সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য যিনি দ্বীনকে পূর্ণতা দান করেছেন এবং আমাদের জন্য সকল কল্যাণ বিধান করে ইসলামকে দ্বীন হিসাবে নির্বাচিত করেছেন। শান্তি ও করুণা বর্ষিত হউক তাঁরই বিশেষ বান্দাহ ও রাসূল (সঃ) মুহাম্মাদের উপর যিনি অতিরঞ্জন, বিদআ’ত (নবপ্রথা) ও পাপাচার হতে মুক্ত থেকে তাঁর রবের আনুগত্য করার প্রতি আহ্বান করেছেন। আল্লাহ তাঁর উপর, তাঁর বংশধর ও সাহাবী এবং কিয়ামত পর্যন্ত যারা তাঁর প্রদর্শিত পথের অনুসারী হবে সকলের উপর করুণা বর্ষণ করুন।
অতঃপর, ভারতের উত্তর প্রদেশের শিল্প নগরী কানপুর থেকে প্রকাশি ‘ইদারাত’ নামক এক উর্দু সাপ্তাহিকীর প্রথম পৃষ্ঠায় প্রকাশিত একটি প্রব›দ্ধসম্পর্কে আমি অবহিত হলাম। এতে প্রকাশ্যভাবে অবলম্বিত ইসলামী আক্বীদা সমূহ এবং বিদআ’ত বিরোধিতার অবলম্বিত সলফে সালেহীনের আক্বীদাকে সুন্নাহ বিরোধী বলে দোষারোপ করা হয়েছে। লেখক আহলে সুন্নাতের মধ্যে ঐক্য ও সংহতি বিনষ্ট করে তাদের মধ্যে বিদ’আত ও কুসীংস্কারের প্রসার সাধনের দূরভিসন্ধি নিয়েই উক্ত প্রবন্ধটি রচনা করেছেন।
নিঃসন্দেহে এটি একটি জঘন্য আচরন ও ভয়াবহক চক্রান্ত, যার উদ্দেশ্য ইসলাম ধর্মে (দ্বীনে)র তি এবং ভ্রষ্টতা ও বিদ’আতের প্রসার সাধন। লেখক রাসূলূল্লাহর (সঃ) জন্মানুষ্ঠান বা মিলাদ মাহফিল আয়োজনের উপর পরিস্কারভাবে জোর দিয়েছেন এবং এ প্রসঙ্গ ধরে সৌদী আরব ও তার নেতৃত্বের বিশুদ্ধ আক্বীদার উপর বিরূপ আলোচনার সূত্রপাত করেছেন। অতএব, জনসাধারণকে এ সম্পর্কে সতর্ক করে দেওয়ার প্রয়োজন অনুভূত হওয়ায় আল্লাহ তায়ালার সাহায্য প্রার্থনা করে আমি নিম্নোক্ত বক্তব্য প্রদান করছি।
রাসূল (সঃ) বা অন্য কারো জন্মোৎসব পালন করা জায়েজ নয়, বরং তা বারণ করা অবশ্য কর্তব্য। কেননা, এটি ধর্মে (দ্বীনে) নব প্রবর্তিত একটি বিদ’আত। রাসূল (সঃ) কখনও এ কাজ করেননি। তাঁর নিজের বা তাঁর পূর্ববর্তী কোন নবী বা তাঁর কোন দুহিতা, স্ত্রী, আত্মীয় অথবা কোন সাহাবীর জন্মদিন পালনের কোন নির্দেশ তিনি দেননি। খোলাফায়ে রাশেদীন, সাহাবায়ে কেরাম (আল্লাহ তায়া’লা তাদের সকলের উপর সন্তুষ্ট হউন) অথবা তাঁদের সঠিক অনুসারী তাবেয়ীনদের মধ্যেও কেউই এমন কাজ করেননি। এমনকি, আমাদের পূর্ববর্তী অধিকতর উত্তম যুগে কোন আলেমও এ কাজ করেননি। এমনকি, আমাদের পূর্ববর্তী অধিকতর উত্তম যুগে কোন আলেমও এ কাজ করেননি। অথচ তাঁরা সুন্নাহ সম্পর্কে আমাদের চেয়ে অধিকতর জ্ঞান রাখতেন এবং আল্লাহর রাসূল (সঃ) ও তাঁর শরীয়ত পালনকে সর্বাধিক ভালবাসতেন। যদি এ কাজটি এমনই সওয়াবের হতো তাহলে তাঁরা আমাদের আগেই তা করতেন।
দ্বীনে ইসলামী একটি পরিপূর্ণ ধর্ম (দ্বীন)। আল্লাহ তায়া’লা স্বীয় রাসূলের মাধ্যমে যে শরীয়ত প্রবর্তন করেছেন তা স্বয়ং-সম্পুর্ন বিধায় আমাদেরকে তা অনুসরণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এবং বিদ’আত বা নতুন কোন প্রথার সংযোজন থেকে নিষেধ করা হয়েছে। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত এই শিা সাহাবায়ে কেরাম ও তাঁদের সঠিক অনুসারী তাবেয়ীনদের কাছ থেকে সর্বান্তঃকরনে গ্রহণ করেছেন।
