চতুর্থ রুক্ন ঃ রামাযানের সিয়াম সাধন।
১- تعريفه:
১- সিয়ামের-রোযার সংজ্ঞা ঃ
الصيام لغة : - সিয়ামের শাব্দিক অর্থ ঃ বিরত থাকা।
وشرعاً : - পারিভাষিক অর্থ ঃ ফাজরে সানী উদিত হওয়ার পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সকল প্রকার রোযা ভঙ্গের কারণ হতে বিরত থাকা।
২- حكمه:
২- রামাযান মাসের সিয়াম সাধনের বিধান ঃ
ইসলামের রুক্ন সমূহের অন্যতম একটি রুক্ন ও তার মহান স্তম্ভ।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন ঃ
يا أيّها الذين آمنوا كتب عليكم الصّيام كما كتب على الّذين من قبلكم لعلّكم تتقون[ سورة البقرة، الآية:১৮৩].
অর্থ ঃ হে মু‘মিনগণ ! তোমাদের উপর সিয়ামের বিধান দেওয়া হলো, যেমন বিধান তোমাদের পূর্ববর্তীগণকে দেওয়া হয়েছিল, যাতে তোমরা সংযমশীল হতে পারো। [সূরা আল-বাক্বারাহ-আয়াত-১৮৩]
ইব্নে উমার (রাযিআল্লাহু আনহুমা) বলেন ঃ নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন ঃ
((بني الإسلام على خمس: شهادة أن لا إله إلا الله وأن محمداً رسول الله، وإقام الصلاة، وإيتاء الزكاة، وصوم رمضان، وحج بيت الله))[متفق عليه].
অর্থ ঃ ইসলাম পাঁচটি স্তম্ভের উপর প্রতিষ্ঠিত। আল্লাহ ছাড়া কোন সত্য মা‘বুদ নেই, মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আল্লাহর রাসূল এ স্যা দান করা। নামায প্রতিষ্ঠা করা। যাকাত প্রদান করা। রামাযানের রোযা রাখা। বায়তুল্লাহ শরীফের হাজ্জ করা। [বুখারী মুসলিম]
হিজরী সনের দ্বিতীয় বর্ষে মুসলিম উম্মার উপর রামাযানের সিয়াম সাধন ফরয হয়েছে।
৩- فضله وحكمة مشروعيته:
৩- সিয়াম সাধনের ফযিলত ও তা প্রবর্তনের পিছনে হিক্মাত ঃ
রামাযান মাস মহান আল্লাহর আনুগত্য করার বিরাট মৌসম, আর ইহা বান্দার নিকট একটি বিরাট নি‘আমত ও মহান আল্লাহর প হতে এক বিরাট অনুগ্রহ। তাঁর বান্দাদের মধ্য হতে যাকে চান তার প্রতি এর দ্বারা অনুগ্রহ করেন। যাতে তাদের সৎকর্ম বৃদ্ধি পায়, তাদের মান মর্যাদা বেড়ে যায়, এবং তাদের অসৎকর্ম কমে যায়। যাতে তাদের সম্পর্ক তাদের মহান সৃষ্টি কর্তার সাথে আরো শক্তিশালী হয়। যাতে তাদের জন্য লিখা হয় মহা পুরস্কার ও অধিক সাওয়াব। যাতে তারা তাঁর সন্তষ্টি অর্জন করতে পারে। তাঁর ভয়ে ও তাকওয়ায় তাদের অন্তর পরিপূর্ণ হয়ে উঠে।
রোযার ফযিলত সম্পর্কে যা বর্ণিত হয়েছে তার কিছু নিুে বর্ণিত হল ঃ
(ক) আল্লাহ তাবারাক ও তা‘আলা বলেন ঃ
شهر رمضان الّذي أنزل فيه القرآن هدى للنّاس وبيّنات من الهدى والفرقان فمن شهد منكم الشهّر فليصمه ومن كان مريضاً أو على سفرٍ فعدّة من أيّامٍ أخر يريد الله بكم اليسر ولا يريد بكم العسر ولتكملوا العدّة ولتكبّروا الله على ما هداكم ولعلّكم تشكرون [سورة البقرة، الآية: ১৮৫].
অর্থ ঃ রামাযান মাস, ইহাতে বিশ্ব মানবের দিশারী এবং সৎপথের সুস্পষ্ট নিদর্শন ও সত্যা সত্যের পার্থক্যকারীরূপে কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যারা এই মাস পাবে তারা যেন এই মাসে সিয়াম পালন করে। এবং কেহ পীড়িত থাকলে কিংবা সফরে বা ভ্রমণে থাকলে অন্য সময় এই সংখ্যা পূরণ করতে হবে। আল্লাহ্ তোমাদের জন্য যা সহজ তা চান এবং যা তোমাদের জন্য কষ্টকর তা চান না, এই জন্য যে, তোমরা সংখ্যা পূর্ণ করবে এবং তোমাদেরকে সৎপথে পরিচালিত করবার কারণে তোমরা আল্লাহর মহিমা কীর্তন করবে এবং যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পার। [সূরা আল-বাক্বারাহ-আয়াত-১৮৫]
(খ) আবু হুরায়রা (রাযিআল্লাহু আনহু) বলেন ঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন ঃ
((من صام رمضان إيماناً واحتساباً غفرله ماتقدم من ذنبه))[متفق عليه].
অর্থ ঃ যে ব্যক্তি রামাযানের সিয়াম সাধন করবে ঈমানের সাথে ও সাওয়াবের উদ্দেশ্যে তার পূর্ববর্তী পাপ রাশী মা করে দেওয়া হবে। [বুখারী মুসলিম]
(গ) আবু হুরায়রা (রাযিআল্লাহু আনহু) বলেন ঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন ঃ
((يضاعف الحسنة عشر أمثالها إلى سبعمائة ضعف، قال الله عزّ وجلّ: إلا الصوم، فإنه لي وأنا أجزي به، يدع شهوته وطعامه من أجلي، للصائم فرحتان، فرحة عند فطره وفرحة عند لقاء ربه، ولخلوف فيه أطيب عند الله من ريح المسك))[رواه البخاري ومسلم والفظ له].
অর্থ ঃ প্রতিটি ভাল কাজের প্রতিদান দশ হতে সাতশত গুণ পর্যন্ত বাড়িয়ে দেওয়া হয়। মহান আল্লাহ বলেন ঃ তবে সাওম ছাড়া। কারণ সাওম হল আমার জন্য, আর আমি তার প্রতিদান প্রদান করবো। কারণ সে শুধুমাত্র আমার জন্যই তার প্রবৃত্তির অনুসরণ ও পানাহার বর্জন করেছে। সিয়াম সাধন কারীর জন্য দু’টি আনন্দ রয়েছে। একটি আনন্দ ইফতারের সময়, অপর আনন্দটি তার প্রভুর সাথে সাাতের সময়। আর সিয়াম সাধন কারীর মুখের দুর্গন্ধ আল্লাহর নিকট মেসকের সুগন্ধির চাইতেও অধিক সুগন্ধি পূর্ণ। [বুখারী ও মুসলিম শব্দ গুলো ইমাম মুসলিমের]
(ঘ) সিয়াম সাধন কারীর দু‘আ মাকবুল নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালাতু ওয়াস্সালাম) বলেছেন ঃ
((للصائم عند فطره دعوة لا ترد)) [رواه ابن ماجه].
অর্থ ঃ সিয়াম সাধন কারীর ইফতারের সময় তার দু‘আ গৃহীত হয়। [ইবনে মাজাহ]
তাই প্রত্যেক মুসলিম ব্যক্তির উচিত হবে তার ইফতারের সময়টাকে গনিমত মনে করে তার প্রভুর কাছে চাওয়া ও প্রার্থনার মাধ্যমে আগ্রহী হওয়া। হতে পারে সে মহান আল্লাহর সুগন্ধির কিছু সুগন্ধি পেয়ে যাবে। অতঃপর দুনিয়া ও আখেরাতে তার সৌভাগ্যময় জীবন অর্জীত হবে।
(ঙ) আল্লাহ জান্নাতের দরজা সমূহের একটি দরজা সিয়াম সাধন কারীদের জন্য নিদিষ্ট করেছেন। এই দরজা দিয়ে শুধু সিয়াম সাধন কারীরাই প্রবেশ করবে। তাদের সম্মানার্থে ও অন্যদের উপর তাদের বৈশিষ্ট সাব্যস্ত করনার্থে।
সাহ্ল বিন সা‘দ (রাযিআল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন ঃ
((إن في الجنة باباً يقال له (الريان) فإذا كان يوم القيامة قيل: أين الصائمون، فإذا دخلوا أغلق عليهم فلم يدخل منه أحد)) [متفق عليه].
