নবী (সাঃ)- ০৮।

ইসলামী সমাজের বৈশিষ্ট্য
এই কাহিনী থেকে সাহাবায়ে কিরামের সমাজ-জীবনের যে চিত্র ফুটে ওঠে, তার কতিপয় উজ্জ্বল বৈশিষ্ট্য প্রত্যেক মুমিনেরই সামনে রাখা উচিত। এ থেকে ইসলামী আন্দোলন স্বীয় অনুবর্তীদের ভেতর কিরূপ মেজাজ গড়ে তোলে, তা সহজে আন্দাজ করা যাবে।
প্রথম কথা এই যে, ইসলাম ও কুফরের মধ্যে যখন সংঘর্ষের প্রশ্ন দেখা দেয়, তখন মুমিনদের জন্যে অত্যন্ত কঠোর পরীক্ষার সময় এসে উপস্থিত হয়। এ সময় সামান্য মাত্র গাফলতির কারণেও সারা জীবনের পরিশ্রম পণ্ড হয়ে যেতে পারে। কারণ এমনি সময়ে কোনো মুমিন যদি ইসলামের সহায়তা না করে, তাহলে তার এই ত্রুটির পেছনে কোনো বদ্‌-নিয়্যাত না থাকলেও এবং এ রকম ত্রুটি সারা জীবনে একবার মাত্র সংঘটিত হলেও এরূপ ত্রুটির কারণে তার সারা জীবনের পুণ্য ও ইবাদত বরবাদ হয়ে যাবার আশংকা দেখা দিতে পারে। বস্তুত মুমিনদের জন্যে কখনো ইসলামের বদলে কুফরের সহায়তা করা অথবা কোনো অন ইসলামী আন্দোলনের পক্ষে উৎসাহব্যঞ্জক কর্মনীতি গ্রহণ করার আদৌ অবকাশ নেই। বিশেষত যখন অন-ইসলামী আন্দোলনের মুকাবিলায় কোনো ইসলামী আন্দোলন উপস্থিত থাকে, তখন মুমিনদের যোগ্য-প্রতিভা আল্লাহর দ্বীনকে সমুন্নত করার পরিবর্তে অন্য কাজে নিয়োজিত হলে অবস্থাটা আরা গুরুতর হয়ে দাঁড়ায়।
দ্বিতীয় কথা এই যে, ইসলামী আদর্শের পথে যখন কোনো কর্তব্য পালনের ডাক আসে, তখন মুমিনদের পক্ষে শৈথিল্য দেখানো মোটেই উচিত নয়। কারণ শৈথিল্য দেখাতে দেখাতেই কাজের সময় চলে যায়; অতঃপর এই ত্রুটির পেছনেকোনো বদ নিয়্যাত ছিলো না, এ ওজরেও কোনো ফলোদয় হয় না।
সাহাবায়ে কিরামের সমাজ-কাঠামোর এক অনন্য বৈশিষ্ট্য এই যে, মুনাফিকরা মনগড়া ওজর পেশ করছে এবং তারা মিথ্যা কথা বলছে, এটা সবারই জানা;তবু নবী করীম (স) শুধু তাদের মুখের কথা শুনেই তাদের সমস্ত অন্যায় মাফ করে দিলেন। কারণ, তারা কোনো পরীক্ষার সময় ঈমানের সত্যতা প্রমাণ করবে, এ আশা কখনো ছিলো না। পক্ষান্তরে এদের মুকাবিলায় ঈমান ও ইখলাসের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ কতিপয় সাচ্চা মুমিনের চরিত্র লক্ষ্যণীয়। মনগড়া ওজর তুলে পালানোর সুযোগ থাকা সত্ত্বেও এরা কেউ মিথ্যা কথা বলা পছন্দ করলেন না; বরং সুস্পষ্ট ভাষায় নিজেদের ত্রুটি স্বীকার করে নিলেন। কিন্তু এই স্বীকারোক্তির কারণেই তাঁদরেকে রেহাই দেয়া হলো না, বরং তাদের সঙ্গে অত্যন্ত কঠোর ব্যবহার করা হলো। এটা তাঁদের ঈমান ও ইখলাস সম্পর্কে কোনো সন্দেহ সৃষ্টির কারণে নয়; বরং এজন্যে যে, মুনাফিকদের উপযোগী কাজ তারা কেন করতে গেলেন?
