যাকাত ।

الركن الثالث: الزكاة.
তৃতীয় রুক্ন ঃ যাকাত ।
১- تعريفها:
১- যাকাতের সংজ্ঞা ঃ
الزكاة لغة:- যাকাতের শাব্দিক অর্থ ঃ বৃদ্ধি পাওয়া, বেশী হওয়া। কখনো প্রশংসা, পবিত্র করন ও সংশোধন এর অর্থে ব্যবহৃত হয়। আর মালের যে অংশ বের করা হয় তাকে যাকাত বলে। কারণ এর দ্বারা বরকতের মাধ্যমে মাল বৃদ্ধি পায়, আর মার মাধ্যমে ব্যক্তিকে পবিত্র করা হয়।
واصطلاحاً: - যাকাতের পারিভাষিক অর্থ ঃ নির্ধারিত সময়ে নির্দিষ্ঠ গোষ্টির জন্য নির্ধারিত মালে অত্যাবশকীয় হক্ব বের করা।
২- مكا نتها في الإسلام:
২- ইসলামে যাকাতের স্থান ঃ
যাকাত ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের অন্যতম একটি স্তম্ভ।
আল-কুরআনে বহু স্থানে সালাতের সাথে যাকাতের আলোচনা হয়েছে।
যেমন-আল্লাহ তা‘আলা বলেন ঃ
وأقيموا الصّلاة وآتوا الزّكاة[سورة البقرة، الآية: ৪৩].
অর্থ ঃ তোমরা সালাত কায়েম কর ও যাকাত প্রদান কর।
[সূরা আল-বাক্বারাহ-আয়াত-৪৩]
তিনি আরো বলেন ঃ
ويقيموا الصّلاة ويؤتوا الزّكاة[سورة البينة، الآية: ৫].
অর্থ ঃ এবং (তারা আদিষ্ট হয়েছিল) সালাত কায়েম করতে, এবং যাকাত প্রদান করতে। [সূরা আল-বায়্যিনাহ-আয়াত-৫]
নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন ঃ
((بني الإسلام على خمس)) وذكر منها ((إيتاء الزكاة))
[متفق عليه من حديث ابن عمر رضي الله عنهما].
অর্থ ঃ ইসলাম পাঁচটি স্তম্ভের উপর প্রতিষ্ঠিত, তন্মধ্যে যাকাত আদায় করা অন্যতম একটি রুক্ন। [এই হাদীসটি বুখারী ও মুসলিম একত্রিত ভাবে ইবনে উমার (রাযিআল্লাহু আনহুমা) হতে বর্ণনা করেছেন]
আল্লাহ মানব জাতির আতœাকে কৃপণতা, বখীলতা ও লোভ-লালসা হতে পবিত্র করার জন্য, ফকীর-মিসকীন ও অভাবীদের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করার জন্য, মালকে পবিত্র ও বৃদ্ধি করার জন্য, তথায় বরকত অবতীর্ণ করার জন্য, তাকে বিপদ-আপদ ও বিপর্যয় হতে রা করার জন্য এবং জাতির জীবন ও সৌভাগ্য প্রতিষ্ঠা করার জন্য যাকাত প্রবর্তন করেছেন।
আল্লাহ তাঁর কিতাবে যাকাত গ্রহণের হিক্মাত উল্লেখ করেছেন।
যেমন তিনি বলেন ঃ
خذ من أموالهم صدقة تطهّرهم وتزكّيهم بها[سورة التوبة، الآية: ১০৩].
অর্থ ঃ তুমি তাদের সম্পদ হতে সাদ্কা (যাকাত) গ্রহণ কর। ইহার দ্বারা তুমি তাদেরকে পবিত্র এবং আতœশুদ্ধি কর। [সূরা আত্তাওবাহ-আয়াত-১০৩]
৩- حكمها:
৩- যাকাতের বিধান ঃ
প্রত্যেক মুসলিম ব্যক্তি মালের শর্তানুযায়ী নিসাবের মালিক হলে তার উপর যাকাত ফরয। এমনকি বাচ্চা ও পাগলদের প হতে তাদের অভিভাবক তাদের মালের যাকাত আদায় করবেন। যে ব্যক্তি জেনে-বুঝে ইচ্ছাকৃত ভাবে এর ফরয হওয়াকে অস্বীকার করবে সে কাফের হয়ে যাবে। আর যে ব্যক্তি বখীলতা ও অলসতা করে যাকাত দিবেনা এর জন্য তাকে ফাসেক ও কাবীরাহ গুনাহে লিপ্ত বলে গণ্য করা হবে। আর তার যদি এ অবস্থায় মৃত্যু হয় তবে সে আল্লাহর ইচ্ছাধীনে থাকবে।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন ঃ
إنّ الله لا يغفر أن يشرك به ويغفر ما دون ذلك لمن يشاء
[سورة النساء، الآية: ৪৮].
অর্থ ঃ আল্লাহ্ তাঁর সাথে শরীক করার অপরাধ মা করেন না। ইহা ব্যতীত অন্য যে কোন অপরাধ যাকে ইচ্ছা মা করেন। [সূরা আন-নিসা-আয়াত-৪৮]
তার কাছ থেকে যাকাত গ্রহণ করা হবে, আর হারামে পতিত হওয়ায় তাকে তা‘জির (সাময়ীক শাস্তি) করা হবে।
আল্লাহ তা‘আলা যাকাত অস্বীকার কারীকে নিুের বাণী দ্বারা ধমকী দিয়েছেন ঃ
والّذين يكنزون الذهب والفضّة ولا ينفقونها في سبيل الله فبشّرهم بعذاب أليم. يوم يحمى عليها في نار جهنّم فتكوى بها جباههم وجنوبهم وظهورهم هذا ما كنزتم لانفسكم فذوقوا ما كنتم تكنزون[سورة التوبة، الآية:৩৪-৩৫].
