মসজিদে নববীর খুৎবা

মসজিদে নববীর খুবা

খতীব: শায়খ সালাহ্ ইবন মুহাম্মদ আল-বাদীর

বিষয়: বিপদাপদে মুসলিম মিল্লাতকে পরামর্শদান


সকল প্রশংসা মহান আল্লাহর জন্য যিনি মানুষকে পৃথিবীতে সৃষ্টি করে তাদের চলার জন্য জীবনবিধান দিয়ে ধন্য করেন ও তাদের বিভিন্নভাবে পরীক্ষা করে আল্লাহর বিধানে অটল থাকে কিনা তা দেখেনদরূদ ও সালাম প্রিয় নবীর জন্য যিনি তাঁর সারা জীবন উম্মতের হিদায়াতের জন্য নিবেদিত থেকে তাদের ইসলামী শরীয়াতের উপর সুপ্রতিষ্ঠিত করেন

উপস্খিত মুসলিম জনতা

মহান আল্লাহ তাঁর বান্দার উপর বিভিন্নভাবে নিয়ামত প্রদান করে থাকেনসে অসংখ্য নিয়ামতের একটি উল্লেখযোগ্য দিক হলো তিনি উম্মতে মুহাম্মদীকে মানবতার কল্যাণ সাধনের লক্ষে সর্বশ্রেষ্ঠ উম্মত হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন ও তিনি আমাদের এ দীনের আলোর প্রতি হেদায়াত দান করেন, যাতে বিন্দুমাত্র সন্দেহের অবকাশ নেইএটি এমন দীন যা সর্বদিক থেকে পরিপূর্ণ, মানব জীবনের সর্বদিকের বিধান এতে বিদ্যমানযারা এ দীনকে ধারণ করেন তারা মহা উচ্চাসন লাভ করেন, তাদের ইহ ও পরকালীন জীবনের সফলতা অর্জিত হয়আর যারা এ দীনকে অস্বীকার করে নিজের ইচ্ছামাফিক চলে তারা দুর্ভাগ্য, অশান্তি ও নানাপ্রকার মানসিক যাতনায় জীবন যাপন করবেআল্লাহ প্রদত্ত পথ অত্যন্ত উচ্চ মূল্যবোধ সম্পন্ন, অতি উন্নত ও মার্জিত রুচি সম্পন্ন, তাঁর নিয়ামত অসীম এবং অত্যন্ত কল্যাণকর ও ব্যাপকএ দীনে রয়েছে মর্যাদাসম্পন্ন ও বিজ্ঞতাপূর্ণ সব হিকমতের ছড়াছড়িএ দীনে রয়েছে সর্বপ্রকার কল্যাণ ও ভাল দিকনির্দেশনা এবং রয়েছে সকল মন্দ ও বিশৃখংখলা থেকে নিষেধাজ্ঞামহান আল্লাহ এদিকের প্রতি ইঙ্গিত প্রদান করত ইরশাদ করেন:

যে লোক ইসলাম ছাড়া অন্য কোন ধর্ম বা বিধান তালাশ করে, কষ্নিকালেও তা গ্রহণ করা হবে না এবং আখিরাতে হসে সে ক্ষতিগ্রস্ত” (সূরা আলে ইসলাম, ৮৫)

এ আয়াতে প্রতীয়মান হয় এ পৃথিবীতে একমাত্র আল্লাহ ব্যতীত আর কোন সঠিক দীন বা বিধান নেই যার উপর অটল থাকলে একমাত্র আল্লাহ ব্যতীত আর কোন সঠিক দীন বা বিধান নেই যার উপর অটল থাকলে একমাত্র আল্লাহর ইবাদত করা হবে, যে দীন হচ্ছে তার পূর্বের সব দীনের পরিসমাপ্তকারীএ বিবেচনায় যারা ইসলামকে নিজের সার্বিক জীবনের দিক নির্দেশক হিসেবে বিশবাস ও সে মুতাবিক জীবন পরিচালনা করেনা তারা কাফির, আল্লাহ, তদীয় রাসূল ও মুমিনদের দুশমন বলে গণ্য হবে ও পরিণতিতে জাহান্নামবাসীদের অন্তর্ভুক্ত হবেহযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত রাসূলের একটি সহীহ হাদীসেও এর সমর্থন মেলে, তিনি ইরশাদ করেন: সে সত্ত্বার কসম, যাঁর হাতে মুহাম্মদের প্রাণ, ইহুদী হোক আর খৃষ্টান হোক, যে ব্যক্তিই আমার এ আহ্বান শুনেছে, অথচ আমার রিসালাতের উপর ঈমান না এনে মৃত্যুবরণ করেছে, অবশ্যই সে জাহান্নামী হবে” (সহীহ মুসলিম)

