ইমাম তুর্কি ইবন আব্দিল্লাহ মসজিদে জুমার খুতবা।


বিষয় : মৃত্যুর জন্য করণীয়
খতীব : আব্দুল আযীয ইবন আব্দিল্লাহ

সমস্ত প্রশংসা মহান আল্লাহর জন্য যিনি ইহকালীন জীবনকে মানুষের জন্য কর্মক্ষেত্রে হিসেবে নির্ধারণ করত তার জন্য যুগে যুগে নবী-রাসূলদের মাধ্যমে শরিয়াত প্রণয়ন করেন ও পরকালে মানুষের কর্ম অনুযায়ী বিনিময়ের ব্যবস্খা করেন। সালাম ও দরুদ প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্য যিনি সারা জীবন অক্লান্ত পরিশন্সম করত আল্লাহর বিধান মানব সমাজে প্রতিষ্ঠিত করে গেছেন।
সম্মানিত উপস্স্থিতি!
মহান আল্লাকে যথাযথভাবে ভয় করুন। আল্লাহ মহাসত্য কথা ঘোষণা দিয়ে বলেন : “আর তুমি বলে দাও, তোমরা আমল করে যাও, তার পরবর্তীতে আল্লাহ দেখবেন তোমাদের কাজ এবং দেখবেন রাসূল ও মুসলমানগণ। তাছাড়া তোমরা শীঘন্সই প্রত্যাবর্তীত হবে তাঁর সান্নিধ্যে যিনি গোপন ও প্রকাশ্য বিষয়ে অবগত। তা তিনি জানিয়ে দেবেন তোমাদেরকে যা করতে হবে।” (সূরা আত-তাওবাহ্, ১০৫)

প্রিয় মুসলিম ভাই!
আমাদের উপরোক্ত এ আয়াতের মর্মার্থ অনুধাবন করা উচিত। তিনি আমাদের তাতে সঠিকভাবে আমল করার জন্য নির্দেশ প্রদান করেন। আমাদের অযথা সৃষ্টি করা হয়নি, আমাদের সৃষ্টির একমাত্র উদ্দেশ্য তাঁর ইবাদাত করা, যাতে আমরা তাঁর বিধানাবলী বাস্তবায়ন করি। ইসলামী শরিয়াতের জ্ঞান ও বিধানাবলীর আলোকে আমাদের বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ সকল কর্ম সম্পাদন করতে হবে যাতে আমরা যথার্থই মুমিন হিসেবে পরিগণিত হতে পারি। এটিই হলো মহান আল্লাহর বাণীর উদ্দেশ্য যা তিনি উপরের আয়াতে উল্লেখ করেছেন। তিনি বান্দার সকল কর্ম সম্পর্কেই অবগত। কিন্তু বান্দাহ তাঁর বিরুদ্ধাচরণ না করা পর্যন্ত তিনি কাকেও শাস্তি প্রদান করেন না। এটিই হলো উপরোক্ত আল্লাহর বাণীর মর্মার্থ।
সম্মানিত মুসলিম ভাই!
আল্লাহ আমাদের তাঁর প্রদর্শিত পথে কাজ করতে নির্দেশ প্রদান করেন। বস্তুত আমাদের সৃষ্টি উদ্দের্শহীনভাবে করা হয়নি; বরং আমাদের সৃষ্টির মূল উদ্দেশ্য তাঁর ইবাদত তথা আমাদের সার্বিক জীবনে প্রকাশ্য ও গোপনে সর্বান্তকরণে তাঁর বিধানের বাস্তবায়ন করা, যাতে আমরা যথার্থ মুমিন হতে পারি।
আমাদের সবাইকে সে মহান রবের দিকে ফিরে যেতে হবে ঁিযনি প্রকাশ্য ও গোপন সবকিছিু অবগত। তিঁনি ইরশাদ করেন : “বলে দিন, তোমরা যদি মনের কথা গোপন করে রাখ অথবা প্রকাশ করে দাও, আল্লাহ সে সবই জানতে পারেন। আর আসমান ও যমীনে যা কিছু আছে, সে সবই জানেন। আল্লাহ সর্ব বিষয়ে শক্তিমান।” (সূরা আল-ইমরান, ২৯)
মুসলিম ভাই!
