নবী (সাঃ)- ০৭।

উমরা উদযাপন

হুদাইবিয়া সন্ধির একটি শর্ত ছিলো এই যে, মুসলমানরা পর বছর এসে উমরা উদযাপন করবেতাই পর বছর অর্থ সপ্তম হিজরী সালে হযরত (স) মুসলমানদের এক বিরাট কাফেলা নিয়ে কাবা জিয়ারতের মনস্ত করলেনএ উপলক্ষে সাহাবীদের মধ্যে এক আশ্চর্য রকমের আনন্দ ও উদ্দীপনা পরিলক্ষিত হলো দৃশ্য কাফির কুরাইশদের অন্তরে হিংসা-বিদ্বেষের চাপা আগুন আবার জ্বালিয়ে দিলোএমন কি তাদের ইচ্ছা মাফিক সম্পাদিত সন্ধি-চুক্তিকে এখন নিজেদের কাছেই অর্থহীন বলে মনে হতে লাগলো

মক্কা বিজয়

হুদাইবিয়ার সন্ধি-চুক্তি ভঙ্গ

হুদাইবিয়ার সন্ধি-চু্‌ক্তিতে আরব গোত্রগুলোকে এই অধিকার দেয়া হয়েছিলো যে, তারা মুসলমান এবং কাফিরদের মধ্যে যে কোনো পক্ষের সঙ্গে চুক্তি সম্পাদন করতে পারবেএই শর্তানুযায়ী বনু খোজাআ গোত্র মুসলমানদের সাথে চুক্তিবদ্ধ হলো আর বনু বকর গোত্র মৈত্রী স্থাপন করলো কুরাইশদের সঙ্গেএভাবে প্রায় দেড় বছর এই সন্ধি-চুক্তি পূর্ণভাবে পালিত হলোকিন্তু তারপরই এক নতুন পরিস্থিতির উদ্ভব হলোইতঃপূর্বে খোজাআ ও বকর গোত্রদ্বয়ের মধ্যে বেশ কিছুকাল যাবত লড়াই চলে আসছিলো ; এদের মধ্যে হঠা একদিন বনু বকর গোত্র খোজাআদেরকে আক্রমণ করে বসলো এবং এ ব্যাপারে কুরাইশগণ বনু বকরকে সাহায্য প্রদান করলোকারণ খোজা গোত্র তাদের মর্জীর বিরুদ্ধে মুসলমানদের সাথে চুক্তিবদ্ধ হওয়ায় কুরাইশরা আগে থেকেই তাদের ওপর খাপ্পা ছিলোএভাবে উভয় পক্ষ মিলে খোজাআ গোত্রের লোকদেরকে নির্মমভাবে হত্যা করতে শুরু করলোএমন কি তারা কাবা শরীফে আশ্রয় গ্রহণ করেও রেহাই পেলো না; বরং সেখানেরও তাদের রক্তপাত করা হলো

খোজাআগণ বাধ্য হয়ে হযরত (স)-কে তাদের দুরাবস্থা সম্পর্কে অবহিত করলো এবং তাঁর সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তি অনুযায়ী তারা সাহায্য প্রার্থনা করলোহযরত (স) খোজাআদের এই মজলুমী অবস্থার কথা শুনে অত্যন্ত মর্মাহত হলেনতিনি এই নিষ্ঠুর আচরণ থেকে বিরত থাকার এবং নিম্নোক্ত তিনটি শর্তের মধ্যে যে কোনো একটি গ্রহণ করার আহবান জানিয়ে কুরাইশদের কাছে একজন দূত প্রেরণ করলেন :

১. খোজাআদের যে সব লোক নিহত হয়েছে, তাদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে অথবা

২. বনু বকরের সাথে কুরাইশদের সম্পর্কচ্ছেদ করতে হবে কিংবা

৩. হুদাইবিয়ার সন্ধি-চুক্তি বাতিল ঘোষণা করতে হবে

দূত মারফত এই পয়গাম শুনে কোরতা বিন্‌ উমর নামক জনৈক কুরাইশ বললো : আমরা তৃতীয় শর্তটাই সমর্থন করিকিন্তু দূত চলে যাবার পর তাদের খুব আফসোস হলো এবং হুদাইবিয়ার সন্ধি পুনর্বহাল করার জন্যে নিজেদের পক্ষ থেকে আবু সুফিয়ানকে প্রতিনিধি হিসেবে প্রেরণ করলোকিন্তু সামগ্রিক পরিস্থিতি, বিশেষত কুরাইশদের এতদিনকার আচরণের পরিপ্রেক্ষিতে হযরত (স) তাদের এই নয়া প্রস্তাব সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারলেন নাতিনি আবু সুফিয়ানের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলেন

মক্কা অভিযানের প্রস্তুতি

কাবাগ্রহ ছিলো খালেস তওহীদের কেন্দ্রস্থলনির্ভেজাল খোদার বন্দেগীর জন্যে এটি হযরত ইবরাহীম (আ) নির্মাণ করেছিলেনকিন্তু এ যাবতকাল তা মুশরিকদের অধিকারে থেকে শিরকের সবচেয়ে বড়ো কেন্দ্র-স্থলে পরিণত হয়েছিলোহযরত মুহাম্মদ (স) প্রকৃতপক্ষে হযরত ইবরাহীম (আ)-এর প্রচারিত দ্বীনের আহবায়ক এবং খালেস তওহীদের অনুবর্তী ছিলেনএ কারণে তওহীদের এই পবিত্র কেন্দ্রস্থলকে শিরকের সমস্ত নাপাকী ও নোংরামি থেকে অবিলম্বে মুক্ত করার একান্ত প্রয়োজন হয়ে পড়েছিলোকিন্তু এতদিন এ অবস্থা অনুকূলে ছিলো নাহযরত (স) এবার অনুমান করতে পারলেন যে, অল্লাহর এই পবিত্র ঘরকে শুধু তাঁরই ইবাদতের জন্যে নির্ধারিত করা এবং মূর্তিপূজার সমস্ত অপবিত্রতা থেকে একে মুক্ত করার উপযুক্ত সময় এসেছেতাই তিনি চুক্তিবদ্ধ সমস্ত গোত্রের কাছে এ সম্পর্কে পয়গাম পাঠালেনঅন্য দিকে এই প্রস্তুতির কথা যাতে মক্কাবাসীরা জানতে না পারে, সেজন্যে তিনি কঠোর সতর্কতা অবলম্বন করলেনপ্রস্তুতি কার্য সম্পন্ন হলে অষ্টম হিজরীর ১০ রমযান প্রায় দশ হাজার আত্নোসর্গী সৈন্যের এক বিরাট বাহিনী সঙ্গে নিয়ে হযরত (স) মক্কা অভিমুখে যাত্রা করলেনপথিমধ্যে অন্যান্য আরব গোত্রও এসে তাঁর সঙ্গে মিলিত হলো

আবু সুফিয়ানের গ্রেফতারী

মুসলিম সৈন্যবাহিনী মক্কার সন্নিকটে পৌঁছলে কুরাইশ-প্রধান আবু সুফিয়ান গোপনে তাদের সংখ্যা-শক্তি আন্দাজ করতে এলোএমনি অবস্থায় হঠা তাকে গ্রেফতার করে হযরত (স)-এর খেদমতে হাযির করা হলোএ সেই আবু সুফিয়ান, ইসলামের দুশমনি ও বিরুদ্ধতায় যার ভূমিকা ছিল অনন্যসাধারণএই ব্যক্তিই বারবার মদীনা আক্রমণের ষড়যন্ত্র করেছিলো এবং একাধিকবার হযরত (স)-কে হত্যা করার গোপন চক্রান্ত পর্যন্ত ফেঁদেছিলোএই সব গুরুতর অপরাধের কারণে আবু সুফিয়ানকে সঙ্গে সঙ্গে হত্যা করা উচিত ছিলোকিন্তু হযরত (স) তার প্রতি করুণার দৃষ্টি প্রসারিত করে বললেন : যাও, আজ আর তোমাকে কোনো জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে নাআল্লাহ তোমাকে ক্ষমা করে দিনতিনি সমস্ত ক্ষমা প্রদর্শনকারীর চেয়ে শ্রেষ্ঠ ক্ষমা প্রদর্শনকারী

আবু সুফিয়ানের সঙ্গে এই আচরণ ছিলো সম্পূর্ণ অভিনবরাহমাতুল্লিল আলামীন-এর এই অপূর্ব ঔদার্য আবু সুফিয়ানের হৃদয় -নেত্রকে উন্মীলিত করে দিলোসে বুঝতে পারলো, মক্কায় সৈন্য নিয়ে আসার পেছনে এই মহানুভব ব্যক্তির হৃদয়ে না প্রতিশোধ গ্রহণের মানসিকতা আছে আর না আছে দুনিয়াবী রাজা-বাদশাদের ন্যায় কোনো স্পর্ধা-অহংকারএ কারণেই তাকে মুক্তিদান করা সত্ত্বেও সে মক্কায় ফিরে গেলো না; বরং ইসলাম গ্রহণ করে হযরত (স)-এর আত্নোসর্গী দলেরই অন্তর্ভুক্ত হলো