অর্থ ঃ নিশ্চয়ই জান্নাতে একটি দরজা রয়েছে যার নাম হল-রাইয়্যান। অতএব যেদিন কিয়ামাত সংঘটিত হবে সে দিন বলা হবে সিয়াম সাধন কারীরা কোথায় ? তাদের প্রবেশ শেষে দরজা বন্ধ করে দেওয়া হবে। তা দিয়ে আর কেহ প্রবেশ করতে পারবেনা। [বুখারী ও মুসলিম]
(চ) কিয়ামাত দিবসে সিয়াম সাধন কারীর জন্য সিয়াম সুপারিশ করবে। আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনেল আছ (রাযিআল্লাহু আনহুম) বলেন ঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন ঃ
((الصيام والقرآن يشفعان للعبد يوم القيامة، يقول الصيام أي رب منعته من الطعام والشهوة فشفعني فيه، ويقول القرآن: منعته النوم بالليل فشفعني فيه، قال: فيشفعان)) [رواه أحمد].
অর্থ ঃ সিয়াম ও কুরআন কিয়ামাত দিবসে বান্দার জন্য সুপারিশ করবে। সিয়াম বলবে ঃ হে আমার প্রভু ! আমি তাকে পানাহার ও স্ত্রীসঙ্গম হতে বিরত রেখেছিলাম। অতঃপর তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ গ্রহণ কর। আর কুরআন বলবে ঃ রাতে আমি তাকে ঘুম হতে বিরত রেখেছিলাম। অতঃপর তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ গ্রহণ কর। তিনি বলেন ঃ অতঃপর উভয়ের সুপারিশ গ্রহণ করা হবে। [আহমাদ ]
(ছ) আর সিয়াম মুসলিম ব্যক্তিকে ধৈর্য, কষ্ট, সাধনা ও কোন কাজ মনোযোগ সহকারে পালন করার শিা দেয় বা অভ্যাস গড়ে তুলে। আর সিয়াম সাধন কারীকে তার প্রিয় ও প্রসিদ্ধ বস্তু ছাড়াতে পরিত্যাগে বাধ্য করে। আর তা অবাধ্য আতœাকে বাধ্য করে, অথচ এতে বিরাট কষ্ট রয়েছে।
৪- شروط وجوبه:
৪- সিয়াম ফরয হওয়ার শর্ত সমূহ ঃ
নিশ্চয়ই সিয়াম সাধন প্রত্যেক বালেগ-প্রাপ্ত বয়স্ক আকেল-জ্ঞানবান সহীহ-সুস্থ্য মুকীম মুসলিম ব্যক্তির উপর ফরয হওয়ার উপর সকল আলেমগণ একমত হয়েছেন।
হায়েয ও নিফাসরত মহিলা ছাড়া অন্যান্য মহিলাদের উপরও সিয়াম সাধন ফরয।
৫- آدابه:
৫- সিয়াম সাধনের আদাব সমূহ ঃ
(ক) গিবাত করা, চুগোল খোরী করা এবং এ দু’টি ছাড়াও অন্যান্য কর্ম যা আল্লাহ হারাম করেছেন তা থেকে সিয়াম সাধন কারীর বিরত থাকা। তাই প্রত্যেক মুসলিম ব্যক্তির উপর অপরিহার্য যে, সে তার জবানকে সকল হারাম কথাবার্তা হতে ও অন্যদের চরিত্রতে আঘাত হানা হতে বিরত রাখবে।
কারণ নাবী (সাল্লাল্লাহু আরাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন ঃ
((من لم يدع قول الزور والعمل به فليس لله حاجة في أن يدع طعامه وشرابه)) [رواه البخاري].
অর্থ ঃ যে ব্যক্তি মিথ্যা বলা ও মিথ্যার প্রতি আমল করা ছেড়ে দিলনা সে ব্যক্তির খানাদানা-পানাহার ছেড়ে দেওয়ায় আল্লাহর কোন প্রয়োজন নেই। [বুখারী ]
(খ) সিয়াম সাধন কারী সাহ্রী খাওয়া ছাড়বেনা। কারণ ইহা তাকে তার সিয়াম সাধনে সহযোগিতা করে। অতঃপর সে আরামে দিন অতিবাহিত করতে পারবে। ফুর্তি ও স্বজীবতার সাথে তার কর্ম আদায় করতে পারবে।
নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর প্রতি উৎসাহ দিয়েছেন। তাঁর নিুে বর্ণিত বাণী দ্বারা বলেছেন ঃ
((السحور أكلة بركة، فلا تدعوه، ولو أن يخرج أحدكم جرعة من ماء فإن الله عزّ وجلّ وملائكته يصلون على المتسحرين)) [رواه أحمد].
অর্থ ঃ সাহ্রী বরকতের খাবার, তা ছেড়ে দিওনা। যদিও তোমাদের কেহ এক ঢোক পানি পান করে, তার পর ও আল্লাহ তা‘আলা সাহ্রী খানে ওলাদের প্রতি রাহমত বর্ষণ করেন এবং ফিরিশ্তারা তাদের জন্য দু‘আ করেন। [আহমাদ ]
(গ) নিশ্চিত ভাবে সূর্য ডুবার সাথে সাথেই ইফতার করা।
কারণ নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন ঃ
((لا يزال الناس بخير ما عجلوا الفطر)) [متفق عليه].
অর্থ ঃ মানুষ যতন তাড়াতাড়ী ইফতার করবে, ততন তারা ভাল থাকবে। [বুখারী মুসলিম ]
(ঘ) রূত্বাব (অর্ধপক্ক খেজুর) বা খেজুর দিয়ে ইফতার করার চেষ্টা করবে, কারণ ইহা সুন্নাত। আনাস (রাযিআল্লাহু আনহু) বলেন ঃ
((كان رسول الله يفطر قبل أن يصلي على رطبات، فإن لم تكن رطبات فتمرات، فإن لم تكن حسا حسوات من ماء)) [رواه أبو داود].
অর্থ ঃ নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নামাযের পূর্বে রূত্বাব দিয়ে ইফতার করতেন। আর রত্বাব না থাকলে খেজুর দিয়ে ইফতার করতেন, আর খেজুর না থাকলে পানি দিয়ে ইফতার করতেন। [আবু দাউদ ]
(ঙ) কুরআন পাঠ আল্লাহ তা‘আলার যিকির তাঁর প্রশংসা ও তাঁর শুকরিয়া, দান, দয়া, নফল ইবাদাত ও অন্যান্য সৎকাজ বেশী বেশী করা।
কারণ ইবনে আব্বাস (রাযিআল্লাহু আনহুমা) বলেন ঃ
((كان رسول الله أجود النّاس بالخير، وكان أجود ما يكون في رمضان حين يلقاه جبريل، وكان جبريل يلقاه في كل ليلة من رمضان، فيدارسه القرآن، فلرسول الله حين يلقاه جبريل أجود بالخير من الريح المرسلة)) [رواه البخاري ومسلم].