নবী করীম (সাঃ) থেকে সহীহ হাদীসে বর্ণিত আছে, তিনি বলেছেন-“আমাদের এই ধর্মে (দ্বীনে) যে কেউ নতুন কিছু উদ্ভাবন করবে তা প্রত্যাখ্যান হবে।” এই হাদীসটি বোখারী ও মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে। সহীহ মুসলিমে বর্ণিত অন্য এক হাদীসে নবী করীম (সাঃ) বলেছেন- “কেউ যদি এমন কাজ করে যা আমাদের এই ধর্মে (দ্বীনে) নেই তাহলে তা প্রত্যাখ্যান হবে।” তিনি অন্য এক হাদীসে এরশাদ করেছেন- “তোমরা সুন্নাত এবং আমার পরবর্তী খেলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাত পালন করবে। আর, তা দৃঢ়তার সাথে ধারণ করবে। সাবধান! কখনও ধর্মে (দ্বীনে) নব প্রবর্তিত কোন বিষয় গ্রহণ করবে না। কেননা প্রত্যেক নব প্রবর্তিত বিষয়ই বিদআ’ত এবং প্রত্যেক বিদআ’তই পথভ্রষ্টাত।” রাসূল (সঃ) জুম’আর দিন খুৎবায় বলতেন- “নিশ্চয়ই সর্বোত্তম কথা হলো আল্লাহর কিতাব আর সর্বোত্তম হেদায়াত হলো মুহাম্মদ (সাঃ)-এর হেদায়াত। সর্বনিকৃষ্ট বিষয় হলো মনগড়া নব প্রবর্তিত বিষয় বিদআ’ত এবং এরূপ প্রতিটি বিদাআ’ত-ই পথভ্রষ্টতা।”
এই সমস্ত হাদীসে বিদাআ’ত প্রবর্তনের বিরুদ্ধে কঠোর সতর্ক বাণী উচ্চারণ করা হয়েছে এবং উম্মতকে এর ভয়াবহতা সম্পর্কে সাবধান করা হয়েছে। আর, এতে লিপ্ত হওয়া থেকে ভীতি প্রদর্শনকরা হয়েছে। এ বিষয়ে আরো অনেক সহীহ হাদীস বর্ণিত আছে।
আল্লাহ তা’য়ালা বলেন-
“রাসূল (সঃ) যা নিয়ে এসেছেন তা গ্রহণ কর এবং যা বিছু নিষেধ করেছেন তা থেকে বিরত থাক।” (সূরা হাশর ৫৯ঃ৭)
আল্লাহ তা’য়ালা আরও বলেন-
“যারা তাঁর [রাসূল (সঃ)-এর] হুকুমের বিরোধীতা করে তাদের ভয় করা উচিত যে, তাদের উপর কোন ফেৎনা বা কোন মর্মন্তুদ শাস্তি আসতে পারে।” (সুরা নুর ২৪ঃ ৬৩)
আল্লাহ পাক আরও বলেন-
“প্রকৃতপক্ষে তোমাদের মধ্যে যারা পরকালের আশা রাখে এবং আল্লাহকে খুব বেশী স্মরণ করে তাদের জন্য রাসূলের জীবনের এক সর্বোত্তম নমুনা বর্তমান রয়েছে।” (সুরা আহ্যাব ৩৩ঃ ২১)
আল্লাহ মহামহিম আরও বলেন-
“সেসব মুহাজির ও আনসার, যারা সর্বপ্রথম ঈমানের দাওয়াত কবুল করেছিল এবং যারা নিতান্ত সততার সাথে তাদের অনুসরণ করেছিল তাদের উপর আল্লাহ সন্তুষ্ট রয়েছেন এবং তারাও আল্লাহ তা’য়ালার উপর সন্তুষ্ট। আল্লাহ তা’য়ালা তাদের জন্য এমন জান্নাত সমূহ তৈরী করে রেখেছেন যার নিন্মদেশে ঝর্ণধারা সর্বদা প্রবাহমান। এই জান্নাতে তারা চিরস্থায়ী হয়ে থাকবে। বস্তুতঃ ইহা এক বিরাট সাফল্য।” (সুরা তওবা ৯ঃ ১০০)
আল্লাহ সুমহান আরও বলেন-
“আজ আমি তোমাদের দ্বীনকে তোমাদের জন্য সম্পূর্ণ করে দিলাম, আর তোমাদের প্রতি আমার নেয়ামত পূর্ণ করে ইসলামকে তোমাদের দ্বীন হিসাবে পছন্দ করে নিলাম।” (সুরা মায়দা ৫ঃ ৩)