আমাদের আমল কখনো যথার্থ হবে না যতক্ষণ না আমরা আমাদের কর্মসম্পাদনে শারীরিক, মানসিক, প্রকাশ্য ও গোপন তথা সার্বিক কাজকর্ম একমাত্র আল্লাহর জন্য নির্ধারণ না করি ও ইসলাম নির্দেশিক পন্থায় বিশুদ্ধ আক্কিদায় তা সম্পাদন না করি। এভাবেই মুমিনদের পরিপূর্ণ জীবন একমাত্র আল্লাহরই জন্য নির্ধারণ হয়ে থাকে।
মুমিনের জীবনে একটি বিষয় সর্বদাই লক্ষ্য রাখতে হয় যে তার কোন কাজই যেন রিয়া তথা লোকদেখানোপনাপূর্ণ না হয়। এতে তার সকল কর্মই বিফলে যাবে। এ জন্য এ উমôতের সৎলোকদের সর্বদা সাবধানতার সাথে জীবনযাপন করতে হয়। এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন :
“নিশ্চয় যারা তাদের পালনকর্তার ভয়ে সন্ত্রস্ত, যারা তাদের পালনকর্তার কথায় বিশবাস করে, যারা তাদের পালনকর্তার সাথে কাউকে শরীক করে না এবং যা দান করবার, তা ভীত হৃদয়ে এ কারণে দান করে যে, তারা তাদের পালনকর্তার কাছে প্রত্যাবর্তন করবে।” (সূরা আল-মুমিনুন, ৫৭-৬০)
এ সমস্ত সৎলোকগণ তাদের নেক আমল সম্পর্কে প্রদর্শনেচ্ছার ভয়ে ভীত থাকেন, যাতে তা বাতিল না হয়ে যায়। এভাবে জীবন যাপন করতে করতে মহান আল্লাহর সাথে তাদের সম্পর্ক দৃঢ় হতে থাকে। মহান আল্লাহর নিম্নোক্ত আয়াত তাদের রবের সাথে মুনাজাতের চিত্র তাদের অবস্খান সম্পর্কে ইঙ্গিত বহন করে। ইরশাদ হচ্ছে :
“হে আমাদের পালনকর্তা! সরল পথ প্রদর্শনের পর তুমি আমাদের অন্তরকে সত্য লংঘনে প্রবৃত্ত করো না এবং তোমার নিকট থেকে আমাদিগকে অনুগ্রহ দান কর। তুমিই সব কিছুর দাতা।” (সূরা আলে ইমরান, ৮)
এসব মুমিনরা মহান আল্লাহ তার নবীর প্রতি সাবধানতার বাণীটি থেকেও উপদেশ গ্রহণ করে থাকে। তাতে আল্লাহ ইরশাদ করেন :
“আমি আপনাকে দৃঢ়পদ না রাখলে আপনি তাদের প্রতি কিছুটা ঝুঁকেই পড়তেন। তখন আমি অবশ্যই আপনাকে ইহজীবনে ও পরজীবনে দ্বিগুণ শাস্তির আস্বাদন করাতাম।” (সূরা আল-ইসরা, ৭৪-৭৫)
