হাজ্জ।

الركن الخامس : الحج.
পঞ্চম রুক্ন ঃ হাজ্জ।Justify Full১- تعريفه:
১- হাজ্জের সংজ্ঞা ঃ
الحج في اللغة:- হাজ্জের শাব্দিক অর্থ ঃ القصد (আলকাসদু) ইচ্ছা করা। আরবী ভাষায় বলা হয় ঃ حج إلينا فلان: অমুকে আমাদের নিকট হাজ্জ করেছে। অর্থাৎ সে আমাদের নিকট আসার ইচ্ছা করেছে ও আমাদের নিকট এসেছে।
وفي الشرع: - হাজ্জের পারিভাষিক অর্থ ঃ নির্ধারিত শর্তসহ নির্দিষ্ট সময়ে বিশেষ পদ্ধতিতে ইবাদাত করার জন্য মাক্কায় গমণের ইচ্ছা করাকে হাজ্জ বলে।
২- حكمه:
২- হাজ্জের হুকুম ঃ
সামর্থ্যবান ব্যক্তির উপর তার জীবনে একবার হাজ্জ ফরয হওয়া এবং তা পাঁচটি স্তম্ভ যার উপর ইসলাম প্রতিষ্ঠিত তার অন্যতম একটি স্তম্ভ হওয়ার ব্যাপারে উম্মাত ঐক্যমত পোষণ করেছেন।
আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন ঃ
ولله على النّاس حجّ البيت من استطاع إليه سبيلاً ومن كفر فإنّ الله غنيّ عن العلمين [سورة آل عمران،الآية: ৯৭].
অর্থ ঃ মানুষের মধ্যে যার সেখানে যাওয়ার সামর্থ্য আছে, আল্লাহর উদ্দেশ্যে ঐ গৃহের হাজ্জ করা তার অবশ্য কর্তব্য। এবং কেহ প্রত্যাখ্যান করলে সে জানিয়া রাখুক আল্লাহ বিশ্ব-জগতের মুখাপেী নহেন। [সূরা আলি-ইমরান-আয়াত-৯৭]
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন ঃ
((بني الإسلام على خمس، شهادة أن لا إله إلا الله وأن محمداً رسول الله وإقام الصلاة وإيتاء الزكاة، وصوم رمضان وحج بيت الله))[متفق عليه].
অর্থ ঃ ইসলাম পাঁচটি স্তম্ভের উপর প্রতিষ্ঠিত। আল্লাহ ছাড়া কোন সত্য মা‘বুদ নেই, মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আল্লাহর রাসূল এ স্যা দান করা। নামায প্রতিষ্ঠা করা। যাকাত প্রদান করা। রামাযানের সিয়াম পালন করা। বায়তুল্লাহ শরীফের হাজ্জ করা। [বুখারী মুসলিম]
তিনি বিদায় হাজ্জের ভাষণে আরো বলেন ঃ
((يا أيها الناس إن الله فرض عليكم حج البيت فحجوا))[رواه مسلم].
অর্থ ঃ হে মানব জাতি ! আল্লাহ তোমাদের উপর বায়তুল্লাহর হাজ্জ ফরয করেছেন। সুতরাং তোমরা হাজ্জ কর। [মুসলিম ]
৩- فضله والحكمة من مشروعيته:
৩- হাজ্জের ফযিলত ও তা প্রবর্তনের পিছনে হিক্মাত ঃ
হাজ্জের ফযিলতে অনেক দলীল বর্ণিত হয়েছে।
তন্মধ্যে তাঁর (আল্লাহর) বাণী ঃ
وأذن في الناس بالحجّ يأتوك رجالاً وعلى كلِّ ضامر يأتين من كل فجٍّ عميق ليشهدوا منافع لهم ويذكروا اسم الله في أيام معلومات على ما رزقهم من بهيمة الأنعام [سورة الحج، الآيتان: ২৭-২৮].

অর্থ ঃ এবং মানুষের নিকট হাজ্জ এর ঘোষণা করে দাও, তারা তোমার নিকট আসবে পদব্রজে ও সর্বপ্রকার ীণকায় উষ্ট্রসমূহের পিঠে, তারা আসবে দূর-দূরান্তর পথ অতিক্রম করে। যাতে তারা তাদের কল্যাণময় স্থান গুলিতে উপস্থিত হতে পারে এবং তিনি তাদেরকে চতুস্পদ জন্তু হতে যাহা রিয্ক হিসাবে দান করেছেন উহার উপর নির্দিষ্ট দিনগুলিতে আল্লাহর নাম উচ্চারণ করতে পারবে। [সূরা আল-হাজ্জ-আয়াত-২৭ -২৮]
আর হাজ্জ সকল মুসলমানের ইহকালীন ও পরকালীন জীবনে অনেক কল্যাণ অন্তর্ভুক্ত করে রেখেছে। সুতরাং হাজ্জের মধ্যে নানা প্রকার ইবাদাতের সমাবেশ রয়েছে, যেমন কা‘বা শরীফের তাওয়াফ, সাফা মারওয়ার মাঝে সা’ঈ, আরাফাতে, মিনায়, মুয্দালিফায় অবস্থান, কঙ্কর নিপে, মিনায় রাত্রি যাপন, হাদী জবেহ, মাথার চুল মুন্ডানো, আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের জন্য তাঁর কাছে বিনয়- নম্রতা প্রকাশ করার জন্য ও তাঁর দিকে ধাবমান হওয়ার জন্য বেশী বেশী আল্লাহর যিকির। তাই হাজ্জ হলো পাপ মোচনের ও জান্নাতে প্রবেশের কারণ সমূহের অন্যতম একটি কারণ।
আবু হুরায়রা (রাযিআল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন ঃ
((سمعت رسول الله  يقول: من حج هذا البيت فلم يرفث ولم يفسق رجع من ذنوبه كيوم ولدته أمه))[رواه البخاري ومسلم].
অর্থ ঃ আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে বলতে শুনেছি যে ব্যক্তি এই ঘরের হাজ্জ করলো আর সে নির্লজ্জ কোন কথা বার্তা ও ফাসেকী কোন কর্মে লিপ্ত হলোনা সে তার পাপ হতে ফিরে আসলো সেই দিনের ন্যায় যে দিন তার মা তাকে জন্ম দিয়েছিল। [বুখারী ও মুসলিম ]
আবু হুরায়রা (রাযিআল্লাহু আনহু) হতে আরো বর্ণিত আছে, তিনি বলেন ঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন ঃ
((العمرة إلى العمرة كفارة لما بينهما والحج المبرور ليس له جزاء إلا الجنة))[ رواه البخاري ومسلم].
অর্থ ঃ এক উম্রাহ হতে অপর উম্রাহ এই দুইয়ের মাঝে কৃত পাপের কাফ্ফারা। আর গৃহীত হাজ্জের একমাত্র প্রতিদান হল জান্নাত। [বুখারী ও মুসলিম]
আবু হুরায়রা (রাযিআল্লাহু আনহু) হতে আরো বর্ণিত আছে, তিনি বলেন ঃ
((سئل رسول الله  أي الأعمال أفضل؟ قال: إيمان بالله ورسوله. قيل: ثم ماذا؟ قال: جهاد في سبيل الله. قيل: ثم ماذا؟ قال حج مبرور))[متفق عليه].
অর্থ ঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে জিজ্ঞাসা করা হলো যে, কোন কাজটি অতি উত্তম ? তিনি বল্লেন ঃ আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আনা। বলা হলো ঃ তার পর কোনটি ? তিনি বলল্নে ঃ আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করা। বলা হলো তার পর কোনটি ? তিনি বলল্নে ঃ গৃহীত হাজ্জ। [বুখারী ও মুসলিম একত্রিত ভাবে এই হাদীসটি বর্ণনা করেছেন ]
আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ (রাযিআল্লাহ আনহুমা) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন ঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন ঃ
((تابعوا بين الحج والعمرة فإنهما ينفيان الفقر والذنوب كما ينفي الكير خبث الحديد والذهب والفضة، وليس للحجة المبرورة ثواب إلا الجنة))[رواه الترمذي وقال حديث حسن صحيح].
অর্থ ঃ তোমরা হাজ্জ ও উম্রাহ পর্যায়ক্রমে করতে থাক। কারণ এ দু’টি দরিদ্রতা দূর করে আর পাপ মোচন করে। যেমন কর্মকারের অগ্নিকন্ড লোহার, সোনা ও রূপার মরিচা দূর করে। আর গৃহীত হাজ্জের একমাত্র প্রতিদান হলো জান্নাত। [হাদীসটি ইমাম তিরমিযী বর্ণনা করেছেন, হাসান ও সহীহ বলেছেন ]
বিশ্বের দূর-দূরান্ত হতে আগত মুসলমানদের আল্লাহর নিকট সবচেয়ে প্রিয়স্থানে একে অপরের মিলন, পরস্পরের পরিচয় লাভ, কল্যাণ কর ও তাকওয়ার কাজে সহযোগিতা করার সুযোগ ও তাদের কথা কাজ ও যিকির এক হওয়া হাজ্জের উপকারিতার
অন্তর্ভুক্ত। ইহাতে তাদের আক্বীদায়, ইবাদাতে, উদ্দেশ্য ও ওয়াসিলাতে ঐক্যের ও একত্রিতের প্রশিণ রয়েছে। আর তাদের এই একত্রিত হওয়ার মাধ্যমে তাদের মাঝে পরস্পর পরিচয় লাভ হয়, বন্ধুত্ব সৃষ্টি হয় ও এক অপর সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করার সুযোগ পায়, ও আল্লাহ তা‘আলার কথা বাস্তবায়িত হয়।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন ঃ
يا أيها الناس إنا خلقنا كم من ذكر وأنثى وجعلنا كم شعوباً وقبائل لتعارفوا إنّ أكرمكم عند الله أتقاكم إن الله عليم خبير [سورة الحجرات،الآية: ১৩].
