সালাত

সালাতের অর্থ : অভিধানে সালাত শব্দটি বিভিন্ন অর্থে ব্যবহৃত হয়। যেমন এর অর্থ দোয়া, ক্ষমা প্রার্থনা, দয়া, ইবাদাতের ঘর ইত্যাদি। কুরআন ও হাহীদসের ভাষা থেকেই এ অর্থগুলো পাওয়া যায়।
পরিভাষায় সালাত হল, “এমন একটি ইবাদাত যা কতিপয় কথা ও নির্দিষ্ট কার্যাবলীকে সামিল করে এবং তাকবীরের মাধ্যমে শুরু করা হয় ও সালামের মাধ্যমে শেষ করা হয়।
সালাতের গুরুত্ব ও ফযীলত : ইসলামের পঞ্চ স্তম্ভের মধ্যে কালেমার পরই সালাতের স্খান। কালেমার পর এটি সর্বোত্তম আমল। এটি আল্লাহ ও তার বান্দার মাঝে সেতুবন্ধন। এটি একটি আদি ইবাদাত যা পূর্ববর্তী সকল নবী রসূলগণ আদায় করেছিলেন। তাদের ও তাদের উমôাতদের উপর এটি আবশ্যক ছিল। অন্যান্য সকল ইবাদাত যমীনে ফরয করা হয়েছে। কিন্তু সালাতই একমাত্র ইবাদাত যা সিদরাতুল মুনতাহাতে ফরয করা হয়েছে। অতএব সালাতের মর্যাদা সহজেই অনুমেয়। আল্লাহ তার বান্দাদের উপর যা ফরয করেছেন তন্মেধ্যে এটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। পাগল ও ঋতুবতী অবস্খা ছাড়া কোন অবস্খাতেই সালাত ছাড়া যাবে না। বেহুশ অবস্খায় তা আদায় করতে না পারলে হুশ ফিরার পর তা কাযা করে নিতে হবে। এর গুরুত্বের প্রতি লক্ষ্য করেই শরীয়ত শিশুর সাত বছর বয়সে তাকে সালাতে অভ্যস্ত করার নির্দেশ দিয়েছে। প্রাপ্তবয়স্ক হলে তাকে আর ছাড় দেয়া যাবেনা। আল্লামা ইবনুল কাইয়িম রাহ, সালাতের ফযীলত বর্ণনা করে বলেন, “সালাত : রিযক আনে, সুস্খতা রক্ষা করে, কষ্ট দূর করে, অন্তরকে শক্তিশালী করে, চেহারাকে উজ্জ্বল করে, আত্মাকে শান্তি দেয়, অলসতা দূর করে, নি'আমত রক্ষা করে, শয়তান থেকে দূরে রাখে ও রহমানের নৈকট্যে নেয়।” রাসূলুল্লাহ (সা·) তার শেষ নি:শবাস ত্যাগ করার পূর্বে যে ওসিয়তটি করেছিলেন, তা হল, “আস-সালাত, আস-সালাত”।
সালাতের হুকুম : কুরআন, সুন্নাহ ও ইজমার ভিত্তিতে এটি ফরযে আইন। এটি সকল প্রাপ্তবয়স্ক মুসলমানের উপর ফরয। শরয়ী ওযর ব্যতীত এটি ত্যাগ করা যাবে না। পবিত্র কুরআনে বহুবার বলা হয়েছে, “তোমরা সালাত কায়েম কর”। অনুরূপ বহু হাদীসেও এর আবশ্যকতার বর্ণনা এসেছে।

সালাত ত্যাগ করার বিধান : কেউ যদি সালাত ফরয হওয়ার বিয়টি অস্বীকার করে তা পরিত্যাগ করে তবে তার কুফরীর ব্যাপারে সকল ওলামাগণ একমত। ইসলামের কোন রুকনকে অস্বীকার করার অর্থ ইসলামকে অস্বীকার করা। আর এটি নি:সন্দেহে কুফরী।

কিন্তু যদি ফরযের বিষয়টি স্বীকার করত: ইচ্ছাকৃতভাবে সালাত পরিত্যাগ করে তবে সে কাফির হয়ে যাবে নাকি ফাসিক হবে এ ব্যাপারে ওলামাদের দু'ধরনের মত থাকলেও এটি যে জঘণ্য অপরাধ ও বড় পাপ তাতে তাদের কোন দ্বিমত নেই। হাদীসে সালাত ত্যাগকারীর ব্যাপারে অনেক দু:সংবাদ বর্ণিত হয়েছে। বিভিন্ন হাদীসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতকে ঈমানের উপর চলার প্রথম প্রমাণ এবং কাফির ও মুসলিমের মাঝে পৃথক করার উপায় হিসেবে নির্ধারণ করেছেন।