ইহকালীন জীবনে প্রকৃত মুমিনের স্ববাব হল, সে নিরবিচ্ছিন্নভাবে আমল করতে থাকে, শেষ পরিণতি পর্যন্ত তাতে অটল থাকতে চেষ্টা করে এভং জীবনের পরিণতি সম্পর্কে পূর্ব থেকে অবগত না হওয়ায় সর্বদা ঈমান ও আমলের সংরক্ষণের জন্য সচেষ্ট থাকে। তারা অন্যলোকদের ঈমানের গণ্ডি থেকে বেরিয়ে যাওয়া, জীবন পরিচালনায় অন্যান্য মতাদর্শ গ্রহণ করা, এককালে ঈমানের আলোতে অবগাহন করে পরবর্তীতে সে অমূল্য সম্পদ থেকে বিচ্যুত হওয়ার দূর্ভাগ্য পরিণতি বরণ তথা অনৈসলামী ধ্যান-ধারণায় অভ্যস্খ হওয়ার করুণ পরিণতি অবলোকন করত নিজেদের শয়তানের কুমন্ত্রণার বিরুদ্ধে সোচ্চার রাখতে সচেষ্ট থাকেন। মহান আল্লাহ তায়ালা ঈমানদারগণকে তাঁকে ভয় করতে নির্দেশ প্রদান করত ইরশাদ করেন :
হে ঈমানদারগণ! আল্লাহকে ভয় করতে থাক যেমন ভয় করা উচিত ঠিক তেমনিভাবে এবং অবশ্যই মুসলমান না হয়ে মৃত্যুবরণ করো না।” (সূরা আল-ইমরান, ১০২)
মহান আল্লাহর এ আয়াত থেকে প্রতীয়মান হয় যে, আমাদের ইসলামের বিধানকে আঁকড়ে ধরে আমৃত্যু তার উপর অটল থাকতে হবে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা হযরত ইয়াকুব আলাইহিস সালামকে যা বলেছিলেন তা জানা আবশ্যক। ইরশাদ হচ্ছে :
“এরই ওছিয়ত করেছে ইবরাহীম তার সন্তানদের এবং ইয়াকুবও যে, যে আমার সন্তানগণ, নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের জন্যে এ ধর্মকে মনোনীত করেছেন। কাজেই তোমরা মুসলমান না হয়ে কখনও মৃত্যুবরণ করো না। (সূরা আল-বাকারাহ, ১৩২)
ইসলামের বিধান স্বজ্ঞানে প্রকাশ্যে-গোপনে পালন করুন ও সত্য ও ন্যায়ের পথে অটল থাকার জন্য আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করুন। আল্লাহরই হাতে রয়েছে মানুষের মন পরিবর্তন করার ক্ষমতা তিঁনি যাকে ইচ্ছা পরিবর্তন করে দেন। মানবতার মহান নেতা সব নবীদের সেরা নবী মুহামôদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বদা দোয়ায় বলতেন :
“হে মন পরিবর্তনকারী আল্লাহ! আমার মনকে আপনার দ্বীনের উপর অটল রাখুন।” এ দোয়ার পরিপ্রেক্ষিতে একথা হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা রাসূল (সা·) কে জিজ্ঞাসা করলেন, আপনি কি দ্বীনের উপর অটল থাকার ব্যাপারে ভয় পাচ্ছেন? উত্তরে রাসূল (সা·) ইরশাদ করেন : “মানুষের হৃদয় আল্লাহর আয়ত্বাধীন, তিঁনি যাকে ইচ্ছা পরিবর্তন করেন।”
সম্মানিত মুসলিম জনতা!