অর্থ ঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সকলের চাইতে অধিক দানবীর ছিলেন। রামাযান মাসে যখন তাঁর সাথে জিব্রাঈল সাাত করতেন তখন তিনি আরো অধিক দানবীর হয়ে যেতেন। আর জিব্রাঈল রামাযানের প্রতি রাতে তাঁর সাথে সাাত করতেন, ও তাঁকে কুরআন পড়াতেন। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁর সাথে যখন জিব্রাঈল সাাত করতেন তখন তিনি প্রবাহমান বায়ুর চাইতেও অধিক দানবীর হয়ে যেতেন। [বুখারী ও মুসলিম ]
৬- مفسداته:
৬- সিয়াম বিনষ্ট কারী বিষয় সমূহ ঃ
দিনের বেলায় ইচ্ছাকৃত ভাবে পানাহার করা। অনুরূপ ভাবে সকল সিয়াম ভঙ্গকারী বিষয় সমূহ, যেমন খাদ্যের ইন্জেকশন বা মুখের সাহায্যে ঔষধ গ্রহণ। কারণ ইহা পানাহারের বিধানের অন্তর্ভুক্ত। তবে অল্প রক্ত বের করা যেমন-পরীার জন্য বের করা, ইহা সিয়ামের কোন তি করবেনা।
রামাযান মাসে দিনের বেলায় স্ত্রী সহবাস করা। কারণ ইহা তার সিয়ামকে নষ্ট করে দিবে। রামাযান মাসের সম্মান নষ্ট করার কারণে তার উপর আল্লাহ তা‘আলার নিকট তাওবা করা অপরিহার্য হয়ে দাড়াবে। যে দিবসে সে তার স্ত্রীর সাথে সহবাস করেছে সে দিবসের সিয়াম কাযা করবে। তার উপর কাফ্ফারা ওয়াজিব হবে। আর তা হল ঃ একজন দাস আজাদ করা, আর এর সামর্থ্য না থাকলে ধারাবাহিক দু’ মাসের সিয়াম সাধন করা, এর সামর্থ্য না থাকলে ষাটজন মিসকীনকে খানা খাওয়ানো। প্রতি মিসকীনের জন্য গম বা অন্য কিছু যা শহর বাসীর নিকট খাদ্য হিসাবে গণ্য তা হতে অর্ধ সা‘আ দেওয়া।
কারণ আবু হুরায়রা (রাযিআল্লাহু আনহু) এর হাদীসে আছে, তিনি বলেন ঃ
((بينما نحن جلوس عند النبي إذ جاء رجل، فقال: يارسول الله هلكت، قال ما لك؟ قال: وقعت على امرأتي وأنا صائم، فقال رسول الله هل تجد رقبة تعتقها؟ قال: لا. قال فهل تستطيع أن تصوم شهرين متتابعين ؟ قال: لا. قال : فهل تجد إطعام ستين مسكيناً ؟ قال: لا. قال: فمكث النبي فبينما نحن على ذلك أتي النبي بفرق فيه تمر - والفرق المكتل، وقال أين السائل؟ فقال: أنا قال : خذ هذا فتصدق به, فقال الرجل : على أفقر مني يا رسول الله، فوالله ما بين لابتيها - يريد الحرتين أهل بيت أفقر من أهل بيتي، فضحك النبي حتى بدت أنيابه، ثم قال: أطعمه أهلك)) [رواه البخاري ومسلم].
অর্থ ঃ একদা আমরা নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর নিকট বসা ছিলাম, হঠাৎ এক লোক আগমণ করলো, অতঃপর বল্ল হে আল্লাহর রাসূল আমি ধ্বংস হয়েগেছি। নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বল্লেন তোমার কি হয়েছে ? সে বল্ল আমি সিয়াম অবস্থায় আমার স্ত্রীর সাথে সহবাস করেছি। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বল্লেন তুমি কি একটি দাস আজাদ করতে পারবে ? সে বল্ল না। অতঃপর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বল্লেন তুমি কি দু’মাস পর্যায় ক্রমে সিয়াম সাধন করতে পারবে ? সে বল্ল না। তারপর নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বল্লেন তুমি কি ষাট মিসকীনকে খানা খাওয়াতে পারবে ? সে বল্ল না। বর্ণনা কারী বলেন ঃ তারপর নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কিছুণ অবস্থান করলেন। আমরা এই অবস্থাই ছিলাম, এমতাবস্থায় নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর নিকট ফারাক্ব নিয়ে আসা হলো যাতে খেজুর ছিল। আর ফারাক্ব মিকতাল নির্ধারিত পরিমাণকে বলা হয়। তারপর নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বল্লেন ঃ প্রশ্ন কারী কোথায় ? তারপর সে উত্তর দিল যে, আমি। তারপর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বল্লেন ঃ এগুলো নিয়ে যেয়ে সাদ্কা করে দাও। সে ব্যক্তি বল্ল হে আল্লাহর রাসূল ! আমার চেয়েও অধিক গরীবের উপর, (সে বল্ল) আল্লাহর শপথ মদিনার এই দু’র্হারার (অর্থাৎ সমগ্র মদিনার) মাঝে আমার পরিবারের চেয়ে দরিদ্র পরিবার আর নেই। একথা শুনে নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) হাঁসলেন। এমনকি তাঁর আনইয়াব নামক দাঁত প্রকাশ হয়ে গেল। তারপর বল্লেন (যাও) তা তোমার পরিবারকে খাওয়াও। [বুখারী ও মুসলিম]
চুমু, সহবাস বা হস্ত মৈথুনে বীর্য বের করা। সিয়াম সাধন কারী যদি উল্লেখিত কারণ সমূহের যে কোন একটি কারণ দ্বারা বীর্য বের করে তবে তার সাওম বাতিল হয়ে যাবে, তা কাযা করা অপরিহার্য হয়ে যাবে, দিনের বাকী অংশ পানাহার ইত্যাদি হতে বিরত থাকবে। তার উপর কাফ্ফারা ধার্য হবে না। আর সে তাওবা করবে, লজ্জীত হবে, মা চাবে, কামভাব উত্তেজীত করে এমন সকল অপকর্ম হতে দূরে থাকবে। যদি সিয়াম সাধন অবস্থায় ঘুমের ঘরে স্বপ্নদোষ হয়ে বীর্যপাত হয়, তবে তার সিয়াম সাধনের উপর কোন প্রভাব পড়বেনা ও তার উপর কোন কিছু ধার্য হবে না। তবে তার উপর গোসল করা অপরিহার্য হবে।
পাকস্থলীতে বিদ্যমান বস্তু মুখ দিয়ে বের করে ইচ্ছা কৃত বমি করা। কিন্তু বিনা ইচ্ছায় যদি কিছু বের হয়ে যায় তবে তা তার সিয়ামের উপর কোন প্রভাব ফেলবেনা।
কারণ নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন ঃ
((من ذرعه القيء فليس عليه قضاء، ومن استقاء عمداً فليقض)) [رواه أبو داود والترمذي].
অর্থ ঃ যার বমি হয়ে যাবে তার উপর কাযা নেই। আর যে ইচ্ছাকৃত বমি করলো সে কাযা করবে। [আবু দাউদ ও তিরমিযী ]
হায়েয ও নিফাস দেখা দিলে। আর তা দিনের প্রথম অংশে হোক বা শেষাংশে সূর্য ডুবার পূর্ব মুহুর্তে হোক।
সিয়াম সাধন কারীর জন্য সিঙ্গা লাগানো ছেড়ে দেওয়া উত্তম। যাতে ইহা তার সিয়াম নষ্টের কারণ না হয়। রক্ত দানের জন্য রক্তবের না করা উত্তম। তবে অসুস্থ্য ও অনুরূপ ব্যক্তির সহযোগিতার তাগিদে রক্ত দান করলে অসুবিধা নেই। আর যদি নাক দিয়ে বা কাশির সাথে বা জখম হওয়ার কারণে বা দাঁত উঠানোর কারণে ও অনুরূপ কারণে রক্ত বের হয়, তবে ইহা তার সিয়ামের উপর কোন প্রভাব ফেলবেনা।
৭- أحكام عامة:
৭- সিয়ামের বা রোযার সাধারণ বিধান সমূহ ঃ
চাঁদ দেখার মাধ্যমে রামাযান মাসের সিয়াম সাধন ফরয প্রমাণিত হবে।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন ঃ
فمن شهد منكم الشهر فليصمه [سورة البقرة، الآية: ১৮৫].
অর্থ ঃ সুতরাং তোমাদের মধ্যে যারা এই মাস পাবে তারা যেন এই মাসে সিয়াম পালন করে। [সূরা আল-বাক্বারাহ-আয়াত-১৮৫]
চাঁদ দেখা প্রমাণিত হওয়ার জন্য একজন ন্যায় পরায়ণ মুসলিম ব্যক্তির সাীই যথেষ্ট।
ইবনে উমার (রাযিআল্লাহু আনহুমা) বলেন ঃ
((تراىء النّاس الهلال فأخبرت رسول الله أني رأيته فصام وأمر النّاس بصيامه)) [رواه أبو داود والدارمي وغيرهما].
অর্থ ঃ মানুষ একে অপরে চাঁদ দেখতে ছিল। আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে সংবাদ দিলাম যে আমি চাঁদ দেখেছি। তারপর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সিয়াম সাধন করলেন ও মানুষদেরকে সিয়াম সাধনের আদেশ দিলেন। [আবু দাউদ, দারেমী ও অন্যান্যরা এই হাদীস বর্ণনা করেছেন ]
প্রত্যেক দেশে-দেশের রাজার হুকুম সিয়াম সাধন শুরুর েেত্র প্রযোজ্য হবে। সে যদি সিয়াম সাধনের আদেশ করে অথবা সিয়াম সাধন করতে নিষেধ করে, তার আনুগত্য করা ওয়াজিব হবে। আর যদি দেশের রাজা কাফের হয় তবে দেশে ইসলামী ঐক্য ঠিক রাখার জন্য ইসলামী সেন্টার বা অনুরূপ বোর্ডের বিধান কার্যকর হবে।
চাঁদ দেখার ব্যাপারে দুরদর্শন যন্ত্রের সাহায্য নেওয়া জায়েয আছে। রামাযান শুরু বা শেষ সাব্যস্ত হওয়ার ব্যাপারে ক পথের হিসাবের ও তারকা দেখার উপর ভরসা করা ঠিক নয়। কেবল মাত্র চাঁদ দেখার উপর নির্ভর করা হবে।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন ঃ
فمن شهد منكم الشهر فليصمه [سورة البقرة، الآية: ১৮৫].