এই আয়াত দ্বারা সুষ্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয় যে, আল্লাহ এই উম্মতের জন্য প্রবর্তিত দ্বীনকে পরিপূর্ণ করেছেন, তাঁর নেয়ামতকে সম্পূর্ণ করেছেন। নবী (সাঃ) তাঁর উপর অর্পিত বালাগে মুবীন বা স্পষ্ট বার্তাকে পৌছাবার এবং কথায় ও কাজে শরীয়তকে বাস্তবায়িত করার পরই পরলোক গমন করেন। তিনি এই বিষয়টি পরিস্কার করে বলে গেছেন যে, তাঁর পরে লোকেরা কথায় বা কাজে যেসব নব প্রথার উদ্ভাবন করে শরীয়তের সাথে সম্পৃক্ত করবে সেসব বিদআ’ত বিধায় প্রত্যাখ্যাত হবে। যদিও এগুলো প্রবক্তার উদ্দেশ্য সৎ থাকবে। সাহাবায়ে কেরাম ও তাবেয়ীগণ বিদআ’ত থেকে জনগণকে সতর্ক ও ভয় প্রদর্শন করেছেন। কেননা এটা ধর্মে (দ্বীনে) অতিরিক্ত সংযোজন যার অনুমতি আল্লাহ তায়া’লা কাউকে দেননি এবং ইহা আল্লাহর শত্র“ ইহুদী ও খ্রীষ্টান কর্তৃক তাদের ধর্মে (দ্বীনে) নব নব প্রথা সংযোজনের সঙ্গে সামঞ্জস্য সরূপ। এরূপ করার অর্থ এই দাড়ায় যে, ইসলামকে অসম্পূর্ণ ও ত্র“টিপূর্ণ বলে। মিথ্যা অপবাদ দেওয়ার সুযোগ প্রদান করা। এটা যে কত বড় ফাসাদ ও জঘন্য কর্ম এবং আল্লাহর বাণীর বিরোধী তা সর্বজন বিদীত।
আল্লাহ বলেন-
“আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পরিপূর্ণ করে দিলাম।” (সুরা মায়েদঃ ৩)
সেই সাথে ইহা রাসূল (সঃ) পরিস্কার হাদীস সমূহ যেগুলোতে তিনি বিদআ’ত থেকে সতর্ক ও দুরে থাকতে বলেছেন সেগুলোরও সম্পূর্ণ পরিপন্থী। মিলাদ মাহফিল বা নবীর জন্মোৎসব পালন বা এ জাতীয় অন্যান্য উৎসবাদির প্রবর্তনের মাধ্যমে এ কথাই বোঝা যায় যে, আল্লাহ তা’য়ালা এই উম্মতের জন্য ধর্ম (দ্বীন) কে পূর্ণতা দান করেননি এবং যা যা করণীয় তার বার্তা রাসূল (সঃ) উম্মতের নিকট পৌছাননি। তাই, এইসব পরবর্তীকালের লোকেরা এসে এমন কিছু প্রবর্তন করেছেন যার অনুমতি আল্লাহ তা’য়ালা তাদের দেননি, অথচ তারা ভাবছেন এতে আল্লাহর নৈকট্য অর্জিত হবে। নিঃসন্দেহে এতে মারাত্মক ভয়ের কারণ রয়েছে এবং তা আল্লাহ তা’য়ালা তাঁর রাসূল (সঃ) উপর আপত্তি উত্থাপনের শামিল। অথচ আল্লাহ তাঁর বান্দাহদের জন্য ধর্ম (দ্বীন)-কে সর্বাঙ্গীনভাবে পূর্ণ করেছেন ও তাঁর নেয়ামত সম্পূর্ণ করেছেন এবং রাসূল (সঃ) ইসলামের স্পষ্ট বার্তা যথাযথভাবে পৌছিয়েছে। তিনি এমন কোন পথ যা জান্নাতের পানে নিয়ে যায় এবং জাহান্নাম থেকে দূরে রাখে উম্মতকে তা বাতলাতে কসূর করেননি। যেমন- আব্দুল্লাহ বিন আমর বিন আ’স থেকে সহীহ হাদীস বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ “আল্লাহ যত নবী পাঠিয়েছেন উম্মতের প্রতি তাদের দায়িত্ব এই ছিল যে, উম্মতের জন্য যা কিছু ভাল জানেন তাই বলবেন আর যা কিছু মন্দ বলে জানেন তা থেকে তাদেরকে সতর্ক করবেন”। সহীহ মুসলিমে এই হাদীস বর্ণিত হয়েছে।
এ কথা সকলের জানা আছে যে, আমাদের নবী সকল নবীদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ। তিনি সবার চেয়ে অধিকতর পরিপূর্ণভাবে দ্বীনের পয়গাম ও উপদেশ বার্তা পৌছিয়েছেন। যদি মিলাদ মাহফিল আল্লাহ কর্তৃক মনোনীত দ্বীনের অংশ হতো তাহলে তিনি নিশ্চয়ই উম্মতের কাছে বর্ণনা করতেন বা তাঁর সাহাবীগণ তা করতেন। যেহেতু এমন কিছু পাওয়া যায় না, অতএব, প্রমাণিত হয় যে, ইসলামের সাথে এই মিলাদ মাহফিলের কোনই সম্পর্ক নেই বরং এটা বিদআ’ত যা থেকে রাসূল (সঃ) তাঁর উম্মতকে সতর্ক থাকতে বলেছেন। যেমন পূর্বোল্লেখিত হাদীস সমূহে বর্ণিত হয়েছে।