মানুষের উপর মহান আল্লাহর তাওফীকের নিদর্শনের অন্যতম হল তার অবশিষ্ট জীবন সৎভাবে পরিচালনা করা ও এ অবস্খায় মৃত্যু হওয়া। এ প্রসঙ্গে হযরত আনাস (রা·) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন : রাসূল (সা·) ইরশাদ করেন : “আল্লাহ যদি কোন বান্দার কল্যাণের ইচ্ছা করেন, তাহলে তাকে কাজে লাগান।” প্রশ্ন করা হল, কিভাবে তা সম্ভবপর হে আল্লাহর রাসূল? উত্তরে তিঁনি ইরশাদ করেন : “এর ব্যাখ্যা হল: মৃত্যুর পূর্বে তাকে সৎকাজ করার তাওফিক প্রদান করেন।” অত:পর সে বিশুদ্ধভাবে তাওবাহ করার সুযোগ লাভে ধন্য হয়, আল্লাহ তার গুণাহরাশি নেককাজে পরিগণিত করেন। সে বান্দাহদের উপর জুলুম করা থেকে মুক্ত থাকে, তার কথা ও কর্মের ভুল-ভ্রান্তি থেকে আল্লাহর নিকট ক্ষমতা প্রার্থনা করে, এমনকি সে যখন মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে উপনীত হয় তখনও সে হেদায়াতের উপর অটল থাকে। মৃত্যুশর্যায় থাকাবস্খায় সে জান্নাতের সুসংবাদ পেতে থাকে। এ প্রসঙ্গে ইরশাদ হচ্ছে :
“নিশ্চয় যারা বলে, আমাদের পালনকর্তা আল্লাহ, অত:পর তাতেই অবিচল থাকে, তাদের কাছে ফিরিশতা অবতীর্ণ হয় এবং বলে, তোমরা ভয় করো না, চিন্তা করো না এবং তোমাদের প্রতিশন্সুতি জান্নাতের সুসংবাদ শোন। ইহকালে ও পরকালে আরমা তোমাদের বন্ধু। যেখানে তোমাদের জন্যে আছে যা তোমাদের মন চায় এভং সেখানে তোমাদের জন্যে আছে যা তোমরা দাবি কর। এটা ক্ষমাশীল করুণাময়ের পক্ষ থেকে সাদর আপ্যায়ন।” (সূরা ফুচ্ছিলাত, ৩০-৩২)
এভাবে আল্লাহর বিশুদ্ধ বান্দারা যারা একনিষ্ঠভাবে তাদের আমল সম্পাদন করেন, লোকদেখানোপনা থেকে মুক্ত থাকেন, খ্যাতির মনোবাঞ্ছা পোষণ করেন না, তারাই যথার্থ বান্দা হওয়ার যোগ্য। এদের পরকালীন জীবন সম্পর্কে মহান আল্লাহ ঘোষণা করেন :
“এ পরকাল আমি তাদের জন্য নির্ধারণ করি, যারা দুনিয়ার বুকে ঔদ্ধত্য প্রকাশ করতে ও অনর্থ সৃষ্টি করতে চায় না। মুত্তাকিদের জন্য শুভ পরিণাম।” (আল কাসাস, ৮৩)
সম্মানিত উপস্স্থিতি!
আমাদের উচিত সর্বদা ভালো পরিণতির জন্য আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করা, আর অতীত জীবনের চেয়ে ভবিষ্যতের দিনগুলো যেন ভালভাবে অতিবাহিত করতে পারে সেজন্য আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়া। সে যেন সর্বদা এ বলে প্রার্থনা করে যে, হে আল্লাহ! আপনি আমাদের শেষ জীবনের দিনগুলো ভালভাবে পরিচালনা করার তাওফিক দিন, ঐ সময়ের আমলগুলো উত্তম করে দিন আর আপনার সাথে মিলিত হবার দিনগুলো ভাল করে দিন।

খাঁটি মুমিনগণ মৃত্যুপূর্ববর্তী দিনগুলোতে তাওবাহ করার সুযোগ পাওয়ার, কুপ্রবৃত্তি থেকে মুক্ত থাকার ব্যাপারে ভীত থাকেন, কেননা এতে তার জীবন উদ্দেশ্যহীন হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তারা মহান আল্লাহর বাণীর নিম্নোক্ত বাণীর মর্মার্থ বুঝতে পারেন। ইরশাদ হচ্ছে :
“তোমাদের উপর যেসব বিপদাপদ পতিত হয়, তা তোমাদের কর্মেরই ফল এবং তিনি তোমাদের অনেক গুণাহ ক্ষমা করে দেন।” (সূরা আশ-শু'রা, ৩০) আরও ইরশাদ হচ্ছে :
“আল্লাহ জুলুম করেন না মানুষের উপর, বরং মানুষ নিজেই নিজের উপর জুলুম করে।” (সূরা ইউনুস, ৪৪)

সবাই ভাল মৃত্যুর জন্য মহান আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করুন, নিজেদের পরিপূর্ণ ইসলামে অন্তর্ভুক্ত থাকা অবস্খায় আল্লাহর আহ্বানে সাড়া দেয়ার জন্য প্রস্তুত থাকুন।
সম্মানিত উপস্স্থিতি!