অর্থ ঃ সুতরাং তোমাদের মধ্যে যারা এই মাস পাবে তারা যেন এই মাসে সিয়াম পালন করে। [সূরা আল-বাক্বারাহ-আয়াত-১৮৫]
প্রাপ্ত বয়স্কদের মধ্যে যে ব্যক্তি রামাযান মাসকে পাবে তার উপর সে মাসের দিন গুলো তা ছোট হউক বা বড় হউক সিয়াম সাধন করা ফরয হবে। প্রত্যেক দেশে রামাযান মাসের সিয়াম সাধন শুরু হওয়ার ব্যাপারে মানদন্ড হলো তার চাঁদ উদিত হওয়ার স্থানে চাঁদ দেখা। আর ইহা বিদ্যানগুণের অধিক গ্রহণযোগ্য মত। কারণ চাঁদ উদিত হওয়ার স্থান সমূহ ভিন্ন এর উপর উলামাদের ঐক্যমত রয়েছে। আর এটাই প্রমাণিত হয় নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর বাণী দ্বারা, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন ঃ
((صوموا لرؤيته وافطروا لرؤيته فإن غمّ عليكم فأكملوا شعبان ثلاثين يوماً))[أخرجه البخاري ومسلم].
অর্থ ঃ -তোমরা চাঁদ দেখে সিয়াম সাধন শুরু কর। আবার চাঁদ দেখেই সিয়াম সাধন ছেড়ে দাও। আর তোমরা যদি চাঁদ দেখতে নাপাও তবে শা‘বান মাসকে ত্রিশ দিনে পুরা কর। [বুখারী ও মুসলিম]
সিয়াম সাধন কারীর রাতেই সিয়ামের নিয়াত করা আবশ্যক।
কারণ নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন ঃ
((إنما الأعمل بالنيّات، وإنما لكل امرئ ما نوى))[متفق عليه].
অর্থ ঃ কর্মের শুদ্ধতা ও অশুদ্ধতা নিয়াতের উপর নির্ভরশীল। প্রত্যেক ব্যক্তি যা নিয়াত করবে তাই তার জন্য অর্জীত হবে। [বুখারী ও মুসলিম ]
নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আরো বলেছেন ঃ
((من لم يجمع الصيام قبل الفجر فلا صيام له)) [أخرجه أحمد وأبو داود والترمذي والنسائي من حديث حفصه رضي الله عنها].
অর্থ ঃ যে ব্যক্তি ফজরের পূর্বে সিয়াম সাধনের নিয়াত করবেনা, তার সিয়াম সাধন শুদ্ধ হবে না। [এই হাদীসটি ইমাম আহমাদ আবু দাউদ, তিরমিযী ও নাসায়ী বর্ণনা করেছেন হাফসা (রাযিআল্লাহু আনহা) এর বর্ণিত হাদীস হতে]
অজর যুক্ত ব্যক্তি যেমন অসুস্থ্য বা মুসাফির ব্যক্তি বা হায়েয বা নিফাসরত মহিলা বা গর্ভধারিণী, বা বাচ্চাকে দুধ পান কারীনি মহিলা ছাড়া কারো জন্য রামাযান মাসের সিয়াম সাধন ছেড়ে দেওয়া বৈধ নয়।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন ঃ
فمن كان منكم مريضاً أو على سفر فعدة من أياّم أخر[سورة البقرة،الآية: ১৮৪].
অর্থ ঃ তোমাদের মধ্যে কেহ পীড়িত হলে বা সফরে থাকলে অন্য সময় এই সংখ্যা পূরণ করে নিবে। [সূরা আল-বাক্বারাহ-আয়াত-১৮৪]
অতঃপর অসুস্থ্য ব্যক্তি যার উপর সিয়াম সাধন কষ্টকর হবে, সিয়াম ভঙ্গকারী কারণ সমূহ হতে বিরত থাকা কঠিন হবে, ও তার দ্বারা সে তি গ্রস্থ হবে, তার জন্য রামাযান মাসের সিয়াম ছেড়ে দেওয়া বৈধ হবে। রামাযানের মাসে যে কয় দিনের সিয়াম ছেড়ে দিয়েছিল রামাযানের পর সে কয় দিনের সিয়াম কাযা আদায় করবে। যদি গর্ভধারিণী ও দুধ পান কারীনি শুধু নিজেদের কষ্টের আশংকা করে তবে সিয়াম ছেড়ে দিবে। ও তাদের উপর কাযা করা আবশ্যক হবে, এর উপর আলেমগণের ইজমা রয়েছে।
কারণ তারা দু’জন প্রাণ নাশের আশংকা করে এমন অসুস্থ্য ব্যক্তির সমপর্যায়।
আর যদি নিজেদের ও সন্তানের কষ্টের আশংকা করে বা শুধু সন্তানের কষ্টের আশংকা করে তবে তারা সিয়াম সাধন ছেড়ে দিবে, তাদের উপর কাযা আবশ্যক হবে। কারণ আনাস (রাযিআল্লাহু আনহু) মারফু‘ হাদীস বর্ণনা করেছেন ঃ
((إن الله وضع عن المسافر نصف الصلاة والصوم، وعن الحبلى والمرضع))[رواه النسائي وابن خزيمة وهو حديث حسن].
অর্থ ঃ নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা মুসাফিরের, গর্ভধারিণী ও দুধ পান কারীনির অর্ধেক সালাত ও সিয়াম মাফ করে দিয়েছেন। [নাসায়ী ও ইবনে খুযাইমা হাদীসটি হাসান হিসাবে বর্ণনা করেছেন]
তবে অতি বৃদ্ধ পুরুষ ও মহিলা তাদের জন্য সিয়াম ছেড়ে দেওয়ার অনুমতি আছে। যদি সিয়াম সাধন তাদের পে খুব কষ্টকর হয়। তাদের উপর প্রতিদিন একজন মিসকীনকে খানা খাওয়ানো আবশ্যক হবে।
কারণ ইমাম বুখারী আতা হতে বর্ণনা করেছেন সে ইবনে আব্বাস (রাযিআল্লাহু আনহুমা) কে নিুের আয়াত পাঠ করতে শুনেছেন ঃ
وعلى الذين يطيقونه فدية طعام مسكينٍ[سورة البقرة،الآية:১৮৪].
অর্থ ঃ আর যারা ওতে (সিয়াম সাধনে) অম তারা এর পরিবর্তে একজন মিসকীনকে খাদ্য দান করবে বা খাওয়াবে। [সূরা আল-বাক্বারাহ-আয়াত-১৮৪]
ইবনে আব্বাস (রাযিআল্লাহু আনহুমা) বলেন ঃ
((ليست منسوخة هي للشيخ الكبير والمرأة الكبيرة لا يستطيعان أن يصوما فيطعمان مكان كل يوم مسكيناً))
অর্থ ঃ এই আয়াতটি রহিত নয়। বরং ইহা অতি বৃদ্ধ পুরুষ ও মহিলা যাদের সিয়াম সাধনের সামর্থ্য নেই তাদের ব্যাপারে। তারা প্রত্যেক দিনের বিনিময়ে একজন মিসকীনকে খানা খাওয়াবে।
আর সফর বা ভ্রমণ হল সিয়াম সাধন ছেড়ে দেওয়ার গ্রহণযোগ্য কারণ সমূহের একটি কারণ।
কারণ আনাস (রাযিআল্লাহু আনহু) বলেন ঃ
((كنا نسافر مع النبي ، فلم يعب الصائم على المفطر ولا المفطر على الصائم)) [متفق عليه].