পরন্ত এই অপরাধের জন্যে নেতা যে শাস্তি দিলেন এবং অনুবর্তী তা যেভাবে ভোগ করলেন, সর্বোপরি গোটা সমাজ যেভাবে নেতার অভিপ্রায় অনুযায়ী কাজ করলো, তার প্রতিটি দিকই অনুপম ও অতুলনীয়। নেতা খুব কঠোর শাস্তি দিলেন; কিন্তু ঘৃণা বা ক্রোধের বশবর্তী হয়ে নয়, প্রগাঢ় ভালোবাসা নিয়ে। কোনো স্নেহশীল পিতা যেমন অপরাধী পুত্রকে সাজা দেন এবং পুত্র সংশোধিত হলে আবার তাকে বুকে জড়িয়ে ধরাও প্রত্যাশা করেন, এ শাস্তি ঠিক তেমনি। শাস্তির কঠোরতায় অনুবর্তী অত্যন্ত অস্থির। কিন্তু কি আশ্চর্য! প্রিয় নেতার আনুগত্যের বদলে তাঁর অন্তরে না কোনো বিদ্রোহের ভাব জাগলো, না তিনি কোনো অভিযোগ করলেন আর না তাঁর কৃতিত্বের কোনো প্রতিদান চাইলেন। তারপর গোটা সমাজের মধ্যে নেতার হুকুম পালন করার ভাবধারা কতো তীব্র, তাও লক্ষ্যণীয়। যখনই আদেশ হলো যে, অমুক ব্যক্তির সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদ করতে হবে, তখন মনে হলো যেনো গোটা সমাজে তাঁর কোনো পরিচিত লোকেরই অস্তিত্ব নেই। আবার যখন তাঁর ক্ষমার কথা ঘোষিত হলো, তখন সবার আগে গিয়ে তাঁকে অভিনন্দন জানানোর জন্যে সমাজের প্রতিটি লোকই অস্থির হয়ে উঠলো।
বস্তুত নবীর আনুগত্যের এই নমুনাই কুরআন তার অনুসারীদের মধ্যে সৃষ্টি করতে চায়। আর ইসলামী আন্দোলনের কর্মী-কর্মাধ্যক্ষ্য ও নেতার মধ্যে এমনি ভাবধারা থাকাই বাঞ্ছনীয়। সাহাবীদের মধ্যে এমনি ভাবধারা থাকার কারণেই যখন অপরাধী দেখলেন, তাঁর চেয়ে বড়ো বড়ো অপরাধীও নিছক মিথ্যা বলে বেঁচে যাচ্ছে এবং সত্য কথা বলার জন্যেই তাঁকে কঠোরভাবে পাকড়াও করা হচ্ছে, তখন তাঁর ভেতর এতোটুকু ক্ষোভ পর্যন্ত জাগলো না, কোনোরূপ অসন্তোষও প্রকাশ পেলো না; বরং শাস্তি পাবার পর দীর্ঘ পঞ্চাশ দিন পর্যন্ত তিনি তা কঠোরভাবে ভোগ করলেন না; বরং শাস্তি পাবার পর দীর্ঘ পঞ্চাশ দিন পর্যন্ত তিনি তা কঠোরভাবে ভোগ করলেন। তাঁর সঙ্গে যে নির্মমতা করা হয়েছে, এরূপ ধারণাও তাঁর মনে এক মুহূর্তের তরেও ঠাঁই পেলো না। তাঁর অতীতের সমস্ত কৃতিত্ব ম্লান হয়ে গেলো; তাঁর ঈমান ও ইখলাস সম্পর্কে সন্দেহের সৃষ্টি হলো। অথচ তাঁর বদ-নিয়্যাত ছিলো না, তাঁর হৃদয়ও আল্লাহ এবং রাসূলের ভালবাসা থেকে শূন্য ছিলো না। পরন্ত তিনি ইসলামী সমাজ-সংগঠনের মধ্যে কোনো ষড়যন্ত্র পাকালেন না, লোকদেরকে বীতশ্রদ্ধ করে তুললেন না, অন্যান্য লোকদেররেকও নিজের সমর্থ বানিয়ে সমাজ-সংগঠনের মধ্যে উপদল সৃষ্টির চেষ্টা করলেন না; বরং নিতান্ত ধৈর্য ও প্রশান্তির সঙ্গে তিনি শাস্তি ভোগ করলেন এবং কবে তাঁর অপরাধ ক্ষমা করে দেয়া হবে, প্রতিটি মুহুর্তে সেই আশায় অতিবাহিত করলেন। এহেন আদর্শ কর্মনীতির ফলেই আল্লাহ তাআলা নিতান্ত দরদ পূর্ণ ভাষায় শাস্তিপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের ক্ষমার কথা ঘোষণা করলেন। বস্তুত মুসলিম হিসেবে এই হচ্ছে জীবনের সবচেয়ে বড়ো সাফল্য। আর আল্লাহ যাকে দান করেন, কেবল সে-ই এতোবড়ো অনুগ্রহ লাভ করতে পারে।