মক্কায় প্রবেশ

এবার হযরত (স) খালিদ বিন অলীদ (রা)-কে আদেশ দিলেন : ‘তুমি পিছন দিক থেকে মক্কায় প্রবেশ করো, কিন্তু কাউকে হত্যা করো নাঅবশ্য কেউ যদি তোমার ওপর অস্ত্র উত্তোলন করে, তাহলে আত্নরক্ষার জন্যে তুমি ও অস্ত্র ধারন করোএই বলে হযরত (স) নিজে সামনের দিক থেকে শহরে প্রবেশ করলেনহযরত খালিদ-এর সৈন্যদের ওপর কতিপয় কুরাইশ গোত্র তীর বর্ষণ করলো এবং তার প্রত্যুত্তর দিতে হলোফলে ১৩ জন হামলাকারী নিহত হলো এবং বাকী সবাই পালিয়ে গেলোহযরত (স) এই পাল্টা হামলার কথা জানতে পেরে হযরত খালিদ-এর কাছে কৈফিয়ত তলব করলেনকিন্তু তিনি প্রকৃত ঘটনা জানতে পেরে বললেন :খোদার ফয়সালা এ রকমই ছিলোপক্ষান্তরে হযরত (স) কোনোরূপ প্রতিরোধ ছাড়াই মক্কায় প্রবেশ করলেনতাঁর সৈন্যদের হাতে একটি লোকও নিহত হলো না

মক্কায় সাধরণ ক্ষমা

হযরত (স) মক্কায় প্রবেশ করে কোনো প্রতিশোধ গ্রহণের কথা বললেন না, বরং তিনি এই মর্মে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করলেনঃ

১. যারা আপন ঘরের মধ্যে দরজা বন্ধ করে থাকবে,তারা নিরাপদ

২. যারা আবু সুফিয়ানের ঘরে প্রবেশ করবে, তারও নিরাপদ এবং

৩. যারা কাবাগৃহে আশ্রয় নেবে, তারাও নিরাপদ

কিন্তু এই সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা থেকে এমন ছয়-সাত ব্যক্তি ব্যতিক্রম ছিলো, ইসলামের বিরুদ্ধতায় ও মানবতা বিরোধী অপরাধে যাদের ভূমিকা ছিলো অসাধারণ এবং যাদের হত্যা করার প্রয়োজন ছিলো অপরিহার্য

নবী করীম (স) কি অবস্থায় মক্কায় প্রবেশ করলেন, তাও এখানে উল্লেখযোগ্যতাঁর পতাকা ছিলো সাদা ও কালো রঙেরমাথায় ছিলো লৌহ শিরস্ত্রাণ এবং তার ওপর ছিলো কালো পাগড়ী বাঁধাতিনি উচ্চ:স্বরে সূরা ফাতাহ (ইন্না ফাতাহনা ) তিলাওয়াত করছিলেনসর্বোপরি আল্লাহ তাআলা সমীপে তাঁর এমনি বিনয় ও নম্রতা প্রকাশ পাচ্ছিলো যে, সওয়ারী উটের পিঠের ওপর ঝুঁকে পড়ার দরুন তাঁর পবিত্র মুখমণ্ডল যেনো উটের কুঁজ স্পর্শ করছিলো৫০

কাবা গৃহে প্রবেশ

হযরত (স) কাবা মসজিদে প্রবেশ করে সর্বপ্রথম মর্তিগুলোকে বাইরে ছুঁড়ে ফেলার নির্দেশ দিলেনতখন কাবাগৃহে ৩৬০ টি মূর্তি বর্তমান ছিলোতার দেয়ালে ছিলো নানারূপ চিত্র অংকিতএর সবই নিশ্চিহ্ন করে দেয়া হলোএভাবে আল্লাহর পবিত্র ঘরকে শিরকের নোংরামি ও অপবিত্রতা থেকে মুক্ত করা হলোএরপর হযরত (স) তাকবীর ধ্বনি উচ্চারণ করলেন, কাবা গৃহ তওয়াফ করলেন এবং মাকামে ইবরাহীম’-এ গিয়ে নামায আদায় করলেনএই ছিল তার বিজয় উসবএ উসব দেখে মক্কাবাসীদের হৃদয়-চক্ষু খুলে গেলোতারা দেখতে পেলো, এতোবড়ো একটি বিজয় উসবে বিজয়ীরা না প্রকাশ করলো কোনো শান-শওকত আর না কোনো গর্ব-অহংকার, বরং অত্যন্ত বিনয় ও কৃতজ্ঞতার সাথে তারা খোদার সামনে অবনমিত হচ্ছে এবং তাঁর প্রশংসা ও জয়ধ্বনি উচ্চারণ করছেএই দৃশ্য দেখে কে না বলে পারে যে, প্রকৃতপক্ষে এ বাদশাহী কিংবা রাজত্ব জয় নয়, এ অন্য কিছু

বিজয়ের পর ভাষণ

মক্কা বিজয় সম্পন্ন হবার পর হযরত (স) এক গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক ভাষণ প্রদান করেনএর কিছু অংশ হাদীস শরীফে বিধৃত হয়েছেতাতে তিনি বলেন :

এক আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ (ইলাহ) নেই; কেউ তাঁর শরীক নেইতিনি তাঁর ওয়াদাকে সত্যে পরিণত করেছেনতিনি তাঁর বান্দাদের সাহায্য করেছেন এবং সমস্ত শত্রুবাহিনীকে ধ্বংস করে দিয়েছেনজেনে রেখো; সমস্ত গর্ব-অহংকার, সমস্ত পুরনো হত্যা ও রক্তের বদলা এবং তামাম রক্তমূল্য আমার পায়ের নীচেকেবল কাবার তত্ত্বাবধান এবং হাজীদের পানি সরবরাহ এর থেকে ব্যতিক্রমহে কুরাইশগণ! জাহিলী আভিজাত্য ও বংশ-মর্যাদার ওপর গর্ব প্রকাশকে অল্লাহ নাকচ করে দিয়েছেনসমস্ত মানুষ এক আদমের সন্তান আর আদমকে সৃষ্টি করা হয়েছে মাটি থেকে

অতঃপর তিনি কুরআন পাকের নিম্নোক্ত আয়াত পাঠ করেনঃ

লোক সকল! আমি তোমাদেরকে একজন পুরুষ ও একজন নারী থেকে পয়দা করেছি এবং তোমাদেরকে নানান গোত্র ও খান্দানে বিভক্ত করে দিয়েছি, যেনো তোমরা একে অপরকে চিনতে পারোকিন্তু খোদার কাছে সম্মানিত হচ্ছে সেই ব্যক্তি, যে অধিকতর পরহেজগারআল্লাহ মহাবিজ্ঞ ও সর্বজ্ঞ

এর সাথে অন্য কতিপয় জরুরী মসলাও শিক্ষা দেন

ইসলামের শ্রেষ্ঠতম বিজয়ী তাঁর সর্বশ্রেষ্ঠ বিজয়ের পর যে ভাষণ দান করেন, এই হচ্ছে তার নমুনাএতে না আছে তাঁর দুশমনদের বিরুদ্ধে জিঘাংসা, না আছে কোনো বিদ্বেষএতে না আছে তাঁর আপন কৃতিত্বের কোনো উল্লেখ আর না তাঁর আত্নোসর্গী সহকর্মীদের কোনো প্রশংসা, বরং প্রশংসা যা কিছু, তা শুধু আল্লাহরই জন্যে আর যা কিছু ঘটেছে তা শুধু তাঁরই করুণার ফলমাত্র৫১

আরব দেশে হত্যার প্রতিশোধ গ্রহণের ওপর অত্যন্ত গুরুত্ব আরোপ করা হতোবংশের কোনো ব্যক্তি কারো হাতে নিহত হলে ঐ বংশের স্মরণীয় ঘটনাবলীর মধ্যে তা শামিল করা হতোএমনকি ভবিষ্যত বংশধররা পর্যন্ত হত্যাকারীর বংশ থেকে নিহত ব্যক্তিদের রক্তের বদলা না নিয়ে স্বস্তি লাভ করতো নাতাই এ উপলক্ষে হযরত (স) এ ধরনের যাবতীয় রক্তের বদলাকে বাতিল করে দিলেন এবং বলা যায়, তিনি আরববাসীদেরকে সত্যিকর অর্থে এক অনাবিল শান্তি ও স্বস্তিময় জীবন প্রদান করলেনআরবে বংশ ও গোত্র নিয়ে গৌরব করার এক বহু পুরনো ব্যাধি বর্তমান ছিলোকিন্তু ইসলামের দৃষ্টিতে মানুষে মানুষে এ ধরনের পার্থক্য সৃষ্টি সম্পূর্ণ অবৈধইসলামে পার্থক্য সৃষ্টির একমাত্র বৈধ মাপকাঠি হচ্ছে খোদায়ী বিধানের আনুগত্যের প্রশ্নযে ব্যক্তি আল্লাহর বিধানের যতো অনুগত হবে, তাঁর সন্তোষ-অসন্তোষকে ভয় করবে, সে ততোই সম্ভ্রান্ত ও সম্মানিত বলে গণ্য হবেইসলামে বংশগত শরাফতের কোনে স্থান নেইবংশ বা খান্দানের সৃষ্টি কেবল পারস্পরিক পরিচয়ের জন্যেআল্লাহর রাসূল তাই এই ব্যাধিটিরও মূলোপাটন করে দিলেন এবং মানুষের জন্যে এমন এম সাম্যের বাণী ঘোষণা করলেন, আজ পর্যন্ত যা ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো ধর্মই মানুষকে দিতে পারে নি