অর্থ ঃ আমরা নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লা) এর সাথে সফর করতাম। সিয়াম সাধন কারীরা সিয়াম ত্যাগ কারীদের, আর সিয়াম ত্যাগ কারীরা সিয়াম সাধন কারীদের দোষারুপ করতোনা। [বুখারী মুসলিম]
১- সিয়ামের-রোযার সংজ্ঞা ঃ
الصيام لغة : - সিয়ামের শাব্দিক অর্থ ঃ বিরত থাকা।
وشرعاً : - পারিভাষিক অর্থ ঃ ফাজরে সানী উদিত হওয়ার পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সকল প্রকার রোযা ভঙ্গের কারণ হতে বিরত থাকা।
২- حكمه:
২- রামাযান মাসের সিয়াম সাধনের বিধান ঃ
ইসলামের রুক্ন সমূহের অন্যতম একটি রুক্ন ও তার মহান স্তম্ভ।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন ঃ
يا أيّها الذين آمنوا كتب عليكم الصّيام كما كتب على الّذين من قبلكم لعلّكم تتقون[ سورة البقرة، الآية:১৮৩].
অর্থ ঃ হে মু‘মিনগণ ! তোমাদের উপর সিয়ামের বিধান দেওয়া হলো, যেমন বিধান তোমাদের পূর্ববর্তীগণকে দেওয়া হয়েছিল, যাতে তোমরা সংযমশীল হতে পারো। [সূরা আল-বাক্বারাহ-আয়াত-১৮৩]
ইব্নে উমার (রাযিআল্লাহু আনহুমা) বলেন ঃ নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন ঃ
((بني الإسلام على خمس: شهادة أن لا إله إلا الله وأن محمداً رسول الله، وإقام الصلاة، وإيتاء الزكاة، وصوم رمضان، وحج بيت الله))[متفق عليه].
অর্থ ঃ ইসলাম পাঁচটি স্তম্ভের উপর প্রতিষ্ঠিত। আল্লাহ ছাড়া কোন সত্য মা‘বুদ নেই, মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আল্লাহর রাসূল এ স্যা দান করা। নামায প্রতিষ্ঠা করা। যাকাত প্রদান করা। রামাযানের রোযা রাখা। বায়তুল্লাহ শরীফের হাজ্জ করা। [বুখারী মুসলিম]
হিজরী সনের দ্বিতীয় বর্ষে মুসলিম উম্মার উপর রামাযানের সিয়াম সাধন ফরয হয়েছে।
৩- فضله وحكمة مشروعيته:
৩- সিয়াম সাধনের ফযিলত ও তা প্রবর্তনের পিছনে হিক্মাত ঃ
রামাযান মাস মহান আল্লাহর আনুগত্য করার বিরাট মৌসম, আর ইহা বান্দার নিকট একটি বিরাট নি‘আমত ও মহান আল্লাহর প হতে এক বিরাট অনুগ্রহ। তাঁর বান্দাদের মধ্য হতে যাকে চান তার প্রতি এর দ্বারা অনুগ্রহ করেন। যাতে তাদের সৎকর্ম বৃদ্ধি পায়, তাদের মান মর্যাদা বেড়ে যায়, এবং তাদের অসৎকর্ম কমে যায়। যাতে তাদের সম্পর্ক তাদের মহান সৃষ্টি কর্তার সাথে আরো শক্তিশালী হয়। যাতে তাদের জন্য লিখা হয় মহা পুরস্কার ও অধিক সাওয়াব। যাতে তারা তাঁর সন্তষ্টি অর্জন করতে পারে। তাঁর ভয়ে ও তাকওয়ায় তাদের অন্তর পরিপূর্ণ হয়ে উঠে।
রোযার ফযিলত সম্পর্কে যা বর্ণিত হয়েছে তার কিছু নিুে বর্ণিত হল ঃ
(ক) আল্লাহ তাবারাক ও তা‘আলা বলেন ঃ
شهر رمضان الّذي أنزل فيه القرآن هدى للنّاس وبيّنات من الهدى والفرقان فمن شهد منكم الشهّر فليصمه ومن كان مريضاً أو على سفرٍ فعدّة من أيّامٍ أخر يريد الله بكم اليسر ولا يريد بكم العسر ولتكملوا العدّة ولتكبّروا الله على ما هداكم ولعلّكم تشكرون [سورة البقرة، الآية: ১৮৫].
অর্থ ঃ রামাযান মাস, ইহাতে বিশ্ব মানবের দিশারী এবং সৎপথের সুস্পষ্ট নিদর্শন ও সত্যা সত্যের পার্থক্যকারীরূপে কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যারা এই মাস পাবে তারা যেন এই মাসে সিয়াম পালন করে। এবং কেহ পীড়িত থাকলে কিংবা সফরে বা ভ্রমণে থাকলে অন্য সময় এই সংখ্যা পূরণ করতে হবে। আল্লাহ্ তোমাদের জন্য যা সহজ তা চান এবং যা তোমাদের জন্য কষ্টকর তা চান না, এই জন্য যে, তোমরা সংখ্যা পূর্ণ করবে এবং তোমাদেরকে সৎপথে পরিচালিত করবার কারণে তোমরা আল্লাহর মহিমা কীর্তন করবে এবং যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পার। [সূরা আল-বাক্বারাহ-আয়াত-১৮৫]
(খ) আবু হুরায়রা (রাযিআল্লাহু আনহু) বলেন ঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন ঃ
((من صام رمضان إيماناً واحتساباً غفرله ماتقدم من ذنبه))[متفق عليه].
অর্থ ঃ যে ব্যক্তি রামাযানের সিয়াম সাধন করবে ঈমানের সাথে ও সাওয়াবের উদ্দেশ্যে তার পূর্ববর্তী পাপ রাশী মা করে দেওয়া হবে। [বুখারী মুসলিম]
(গ) আবু হুরায়রা (রাযিআল্লাহু আনহু) বলেন ঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন ঃ
((يضاعف الحسنة عشر أمثالها إلى سبعمائة ضعف، قال الله عزّ وجلّ: إلا الصوم، فإنه لي وأنا أجزي به، يدع شهوته وطعامه من أجلي، للصائم فرحتان، فرحة عند فطره وفرحة عند لقاء ربه، ولخلوف فيه أطيب عند الله من ريح المسك))[رواه البخاري ومسلم والفظ له].
অর্থ ঃ প্রতিটি ভাল কাজের প্রতিদান দশ হতে সাতশত গুণ পর্যন্ত বাড়িয়ে দেওয়া হয়। মহান আল্লাহ বলেন ঃ তবে সাওম ছাড়া। কারণ সাওম হল আমার জন্য, আর আমি তার প্রতিদান প্রদান করবো। কারণ সে শুধুমাত্র আমার জন্যই তার প্রবৃত্তির অনুসরণ ও পানাহার বর্জন করেছে। সিয়াম সাধন কারীর জন্য দু’টি আনন্দ রয়েছে। একটি আনন্দ ইফতারের সময়, অপর আনন্দটি তার প্রভুর সাথে সাাতের সময়। আর সিয়াম সাধন কারীর মুখের দুর্গন্ধ আল্লাহর নিকট মেসকের সুগন্ধির চাইতেও অধিক সুগন্ধি পূর্ণ। [বুখারী ও মুসলিম শব্দ গুলো ইমাম মুসলিমের]
(ঘ) সিয়াম সাধন কারীর দু‘আ মাকবুল নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালাতু ওয়াস্সালাম) বলেছেন ঃ
((للصائم عند فطره دعوة لا ترد)) [رواه ابن ماجه].
অর্থ ঃ সিয়াম সাধন কারীর ইফতারের সময় তার দু‘আ গৃহীত হয়। [ইবনে মাজাহ]
তাই প্রত্যেক মুসলিম ব্যক্তির উচিত হবে তার ইফতারের সময়টাকে গনিমত মনে করে তার প্রভুর কাছে চাওয়া ও প্রার্থনার মাধ্যমে আগ্রহী হওয়া। হতে পারে সে মহান আল্লাহর সুগন্ধির কিছু সুগন্ধি পেয়ে যাবে। অতঃপর দুনিয়া ও আখেরাতে তার সৌভাগ্যময় জীবন অর্জীত হবে।
(ঙ) আল্লাহ জান্নাতের দরজা সমূহের একটি দরজা সিয়াম সাধন কারীদের জন্য নিদিষ্ট করেছেন। এই দরজা দিয়ে শুধু সিয়াম সাধন কারীরাই প্রবেশ করবে। তাদের সম্মানার্থে ও অন্যদের উপর তাদের বৈশিষ্ট সাব্যস্ত করনার্থে।
সাহ্ল বিন সা‘দ (রাযিআল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন ঃ
((إن في الجنة باباً يقال له (الريان) فإذا كان يوم القيامة قيل: أين الصائمون، فإذا دخلوا أغلق عليهم فلم يدخل منه أحد)) [متفق عليه].