অর্থ ঃ হে মানুষ ! আমরা তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি এক পুরুষ ও এক নারী হতে, পরে তোমাদেরকে বিভক্ত করেছি বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে, যাতে তোমরা একে অপরের সহিত পরিচিত হতে পার। তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তিই আল্লাহর নিকট অধিক মর্যাদা সম্পন্ন যে অধিক মুত্তাকী। আল্লাহ সব কিছু জানেন, সমস্ত খবর রাখেন। [সূরা আল-হিজরাত-আয়াত-১৩]
৪- شروط وجوبه:
৪- হাজ্জ ফরয হওয়ার শর্ত সমূহ ঃ
(ক) হাজ্জ ফরয হয় পাঁচটি শর্তে এতে বিদ্যানগণের মতনৈক্য নেই। আর তা হলো ঃ
ইসলাম বা মুসলিম হওয়া, জ্ঞানবান হওয়া, প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়া, স্বাধীন হওয়া, ও সামর্থ্য থাকা। তবে মহিলার উপর হাজ্জ ফরয হওয়ার জন্য হাজ্জের সফরে তার সাথে মাহ্রাম থাকা আবশ্যক।
কারণ নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন ঃ
((لا يحل لامرأة تؤمن بالله واليوم الآخر تسافر مسيرة يوم إلا ومعها ذو محرم))[متفق عليه].
অর্থ ঃ আল্লাহ ও শেষ দিবসের প্রতি ঈমান রাখে এমন মহিলার জন্য বিনা মাহ্রামে (বিবাহ বন্ধন নিষিদ্ধ এমন পুরুষ।) একদিনের দূরত্বের পথও সফর করা বৈধ নয়। আবু হুরায়রা (রাযিআল্লাহু আনহু) এই হাদীসটি নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) হতে বর্ণনা করেছেন। [বুখারী ও মুসলিম ]
ফিকাহ শাস্ত্রবিদগণ এই শর্ত গুলোকে তিন ভাগে বিভক্ত করেছেন ঃ
প্রথমত ঃ হাজ্জ সহীহ ও ওয়াজিব হওয়ার জন্য শর্ত, তা হলো ঃ ইসলাম ও জ্ঞান, তাই কাফির ও পাগলের উপর হাজ্জ ফরয নয়। তাহাদের প হতে হাজ্জ শুদ্ধও হবে না। কারণ তাহারা ইবাদাত কারীদের অন্তর্ভুক্ত নয়।
দ্বিতীয়ত ঃ যা ওয়াজিব ও যথেষ্ট হওয়ার জন্য শর্ত, তা হলো ঃ প্রাপ্ত বয়স্ক ও স্বাধীন হওয়া, ইহাদের (হাজ্জ) সহীহ হওয়ার শর্ত নয়। তাই যদি বাচ্চা ও দাস হাজ্জ করে, তাহাদের হাজ্জ সহীহ হবে। তবে তাহাদের এই হাজ্জ ইসলামের ফরয হাজ্জ হিসাবে যথেষ্ট হবে না।
তৃতীয়ত ঃ যা শুধু ফরয হওয়ার জন্য শর্ত। আর তা হলো সামর্থ্যতা। তবে সামর্থ্যহীন ব্যক্তি যদি কষ্ট করে হাজ্জ করে এবং যদি পাথেয় ও যানবাহন ছাড়াই হাজ্জে চলে যায় তবে তার হাজ্জ সহীহ হবে।
(খ) হাজ্জ আদায়ে প্রতিনিধি নিযুক্ত করার বিধান ঃ
যে ব্যক্তি হাজ্জ আদায়ের সামর্থ্যবান হওয়ার পূর্বে মারা যাবে, তার উপর ফরয হবে না। এতে বিদ্যানগণের মাঝে কোন মতনৈক্য নেই। তবে যে ব্যক্তি হাজ্জ আদায়ের সামর্থ্যবান হওয়ার পর মারা যাবে, তার উপর হতে মৃত্যুর কারণে ফরয সাকেত হবে কি হবে না এ ব্যাপারে মতনৈক্য রয়েছে। তবে সঠিক মত হলো মৃত্যু ব্যক্তির প হতে হাজ্জের ফারযিয়াত সাকেত হবে না।
মৃত্যু ব্যক্তির ওয়ারিসদের উপর তার প হতে তার মাল হতে হাজ্জ করা অপরিহার্য হবে, সে তার প থেকে হাজ্জ আদায়ের ওসিয়াত করে যান আর নাই যান। তা তার উপর সব দিক দিয়ে ঋণের ন্যায় ওয়াজিব হিসাবে সাব্যস্ত হয়েছে।
কারণ ইবনে আব্বাস (রাযিআল্লাহু আনহুমা) হাদীস বর্ণনা করেছেন। জনৈক মহিলা হাজ্জ করার নজর মেনে মারা যায়।
অতঃপর তার ভাই নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর নিকট এসে তাঁকে এই ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলেন, তখন নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বল্লেন ঃ
((أرأيت لو كان على أختك دين أكنت قاضيه؟ قال: نعم، قال: فاقضوا الله فهو أحق بالوفاء)) [رواه النسائي].
অর্থ ঃ তোমার কি মত ? যদি তোমার বোনের উপর ঋণ থাকতো তাহলে তুমি কি তা আদায় করতেনা ? সে বল্ল হ্যাঁ। তারপর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বল্লেন আল্লাহর ঋণ আদায় কর, কারণ আল্লাহর ঋণ আদায় করা অধিক যুক্তি যুক্ত। [নাসায়ী ]
(গ) যে ব্যক্তি নিজে হাজ্জ করে নাই সে অন্যের প হতে বদল হাজ্জ করতে পারবে কি ?
যে ব্যক্তি প্রথমে নিজের হাজ্জ করে নাই সে অন্যের প হতে বদল হাজ্জ করতে পারবেনা। ইহা বিদ্যানগণের সঠিক মত।
কারণ এ ব্যাপারে একটি প্রসিদ্ধ হাদীস রয়েছে, আর তা হলো ঃ
((أن النبي  سمع رجلاً يقول: لبيك عن شبرمة، قال: من شبرمة؟ قال: أخ لي أو قريب لي، فقال عليه الصلاة والسلام: حجت عن نفسك؟ قال لا. قال: حج عن نفسك ثم حج عن شبرمة))[رواه أحمد وأبو داود وابن ماجه والبيهقي وصححه].
অর্থ ঃ নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এক ব্যক্তিকে লাব্বাইক আন শুব্রামাহ বলতে শুনলেন। অতঃপর (তাকে) বল্লেন শুব্রামাহ কে ? সে বল্ল আমার ভাই বা আমার নিকট আতœীয়। তারপর নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বল্লেন তুমি তোমার হাজ্জ করেছ ? সে বল্ল না। তারপর নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বল্লেন আগে তুমি নিজের হাজ্জ কর, তারপর শুব্রামার হাজ্জ কর। [এই হাদীসটি ইমাম আহমাদ আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ ও বাইহাকী বর্ণনা করেছেন, ইমাম বাইহাকী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন]
সামর্থ্যহীন অপারগ ব্যক্তির প হতে বদল হাজ্জ সঠিক মতে সহীহ হবে।
কারণ এ ব্যাপারে ফজল বিন আব্বাস (রাযিআল্লাহু আনহুমার) একটি হাদীস রয়েছে ঃ
((وفيه أن امرأة من خثعم قالت: يارسول الله إن فريضة الله على عباده في الحج أدركت أبي شيخاً كبيراً لا يثبت على الراحلة أفأحج عنه؟ قال: نعم وذلك في حجة الوداع))[متفق عليه اللفظ للبخاري].
অর্থ ঃ আর তাতে আছে খাছআমা কাবিলার জনৈক মহিলা বল্ল হে আল্লাহর রাসূল ! আমার পিতা অতি বৃদ্ধ সে যানবাহনে স্থীর থাকতে পারেনা। তার উপর আল্লাহর ফারিযাহ-হাজ্জ ফরয হয়েছে। আমি কি তাঁর প হতে বদল হাজ্জ করতে পারবো ? রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বল্লেন হ্যাঁ। তার প হতে বদল হাজ্জ কর। এই ঘটনা বিদায় হাজ্জে ঘটে ছিল। [বুখারী ও মুসলিম, তবে শব্দ গুলো বুখারীর ]
(ঘ) হাজ্জ অবিলম্বে ফরয না বিলম্বে ফরয ?
হাজ্জ ওয়াজিব হওয়ার শর্ত পুরা হওয়ার সাথে সাথেই হাজ্জ ফরয হবে, ইহা বিদ্যানগণের গ্রহণ যোগ্য মত।
কারণ এ ব্যাপারে আল্লাহর বাণী আম বা ব্যাপক রয়েছে যেমন ঃ
ولله على النّاس حج البيت من استطاع إليه سبيلا
[سورة آل عمران،الآية: ৯৭].
অর্থ ঃ মানুষের মধ্যে যার সেখানে যাওয়ার সামর্থ্য আছে, আল্লাহর উদ্দেশ্যে ঐ গৃহের হাজ্জ করা তার অবশ্য কর্তব্য। [সূরা আলি-ইমরান-আয়াত-৯৭]
আরো আল্লাহর বাণী হলো ঃ
وأتموا الحج والعمرة لله[سورة البقرة، الآية: ১৯৬].
অর্থ ঃ তোমরা আল্লাহর উদ্দেশ্যে হাজ্জ ও উম্রাহ পূর্ণ কর।
[সূরা আল-বাক্বারাহ-আয়াত-১৯৬]
ইবনে আব্বাস (রাযিআল্লাহু আনহুমা) হতে হাদীস বর্ণিত হয়েছে, নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন ঃ
((تعجلوا إلى الحج، يعني الفريضة، فإن أحدكم لا يدري ما يعرض له)) [رواه أبو داود وأحمد والحاكم وصححه].