শত্রুর হৃদয় জয়

হযরত (স) যে জনসমাবেশে ভাষণ দিচ্ছিলেন, সেখানে বড়ো বড়ো কুরাইশ নেতা, উপস্থিত ছিলোযে সব ব্যক্তি ইসলামকে নিশ্চিহ্ন করার জন্যে জীবন পণ করেছিলো, সেখানে তারাও হাযির ছিলোযাদের অকথ্য উপীড়নে মুসলমানরা একদিন নিজেদের ঘর-বাড়ি পর্যন্ত ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিলো, তারাও সেখানে ছিলোযারা হযরত (স)-কে গালি-গালাজ করতো, তাঁর পথে কাঁটা বিছিয়ে রাখতো, তাঁর প্রতি প্রস্তর নিক্ষেপ করতো, প্রতি মুহূর্ত তাঁকে হত্যা করার চিন্তা করতো, তারাও সেখানে উপস্থিত ছিলোযে পাষণ্ড হযরত (স) -এর আপন চাচার কলিজা বের করে চিবিয়েছিলো, সেও সেখানে হাযির ছিলোযারা এক খোদার বন্দেগী করার অপরাধে বেশুমার মুসলমানকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করেছিলো, তারাও সেখানে ছিলোহযরত (স) এদের সবার দিকে তাকালেন এবং জিজ্ঞেস করলেন : বলো তো, আজ তোমাদের সঙ্গে আমি কিরূপ আচরণ করবো?’ হযরত (স) কিভাবে মক্কায় পদার্পন করেছেন এবং এ পর্যন্ত কিরূপ ব্যবহার করেছেন, লোকেরা তা গভীরভাবে লক্ষ্য করেছিলোতাই তারা সঙ্গে সঙ্গেই বলে উঠলো :

আপনি আমাদের সম্ভ্রান্ত ভ্রাতা ও সম্ভান্ত- ভ্রাতুষ্পুত্র

একথা শুনেই হযরত (স) ঘোষণা করলেন :

যাও, আজ আর তোমাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই; তোমরা সবাই মুক্ত

যারা মুসলমানদের পরিত্যক্ত বাড়ি-ঘর দখল করে নিয়েছিলো, হযরত (স) তাও তাদেরকে প্রত্যর্পন করার ব্যবস্থা করলেন নাবরং মুহাজিরদেরকে নিজেদের দাবি পরিত্যাগ করার উপদেশ দিলেন

হযরত (স)-এর এই বিস্ময়কর আচরণে মুগ্ধ হয়ে বড়ো বড়ো কুরাইশ নেতা তাঁর চরণে লুটিয়ে পড়লোতারা স্বতঃস্ফূর্তভাবে ঘোষণা করলো : আপনি সত্যি আল্লাহর নবী, কোনো দেশজয়ী বাদশাহ ননআপনি যে দাওয়াত পেশ করেন, তা ই সত্য

এই ছিল মক্কা বিজয়ের দৃশ্যএ বিজয় কোনো দেশ, সম্পদ বা ধন-রত্ন দখল নয়, ছিলো মানুষের হৃদয় - রাজ্য অধিকার আর এটাই ছিলো সবচেয়ে বড়ো জয়

হুনাইনের যুদ্ধ

মক্কা বিজয়ের প্রভাব

হযরত (স)-এর দয়া সুলভ আচরণ এং মুসলমানদের সাথে মেলামেশার ফলে একদিকে মক্কায় দলে দলে লোকেরা ইসলাম গ্রহণ করতে লাগলো, অন্যদিকে তামাম আরব গোত্রের ওপর বিজয়ের এর বিরাট প্রভাব পড়লোতারা বুঝতে পারলো, ইসলামের প্রতি আহবানকারী বাস্তবিকই ধন-দৌলত বা রাজত্বের কোনো কাঙাল নন; বরং তিনি আল্লাহরই পয়গাম্বরপরন্ত এ সময়ে ইসলাম ও তার বৈশিষ্ট্য কোনো চোরা-গুপ্তা জিনিস ছিলো না; বরং ইসলামী আদর্শের স্বরূপটা প্রায় গোটা আরব দেশই জেনে ফেলেছিলোযাদের হৃদয়ে বুঝবার শক্তি ছিলো, তারা বুঝে নিয়েছিলো যে, এই হচ্ছে আসল সত্যতাই মক্কা বিজিত হবার সঙ্গে সঙ্গেই আরবের দূর-দূরাঞ্চল থেকে বিভিন্ন গোত্রের লোকেরা এসে ইসলাম কবুল করতে লাগলোএতদসত্ত্বেও যে সব লোকের অন্তরে ইসলামী আন্দোলনের প্রতি ঘৃণা ও বিদ্বেষ বর্তমান ছিলো, তারা এ দৃশ্য দেখে যারপর নাই অস্তির হয়ে উঠলোতাদের ভেতরে বিদ্বেষ ও বিরুদ্ধতার আগুন দাউ দাউ করে জ্বলে উঠলোএদিক দিয়ে হুনাইনের অধিবাসী হাওয়াজেন ও সাকীফ নামক দুটি গোত্র অত্যন্ত অগ্রবর্তী ছিলোতারা এমনিতেও খুব যুদ্ধবাজ লোক ছিলো; তদুপরি ইসলামের অগ্রগতি দেখে তারা আরো অস্তির হয়ে পড়লোতারা স্পষ্টত বুঝতে পারলো, মক্কার পর এবার তাদের পালাতাই উভয় গোত্রের প্রধানদ্বয় একত্র হয়ে পরামর্শ করলো এবং এই সিদ্ধান্ত নিলো যে, পরিস্তিতি যা-ই হোক না কেন, দৃঢ়তার সাথে মুসলমানদের মুকাবিলা করতে হবেকারণ ক্রমবর্ধমান বিপদকে প্রতিরোধ করতে না পারলে তাদের কল্যাণ নেইএই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তারা মালিক ইবনে আওফ নাযারী নামক তাদের জনৈক সর্দারকে বাদশাহ মনোনীত করলো এবং মুসলমানদের মুকাবিলা করার জন্যে সর্বাত্নক প্রস্তুতি শুরু করে দিলোএ ব্যাপারে তারা আরো বহু গোত্রকে নিজেদের সঙ্গী বানিয়ে নিলো

হুনাইনের যুদ্ধ

এ প্রস্তুতির কথা জানতে পেরে নবী করীম (স)-ও সাহাবীদের সঙ্গে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নিলেন যে, এই ক্রমবর্ধমান ফিতনাকে সময় থাকতেই মিটিয়ে ফেলার চেষ্টা করতে হবেএই সিদ্ধান্ত অনুসারে অষ্টম হিজরীর ১০ শাওয়াল প্রায় বারো হাজার মুসলিম সৈন্য নিয়ে হযরত (স) দুশমনের মুকাবিলার জন্যে রওয়ানা হলেনঐ সময় মুসলমানদের সৈন্য সংখ্যা ছিলো বিপুল আর তাদের যুদ্ধ-সরঞ্জামও ছিলো প্রচুরএটা দেখেই তাদের মনে পূর্ণ প্রত্যয় জন্মালো যে, দুশমনরা তাদের মুকাবিলা করতে কিছুতেই সমর্থ হবে না; বরং অচিরেই তারা ময়দান ছেড়ে পালিয়ে যাবেএমন কি, কোনো কোনো মুসলমানের মুখ থেকে এ উক্তি পর্যন্ত বেরিয়ে পড়লো : আজ আর আমাদের ওপর কে জয়লাভ করতে পারে কিন্তু এরূপ ধারণা মুসলমানদের বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে কিছুমাত্রও সামঞ্জস্যশীল ছিল নাকারণ তাদের কখনো আপন শক্তি-সামর্থ্যের ওপর ভরসা করা উচিত নয়তাদের শক্তি হওয়া উচিত শুধুমাত্র আল্লাহ তাআলার দয়া ও করুণাকুরআন পাকে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন :

হুনাইনের দিনকে স্মরণ করো, যখন তোমরা নিজেদের সংখ্যাধিক্যতে তুষ্ট ছিলে; কিন্তু তাতে তোমাদের কোনো কাজ হয়নি; বরং জমিন প্রশস্ত থাকা সত্ত্বেও তা তোমাদের জন্যে সংকীর্ণ হয়ে গিয়েছিলো এবং তোমরা পৃষ্ঠপ্রদর্শন করে পালিয়েছিলেঅতঃপর আল্লাহ তাঁর রাসূল এবং মুসলমানদের ওপর নিজের তরফ থেকে সান্ত্বনা ও প্রশান্তির ভাবধারা নাযিল করলেন এবং তোমরা দেখতে পাওনি এমন সৈন্যবাহিনী প্রেরণ করে কাফিরদের শাস্তি দিলেনকাফিরদের জন্যে এমনি শাস্তিই নির্ধারিত’ (সূরা তাওবাঃ ২৫,২৬)