হাদীসে এসেছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “ব্যক্তি এবং শিরক ও কুফরের মাঝে পার্থক্যকারী বিষয় হল সালাত ত্যাগ করা।” [মুসলিম, হাদীস নং-১১৬] অপর এক হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “আমাদের আর তাদের মাঝে মূল অঙ্গীকার হল সালাত, যে ব্যক্তি তা তরক করল সে কুফরী করল।” [মুসনাদ আহমাদ, হাদীস নং-২১৮৫৯] এ ব্যাপারে সৌদি আরবের গ্রাণ্ড মুফতী আব্দুল আযীয ইবন আব্দুল্লাহ ইবন বা'যের ফতোয়াটি নিম্নে তুলে ধরছি। ‘সালাত ত্যাগ করা কুফরী, এর কারণ হলো যে, যে ব্যক্তি সালাত ওয়াজিব হওয়া অস্বীকার করে সে আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল, আহলে ইলম ও ঈমান এর সর্বসমôত সিদ্ধান্তের মিথ্যা প্রতিপন্নকারী। যে ব্যক্তি অলসতা করে সালাত ছেড়ে দিল তার থেকে উক্ত ব্যক্তির কুফরী খুবই মারাত্মক। উভয় অবস্খাতেই মুসলিম শাসকগণের প্রতি অপরিহার্য হলো যে, তারা সালাত ত্যাগকারীদেরকে তাওবা করার নির্দেশ দিবে, যদি তওবাহ না করে, তা হলে এ বিষয়ে বর্ণিত দলিলের ভিত্তিতে তাদেরকে হত্যা করার নির্দেশ প্রদান করবে। অতএব সালাত ত্যাগকারীকে বর্জন করা এবং তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করা ওয়াজিব এবং সালাত ত্যাগ করা থেকে আল্লাহর কাছে তওবাহ না করা পর্যন্ত তার দা'ওয়াত গ্রহণ করা যাবে না। সাথে সাথে তাকে ন্যায়ের পথে আহ্বান ও নসিহত প্রদান করা ওয়াজিব এবং দুনিয়া ও আখেরাতে সালাত ত্যাগ করার কারণে যে শাস্তি তার প্রতি নির্ধারিত আছে তা থেকে সাবধান করতে হবে। এর ফলে হয়তো সে তাওবা করতে পারে এবং আল্লাহ পাক তার তাওবাহ কবুলও করতে পারেন।” [সূত্র : “ফাতাওয়া ওলামাইল বালাদিল হারাম” পৃ· ১৪৫]

তাছাড়া সালাত পরিত্যাগকারীদের ব্যাপারে শর'ঈ যে সকল শাস্তি রয়েছে তা নিম্নে তুলে ধরছি :
(ক) তার উপর থেকে আল্লাহ দায় রহিত হয়ে যায়। হাদীসে রয়েছে, “রাসূলুল্লাহ সা· বলেন, “যে ইচ্ছাকৃত সালাত ত্যাগ করে তার থেকে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের জিমôা রহিত হয়ে যায়।” [মুসনাদ আহমাদ, হাদীস নং-২৬০৯৮] অর্থাৎ তার জন্য কোন নিরাপত্তা ও প্রতিশন্সুতি থাকে না।
(খ) কিয়ামতের দিন তার হাশর হবে ফির'আউনের সাথে। হাদীসে রয়েছে, আর যে একে সংরক্ষণ করবে না তার জন্য এটি কেয়ামতের দিন নূর-দলিল ও নাজাত হবে না এবং কিয়ামত দিবসে উঠবে কারূন, ফিরআউন, হামান ও উবাই ইবন খালফ এর সঙ্গী হয়ে'। [সুনান বায়হাকী, হাদীস নং ২৬৯৭]
(গ) সে শয়তানের দলের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ বলেন, “তারা হচ্ছে শয়তানের দল। শুনে রাখ। শয়তানের দলই হচ্ছে ক্ষতিগ্রস্ত।” [সূরা মুজাদালাহ, আয়াত : ১৯]
(ঘ) কবরে তাকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি দেয়া হবে। হাদীসে এসেছে, “এক ফিরিশতা পাথর নিয়ে তার মাথায় আঘাত করবে, ফলে তা চুর্ণবিচুর্ণ হয়ে যাবে। পাথরটি কুড়িয়ে আনতে আনতে তার মাথা আবার আগের মত হয়ে যাবে। তখন একইভাবে আঘাত করা হবে। এভাবে তার শাস্তি চলতে থাকবে।” [মুসনাদ আহমাদ, হাদীস নং ১৯২৩৬]
কাজেই যারা এতদিন অলসতা করে সালাত ত্যাগ করেছেন, তাদের প্রতি আমাদের আবেদন হল, খাঁটি মনে তওবা করে সালাত কায়েম করা আরম্ভ করুন। অন্যথায় রক্ষা নেই। এখানে উল্লেখ্য যে, সালাত ত্যাগের এ বিধান নারী-পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রেই সমভাবে প্রযোজ্য।

লেখক : রিসার্চ এসোসিয়েট, কাউন্সিল ফর ইসলামিক রিসার্চ, মসজিদ কাউন্সিল