অর্থ ঃ তোমরা ফরয হাজ্জের জন্য তাড়াতাড়ী কর, কেননা তোমাদের কেহই একথা জানেনা যে, তাহার ভাগ্যে কি রহিয়াছে। [হাদীসটি আবু দাউদ, আহমাদ ও হাকেম বর্ণনা করেছেন, হাকেম হাদীসটি সহীহ বলেছেন ]
৫- أركان الحج:
৫- হাজ্জের র্আকান বা রুক্ন সমূহ ঃ
হাজ্জের র্আকান চারটি ঃ
(ক) ইহ্রাম বাঁধা।
(খ) আরাফায় অবস্থান করা।
(গ) তাওয়াফুয যিয়ারা।
(ঘ) সাফা ও মারওয়ার মাঝে সা‘ঈ করা।
আর এই চারটি র্আকানের কোন একটি রুক্ন ছুটে গেলে হাজ্জ পূর্ণ হবে না।
প্রথম রুক্ন ঃ ইহ্রাম বাঁধা।
ইহ্রামের সংজ্ঞা ঃ ইহ্রাম হলো, ইবাদাতে প্রবেশের নিয়াত করা।
হাজ্জের মীকাত ঃ হাজ্জের ইহ্রাম বাঁধার মীকাত দু’ প্রকার ঃ
(১) সময়ের মীকাত।
(২) স্থানের মীকাত।
- সময়ের মীকাত ঃ আর তা হলো ঃ
হাজ্জের মাস সমূহ যে ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলা বলেন ঃ
الحج أشهر معلومات [سورة البقرة،الآية: ১৯৭].
অর্থ ঃ হাজ্জ হয় সুবিদিত মাসে। [সূরা আল-বাক্বারাহ-আয়াত-১৯৭]
আর তা হলো ঃ শাওয়াল, যুলকা‘দা, ও যুলহাজ্জাহ।
- স্থানের মীকাত ঃ আর তা হলো ঃ ঐ সীমা সমূহ যা হাজী সাহেবদের জন্য বিনা ইহ্রামে অতিক্রম করে মক্কার দিকে যাওয়া ঠিক নয়। আর তা হলো পাঁচটি ঃ
প্রথম ঃ (যুলহুলাইফা) বর্তমানে এর নাম “আবারে আলী” ইহা মদিনা বাসীদের মীকাত, ইহা মক্কা হতে (৩৩৬) কিঃ মিঃ অর্থাৎ ২২৪ মাইল দূরে অবস্থিত।
দ্বিতীয় ঃ (আল-জুহ্ফা) ইহা একটি গ্রাম, সে গ্রাম ও লোহিত সাগরের মাঝে দূরত্ব হলো (১০) কিঃ মিঃ, ইহা মক্কা হতে (১৮০) কিঃ মিঃ অর্থাৎ (১২০) মাইল দূরে অবস্থিত। আর ইহা মিসর, সিরীয়া, মরক্ক ও এদের পিছনে বসবাস কারী স্পেন, রূম ও তিক্রূর বাসীদের মীকাত। বর্তমানে মানুষ (রাবেগ) হতে ইহ্রাম বাঁধে। কারণ ইহা তার কিছুটা বরাবর।
তৃতীয় ঃ (ইয়ালামলাম) বর্তমানে ইহা (আস্সা‘দীয়া) নামে পরিচিত। আর ইহা তুহামাহ (সারিবদ্ধ) পর্বত সমূহের একটি পর্বত। ইহা মক্কা হতে (৭২) কিঃ মিঃ অর্থাৎ (৪৮) মাইল দূরে অবস্থিত। ইহা ইয়েমেন আহলে জাওয়াহ, ভারতীয় উপমহাদেশের ও চীন বাসীদের মীকাত।
চতুর্থ ঃ (ক্বারনু মানােেযল) বর্তমানে এর নাম “আস্সাইলুল কাবীর” ইহা মক্কা হতে (৭২) কিঃ মিঃ অর্থাৎ (৪৮) মাইল দূরে অবস্থিত। আর ইহা নাজদ ও ত্বায়েফ বাসীদের মীকাত।
পঞ্চম ঃ (যাতে র্ইক্ব) ইহা বর্তমানে (আয্যারীবাহ) নামে পরিচিত, এর নাম যাতে র্ইক্ব রাখা হয়েছে। কারণ তথায় র্ইক্ব আছে। আর র্ইক্ব হলো ছোট পর্বত। ইহা মক্কা হতে (৭২) কিঃ মিঃ অর্থাৎ (৪৮) মাইল দূরে অবস্থিত। ইহা প্রাচ্য বাসীদের, ইরাক্ব ও ইরান বাসীদের মীকাত।
ইহা স্থানের মীকাত Ñ ঐ নির্ধারিত সীমা সমূহ যা বিনা ইহ্রামে অতিক্রম করে মক্কার দিকে যাওয়া কোন হাজ্জ ও উম্রাহ কারীর জন্য ঠিক নয়।
এই মীকাত গুলো আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বর্ণনা করে গেছেন।
যেমন- ইবনে আব্বাস (রাযিআল্লাহু আনহুমার) হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন ঃ
((وقت رسول الله--لأهل المدينة ذا الحليفة، ولأهل الشام الجحفة، ولأهل نجد قرن المنازل، ولأهل اليمن يلملم، هن لهن ولمن أتى عليهن من غير أهلهن من أراد الحج أو العمرة، ومن كان دون ذلك فمن حيث أنشأ، حتى أهل مكة من مكة))[متفق عليه].
অর্থ ঃ রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মদীনা বাসীদের জন্য যুলহুলাইফা। আর সিরীয়া বাসীদের জন্য আল-জুহ্ফাহ। আর নাজদ বাসীদের জন্য র্ক্বানুল মানাযেল। ইয়েমেন বাসীদের জন্য ইয়ালামলাম নির্ধারণ করেছেন। ঐ মীকাত গুলো ঐ এলাকা বাসীদের জন্য। আর যারা হাজ্জ ও উম্রাহ করার উদ্দেশ্যে ঐ স্থানে পৌঁছবে, তাদের জন্যও মীকাত নির্ধারিত হল। আর যারা মীকাতের ভিতরে অবস্থান করে তাদের ইহ্রাম বাঁধার স্থান হবে তাদের নিজস্ব অবস্থান স্থল, এমনকি মক্কার লোক মক্কাতেই ইহ্রাম বাঁধবে। [বুখারী মুসলিম ]
ولمسلم من حديث جابر --: ((مهل أهل العراق ذات عرق))
অর্থ ঃ মুসলিম শরীফে জাবির (রাযিআল্লাহু আনহুমা) এর হাদীসে আছে। ইরাক্ব বাসীদের ইহ্রাম বাঁধার স্থান হলো যাতে র্ইক্ব।
যে ব্যক্তি ঐ মীকাত সমূহের কোন একটি মীকাত দিয়ে অতিক্রম করবে না, সে ঐ সময় ইহ্রাম বাঁধবে যখন সে জানতে পারবে যে, সে ঐ মীকাত সমূহের একটি মীকাতের বরাবর হয়েছে। অনুরূপভাবে যে ব্যক্তি আকাশ পথে বিমানে আরোহণ করবে সে ঐ মীকাত সমূহের যে কোন একটি মীকাতের নিকটবর্তী হলে সে ইহ্রাম বাঁধবে। বিমানে আরোহী ব্যক্তির জন্য জিদ্দা এয়ার পোর্টে নেমে ইহ্রাম বাঁধা ঠিক হবে না, যেমনটি কিছু হাজী সাহেবগণ করে থাকেন।
কারণ জিদ্দা শুধু জিদ্দা বাসীদের মীকাত বা জিদ্দা তাদের জন্য মীকাত যারা তথা হতে হাজ্জ ও উম্রার নিয়াত করবে।
তাই জিদ্দা বাসী ছাড়া যে কেও তথা হতে ইহ্রাম বাঁধলো সে (হাজ্জের) একটি ওয়াজিব পরিত্যাগ করলো। আর তা হলো মীকাত হতে ইহ্রাম বাঁধা। এর কারণে তার উপর একটি ফিদ্য়া অপরিহার্য হবে। অনুরূপভাবে যে ব্যক্তি বিনা ইহ্রামে মীকাত অতিক্রম করবে তার কর্তব্য হবে তথায় ফিরে যেয়ে ইহ্রাম বেঁধে আসা। আর সে যদি তথায় ফিরে না যায় বরং যে স্থানে পৌঁছেছে সে স্থান হতেই ইহ্রাম বেঁধে নেয় তবে তার উপরও একটি ফিদ্য়াহ অপরিহার্য হবে। আর তা হল একটি বক্রি জবেহ করা, বা উট ও গরুর এক সপ্তাংশে অংশীদার হওয়া, আর তা হারামের মিসকীনদের মাঝে বিতরণ করা, এবং তা হতে কিছু ভণ না করা।
হাজ্জ আদায়ের পদ্ধতি ঃ ইহ্রাম বাঁধার পূর্বে গোসল করে পরিস্কার পরিছন্ন হয়ে, চুলের যা কর্তন করা বৈধ তা কর্তন করে শরীরে সুগন্ধি লাগিয়ে ইহরামের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া মুস্তাহাব। পুরুষ লোক সিলাই যুক্ত কাপড় খুলে ফেলবে। পরিস্কার পরিছন্ন সাদা দু’টি-লুঙ্গী ও চাদর পরিধান করবে। সঠিকমতে ইহ্রামের জন্য কোন বিশেষ সালাত (নামায) নেই, তবে ইহ্রাম বাঁধাটা যদি কোন ফরয নামাযের সময় হয়, তবে ফরয নামাযের পর ইহ্রাম বাঁধবে, কারণ নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ফরয নামাযের পর ইহ্রাম বেঁধে ছিলেন।
অতঃপর তিন প্রকার হাজ্জ- তামাত্তু‘, ক্বিরান, ইফ্রাদ যেটার ইচ্ছা করবে সেটার ইহ্রাম বাঁধবে।
Ñ তামাত্তু‘ হাজ্জের সংজ্ঞা ঃ হাজ্জের মাসে উম্রার ইহ্রাম বেঁধে তা পুরা করে ঐ বছরেই হাজ্জের ইহ্রাম বাঁধা হলো তামাত্তু‘ হাজ্জ।
Ñ ক্বিরান হাজ্জের সংজ্ঞা ঃ হাজ্জ ও উম্রার এক সাথে ইহ্রাম বাঁধা, অথবা প্রথমে উম্রার ইহ্রাম বাঁধা, পরে উম্রার তাওয়াফ শুরু করার আগেই হাজ্জকে উম্রার সাথে জড়িত করে নেওয়াই ক্বিরান হাজ্জ। অতঃপর মীকাত হতে হাজ্জ ও উম্রার উভয়ের নিয়াত করবে বা উম্রার তাওয়াফ শুরু করার আগেই হাজ্জ ও উম্রা উভয়ের নিয়াত করবে। তারপর হাজ্জ ও উম্রা উভয়ের তাওয়াফ ও সা’ঈ করবে।
Ñ ইফ্রাদ হাজ্জের সংজ্ঞা ঃ মীকাত হতে শুধু হাজ্জের ইহ্রাম বাঁধা ও হাজ্জের সকল কর্ম সম্পাদন করা পর্যন্ত ইহ্রাম অবস্থায় থাকা হলো ইফ্রাদ হাজ্জ।
মাসজিদে হারামের অধিবাসী নয় এমন-তামাত্তু‘ ও ক্বিরান কারীর উপর হাদী অপরিহার্য। তিন প্রকার হাজ্জের কোনটি উত্তম এ ব্যাপারে মতভেদ রয়েছে।
বিদ্যানগণের মধ্যে কিছু কিছু বড় মুহাক্কেকীনদের নিকট তামাত্তু‘ হাজ্জ উত্তম।
তারপর যখন এই তিন প্রকার হাজ্জের যে কোন একটি হাজ্জের ইহ্রাম বাঁধবে, তখন ইহ্রামের পর লাব্বাইক বলবে ঃ
((لبيك اللهم لبيك، لبيك لا شريك لك لبيك، إن الحمد والنعمة لك والملك لا شريك لك))
উচ্চারণ ঃ লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা-শারীকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা ওয়ান নি‘মাতা লাকা ওয়াল মুল্ক লা-শারীকা লাকা।
তালবীয়াহ বেশী বেশী পাঠ করবে। পুরুষ লোক উচ্চ-শব্দে পাঠ করবে।





محظوراته: وهي ما يحرم على المحرم فعله بسبب الإحرام، وهي تسعة:
ইহ্রামের নিষিদ্ধ কর্ম সমূহ ঃ আর তা হলো ইহ্রাম বাঁধার কারণে মুহ্রিম ব্যক্তির উপর যা সম্পাদন করা হারাম, তা সর্ব মোট নয়টি ঃ
এক ঃ চুল মুন্ডানো বা অন্য কিছুর মাধ্যমে সমস্ত শরীর হতে চুল উঠানো।
কারণ আল্লাহ তা‘আলার বাণী হলো ঃ
ولا تحلقوا رؤوسكم حتى يبلغ الهدي محله [سورة البقرة، الآية: ১৯৬].