সম্মানিত মুসলিম জনতা

আল্লাহর দুশমনরা ইসলামকে নির্মূল ও অকার্যকর করার যতই ষড়যন্ত্র ও সার্বিক প্রচেষ্টা চালাক না কেন তারা একে সমূলে বিনষ্ট করতে কখনো সম হবে নামহান আল্লাহ ইরশাদ করেন: তারা মুখের ফুঁকারে আল্লাহর আলো নিভিয়ে দিতে চায়আল্লাহ তাঁর আলোকে বিকশিত করবেন যদিও কাফিররা তা অপছন্দ করে” (সূরা আস সফ, ৮)

বিশিষ্ট সাহাবী হযরত তামীমুত দারী (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রাসূল (স·)কে বলতে শুনেছি, “পৃথিবীর সর্বত্র আমার রিসালাতের দাওয়াত পৌঁছে যাবে, সম্মানিতরা সসম্মানে আমার রিসালাত গ্রহণ করে নেবে, অসম্মানিতরা গ্রহণ না করলেও রিসালাতের দাওয়াত সর্বত্র পৌঁছবে” (মসনাদে আহমাদ)

সাহাবী হযরত ছাওবান (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (স) বলেছেন, “নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা আমার জন্য যমীনকে সংকুচিত করে দেনআর এ সময় আমাকে যমীনের পূর্ব ও পশ্চিম দিক দেখানো হয়আমার উম্মতের হুকুমত অবশ্যই সে পর্যন্ত পৌঁছবে, যা আমাকে দেখানো হয়েছে” (তিরমিযি শরীফ)

সাহাবী হযরত আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “রাসূলুল্লাহ (স) বলেছেন, “আমার উম্মতের একটি দল সর্বদাই হকের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকবেতাঁদের সঙ্গ ত্যাগ করে কেউ তাদের কোন অনিষ্ট করতে পারবে নাএমন কি এভাবে আল্লাহর আদেশ অর্থা কিয়ামত এসে পড়বে আর তারা যেমনটি ছিল তেমনই থাকবে” (সহীহ মুসলিম)

উপস্খিত মুসলিম জনতা

আজ মুসলিম মিল্লাতের উপর যেসব বিপদ মুসিবত আপতিত হয়েছে, তাদের প্রতি দুশমনদের যে হিংসাত্মক দৃষ্টি এর প্রতিফলনে তারা প্রতিনিয়ত কোণঠাসা হয়ে আছেতাদের মান-সম্মান ভূলুণ্ঠিত হচ্ছে, অধিকার ছিনিয়ে নেয়া হচ্ছে, কোথাও কোথাও তাদের দেশও দখল করে নিচ্ছেএমন এক পরিপ্রেক্ষিতে তাদের মহান আল্লাহ প্রদত্ত দীরে প্রতিই ফিরে যাওয়া উচিত ও নিজেদের ত্রুটি-বিচ্যুতির পুনর্মূল্যায়ন করতে সংশোধনের প্রতি মনোনিবেশ করাই একমাত্র পন্থাএতে করে তারা একতাবদ্ধ হতে পারবে, লাঞ্ছনা-গঞ্জনা থেকে উত্তরণের পথ উন্মুক্ত হবেপরিণতিতে তারা তাদের দুশমনদের ক্রীড়নক হওয়া থেকে মুক্ত হয়ে স্বাভাবিক জীবন-যাপন করতে পারবেএ মর্মে হযরত আবদুল্লাহ ইবন উমর (রা) থেকে বর্ণিত একটি হাদীস আমাদের আলোর দিশা প্রদান করছেতিনি বলেন, আমি রাসূল (স)কে বলতে শুনেছি: তোমরা যদি ঈনা বিক্রি কর, (জাহিলিয়া যুগের একপ্রকার বিক্রির প্রক্রিয়া) ষাঁড়ের লেজ ধরে থাক এবং কৃষিকাজে লিপ্ত থাকার কারণে জিহাদ পরিত্যাগ কর, তবে আল্লাহ তোমাদের উপর এমন অপমান প্রবল করে দেবেন যে, যতণ না তোমরা দীনের উপর পূর্ণরূপে প্রত্যাবর্তন করবে, ততণ আল্লাহ তোমাদের থেকে ঐ অপমান দূর করবেন না” (সুনানে আবু দাউদ)

