সমস্ত প্রশংসা সে মহান আল্লাহর দরবারে যিনি আমাদের সৃষ্টি করে হালাল রিযকের ব্যবস্খা করেন। দরূদ ও সালাম প্রিয় নবীর প্রতি যাঁকে আমাদের প্রতিটি কর্মের জন্য আদর্শ বানানো হয়েছে।
আল্লাহর বান্দাগণ
আল্লাহকে যথাযথভাবে ভয় করুন, ইসলামকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করুন এবং জেনে রাখুন আল্লাহর বিধান লঙ্ঘন করলে পরকালে জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করতে হবে। এজন্য বেশি বেশি মৃত্যুর স্মরণ করা ও তা অতি শীঘন্স আমাদের আল্লাহর আহ্বানে সাড়া দিয়ে পরপারের দিকে পাড়ি দেবার প্রস্তুতি গ্রহণ করা আবশ্যক। মহান আল্লাহ আমাদের বিভিন্ন প্রকার নিয়ামত দিয়ে ধন্য করেছেন, যা গণনা করে শেষ করা যায় না এবং যার বিনিময় প্রদান করাও অসম্ভব। বান্দা প্রতি মুহূর্তে সূক্ষ্মভাবে দৃষ্টি প্রদান করলে সর্বত্র মহান আল্লাহর অশেষ নিয়ামতের নিদর্শনই দেখতে পায়। এ মর্মে ইরশাদ হচ্ছে: “আর পৃথিবীতে সব বিচরণকারীর জীবিকার দায়িত্ব আল্লাহ নিয়েছেন, তিনি জানেন তারা কোথায় থাকে এবং কোথায় সমাপিত হয়।” (সূরা হুদ, ৬)
মহান আল্লাহ তাঁর মাখলুককে সৃষ্টি করে তাদের রিযকের ব্যবস্খা করেন, কোন প্রাণীকেই তিনি রিযক থেকে বঞ্চিত করেন নি। বান্দা তার আহারের যে পরিমাণই তার মুখে পুরতে চেষ্টা করুক না কেন তা কিন্তু আসমান যমীন সৃষ্টির বহু পূর্বেই নির্ধারিত হয়েছে। মহান আল্লাহ যখন কোন বান্দার কল্যাণের ইচ্ছা করেন তখন তার রিযক বৃদ্ধি করেন ও বিভিন্ন প্রকার নিয়ামত প্রদান করে তাকে ধন্য করেন, তন্মধ্যে ধন-সম্পদ,পরিবার পরিজন ও তার সামাজিক বিভিন্ন অবস্খা অন্যতম। মহান আল্লাহর নিয়ামত অনেক বরকতময়। তার রহমত ও দয়া সমগ্র সৃষ্টিকে বেষ্টন করে রয়েছে। তাঁর দয়া ও রহমত কেউ বন্ধ করতে সম নয় তেমনি তাঁর করুণা বঞ্চিতদের কেউ জোরপূর্বক তাঁর থেকে করুণা আদায় করতেও অক্ষম।
মহান আল্লাহর এ বরকত দ্বারা উদ্দেশ্য হল নির্ধারিত পরিমাণ জিনিসে অতি বেশি বরকত অর্জন। আর তা অর্জনের মাধ্যমে বান্দাহর অবস্খার পরিবর্তন ঘটতে থাকে, তাই বরকতের এ ধারণাটি সম্পর্কে সুýপষ্ট ধারণা থাকতে হবে। কারো কম জিনিসকে আল্লাহ অতি দন্সুত বৃদ্ধি করে দেন, তেমনিভাবে অন্যের ছোট কিছুকে অল্প সময়ে বড় করে দেন। আল্লাহ তায়ালা কোন বান্দার এসব নিয়ামতে বৃদ্ধির পোষণ করলে তার জন্য বেশি অর্জনের সব পথ উন্মুক্ত করে দেন। মহান আল্লাহর রহমত বরকত অর্জনের সবচেয়ে বড় সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে বান্দাহর আল্লাহভীতি। তাকওয়া অর্জনই আল্লাহর পক্ষথেকে বান্দার উপর অশেষ নিয়ামত বর্ষণে ভাল ভূমিকা পালন করে থাকে। এ মর্মে আল্লাহ ইরশাদ করেন: “আর যদি জনপদের অধিবাসীরা ঈমান আনত এবং পরহেজগারী অবলম্বন করত, তবে আমি তাদের প্রতি আসমানী ও পার্থিব নেয়ামতসমূহ উন্মুক্ত করে দিতাম।” (সূরা আল আনফাল, ৯৬)