একজন লোকের ওপর ঈমান ও ইসলামের দাবি কতো খানি দায়িত্ব অর্পণ করে, এ সময় তাও সুস্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করা হলো। বলা হলো : প্রকৃত পক্ষে এ দাবির পর মুমিনদের নিজস্ব বলতে আর কিছুই থাকে না; কারণ পবিত্র কুরআনের শিক্ষানুযায়ী ‘আল্লাহ তা‘আলা জান্নাতের বিনিময়ে মুমিনদের জান ও মাল খারদ করে নিয়েছেন।’ (সূরা তাওবা : ১১)।
বস্তুত ঈমানের এই ব্যাখ্যা যতক্ষণ লোকের মনের মধ্যে দৃঢ়ভাবে বদ্ধমূল না হবে এবং প্রতি মুহূর্ত তা সামনে না থাকবে, ততক্ষণ দ্বীনের দাবি পূরণে সে অবশ্যই শৈথিল্য দেখাবে। আল্লাহ তা‘আলা ঈমানকে মুমিন ও আল্লাহর মধ্যকার একটা চুক্তি বলে উল্লেখ করেছেন। এ চুক্তি হচ্ছে এই যে, বান্দাহ তার আপন সত্তা ও ধন-মালকে যেনো আল্লাহর কাছে বেচে দিলো এবং তার বিনিময়ে আল্লাহ মৃত্যুর পরবর্তী অনন্ত জীবনে তাকে জান্নাত দান করবেন-এই প্রতিশ্রুতিকে গ্রহণ করলো।
সত্য কথা বলতে গেলে মানুষের জান, মাল সব কিছু আল্লাহরই সম্পদ। তিনিই এসব জিনিস সৃষ্টি করেছেন আর তিনিই এর প্রকৃত মালিক। এমতাবস্থায় বান্দাহ আল্লাহর কাছে বেঁচতে পারে তার এমন নিজস্ব কোন জিনিসট রয়েছে? এভাবে বেচা-কেনার তো প্রশ্নই উঠতে পারে না। কিন্তু তা সত্ত্বেও আল্লাহ মানুষকে একটা স্বাধীন কর্মক্ষমতা দান করেছেন এবং তাকে আপন ইচ্ছানুযায়ী কাজে লাগাবার ইখতিয়ারও দিয়েছেন। ইচ্ছাশক্তি ও কর্মক্ষমতার এই স্বাধীনতাবলে মানুষ আল্লাহর দেয়া জান ও মালকে ইচ্ছা করলে আল্লাহরই সম্পত্তি বলে মানতে পারে- প্রকৃতপক্ষে যেরূপ হওয়া উচিত- আবার ইচ্ছা করলে সে নিজেকেই ঐ জিনিসগুলোর মালিক বলে দাবি করতে পারে- যদিও সে ঐগুলোর মালিক নয়। এই উভয় প্রকার স্বাধীনতাই তাকে দান করা হয়েছে। মানুষ ইচ্ছা করলে খোদার প্রতি বিমুখ হয়ে তার জান ও মালকে নিজের ইচ্ছা-প্রবৃত্তি কিংবা তারই মতো অন্য মানুষের ইচ্ছা-প্রবৃত্তি অনুযায়ী যদৃচ্ছ ব্যবহার করতে পারে অথবা ইচ্চা করলে প্রকৃত মালিককে মেনে নিয়ে তাঁর দেয়া জান-মালকে তাঁরই মর্জী মাফিক কাজে লাগাতে পারে এবং এভাবে তার কাছে গচ্ছিত জিনিসগুলো যে প্রকৃতপক্ষে আল্লাহরই আমানত এবং এগুলোর ব্যবহারে সে স্বাধীন কিংবা অবাধ ক্ষামতার অধিকারী নয়ত এ সত্যকে সে স্বীকৃতি দিতে পারে। এই উভয়বিধ ক্ষমতাই তাকে দেয়া হয়েছে।
আল্লাহ তা’আলা যে বিষয়টিকে অনুগ্রহবশত বেচা-কেনা বলে আখ্যা দিয়েছেন, ইচ্ছাশক্তি ও কর্মক্ষমতার এই সামান্য স্বাধীনতাই হচ্ছে তার মূল ভিত্তি। আল্লাহ তা’আলা বান্দাহকে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন যে, ইচ্ছা ও ইখতিয়ারের অধিকারী হওয়া সত্ত্বেও তুমি আমার গচ্ছিত আমানতকে যদি খেয়ানতের কাজে না লাগাও বরং আমারই মর্জি মাফিক তা কাজে ব্যববহার করো, তাহলে এই স্বল্পায়ু জীবনের পরবর্তী অনন্ত জীবনে আমি তোমায় বেহেশতের সুখ-সম্পদে সম্মানিত করবো। সুতরাং যে ব্যক্তি এক্ষণে আল্লাহ তা’আলার এই দাবি ও প্রতিশ্রুতিকে মেনে নিয়ে নিজের জান ও মালকে তারই পছন্দনীয় কাজে ব্যবহার করার স্বীকৃতি দেয়, সে-ই হচ্ছে ঈমানদার এবং তার এ স্বীকৃতিকেই আল্লাহ তা’আলা বেচা-কেনা বলে অভিহিত করেছেন। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি এ দাবি ও প্রতিশ্রুতিকে অগ্রাহ্য করে নিজের জান- আল্লাহর মর্জির বিরুদ্ধে ব্যবহার করে, সে প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর সঙ্গে এই বেচা-কেনার কারবার করতেই অস্বীকৃতি জানায়। তাই আল্লাহর দৃষ্টিতে সে হচ্ছে কাফির এবং তার এই অস্বীকৃতিই হচ্ছে কুফর।
তাবুক যুদ্ধের সময় নবী করীম (স) যে সব লোককে প্রস্তুতি গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছিলেন, তারা সবাই ছিলো ঈমামানের দাবিদার। এরা সকলেই আল্লাহ তা‘আলার সঙ্গে উপরোল্লিখিত বেচা-কেনার চুক্তি করেছিলো। কিন্তু যখন তাদের দাবি প্রমাণে সময় এলো তখন তাদের কিছু লোক পরীক্ষায় সমম্পূর্ণ উত্তীর্ণ হতে পারলো না। তারা আপন জান ও মালকে আল্লাহর পথে উৎসর্গ করা থেকে বিরত রইলো। এদের মধ্যে বেশির ভাগই ছিলো মুনাফিক। তাদের ঈমানেনর দাবি ছিলো মিথ্যা। তারা শুধু অক্ষমতা বা চাপের ফলেই ইসলামী সংগঠনে অনুপ্রবেশ করেছিলো। কিন্তু তাদের সঙ্গে কতিপয় দুবর্বলচেতা লোকও ছিলেন, যাঁরা শুধু গাফলতি ও শৈথিল্যর দরুণ ও এ ভুলটা করেছেন। তাই এ সময় তাঁদের খোলাখুলি সমালোচান করার পর এ কথাও সুস্পষ্টভাপবে জানিয়ে দেয়া হলো যেন কেবল খোদার অস্তিত্ব মেনে নেয়াকেই ঈমান বলা যায় না; বরং খোদাকেই আমাদের জান-মালের একমাত্র মালিক বলে স্বীকৃতি দেয়াই হচেছ প্রকৃত ঈমান। এভাবে আল্লাহ তা’আলাকে চূড়ান্ত মালিক মেনে নেবার পর কেউ যদি স্বীয় জন ও মালকে আল্লাহর পথে নিয়োজিত করতে কুণ্ঠিত হয় এবং তাকে অন্য কোনো কাজে ব্যবহার করে, তাহলে কার্যত তার স্বীকৃতিটা মিথ্যা বলেই প্রমাণিত হবে। তাই ঈমানের প্রত্যেক দাবিদারেরই তার দাবির এই তাৎপর্য হামেশা স্মরণ করা উচিত এবং আল্লাহর পথে সংগ্রাম করার কোনো সুযোগ গ্রহণেই তার কুণ্ঠিত হওয়া অনুচিত।
জনসাধারণের দ্বীনী প্রশিক্ষণ
ইসলামের সূচনাকালে যে সব লোকের হৃদয়ে ইসলামের সত্যতা আসন পেতে নিতো এবং যারা পুরোপুরি বুঝে-শুনে ইসলাম গ্রহণ করতো, কেবল তারাই এ আন্দোলনের সহায়তা করতে এগিয়ে আসতো। কিন্তু এ পর্যায়ে ইসলামের প্রভাব চারদিকে ছড়িয়ে পড়ায় দলে দলে লোকেরা ইসলামের মধ্যে দাখিল হতে লাগলো। দেশের পর দেশ, জনপদের পর জনপদ ইসলামের বশ্যতা স্বীকার করে নিলো। এর ফলে খুব কম লোকই পুরোপরি বুঝে-শুনে ইসলাম গ্রহণের সুযোগ পেলো; বরং বেশির ভাগ লোকই অল্প কিছু জেনে-শুনে ইসলামের সহায়তা করতে প্রস্তুত হয়ে গেলো। এভাবে হাজার হাজার লোক ইসলামী সমাজের অন্তর্ভুক্ত হতে লাগলো। দৃশ্যত এই পরিস্থিতিটা ছিলো ইসলামের শক্তি বৃদ্ধির লক্ষণ। কিন্তু যতোক্ষণ পর্যন্ত কোনো জনসমষ্টি ইসলামের দাবিগুলো কে উত্তমরূপে