হুনাইন হচ্ছে মক্কা ও তায়েফের মধ্যবর্তী একটি উপত্যকাএখানেই এই ঐতিহাসিক যুদ্ধ সংঘটিত হয়মুসলমানরা সামনে আসা মাত্র দুশমনরা আশ-পাশের পাহাড় থেকে এলোপাথাড়ি তীর নিক্ষেপ করতে শুরু করলোএ পরিস্থিতির জন্যে মুসলমানরা মোটেও প্রস্তুত ছিলো নাএর ফলে তাদের সৈন্যদলে বিশৃংখলা দেখা দিলো এবং কিছুক্ষণের জন্যে তারা ময়দান ত্যাগ করলোঅনেক বেদুইন গোত্র ময়দান থেকে পালিয়ে গেলোএদের মধ্যে সবেমাত্র ঈমান এনেছে এবং পূর্ণ প্রশিক্ষণ পায়নি এমন অনেক নও-মুসলিমও ছিলোএই বিশৃংখল পরিস্থিতিতে হযরত (স) অত্যন্ত দৃঢ়তা ও প্রশান্ত চিত্তে যুদ্ধ ক্ষেত্রে দাঁড়িয়ে রইলেন এবং দুশমনদের মুকাবিলা করা ও ময়দান থেকে পৃষ্ঠ প্রদর্শন না করার জন্যে মুসলমানদের প্রতি ক্রমাগত আহবান জানাতে লাগলেনতাঁর এই অপূর্ব ধৈর্য-স্থৈর্য এবং তাঁর চারপাশে বহু সাহাবীর অকৃত্রিম দৃড়তা দেখে মুসলিম সৈন্যরা পুনরায় ময়দানে আসতে শুরু করলো এবং নবতর উসাহ-উদ্দীপনা ও শৌর্য-বীর্যের সঙ্গে দুশমনদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লোনবী করীম (স) এবং তাঁর সাহাবীদের এই ধৈর্য ও দৃঢ়তাকেই আল্লাহ তাআলা তাঁর তরফ থেকে অবতীর্ণ সান্ত্বনা ও প্রশান্তির লক্ষণ বলে উল্লেখ করেছেনএর ফলে আল্লাহর অনুগ্রহে অল্পক্ষণের মধ্যেই যুদ্ধের মোড় ঘুরে গেলো এবং মুসলমানরা পুরোপুরি জয়লাভ করলোকাফিরদের প্রায় ৭০ ব্যক্তি নিহত এবং সহস্রাধিক লোক বন্দী হলো

দুশমনদের পশ্চাদ্ধাবন ও কল্যাণ কামনা

কাফিরদের বাকি সৈন্যদের পালিয়ে গিয়ে তায়েফে আশ্রয় গ্রহণ করলোকারণ তায়েফকে একটি নিরাপদ স্থান মনে করা হতোহযরত (স) তাদের পশ্চাদ্ধাবন করলেন এবং তায়েফ অবরোধ করলেনতয়েফে একটি মশহুর ও মজবুত দুর্গ ছিলোএর ভেতরেই কাফিরগণ আশ্রয় গ্রহণ করেছিলোঅবরোধ প্রায় বিশ দিন অব্যাহত রইলোহযরত (স) যখন ভালোমতো বুঝতে পারলেন যে, দুশমনদের মেরুদণ্ড ভেঙে পড়েছে এবং এখন আর তাদের মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার কোনো আশংকা নেই, তখন তিনি অবরোধ তুলে নিলেন এবং তাদের জন্যে দোআ করলেন :হে আল্লাহ! সাকীফ গোত্রকে সুপথ প্রদর্শন করো এবং তাদেরকে আমার কাছে হাযির হবার তাওফিক দাওকেবল দ্বীন-ইসলামের জন্যে সংগ্রামকারী খোদার নবী ছাড়া কে এমনি পরিস্থিতিতে একখানি দয়ার্দ্র হৃদয় ও স্নেহশীল হতে পারে এবং বিরুদ্ধবাদীদের জন্যে কল্যাণ কামনা করতে পারে? তাবুক যুদ্ধ

রোম সাম্রাজ্যের সথে সংঘর্ষ

তখন আরব দেশের উত্তরে ছিলো বিশাল রোম সাম্রাজ্যমক্কা বিজয়ের আগে থেকেই এই সাম্রাজ্যের সাথে মুসলমানদের সংঘর্ষ শুরু হয়ে গিয়েছিলোনবী করীম (স) সিরিয়ার সীমান্ত অঞ্চলে বসবাসকারী গোত্রসমূহের নিকট ইসলামের দাওয়াত নিয়ে একটি প্রতিনিধিদল প্রেরণ করেছিলেনএই গোত্রগুলোর অধিকাংশই ছিলো খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী এবং রোম সাম্রাজ্যের প্রভাবাধীনএই গোত্রগুলোর অধিকাংশই ছিলো খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী এবং রোম সাম্রাজ্যের প্রভাবাধীনতারা মুসলিম প্রতিনিধি দলের পনেরো ব্যক্তিকে হত্যা করে ফেললোশুধু প্রতিনিধি দলের নেতা কাব বিন উমর গিফারী প্রাণ নিয়ে ফিলে এলেনঐ সময় হযরত (স) বসরার গভর্নর শেরজিলের নামেও ইসলাম গ্রহণের আহবান জানিয়ে এক পয়গাম পাঠিয়েছিলেনকিন্তু উক্ত গভর্নরও রোম সাম্রাজ্যের অধীনস্ত বলে হযরত (স)-এর প্রতিনিধি হযরত হারিস বিন আমীরকে হত্যা করলোএই সব কারণে সিরিয়ার সীমান্ত এলাকাবর্তী মুসলমানদেরকে একেবারে দুর্বল ভেবে কেউ যাতে উত্যক্ত করতে সাহসী না হয়, সে জন্যে হযরত (স) অষ্টম হিজরীর জমাদিউল আউয়াল মাসে তিন হাজার মুসলমানের এক বাহিনী প্রেরণ করলেনএই বাহিনীর আগমন সংবাদ পেয়েই শেরজিল প্রায় এক লক্ষ সৈন্য নিয়ে মুকাবিলার জন্যে বেরিয়ে পড়লোকিন্তু মুসলমানরা এ সংবাদ জানতে পেরেও সামনে এগুতে লাগলোরোম সম্রাট তখন হাম্‌স নামক স্থানে অবস্থান করছিলোকিন্তু মুসলমানরা তা সত্ত্বেও যথারীতি অগ্রসর হতে লাগলোঅবশেষে মুতানামক স্থানে এই পদক্ষেপের ফলে বিপুল সংখ্যক রোমক সৈন্যের মুকাবিলায় এই নগণ্য সংখ্যক মুসলিম সৈন্যের নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়াই স্বাভাবিক ছিলোকিন্তু আল্লাহর ফযলে রোমকদের এতোবড়ো বাহিনীও মুসলমানদের কোনো ক্ষতি করতে পারলো না; বরং তারাই শোচনীয়ভাবে পরাজিত হলোএই ঘটনায় আশপাশের সমগ্র গোত্রের ওপর মুসলমানদের মোটামুটি আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হলোএর ফলে দূর-দূরান্ত এলাকার গোত্রসমূহ পর্যন্ত ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট হলো এবং হাজার হাজার লোক ইসলাম গ্রহণ করলো

এর মধ্যে সবচেয়ে আলোড়ন সৃষ্টিকারী ঘটনা হলো এই যে, ফারওয়া বিন আমর আল -জাজামী নামক রোমক বাহিনীর একজন অধিনায়ক ইসলামের শিক্ষায় আকৃষ্ট হয়ে মুসলমান হয়েছিলেনএই ব্যক্তি তাঁর ঈমানদারীর কি বিরাট প্রমাণ দিয়েছিলেন, তাও লক্ষ্য করবার মতোতাঁকে বন্দী করে দরবারে এনে রোম সম্রাট কাইসার বললো :

ইসলাম ত্যাগ করে আপন পদে পুনর্বহাল হও, নতুব মৃত্যুর জন্যে প্রস্তুত হয়ে যাও
জবাবে তিনি পদমর্যাদার ওপর পদাঘাত হেনে বললেন : আখিরতের সাফল্যের বিনিময়ে দুনিয়ার নেতৃত্ব গ্রহণ করতে আমি প্রস্তুত নইঅবশেষে তাঁকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হলোএই ঘটনার ফলে হাজার হাজার লোক ইসলামের নৈতিক শক্তি এবং তার যথার্থ গুরুত্ব উপলব্ধি করতে পারলোতারা বুঝতে পারলো যে, প্রবল সয়লাবের ন্যাগ অগ্রসরমান এই আন্দোলনের মুকাবিলা করা কোনো চাট্টিখানি কথা নয়