এ আয়াত থেকে প্রতীয়মান হয় বান্দার সার্বিক কল্যাণ ও বরকত সবকিছু আল্লাহভীতির উপরই নির্ভর করে থাকে। আল্লাহকে যথার্থ ভয়কারীদের বিপদাপদ অনেক ক্ষেত্রে তিনি সহজতর করে দেন ও অভাব অভিযোগ ও সংকীর্ণতা দূরীভূত করেন। অনেক ক্ষেত্রে তাদের মনের অজান্তেই আল্লাহ সহায়তা করে থাকেন। তাই মুত্তাকীদের জীবনে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংকীর্ণতা তাদের খুব বেশি সমস্যায় জর্জরিত করে না। তাদের জীবনাচার হয় সহজতর ও সরল।
সম্মানিত উপস্খিতি
আল্লাহর পক্ষ থেকে রহমত বরকত অর্জনের আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ সহায়ক হল মহান আল্লাহর কাছে সাহায্য সহযোগিতা কামনা করা। তিনিই একমাত্র দাতা দয়ালু ও তাঁর কাছেই বান্দাহ একমাত্র সাহায্য কামনা করা উচিত। তাই বান্দা যখনই রিযিক সহ যে কোন প্রকার সংকীর্ণতা অনুভব করে তখনই তার কর্তব্য হল আল্লাহর দরবারে ধরনা দেয়া, তাঁর নিকট কাকুতি-মিনতি সহকারে কায়মনোবাক্যে দোয়া করা, তিনি কাউকেও একেবারে খালি হাতে ফিরিয়ে দেন না। আমি মহান আল্লাহর নিকট সার্বিকভাবে প্রার্থনা করি, তিনিই আমাদের একমাত্র দাতা ও দয়ালু। তাঁর কাছে প্রার্থনা করে একেবারে খালি হাতে ফিরেছে সাধারণত এমনটি দেখা যায় না। এ ব্যাপারে প্রিয় নবীর একটি হাদিস আমাদের হিদায়াত প্রদানে উত্তম ভূমিকা পালন করে থাকে। একদা নামাজের সময় ব্যতীত মসজিদে প্রবেশ করে জনৈক সাহাবীকে মসজিদের এক কোণে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত অবস্খায় দেখতে পেয়ে দয়ার নবী তাকে মন খারাপের কারণ জিজ্ঞাসা করলেন, হে আবু উমামা! এ অসময়ে তুমি কেন এখানে বসে আছ? উত্তরে তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল, আমি বড় ধরনের ঋণের কারণে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত আছি, যা আমাকে দিনের বেলা মানুষের সামনে লজ্জিত করে ও রাতে ঘুমের বড় ধরনের ব্যাঘাত সৃষ্টি করে। এ কথা শন্সবণ করে রাসূল (স) তাকে বললেন, আমি কি তোমাকে এমন একটি বাণী শিা দেব না যা তুমি চর্চা করলে আল্লাহ তোমার দুশ্চিন্তা ও ঋণের বোঝা লাঘবে সহায়ক হবে? আবু উমামা (রা:) বলেন, অবশ্যই তা আপনি আমাকে শিক্ষা দেবেন। তখন রাসূল (স) বললেন, তুমি সকাল সন্ধ্যায় বলবে, “আল্লাহুম্মা ইন্নি আউযুবিকামিনাল হাম্মেওয়াল হুযনে, ওয়া আউযুবিকা মিনাল আজযে ওয়াল কাসালে, ওয়া আউযুবিকা মিনাল জুবনে ওয়াল বুখলে, ওয়া আউযুবিকা মিন গালাবাতিদ দায়নে ওয়া কাহরির রিজাল।” অর্থাৎ “হে আল্লাহ আমি তোমার নিকট যাবতীয় চিন্তা-ভাবনা হতে আশন্সয় প্রার্থনা করছি, আমি তোমার নিকট দুর্বলতা ও অলসতা হতে আশন্সয় কামনা করছি, তোমার নিকট কাপুরুষতা ও কৃপণতা হতে নাজাত কামনা করছি এবং তোমার নিকট ঋণভার ও মানুষের দুষ্ট প্রভাব হতে পরিত্রাণ চাচ্ছি।” আবু উমামা বলেন, অত:পর আমি ঐরূপ আমল করি, যার ফলশন্সুতিতে আল্লাহ তায়ালা আমার চিন্তা-ভাবনা বিদূরিত করেন এবং ঋণ পরিশোধের ব্যবস্খা করে দেন।