অর্থ ঃ যে পর্যন্ত কুরবানীর পশু উহার স্থানে না পৌঁছে তোমরা মাথা মুন্ডন করিও না। [সূরা আল-বাক্বারাহ-আয়াত-১৯৬]
দুই ঃ বিনা অজরে নখ কাটা, তবে অজর থাকলে নখ কাটা জায়েয হবে, যেমন অজরের কারণে হাল্ক বা মাথা মুন্ডানো জায়েয। কারণ এর দ্বারা চাকচিক্য অর্জিত হয় তাই ইহা চুল উঠানোর সাদৃশ্যে পরিনত হয়।
তিন ঃ মাথা ঢাকা, কারণ নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মুহ্রিমকে পাগড়ী পরতে নিষেধ করেছেন যে মুহ্রিমকে তার উট পা দিয়ে পিসে দিয়েছিল, তার ব্যাপারে তাঁর (রাসূলের) বাণী ঃ
((ولا تخمر رأسه فإنه يبعث يوم القيامة ملبياً)) [رواه البخاري ومسلم من حديث ابن عباس رضي الله عنهما].
অর্থ ঃ তার মাথা ঢাকিওনা, কারণ কিয়ামাত দিবসে তাকে তালবীয়াহ পাঠ করা অবস্থায় উঠানো হবে। [এই হাদীসটি বুখারী ও মুসলিম ইবনে আব্বাস (রাযিআল্লাহু আনহুমার) বরাতে বর্ণনা করেছেন]
আর ইবনে উমার বলতেন ঃ
((إحرام الرجل في رأسه وإحرام المرأة في وجهها))
[رواه البيهقي بإسناد جيد].
অর্থ ঃ পুরুষের ইহ্রাম হলো তার মাথায়, আর মহিলাদের ইহ্রাম হলো তার চেহারায় বা মুখে। [ইমাম বাইহাকী এই হাদীসটি উত্তম সনদে বর্ণনা করেছেন ]
চার ঃ পুরুষের সিলাই যুক্ত কাপড় পরিধান করা ও মুজা পরিধান করা। কারণ আব্দুল্লাহ বিন উমার (রাযিআল্লাহু আনহুমা) বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন ঃ
((سئل رسول الله  ما يلبس المحرم؟ قال: لا يلبس المحرم القميص ولا العمامة ولا البرانس ولا السراويل ولا ثوباً مسّه ورس ولا زعفران، ولا الخفين إلا أن لا يجد نعلين فليقطعهما حتى يكونا أسفل من الكعبين))[رواه البخاري ومسلم].
অর্থ ঃ রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, মুহ্রিম ব্যক্তি কি পোষাক পরিধান করবে ? তিনি বল্লেন ঃ মুহ্রিম ব্যক্তি কুর্তা, পাগড়ী, বুরনুস (এমন পোষাক যা সম্পূর্ণ মাথা আবৃত করে রাখে), পায়জামা পরিধান করবে না, ওয়ারস ও যাফরান যুক্ত কাপড়ও পরিধান করবে না, মুজাও পরিধান করবে না। তবে যদি সে জুতা না পায় তাহলে মুজা পায়ের গিরার উপরিভাগ কর্তন করে পরিধান করবে, যাতে মুজা পায়ের গিরার নিচে থাকে। [বুখারী মুসলিম ]

পাঁচ ঃ সুগন্ধি ব্যবহার করা।
((لأن النبي  أمر رجلا في حديث صفوان بن أمية بغسل الطيب)) [رواه البخاري ومسلم].
অর্থ ঃ কারণ নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সাফওয়ান ইবনে ই‘লা ইবনে উমাইয়াহ এর হাদীসে এক ব্যক্তিকে সুগন্ধি ধুয়ে ফেলার আদেশ দিয়েছিলেন। [এই হাদীস বুখারী ও মুসলিম বর্ণনা করেছেন]
নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ঐ মুহ্রিম ব্যক্তির ব্যাপারে বলে ছিলেন যাকে তার উট পা দিয়ে পিসে দিয়েছিলেন।
((لا تحنطوه)) [رواه البخاري ومسلم من حديث ابن عباس].
অর্থ ঃ তাকে সুগন্ধি লাগাইওনা। [হাদীসটি ইবনে আব্বাস (রাযিআল্লাহু আনহুমার) বরাতে বুখারী ও মুসলিম বর্ণনা করেছেন ]
ولمسلم: ((ولا تمسوه بطيب))
অর্থ ঃ মুসলিম শরীফে আছে তাকে সুগন্ধি দ্বারা স্পর্শ করিও না।
মুহ্রিমের জন্য তার ইহ্রাম বাঁধার পর শরীরে বা শরীরের কোন অংশে সুগন্ধি লাগানো হারাম।
পূর্ব বর্ণিত ইবনে উমারের হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে।
ছয় ঃ স্থলচর প্রাণী হত্যা করা।
কারণ আল্লাহ তা‘আলার বাণী রয়েছে ঃ
يا أيّها الذين آمنوا لا تقتلوا الصّيد وأنتم حرم[سورة المائدة، الآية: ৯৫].
অর্থ ঃ হে মু‘মিনগণ ! ইহ্রামে থাকা কালে তোমরা শিকার-জন্তু বধ করিও না। [সূরা আল-মায়িদাহ-আয়াত-৯৫]
আর তা শিকার করাও হারাম, যদিও তা হত্যা বা জখম না হয়।

কারণ আল্লাহ তা‘আলার বাণী রয়েছে ঃ
وحرم عليكم صيد البر ما دمتم حرماً[سورة المائدة، الآية: ৯৬].
অর্থ ঃ এবং তোমরা যতন ইহ্রামে থাকবে ততন স্থলের (কোন প্রাণী) শিকার তোমাদের জন্য হারাম। [সূরা আল-মায়িদাহ-আয়াত-৯৬]
সাত ঃ বিবাহ করা। মুহ্রিম নিজে বিবাহ করবে না ও নিজের অভিভাবকতায় ও প্রতিনিধিত্বে অপরকে বিবাহ করাবে না, কারণ উসমান (রাযিআল্লাহু আনহু) এর মারফু হাদীসে আছে।
((لا ينكح المحرم ولا ينكح ولا يخطب))[رواه مسلم].
অর্থ ঃ মুহ্রিম নিজে বিবাহ করবে না অপরকে বিবাহ করাবে না ও বিবাহের প্রস্তাব ও দিবে না। [এই হাদীসটি মুসলিম বর্ণনা করেছেন ]
আট ঃ লজ্জাস্থানে সহবাস করা, কারণ আল্লাহর বাণী রয়েছে ঃ
فمن فرض فيهنّ الحج فلا رفث[سورة البقرة، الآية: ১৯৭].
অর্থ ঃ অতঃপর যে কেহ এই মাস গুলিতে হাজ্জ করা স্থির করে সে যেন কোন গর্হিতকাজ না করে। [সূরা আল-বাক্বারাহ-আয়াত-১৯৭]
ইবনে আব্বাস (রাযিআল্লাহু আনহুমা) বলেন ঃ তা (রাফাস) হলো সহবাস করা।
এর দলীল হলো আল্লাহ তা‘আলার বাণী ঃ
أحل لكم ليلة الصيام الرفث إلى نسائكم
[سورة البقرة، الآية: ১৮৭].
অর্থ ঃ সিয়ামের রাত্রে তোমাদের জন্য স্ত্রী-সহবাস বৈধ করা হইয়াছে। [সূরা আল-বাক্বারাহ-আয়াত-১৮৭]
উদ্দেশ্য হলো সহবাস করা।
নয় ঃ যৌন আকর্ষণের সাথে নারীদের শরীরে শরীর লাগানো বা চুমু দেওয়া বা স্পর্শ করা। অনুরূপভাবে যৌন আকর্ষণের সাথে তাকানো।
কারণ ইহা হারাম সহবাসের দিকে পৌঁছে দেয়, সুতরাং ইহা হারাম।
এই নিষিদ্ধ কাজে মহিলারা পুরুষদের ন্যায়। তবে মহিলারা বিশেষ কিছু কর্মে পুরুষদের হতে স্বতন্ত্র। মহিলার ইহ্রাম হল তার মুখে। তাই মহিলাদের জন্য বুরকা, নিকাব, বা অনুরূপ কিছুর দ্বারা তাদের মুখ ঢাকা হারাম। তাদের জন্য হাত মুজা পরিধান করাও হারাম।
কারণ ইবনে উমার (রাযিআল্লাহু আনহুমার) মারফু‘ হাদীসে আছে ঃ
((ولا تنتقب المرأة المحرم ولا تلبس القفازين))[رواه البخاري].