কাইসারের পক্ষ থেকে হামলার প্রস্তুতি

পর বছরই রোম সম্রাট কাইসার মুসলমানদের কাছ থেকে মুতাযুদ্ধের প্রতিশোধ গ্রহণের জন্যে সিরীয় সীমান্তে সামরিক প্রস্তুতি শুরু করে দিলো এবং তার অধীনস্থ আরব গোত্রসমূহের নিকট থেকে সৈন্য সংগ্রহ করতে লাগলোএ প্রস্তুতির কথা নবী করীম (স) যথাযময়ে জানতে পারলেনএ মুহূর্তটি ছিলো মুসলমানদের পক্ষে অত্যন্ত সংকটজনকএ সময়ে সামান্য মাত্র গাফলতি দেখালেও সমস্ত কাজ বানচাল হয়ে যাবার সম্ভাবনা ছিলোএকদিকে মক্কা অভিযান ও হুনাইন যুদ্ধে পরাজিত আরব গোত্রগুলো মাথা তুলে দাঁড়াতো, অন্যদিকে শত্রু পক্ষের সঙ্গে সংযোগ রক্ষাকারী মদীনার মুনাফিকরাও ঠিক মাহেন্দ্রক্ষণে ইসলামী সমাজের মধ্যে ভয়ঙ্কর ফাসাদ সৃষ্টি করে দিতোতার ফলে যুগপ আন্দোলন ও সংগঠনকে সামলানোই অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়তোএমনি সময়ে রোমক শক্তির সর্বাত্নক হামলার মুকাবিলা করা মোটেই সহজ ব্যাপার ছিলো নাএমন কি, এই বিরাট হামলা মুকাবিলা করা মোটেই সহজ ব্যাপার ছিলো নাএমন কি, এই বিরাট হামলার মুকাবিলা করতে না পেরে কুফরের কাছে ইসলামী আন্দোলনের পরাজিত হবার আশংকা পর্যন্ত ছিলোএ সমস্ত কারণেই হযরত (স) তাঁর খোদা-প্রদত্ত অতুলনীয় দূরদৃষ্টির বলে অবিলম্বে সিদ্ধান্ত ঘোষণা করলেন যে, এ সময় কাইসার বাহিনীর মুকাবিলা করাই সমীচীনকারণ এ সময় আমাদের সামান্য মাত্র দুর্বলতা প্রকাশ পেলেও এতদিনের গড়া সমস্ত কাজ বানচাল হয়ে যেতে পারে

মুকাবিলা করার সিদ্ধান্ত

কিন্তু এ সময় মুসলমানদের পক্ষে যুদ্ধের জন্যে প্রস্তুতি গ্রহণ করা ছিলো এক কঠিন পরীক্ষার শামিলদেশে তখন দুর্ভিক্ষাবস্থা, তদুপরি প্রচণ্ড গ্রীষ্মকালক্ষেতের ফসল পাকতে প্রায় শুরু করেছিলোযুদ্ধের সামান-পত্রও পুরো ছিলো নাসফর ছিলো দীর্ঘ পথের সর্বোপরি মুকাবিলা ছিলো এক বিশাল বাহিনীর সঙ্গেএতদসত্ত্বেও নবী করীম (স) পরিস্থিতির নাজুকতা উপলব্ধি করে যুদ্ধের কথা ঘোষণা করলেন এবং কোথায় কি উদ্দেশ্যে যেতে হবে, তাও সুস্পষ্টভাবে বলে দিলেন

প্রসঙ্গত মনে রাখা দরকার যে, এতদিন ইসলামী আন্দোলন শুধু খোলাখুলিভাবে বহিঃশত্রুর সঙ্গেই মুকাবিলা করে আসছিলোআর মক্কা বিজয় ও হুনাইন যুদ্ধের পর বিরুদ্ধবাদীদের মেরুদণ্ড ভেঙে পড়েছিলোকিন্তু এ যাবত ঘরোয়া শত্রু অর্থা মুনাফিকদের সঙ্গে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ক্ষমাসুলভ আচরণই করা হচ্ছিলোএর একটি কারণ ছিলো এই যে, একই সঙ্গে ঘরের ও বাইরের শত্রুদের সাথে সমানে যুদ্ধ চালিয়ে যাবার জন্যে প্রয়োজনীয় দৃঢ়তা ও স্থিতিশীলতা এতদিন ইসলামী আন্দোলন হাসিল করতে পারেনিদ্বিতীয় কারণ এই যে, মুনাফিকদের মধ্যে সবাই একই ধরনের লোক ছিলো নাতাদের মধ্যে কিছু লোকের হৃদয়ে হয় ঈমানের দুর্বলতা ছিলো, নতুবা কিছু কিছু ক্ষেতে তারা শোবা-সন্দেহ পোষণ করতোএই ধরণের লোকদের আপন দুর্বলতা ও শোবা-সন্দেহ থেকে মুক্ত হবার জন্যে একটা যুক্তিসঙ্গত সময় পর্যন্ত সুযোগ দেবার প্রয়োজন ছিলোঅন্যদিকে ইসলামের মূলোচ্ছেদ করার জন্যে মুসলমানদের মধ্যে ঢুকে পড়েছে, এমন সব দুশমনদেরকেও ভালমতো চিহ্নিত করে নেয়া একান্ত আবশ্যক হয়ে পড়েছিলোতাই এতদিন পর্যন্ত এই সব লোককে নরম - গরম সকল প্রকারেই বুঝাবার চেষ্টা করা হয়েছেএর ফলে যাদের ভেতর সামান্য মাত্রও যোগ্যতা ছিলো, তারা সোজা পথে চলে এলোকিন্তু এক্ষণে সে সুযোগটিও শেষ হয়ে গেলোমুসলমানরা দেশের ভেতরকার বিরুদ্ধবাদীদের বহুলাংশে প্রভাবাধীন করে নিয়েছেনএবার বিদেশী শক্তির সঙ্গে তাদের মুকাবিলা শুরু হতে যাচ্ছেএমনি নাজুক অবস্থার কারণেরই ঘরোয়া শত্রুদের মাথা গুড়িয়ে দেবার প্রয়োজন দেখা দিয়েছিলোনচেত এরা বাইরে শত্রুদের সঙ্গে যোগ সাজশে কখন কি ক্ষতি করে বসে, কে জানে!

মুনাফিকদের মুখোশ উন্মোচন

মুনাফিকদের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত ব্যবস্থা গ্রহণের পূর্বে কয়েকটি জিনিসের একান্ত প্রয়োজন ছিলোযেমনঃ তাদের খোলাখুলিভাবে সামনে আসা, তাদের চেহারা থেকে ঈমান ও ইসলামের মুখোশ অপসারিত হওয়া, তাদের আসল পরিচয়টা গোটা ইসলামী সমাজের জেনে নেয়া, সর্বোপরি মুসলমানদের ব্যাপারে মুসলমান হিসেবে তাদের নাক গলানো এবং ইসলামী সমাজ সংগঠনে সাচ্চা মুসলমানদের ন্যায় মর্যাদা লাভের সুযোগ না থাকাতাই তাবুক যুদ্ধের এই ঘোষণা মুনাফিকদের মুখোশ উন্মোচনে অত্যন্ত কার্যকর প্রমাণিত হলোযারা ঈমানের দাবিতে সত্যবাদী ছিলো, এ সময়ে তারা মনে-প্রাণে জিহাদের জন্যে তৈরি হয়ে গেলোতারা অর্থ-কড়ি র প্রয়োজন হওয়ামাত্র যার কাছে যা ছিলো, সবই এনে হাযির করলোএমন কি সওয়ারীর অভাবে হযরত (স)-এর সহযাত্রী হবার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হওয়ায় কিছু লোক কেঁদে ফেললোএভাবে এসলামী সমাজ সংগঠনে কে কে নিষ্ঠাবান ছিলো, তা সুস্পষ্টভাবে জানা গেলো

পক্ষান্তরে যাদের হৃদয়ে ঈমানের নাম-নিশানা ছিলো না, যুদ্ধের ঘোষণা শুনেই যেনো তাদের প্রাণবায়ু বেরিয়ে যাবার উপক্রম হলোতারা নানারূপ বাহানা ও অজুহাত তালাশ করতে লাগলো এবং যুদ্ধে যাবার জন্যে হযরত (স)-এর কাছে প্রার্থনা করতে লাগলোএ সময়ও হযরত (স) তাদের সঙ্গে নম্র ব্যবহারই করলেন এবং এদের সবাইকে যুদ্ধ থেকে অব্যাহতি দিলেনকিন্তু এই মুনাফিকদের দল শুধু নিজেরাই যুদ্ধ হতে বিরত থেকে ক্ষান্ত হলো না; বরং এরা অন্যান্য লোকদেরও বিরত রাখার এবং নিরুসাহিত করার চেষ্টা করতে লাগলো

এরা কখনো বলতে লাগলো, ‘এতো প্রচণ্ড গরমে যুদ্ধে গিয়ে কি তোমরা প্রাণ হারাবে?’ আবার কখনো বললো : এতো হচ্ছে জেনে-শুনে নিজেকে ধ্বংসের মুখে নিক্ষেপ করামোটকথা যুদ্ধের ঘোষণা এমন এক কষ্টিপাথরের কাজ করলো যে, সাচ্চা মুমিন আর মুনাফিকদের চেহারা স্পষ্টত পৃথক হয়ে গেলোএর ফলে এই শ্রেণীর লোকদের বিরুদ্ধে যথোচিত ব্যবস্থা গ্রহণের মোক্ষম সুযোগ পাওয়া গেলোএ ব্যাপারে হযরত (স) তাবুক থেকে প্রত্যাবর্তনের পর যে ব্যবস্থা গ্রহণ করেন, তা যথাস্থানে আলোচিত হবে