বুঝতে না পারবে এবং এবং ইসলাম কর্তৃক অর্পিত নৈতিক দায়িত্ব পালনে প্রস্তুত না হবে, ততোক্ষণ সে ইসলামী সমাজের পক্ষে দুর্বলতারই কারণ হয়ে থাকবে। তাবুক অভিযানকালে এমনি পরিস্থিতিরই কিছুটা আভাস পাওয়া গিয়েছিলো। তাই এই সুযোগে ইসলামী আন্দোলকে অভ্যন্তরীণ দুর্বলতা থেকে পরিত্রাণ পাবার উদ্দেশ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশ প্রদান করা হলো। তাহলো এই যে, জনসাধারণের মধ্য থেকে কিছু লোককে ইসলামের কেন্দ্রসমূহ (যেমন মক্কা, মদীনা ইত্যাদি) আসতে হবে এবং এসব কেন্দ্র থেকে ইসলামের শিক্ষা -দীক্ষা ও তার বিস্তারিত নিয়ম-কানুন শিখে তাদেরকে সত্যিকার ইসলামী ভাবধারা আত্নস্ত করতে হবে। অতঃপর মুসলিম জন-মানসে সঠিক ইসলামী চেতনা জাগ্রত করার ও তাদেরকে আল্লাহর নির্দেশাবলী সম্পর্কে অবহিত করানোর উদ্দেশ্যে এই শিক্ষাপ্রাপ্ত লোকদেরকে আপন আপন জনপদে ফিরে গিয়ে জনগণের শিক্ষা-দীক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে।
এই সাধারণ ইসলামী শিক্ষার অর্থ কেবল লোকদেরকে কিছু লেখা-পড়া শেখানোই ছিলো না; বরং লোকদের মধ্যে দ্বীনী চেতনা সৃষ্টি এবং ইসলামী ও অন ইলামী জীবন পদ্ধতির পার্থক্যবোধ জাগিয়ে তোলাই ছিলো এর উদ্দেশ্য। এ উদ্দেশ্য হাসিলের জন্যে কোনো গৎবাঁধা প্রক্রিয়া ছিলো না। এটা লেখাপড়া শিখিয়েই হোক আর না শিখিয়েই হোক, কোনো প্রকারে হাসিল করতে পারলেই হলো। কেননা, মুখ্য উদ্দেশ্য হলো দ্বীন সম্পর্কে সঠিক চেতনা সৃষ্টি করা। এজন্যে লেখাপড়া একটা মাধ্যম হতে পারে, উদ্দেশ্য নয়।
দারুল ইসলামের সুস্পষ্ট নীতি ঘোষণা
ইসলামী আন্দোলন একদিন না একদিন প্রচণ্ড রকমের একটা আঘাত খেয়ে ধ্বংস হয়ে যাবে বলে মুনাফিকরা এদ্দিন মনে মনে আশা পোষণ করে আসছিলো। কিন্তু তাবুক অভিযানের পর তাদের সব আশা-ভরসাই ধুলিসাৎ হয়ে গেলো। এক্ষণে এই শ্রেণীর লোকদের সামনে ইসলামের চৌহদ্দীতে আশ্রয় গ্রহণ করা কিংবা তারা নিজেরা ইসলাম গ্রহণ না করলেও তাদের ভবিষ্যত বংশধরদের ইসলামের আলোয় উদ্ভাসিত হওয়া ছাড়া কোন গত্যন্তর রইলো না।
এ সময় সমগ্র আরব ভুমির শাসন ক্ষমতা মুসলিমদের হাতে নিবদ্ধ ছিলো। তাদের মুকাবিলা করার মতো উল্লেখযোগ্য কোনো শক্তি বর্তমান ছিলো না। তাই এবার ইসলামী হুকুমতের অভ্যন্তরীণ নীতি ঘোষণার সময় এলো। নিম্নোক্ত পন্থায় সেই নীতি ঘোষণা করা হলো :
ক. আরব উপদ্বীপ থেকে শিরককে সম্পূর্ণ রূপে নিশ্চিহ্ন করে দিতে হবে। পুরানো মুশরিকানা ব্যবস্থাকে খতম করে আরব ভূমিকে চিরকালের জন্যে ইসলামের কেন্দ্রভূমিতে পরিণত করতে হবে। এই উদ্দেশ্যে মুশরিকদের স সাথে সকল প্রকার সম্পর্ক ছিন্ন করতে হবে এবং তাদের সঙ্গে যতো চুক্তি রয়েছে, তা সব বাতিল ঘোষণা করতে হবে।
এই নীতি অনুসারে নবম হিজরীর হজ্জ উপলক্ষে নবী করীম (স) হযরত আলী (সা)-এর মারফত হাজীদের সাধারণ সমাবেশে ঘোষণা করেন :
১. যে ব্যক্তি দ্বীন-ইসলম গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানাবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না।