অর্থ ঃ মুহ্রিম মেয়েরা নিকাব পরিধান করবে না, হাত মুজাও পরিধান করবে না। [হাদীসটি বুখারী বর্ণনা করেছেন ]
ইবনে উমার (রাযিআল্লাহু আনহুমা) বলেন ঃ
((إحرام المرأة في وجهها))[رواه البيهقي بإسناد جيد].
অর্থ ঃ মহিলার ইহ্রাম হলো তার মুখে। [হাদীসটি বাইহাকী উত্তম সনদে বর্ণনা করেছেন ]
আয়েশা (রাযিআল্লাহু আনহা) হতে আরো বর্ণিত আছে, তিনি বলেন ঃ
((كان الركبان يمرون بنا ونحن مع رسول الله  محرمات، فإذا حاذوا بنا سدلت إحدانا جلبابها من رأسها على وجهها، فإذا جاوزنا كشفناه))[رواه أبو داود وابن ماجه وأحمد وسنده حسن].
অর্থ ঃ যখন আমরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর সহিত বিদায় হাজ্জে হাজ্জ যাত্রী ছিলাম তখন আমাদের পাশ দিয়ে কাফেলা অতিক্রম করতো। যখন কাফেলার লোকজন আমাদের নিকট দিয়ে অতিক্রম করতো তখন আমরা মাথা হতে চাদর চেহারার উপর ঝুলাইয়া দিতাম। আর যখন তাহারা আমাদেরকে অতিক্রম করে চলে যেত তখন আমরা মুখের উপর হতে কাপড় তুলে দিতাম। [এই হাদীসটি আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ ও আহমাদ বর্ণনা করেছেন, হাদীসটির সনদ হাসান]
পুরুষের জন্য যেমন চুল উঠানো, নখ কাটা, জানোয়ার হত্যা করা ইত্যাদি হারাম ইহা মহিলাদের জন্যও হারাম, কারণ সে আম খিতাবে শামিল রয়েছে। তবে তারা সেলাই যুক্ত কাপড়, পায়ে মুজা পরিধান করতে পারবে ও তারা মাথা ঢাকতে পারবে।
দ্বিতীয় রুক্ন ঃ আরাফায় অবস্থান।
কারণ নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন ঃ
((الحج عرفة))[رواه أحمد وأصحاب السنن].
অর্থ ঃ আরাফার অবস্থানই হাজ্জ। [হাদীসটি আহমাদ ও আসহাবুস সুনান বর্ণনা করেছেন ]
তৃতীয় রুক্ন ঃ তাওয়াফুল ইফাযা।
কারণ আল্লাহ তা‘আলা বলেন ঃ
وليطوفوا بالبيت العتيق[سورة الحج، الآية: ২৯].
অর্থ ঃ এবং তাওয়াফ করে প্রাচীন গৃহের। [সূরা আল-হাজ্জ-আয়াত-২৯]
চতুর্থ রুক্ন ঃ সা’ঈ করা।
কারণ নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন ঃ
((اسعوا فإن الله كتب عليكم السعي))[رواه الإمام أحمد والبيهقي].
অর্থ ঃ তোমরা সা’ঈ কর, কারণ আল্লাহ তোমাদের উপর সা’ঈ লিখে দিয়েছেন। [হাদীসটি ইমাম আহমাদ ও বাইহাকী বর্ণনা করেছেন ]
৬- واجباته:
৬- হাজ্জের ওয়াজিব সমূহ ঃ
হাজ্জের সর্ব মোট ওয়াজিব সাতটি ঃ
(১) মীকাত হতে ইহ্রাম বাঁধা।
(২) সূর্যাস্ত পর্যন্ত আরাফায় অবস্থান করা, ইহা তাদের জন্য যারা দিনের বেলায় আরাফায় অবস্থান করবে।
(৩) মুয্দালিফায় রাত্রি যাপন।
(৪) আইয়্যামে তাশ্রীকের (১১, ১২ ও ১৩ই- যুলহাজ্জাহর) রাত্রি গুলোতে মিনায় রাত্রি যাপন করা।
(৫) জামারাত গুলোতে কঙ্কর মারা।
(৬) মাথার চুল মুন্ডানো বা ছোট করা।
(৭) তাওয়াফুল বি‘দা করা।
৭- صفته:
৭- হাজ্জের বর্ণনা ঃ
হাজ্জ আদায়ের ইচ্ছা পোষণ কারী ব্যক্তির জন্য ফরয গোসলের ন্যায় গোসল করা সুন্নাত। নিজ শরীরে যেমন তার মাথায় ও দাঁড়িতে সুগন্ধি ব্যবহার করা সুন্নাত। সাদা লুঙ্গী ও চাদর পরিধান করা সুন্নাত। মহিলা সৌন্দর্য প্রকাশ করে এমন পোষাক ছাড়া যে কোন পোষাক পরিধান করতে পারবে।
তারপর মীকাতে পোঁছে (ইহ্রাম বাঁধার সময়) ফরয নামাযের সময় হলে তা আদায় করবে ও তার পর ইহ্রাম বাঁধবে। ইহ্রাম বাঁধার সময় ফরয নামাযের সময় না হলে দু’ রাকা‘আত নামায আদায় করবে, অযুর সুন্নাতের নিয়াতে ইহ্রামের সুন্নাতের নিয়াতে নয়। ইহ্রামের জন্য সুন্নাত নামায রয়েছে একথা নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) হতে প্রমাণ হয় নাই। আর যখন নামায শেষ হয়ে যাবে তখন ইবাদাতে (হাজ্জে) প্রবেশের নিয়াত করবে। আর তামাত্তু‘ হাজ্জকারী হলে বলবে ঃ
(لبيك اللهم عمرة) (লাব্বাইক আল্লাহুম্মা উমরাতান)। আর হাজ্জে ইফরাদকারী বলবে ঃ (لبيك اللهم حجاً) (লাব্বাইক আল্লাহুম্মা হাজ্জান)। আর হাজ্জে ক্বিরান কারী বলবে ঃ
(لبيك اللهم حجاً في عمرة) (লাব্বাইক আল্লাহুম্মা হাজ্জান ফি উমরাতিন)। পুরুষ ব্যক্তি জোরে বলবে মহিলারা চুপে চুপে বলবে, আর বেশী বেশী তালবীয়াহ পাঠ করবে। যখন মক্কায় পৌঁছবে তখন তাওয়াফ শুরু করবে, হাজারে আসওয়াদ হতে তাওয়াফ শুরু করবে। আল্লাহর ঘরকে তার বাম দিকে রাখবে। হাজারে আসওয়াদকে ল্য করবে। তাকে চুমু দিবে বা তাকে স্পর্শ করবে বিনা ভিড়ে যদি সম্ভব হয় তবে তাকে ডান হাত দিয়ে স্পর্শ করবে। অন্যথায় তার দিকে ইশারা করবে ও তাকবীর দিবে।
আল্লাহু আকবার বলবে আর বলবে ঃ
((اللهم ايماناً بك وتصديقاً بكتابك ووفاء بعهدك واتباعاً لسنة نبيك ،))
উচ্চারণ ঃ ((আল্লাহুম্মা ঈমানান বিকা, ওয়া তাসদীকান বিকিতাবিকা ওয়া ওয়াফাআন বিআহদিকা ইত্তেবাআন লিসুন্নাতে নাবীইয়েকা))
আর সাত চক্কর তাওয়াফ করবে। আর যখন রুক্নে ইয়ামানীর পাশ দিয়ে অতিক্রম করবে তখন তাকে চুমু ছাড়াই হাত দিয়ে স্পর্শ করবে।
রামল করা তাওয়াফের সুন্নাতের অন্তর্ভুক্ত। আর রামল হলো, তাওয়াফে কুদূমের প্রথম তিন শাওতে বা প্রথম তিন চক্করে ঘন ঘন পা রেখে দ্রত চলা।
কারণ ইবনে উমার এর মুত্তাফাক আলাইহি হাদীস রয়েছে।
তা হলো ঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যখন প্রথম তাওয়াফ করতেন তখন প্রথম তিন চক্করে দ্রত চলতেন আর বাকী চার চক্করে সাধারণ ভাবে চলতেন।
ইয্তিবা করা তাওয়াফের সুন্নাতের অন্তর্ভুক্ত। আর ইয্তিবা হলো ঃ ইহ্রাম অবস্থায় পরিহিত চাদরের মধ্য ভাগকে ডান কাঁধের নীচ দিয়ে চাদরের উভয় কোণ বাম কাঁধের উপর ধারণ করা।
কারণ ইবনে আব্বাস (রাাযিআল্লাহু আনহুমা) বলেন ঃ
((اضطبع رسول الله  هو وأصحابه ورملوا ثلاثة أشواط))
অর্থ ঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নিজে ও তাঁর সাহাবাগণ ইয্তিবা করেছেন, ও তিন চক্করে রামল করেছেন।
আর ইয্তিবা শুধুমাত্র সাত চক্কর তাওয়াফে সুন্নাত। এর আগে বা পরে সুন্নাত নয়।
বিনয়ের সাথে ও আন্তরিকভাবে নিজের নিকট যে সকল দু‘আ পছন্দনীয় সে সকল দু‘আ তাওয়াফ করা কালীন সময়ে পড়বে।
রুক্নে ইয়ামানী ও হাজারে আসওয়াদের মধ্যে বলবে ঃ
ربنّا آتنا في الدنيا حسنة وفي الآخرة حستة وقنا عذاب النّار [سورة البقرة، الآية: ২০১].