সূরা আল ফাতিহায়ও আমরা এ ধরনের প্রার্থনা করে থাকি, যেমন বলে থাকি, “আমরা একমাত্র তোমারই ইবাদত করি এবং তোমারই সাহায্য প্রার্থনা করি।” (সূরা আল ফাতিহা, ৫) আল্লাহ তায়ালা যখনই ঋণগ্রস্ত ও দুশ্চিন্তাগ্রস্তদের মেহেরবানী করার ইচ্ছা পোষণ করেনও মুক্ত করতে চান তখনই তাদেরকে দোয়া শিক্ষা দেন, তার মনকে আল্লাহর প্রতি বিনয়ী হতে ও তার নিকট যাâঞা করতে অনুপ্রাণীত করেন, আকাশ-যমিনের খাজাঞ্চী একমাত্র তাঁরই হাতে নিবন্ধ। আল্লাহর প থেকে বরকত ও রিযক হাসিল করার আর একটি অন্যতম উপায় হচ্ছে আত্মীয়তার সম্পর্ক রা করা। এদিকটির প্রতি ইঙ্গিত প্রদান করে আল্লাহর রাসূল (স) ইরশাদ করে, “যে ব্যক্তি নিজের রিযক প্রশস্ত হওয়া এবং নিজের আয়ুüকাল বৃদ্ধি হওয়া পছন্দ করে সে যেন আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখে।” (বুখারী শরীফ)
তাই আত্মীয়তার হক্ক আদায় করা ও তাদের সাথে সুসম্পর্ক জোরদার করা আল্লাহর দয়া পাওয়ার অন্যতম কারণ বিধায় আমাদের চাচা-চাচী, খালা-খালু সহ নিকটাত্মীয়দের সাথে সম্পর্ক উন্নততর করা আবশ্যক। যারা তাদের সাথে সদ্ভাব বজায় রাখবে আল্লাহও তাদের প্রতি রহমত বরকত নাযিল করবেন ও তাদের রিযক বৃদ্ধি করে দেবেন।
আল্লাহর পক্ষ থেকে বান্দার প্রতি আবশ্যকীয়ভাবে রহমত বরকত লাভের আরো একটি অন্যতম উপায় হল সমাজের দুস্খ, অভাবী ও নি:স্বদের প্রতি সহযোগিতার হস্ত সম্প্রসারিত করা। ইহকালে যে ব্যক্তি অভাবীদের প্রতি সহযোগিতা করবে মহান আল্লাহ ইহ ও পরকালীন উভয় জগতে তাদের প্রতি সহযোগিতা প্রদান করবেন। তেমনিভাবে ইহকালে বিপদগ্রস্তদের প্রতি যে ব্যক্তি সহানুভূতিশীল হবে আল্লাহ উভয় জগতে তার বিপদকালীন সময়ে সহযোগিতা প্রদান করেন। তাই সমôানিত উপস্খিতি, আপনারা আল্লাহর বান্দাগণের প্রতি দয়ার্দন্সচিত্ত হোন, আসমানবাসী ফেরেশতাগণ আপনাদের প্রতি রহমতের দোয়া করতে থাকেন। আল্লাহ তায়ালা তাঁর বান্দাদের দয়াশীলতার প্রতি বেশি রহমত বরকত ও দয়া করে থাকেন। আল্লাহর রাসূল (স) বলেন, “প্রতিদিন সকালে দু'জন ফিরিশতা অবতরণ করেন, তাঁদের একজন বলেন, হে আল্লাহ! দাতাকে দানের উত্তম প্রতিদান দিন আর অপরজন বলেন, হে আল্লাহ! কৃপণকে ধ্বংস করে দিন।” (বুখারী শরীফ)
আদম সন্তানগণ