অর্থ ঃ নিশ্চয়ই জান্নাতে একটি দরজা রয়েছে যার নাম হল-রাইয়্যান। অতএব যেদিন কিয়ামাত সংঘটিত হবে সে দিন বলা হবে সিয়াম সাধন কারীরা কোথায় ? তাদের প্রবেশ শেষে দরজা বন্ধ করে দেওয়া হবে। তা দিয়ে আর কেহ প্রবেশ করতে পারবেনা। [বুখারী ও মুসলিম]
(চ) কিয়ামাত দিবসে সিয়াম সাধন কারীর জন্য সিয়াম সুপারিশ করবে। আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনেল আছ (রাযিআল্লাহু আনহুম) বলেন ঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন ঃ
((الصيام والقرآن يشفعان للعبد يوم القيامة، يقول الصيام أي رب منعته من الطعام والشهوة فشفعني فيه، ويقول القرآن: منعته النوم بالليل فشفعني فيه، قال: فيشفعان)) [رواه أحمد].
অর্থ ঃ সিয়াম ও কুরআন কিয়ামাত দিবসে বান্দার জন্য সুপারিশ করবে। সিয়াম বলবে ঃ হে আমার প্রভু ! আমি তাকে পানাহার ও স্ত্রীসঙ্গম হতে বিরত রেখেছিলাম। অতঃপর তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ গ্রহণ কর। আর কুরআন বলবে ঃ রাতে আমি তাকে ঘুম হতে বিরত রেখেছিলাম। অতঃপর তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ গ্রহণ কর। তিনি বলেন ঃ অতঃপর উভয়ের সুপারিশ গ্রহণ করা হবে। [আহমাদ ]
(ছ) আর সিয়াম মুসলিম ব্যক্তিকে ধৈর্য, কষ্ট, সাধনা ও কোন কাজ মনোযোগ সহকারে পালন করার শিা দেয় বা অভ্যাস গড়ে তুলে। আর সিয়াম সাধন কারীকে তার প্রিয় ও প্রসিদ্ধ বস্তু ছাড়াতে পরিত্যাগে বাধ্য করে। আর তা অবাধ্য আতœাকে বাধ্য করে, অথচ এতে বিরাট কষ্ট রয়েছে।
৪- شروط وجوبه:
৪- সিয়াম ফরয হওয়ার শর্ত সমূহ ঃ
নিশ্চয়ই সিয়াম সাধন প্রত্যেক বালেগ-প্রাপ্ত বয়স্ক আকেল-জ্ঞানবান সহীহ-সুস্থ্য মুকীম মুসলিম ব্যক্তির উপর ফরয হওয়ার উপর সকল আলেমগণ একমত হয়েছেন।
হায়েয ও নিফাসরত মহিলা ছাড়া অন্যান্য মহিলাদের উপরও সিয়াম সাধন ফরয।
৫- آدابه:
৫- সিয়াম সাধনের আদাব সমূহ ঃ
(ক) গিবাত করা, চুগোল খোরী করা এবং এ দু’টি ছাড়াও অন্যান্য কর্ম যা আল্লাহ হারাম করেছেন তা থেকে সিয়াম সাধন কারীর বিরত থাকা। তাই প্রত্যেক মুসলিম ব্যক্তির উপর অপরিহার্য যে, সে তার জবানকে সকল হারাম কথাবার্তা হতে ও অন্যদের চরিত্রতে আঘাত হানা হতে বিরত রাখবে।
কারণ নাবী (সাল্লাল্লাহু আরাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন ঃ
((من لم يدع قول الزور والعمل به فليس لله حاجة في أن يدع طعامه وشرابه)) [رواه البخاري].
অর্থ ঃ যে ব্যক্তি মিথ্যা বলা ও মিথ্যার প্রতি আমল করা ছেড়ে দিলনা সে ব্যক্তির খানাদানা-পানাহার ছেড়ে দেওয়ায় আল্লাহর কোন প্রয়োজন নেই। [বুখারী ]
(খ) সিয়াম সাধন কারী সাহ্রী খাওয়া ছাড়বেনা। কারণ ইহা তাকে তার সিয়াম সাধনে সহযোগিতা করে। অতঃপর সে আরামে দিন অতিবাহিত করতে পারবে। ফুর্তি ও স্বজীবতার সাথে তার কর্ম আদায় করতে পারবে।
নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর প্রতি উৎসাহ দিয়েছেন। তাঁর নিুে বর্ণিত বাণী দ্বারা বলেছেন ঃ
((السحور أكلة بركة، فلا تدعوه، ولو أن يخرج أحدكم جرعة من ماء فإن الله عزّ وجلّ وملائكته يصلون على المتسحرين)) [رواه أحمد].
অর্থ ঃ সাহ্রী বরকতের খাবার, তা ছেড়ে দিওনা। যদিও তোমাদের কেহ এক ঢোক পানি পান করে, তার পর ও আল্লাহ তা‘আলা সাহ্রী খানে ওলাদের প্রতি রাহমত বর্ষণ করেন এবং ফিরিশ্তারা তাদের জন্য দু‘আ করেন। [আহমাদ ]
(গ) নিশ্চিত ভাবে সূর্য ডুবার সাথে সাথেই ইফতার করা।
কারণ নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন ঃ
((لا يزال الناس بخير ما عجلوا الفطر)) [متفق عليه].
অর্থ ঃ মানুষ যতন তাড়াতাড়ী ইফতার করবে, ততন তারা ভাল থাকবে। [বুখারী মুসলিম ]
(ঘ) রূত্বাব (অর্ধপক্ক খেজুর) বা খেজুর দিয়ে ইফতার করার চেষ্টা করবে, কারণ ইহা সুন্নাত। আনাস (রাযিআল্লাহু আনহু) বলেন ঃ
((كان رسول الله يفطر قبل أن يصلي على رطبات، فإن لم تكن رطبات فتمرات، فإن لم تكن حسا حسوات من ماء)) [رواه أبو داود].
অর্থ ঃ নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নামাযের পূর্বে রূত্বাব দিয়ে ইফতার করতেন। আর রত্বাব না থাকলে খেজুর দিয়ে ইফতার করতেন, আর খেজুর না থাকলে পানি দিয়ে ইফতার করতেন। [আবু দাউদ ]
(ঙ) কুরআন পাঠ আল্লাহ তা‘আলার যিকির তাঁর প্রশংসা ও তাঁর শুকরিয়া, দান, দয়া, নফল ইবাদাত ও অন্যান্য সৎকাজ বেশী বেশী করা।
কারণ ইবনে আব্বাস (রাযিআল্লাহু আনহুমা) বলেন ঃ
((كان رسول الله أجود النّاس بالخير، وكان أجود ما يكون في رمضان حين يلقاه جبريل، وكان جبريل يلقاه في كل ليلة من رمضان، فيدارسه القرآن، فلرسول الله حين يلقاه جبريل أجود بالخير من الريح المرسلة)) [رواه البخاري ومسلم].