এক দল উলামায়ে কেরাম উপরোক্ত ও অন্যান্য দলীলের উপর ভিত্তি করে মিলাদ মাহফিল পালনের বৈধতা অস্বীকার করতঃ এ সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়েছেন। এটা জানা কথা যে, বিরোধপূর্ণ বিষয় এবং হালাল বা হারামের ব্যাপারে শরীয়তের নীতি হলো কোরআন ও হাদীসে রাসূল (সঃ)-এর মীমাংসা অনুসন্ধান করা। যেমন-
আল্লাহ তায়া’লা বলেছেণঃ
“হে ঈমানদারগণ! আনুগত্য কর আল্লাহর, আনুগত্য কর রাসূলের এবং তোমাদের মধ্যে কর্তা ব্যক্তিদের। যদি কোন বিষয়ে তোমাদের মধ্যে মত বিরোধ দেখা দেয়, তাহলে তা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের দিকে ফিরিয়ে দাও যদি তোমরা আল্লাহ তায়া’লা ও কিয়ামতের উপর বিশ্বাস করে থাক। এটাই উৎকৃষ্ট এবং পরিণতির দিক দিয়ে সর্বোত্তম পন্থা।” (সুরা নিসা ৪ঃ ৫৯)
আল্লাহ তায়া’লা আরও বলেনÑ
“তোমরা যে বিষয়েই মতভেদ করনা কেন তার মিমাংসা আল্লাহরই নিকট রয়েছে?” (সুরা শুরা ৪২-১০)
যদি এই মিলাদ মাহফিলের বিষয়টি সম্পর্কে কোরআন শরীফের দিকে ফিরে যাই তাহলে দেখতে পাই আল্লাহ তাঁর রাসূল (সঃ) যা আদেশ বা নিষেধ করেছেন আমাদের তা-ই অনুসরণ করার নির্দেশ দেন এবং জানান যে, তিনি এই উম্মতের জন্য তাদের ধর্ম (দ্বীন)-কে পূর্ণতা দান করেছেন। রাসূল (সঃ) যা নিয়ে এসেছেন তার মধ্যে মিলাদ অনুষ্ঠানের কোন ইঙ্গিত পর্যন্ত নেই। সুতরাং এ কাজ সে দ্বীনের অন্তর্ভুক্ত নয় যা আল্লাহ তায়া’লা আমাদের জন্য পূর্ণ করে দিয়েছেন এবং এ ব্যাপারে আমাদেরকে তাঁর রাসূলের পদাঙ্ক অনুসরণ করার নির্দেশ রয়েছে।
এভাবে যদি আমরা এ ব্যাপারে সুন্নাতে রাসূল (সঃ)-এর দিকে ল্য করি তাহলে দেখতে পাই যে রাসূল (সঃ)-এ কাজ করেননি, এর আদেশও দেননি। এমনকি তাঁর সাহাবীগণও (তাঁদের উপর আল্লাহর সন্তুষ্টি বর্ষিত হউক) তা করেননি। তাই আমরা বুঝতে পারি যে, এটা ধর্মীয় (দ্বীন) কাজ নয় বরং বিদআ’ত এবং ইহুদী ও খ্রীষ্টানদের উৎসব সমূহের অন্ধ অনুকরণ। যে ব্যক্তির সামান্যতম বিচণতা আছে এবং হক গ্রহণে ও তা অনুসন্ধানে সামান্যতম বিবেকও আগ্রহ রাখে তার বুঝতে কোন অসুবিধা হবে না যে, ধর্মের (দ্বীনের) সাথে মিলাদ মাহফিল বা যাবতীয় জন্ম বার্ষিকী পালনের কোন সম্পর্ক নেই। বরং যে বিদআ’ত সমূহ থেকে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সঃ) নিষেধ ও সতর্ক করেছেন এটি সেগুলোরই অন্তর্ভূক্ত।
বিভিন্ন স্থানে অধিক সংখ্যক লোক এই বিদআতী কাজে লিপ্ত দেখে কোন বুদ্ধিমান লোকের পে প্রবঞ্চিত হওয়া সংগত নয়। কেননা ন্যায় বা হক লোকের সংখ্যাধিক্যের ভিত্তিতে জানা যায় না বরং শরীয়তের দলীল সমূহের মাধ্যমে তা অনুধাবন করা হয়। যেমন আল্লাহ তায়া’লা ইহুদী ও খ্রীষ্টানদের সম্পর্কে বলেছেন-
“তারা বলে ইহুদী ও খ্রীষ্টান ছাড়া অন্য কেউ জান্নাতে কখনও প্রবেশ করবে না। এটা তাদের মিথ্যা আশা। আপনি বলুন, যদি তোমরা সত্যবাদী হয়ে থাক তাহলে যুক্তি প্রমাণ নিয়ে এসো।” (সুরা বাকারা ২ঃ ১১১)
“যদি; আপনি এই পৃথিবীর সংখ্যাগরিষ্ঠ লোকের অনুসরণ করেন তাহলে তারা আপনাকে আল্লাহ তায়া’লার পথ থেকে বিভ্রান্ত করে দেবে।” (সুরা আন’আম ৬ঃ ১১৬)