আমাদের সমাজের অভাবীদের প্রতি মুক্ত হস্ত হওয়া দরকার, তাহলে আল্লাহ তায়ালাও আমাদের প্রতি রহম করবেন ও আসমানবাসী ফিরিশতাগণও আমাদের প্রতি রহমত বর্ষণের জন্য আল্লাহর নিকট আবেদন করবেন। তাই বিপদগ্রস্ত সৃষ্টির বিপদমুক্তিতে এগিয়ে আসুন, বিধবা ও অভাবীদের প্রতি সহনশীল ও দয়ার্দন্সচিত্ত হোন, আল্লাহ তায়ালাও তাঁর অসীম রহমত নিয়ে আমাদের প্রতি সাহায্য করবেন। প্রিয় নবী তাঁর কন্যাকে এ প্রসঙ্গে উপদেশ প্রদান করত বলেন, “হে আসমা, তুমি খরচ কর, আল্লাহ তোমার তাওফিক বাড়িয়ে দেবেন, আর গুণে রেখ না তাহলে আল্লাহ তোমাকে গুণে গুণে দেবেন।” (মুসলিম শরীফ)
এতে প্রতীয়মান হয় দান করার েেত্র আন্তরিকতাই বড় ভূমিকা পালন করে থাকে। শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি ইচ্ছা করে দান করলে প্রতিটি দানের সওয়াব দশ থেকে সাতশত গুণ তথা আল্লাহর যত ইচ্ছা হয় তার প্রতিদান বৃদ্ধি করে দিয়ে থাকেন। পরকালে তার জন্য থাকবে বিশেষ পুরস্কারের ঘোষণা। মুসলিম মিল্লাতের এ কথা কখনো ভুলে থাকা উচিত নয় যে, দান-খয়রাত ও সাদকাহ দ্বারা সম্পদের ঘাটতি বা কমতি হয় না। রাসূল (স:) ও তৎপরবর্তীকালে মুসলিম সমাজের অর্থনৈতিক অবস্খা খুব একটা স্বচ্ছল ছিল না। তাঁরা মহান আল্লাহর যথাযথ হিদায়াতপ্রাপ্ত অল্প কিছু দিনের মধ্যেই আল্লাহ তায়ালার বিশেষ মেহেরবানীতে তাদের সার্বিক পরিবর্তন সংঘটিত হয় ও তাঁরা দুশ্চিন্তামুক্ত হয়ে বিশেব ইসলাম প্রচারে আরো অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে থাকেন। তাঁরা ওহীর জ্ঞানে জ্ঞানী হয়ে ও নিজেদের সে রঙে রঙীন করাতে মহান আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হন। ফলে তাদের প্রতি বিভিন্নভাবে তাঁর অপার কৃপা বর্ণণ করতে থাকেন। তাদের সামান্য আয়োজনেও আল্লাহ বরকত প্রদান করে তাদের ধন্য করেন।
মানুষের রিযক ও হায়াত বৃদ্ধির আরো একটি বিশুদ্ধতম উপায় হচ্ছে তারা বৈধ পন্থায় আয়-রোজগার করবে। কেননা ইসলাম কর্মের ধর্ম। বেকারত্ব ও অলসতাকে কখনোই সমর্থন করে না। কর্ম করে আহারের সংস্খান করতে ইসলাম বিভিন্নভাবে উদ্বুদ্ধ করে থাকে। অন্যের উপর দারস্খ ও বোঝা হয়ে থাকাকে ইসলাম কখনোও পছন্দ করে না। আর বৈষয়িক উন্নতির ল্েয যারা অন্যের নিকট হাত পাতে তাদের মুখাবয়বে কিয়ামতের দিন মাংস থাকবে না বলে আমাদের প্রিয় নবী (স:) সাবধান বাণী উচ্চারণ করেন। পবিত্র কুরআন রিযক অনেবষণ ও বিজ্ঞান চর্চায় উদ্বুদ্ধ করতে মুমিনদের নির্দেশ প্রদান করে ইরশাদ হচ্ছে: “তিনি তোমাদের জন্যে পৃথিবীকে সুগম করেছেন, অতএব, তোমরা তার কাঁধে বিচরণ কর এবং তার দেয়া রিযক আহার কর।” (সূরা আল মূলক, ১৬০)