কাáিক্ষত মৃত্যুর জন্য আমাদের কিছু করণীয় রয়েছে, তন্মধ্যে প্রকাশ্যে ও গোপনে সর্বদা আল্লাহকে ভয় করতে থাকা অন্যতম। এ প্রসঙ্গে আল্লাহর নবী (সা·) ইরশাদ করেন :
“তোমরা যেখানে থাক আল্লাহকে ভয় করে চল।” মহান আল্লাহর বাণী এক্ষেত্রে প্রণিধানযোগ্য। ইরশাদ হচ্ছে :
“মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহ তা'য়ালাকে ভয় হর। প্রত্যেক ব্যক্তির উচিত আগামী কালের জন্যে সে কি করে তা চিন্তা করা, আল্লাহর তায়ালাকে ভয় করতে থাক। তোমরা যা কর আল্লাহ সে সম্পর্কে খবর রাখেন। (সূরা আল-হাশর, ১৮)
তাকওয়ার প্রকৃতি সমপএর্ক মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন :
“মনে রেখো, যারা আল্লাহর বন্ধু, তাদের না কোন ভয়-ভীতি আছে, না তারা চিন্তানিবত হবে। যারা ঈমান এনেছে এবং ভয় করতে রয়েছে তাদের জন্যে সুসংবাদ পার্থিব জীবনে ও পরকালীন জীবনে।” (সূরা ইউনুস, ৬২-৬৪) আরও ইরশাদ হচ্ছে :
“আর যে আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার জন্যে নিüকৃতির পথ করে দেবেন।” (সূরা আত-তালাক, ২)

কাáিক্ষত মৃত্যুর জন্য আরও করণীয় হচ্ছে মুমিনের কাজ-কর্ম পূর্ণ ইখলাস তথা বিশুদ্ধঅন্তকরণে একমাত্র আল্লাহর জন্য তা নির্ধারণ করা। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হচ্ছে :
“যে ব্যক্তি তার পালনকর্তার সাক্ষাত কামনা করে, সে যেন সৎকর্ম করে এবং তার পালনকর্তার ইবাদতে কাউকে শরীক না করে।” (সূরা আল-কাহফ, ১১০)

তেমনিভাবে মুমিনরা সর্বদা হিদায়াত ও সিরাতুল মুস্তাকিম তথা ইসলামের বিধানের উপর অটল থাকবে, এ জন্য তারা মহান আল্লাহর নিকট ‘সিরাতুল মুস্তাকিমে' অটল থাকার জন্য দোয়া করবে। মহান আল্লাহ তা বান্দাদের শিখিয়ে দিয়েছেন এভাবে :
“আমাদেরকে সরল পথ দেখাও।” (সূরা আল-ফাতিহা, ৬) আল্লাহ তদীয় নবী ও মুমিনদের আরো নির্দেশ দিচ্ছেন :
“অতএব তুমি এবং তোমার সাথে যারা তাওবা করেছে সবাই সোজা পথে চলে যাও- যেমন তোমায় হুকুম দেয়া হয়েছে।” (সূরা হুদ, ১১২)

একদা জনৈক সাহাবী নবী করিম (সা·) কে অতি উত্তম কাজ যা তিনি আর কাউকে জিজ্ঞেস করবেন না বলে জানালে নবী (সা·) তাকে বললেন : “তুমি বল, আমি আল্লাহর উপর ঈমান আনলাম ও তাতে দৃঢ় ও অটল থাকলাম।”
হে মুসলিম ভাইগণ!