এই মিলাদ মাহফিল সমূহ বিদ’আত হওয়ার সাথে সাথে অনেক এলাকায় প্রায়শঃ তা অন্যান্য পাপাচার থেকেও মুক্ত হয় না। যেমন নারী-পুরুষের সংমিশ্রণ, গান-বাজনা ও মাদক দ্রব্যের ব্যবহার ইত্যাদি। সর্বোপরি এইসব মাহফিলে শিরকে আকবর সংঘটিত হয়ে থাকে। আর তা হলো রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ও অন্যান্য আওলিয়ায়ে কেরামের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করা, তাদের কাছে দোয়া করা, সাহায্য ও বিপদ মুক্তির প্রার্থনা করা এবং এই বিশ্বাস পোষণ করা যে, তারা গায়েব জানেন, ইত্যাদি কাজ যা করলে লোক কাফের হয়ে যায়। কারণ, রাসূল (সঃ) থেকে বর্ণিত হাদীসে রয়েছে, তিনি বলেছেন-“সাবধান! ধর্মে (দ্বীনে) অতিরঞ্জন করো না। তোমাদের আগে যারা ছিল তারা ধর্মে (দ্বীনে) অতিরঞ্জনের ফলেই ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে।”
রাসূল (সঃ) আরও বলেব- তোমরা আমার এমন অতি প্রশংসা করো না যেমন খ্রীষ্টনগণ ইবনে মারইয়ামের (ঈসা আলাইহিস সালাম) অতি প্রশংসায় লিপ্ত হয়েছিল। আমি একজন বান্দা, তাই আমাকে আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসূল (সঃ) বলে উল্লেখ করে।’ ইমাম বুখারী তাঁর সহীহ গ্রন্থে এই হাদীসটি উল্লেখ করেছেন।
অতীব আশ্চর্য ও বিস্ময়ের ব্যাপার এই যে, অনেক লোক এ ধরনের বিদআ’তী অনুষ্ঠানে উপস্থিত হওয়ার জন্য খুবই তৎপর ও সচেষ্ট এবং এর বিপে যুক্তি প্রমাণ দাঁড় করাতে স্বতঃ প্রস্তুত। অথচ তারা জামাতের নামাজে ও জু’মার নামাজে অনুপস্থিত থাকতে কুন্ঠাবোধ করে না, যদিও তা আল্লাহ ওয়াজিব করেছেন। এমনকি এ বিষয়ে তারা মস্তক উত্তোলনও করে না এবং এটাও উপলব্ধি করে না যে, তারা একটি মারাত্মক অন্যায় কাজ করছে। নিঃসন্দেহে ঈমানের দূর্বলতা, ীণ বিচণতা তা নানা রকম পাপাচার হৃদয়ে আসন করে নেওয়ার ফলেই এরকম হয়ে থাকে। আল্লাহ পাপাচার হৃদয়ে আসন করে নেওয়ার ফলেই এরকম হয়ে থাকে। আল্লাহ তায়া’লার কাছে আমাদের এবং সকল মুসলিমের জন্য সংযম ও নিরাপত্তা কামনা করি।
এর চেয়েও বিস্ময়কর ব্যাপার এই যে, অনেকের ধারণা, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) মিলাদ মাহফিলে উপস্থিত হন। তাই তারা তাঁকে অভিনন্দন জানাতে দাড়িয়ে যান। এটা মস্ত বড় অসত্য ও জ্ঞনহীন অজ্ঞতা বৈ কিছু নয়। রাসূল (সঃ) কিয়ামতের পূর্বে তাঁর কবর থেকে বের হবেন না, বা কারো সাথে যোগাযোগ করবেন না এবং কোন সমাবেশেও উপস্থিত হবেন না। বরং তিনি কিয়ামত পর্যন্ত স্বীয় কবরেই অবস্থান করবেন এবং তাঁর পাক রূহ রবের নিকট উর্দ্ধতর ইল্লিনের সম্মানজনক স্থানে সংরতি থাকবে।
আল্লাহ তায়া’লা বলেছেন-
“এরপর তোমাদের অবশ্যই মরতে হবে, অতঃপর কিয়ামতের দিন তোমাদের অবশ্যই পূণরুজ্জীবিত করা হবে।” (সুরা মু’মিনুন ২৩ঃ ১৬)
রাসূল (সঃ) বলেছেন- “কিয়ামতের দিন আমার কবরই সর্ব প্রথম খন্ডিত হবে। আমিই প্রথম সুপারিশকারী এবং আমারই সুপারিশ সবার আগে গৃহীত হবে।”
এই আয়াত ও হাদীস শরীফ এবং এই অর্থে আরও যেসব আয়াত ও হাদীস এসেছে তার দ্বারা বুঝা যায় যে, নবী (সাঃ) সহ অন্যান্য সব মৃত লোকগণ শুধুমাত্র কিয়ামতের দিনই তাদের কবর থেকে বের হবেন। সমস্ত মুসলিম আলেমগণের মধ্যে এ ব্যাপারে ঐক্যমত (ইজমা) প্রতিষ্ঠিত রয়েছে। এতে কারো মত বিরোধ নেই। সুতরাং সকল মুসলিমের উচিত এসব বিষয়ে অবহিত হওয়া এবং অজ্ঞ লোকেরা যেসব বিদআত ও কুসংষ্কার আল্লাহ পাকের নির্দেশ ব্যতিরেকে প্রবর্তন করেছে সেসব বিষয়ে সতর্ক থাকা।