অর্থ ঃ আর যারা সোনা রূপা পুঞ্জীভূত করে রাখে এবং তা আল্লাহর পথে ব্যয় করে না তাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির সংবাদ প্রদান করুন। যেদিন জাহান্নামের আগুনে তা উত্তপ্ত করা হবে এবং তা দ্বারা তাদের ললাট, পার্শ্ব ও পৃষ্ঠদেশে দাগ দেওয়া হবে। (এবং সেদিন বলা হবে) ইহাই তা যা তোমরা তোমাদের নিজেদের জন্য পুঞ্জীভূত করে রেখেছিলে। [সূরা আত্তাওবাহ-আয়াত-৩৪-৩৫]
আবু হুরায়রা (রাযিআল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন ঃ
((ما من صاحب كنـز لا يؤدي زكاته إلا أحمي عليه في نار جهنم، فيجعل صفائح، فيكوى بها جنباه وجبنه حتى يحكم الله بين عباده في يوم كان مقداره خمسين ألف سنة ثم يرى سبيله إما إلى الجنة وإما إلى النار)) [الحديث متفق عليه وهذا لفظ مسلم].
অর্থ ঃ মালের মালিক যাকাত আদায় না করলে সে মালকে জাহান্নামের আগুনে গরম করে তক্তা বানানো হবে, তারপর তা দিয়ে তার পার্শ্বদ্বয় ও ললাটে দাগ দিতে থাকবে। আল্লাহ তাঁর বান্দাদের মাঝে ফায়সালা করা পর্যন্ত ঐ দিনে, যে দিন পঞ্চাশ হাজার বছরের সমান হবে। তারপর সে জান্নাতী হলে জান্নাতের পথ আর জাহান্নামী হলে জাহান্নামের পথ দেখবে। [হাদীসটি বুখারী ও মুসলিম একত্রিত ভাবে বর্ণনা করেছেন, তবে শব্দগুলো মুসলিমের]
৪- شروط وجوبها:
৪- যাকাত ওয়াজিব হওয়ার শর্ত ঃ
যাকাত ওয়াজিব হওয়ার জন্য পাঁচটি শর্ত রয়েছে ঃ
প্রথম শর্ত ঃ ইসলাম-কাফেরের উপর যাকাত ফরয নয়।
দ্বিতীয় শর্ত ঃ স্বাধীনতা, অধিকাংশ বিদ্যানগণের নিকট দাসের মালে যাকাত ওয়াজিব নয়। অনুরূপ মুকাতাবের (চুক্তি বদ্ধ কৃতদাস) মালের উপর যাকাত ওয়াজিব নয়। কারণ তার উপর এক দেরহাম আদায় অবশিষ্ট থাকলেও সে দাস হিসাবে গণ্য।
তৃতীয় শর্ত ঃ নিসাবের মালিক হওয়া, আর যদি মাল নিসাব পূর্ণ না হয় তবে তাতে যাকাত ওয়াজিব নয়।
চতুর্থ শর্ত ঃ মালের পূর্ণ মালিক হওয়া, তাই মুকাতাবের দাঈন বা ঋণে যাকাত ফরয নয়। বন্টনের পূর্বে মুযারিব অর্থাৎ মুযারাবা (যৌথ ব্যবসায়) লেন দেনে অংশ গ্রহণ কারীর লভ্যাংশে যাকাত ফরয নয়। অসচ্ছল ব্যক্তির উপর যে ঋণ রয়েছে তা অর্জীত না হওয়া পর্যন্ত তাতে যাকাত ওয়াজিব নয়। আর যে মাল কল্যাণ ও পূণ্যের পথে যেমন মুজাহিদের, মাসজিদের, বসবাসের ও অনুরূপ খাতে ওয়াক্ফ তাতে যাকাত ওয়াজিব নয়।
পঞ্চম শর্ত ঃ এক বছর অতিবাহিত হওয়া। এক বছর অতিবাহিত না হওয়ার আগ পর্যন্ত কোন মালেই যাকাত ওয়াজিব নয়। তবে জমি হতে উৎপন্ন ফসল ও ফল মূল ছাড়া। কারণ তার যাকাত ওয়াজিব হবে তা কাটার ও পাড়ার সময়।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন ঃ
وآتوا حقّه يوم حصاده[سورة الأنعام، الآية: ১৪১].
অর্থ ঃ এবং তার (ফসলের) হক্ব আদায় কর তা কাটার দিবসে। [সূরা আন-আ‘ম-আয়াত-১৪১]
আর খনিজ সম্পদ ও রিকায-(মাটিতে পুঁতে রাখা) সম্পদের যাকাতের বিধান জমি হতে উৎপন্ন ফসল ও ফলের যাকাতের বিধানের ন্যায় কারণ তা জমি হতে সংগৃহিত মাল।
গৃহপালিত পশুর এবং ব্যবসার লভ্যাংশের উপর বছর অতিবাহিত হওয়া গণ্য হবে মূলের উপর বছর অতিবাহিত হওয়ার ন্যায়। তাই গৃহপালিত পশুর উৎপাদিত ও ব্যবসার লভ্যাংশকে তার মূলধনের সাথে মিলাবে এবং নিসাব পূর্ণ হলে তার যাকাত দিবে।
আর যাকাত ওয়াজিব হওয়ার জন্য প্রাপ্ত বয়স্ক ও জ্ঞানবান হওয়া শর্ত নয়।
তাই অধিকাংশ বিদ্যানগণের নিকট বাচ্চা ও পাগলের মালে যাকাত ওয়াজিব হবে।
৫- الأموال الزكوية:
৫- যাকাত ওয়াজিব যোগ্য সম্পদ ঃ
পাঁচ শ্রেণীর মালে যাকাত ওয়াজিব হয়।
প্রথম ঃ সোনা, রূপার ও অনুরূপভাবে তার স্থলাভিসিক্ত প্রচলিত কাগজের মুদ্রার উপর যাকাত ওয়াজিব ঃ
আর তাতে যাকাতের পরিমাণ হলো রুবু‘ল উ‘শর (এক চল্লিশমাংশ)। আর রুবু‘ল উ‘শরের পরিমাণ হলো শতকরা আড়াই ভাগ। এক বছর অতিবাহিত ও নিসাব পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত তাতে যাকাত ওয়াজিব হবে না।
সোনার নিসাবের পরিমাণ হলো বিশ মিছকাল। আর এক মিছকালের ওজন (৪.২৫) গ্রাম।
অতএব সোনার নিসাব হলো (৮৫) গ্রাম।
রূপার নিসাবের পরিমাণ হলো দু’শত দিরহাম। আর এক দিরহামের পরিমাণ হলো (২.৯৭৫)। সুতরাং রূপার নিসাব হলো (৫৯৫) গ্রাম।
তবে বর্তমান কাগজের মুদ্রা তার নিসাবের পরিমাণ হলো ঃ এক বছর অতিবাহিত কালে যাকাত বের করার সময় তার মূল্য পঁচাশি (৮৫) গ্রাম সোনার অথবা পাঁচশত পঁচানব্বই (৫৯৫) গ্রাম রূপার সমান হতে হবে। এই জন্য সোনা ও রূপার নিসাবের পরিমাণের তুলনায় বর্তমান কাগজের মুদ্রার নিসাব তার দর-মান কম-বেশী হওয়ার কারণে ভিন্ন ভিন্ন হয়।