উচ্চারণ ঃ রাব্বানা আতিনা ফিদ্দুনিয়া হাসানাতাও ওয়াফিল আখিরাতে হাসানাতাও ওয়াক্বিনা আযাবান নার।
অর্থ ঃ হে আমাদের প্রতিপালক ! আমাদের ইহকালে কল্যাণ দাও এবং পরকালেও কল্যাণ দাও এবং আমাদেরকে অগ্নি-যন্ত্রনা হতে রা কর। [সূরা আল-বাক্বারাহ-আয়াত-২০১]
প্রতি চক্করে নির্ধারিত দু‘আর প্রচলন নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) হতে প্রমাণিত নয়। বরং তা বিদ‘আত ইসলামে নতুন কাজ।
আর তাওয়াফ তিন প্রকার ঃ তাওয়াফে ইফাযাহ, তাওয়াফে কুদূম, ও তাওয়াফে বিদা‘। প্রথমটি রুক্ন, দ্বিতীয়টি সুন্নাত এবং তৃতীয়টি বিশুদ্ধ মতে ওয়াজিব।
তাওয়াফ শেষান্তে মাক্বামে ইব্রাহীমের পিছনে দু’ রাকা‘আত নামায পড়বে। মাক্বামে ইব্রাহীম হতে দূরে পড়লেও কোন অসুবিধা নেই। প্রথম রাকা‘আতে সূরা ফাতিহার পর সূরা আল-ক্বাফিরুন (قل يا أيّها الكافرون) এবং দ্বিতীয় রাকা‘আতে সূরা ফাতিহার পর সূরা ইখ্লাস (قل هو الله أحد) পড়বে। এই দু’ রাকা‘আত নামায হালকা হওয়া সুন্নাত। হাদীসে এভাবেই এসেছে। তারপর সাফা ও মারওয়াতে সাত চক্কর সা’ঈ করবে। আর সা’ঈ সাফা হতে শুরু হবে, মারওয়াতে শেষ হবে। আর সাফাতে উঠে নিুের আয়াত পাঠ করা সুন্নাত।
إن الصفا والمروة من شعائر الله فمن حجّ البيت أو اعتمر فلا جناح عليه أن يطّوّف بهما ومن تطوّع خيراً فإنّ الله شاكر عليم[سورة البقرة، الآية:১৫৮].
উচ্চারণ ঃ ইন্নাস্ সাফা ওয়াল র্মাওয়াতা মিন শাআইরিল্লাহ ফামান্ হ্জ্জাাল বাইতা আবি‘তামারা ফালা জুনাহা আলাইহি আই-ইয়াত্তাওফা বিহিমা ওয়ামান তা-তাওয়া‘ খাইরান ফাইন্নাল্লাহা শা-কিরুন আলীম।
অর্থ ঃ সাফা ও মারওয়া, আল্লাহর নিদর্শন সমূহের অন্যতম। সুতরাং যে কেহ কা‘বা গৃহের হাজ্জ কিংবা উম্রাহ সম্পন্ন করে তার জন্যে এই দুইটির তাওয়াফ বা প্রদণি করলে তার কোন পাপ নেই, এবং কেহ স্বেচ্ছায় সৎকাজ করলে আল্লাহ গুণগ্রাহী সর্বজ্ঞ। [সূরা আল-বাক্বারাহ-আয়াত-১৫৮]
(أبدأ بما بدأ الله به)
“আল্লাহ যা দ্বারা শুরু করেছেন, আমিও তা দ্বারা শুরু করলাম”।
তারপর সাফা পর্বতে উঠবে। হস্তদ্বয় উত্তোলন করে ক্বিব্লা মুখী হয়ে দাঁড়াবে। আল্লাহর একত্বতা বর্ণনা করবে, তাঁর শ্রেষ্ঠত্ব বর্ণনা করবে, ও তাঁর প্রশংসা করবে ও বলবে ঃ
((الله أكبر، الله أكبر، الله أكبر، لا إله إلا الله وحده لا شريك له، له الملك وله الحمد يحي ويميت وهو على كل شيء قدير، لا إله إلا الله وحده أنجز وعده ونصر عبده وهزم الأحزاب وحده))
উচ্চারণ ঃ আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার। লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা-শারীকা লাহু, লাহুল মুলকু ওলাহুল হামদু ইহ্য়ী ওয়ায়ামুতু ওয়াহুয়া আলা কুল্লি শাইয়ীন কাদীর। লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু আন্জাযা ওআ‘দাহু ওয়ানাসারা আবদুহু ওয়াহাযামা আল-আহযাবা ওয়াহদাহু।
তারপর দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ সাধনের জন্য দু‘আ করবে। আর এই দু‘আ তিনবার করে পাঠ করবে। তারপর মারওয়ার দিকে যাবে, দুই সবুজ চিন্থের মাঝে পুরুষের জন্য সম্ভব হলে দ্রত চলা সুন্নাত। তবে কাউকে কষ্ট দিবে না। মারওয়াতে পৌঁছে তার উপর উঠবে, ক্বিব্লা মুখী হবে, তারপর হস্তদ্বয় উত্তোলন করে, সাফাতে যা পাঠ করে ছিল অনুরূপ মারওয়াতে তাই পাঠ করবে। সা’ঈ করা কালীন নিুের দু‘আটি পাঠ করা উত্তম।
((رب اغفر وارحم إنك أنت الأعز الأكرم))
উচ্চারণ ঃ রাব্বিগ ফির ওয়ারহাম ইন্নাকা আনতাল আয়ায্যুল আক্রাম।
কারণ ইবনে উমার ও ইবনে মাসউদ (রাযিআল্লাহু আনহুমা) সা’ঈতে এ দু‘আটি পড়তেন। অযু অবস্থায় সা’ঈ করা মুস্তাহাব, কেহ যদি বিনা অযুতে সা’ঈ করে নেয়, তবে তা তার জন্য যথেষ্ট হবে। ঋতুবর্তী মহিলা যদি সা’ঈ করে নেয়, তা তার জন্য যথেষ্ট হবে। কারণ সা’ঈতে অযু শর্ত নয়।
আর সে তামাত্তু‘ হাজ্জ কারী হলে সম্পূর্ণ মাথার চুল ছোট করবে। মহিলা তার চুল হতে এক পোর-আঙ্গুলের মাথার পরিমাণ ছোট করবে।
আর যদি সে ক্বিরান বা ইফ্রাদ হাজ্জ কারী হয় তবে সে (ইয়াওমুন নাহার)-কুরবানীর দিন যুল হাজ্জ মাসের দশ তারিখে জামারাতুল আকাবাতে কঙ্কর নিপে করে হালাল হওয়া পর্যন্ত ইহ্রাম অবস্থায় থাকবে। যুল হাজ্জ মাসের আট তারিখে “তারবীয়ার দিবসে” সূর্য উদয়ের কিছু পরে তামাত্তু‘ হাজ্জ কারী নিজ বাসস্থান হতে ইহ্রাম বাঁধবে। মাক্কা বাসীদের যে ব্যক্তি হাজ্জ করতে ইচ্ছা করবে সে অনুরূপ করবে।
ইহ্রাম বাঁধা কালীন গোসল করবে, পরিস্কার পরিছন্ন হবে ও অন্যান্য কাজ করবে। ইহ্রাম বাঁধার জন্য মাসজিদে হারাম যাওয়ার প্রয়োজন নেই। কারণ ইহা নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) হতে বর্ণিত হয় নাই। আমাদের জানা মতে তিনি তাঁর কোন সাহাবাকে এর আদেশও দেন নাই।
বুখারী ও মুসলিমে জাবির বিন আব্দুল্লাহ (রাযিআল্লাহু আনহু) এর হাদীসে আছে। নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাদেরকে (সাহাবাদেরকে) বল্লেন ঃ
((أقيموا حلالاً حتى إذا كان يوم التروية فأهلوا با لحج)) [الحديث].
অর্থ ঃ তোমরা হালাল অবস্থায় থাক। তারপর তারবীয়ার দিবসে হাজ্জের ইহ্রাম বাঁধ। [আল-হাদীস ]
ولمسلم عنه -  - قال: ((أمرنا رسول الله  لما أهللنا أن نحرم إذا توا جهنا إلى منى فأهللنا من الأبطح))
অর্থ ঃ মুসলিম শরীফে জাবির বিন আব্দুল্লাহ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন ঃ যখন আমরা মিনার দিকে রওনা হলাম তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাদেরকে ইহ্রাম বাঁধার আদেশ দিলেন, তখন আমরা আল-আবত্বাহ নামক স্থান হতে ইহ্রাম বাঁধলাম।
তামাত্তু‘ হাজ্জ কারী তার ইহ্রাম বাঁধার সময় (لبيك حجاً) লাব্বাইক হাজ্জান বলবে।
মিনার দিকে বের হয়ে যাওয়া ও তথায় যোহর, আসর, মাগরিব, ও ঈশার নামায পৃথক পৃথকভাবে স্বওয়াক্তে কসর করে পড়া মুস্তাহাব। তথায় আরাফার রাত্রি যাপন করাও তার জন্য মুস্তাহাব।
কারণ ইহা মুসলিম শরীফে জাবির এর হাদীসে আছে।
তারপর আরাফার দিবসের (যুলহাজ্জ মাসের নয় তারিখের) সূর্য উদিত হলে আরাফায় যাবে। সূর্য পশ্চিম আকাশে ঢলে যাওয়ার আগ পর্যন্ত সম্ভব হলে নামেরায় অবস্থান করা তার জন্য মুস্তাহাব। কারণ নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইহা করেছেন। আর কারো জন্য যদি নামেরায় অবস্থান সম্ভব না হয় আর সে আরাফায় অবস্থান করে তাতে কোন অসুবিধা নেই। সূর্য পশ্চিম আকাশে ঢলে যাওয়ার পর যোহর, আসরের নামায এক আযান দু’ ইকামাতে একত্রিতভাবে দু’রাকা‘আত দু’ রাকা‘আত করে পড়বে। তারপর মাওকিফ-আরাফায় অবস্থান স্থলে অবস্থান করবে। সম্ভব হলে জাবালে রাহমাতকে তার ও ক্বিবলার মাঝে রাখা উত্তম। অন্যথায় পাহাড় মুখী না হলেও ক্বিবলা মুখী হবে হস্তদ্বয় উত্তোলন অবস্থায় আল্লাহর যিকিরে, বিনয়তা প্রকাশে, দু‘আয়া ও কুরআন তিলাওয়াতে পুরোপুরি ভাবে ব্যস্ত থাকা মুস্তাহাব।
কারণ উসামাহ (রাযিআল্লাহু আনহু) এর হাদীসে আছে, তিনি বলেন ঃ
((كنت رديف النبي  بعرفات فرفع يديه يدعو فمالت به ناقته فسقط خطامها فتناول خطامها بإحدى يديه وهو رافع يده الأخرى)) [رواه النسائي].