অর্থ ঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সকলের চাইতে অধিক দানবীর ছিলেন। রামাযান মাসে যখন তাঁর সাথে জিব্রাঈল সাাত করতেন তখন তিনি আরো অধিক দানবীর হয়ে যেতেন। আর জিব্রাঈল রামাযানের প্রতি রাতে তাঁর সাথে সাাত করতেন, ও তাঁকে কুরআন পড়াতেন। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁর সাথে যখন জিব্রাঈল সাাত করতেন তখন তিনি প্রবাহমান বায়ুর চাইতেও অধিক দানবীর হয়ে যেতেন। [বুখারী ও মুসলিম ]
৬- مفسداته:
৬- সিয়াম বিনষ্ট কারী বিষয় সমূহ ঃ
দিনের বেলায় ইচ্ছাকৃত ভাবে পানাহার করা। অনুরূপ ভাবে সকল সিয়াম ভঙ্গকারী বিষয় সমূহ, যেমন খাদ্যের ইন্জেকশন বা মুখের সাহায্যে ঔষধ গ্রহণ। কারণ ইহা পানাহারের বিধানের অন্তর্ভুক্ত। তবে অল্প রক্ত বের করা যেমন-পরীার জন্য বের করা, ইহা সিয়ামের কোন তি করবেনা।
রামাযান মাসে দিনের বেলায় স্ত্রী সহবাস করা। কারণ ইহা তার সিয়ামকে নষ্ট করে দিবে। রামাযান মাসের সম্মান নষ্ট করার কারণে তার উপর আল্লাহ তা‘আলার নিকট তাওবা করা অপরিহার্য হয়ে দাড়াবে। যে দিবসে সে তার স্ত্রীর সাথে সহবাস করেছে সে দিবসের সিয়াম কাযা করবে। তার উপর কাফ্ফারা ওয়াজিব হবে। আর তা হল ঃ একজন দাস আজাদ করা, আর এর সামর্থ্য না থাকলে ধারাবাহিক দু’ মাসের সিয়াম সাধন করা, এর সামর্থ্য না থাকলে ষাটজন মিসকীনকে খানা খাওয়ানো। প্রতি মিসকীনের জন্য গম বা অন্য কিছু যা শহর বাসীর নিকট খাদ্য হিসাবে গণ্য তা হতে অর্ধ সা‘আ দেওয়া।
কারণ আবু হুরায়রা (রাযিআল্লাহু আনহু) এর হাদীসে আছে, তিনি বলেন ঃ
((بينما نحن جلوس عند النبي إذ جاء رجل، فقال: يارسول الله هلكت، قال ما لك؟ قال: وقعت على امرأتي وأنا صائم، فقال رسول الله هل تجد رقبة تعتقها؟ قال: لا. قال فهل تستطيع أن تصوم شهرين متتابعين ؟ قال: لا. قال : فهل تجد إطعام ستين مسكيناً ؟ قال: لا. قال: فمكث النبي فبينما نحن على ذلك أتي النبي بفرق فيه تمر - والفرق المكتل، وقال أين السائل؟ فقال: أنا قال : خذ هذا فتصدق به, فقال الرجل : على أفقر مني يا رسول الله، فوالله ما بين لابتيها - يريد الحرتين أهل بيت أفقر من أهل بيتي، فضحك النبي حتى بدت أنيابه، ثم قال: أطعمه أهلك)) [رواه البخاري ومسلم].
অর্থ ঃ একদা আমরা নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর নিকট বসা ছিলাম, হঠাৎ এক লোক আগমণ করলো, অতঃপর বল্ল হে আল্লাহর রাসূল আমি ধ্বংস হয়েগেছি। নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বল্লেন তোমার কি হয়েছে ? সে বল্ল আমি সিয়াম অবস্থায় আমার স্ত্রীর সাথে সহবাস করেছি। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বল্লেন তুমি কি একটি দাস আজাদ করতে পারবে ? সে বল্ল না। অতঃপর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বল্লেন তুমি কি দু’মাস পর্যায় ক্রমে সিয়াম সাধন করতে পারবে ? সে বল্ল না। তারপর নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বল্লেন তুমি কি ষাট মিসকীনকে খানা খাওয়াতে পারবে ? সে বল্ল না। বর্ণনা কারী বলেন ঃ তারপর নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কিছুণ অবস্থান করলেন। আমরা এই অবস্থাই ছিলাম, এমতাবস্থায় নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর নিকট ফারাক্ব নিয়ে আসা হলো যাতে খেজুর ছিল। আর ফারাক্ব মিকতাল নির্ধারিত পরিমাণকে বলা হয়। তারপর নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বল্লেন ঃ প্রশ্ন কারী কোথায় ? তারপর সে উত্তর দিল যে, আমি। তারপর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বল্লেন ঃ এগুলো নিয়ে যেয়ে সাদ্কা করে দাও। সে ব্যক্তি বল্ল হে আল্লাহর রাসূল ! আমার চেয়েও অধিক গরীবের উপর, (সে বল্ল) আল্লাহর শপথ মদিনার এই দু’র্হারার (অর্থাৎ সমগ্র মদিনার) মাঝে আমার পরিবারের চেয়ে দরিদ্র পরিবার আর নেই। একথা শুনে নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) হাঁসলেন। এমনকি তাঁর আনইয়াব নামক দাঁত প্রকাশ হয়ে গেল। তারপর বল্লেন (যাও) তা তোমার পরিবারকে খাওয়াও। [বুখারী ও মুসলিম]
চুমু, সহবাস বা হস্ত মৈথুনে বীর্য বের করা। সিয়াম সাধন কারী যদি উল্লেখিত কারণ সমূহের যে কোন একটি কারণ দ্বারা বীর্য বের করে তবে তার সাওম বাতিল হয়ে যাবে, তা কাযা করা অপরিহার্য হয়ে যাবে, দিনের বাকী অংশ পানাহার ইত্যাদি হতে বিরত থাকবে। তার উপর কাফ্ফারা ধার্য হবে না। আর সে তাওবা করবে, লজ্জীত হবে, মা চাবে, কামভাব উত্তেজীত করে এমন সকল অপকর্ম হতে দূরে থাকবে। যদি সিয়াম সাধন অবস্থায় ঘুমের ঘরে স্বপ্নদোষ হয়ে বীর্যপাত হয়, তবে তার সিয়াম সাধনের উপর কোন প্রভাব পড়বেনা ও তার উপর কোন কিছু ধার্য হবে না। তবে তার উপর গোসল করা অপরিহার্য হবে।
পাকস্থলীতে বিদ্যমান বস্তু মুখ দিয়ে বের করে ইচ্ছা কৃত বমি করা। কিন্তু বিনা ইচ্ছায় যদি কিছু বের হয়ে যায় তবে তা তার সিয়ামের উপর কোন প্রভাব ফেলবেনা।
কারণ নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন ঃ
((من ذرعه القيء فليس عليه قضاء، ومن استقاء عمداً فليقض)) [رواه أبو داود والترمذي].
অর্থ ঃ যার বমি হয়ে যাবে তার উপর কাযা নেই। আর যে ইচ্ছাকৃত বমি করলো সে কাযা করবে। [আবু দাউদ ও তিরমিযী ]
হায়েয ও নিফাস দেখা দিলে। আর তা দিনের প্রথম অংশে হোক বা শেষাংশে সূর্য ডুবার পূর্ব মুহুর্তে হোক।
সিয়াম সাধন কারীর জন্য সিঙ্গা লাগানো ছেড়ে দেওয়া উত্তম। যাতে ইহা তার সিয়াম নষ্টের কারণ না হয়। রক্ত দানের জন্য রক্তবের না করা উত্তম। তবে অসুস্থ্য ও অনুরূপ ব্যক্তির সহযোগিতার তাগিদে রক্ত দান করলে অসুবিধা নেই। আর যদি নাক দিয়ে বা কাশির সাথে বা জখম হওয়ার কারণে বা দাঁত উঠানোর কারণে ও অনুরূপ কারণে রক্ত বের হয়, তবে ইহা তার সিয়ামের উপর কোন প্রভাব ফেলবেনা।
৭- أحكام عامة:
৭- সিয়ামের বা রোযার সাধারণ বিধান সমূহ ঃ
চাঁদ দেখার মাধ্যমে রামাযান মাসের সিয়াম সাধন ফরয প্রমাণিত হবে।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন ঃ
فمن شهد منكم الشهر فليصمه [سورة البقرة، الآية: ১৮৫].
অর্থ ঃ সুতরাং তোমাদের মধ্যে যারা এই মাস পাবে তারা যেন এই মাসে সিয়াম পালন করে। [সূরা আল-বাক্বারাহ-আয়াত-১৮৫]
চাঁদ দেখা প্রমাণিত হওয়ার জন্য একজন ন্যায় পরায়ণ মুসলিম ব্যক্তির সাীই যথেষ্ট।
ইবনে উমার (রাযিআল্লাহু আনহুমা) বলেন ঃ
((تراىء النّاس الهلال فأخبرت رسول الله أني رأيته فصام وأمر النّاس بصيامه)) [رواه أبو داود والدارمي وغيرهما].
অর্থ ঃ মানুষ একে অপরে চাঁদ দেখতে ছিল। আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে সংবাদ দিলাম যে আমি চাঁদ দেখেছি। তারপর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সিয়াম সাধন করলেন ও মানুষদেরকে সিয়াম সাধনের আদেশ দিলেন। [আবু দাউদ, দারেমী ও অন্যান্যরা এই হাদীস বর্ণনা করেছেন ]
প্রত্যেক দেশে-দেশের রাজার হুকুম সিয়াম সাধন শুরুর েেত্র প্রযোজ্য হবে। সে যদি সিয়াম সাধনের আদেশ করে অথবা সিয়াম সাধন করতে নিষেধ করে, তার আনুগত্য করা ওয়াজিব হবে। আর যদি দেশের রাজা কাফের হয় তবে দেশে ইসলামী ঐক্য ঠিক রাখার জন্য ইসলামী সেন্টার বা অনুরূপ বোর্ডের বিধান কার্যকর হবে।
চাঁদ দেখার ব্যাপারে দুরদর্শন যন্ত্রের সাহায্য নেওয়া জায়েয আছে। রামাযান শুরু বা শেষ সাব্যস্ত হওয়ার ব্যাপারে ক পথের হিসাবের ও তারকা দেখার উপর ভরসা করা ঠিক নয়। কেবল মাত্র চাঁদ দেখার উপর নির্ভর করা হবে।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন ঃ
فمن شهد منكم الشهر فليصمه [سورة البقرة، الآية: ১৮৫].