তাবুকের উদ্দেশ্যে রওয়ানা

অবশেষে নবম হিজরীর রজব মাসে হযরত (স) ত্রিশ হাজার সৈন্য নিয়ে মদীনা হতে যাত্রা করলেন; এর মধ্যে মাত্র দশ হাজার ছিলো অশ্বারোহীউটের সংখ্যা এতো কম ছিলো যে, একটি উটের পিঠে পালাক্রমে কয়েকজন করে সৈন্য সওয়ার হতে লাগলোএরপর ছিলো গ্রীষ্মের প্রচন্ডতা এবং পানির অভাবকিন্তু এতদসত্ত্বেও সাচ্চা মুমিনগণ এ সময় তাদের ঈমানের পরাকাষ্ঠা, নবীর আনুগত্য এবং আল্লাহর পথে আত্নোসর্গের যে আগ্রহ প্রদর্শন করলো, আল্লাহ তা মঞ্জুর করলেন এবং এর বিনিময়ে তিনি এমন ব্যবস্থা করে দিলেন যে মদীনা থেকে নবী করীম (স)-এর রওয়ানা করার উদ্দেশ্য বিনা যুদ্ধেই হাসিল হয়ে গেলোনবী করীম (স) তাবুক পৌঁছেই জানতে পারলেন যে, রোম সম্রাট কাইসার সীমান্ত থেকে তার সৈন্য প্রত্যাহার করে নিয়েছে; তাই যুদ্ধ করার মত সেখানে আর কেউ বর্তমান নেই

ব্যাপারটা ঘটেছিলো এই রকম : রোম সম্রাট যখন জানতে পারলো যে, তার এতবড়ো জবরদস্ত প্রস্তুতির খবর পেয়েও মুসলমানরা নিঃশংক চিত্তে তাদের মুকাবিলার জন্যে মদীনা থেকে যাত্রা করেছে এবং ক্রমাগত সামনের দিকে এগিয়ে আসছে, তখন সে নিজের সৈন্য সরিয়ে নেয়াই সমীচীন মনে করলোকারণ এর আগে মুতাযুদ্ধের সময় এক লাখ সৈন্যের মুকাবিলায় মাত্র তিন হাজার মুসলমান কিরূপ শৌর্য-বীর্য দেখিয়েছিলো, সে অভিজ্ঞতা সম্রাটের মন থেকে মুছে যায়নিনা জানি এবারও পরাজিত হয়ে তার মান-ইজ্জতটুকু একেবারে খতম হয়ে যায়! তাই যখন সে জানতে পারলো, এবার তিন হাজার নয়, ত্রিশ হাজার সৈন্য নিয়ে নবী করীম (স) আসছেন, তখন সে এ সয়লাবের মুকাবিলা না করারই সিদ্ধান্ত করলো

তাবুকে অবস্থান

কাইসারের এভাবে ময়দান থেকে পশ্চাদপসারণ করাকেই নবী করীম (স) যথেষ্ট মনে করলেনএরপর তার পশ্চাদ্ধাবনে কালক্ষেপণ করার চেয়ে তিনি ঐ এলাকায় নিজের প্রভাবকে মজবুত করাকে সমীচীন মনে করলেনতিনি বিশ দিন সেখানে অবস্থান করলেনএ সময়ে রোম সাম্রাজ্য ও ইসলামী রাষ্ট্রের মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত এবং রোমকদের প্রভাবাধীন কতকগুলো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাজ্যকে তিনি নবীন ইসলামী রাষ্ট্রের অধীনস্থ করে নিলেনএভাবে যে সব আরব গোত্র এতদিন রোম সম্রাটের সমর্থক ছিলো, তারা ইসলামী রাষ্ট্রের সমর্থক ও সাহায্যকারী বনে গেলো

মুনাফিকদের চালবাজি

হযরত (স) যখন তাবুক অভিযানে রওয়ানা করলেন, তখন ইসলামী সমাজ-সংগঠনে অনুপ্রবেশকারী কপট মুসলমানরা মদীনায় পড়ে রইলোতাদের নিশ্চিত বিশ্বাস ছিলো, মুসলমানরা এ অভিযান থেকে আর নিরাপদে ফিরে আসবে নাতাদের কিছু অংশ গ্রীষ্মের প্রচন্ডতা ও সফরকালীন মুসিবতে নিক্ষিপ্ত হবেআর তা না হলেও কাইসারের বিপুল সৈন্যেরা মুকাবিলায় তারা নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবেএই মুনাফিকদের দল মদীনায় একটি চক্রান্তের মসজিদও৫২ বানিয়ে নিয়েছিলোসেখানে তারা নামাযের বাহানায় সাধারণ মুসলমানদের থেকে আলাদাভাবে জমায়েত হতো এবং গোপন সলা-পরামর্শ করতোতারা এই সংকটকালে ইসলামী আন্দোলনের ওপর চরম আঘাত হানবার জন্যে নানারূপ ষড়যন্ত্র উদ্ভাবন করতে লাগলোএমন কি, তারা এই সিদ্ধান্ত পর্যন্ত করে বসলো যে, তাবুক যুদ্ধের ফলাফল জানবার পরই (যদিও এ ব্যাপারে তারা নিশ্চিত ছিলো যে, মুসলমানদের পরাজয়ই হবে যুদ্ধের একমাত্র ফলাফল) আব্দুল্লাহ বিন্‌ উবাইকে মদীনার বাদশাহ নিযুক্ত করা হবে

কিন্তু আল্লাহ তাআলার অভিপ্রায় ছিলো অন্য রকমএবার ইসলামের পরাজয় সম্পর্কে মুনাফিক ও কাফিরদের সমস্ত আশা-ভরসাই চূড়ান্তভাবে বিলীন হওয়ার সেই প্রতীক্ষিত সময়টি ঘনিয়ে এলোতাই তাবুকের এই বিনা -যুদ্ধে বিজয়ের কথা জানতে পেরে দুশমনদের মেরুদণ্ড একেবারে ভেঙে পড়লোতাদের মনে হতে লাগলো, এবার তাদের আশা - ভরসার শেষ সম্বলটুকুও হাতছাড়া হয়ে গেলোতাবুক থেকে প্রত্যাবর্তনের পর হযরত (স)-এর সামনে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ ছিলো :

১. মুনাফিকদের সম্পর্কে সুস্পষ্ট নীতি গ্রহণ এবং তাদের গোপন চক্রান্ত থেকে ইসলামী আন্দোলনকে সুরক্ষিত করার পরোপুরি ব্যবস্থা করা;

২. মুমিন ও সত্যসন্ধ লোকদের প্রশিক্ষণ দান এবং তাদের চরিত্র গঠন করে নবী করীম (স)-এর তত্ত্বাবধানে গড়ে উঠা স লোকদের এই দলটিকে সর্বতোভাবে নিখুঁত করে তোলা এবং সত্যের সাক্ষ্য’ (শাহাদাতে হক) দানের যে দায়িত্ব শীগগীরই তাদের ওপর ন্যস্ত হতে যাচ্ছে, তা যথাযথভাবে পালনের উদ্দেশ্যে তাদেরকে প্রস্তুত করে রাখা;

৩. যে সব মৌল নীতির ভিত্তিতে এই নয়া ইসলামী রাষ্ট্রকে গড়ে তুলতে হবে, দারুল ইসলামের সেই সব নীতি সুস্পষ্টরূপে ঘোষণা করা

মুনাফিকদের সাথে আচরণ

তাবুক থেকে হযরত (স)-এর মদীনায় প্রত্যাবর্তন কালে পথিমধ্যেই সূরা তাওবা নাযিল হলোএতে মদীনায় ফিরেই হযরত (স)--কে কার্যকর করতে হবে, আল্লাহ তাঁকে এমনতরো কতিপয় নির্দেশ প্রদান করলেনএ যাবত মুনাফিকদের ব্যাপারে জন বাঁচানোর জন্যে পেশকৃত অক্ষমতাকে মেনে নেয়া হয়েছিলো, তা সম্পূর্ণ বদলে ফেলার নির্দেশ দেয়া হলোতারপর সুস্পষ্ট ভাষায় বলে দেয় হলো : তাদের সঙ্গে এখন আর নমনীয় নয়, কঠোর ব্যবহার করতে হবে; তারা তাদের ঈমানের দাবিকে সত্য প্রমাণের জন্যে আর্থিক সাহায্য দিতে চাইলে তা গ্রহণ করা যাবে না; তাদের ভেতরকার কেউ মারা গেলে নবী করীম (স) তার জানাযা পড়াতে পারবেন না; সর্বোপরি ব্যক্তিগত ও পারিবারিক সম্পর্কের কারণেও মুসলমানরা তাদের সঙ্গে আন্তরিক ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রাখতে পারবে না

আবু আমেরের ষড়যন্ত্র

হযরত (স)-এর মদীনা আগমনের পূর্বে আবু আমের নামক জনৈক খ্রিষ্টান পাদ্রীর দরবেশী ও পাণ্ডিত্য সম্পর্কে মদীনায় খুব খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছিলোএকজন খোদাভক্ত জ্ঞানী হিসেবে লোকেরা তাকে খুব শ্রদ্ধা করতোহযরত (স)-এর মদীনায় আসার পর এই দরবেশী ও খোদাভক্তির তাগিদেই তার উচিত ছিলো সত্যের আলো থেকে ফায়দা হাসিল করা এবং সবার আগে খোদা-ভক্তির নির্ভুল ধারণাকেক গ্রহণ করাকিন্তু ইলম, কালাম ও তাকওয়ার অহমিকা এবং রেওয়াজী ও গতানুগতিক ধার্মিকতার মোহ যেমন মানুষকে সত্যের আলো গ্রহণ থেকে বিরত রাখে, তেমনি আবু আমেরের ওপরও ইসলামী দাওয়াতের প্রতিকূল প্রভাব পড়লোধার্মিকতার ব্যবসায়ে তার বিবেক-বুদ্ধি আচ্ছন্ন হয়ে গিয়েছিলোসে বুঝতে পারলো, তার ভণ্ড দরবেশী ও পীরবাদী ব্যবসা এই নয়া আন্দোলনের মুকাবিলায় টিকতে পারে নাএ কারণে সে ইসলামী আন্দোলনের সবচেয়ে বড়ো দুশমন হয়ে দাঁড়ালো