তাই কারও কাছে তার যে কাগজের মুদ্রা রয়েছে তা দিয়ে যদি সে পূর্বে বর্ণিত সোনা বা রূপার পরিমাণে যে কোন একটি পরিমাণ ক্রয় করতে সম হয় বা তার চাইতে বেশী হয় তবে তাতে যাকাত ওয়াজিব হবে, তার নাম যাই হোক না কেন রিয়াল হোক বা দিনার হোক বা ফারাঙ্ক হোক বা ডলার হোক বা অন্য আরো যে কোন নাম হোক। আর তার গুনাগুণ যাই হোক না কেন কাগজের মুদ্রা হোক বা খনিজ পদার্থ হোক, বা অন্য আরো কিছু হোক। আরো প্রসিদ্ধ কথা হলে যে, মুদ্রার দর কোন কোন সময় পরিবর্তন হয়। তাই তাতে যখন যাকাত ওয়াজিব হবে তখন যাকাত দাতার তার মূল্যের প্রতি ল্য করা উচিত হবে। আর তা হল তাতে এক বছর অতিবাহিত হওয়া। আর যদি কোন মালে নিসাবের চাইতে বেশী হয় তবে সেই মাল থেকে নিসাব অনুসারে যাকাত বের করতে হবে ।
এর দলীল হলো আলী (রাযিআল্লাহু আনহু) এর হাদীস।
তিনি বলেন ঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন ঃ
((إذا كانت لك مائتا درهم وحال عليها الحول ففيها خمسة دراهم، وليس عليك شيء حتى يكون لك عشرون ديناراًً وحال عليها الحول ففيها نصف دينار، فما زاد فبحساب ذلك، وليس في مال زكاة حتى يحول عليه الحول))[رواه أبو داود وهو حديث حسن].
অর্থ ঃ তুমি যদি দুই শত দিরহামের মালিক হও, আর তাতে যদি এক বছর অতিবাহিত হয়। তবে তা যাকাতের নির্ধারিত পরিমাণ হবে পাঁচ দিরহাম। যদি তোমার নিকট বিশ দিনার থাকে, আর তা এক বছর অতিবাহিত হয়, তবে তাতে অর্ধ দিনার যাকাত দিতে হবে। আর এর চাইতে কম মালে যাকাত ওয়াজিব হবে না। সুতরাং এই পরিমাণের বেশি হলে এই অনুপাতে যাকাত দিতে হবে। আর কোন মালেই যাকাত ওয়াজিব হবে না এক বছর অতিবাহিত হওয়ার আগ পর্যন্ত। [হাদীসটি আবু দাউদ বর্ণনা করেছেন, আর হাদীসটি হাসান]
অলঙ্কার-গহনা যদি জমা ও ভাড়া দেওয়ার জন্য তৈরী করে রাখা হয় তবে তাতে যাকাত ওয়াজিব হবে। এতে কোন দ্বিমত নেই। আর তা যদি ব্যবহারের জন্য তৈরী করে রাখা হয় তবে তাতে বিদ্যানগণের দু’মতের গ্রহণযোগ্য মতে যাকাত ওয়াজিব হবে। কারণ সোনা রূপার যাকাত ওয়াজিব হওয়ার ব্যাপারে যে সকল দলীল বর্ণিত হয়েছে তা আম-ব্যাপক।
ইমাম আবু দাউদ, নাসাঈ ও তিরমিযী আমর বিন শু‘আইব তার পিতা হতে, পিতা তার দাদা (রাযিআল্লাহ আনহুম) হতে বর্ণনা করেছেন ঃ
((أن امرأة أتت النبي  ومعها ابنة لها وفي يدي بنتها مسكتان غليظتان من ذهب، فقال لها: أتعطين زكاة هذا ؟ قالت: لا، قال:(أيسرك أن يسورك الله بهما يوم القيامة سوارين من نار) فخلعتهما وألقتهما إلى النبي ، وقالت: هما لله ولرسوله)).
অর্থ ঃ জনৈক মহিলা তার মেয়ে সহ নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর নিকট আসলো। তার মেয়ের দু’ হাতে দু’টি সোনার মোটা চুরি ছিল। নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাকে বল্লেন তুমি কি এর যাকাত দাও ? সে বল্ল না। নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বল্লেন তুমি কি ভাল বাস যে এর বিনিময়ে কিয়ামাতের দিন আল্লাহ তোমাকে আগুনের দু’টি চুরি পরান ? সাথে সাথে মহিলাটি চুরি দু’টি খুলে নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর সামনে রাখল এবং বল্ল ঃ এই চুরি দু’টি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের জন্য।
আবু দাউদ ও অন্যান্যরা আয়েশা (রাযিআল্লাহু আনহা) হতে বর্ণনা করেছেন ঃ
((دخل علىّ رسول الله  فرأى في يدي فتخات من ورق فقال: ما هذا يا عائشة ؟ فقالت: صنعتهن أتزين لك يا رسول الله، قال: أتؤدين زكاتهنّ ؟ قلت: لا، أو ما شاء الله، قال: هو حسبك من النار)).
অর্থ ঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমার নিকট প্রবেশ করে আমার হাতে অনেকগুলো রূপার আংটি দেখে বল্লেন হে আয়েশা এগুলো কি ? অতঃপর আয়েশা (রাযিআল্লাহু আনহা) বল্লেন হে আল্লাহর রাসূল এগুলো আমি তৈরী করেছি আপনার সামনে সৌন্দর্য প্রকাশ করার জন্য। তারপর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বল্লেন তুমি কি এগুলোর যাকাত প্রদান কর ? আমি বল্লাম না অথবা আল্লাহ যদি চান। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বল্লেন ঃ এর যাকাত না দেওয়াটাই তোমার জাহান্নামে যাওয়ার জ্যন যথেষ্ঠ।
খনিজ জাত ধাতুব দ্রব্যের ও সোনা ছাড়া তৈরী-অলঙ্কার যেমন-মুক্তা, মতি ইত্যাদিতে কোন বিদ্যানগণের নিকটেও যাকাত ওয়াজিব নয়। তবে যদি ব্যবসার জন্য তৈরী করা হয় তাহলে ব্যবসার জন্য তৈরী মালের যাকাতের ন্যায় যাকাত দিতে হবে।
দ্বিতীয় ঃ চতুস্পদ জন্তু ঃ
আর তা হলো, উট, গরু, ছাগল। আর ইহাতে যাকাত ওয়াজিব হবে যখন ইহা সায়েমা হবে। সায়েমা ঐ সকল পশু যা বছরের অধিকাংশ দিনগুলো (মালিকের কাছে) লালিত-পালিত হয়, কারণ অধিকাংশের জন্য সকলের যে বিধান সে বিধান প্রযোজ্য।
আর এর দলীল রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর বাণী ঃ
((في كل إبل سائمة صدقة))[رواه أحمد وأبو داود والنسائي].