সঠিকভাবে মৃত্যু ও তার পরবর্তী বিভিন্ন অবস্খা সম্পর্কে অবগত হউন ও তা থেকে উপদেশ গ্রহণ করত নিজেদের ঠিকানা জান্নাত প্রাপ্তির জন্য সার্বিক প্রচেষ্টা ব্যয় করুন ও জাহান্নাম থেকে বাঁচার শপথ নিন।
আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কে সজাগ থাকুন, তা হল মহান আল্লাহ যে আপনার প্রকাশ্য-গোপন সর্ববিষয়ে অবহিত তা ভালভাবে উপলব্ধি করত জীবন গঠতে থাকুন। তিনি ইরশাদ করেন :
“যে কোন অবস্খাতেই তুমি থাক এবং কোরআনের যে কোন অংশ থেকেই পাঠ কর কিংবা যে কোন কাজই তোমরা কর অথচ আমি তোমাদের নিকটে উপস্খিত থাকি যখন তোমরা তাতে আত্মনিয়োগ কর।” (সূরা ইউনুস, ৬১)
সর্বদা বেশি বেশি যিকর তথা আল্লাহর সôরণ ও তাঁর রহমত প্রত্যাশি থাকুন। তিনি তাঁর রহমত প্রত্যাশিদের বঞ্চিত করেন না। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হচ্ছে :
“অতএব যে দান করে এবং আল্লাহভীরু হয় এবং উত্তম বিষয়কে সত্য মনে করে আমি তাকে সুখের বিষয়ের জন্যে সহজ পথ দান করব।” (সূরা আল-লাইল, ৫-৭)
মানুষ গোপনে যে সকল অন্যায় কাজ করে থাকে আল্লাহ সে সম্পর্কে অবহিত। তাই সে সকল গর্হিত কাজ ত্যাগ করতে হবে। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হচ্ছে :
“তারা মানুষের কাছে লজ্জিত হয় এবং আল্লাহর কাছে লজ্জিত হয় না। তিনি তাদের সাথে রয়েছেন, যখন তারা রাত্রে এমন বিষয়ে পরামর্শ করে, যাতে আল্লাহ সমôত নন। তারা যা কিছু করে, সবই আল্লাহর আয়ত্তাধীন।” (সূরা আন-নিসা, ১০৮)
কাংখিত মৃত্যুর জন্য আর যে বিষয়টি বেশি প্রয়োজন তা হল বেশি বেশি কুরআন তিলাওয়াত, ইখলাস ও ইয়াক্কীনের সাথে ইসলামের ফরজ কার্যাবলী ভালবাবে সম্পাদন করা। মহান আল্লাহ বিশুদ্ধ আমলকারীদের আমল কখনো বিনষ্ট করেন না।

কাáিক্ষত ও ভাল মৃত্যুর কিছু নিদর্শন রয়েছে, তন্মধ্যে মৃত্যু পূববর্তী সময়গুলোতে ইসলামের পরিপূর্ণ আনুগত্যকারী থেকে ইখলাসের বাণীগুলো পাঠের তাওফিক পাওয়া। কেননা যে এ সুযোগ পেল সে বড় মর্যাদার অধিকারী হল। হাদীস শরীফে এসেছে :
“ যে ব্যক্তি দুনিয়া ত্যাগকালে “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ' বাণী পাঠ করে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।”
অপর হাদিসে এসেছে, “যে ব্যক্তি বিশুদ্ধ অন্তকরণে “লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ' পাঠ করে মহান আল্লাহ তার জন্য জাহান্নাম হারাম করে দেন।”