অর্থ ঃ আমি আরাফার মাঠে নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর সাথে এক সাওয়ারীতে ছিলাম। অতঃপর নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) হস্তদ্বয় উত্তোলন করে দু‘আ করতে লাগলেন, তাঁর উটনি তাঁকে নিয়ে একটু সরে গেল ও তার লাগাম পড়ে গেল, তারপর তাঁর এক হাত দিয়ে তা উঠিয়ে নিলেন আর তাঁর অপর হাতটি উত্তোলন অবস্থায় ছিল। [হাদীসটি নাসাঈ বর্ণনা করেছেন]
আর সহীহ মুসলিম শরীফে আছে ঃ
((لم يزل واقفاً يدعو حتى غابت الشمس وذهبت الصفرة))
অর্থ ঃ সূর্য অস্তমিত হওয়া ও পশ্চিম আকাশে হলদে রং দূরিভুত হওয়া পর্যন্ত দাঁড়িয়ে দু‘আ করতে ছিলেন।
আরাফা দিবসের দু‘আ সর্বোত্তম দু‘আ।
কারণ নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন ঃ
((خير الدعاء دعاء يوم عرفة، وخير ما قلت أنا والنبيون من قبلي: (لا إله إلا الله وحده لا شريك له له الملك وله الحمد وهو على كل شيء قدير.))[رواه مسلم].
অর্থ ঃ সর্বোত্তম দু‘আ হলো আরাফা দিবসের দু‘আ। আমি ও আমার পূর্বের নাবীগণের পঠিত উত্তম দু‘আ হলো ঃ
(لا إله إلا الله وحده لا شريك له له الملك وله الحمد وهو على كل شيء قدير)
উচ্চারণ ঃ লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা-শারীকা লাহু, লাহুল্ ম্ল্কুু ওয়ালাহুল্ হাম্দু ওয়াহুয়া আলা-কুল্লি শাইয়িন কাদীর। হাদীসটি মুসলিম বর্ণনা করেছেন।
আল্লাহর নিকট (তার) অভাব, প্রয়োজন, ও বিনয়তা প্রকাশ করা তার উপর অপরিহার্য। আর সে এই সূবর্ণ সুযোগ হারাবে না।
কারণ নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন ঃ
((ما من يوم أكثر من أن يعتق الله فيه عبداً من النار من يوم عرفة، وإنه ليدنو ثم يباهي بهم الملائكة، فيقول: ما أراد هؤلاء))[رواه مسلم].
অর্থ ঃ আল্লাহ তা‘আলা আরাফার দিবসে সব চেয়ে বেশী তাঁর বাঁন্দাকে জাহান্নাম থেকে আজাদ-মুক্তি দান করেন, তিনি তাদের নিকটবর্তী হয়ে তাদেরকে নিয়ে ফিরিশ্তাদের সাথে গর্ব করেন ও বলেন ঃ তারা কি চায়। [হাদীসটি মুসলিম বর্ণনা করেছেন ]
আর আরাফায় অবস্থান হওয়া হাজ্জের রুক্ন। সূর্য ডুবা পর্যন্ত অবস্থান করা ওয়াজিব। হাজী সাহেবদের জন্য নিশ্চিত ভাবে আরাফার সীমান্তের ভিতর অবস্থান করা কর্তব্য।
কারণ অনেক হাজী সাহেবরা এর গুরুত্ব দেন না, ফলে তারা আরাফা সীমান্তের বাইরে অবস্থান করেন। তাই তাদের হাজ্জ হয়না। সূর্য অস্তমিত হওয়ার পর ধীর-স্থীর ও শান্তি পূর্ণভাবে মুযদালিফার দিকে রওনা হবে।
কারণ নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন ঃ
((أيها الناس السكينة السكينة))[رواه مسلم].
অর্থ ঃ হে মানব সমাজ ! তোমরা ধীর স্থীরতা গ্রহণ কর, তোমরা ধীর স্থীরতা গ্রহণ কর। [হাদীসটি মুসলিম বর্ণনা করেছেন ]
তারপর তথায় পৌঁছার পর মাগরিব ও ঈশার নামায আদায় করবে। মাগরিবের তিন রাকা‘আত নামায পড়বে, আর ঈশার দু’ রাকা‘আত নামায পড়বে জমা তা‘খীর করে।
হাজীদের জন্য তথায় মাগরিব ও ঈশা নামায আদায় করা সুন্নাত। কারণ রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তথায় মাগরিব ও ঈশার নামায পড়েছেন। আর যদি ঈশার নামাযের সময় চলে যাওয়ার আশংকা করে তবে তা যে কোন স্থানে পড়ে নিবে।
আর মুয্দালিফায় রাত্রি যাপন করবে। নামায ও অন্য কোন ইবাদাত করে রাত্রি কাটাবে না। কারণ নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইহা করেন নাই।
কারণ ইমাম মুসলিম জাবির বিন আব্দুল্লাহ (রাযিআল্লাহু আনহু) হতে হাদীস বর্ণনা করেছেন ঃ
((أن النبي  أتى المزدلفة فصلى بها المغرب والعشاء بأذان واحد وأتى المزدلفة فصلى بها المغرب والعشاء بأذان واحد وإقامتين ولم يسبح بينهما شيئاً ثم اضطجع حتى طلع الفجر))
অর্থ ঃ নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মুযদালিফায় পৌঁছলেন এবং তথায় মাগরিব ও ঈশার নামায এক আযান দু’ ইকামতে আদায় করলেন এ দু’য়ের মাঝে কোন সুন্নাত পড়েন নাই। তারপর ফজর হওয়া পর্যন্ত শুয়ে থেকেছেন।
জামরাতুল আকাবাতে কঙ্কর নিপে করার জন্য অর্ধ রাত্রি ও চন্দ্র ডুবে যাওয়ার পর অজর গ্রস্থ ও দুর্বল ব্যক্তির জন্য মুযদালিফা হতে মিনায় যাওয়া জায়েয আছে। আর যারা দুর্বল নয় ও দুর্বলের সহযোগিতাতেও নয় এমন ব্যক্তিরা ফজর হওয়া পর্যন্ত তথায় থাকবে। আরাম করার জন্য প্রথম রাত্রে কঙ্কর নিপে করার প্রতিযোগিতা যা আজ কাল অধিকাংশ মানুষ করে থাকে, তা নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর সুন্নাতের পরিপন্থী।
হাজী সাহেব মুয্দালিফায় ফজর নামায পড়ে আল-মাশ‘আরুল হারামে অবস্থান করবে। কিব্লা মুখী হয়ে হস্তদ্বয় উত্তোলন করে পূর্বাকাশ পুরোপুরি ফর্শা হওয়া পর্যন্ত বেশী বেশী আল্লাহকে আহ্বান করবে।
মুয্দালিফার যে কোন স্থানে অবস্থান করলেই তা তার জন্য যথেষ্ট হবে।
কারণ নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর বাণী রয়েছে ঃ
((وقفت ها هنا وجمع كلها موقف))[رواه مسلم]و(جمع) هي مزدلفة.
অর্থ ঃ আমি এখানে অবস্থান করলাম, তবে মুয্দালিফা সম্পূর্ণটাই অবস্থান স্থল। এই হাদীসটি মুসলিম বর্ণনা করেছেন। আর (জামা‘) অর্থ মুয্দালিফা।
তারপর হাজী সাহেব কুরবানীর দিবসে সূর্য উদিত হওয়ার আগেই মিনায় চলে আসবে, ও জামরাতুল আকাবায় সাতটি কঙ্কর নিপে করবে। জামরাতুল আকাবা হলো বড় জামরা যা মক্কার নিকটবর্তী। আর প্রতিটি কঙ্কর ছোলা বুটের চেয়ে একটু বড় হতে হবে। চতুর্দিক হতে কঙ্কর নিপে করা জায়েয হওয়ার উপর সকল আলেমগণ একমত হয়েছেন। তবে কা‘বাকে তার বাম পাশে আর মিনাকে তার ডান পাশে রেখে কঙ্কর নিপে করা উত্তম।
কারণ ইবনে মাসউদ (রাযিআল্লাহু আনহু) এর হাদীসে আছে ঃ
((أنه انتهى إلى الجمرة الكبرى فجعل البيت عن يساره ومنى عن يمينه ورمى بسبع، وقال: هكذا رمى الذي أنزل عليه سورة البقرة))[متفق عليه].