অর্থ ঃ প্রত্যেক সায়েমা উটে যাকাত রয়েছে। [হাদীসটি আহমাদ, আবু দাউদ ও নাসাঈ বর্ণনা করেছেন]
রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর আরো বাণী হলো ঃ
((في صدقة الغنم في سائمتها))[رواه البخاري].
অর্থ ঃ ছাগলের যাকাত কেবল মাত্র সায়েমা ছাগলে। [বুখারী ] যখন নিসাব পূর্ণ হবে ও এক বছর অতিবাহিত হবে।
গৃহপালিত পশুর যাকাতের তালিকা ঃ
শ্রেণী নিসাবের পরিমাণ, হতে Ñ পর্যন্ত নির্ধারিত পরিমাণ ঃ
উট ৫-------------৯ একটি ছাগল
১০-----------১৪ দু’টি ছাগল
১৫-----------১৯ তিনটি ছাগল
২০-----------২৪ চারটি ছাগল
২৫-----------৩৫ এক বছরের একটি মাদা উট
৩৬-----------৪৫ দু’বছরের একটি মাদা উট
৪৬-----------৬০ তিন বছরের একটি মাদা উট
৬১-----------৭৫ চার বছরের একটি মাদা উট
৭৬-----------৯০ দু’বছরের দু’টি মাদা উট
৯১----------১২০ তিন বছরের দু’টি মাদা উট
আর যদি উটের সংখ্যা ১২০টির উপর হয় তাহলে প্রতি ৪০টিতে দু’বছরের একটি মাদা উট। আর প্রতি ৫০টিতে তিন বছরের একটি মাদা উট দিতে হবে ইহা অধিকাংশ বিদ্যানগণের নিকট।
গৃহপালিত পশুর যাকাতের তালিকা ঃ
শ্রেণী নিসাবের পরিমাণ,
হতে - পর্যন্ত নির্ধারিত পরিমাণ
গরু ৩০-----------৩৯ এক বছরের একটি বাছুর
বা বক্না দিতে হবে
৪০-----------৫৯ দু’বছরের একটি বক্না দিতে হবে
৬০-----------৬৯ এক বছরের দু’টি বাছুর দিতে হবে
৭০-----------৭৯ এক বছরের একটি বাছুর
এবং দু’বছরের একটি বক্না দিতে হবে।
আর যদি গরুর সংখ্যা ৭৯টির উপর হয় তাহলে প্রতি ৩০টিতে একবছরের একটি বাছুর, আর প্রতি ৪০টিতে একবছরের একটি বক্না দিতে হবে।
শ্রণী নিসাবের পরিমাণ, হতে Ñ পর্যন্ত নির্ধারিত পরিমাণ
ছাগল ৪০----------১২০ একটি ছাগল দিতে হবে।
১২১---------২০০ দু’টি ছাগল দিতে হবে।
২০১---------৩০০ তিনটি ছাগল দিতে হবে।
আর যদি ছাগলের সংখ্যা ৩০০ শত এর বেশী হয় তাহলে প্রতি ১০০ শতে একটি ছাগল দিতে হবে।
আর এর দলীল হলো ঃ আনাস (রাযিআল্লাহু আনহু) এর হাদীস ঃ
((أن أبا بكر كتب له هذا الكتاب لما وجهه إلى البحرين: بسم الله الرحمن الرحيم، هذه فريضة الصدقة التي فرض رسول الله  على المسلمين والتي أمر الله بها رسوله، فمن سُئِلها من المسلمين على وجهها فليعطها ومن سئل فوقها فلا يعط، في أربع وعشرين من الإبل فما دونها من الغنم من كل خمس شاة، فإذا بلغت خمساً وّعشرين إلى خمسٍ وّثلاثين ففيها بنت مخاضٍ أنثى فإذا بلغت ستة وّثلاثين إلى خمس وأربعين ففيها بنت لبون أنثى، فإذا بلغت ستا وأربعين إلى ستين ففيها حقة، طروقة الجمل، فإذا بلغت واحدة وستين إلى خمس وسبعين ففيها جذعة، فإذا بلغت يعني ستا وسبعين إلى تسعين ففيها بنتا لبون، فإذا بلغت إحدى وتسعين إلى عشرين ومائة ففيها حقتان طروقتا الجمل، فإذا زادت على عشرين ومائة ففي كل أربعين بنت لبون وفي كل خمسين حقة، ومن لم يكن معه إلا أربع من الإبل فليس فيها صدقة إلا أن يشاء ربها، فإذا بلغت خمسا من الإبل ففيها شاة، وفي صدقة الغنم في سائمتها إذا كانت أربعين إلى عشرين ومائة شاة فإذا زادت على عشرين ومائة إلى مائتين شاتان، فإذا زادت على ثلاثمائة في كل مائة شاة، فإذا كانت سائمة الرجل ناقصة من أربعين شاة شاة واحدة فليس فيها صدقة إلا أن يشاء ربها)) الحديث،[رواه البخاري].