রাসূল (সঃ)-এর উপর দরূদ ও সালাম পড়া নিঃসন্দেহে একটি ভাল আমল এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভের এক উত্তম পন্থা। যেমন আল্লাহ তায়া’লা বলেছেন-
“নিশ্চয়ই আল্লাহ ও ফেরেশতাগণ নবীর প্রতি দরূদ পাঠান। হে মুমিনগণ তোমরাও তাঁর প্রতি দরূদ পাঠাও।” (সুরা আহযাব ৩৩ঃ ৫৬)
নবী করীম (সাঃ) বলেনÑ“যে ব্যক্তি আমার প্রতি একবার দরূদ পাঠায় আল্লাহ তায়া’লা এর প্রতিদানে তার উপর দশবার দরূদ পাঠান।”
সব সময়ই দরূদ পড়ার বৈধতা রয়েছে। তবে নামাজের শেষে পড়ার জন্য বিশেষভাবে তাকিদ করা হয়েছে বরং অনেক আলেমের মতে নামাজের মধ্যে শেষ তাশাহ্হুদের সময় দরূদ পড়া ওয়াজিব। অনেক েেত্র এই দরূদ পড়া সুন্নাতে মুয়াক্কাদা। যেমন- আযানের পরে, জু’মাআর দিনে ও রাতে এবং রাসূল (সঃ) উল্লেখ হলে। এ ব্যাপারে অনেক হাদীস রয়েছে। এই বিষয়ে আমি যা সতর্ক করতে চেয়েছিলাম তা করেছি। আশা করি, আল্লাহ তায়া’লা যার প্রতি উপলব্ধির দ্বার খুলেছেন- ও যার দৃষ্টি শক্তিতে আলো দান করেছেন তার জন্য এতচুকুই যথেষ্ট।
আমার জেনে খুবই দুঃখ হয় যে, এরূপ বিদআ’তী অনুষ্ঠান এমন সব মুসলমান দ্বারাও সংঘটিত হচ্ছে যারা তাদের আকায়েদ ও রাসূল (সঃ)ুল্লাহর মহব্বতের ব্যাপারে খুবই দৃঢ়তা রাখেন। যে এই সবের প্রবক্তা তাকে বলছি, যদি তুমি সুন্নী ও রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর অনুসারী হওয়ার দাবী রাখ তাহলে বল, তিনি স্বয়ং বা তার কোন সাহাবী বা তাদের সঠিক অনুসারী কোন তাবেয়ী কি এ কাজটি করেছেন, না এটা ইহুদী ও খ্রীষ্টন বা তাদের মত অন্যান্য আল্লাহর শত্র“দের অন্ধ অনুকরণ? এ ধরনের মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠানের মাধ্যমে রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর প্রতি ভালবাসা প্রতিফলিত হয় না। যা করলে ভালবাসা প্রতিফলিত হয় তা হলো তাঁর নির্দেশের অনুসরণ করা, যা কিছু তিনি বলেছেন তা বিশ্বাস করা, যা কিছু নিষেধ করেছেন তা বর্জন করা। আল্লাহ যেভাবে নির্দেশ করেছেন কেবল সেভাবেই তাঁর উপাসনা করা। এমনিভাবে, রাসূলের উল্লেখ করা হলে, নামাজের সময় ও সদা সর্বদা যে কোন উপলে তাঁল উপর দরূদ পাঠ করার মাধ্যমে তাঁর প্রতি ভালবাসা প্রমাণিত হয়।
এই সমস্ত বেদ’আতী বিষয় অস্বীকার করে ওহাবী আন্দোলন (লেখকের ভাষায়) নতুন কিছু করেনি। বস্তুতঃ ওহ্হাবীদের আক্বীদা হলো নিম্নরূপঃ