অর্থ ঃ সুতরাং তোমাদের মধ্যে যারা এই মাস পাবে তারা যেন এই মাসে সিয়াম পালন করে। [সূরা আল-বাক্বারাহ-আয়াত-১৮৫]
প্রাপ্ত বয়স্কদের মধ্যে যে ব্যক্তি রামাযান মাসকে পাবে তার উপর সে মাসের দিন গুলো তা ছোট হউক বা বড় হউক সিয়াম সাধন করা ফরয হবে। প্রত্যেক দেশে রামাযান মাসের সিয়াম সাধন শুরু হওয়ার ব্যাপারে মানদন্ড হলো তার চাঁদ উদিত হওয়ার স্থানে চাঁদ দেখা। আর ইহা বিদ্যানগুণের অধিক গ্রহণযোগ্য মত। কারণ চাঁদ উদিত হওয়ার স্থান সমূহ ভিন্ন এর উপর উলামাদের ঐক্যমত রয়েছে। আর এটাই প্রমাণিত হয় নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর বাণী দ্বারা, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন ঃ
((صوموا لرؤيته وافطروا لرؤيته فإن غمّ عليكم فأكملوا شعبان ثلاثين يوماً))[أخرجه البخاري ومسلم].
অর্থ ঃ -তোমরা চাঁদ দেখে সিয়াম সাধন শুরু কর। আবার চাঁদ দেখেই সিয়াম সাধন ছেড়ে দাও। আর তোমরা যদি চাঁদ দেখতে নাপাও তবে শা‘বান মাসকে ত্রিশ দিনে পুরা কর। [বুখারী ও মুসলিম]
সিয়াম সাধন কারীর রাতেই সিয়ামের নিয়াত করা আবশ্যক।
কারণ নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন ঃ
((إنما الأعمل بالنيّات، وإنما لكل امرئ ما نوى))[متفق عليه].
অর্থ ঃ কর্মের শুদ্ধতা ও অশুদ্ধতা নিয়াতের উপর নির্ভরশীল। প্রত্যেক ব্যক্তি যা নিয়াত করবে তাই তার জন্য অর্জীত হবে। [বুখারী ও মুসলিম ]
নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আরো বলেছেন ঃ
((من لم يجمع الصيام قبل الفجر فلا صيام له)) [أخرجه أحمد وأبو داود والترمذي والنسائي من حديث حفصه رضي الله عنها].
অর্থ ঃ যে ব্যক্তি ফজরের পূর্বে সিয়াম সাধনের নিয়াত করবেনা, তার সিয়াম সাধন শুদ্ধ হবে না। [এই হাদীসটি ইমাম আহমাদ আবু দাউদ, তিরমিযী ও নাসায়ী বর্ণনা করেছেন হাফসা (রাযিআল্লাহু আনহা) এর বর্ণিত হাদীস হতে]
অজর যুক্ত ব্যক্তি যেমন অসুস্থ্য বা মুসাফির ব্যক্তি বা হায়েয বা নিফাসরত মহিলা বা গর্ভধারিণী, বা বাচ্চাকে দুধ পান কারীনি মহিলা ছাড়া কারো জন্য রামাযান মাসের সিয়াম সাধন ছেড়ে দেওয়া বৈধ নয়।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন ঃ
فمن كان منكم مريضاً أو على سفر فعدة من أياّم أخر[سورة البقرة،الآية: ১৮৪].
অর্থ ঃ তোমাদের মধ্যে কেহ পীড়িত হলে বা সফরে থাকলে অন্য সময় এই সংখ্যা পূরণ করে নিবে। [সূরা আল-বাক্বারাহ-আয়াত-১৮৪]
অতঃপর অসুস্থ্য ব্যক্তি যার উপর সিয়াম সাধন কষ্টকর হবে, সিয়াম ভঙ্গকারী কারণ সমূহ হতে বিরত থাকা কঠিন হবে, ও তার দ্বারা সে তি গ্রস্থ হবে, তার জন্য রামাযান মাসের সিয়াম ছেড়ে দেওয়া বৈধ হবে। রামাযানের মাসে যে কয় দিনের সিয়াম ছেড়ে দিয়েছিল রামাযানের পর সে কয় দিনের সিয়াম কাযা আদায় করবে। যদি গর্ভধারিণী ও দুধ পান কারীনি শুধু নিজেদের কষ্টের আশংকা করে তবে সিয়াম ছেড়ে দিবে। ও তাদের উপর কাযা করা আবশ্যক হবে, এর উপর আলেমগণের ইজমা রয়েছে।
কারণ তারা দু’জন প্রাণ নাশের আশংকা করে এমন অসুস্থ্য ব্যক্তির সমপর্যায়।
আর যদি নিজেদের ও সন্তানের কষ্টের আশংকা করে বা শুধু সন্তানের কষ্টের আশংকা করে তবে তারা সিয়াম সাধন ছেড়ে দিবে, তাদের উপর কাযা আবশ্যক হবে। কারণ আনাস (রাযিআল্লাহু আনহু) মারফু‘ হাদীস বর্ণনা করেছেন ঃ
((إن الله وضع عن المسافر نصف الصلاة والصوم، وعن الحبلى والمرضع))[رواه النسائي وابن خزيمة وهو حديث حسن].
অর্থ ঃ নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা মুসাফিরের, গর্ভধারিণী ও দুধ পান কারীনির অর্ধেক সালাত ও সিয়াম মাফ করে দিয়েছেন। [নাসায়ী ও ইবনে খুযাইমা হাদীসটি হাসান হিসাবে বর্ণনা করেছেন]
তবে অতি বৃদ্ধ পুরুষ ও মহিলা তাদের জন্য সিয়াম ছেড়ে দেওয়ার অনুমতি আছে। যদি সিয়াম সাধন তাদের পে খুব কষ্টকর হয়। তাদের উপর প্রতিদিন একজন মিসকীনকে খানা খাওয়ানো আবশ্যক হবে।
কারণ ইমাম বুখারী আতা হতে বর্ণনা করেছেন সে ইবনে আব্বাস (রাযিআল্লাহু আনহুমা) কে নিুের আয়াত পাঠ করতে শুনেছেন ঃ
وعلى الذين يطيقونه فدية طعام مسكينٍ[سورة البقرة،الآية:১৮৪].
অর্থ ঃ আর যারা ওতে (সিয়াম সাধনে) অম তারা এর পরিবর্তে একজন মিসকীনকে খাদ্য দান করবে বা খাওয়াবে। [সূরা আল-বাক্বারাহ-আয়াত-১৮৪]
ইবনে আব্বাস (রাযিআল্লাহু আনহুমা) বলেন ঃ
((ليست منسوخة هي للشيخ الكبير والمرأة الكبيرة لا يستطيعان أن يصوما فيطعمان مكان كل يوم مسكيناً))
অর্থ ঃ এই আয়াতটি রহিত নয়। বরং ইহা অতি বৃদ্ধ পুরুষ ও মহিলা যাদের সিয়াম সাধনের সামর্থ্য নেই তাদের ব্যাপারে। তারা প্রত্যেক দিনের বিনিময়ে একজন মিসকীনকে খানা খাওয়াবে।
আর সফর বা ভ্রমণ হল সিয়াম সাধন ছেড়ে দেওয়ার গ্রহণযোগ্য কারণ সমূহের একটি কারণ।
কারণ আনাস (রাযিআল্লাহু আনহু) বলেন ঃ
((كنا نسافر مع النبي ، فلم يعب الصائم على المفطر ولا المفطر على الصائم)) [متفق عليه].
অর্থ ঃ আমরা নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লা) এর সাথে সফর করতাম। সিয়াম সাধন কারীরা সিয়াম ত্যাগ কারীদের, আর সিয়াম ত্যাগ কারীরা সিয়াম সাধন কারীদের দোষারুপ করতোনা। [বুখারী মুসলিম]