অর্থ ঃ আবু বকর (রাযিআল্লাহু আনহু) যখন তাঁকে (আনাস রাযিআল্লাহু আনহু কে) বাহরাইনে গভর্নর হিসেবে পাঠিয়েছিলেন, তখন তার নিকট এই পত্র লিখেছিলেন ঃ বিস্মিল্লাহির রাহ্মানির রাহীম। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ফরয সাদ্কা (যাকাত) সম্পর্কে মুসলমানদের উপর যা নির্ধারণ করেছেন এবং সে সম্পর্কে আল্লাহ তাঁর রাসূলকে যা আদেশ করেছেন তা এ কাজেই মুসলিমদের যার কাছেই (যাকাত) বিধি অনুসারে এটা চাওয়া হবে সে যেন তা প্রদান করে। কিন্তু যার নিকট তার অধিক (অর্থাৎ নির্দিষ্ট পরিমাণের অধিক) দাবী করা হবে সে যেন (অতিরিক্ত) প্রদান না করে। চব্বিশটি উট কিংবা তার কম হলে ছাগল দিতে হবে-(এ নিয়মে যে,) প্রতি পাঁচটি উটের জন্য একটি ছাগল। উটের সংখ্যা যখন পঁচিশ থেকে পঁয়ত্রিশ হবে তখন তাতে দু’ বছরের একটি মাদা উট দিতে হবে। যখন তা ছত্রিশ থেকে পঁয়তাল্লিশে পৌঁছবে তখন তাতে তিন বছরের একটি মাদা উট দিতে হবে। যখন তা ছিচল্লিশ থেকে ষাটে পোঁছবে তখন তাতে গর্ভধারণের উপযোগিনী একটি চার বছরের মাদা উট দিতে হবে। যখন তা (উটের সংখ্যা) একষট্টি থেকে পঁচাত্তর হবে তখন তাতে পাঁচ বছরের একটি মাদা উট দিতে হবে। যখন তা ছিয়াত্তর থেকে নব্বই হবে তখন তাতে দু’টি তিন বছরের মাদা উট দিতে হবে। যখন তা একানব্বই থেকে একশ বিশ হবে তখন তাতে গর্ভধারণের উপযোগিনী দু’টি চার বছরের মাদা উট দিতে হবে। যখন উটের সংখ্যা একশ বিশের ঊর্ধে হবে তখন প্রতি চল্লিশটির জন্য একটি তিন বছরের মাদা উট এবং প্রতি পঞ্চাশটি উটের জন্য একটি চার বছরের মাদা উট দিতে হবে। যদি কাহারো নিকট মাত্র চারটি উট থাকে তবে তাতে যাকাত দিতে হবে না। হাঁ যদি মালিক স্বেচ্ছায় (নফল সাদ্কা হিসেবে) কিছু প্রদান করে (তবে তাতে তি নেই)। কিন্তু যখন উটের সংখ্যা পাঁচ হবে তখন তাতে একটি ছাগল দিতে হবে। যেসব ছাগল চড়ে খায় (অর্থাৎ বিচরণ করে বেড়ায়) তাতে যাকাত দিতে হবে। চল্লিশ থেকে একশ বিশটি পর্যন্ত একটি ছাগল, একশ বিশটির অধিক হলে দু’শ পর্যন্ত দু’টি ছাগল, দু’শতের অধিক হলে তিনশ পর্যন্ত তিনটি ছাগল এবং যদি তিনশ এর অধিক হয় তবে প্রতি একশ তের জন্য একটি ছাগল দিতে হবে। চড়ে খায় এমন ছাগলের সংখ্যা যদি কাহারো নিকট চল্লিশের একটিও কম থাকে তবে তাতে যাকাত দিতে হবে না। হাঁ, মালিক যদি স্বেচ্ছায় কিছু প্রদান করে (তি নেই)। আল-হাদীস, [বুখারী ]
আরো দলীল হলো ঃ মু‘আয বিন জাবাল (রাযিআল্লাহু আনহু) এর হাদীস ঃ
((أن النبي  بعثه إلى اليمن فأمره أن يأخذ من كل ثلاثين بقرة تبيعاً أو تبيعة، وفي كل أربعين مسنة)) [رواه أحمد وأصحاب السنن].
অর্থ ঃ নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁকে (মু‘আযকে) ইয়েমেন পাঠিয়েছিলেন। প্রতি ত্রিশটি গরু হতে একটি বাছুর বা বক্না গ্রহণের আদেশ দিয়েছিলেন। আর প্রতি চল্লিশটি গরু হতে দু’বছরের একটি বক্না গ্রহণের আদেশ দিয়েছিলেন। [হাদীসটি আহমাদ ও আসহাবুস্ সুনান বর্ণনা করেছেন]
যখন নিসাব গণনা করবে তখন গৃহপালিত পশুর উৎপন্ন বস্তু তার আসলের সাথে মিলাবে। আর যদি তা ছাড়া গৃহপালিত পশুর নিসাব পূর্ণ না হয় তাহলে নিসাব পূর্ণ হওয়া পর্যন্ত, তার দ্বারা একবছর অতিবাহিত গণ্য করা হবে।
আর যদি চতুস্পদ জন্তু ব্যবসার জন্য লালিত-পালিত হয় তাহলে ব্যবসার মালের যাকাতের ন্যায় তার যাকাত দিতে হবে। আর যদি তা ব্যবহারের বা উন্নয়নের জন্য লালিত-পালিত হয়, তাহলে তাতে যাকাত ওয়াজিব হবে না। কারণ (এই ব্যাপারে) আবু হুরায়রা (রাযিআল্লাহু আনহু) এর হাদীস বর্ণিত আছে ঃ
((ليس على المسلم في عبده ولا فرسه صدقة))[أخرجه البخاري ومسلم].
অর্থ ঃ মুসলিম ব্যক্তির দাসের ও ঘোড়ার উপর যাকাত নেই। [হাদীসটি বুখারী ও মুসলিম বর্ণনা করেছেন]
তিন ঃ ফসল ও ফলাফল ঃ
অধিকাংশ বিদ্যানগণের নিকট উৎপাদিত ফসলে যাকাত ওয়াজিব হবে নিসাব পূর্ণ হলে। আর তাদের নিকট তার নিসাব হল পাঁচ ওয়াসাক।
কারণ নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন ঃ
((ليس فيما دون خمسة أوسق صدقة))[متفق عليه].
অর্থ ঃ পাঁচ আওসুক এর কমে যাকাত ফরয নয়। [হাদীসটি বুখারী ও মুসলিম একত্রিতভাবে বর্ণনা করেছেন]
আর এক وسق (ওয়াসাক) সমান ষাট স্বা‘আ। সুতরাং নিসাবের পরিমাণ হলো তিনশত স্বা’আ। আর ভাল গমের দ্বারা নিসাবের পরিমাণ হবে ছয়শত বায়ান্ন কিলো ও আটশত গ্রাম।
ফসল ও ফলের যাকাত ওয়াজিব হওয়ার জন্য একবছর অতিবাহিত হওয়া শর্ত নয়।
কারণ এ ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলার বাণী রয়েছে ঃ
وآتوا حقّه يوم حصاده[سورة الأنعام، الآية: ১৪১].