প্রথমত সে আশা করেছিলো যে, এ-তো কেবল দুদিনের চমক মাত্রএরূপ কঠোর খোদাভক্তি ও দ্বীনদারী কি করে টিকে থাকে? কিন্তু বদর যুদ্ধে কুরাইশদের শোচনীয় পরাজয় দেখেই তার টনক নড়ে উঠলোতারপর থেকে সে কুরাইশ ও অন্যান্য আরব গোত্রকে ইসলামে বিরুদ্ধে উত্তেজিত করার জন্যে আদা-পানি খেয়ে লাগলোওহুদের যুদ্ধ ও খন্দকের (আহযাবের) হামলার সময় মুসলমানদের সামনে এরই কিছু নমুনা প্রকাশ পেয়েছিলোএমন কি, এই ঈসায়ী আহলি কিতাব মুসলমানদের বিরুদ্ধে মুশরিকদের সাথে গোপন আঁতাত স্থাপন করতে এবং তওহীদের আলোকবর্তিকাকে নিভানোর জন্যে শিরকের প্রচার করতে এতটুকু লজ্জাবোধ করেনিকিন্তু আল্লাহর এই ঘোষণা যখন প্রকাশ পেল যে, এ আলোকবর্তিতকাকে ফুকার দ্বারা নিভানো যাবে না এবং ইসলামই তামাম আরব উপদ্বীপে বিজয়ী দ্বীন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত থাকবে, তখন এই খোদাভক্ত দরবেশের (?) অস্থিরতা চরমে গিয়ে পৌঁছলএপর অল্প দিনের মধ্যেই সে বিদেশে গিয়ে বিপদ - সংকেত বাজানো এবং এই ক্রমবর্ধমান সয়লাবকে প্রতিরোধ করার নিমিত্তে কাইসারকে উদ্বুদ্ধ করার জন্যে রোম সফরে গেলো

চক্রান্তের মসজিদ

আবু আমেরের এই সব চক্রান্তে মদীনার মুনাফিকরা তার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিলোএরা আমেরের সাথে মিলে গোপনে পরামর্শ করে ইসলামী আন্দোলনকে নিশ্চিহ্ন করার পন্থা উদ্ভাবন করতোতাই আবু আমেরের পরামর্শক্রমে মুনাফিকের দল নিজেদের জন্যে একটি পৃথক মসজিদ বানানোর সিদ্ধান্ত করলো৫৩ ঐ মসজিদে তারা নামায পড়ার অজুহাতে জমায়েত হতো এবং মুসলমানদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র পাকাতো

তখন মদীনায় দুটি মসজিদ ছিলোএর একটি ছিলো শহরের উপকন্ঠে - কুবা নামক স্থানে আর অপরটি ছিলো শহরের মাঝখানে - মসজিদে নববী নামে যা পরিচিত দুয়ের উপস্থিতিতে কোন তৃতীয় মসজিদের আদতেই প্রয়োজন ছিলো নাকিন্তু কতিপয় বৃদ্ধ ও অক্ষম লোকের ঐ দুই মসজিদে যেতে কষ্ট হয়, এই অজুহাত তুলে মুনাফিকরা একটি তৃতীয় মসজিদ নির্মাণ করলোতারা কল্যাণ ও বরকতের সাথে এর উদ্বোধন করার নিমিত্ত এতে একবার নামায পড়ানোর জন্যে হযরত (স)-এর কাছে আবেদন জানালোসে আবেদনের জবাবে হযরত (স) বললেনঃ বর্তমানে আমি তাবুক অভিযানের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত; ফিরে আসার পর দেখা যাবেকিন্তু ফিরবার সময় পথিমধ্যেই এই চক্রান্তের মসজিদে হযরত (স)-এর নামায পড়ানো নিষিদ্ধ করে আল্লাহ তাআলা ওহী নাযিল করলেনএতে স্পষ্টত বলে দেয়া হলো যে, প্রকৃতপক্ষে এ জায়গাটি হচ্ছে মুসলমানদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করার একটি গোপন আড্ডা; আপনর নামায পড়ানোর উপযোগী নয়তাই হযরত (স) কতিপয় লোককে তাঁর মদীনায় প্রত্যাবর্তনের পূর্বেই উক্ত মসজিদ ধ্বংস করে ফেলার আদেশ দিলেনএভাবে উক্ত চক্রান্তের মসজিদ ধ্বংস করে মুনাফিকদের বিরুদ্ধে মুসলমানদের ভবিষ্যত কর্মনীতিই ঘোষণা করা হলোএরপর থেকে হযরত (স) এই কর্মনীতিই সর্বত্র অনুসরণ করলেন

মুমিনদের প্রশিক্ষণ ও তার পূর্ণতা

এখান থেকে ইসলামী আন্দোলন একটি ব্যাপকতর সংগ্রামের পর্যায়ে প্রবেশ করলোএবার আরবের এই মুষ্টিমেয় মুসলমানদের গোটা অমুসলিম দুনিয়ায় আল্লাহর দ্বীনের পয়গাম ছড়িয়ে দেয়ার অভিযানে বর্হিগত হবার সময় ঘনিয়ে এলোএহেন অবস্থায় মুসলিমদের ভেতরকার কোনো মামুলি দুর্বলতাও বিরাট অসুবিধার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারেতাই, এ সময় মুমিনদের প্রশিক্ষণের পূর্ণতা বিধানের প্রতি অত্যন্ত মনোযোগ দেয়া হলোতাদের ঈমানী দুর্বলাতার প্রতিটি আলামতকে বেছে বেছে চিহ্নিত করা হলো এবং অবিলম্বে তা দূর করার তাগিদ দেয়া হলো

তাবুক অভিযান কালে ঈমান ও ইসলামের মিথ্যা দাবিদার কিছু লোক যেমন পেছনে পড়েছিলো, তেমনি কিছু দুর্বল-চেতা মুমিনও মদীনায় থেকে গিয়েছিলোএরা সাচ্চা মুসলমান হওয়া সত্ত্বেও কোনো সাময়িক দুর্বলতা বা শৈথিল্যের কারণে এমনি গাফলতি করতে বাধ্য হয়েছিলোএরূপ দুর্বলতা যাতে আর কখনো প্রকাশ না পায়, সে জন্যে এই শ্রেণীর লোদের সংশোধন করার নিমিত্তে এ সময় অত্যন্ত কঠোর নীতি গ্রহণ করা হলোএ প্রসঙ্গে হযরত কাব বিন্‌ মালিক, হিলাল বিন্‌ উমাইয়া এবং মুরারা বিন্‌ রাবী (রা) এই তিনজন সাহাবীর কাহিনী অত্যন্ত শিক্ষামূলকতখন মুসলিমদেরকে কি ধরনের প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছিলো, এই কাহিনীর আলোকে তা অত্যন্ত সুন্দরভাবে আন্দাজ করা যায়এই সাহাবীত্রয় নিঃসন্দেহে সাচ্চা মুমিন ছিলেন এবং এর আগে তাঁদের ঈমানের আন্তরিকতাও প্রমাণিত হয়েছিলো; তবু নিছক শৈথিল্যের দরুন তাঁরা তাবুক অভিযানের সময় হযরত (স)-এর সহযাত্রী হতে পারেন নিএ জন্যে তাঁদেরকে অত্যন্ত কঠোরভাবে পাকড়াও করা হলোনবী করীম (স) তাবুক থেকে ফিরে এসে তাঁদের সঙ্গে কোনোরূপ সালাম-কালাম না করার জন্যে মুসলমানদেরকে নির্দেশ দিলেনচল্লিশ দিন পর তাঁদের স্ত্রীদেরকেও আলাদা থাকবার নির্দেশ দেয়া হলোঅতঃপর পঞ্চাশ দিন পর আল্লাহ তাআলা তাঁদের তওবা কবুল করলেন এবং তাঁদেরকে ক্ষমা করবার হুকুম দিলেনএর ভিতর হযরত কা বিন্‌ মালিকের কাহিনীটি সর্বাধিক শিক্ষামূলক বিধায় তাঁর জবানীতেই এখানে উদ্ধৃত করা হলো

হযরত কা'বের কাহিনী

হযরত (স) যখন তাবুক অভিযানের উদ্দেশ্যে মুসলমানদেরকে তৈরি করছিলেন, তখন আমিও তাঁর সঙ্গে চলার জন্যে প্রস্তুতি নেয়ার ইচ্ছা করলামকিন্তু তারপর গাফলতি করতে লাগলামঃ এতো তাড়াহুড়া কেন, সময় যখন আসবে তখন তৈরি হতে বিলম্ব হবে নাএইভাবে ব্যাপারটা পিছিয়ে যেতে লাগলোএমন কি যখন রওয়ানা করার সময় এলো, তখন আমি সম্পূর্ণ অপ্রস্তুত ছিলামমনে মনে বললাম : সৈন্যরা চলে যাক, আমি দু একদিন পর রওয়ান করেও কাফেলার সঙ্গে গিয়ে মিলিত হতে পারবোমোটকথা, এমনি গাফলতির মধ্যেই সময় চলে গেলো; আমি ও আর যেতে পারলাম না