মৃত্যু ঘনিয়ে এলে ফিরিশতা আযরাঈল যখন তার জান কবয করতে আসে তখন আল্লাহ তায়ালা কামিল মুমিনদের কালিমা শাহাদাত পড়ার তাওফিক প্রদান করেন। সে কঠিন মুহূর্তে যাদের কালিমা পাঠের তাওফিক হয় তাদের ভাগ্য সুপ্রসন্ন। এটি এমন এক বাক্য যা তাকে চিরস্খায়ী জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিতে সক্ষম। মৃত্যুপথযাত্রীরা ঐ সময়ে বেশ দুর্বল অবস্খায় থাকে, ঐ সময় শয়তান তাকে বিভ্রান্ত করার সার্বিক প্রচেষ্টা চালায়। ঐ করুণ মুহূর্তে তাকে ঈমানহারা করার চক্রান্ত চারিয়ে থাকে। ইসলামের পথে জীবন পরিচালনাকারীদের জন্য সেসব পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া অধিক সহজতর। আল্লাহ তাদের হিফাযত করে থাকেন। আল্লাহ ইরশাদ করেন :
“আমি তোমাদের অপেক্ষা তার অধিক নিকটে থাকি; কিন্তু তোমরা দেখ না।” (সূরা আল-ওয়াক্কিয়াহ, ৮৫)
আল্লাহ প্রকৃত মুমিনদের সত্যের উপর অটল রাখেন। যেহেতু তারা আজীবন আল্লাহর পথে চলতে অভ্যস্ত হয়ে শুধুমাত্র তাঁরই পথে জীবব পরিচালনা করতেন। তাই তিনি তাদের করুণ মুহূর্তে তাওহীদের বাণী সôরণ করতে সাহায্য করে থাকেন ও আল্লাহর বিশেষ নিয়ামতে ধন্য হয়ে থাকেন। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হচ্ছে :
“আল্লাহ তা'য়ালা মুমিনদেরকে মজবুত বাক্য দ্বারা মজবুত করেন। পার্থিব জীবনে এবং পরকালে। এবং আল্লাহ জালিমদেরকে পথভ্রষ্ট করেন। আল্লাহ যা ইচ্ছা, তা করেন।” (সূরা ইব্রাহীম, ২৭)
সম্মানিত উপস্স্থিতি!
কাংখিত মৃত্যুর আরো একটি নিদর্শন হচ্ছে মৃত্যুর সময় তার কপাল ঘর্মাক্ত হয়। আর কিছু নিদর্শন রয়েছে যা শহীদি মৃত্যুর মর্যাদায় স্খান পায়, তন্মধ্যে রয়েছে প্লেগে, পানিতে ডুবে, কঠিন পেটের পীড়ায় মৃত্যু বরণ করা। এগুলো মুসলিমের ভাল মৃত্যুর নিদর্শন বলে বিবেচিত হয়।
ভালভাবে মৃত্যুবরণ করার জন্য মহান আল্লাহর নিকট সাহায্য প্রার্থনা করুন এবং অসৎ কৃতকর্মের দরুন ঐ সময়ে ঈমানহারা হবার ব্যাপারে সাবধান থাকুন। অনৈসলামী আকীদা মনে পোষণ, রিয়া বা লোকদেখানোপনা ও ঘুনাহের কারণে জীবনের শেষ মুহূর্তে মুমিনের ঈমানহারা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আল্লাহ আমাদের এ ধরণের বিপদ থেকে মুক্ত রাখুন।
এ কথাগুলো বলে আমি আমার নিজের, আপনাদের ও সমগ্র মুসলিম মিল্লাহর গুনাহ মাফের জন্য মহান আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছি, আপনারাও তার নিকট তাওবাহ করুন। তিনিই একমাত্র ক্ষমাকারী ও দয়াবান।
তারিখ : ৩০-০৩-১৪২৭ হিজরী
ভাষান্তরে : ড· ওয়ালি উল্লাহ, সহযোগী অধ্যাপক, দারুল ইহসান বিশববিদ্যালয়।