অর্থ ঃ এবং তার (ফসলের) হক্ব আদায় কর তা কাটার দিবসে। [সূরা আন-আ‘ম-আয়াত-১৪১]
যে সকল ফসল বিনা পরিশ্রমে পানি সরবরাহ হয়ে উৎপন্ন হয়েছে তাতে যাকাতের নির্ধারিত পরিমাণ হলো দশ ভাগের এক ভাগ, আর যে সকল ফসল পরিশ্রমের দ্বারা পানি সরবরাহ হয়ে উৎপন্ন হয়েছে তাতে নির্ধারিত পরিমাণ হলো ঃ বিশ ভাগের এক ভাগ।
কারণ এ ব্যাপারে নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর হাদীস রয়েছে ঃ
((فيما سقت السماء والأنهار والعيون أو كان عثرياً العشر، وفيما سقي بالسواني أو النضح نصف العشر))[أخرجه البخاري].
অর্থ ঃ যেসব ভূমি বৃষ্টি ও ঝর্ণার পানি দ্বারা অথবা নদ-নদীর পানি দ্বারা স্বাভাবিকভাবে আবাদ হয়, তাতে উ‘শর (এক দশমাংশ) ওয়াজিব হবে। আর যে সব ভূমিতে পানি সেচ করতে হয় তাতে বিশ ভাগের একভাগ ওয়াজিব হবে (এটাই ফসলের যাকাত)। [হাদীসটি বুখারী বর্ণনা করেছেন]
চার ঃ ব্যবসা সামগ্রী ঃ
মুসলিম ব্যক্তি ব্যবসার জন্য যে মাল প্রস্তুত করেছে তাকে ব্যবসা সামগ্রী বলে। তা যে কোন শ্রেণীর মাল হোক না কেন। যাকাতের সাধারণ সম্পদ হিসাবে গণ্য হবে। নিসাব পূর্ণ হলে তাতে যাকাত ওয়াজিব হবে। ব্যবসা সামগ্রীর মূল্য সোনা ও রূপার নিসাবের সমান হওয়া গ্রহণযোগ্য বলে বিবেচিত হবে। আর তা হলো বিশ মিছকাল যা পঁচাশি গ্রাম সোনার সমতুল্য। অথবা দু’শত দিরহাম যা পাঁচশত পঁচানব্বই গ্রাম রূপার সমতুল্য।
সোনা ও রূপা হতে ব্যবসা সামগ্রীর পরিমাণ নির্ধারণ করা হবে ফকীরদের অংশের প্রতি ল্য রেখে। যখন তাতে এক বছর অতিবাহিত হবে তখন ক্রয় মূল্য গ্রহণযোগ্য হবে না। বরং এক বছর অতিবাহিত হওয়ার পর যাকাত বের করার সময়ে বাজার মূল্য গ্রহণযোগ্য হবে।
পূর্ণ মূল্যের চল্লিশ ভাগের একভাগ যাকাত বের করা ওয়াজিব হবে। ব্যবসার লভ্যাংশ তার আসল মালের সাথে মিলাবে, যদি নিসাব পূর্ণ হয়ে যায় তাহলে তার যাকাত দানে নতুন বছরের অপো করার প্রয়োজন নেই। আর যদি লভ্যাংশ ছাড়া আসল মালে নিসাব পূর্ণ না হয় তাহলে নিসাব পূর্ণ হওয়ার সময় হতে বছর শুরু/গণ্য হবে।
পাঁচ ঃ খনিজ সম্পদ ও রিকায ঃ যা মাটিতে পুঁতে রাখা মাল ঃ
(ক) খনিজ সম্পদ ঃ
খনিজ সম্পদ ঐ সকল বস্তু যা জমি হতে নির্গত হয়, তথায় জন্ম নেয় যা জমির মূল্যবান উৎপন্ন নয়, এবং উদ্ভিদও নয়, যেমন সোনা-রূপা, লৌহ, তামা, ইয়াকুত পাথর ও পেট্রোল ইত্যাদি। আর তাতে যাকাত ওয়াজিব।
কারণ আল্লাহ তা‘আলার ব্যাপক বাণী রয়েছে ঃ
يا أيّها الذين آمنوا أنفقوا من طيّبات ما كسبتم وممّا أخرجنا لكم من الأرض[سورة البقرة، الآية:৭ ২৬].
অর্থ ঃ হে মু‘মিনগণ ! তোমরা যা উপার্জন করেছ এবং আমরা তোমাদের জন্য জমি হতে যা উৎপন্ন করেছি তার মধ্যে যা পূত-পবিত্র তা তোমরা ব্যয় কর। [সূরা আল-বাক্বারাহ-আয়াত- ২৬৭]
খনিজ সম্পদ যে আল্লাহ তা‘আলা জমি হতে নির্গত করেছেন এতে কোন সন্দেহ নেই। অধিকাংশ বিদ্যানগণের নিকট খনিজ সম্পদে যাকাত ওয়াজিব হওয়ার জন্য নিসাব পূর্ণ হওয়া শর্ত। আর খনিজ সম্পদে চল্লিশ ভাগের এক ভাগ যাকাত আদায় করা ওয়াজিব। সোনা-রূপার যাকাতের পরিমাণের উপর ক্বিয়াস বা তুলনা করে। তাতে এক বছর অতিবাহিত হওয়া শর্ত নয়। তা যখন সংগ্রহ হবে তখনই তাতে যাকাত ওয়াজিব হবে।
(খ) রিকায-মাটিতে পুঁতে রাখা ধনসম্পদ ঃ
জাহিলি যুগের মাটিগর্ভে-গচ্ছিত সম্পদ, অথবা পূর্ববর্তী কাফির সম্প্রদায়ের সম্পদ যদিও জাহিলি না হয় আর তার উপর বা তার কিছুর উপর কুফুরের নির্দশন হয় যেমন তাদের নাম, তাদের রাজাদের নাম, তাদের ছবি, তাদের পৃষ্টদেশ ও শুধু তাদের প্রতিমার বদেশ থাকে (তা হলেও তা রিকায হবে)। আর যদি তার উপর বা তার কিছুর উপর মুসলমানদের নিদর্শন থাকে, যেমন নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর নাম বা মুসলমানদের খলীফাদের কারও নাম বা কুরআন কারীমের আয়াত। তা হলে তা (লুক্বাতা)-পথে পড়ে থাকা বস্তু হিসাবে গণ্য হবে। আর যদি তাতে কোন নির্দশন না থাকে, যেমন পাত্র, স্ত্রীলোকের অলঙ্কার সাজ-সজ্জা, স্বর্ণের বিস্কুট তা হলেও তা লুক্বাতা হবে, আর তা প্রচার করার আগ পর্যন্ত কেহই তার মালিক হবে না। কারণ তা হল মুসলিম ব্যক্তির মাল, আর তা হতে তার মালিকানা নষ্ট হয়ে যায় নাই। আর রিকাযে (মাটি গর্ভে গচ্ছিত রাখা সম্পদে) এক-পঞ্চমাংশ যাকাত ওয়াজিব।
কারণ আবু হুরায়রা (রাযিআল্লাহু আনহু) এর হাদীসে আছে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন ঃ
((وفي الركاز الخمس)).