২. এ বছরের পর কোনো মুশরিক কা’বা গৃহে হজ্জ করতে আসতে পারবে না।
৩. কাউকে নগ্ন হয়ে বায়তুল্লাহর চারদিকে তওয়াফ করার অনুমতি দেয়া হবে না।
৪. যাদের সঙ্গে রাসূলুল্লাহ (স)-এর চুক্তি রয়েছে এবং যারা চুক্তির পর থেকে এ পর্যন্ত বিশ্বাস ভঙ্গ করেনি, তাদের সঙ্গে চুক্তির শর্তানুযায়ীই ব্যবহার করা হবে এবং তার মেয়াদ পূর্ণ করা হবে। কিন্তু যারা চুক্তি থাকা সত্ত্বেও ইসলামী আন্দোলনের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র বেছে, তাদের জন্যে আর মাত্র চার মাসের অবকাশ রয়েছে। এই অবকাশের ভেতর হয় মুসলমানদের সঙ্গে লড়াই করে তাদের ভাগ্য নির্ধারণ করতে হবে, নচেত দেশ ছেড়ে তাদেরকে চলে যেতে হবে অথবা বুঝে-শুনে আল্লাহর দ্বীনকে গ্রহণ করে ইসলামী ব্যবস্থাপনায় শামিল হতে হবে।
খ. কা’বার তত্ত্বাবধান ব্যবস্থা সম্পূর্ণত তওহীদ বাদীদের হাতে থাকবে। এতে মুশরিকদের কোনো অধিকার থাকবে না। এবার থেকে কা’বার ভেতর কোনো মুশরিকানা প্রথা পালন করা যাবে না; এমন কি কোনো মুকশরিক এই পবিত্র ঘরের নিকটে পর্যন্ত আসতে পারবে না।৫৫
বিদায় হজ্জ এবং ওফাত
হজ্জের জন্য রওয়ানা
দশম হিজরীতে হযরত (স) আবার হজ্জের ইরাদা করলেন। ঐ বছর জিলকদ মাসে তাঁর হজ্জে গমনের কথা ঘোষণা করে দেয়া হলো। এ সংবাদ তামাম আরব ভূমিতে ছড়িয়ে পড়লো। হযরত (স)-এর সঙ্গে হজ্জ করার সৌভাগ্য অর্জনের নিমিত্ত সমগ্র আরববাসীর মধ্যে প্রবল আগ্রহ জাগলো। জিলকদের শেষ দিকে হযরত (স) মদীন থেকে যাত্রা করলেন এবং জিলহজ্জের চার তারিখে তিনি মক্কায় উপনীত হলেন। মক্কায় পদার্পণের পর প্রথমেই তিনি কা’বা শরীফ তওয়াফ করলেন। অতঃপর মাকামে ইবরাহীমে দু’রাকাত নামায পড়লেন। তারপর পর্যায়ক্রমে সাফা ও মারওয়া পাহাড়ে আরোহণ করলেন এবং সেখান থেকে কাজ সেরে আট তারিখ বৃহস্পতিবার সমস্ত সহযাত্রীকে নিয়ে মিনায় অবস্থান করলেন। পরদিন নয় জিলহজ্জ সকালে ফজরের পর তিনি মিনা থেকে আরাফাতের উদ্দেশ্যে রওয়ানা করলেন। এখানে হযরত (স) তাঁর সেই ঐতিহাসিক ভাষণ প্রদান করেন, যাতে ইসলামে পূর্ণ দীপ্তি ও ঔজ্জ্বল্যের প্রকাশ ঘটেছে। এই ভাষণে তিনি বহু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে নির্দেশ প্রদান করেন। নিম্নে এর কতিপয় অংশ উদ্ধৃত করা যাচ্ছেঃ
হজ্জের ভাষণ
‘জনমণ্ডলী! শুনে রাখো, জাহিলী যুগের সমস্ত প্রথা ও বিধান আমার দু পায়ের নীচে ।’
‘অনারবদের ওপর আরবদের এবং আরবদের ওপর অনারবদের কোনো শ্রেষ্ঠত্ব নেই। তেমনি সাদার ওপর কালোর কিংবা কালোর ওপর সাদার কোনো শ্রেষ্ঠত্ব নেই। তোমরা সবাই আদমের সন্তান আর আদমকে সৃষ্টি করা হয়েছে মৃত্তিকা থেকে। মর্যাদার ভিত্তি হচ্ছে শুধু তাকওয়া।’
‘মুসলমানরা পরস্পর ভাই ভাই। সাবধান! আমার পরে তোমরা একজন আরেক জনকে হত্যা করার মতো কুফরী কাজে লিপ্ত হয়ো না।’