অবশেষে যখন দেখতে পেলাম যে, যাদের সঙ্গে আমি পিছনে পড়ে রয়েছি, তারা হয় মুনাফিক নতুবা এমন দুর্বল যে, আল্লাহই তাদের অক্ষম করে রেখেছেন, তখন আমার হৃদয় অপরিসীম চাঞ্চল্যে উথলে উঠলোনিজের সম্পর্কে আমার অত্যন্ত আফসোস হলো

নবী করীম (স) অভিযান থেকে ফিরে এসেই অভ্যাস মতো মসজিদে গিয়ে দু রাআত নামায পড়লেনঅতঃপর লোকদের সঙ্গে সাক্ষাত করার জন্যে বসলেনএবার মুনাফিকরা এসে তাদের ওজর পেশ করতে লাগলোতারা কসম করে তাদের অক্ষমতা সম্পর্কে হযরত (স)-কে নিশ্চয়তা প্রদান করতে লাগলোএরূপ লোকের সংখ্যা আশির চেয়ে কিছু বেশি ছিলোহযরত (স) তাদের সমস্ত মনগড়া কথা শুনলেন এবং তাদের প্রকাশ্য ওজর কবুল করে তার গোপন রহস্য খোদার ওপর ছেড়ে দিলেনএভাবে তাদেরকে মাফ করে দেয়া হলো

এরপর এলো আমার পালাআমি সামনে গিয়ে সালাম নিবেদন করলামহযরত (স) আমার দিকে চেয়ে একটু মুচকি হাসলেন এবং বললেন, ‘বলো কি জিনিস তোমায় বিরত রেখেছিলো?’ আমি বললাম : খোদার কসম, আমি যদি কোনো দুনিয়াদারের সামনে হাযির হতাম তো অবশ্যই কোনো-না-কোন মনগড়া কথা বলে তাকে রাযী করিয়ে নিতামকিন্তু আপনার সম্পর্কে তো এই ঈমানই পোষণ করি যে, এখন যদি কোনো বানোয়াট কথা বলে আপনাকে রাযী করিয়ে নিই, তাহলে আল্লাহ অবশ্যই আমার প্রতি আপনাকে নারাজ করে দেবেনকাজেই সত্য কথা বললে আপনি যদি অসন্তুষ্টও হন, তবুও আশা করবো, আল্লাহ আমার ক্ষামা জন্যে কোনো-না-কোন উপায় বের করে দেবেনইসত্য কথা এই যে, আপনার কাছে উত্থাপন করার মতো কোনো ওজরই আমার নেইআমি অভিযানে যেতে পুরোপুরি সমর্থ ছিলাম

এরপর হযরত (স) বললেন : এ লোকটি নিশ্চয়ই সত্য কথা বলেছেআচ্ছা উঠে যাও এবং আল্লাহ তাআলা তোমাদের ব্যাপারে কোন সিদ্ধান্ত করা পর্যন্ত অপেক্ষা করোআমি উঠে গিয়ে আপন গোত্রের লোকদের সঙ্গে বসলামঅতঃপর আমার ন্যায় আরো দুই ব্যক্তি -মুরারা বিন রাবী এবং হিলাল বিন্‌ উমাইয়াও একইরূপে সত্য কথা বললো

এরপর আমাদের সঙ্গে কারো কথাবার্তা না বলার জন্যে নবী করীম (স) নির্দেশ দিলেনএর ফলে অপর দুই ব্যক্তি ঘরেই বসে রইলোকিন্তু আমি বাইরে বের হতাম, জামাআতের সঙ্গে নামায পড়তাম, বাজারে চলাফেরা করতামকিন্তু কেউ আমার সঙ্গে কথা বলতো নাআমার মনে হতো, দুনিয়াটা যেন একেবারে বদলে গেছে, আমি একজন নবাগত, এখানে আমার কেউ পরিচিত নয়মসজিদে নামায পড়তে গেলে নবী করীমস)-কে সালাম করতাম এবং জবাবের জন্যে তাঁর ওষ্ঠদ্বয় নড়ে কি-না, তা দেখবার জন্যে শুধু ইন্তেজার করতামহযরত (স) আমার প্রতি কিরূপ দৃষ্টি নিক্ষেপ করেন, নামাযের মধ্যে তা আড়চোখে দেখতামআম যতক্ষণ নামায পড়তাম, হযরত (স) আমার দিকে চেয়ে থাকতেন; যখনই সালাম ফিরাতাম, তখন আমার দিক থেকে তিনি দৃষ্টি সরিয়ে নিতেন (

একদিন আমি ভয়ে ভয়ে আমার চাচাত ভাই এবং বাল্যবন্ধু আবু কাতাদার কাছে গেলামতার বাগানের প্রাচীরের ওপর উঠে তাকে সালাম করলাম; কিন্তু আল্লাহর এই বান্দাহ সালামের জবাবটি পর্যন্ত দিলো নাআমি বললাম : আবু কাতদাহআমি তোমায় খোদার কসম দিয়ে জিজ্ঞেস করছি, আমি কি খোদ এবং তাঁর রসূলকে ভালবাসি না’? সে নিরুত্তর রইলোআবার জিজ্ঞেস করলামএবারও সে নিরুত্তর রইলোতৃতীয় বারে শুধু এটুকু বললো, ‘আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলই ভালো জানেনএতে আমার চক্ষু দিয়ে অশ্রু বেরিয়ে এলোআমি প্রাচীর থেকে নেমে এলাম

এ সময় একদিন আমি বাজারের ভিতর দিয়ে যাচ্ছিলাম, এমনি সময় সিরিয়ার একটি লোক আমায় শাহ গাসবানের একটি খামে-পোরা চিঠি দিলোআমি খুলে পড়লামতাতে লেখা ছিলো : আমরা শুনেছি, তোমাদের সাহেব তোমার ওপর ভীষণ উপীড়ন চালাচ্ছেতুমি আমাদের কাছে এসো, আমরা তোমায় কদর করবোআমি বললাম, এ আর এক বিপদ দেখছিকক! তক্ষুণি চিঠিখানি চুলায় নিক্ষেপ করলাম

চল্লিশ দিন এমনিভাবে অতিক্রম করার পর নবী করীম (স)-এর আদেশ এলো, ‘আপন স্ত্রী থেকে আলাদা হয়ে যাওআমি জিজ্ঞেস করলাম তাকে কি তালাক দিয়ে দেবো? জবাব পেলাম, ‘না শুধু আলাদা থাকোআমি আমার স্ত্রীকে তার পিত্রালয়ে পাঠিয়ে দিলাম এবং বললাম, এ ব্যাপারে আল্লাহ তাআলার কোন সিদ্ধান্ত আসা পর্যন্ত ইন্তেজার করো

পঞ্চাশতম দিন সকালে নামাযের পর আমি আপন গৃহের ছাদের ওপর বসেছিলাম এবং নিজের জীবনকে ধিক্কার দিচ্ছিলামএমনি সময় এক ব্যক্তি আমায় উপর্যুপরি ডেকে ডেকে বললো : মুবারক হোক কাব বিন মালিকআমি এ কথা শুনেই সিজদায় গেলামতারপর জানতে পারলাম, আমার জন্যে ক্ষমার হুকুম এসেছেএরপর দলে দলে লোক ছুটে আসতে লাগলো এবং একজন অন্যজনের আগে এসে আমায় এই বলে মুবারকবাদ দিতে লাগলো যে, তোমার তওবা কবুল হয়েছআমি উঠে সোজা মসজিদে নববীর দিকে গেলামদেখলাম, নবী করীম (স)-এর মুখমন্ডল খুশীতে ঝলমল করছেআমি সালাম করতেই তিনি বললেন, ‘তোমার মুবারক হোক, এই দিনটি তোমার জীবনের সবচেয়ে উত্তম দিনআমি জিজ্ঞেস করলাম, এ ক্ষমা কি হযরত (স)-এর তরফ থেকে, না খোদার তরফ থেকে? তিনি বললেন, ‘খোদার তরফ থেকেসেই সঙ্গে কুরআনের এই তওবা সংক্রান্ত আয়াতটি তিনি পড়ে শুনালেন

আমি বললাম : হে আল্লাহর রাসূল! আমার তওবার মধ্যে আমার সমস্ত ধন-সম্পদ খোদার পথে সদকা করে দেয়ার কথাও শামিল রয়েছেতিনি বললেন, ‘কিছু রেখে দাও, এটা তোমার জন্যে উত্তম হবেআমি তাঁর নির্দেশ মতো খায়বরের অংশটি রেখে বাকী সব সদকা করে দিলামঅতঃপর আমি আল্লাহর কাছে এই মর্মে প্রতিজ্ঞা করলাম : যে সত্যের বদলে আল্লাহ আময় ক্ষমা করে দিলেন, তার ওপর সরার জীবন আমি অবিচল থাকবোতাই আজ পর্যন্ত আমি জেনে-শুনে কোনো অসত্য কথা বলিনিআর আশা করি, ভবিষ্যতেও আল্লাহ এর থেকে আমায় রক্ষা করবেন