠিক হয়ে যাবে। আর যদি নামায নষ্ট-ফাসেদ হয়ে যায় তবে তার সকল কর্ম নষ্ট-ফাসেদ হয়ে যাবে। আর কিয়ামাত দিবসে সর্ব প্রথম বান্দার নামাযের হিসাব নেওয়া হবে যদি সে ইহা পুরোপুরি ভাবে আদায় করে তবে সে আল্লাহর সন্তষ্টি লাভের মাধ্যমে উত্তীর্ণ হবে। আর যদি সে ইহা হতে কিছু ছেড়ে দেয় তবে সে ধ্বংস হবে। আর নামায (মানুষকে) বেহায়াপানা ও অন্যায় কাজ হতে বিরত রাখে। আর ইহা মানব আতœার রোগের চিকিৎসা যাতে ইহা (আত্মা) হীন স্বভাব হতে পরিস্কার পরিছন্ন হতে পারে।