‘তোমাদের গোলাম! তোমাদের ভৃত্য! তোমরা নিজেরা যা খাবে, তা-ই তাদের খাওয়াবে; নিজেরা যা পরবে, তা-ই তাদের পরতে দিবে।’
‘জাহিলী যুগের সমস্ত রক্তের বদলা বাতিল করে দেয়া হলো। (এখন আর কেউ কারো কাছ থেকে পুরানো রক্তের বদলা নিতে পারবে না। সর্বপ্রথম আমি নিজ খান্দানের রক্ত -রাবি‘আ বিন্‌ হারিসের পুত্রের রক্ত বাতিল করে দিলাম।’
‘জাহিলী যুগের সমস্ত সূদও বাতিল করে দেয়া হলো। (এখন আর কেউ কারো কাছে সূদ দাবি করতে পারবে না) সর্বপ্রথম আমি নিজ খান্দানের সূদ-আব্বাস বিন আবদুল মুত্তালিবের সূদ - বাতিল করে দিলাম।৫৬
‘মেয়েদের ব্যাপারে খোদাকে ভয় করো। জেনে রাখ, তাদের ওপর যেমন তোমাদের অধিকার রয়েছে, তেমনি রয়েছে তোমাদের ওপর তাদের অধিকার । তাদের কল্যাণের বিষয়ে আমার নসিহত গ্রহণ করো।’
‘আজকের এই দিন, এই মাস এই এই শহরটি যেমন সম্মানার্হ, তেমনি তোমাদের রক্ত, তোমাদের ইজ্জত, তোমাদের ধন-দৌলত পরস্পরের প্রতি কিয়ামত পর্যন্ত সম্মানার্হ।
‘আমি তোমাদের মধ্যে একটি জিনিস রেখে যাচ্ছি, তোমরা যদি তা দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরো, তাহলে কখনো পথভ্রষ্ট হবে না আর তা হচ্ছে আল্লাহর কিতাব।’
এরপর তিনি শরীয়তের অনেক মৌলিক বিধান বিবৃত করেন। অতঃপর জনতার কাছে জিজ্ঞেস করেন :
‘খোদার দরবারে আমার সম্পর্কে তোমাদের কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে, তোমরা কি বলবেঃ’
সাহাবীগণল বলেন, ‘আমরা বলবো, আপনি আমাদের কাছে পয়গাম পৌঁছিয়ে দিয়েছেন এবং আপন কর্তব্য পালন করেছেন।’ তিনি আসমানের দিকে শাহাদাত অঙ্গুলি তুলে তিনবার বললেন : ‘হে আল্লাহ! তুমি সাক্ষী থেকো।’
এ সময় কুরআনে নিম্নোক্ত আয়াত নাযিল হলোঃ
‘আজকে আমি দ্বীন (ইসলাম)-কে তোমাদের জন্যে পরিপূর্ণ করে দিলাম এবং আমার নিয়ামতকে সম্পূর্ণ করে দিলাম আর দ্বীন (জীবন পদ্ধতি) হিসবে ইসলামকে তোমাদের জন্যে মনোনীত করলাম।
এই হজ্জ উপলক্ষে হযরত (স) হজ্জ সংক্রান্ত তাবত নিয়ম-নীতি নিজে পালন করে দেখান। এ প্রসঙ্গে তিনি বললেন : ‘আমার কাছ থেকে হজ্জের নিয়ম-কানুন শিখে নাও। হয়তো বা এরপর আমার দ্বিতীয় বার হজ্জ করার সুযোগ হবে না।’
এরপর তিনি সমস্ত মুসলমানকে লক্ষ্য করে বলেন : ‘উপস্থিত ব্যক্তিগণ (এসব কথা)) অনুপস্থিত লোকদের কাছে পৌঁছে দিও।’
অসুস্থতা
এগার হিজরীর সফর মাসের ১৮ কি ১৯ তারিখে হযরত (স)-এর শরীরে অসুস্থতার লক্ষণ প্রকাশ পেডলো। সে দিন ছিলো বুধবার। পরবর্তী সোমবার দিন অসুস্থ‌তা অত্যন্ত তীব্র হয়ে উঠলো। যতোক্ষণ শক্তি ছিলে, ততোক্ষণ তিনি মসজিদে গিয়ে নামায পড়ালেন। তিনি সর্বশেষ যে নামায পড়ান, তা ছিলো মাগরিবের নামায। মাথায় তাঁর বেদনা ছিলো। তিনি রুমাল বেঁধে মসজিদে এলেন এবং নামাযে সূরা মুরসালাত পাঠ করলেন। এশার সময় তিনি অত্যন্ত দুর্বল হয়ে পড়লেন। তাই মসজিদে আসতে না পেরে আবু বকর সিদ্দিক (রা)-কে নামায পড়াতে বললেন। এপর কয়েকদিন যাবত আবু বকর সিদ্দীক (রা) নামায পড়ালেন।
শেষ ভাষণ এবং নির্দেশাবলী