অর্থ ঃ আর রিকাযে এক-পঞ্চমাংশ যাকাত দিতে হবে।
অধিকাংশ বিদ্যানগণের নিকট রিকায, কম হোক বা বেশী হোক তাতে যাকাত ওয়াজিব হবে। তাদের নিকট তা বন্টনের খাত হল ফাই (যুদ্ধ বিহিন অমুসলিম শত্র“র সম্পদ যা মুসলমানরা অর্জন করে) বন্টনের খাত। যে ব্যক্তি তা পাবে সে বাকী রিকাযের মালিক হবে, এতে বিদ্যানগণের কোন মতনৈক্য নেই। কারণ উমার (রাযিআল্লাহু আনহু) অবশিষ্ট রিকায তার প্রাপককে দিয়েছিলেন।
৬- مصارف الزكاة:
৬ - যাকাত বন্টনের খাত সমূহ ঃ
আট শ্রেণীর লোক যাকাত পাওয়ার হক্বদার। তার নিুে তালিকা প্রদত্ত হলো ঃ
প্রথমত ঃ ফকীর ঃ আর তারা হলেন ঐ সকল লোক যাদের কাছে জীবন যাপনের কোন কিছুই নেই, অথবা কিছুটা আছে, তাদেরকে পূর্ণ বছরের জন্য যথেষ্ট হয় এই পরিমাণ যাকাত থেকে দেওয়া হবে।
দ্বিতীয়ত ঃ মিসকীন ঃ যাদের নিকট অর্ধবছর বা অর্ধবছরের চেয়ে কিছু বেশী সময়ের খাবার রয়েছে। এই অর্থে মিসকীনের অবস্থা ফকীরের অবস্থার চেয়ে ভাল। তাদেরকে তাদের পুরা বছরের জন্য যথেষ্ট হয় এই পরিমাণ যাকাত দেওয়া হবে।
তৃতীয়ত ঃ যাকাত আদায়কারী ঃ আর তারা হলেন, ঐ সমস্ত কর্মচারী যারা যাকাত দাতাদের নিকট হতে তা সংগ্রহ ও সংরণ এবং নেতার আদেশে তার হক্বদারের নিকট বিতরণ করেন। তাদেরকে তাদের কর্মের পারিশ্রমিক হিসাবে যাকাত প্রদান করা হবে।
চতুর্থত ঃ যাদের অন্তর জয় করার উদ্দেশ্য হবে ঃ আর তারা দু’ শ্রেণীর লোক ঃ কাফির এবং মুসলিম।
- অতঃপর কাফিরকে যাকাত দেওয়া হবে যখন তার ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করার প্রত্যাশা করা যাবে, বা তাকে যাকাত দেওয়ার কারণে মুসলমানদের উপর হতে তার অত্যাচার অনিষ্ট বন্ধ হবে। আরো অনুরূপ কারণে।
- আর মুসলিম ব্যক্তিকে যাকাত দেওয়া হবে তার ইসলাম গ্রহণকে আরো শক্তিশালী করার জন্য বা তারমত আরও একজনের ইসলাম গ্রহণের আশায়। এরমত অন্য আরো কারণে।
পঞ্চমত ঃ দাস সমূহ ঃ আর তারা হলেন ঐ সমস্ত মুকাতিব দাস যাদের কাছে তাদের মালিকের সাথে কৃত চুক্তি পরিশোধের পয়সা নাই। তাই মুকাতিব দাসকে যাকাত হতে যে পরিমাণ প্রদান করলে সে দাসত্ব হতে মুক্তি পেতে সামর্থ্যবান হবে সে পরিমাণ তাকে প্রদান করা হবে।
ষষ্টতম ঃ ঋণগ্রস্তদেরকে ঃ আর তারা দু’ ভাগে বিভক্ত ঃ নিজেদের জন্য ঋণগ্রস্ত, এবং অন্যের কারণে ঋণগ্রস্ত।
- নিজের জন্য ঋণগ্রস্ত ঃ সে ঐ ব্যক্তি যে নিজের অভাবের কারণে ঋণ করেছে আর তা পরিশোধে সে সামর্থ্যবান নয়। তাই যাকাত হতে তাকে যে পরিমাণ দিলে সে ঋণ পরিশোধ করতে পারবে সে পরিমাণ তাকে প্রদান করা হবে।
- অন্যের কারণে ঋণগ্রস্ত ঃ সে ঐ ব্যক্তি যে পরস্পরের মাঝে সংশোধন-ফায়সালা করার জন্য ঋণী হয়েছে। তাই সে ঋণী হলে যাকাত হতে যে পরিমাণ দিলে সে ব্যাপারে তার সহযোগিতা হবে, সে পরিমাণ তাকে প্রদান করা হবে।
সপ্তমত ঃ যারা আল্লাহর রাস্তায় রয়েছেন তাদেরকে ঃ এর দ্বারা মুরাদ-উদ্দেশ্য হলো ঃ যারা জিহাদে রয়েছেন। সুতরাং যে সকল মুজাহিদদের বেতন বাইতুল মালের প হতে নির্ধারিত নেই তাদেরকে যাকাত প্রদান করা হবে।
অষ্টমত ঃ মুসাফির ঃ সে ঐ মুসাফির যার সব কিছু রাস্তায় শেষ হয়ে গেছে। তার কাছে তার দেশে পৌঁছার মত খরচ নেই।
সুতরাং যাকাত হতে যে পরিমাণ তাকে দিলে সে তার দেশে পৌঁছতে পারবে সে পরিমাণ যাকাত তাকে প্রদান করা হবে।
আল্লাহ তা‘আলা এই শ্রেণীগুলো তাঁর বাণীতে উল্লেখ করেছেন ঃ
إنّما الصدقات للفقراء والمساكين والعاملين عليها والمؤلّفة قلوبهم وفي الرّقاب والغارمين وفي سبيل الله وابن السّبيل فريضة من الله والله عليم حكيم [سورة التوبة، الآية: ৬০].