কুরআন ও সুন্নাতে রাসূল (সঃ) আঁকড়ে ধরা এবং রাসূল (সঃ), তাঁর খুলাফায়ে রাশেদীন ও তাঁদের সঠিক অনুসারী তাবেয়ীনদের প্রদর্শিত পথে চলা। আল্লাহর মারেফতের েেত্র সলফে সালেহীন, আয়েম্মায়ে দ্বীন ও ধর্মীয় (দ্বীন) শাস্ত্রবিদগনের পথ অনুসরণ করা এবং আল্লাহর সিফাতের (গুণাবলী) সেভাবে গ্রহণ করা যেভাবে কোরআন ও সহীহ হাদীসে বর্ণিত হয়েছে এবং যা রাসূল (সঃ)-এর সাহাবীগণ সমর্থন ও গ্রহণ করেছেন। ওহাবীগণ আল্লাহ তায়ালার সিফাতকে অবিকৃত ও দৃষ্টান্তহীন এবং কোন ধরণ ব্যতিরেকে বিনা দ্বিধায় সেভাবে প্রমাণিত ও বিশ্বাস করে চলেন যেভাবে উহা তাদের কাছে পৌছেছে। তারা তাবেয়ীন ও তাদের অনুসারী (যারা ছিলেন ইলম, ঈমান ও তাক্ওয়ার অধিকারী) সলফে সালেহীন ও আইম্মায়ে দ্বীনের পথই আঁকড়ে ধরে আছেন। তারা এ-ও বিশ্বাস করেন যে, ঈমানের মূল ভিত্তি হলো ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সঃ)। (আল্লাহ ব্যতীত কোন মা’বুদ নেই, মুহাম্মদ আল্লাহর রাসূল (সঃ) বা প্রেরিত পুরুষ)। এটাই এক আল্লাহর উপর বিশ্বাসের মূল ভিত্তি ও ঈমানের প্রধান আমল এবং ইজমায়ে মুসলিমের (সমগ্র মুসলমানের ঐক্যমত) স্বীকৃতি অপরিহার্য্য।
এই মৌল বাক্যের অর্থ হলোঃ একক ও অদ্বিতীয় আল্লাহর ইবাদত করা অবশ্য কর্তব্য, আর আল্লাহ ছাড়া অন্য যা কিছু বা যে কেউ হোক কারোর উপাসনা করা যাবে না। এই সেই হিকমত যার জন্য জ্বীন ও ইনসানকে সৃষ্টি করা হয়েছে, রাসূলগণকে (সঃ) প্রেরণ করা হয়েছে এবং আসমানী গ্রন্থ সমূহ অবতীর্ণ করা হয়েছে। এতে রয়েছে একমাত্র আল্লাহরই প্রতি বিনয় ও ভালবাসা, আনুগত্য ও সম্মান প্রদর্শন। এরই নাম ইসলাম ধর্ম (দ্বীন) যা ব্যতীত অন্য কোন দ্বীন না পূর্ববর্তীদের কাছ থেকে না পরবর্তীদের কাছ থেকে আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য। সমস্ত আম্বিয়ায়ে কেরাম দ্বীনে ইসলামের অনুগামী ছিলেন এবং ইসলামের অন্তর্নিহিত আত্মসমর্পনের গুণে গুণান্বিত ছিলেন। অতএব, যে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে এবং সেই সাথে অন্যের কাছেও আত্মসমর্পন করে বা প্রার্থনা করে সে মুশরিক। আর, যে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পন করে না, সে আল্লাহর ইবাদত করতে অহঙ্কারী দাম্ভীক বলে বিবেচিত।
আল্লাহ তা’য়ালা বলেনÑ
“আমি প্রত্যেক জাতির প্রতি রাসূল (সঃ) প্রেরণ করেছি এই নির্দেশ দিয়ে যে তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর এবং তাগুত থেকে নিরাপদ দুরত্বে থাক।” (সুরা নাহল ১৬ঃ ৩৬)
ওহাবী পন্থী ‘মুহাম্মদ আল্লাহর রাসূল (সঃ)’ এই সাীর বাস্তবায়নে বিদআ’ত, কুসংস্কার এবং মুহাম্মদুর রাসূলুল্লাহর (সঃ) প্রবর্তিত শরীয়ত বিরোধী আচার অনুষ্ঠান বর্জনে দৃঢ় বিশ্বাসী।
শায়খ মুহাম্মদ বিন আব্দুল ওহ্হাবের (তাঁর উপর আল্লাহ তায়া’লার রহমত বর্ষিত হউক) এই ছিল আক্বীদা। এই আক্বীদার ভিত্তিতেই তিনি আল্লাহর বন্দিগী করেন এবং এর প্রতিই লোকদের আহ্বান জানান। যে ব্যক্তি এছাড়া অন্য কিছু তাঁর প্রতি সম্পৃক্ত করে, সে মিথ্যা এবং বানোয়াট কথা বলে স্পষ্ট পাপ করছে। সে এমন কথা বলছে, যা তার জানা নেই। আল্লাহ তাকে এবং তার মত এইরূপ অপবাদকারীদের যথাযথ শাস্তি দিবেন।