অর্থ ঃ তিনি যখন বড় জামরার নিকটে পৌঁছতেন, তখন কা‘বাকে তাঁর বাম পাশে আর মিনাকে তাঁর ডান পাশে রাখতেন ও সাতটি কঙ্কর নিপে করতেন এবং বলেছেন ঃ যার উপর সূরা আল-বাক্বারাহ অবতীর্ণ হয়েছিল তিনি এভাবে কঙ্কর নিপে করেছিলেন। [বুখারী ও মুসলিম একত্রিতভাবে এই হাদীসটি বর্ণনা করেছেন]
বড় কঙ্কর, মুজা, ও জুতা নিপে করা জায়েয নয়। হাজী সাহেব জামরাতুল আকাবাতে কঙ্কর নিপে করার সময় তালবীয়াহ পাঠ ছেড়ে দিবে। হাজী সাহেবদের জন্য আগে কঙ্কর মারা তার পর সে তামাত্তু‘ বা কিরান হাজ্জ কারী হলে হাদী জবেহ করে কুরবানী করা, তারপর চুল নেড়ে করা বা চুল ছোট করা সুন্নাত। পুরুষের জন্য নেড়ে করা উত্তম।
কারণ নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নেড়ে কারীদের জন্য তিনবার রাহমাত ও মাগফিরাতের দু‘আ করেছেন। আর চুল ছোট কারীদের জন্য মাত্র একবার দু‘আ করেছেন। যেমন এই হাদীসটি বুখারী ও মুসলিম বর্ণনা করেছেন। তারপর হাজী সাহেব তাওয়াফে ইফাযাহ করার জন্য বাইতুল্লাহতে যাবেন।
আর ইহাই জাবির বিন আব্দুল্লাহ (রাযিআল্লাহু আনহুমার) হাদীসে সুন্নাত হিসাবে বর্ণিত হয়েছে হাদীসটি মুসলিম বর্ণনা করেছেন। আর তাতে আছে ঃ
((أن النبي  أتى الجمرة التي عند الشجرة فرماها بسبع حصيات يكبر مع كل حصاة منها، مثل حصي الحذف، رمى من بطن الوادي ثم انصرف إلى المنحر فنحر ثم ركب رسول الله  فأفاض إلى البيت فصلى بمكة الظهر))
অর্থ ঃ নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যে জামরাটি গাছের নিকটে ছিল তার কাছে আসলেন, ও তাতে সাতটি কঙ্কর নিপে করলেন, আর প্রত্যেক কঙ্কর নিপে কালে “আল্লাহু আকবার” বললেন। কঙ্কর ছেলেদের ব্যবহৃত গুলালের গুলির মত-বা সমান হবে।
আর নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বাত্বনুল ওয়াদী হতে কঙ্কর নিপে করেছিলেন। তারপর মিনায় গেলেন, ও কুরবানী করলেন, তারপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সাওয়ারীতে আরোহণ করে মক্কায় এসে বায়তুল্লাহ শরীফের তাওয়াফে ইফাযা করলেন, ও তথায় যোহরের নামায আদায় করলেন।
কোন হাজী সাহেব যদি এই চারটি ইবাদাতের কোন একটি ইবাদাতকে অন্য কোন একটি ইবাদাতের আগে করে ফেলে তাতে তার উপর কোন দোষ বর্তাবে না। কারণ বিদায় হাজ্জের ব্যাপারে বর্ণিত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রাযিআল্লাহু আনহু) এর হাদীস যা বুখারী ও মুসলিম বর্ণনা করেছেন। তাতে আছে ঃ
((وقف رسول الله  والناس يسألونه، قال: فما سئل رسول الله  يومئذ عن شيء قدم أو أخر إلا قال: افعل ولا حرج))
অর্থ ঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) দাঁড়িয়ে ছিলেন, এমতাবস্থায় মানুষেরা তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন তিনি বললেন ঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে সেই দিন আগে বা পরে করার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন ঃ কর কোন তি নেই।
হাজী সাহেব যদি তামাত্তু‘ হাজ্জ কারী হন তাহলে তাওয়াফে ইফাযার পর সা’ঈ করবে। কারণ তার প্রথম সা’ঈ উম্রার জন্য ছিল। সুতরাং তার উপর হাজ্জের সা’ঈ অপরিহার্য হবে। আর যদি সে ইফরাদ বা কিরান হাজ্জ কারী হন ও তাওয়াফে কুদূমের পর সা’ঈ করে নেন তাহলে দ্বিতীয় বার আর সা’ঈ করবেনা।
কারণ জাবির (রাযিআল্লাহু আনহু) এর হাদীসে আছে ঃ
((لم يطف النبي  ولا أصحابه بين الصفا والمروة إلا طوافاً واحداً طوافه الأول))[رواه مسلم].
অর্থ ঃ নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ও তাঁর সাহাবায়ে কেরাম সাফা ও মারওয়াতে একবার সা’ঈ করেছেন প্রথম সা’ঈ। [এই হাদীসটি মুসলিম বর্ণনা করেছেন]
যারা তাড়াতাড়ী করবেন না তাদের জন্য আইয়্যামুত তাশরীক যুল হাজ্জ মাসের (এগার, বার, ও তের) তারিখ কঙ্কর মারার দিন ধরা হবে। আর যারা তাড়াতাড়ী করবেন তারা দু’ দিন যুল হাজ্জ মাসের এগার, ও বার তারিখ কঙ্কর মারবে।
কারণ আল্লাহ তা‘আলার বাণী রয়েছে ঃ
واذكروا الله في أياّمٍ معدوداتٍ فمن تعجّل في يومينِ فلا إثم عليه ومن تأخّر فلا إثم عليه لمن اتّقى[سورة البقرة، الآية:২০৩].
অর্থ ঃ তোমরা নির্দিষ্ট সংখ্যক দিনগুলিতে আল্লাহকে স্মরণ করবে। যদি কেহ তাড়াতাড়ী করে দু’ দিনে চলে আসে তবে তার কোন পাপ নেই, আর যদি কেহ বিলম্ব করে তবে তারও কোন পাপ নেই। ইহা তার জন্য, যে তাকওয়া অবলম্বন করে। [সূরা আল-বাক্বারাহ-আয়াত-২০৩]
হাজী সাহেব প্রথম জামরা (ছোট) যা মাসজিদে খাইফের নিকটে তাতে সাতটি কঙ্কর নিপে করবে। তারপর মধ্য জামরাকে সাতটি কঙ্কর নিপে করবে। তারপর জামরাতুল আকাবাতে সাতটি কঙ্কর নিপে করবে। প্রতিটি কঙ্কর নিপে কালে “আল্লাহু আকবার” বলবে। (ছোট) জামরাকে কঙ্কর নিপে করে ক্বিবলামুখী হয়ে দাড়িয়ে, তার বাম পাশে রেখে অনেকণ ধরে লম্বা দু‘আ করা সুন্নাত। দ্বিতীয় জামরাকে কঙ্কর মেরে ক্বিবলামুখী হয়ে দাড়ানো, ও তাকে তার ডান পাশে রেখে লম্বা দু‘আ করা সুন্নাত। কিন্তু বড় জামরাকে কঙ্কর মারার পর লম্বা দু‘আ করা কিংবা দাড়ানো সুন্নাত নয়।
কঙ্কর মারার সময় শুরু হবে সূর্য পশ্চিম আকাশে ঢলে যাওয়ার পর।
কারণ ইবনে উমার (রাযিআল্লাহু আনহুমার) হাদীসে আছে। তিনি বলেন ঃ
((كنا نتحيّن فإذا زالت الشمس رمينا))[رواه البخاري].
অর্থ ঃ আমরা সময় দেখতে থাকতাম, যখন সূর্য ঢলে যেত তখন আমরা কঙ্কর নিপে করতাম। [হাদীসটি বুখারী বর্ণনা করেছেন]
যুলহাজ্জ মাসের তের তারিখের সূর্য ডুবার সাথে সাথে আইয়্যামুত তাশরীকের কঙ্কর মারার সময় শেষ হয়ে যাবে। যে ব্যক্তি যুলহাজ্জ মাসের তের তারিখের সূর্য ডুবে গেল অথচ সে কঙ্কর মারতে পারলো না এর পর সে আর কঙ্কর মারবে না। তার উপর দাম-ফিদয়া অপরিহার্য হবে।
হাজী সাহেব আইয়্যামে তাশরীকের-যুলহাজ্জ মাসের এগার ও বার তারিখের রাত্রি গুলো মিনায় যাপন করবে, আর যে হাজী সাহেবের বার তারিখের সূর্য ডুবে গেল অথচ সে মিনা হতে বের হতে পারলো না তার উপর মিনায় রাত্রি যাপন এবং তের তারিখের কঙ্কর মারা অপরিহার্য হবে।
হাজী সাহেব যদি মক্কা হতে চলে যেতে চান তাহলে তাওয়াফে বি‘দা করে চলে যাবেন। কারণ ইহা অধিকাংশ বিদ্যানগণের নিকট হাজ্জের ওয়াজিব সমূহের একটি ওয়াজিব। তবে ইহা ঋতুবর্তী মহিলা হতে সাকেত-হয়ে যাবে। (তাকে করতে হবে না) কারণ ইবনে আব্বাস (রাযিআল্লাহু আনহুমা) এর হাদীসে আছে, তিনি বলেন ঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন ঃ
((لا ينفرّنّ أحد حتى يكون آخر عهده بالبيت، وفي رواية: إلا أنه خفف عن المرأة الحائض)) [رواه مالك وأصله في صحيح مسلم].
অর্থ ঃ কেহই (মক্কা হতে) চলে যাবে না যতন না তার সর্ব শেষ সময়টুকু আল্লাহর ঘরের কাছে কাটবে, (অর্থাৎ বিদায় তাওয়াফ না করে কেহই মক্কা ত্যাগ করবে না)। অন্য বর্ণনায় আছে ঃ ঋতুবর্তী মহিলার জন্য তাওয়াফে বিদা‘ না করেই চলে যাওয়া অনুমতি রয়েছে। [হাদীসটি মালেক বর্ণনা করেছেন। আর মূল হাদীসটি সহীহ মুসলিমে আছে ]
যে ব্যক্তি তাওয়াফে ইফাযাহ তার ভ্রমণ কাল পর্যন্ত পিছাবে তার জন্য তাওয়াফে ইফাযাই তাওয়াফে বিদা‘ হিসাবে অধিকাংশ বিদ্যানগণের নিকট যথেষ্ট হবে।
যে দু‘আটি বুখারী ইবনে উমার (রাযিআল্লাহু আনহুমা) হতে বর্ণনা করেছেন সেই দু‘আটি হাজ্জ হতে প্রত্যাবর্তন কারী ব্যক্তির জন্য পড়া মুস্তাহাব। কারণ নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যখন কোন ধর্ম যুদ্ধ হতে বা হাজ্জ ও উম্রা হতে ফিরতেন তখন প্রত্যেক উঁচু জায়গায় “আল্লাহু আকবার” বলতেন। অতঃপর নিুের দু‘আটি পড়তেন ঃ
((لا إله إلا الله وحده لا شريك له، له الملك، وله الحمد، وهو على كل شيء قدير، آيبون تائبون عابدون لربنا حامدون، صدق الله وعده، ونصر عبده، وهزم الأحزاب وحده)).
উচ্চারণ ঃ লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা-শারীকা লাহু, লাহুল্ মূল্কু, ওয়ালাহুল্ হাম্দু ওয়াহুয়া আলা-কুল্লি শাইয়ীন কাদীর। আ-য়েবূনা তায়েবূনা আ‘বেদূনা লিরব্বেনা হা-মেদূন, সাদাক্বাল্লাহু ওয়া‘দাহু ওয়া নাসারা আবদাহু ওয়া হাযামাল আহ্যাবা ওয়াহদাহু।