মাঝখানে একদিন তিনি একটু ভালো বোধ করেন। তিনি গোসল করে মসজিদে এলেন এবং ভাষণ প্রদান করলেন। এটি ছিলো তাঁর জীবনের শেষ ভাষণ। তিনি বললেন :
‘খোদা তাঁর এক বান্দাকে দুনিয়ার নিয়ামত কবুল করার কিংবা খোদার কাছে (আখিরাতের) যা কিছু আচে, তা গ্রহণ করার ইখতিয়ার দিয়েছেন। কিন্তু বান্দাহ আল্লাহ নিকটের জিনিসই কবুল করে নিয়েছে।’
একথা শুনে হযরত আবু বকর (সা) এর ইঙ্গিতটা বুঝতে পেরে কেঁদে উঠলেন। হযরত (স) এরা বললেনঃ
‘আমি সবচেয়ে বেশি কৃতজ্ঞ আবু বকরের দৌলত ও তাঁর বন্ধুত্বের কাছে । যদি দুনিয়ায় আমার উম্মতের ভেতর থেকে কাউকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করতে পারতাম তো আবু বকরকেই গ্রহণ করতাম। কিন্তু বন্ধুত্বের জন্যে ইসলামের বন্ধনই যথেষ্ট।’
‘আরো শোন, তোমাদের আগেকার জাতিসমূহ তাদের পয়গাম্বর ও সম্মানিত লোকদের কবরকেই ইবাদতগাহ বানিয়ে নিয়েছে। দেখো, তোমরা এরূপ করে না। আমি তোমাদের নিষেধ করে যাচ্ছি।’
পুনরায় বললেন : ‘হালাল ও হারামকে আমার প্রতি আরোপ করা যাবে না; কারণ খোদা যা হালাল করেছেন, তা-ই আমি হালাল করেছি আর তিনি যা হারাম করেছেন, তা-ই আমি হারাম করেছি।
এই অসুস্থ অবস্থায় একদিন তিনি আপন খান্দানের লোকদের উদ্দেশ্যে বলেনঃ ‘হে পয়গাম্বরের কন্যা ফাতিমা এবং হে পয়গাম্বরের ফুফু সাফিয়া! খোদার দরবারে কাজে লাগবে, এমন কিছু করে নাও। আমি তোমাদেরকে খোদার হাত থেকে বাঁচাতে পারি না।’
একদিন রোগ-যন্ত্রণা খুব বেড়ে গেলো। তিনি কখনো মুখের ওপর চাদর টেনে দিচ্ছিলেন আবার কখনো তা সরিয়ে ফেলছিলেন। এমনি অবস্থায় হযরত আয়েশা (রা) তাঁর মুখ থেকে শুনতে পেলেন : ‘ইহুদী ও নাসারাদের প্রতি খোদার লা’নত! তারা আপন পয়গাম্বরদের কবরকে ইবাদতগাহ বানিয়ে নিয়েছে।’
একবার তিনি হযরত আয়েশা (রা)-এর কাছে কিছু আশরাফী জমা রেখেছিলেন। এই অস্থিরতার ভিতরেই তিনি বললেন : ‘আয়েশা! সেই আশরাফীগুলো কোথায়! মুহাম্মদ কি খোদার সঙ্গে খারাপ ধারণা নিয়ে মিলিত হবে! যাও, ঐগুলোকে খোদার পথে দান করে দাও।’
রোগ-যন্ত্রণা কখনো বাড়ছিলো, কখনো হ্রাস পাচ্ছিলো। ওফাতের দিন সোমবার দৃশ্যত তাঁর শরীর অনেকটা সুস্থ ছিলো। কিন্তু দিন যতো গড়াতে লাগলো, ততোই তিনি ঘন ঘন বেঁহুশ হতে লাগলেন। এই অবস্থায় প্রায়শ তাঁর মুখে উচ্চারিত হলো (আল্লাহ যাদের অনুগৃহীত করেছেন, তাদের সঙ্গে) কখনো বলতেন ‘হে খোদা! তুমি মহান বন্ধু’।
এই সব বলতে বলতে তাঁর অবস্থার অবনতি ঘটতে লাগলো। এক সময় তাঁর রূহে পাক আলমে কুদসে গিয়ে পৌঁছলো।
মৃত্যুর সাল এগারো হিজরী। মাসটি ছিলো রবিউল আউয়াল এবং দিনটি সোমবার। সাধারণভাবে প্রচলিত যে, তারিখটি ছিলো ১২ রবিউল আউয়াল। কিন্তু এ ব্যাপারে মতানৈক্য আছে। ‘সীরাতুন্নবী’ প্রণেতা মাওলানা সাইয়েদ সুলায়মান নদবীর মতে তারিখটি ছিলো ১ রবিউল আউয়াল।
পরদিন জানাযা ইত্যাদি সমাধা করা হলো এবং সন্ধা নাগাদ যে ঘরে তিনি ইন্তেকাল করেন, সেখানেই তাঁকে সমাহিত করা হলো।