শায়খ মুহাম্মদ বিন আব্দুল ওহাব যেসব মূল্যবান বিবৃতি দিয়েছেন এবং অতি উচ্চমানের অনন্য গবেষনাপত্র ও পুস্তকাদি রচনা করেছেন তাতে তিনি কোরআন, সুন্নাহ ও ইজমার আলোকে তাওহীদ, এখলাস ও শাহাদাতের আলোচনা করে আল্লাহ ছাড়া অন্য সকলের ইবাদতের যোগ্যতা খন্ডন করেছেণ এবং ছোচ বড় সকল প্রকার শিরক থেকে পাক হয়ে শুধুমাত্র আল্লাহকেই পূর্ণভাবে ইবাদতের যোগ্য বলে স্বীকার করার বিষয়টি সুশিতি ও যোগ্যতা সম্পন্ন সহচর ও শিষ্যদের মতাদর্শ সম্পর্কে অবহিত হয়েছে সে সহজেই বুঝতে পারে যে, তিনি সলফে সালিহীন ও আইম্মায়ে দ্বীনের মতাদর্শেরই অনুযায়ী ছিলেন। তিনি তাঁদেরই মত একমাত্র আল্লাহর ইবাদতের কথা বলতেন এবং কুসংঙ্কার বেদ’আতকে প্রত্যাখ্যান করতেন। সৌদী সরকার এই মতের উপরই প্রতিষ্ঠিত এবং সৌদী উলামায়ে কেরামও এই মতাদর্শের উপরই চলেছেন। সৌদী সরকার একমাত্র ইসলাম ধর্ম (দ্বীন) বিরোধী বিদ’আত ও কুসংস্কার এবং ধর্মীয় (দ্বীন) ব্যাপারে রাসূল (সাঃ) কর্তৃক নিষিদ্ধ সীমাতিরিক্ত ভক্তি ও অতিরঞ্জনের বিরুদ্ধেই কঠোরভঅবে সোচ্চার। সৌদী আলেম সমাজ জনগণ ও শাসকবর্গ প্রতিটি মুসলমানকে অঞ্চল ও গোষ্ঠী নির্বিশেষে গভীরভাবে শ্রদ্ধা করেন। তাদের মনে সবার জন্য রয়েছে গভীর ভালবাসা, ভ্রাতৃত্ব ও মর্যাদা বোধ। কিন্তু যারা ভ্রান্ত ধর্মে (দ্বীনে) বিশ্বাস রাখে এবং বেদ’আতী ও কুসংঙ্কার পূর্ণ উৎসবাদি পালন করে তাদের এই কার্যকলাপ তারা অস্বীকার ও নিষেধ করেন। কেননা, এসব কাজ ধর্মে (দ্বীনে) নতুন সংযোজন হিসেবে পরিগণিত আর সব নতুন সংযোজনই বেদ’আত।
আল্লাহ তা’য়ালা ও তাঁর রাসূল (সঃ) এসবের অনুমতি দেননি। ইসলামী শরীয়ত একটি পরিপূর্ণ ও স্বয়ংসম্পূর্ণ ধর্ম (দ্বীন)। এতে নতুন কিছু সংযোজনের কোন প্রয়োজন বা অবকাশ নেই। তাই মুসলমানদের শুধুমাত্র অনুকরণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, নব-নব ধর্ম (দ্বীন) প্রথা প্রবর্তনের জন্য বলা হয়নি। সাহাবা ও তাঁদের সঠিক অনুসারী তাবে’য়ীন থেকে সকল আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত এ বিষয়টি সম্যকভাবে সমর্থন ও গ্রহণ করেছেন।
এ কথা মনে করা ঠিক নয় যে, রাসূল (সঃ)-এর জন্মাৎসব পালন বা এর সংশ্লিষ্ট শিরক ও অতিরঞ্জনকে নিষেধ করা কোনরূপ অনৈসলামিক কাজ এবং এতে রাসূল (সাঃ)-এর প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শন করা হয়। বরং এটা তো রাসূলেরই আনুগত্য ও তাঁরই নির্দেশ পালন। তিনি বলেছেণ-
“সাবধান! ধর্মে (দ্বীনে) অতিরঞ্জন করো না। তোমাদের আগে যারা ছিল তারা ধর্মে (দ্বীনে) অতিরঞ্জনের ফলেই ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে।” তিনি আরও বলেছেন- “তোমরা আমার এমন অতি প্রশংসা করো না যেমন খ্রীষ্টানগণ ইবনে মারিইয়াম (ঈসা আলাইহিস সালাম)-এর প্রতি অতি প্রশংসা করেছে। আমি তো মাত্র একজন বান্দা। তাই আমাকে আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসূল (সঃ) বলে উল্লেখ কর।”
উপরোল্লেখিত প্রবন্ধ সম্পর্কে এতটুকুই আমার বক্তব্য আল্লাহ তা’য়ালার কাছে প্রার্থনা করছি, তিনি যেন আমাদের ও অন্যান্য সকল মুসলমানকে দ্বীন উপলব্ধি করার, এর উপর কায়েম থাকার, সুন্নাতে রাসূল (সঃ) দৃঢ়ভাবে ধারণ করার এবং বেদআত থেকে বেঁচে থাকার তাওফীক দান করেন। নিশ্চয়ই তিনি অশেষ দাতা ও পরম করুণাময়।
আল্লাহ তা’য়ালা আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মাদ (সাঃ), তাঁর পরিবার পরিজন ও সাহাবীদের উপর দরূদ ও সালাম বর্ষণ করো।”