মহান আল্লাহ পৃথিবীকে সমতলভাবে সৃষ্টি করে তথায় নানারকম কল্যাণ ও বরকতের অমিয় ধারার সূচনা করেন ও কর্মের মধ্যে কল্যাণ ও অলসতায় অকল্যাণের ইঙ্গিত প্রদান করেন। তেমনিভাবে ইসলাম সংগ্রাম ও কর্মের ধর্ম। তাই আমাদের জীবন পরিচালনার সর্বেেত্র প্রচেষ্টা করতে ও বৈধভাবে আয়-উপার্জন করতে উৎসাহ প্রদান করে। ইসলামের দৃষ্টিতে রিযক অনেবষণের অর্থ এই নয় যে, মুসলমান মসজিদে বসে থাকবে আর তার নিকট আল্লাহর প থেকে রিযক আসতে শুরু করবে। রিযকের এ ধারণা বৈরাগ্যবাদ থেকে উৎপন্ন হয়েছে। ইসলাম বৈরাগ্যবাদ সমর্থন করে না। কেননা আল্লাহর প থেকে কখনো আসমান সোনা-চাঁদির বৃষ্টি বর্ষণ করেন না। তাই রিযক অনেবষণের নিমিত্তেও বিভিন্ন উপায় উপকরণের মাধ্যমে বৈধ পথে প্রচেষ্টা চালাতে হবে। তাহলেই কেবল তিনি তার রহমত থেকে তাদের ধন্য করবেন। এজন্য ইসলাম ঐ সমস্ত লোকদের সমôানিত বিবেচনা করে যারা প্রচেষ্টা চালিয়ে নিজের ও পরিবারের সদস্যদের আহারের সংস্খান করে। এ প্রকার লোকদের প্রচেষ্টাকে মহান আল্লাহ পূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করবেন। ইসলাম কর্মকে লজ্জা মনে করে না। যুগে যুগে আল্লাহর নবীগণ কর্ম করে নিজেদের আহারের যোগান দেয়ার চেষ্টা করেন। তাঁদের একজন হযরত দাউদ (আ:) কঠিন লৌহ দ্বারা অস্ত্র তৈরির পেশায় নিয়োজিত ছিলেন।
ইসলামের দৃষ্টিতে কামারের কাজ ও কাঠমিস্ত্রির কাজের মত কঠিন কাজ করাও কোন লজ্জার বিষয় নয়; বরং লজ্জার বিষয় হল মানুষ আল্লাহর নিষিদ্ধ কার্যাবলী করে থাকা, অলসতা, বেকারত্ব ইত্যাদি ন্যাক্কারজনক কাজে নিজেকে নিয়োজিত করা। তাই আমাদের বৈধ আয়ের পথে সার্বিক প্রচেষ্টা করা উচিত। যারা সঠিকভাবে হালাল পথে মেহনত করে যাবে আল্লাহ তাদের কখনো সংকীর্ণ অবস্খায় পতিত হতে দেবেন না। এ মর্মে প্রিয় নবী (স:)-এর একটি হাদিস প্রণিধানযোগ্য, তিনি ইরশাদ করেন, “যদি তোমরা আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করার হক আদায় করতে, তবে তিনি পাখিকে রিযক দেয়ার মতই তোমাদেরকেও দিতেন। পাখি তো সকালে খালি পেটে বের হয়ে যায় এবং সন্ধ্যায় ভরা পেটে ফিরে আসে।” (তিরমিযী)
উপরোক্ত বিষয়গুলো আমাদের ভালভাবে হৃদয়ঙ্গম করা দরকার। পরকালে মহান আল্লাহর দরবারে আমাদের সবাইকে হাযির হতে হবে। ঐ দিনের সম্বল অবলম্বনের নির্দেশ প্রদান করত আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, “মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহ তায়ালাকে ভয় কর। প্রত্যেক ব্যক্তির উচিত, আগামী কালের জন্যে সে কি প্রেরণ করে, তা চিন্তা করা। আল্লাহ তায়ালাকে ভয় করতে থাক। তোমরা যা কর, আল্লাহ তায়ালা সে সম্পর্কে খবর রাখেন।” (সূরা আল হাশর, ১৮)
মহান আল্লাহ আমাকে ও আপনাদের পবিত্র কুরআন থেকে বরকত ও উপকৃত হবার তাওফিক দিন। কুরআনে বর্ণিত আল্লাহর নিদর্শনাবলী, বিজ্ঞময় উপদেশ এবং প্রিয় নবী (স:)-এর হিদায়াত থেকে আমাদের সবাইকে উপকৃত করুন। একথাগুলোর পর আমি আমার নিজের ও আপনাদের সবার জন্য মহান আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাচ্ছি। আপনারাও তাঁর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করুন। নিশ্চয়ই তিনি ক্ষমাশীল ও দয়াময়।