অর্থ ঃ বস্তুত ঃ সাদ্কা ফকীরদের, মিসকীনদের, তা আদায়কারীদের, যাদের অন্তর জয় করার উদ্দেশ্য হবে তাদের, দাস মুক্তির, ঋণগ্রস্তদের, আল্লাহর রাস্তায় জিহাদকারী ও মুসাফিরদের জন্য। আল্লাহর কর্তৃক ফরয। আল্লাহ সর্বজ্ঞ প্রজ্ঞাময়। [সূরা তাওবাহ-আয়াত-৬০]
৭- زكاة الفطر:
৭- যাকাতুল ফিত্বর ঃ
(ক) যাকাতুল ফিত্বর বিধি-বদ্ধর হিক্মাত বা রহস্য ঃ
সিয়াম সাধনা কারীদেরকে অনর্থক কথা-কাজ, সহবাস ও তার আনুসংগীক কর্ম হতে পবিত্র করার জন্য যাকাতুল ফিত্বর চালু করা হয়েছে।
এ ছাড়াও মিসকীনদের খাদ্য হিসাবে ও তাদেরকে ঈদের দিন মানুষের কাছে চাওয়া হতে মুক্ত রাখার জন্য চালু করা হয়েছে।
ইবনে আব্বাস (রাযিআল্লাহু আনহুমার) হাদীসে রয়েছে, তিনি বলেন ঃ
((فرض رسول الله  زكاة الفطر طهرة للصائم من اللغو والرفث وطعمة للمساكين))[رواه أبو داود وابن ماجه].
অর্থ ঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যাকাতুল ফিত্বর ফরয করেছেন, সিয়াম সাধনা কারীদেরকে অনর্থক কথা-কায ও সহবাস ও তার আনুসংগীক কাজ হতে পবিত্র করার জন্য ও মিসকীনদের খাদ্য হিসাবে। [হাদীসটি আবু দাউদ এবং ইবনে মাজাহ বর্ণনা করেছেন ]
(খ) যাকাতুল ফিত্বর এর হুকুম -বিধান ঃ
যাকাতুল ফিত্বর প্রত্যেক মুসলিম নর ও নারী, ছোট বড়, স্বাধীন-ও দাস দাসীর উপর ফরয।
ইবনে উমার (রাযিআল্লাহু আনহুমা) এর হাদীসে রয়েছে, তিনি বলেন ঃ
((فرض رسول الله  زكاة الفطر من رمضان صاعاً من تمر أو صاعاً من شعير على العبد والحرّ، والذكر والأنثى، والصغير والكبير من المسلمين، وأمر بها أن تؤدى قبل خروج الناس إلى الصلاة))[متفق عليه].
অর্থ ঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) রামাযান মাসের যাকাতুল ফিত্বর ফরয করেছেন, খেজুর বা যবের এক স্বা‘আ, দাসের, স্বাধীন ব্যক্তির, পুরুষের, নারীর ছোটদের ও বড়দের উপর। এবং তা আদায়ের নির্দেশ দিয়েছেন ঈদের নামাযের জন্য মানুষের বের হওয়ার পূর্বে। [বুখারী ও মুসলিম ]
যে শিশুর জন্ম হয় নাই পেটে রয়েছে তার প হতে তা আদায় করা মুস্তাহাব। নিজের, নিজ স্ত্রী ও নিকটবর্তী আতœীয় যাদের ভরণ পোষণ করা তার দায়িত্ব রয়েছে তাদের প হতে ফিৎরা আদায় করা ওয়াজিব।
ফিৎরা শুধুমাত্র তার উপর ওয়াজিব যার খাদ্য ও ভরণ পোষণ করা তার উপর দায়িত্ব তাদের খাদ্য ঈদের দিন ও রাত্রির জন্য যথেষ্ট হয়ে বেশী হবে।
(গ) ফিৎরার পরিমাণ ঃ
শহরের প্রধান খাদ্য যেমন-গম, যব, খেজুর, কিসমিস-মুনাক্কা, পনির, চাল ও ভুট্রা হতে যাকাতুল ফিতরের নির্ধারিত পরিমাণ হল এক স্বা‘আ।
আর এক স্বা‘আ প্রায় দু’ কিলো একশত ছিয়াত্তর গ্রাম এর সমান। আর অধিকাংশ বিদ্যানগণের নিকট ফিৎরার মূল্য বের করা জায়েয নয়। কারণ ইহা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যা আদেশ দিয়েছেন তার বিপরীত এবং সাহাবাদের আমলের পরিপন্থী।
(ঘ) ফিৎরা আদায় করার সময় ঃ
ফিৎরা আদায় করার দুইটি সময় রয়েছে ঃ
(ক) জায়েয সময় ঃ আর তা হলো, ঈদের একদিন বা দু’ দিন আগে আদায় করা।
(খ) উত্তম সময় ঃ আর তা হলো, ঈদের দিনের ফজর উদিত হওয়া হতে - ঈদের নামায আদায়ের পূর্ব পর্যন্ত ফিৎরা আদায় করা।
কারণ নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মানুষদের ঈদের নামাযের জন্য বের হয়ে যাওয়ার আগেই যাকাতুল ফিত্বর আদায় করার আদেশ দিয়েছিলেন। যাকাতুল ফিত্বর ঈদের নামাযের পর পর্যন্ত বিলম্ব করা বৈধ নয়।
কেউ যদি তা ঈদের নামাযের পরে আদায় করে তবে তা সাধারণ সাদ্কা (দান) হিসাবে গণ্য হবে। আর সে এই বিলম্বের কারণে গুনাহগার হবে।
(ঙ) যাকাতুল ফিত্বর বিতরণের খাত ঃ
যাকাতুল ফিত্বর ফকীর ও মিসকীন এর জন্য বিতরণ করা হয়। কারণ অন্যদের চাইতে এরাই এর অধিক হক্বদার।