মুসলিম ভ্রাতৃবৃন্দ

বর্তমান সমাজে যেখানে ইসলাম বহির্ভূত বিভিন্ন প্রকার তিকারক চিন্তা-ভাবনা, বিভিন্ন মতবাদ বা ইজম ইত্যাদি প্রচলনের ফলে সমাজের লোকদের মনমানসিকতায় শরীয়াতের বিধানাবলীর বাস্তবায়ন ও তার কার্যকারিতা যে কত প্রয়োজন তা বুঝা অত্যন্ত প্রয়োজনএজন্য আধুনিক যুগ সমস্যার সমাধানে সমস্যার কারণ চিহ্নিত করা ও তা থেকে উত্তরণের সঠিক পন্থা নির্ধারণে মুসলমানদের পবিত্র কুরআন-সুন্নাহ ও আমাদের হিদায়াতপ্রাপ্ত পুর্বপুরুষদের চিন্তাভাবনার দিকে প্রত্যাবর্তন করা আবশ্যকএতে আমরা আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে সঠিকভাবে ওয়াকিফহাল হতে পারব ও আমরা লোক দেখানোপনা, অহংকার ও বিভিন্ন প্রকার মানবিক দুর্বলতা থেকে ঊর্দ্ধে উঠে আল্লাহর একনিষ্ঠ বান্দা হয়ে জীবন-যাপন করতে পারব ও আল্লাহর নিষিদ্ধ পথ পরিহার করে খাঁটি তাওহীদের পথে চলতে পারবএ মর্মে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন: আর যখন তাদের কাছে পৌঁছে কোন শান্তি সংক্রান্ত সংবাদ কিংবা ভয়ের, তখন তারা সেগুলোকে রটিয়ে দেয়আর যদি সেগুলো পৌঁছে দিত রাসূল পর্যন্ত কিংবা তাদের শাসকদের পর্যন্ত, তখন অনুসন্ধান করে দেখা যেত সেসব বিষয় যা তাতে রয়েছে অনুসন্ধান করার মতবস্তুত আল্লাহর অনুগ্রহ ও করুণা যদি তোমাদের উপর বিদ্যমান না থাকত তবে তোমাদের অল্প কতিপয় লোক ব্যতীত সবাই শয়তানের অনুসরণ করতে শুরু করত” (সূরা আন নিসা, ৮৩)

সম্মানিত মুসলিমগণ

যখনই এ উম্মতের উপর কোন বিপদাপদ এসে তাদের অস্তিত্বের হুমকি হয়ে দাঁড়ায় তখন তাদের কাজ হল পারষপরিক ভুল-ভ্রান্তি থেকে ফিরে এসে নিজেদের একতাবদ্ধ হয়ে আল্লাহভীতি বা পরহেজগারীতে আত্মনিয়োগ করা ও অন্যায়-অশ্লীল কাজ থেকে বিরত থেকে নিজেদের ভালবাসা বৃদ্ধি করাযাতে তাদের মধ্যে আল্লাহর দুশমনদের চক্রান্ত কার্যকরী না হয়এ মর্মে আল্লাহ ইরশাদ করেন: আর আল্লাহ তায়ালার নির্দেশ মান্য কর এবং তাঁর রাসূলের, তাছাড়া তোমরা পরষপরে বিবাদে লিপ্ত হয়ো নাযদি তা কর, তবে তোমরা কাপুরুষ হয়ে পড়বে এবং তোমাদের প্রভাব চলে যাবেআর তোমরা ধৈর্য ধারণ কর, নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে থাকেন” (সূরা আল আনফাল, ৪৬)

মুসলিম শরীফে হযরত আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত হাদিসটি এখানে প্রণিধানযোগ্য, রাসূল (স) ইরশাদ করেন, আল্লাহ তায়ালা তিনটি কাজ পছন্দ করেন এবং তিনটি কাজ অপছন্দ করেনতোমাদের জন্য তিনি যা পছন্দ করে, তা হল: ১· তোমরা তাঁরই ইবাদত করবে· তাঁর সাথে কিছুই শরীক করবে না এবং ৩· তোমরা সকলে আল্লাহর রজ্জুকে শক্তভাবে ধারণ করবে ও পরýপর বিচ্ছিন্ন হবে নাআর যে সকল বিষয় তিনি তোমাদের জন্য অপছন্দ করেন: ১· বাজে কথাবার্তা বলা, · অধিক প্রশ্ন করা এবং ৩· সম্পদ বিনষ্ট করা

উপস্খিত ভাইগণ

আকীদা ও দীনের বন্ধন অতি দৃঢ় ও মজবুত বন্ধন, তার রয়েছে অনেক দায়িত্ব ও কর্তব্যপবিত্র কুরআন সুন্নাহতে সেগুলো সুস্পষ্ট হয়ে ওঠেএ কঠোর বন্ধনের ফলে কাফির মুশরিকদের পক্ষ থেকে শত চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন হয়ে যায়এ বন্ধন দৃঢ় হলে জালিমরাও জুলুম ত্যাগে বাধ্য হয়এ প্রকার মু'মিনদের বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, “আর ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার নারী একে অপরের সহায়কতারা ভাল কথার শিক্ষা দেয় এবং মন্দ থেকে বিরত রাখেনামায প্রতিষ্ঠা করে, যাকাত দেয় এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নির্দেশ অনুযায়ী জীবন যাপন করেএদেরই উপর আল্লাহ দয়া করবেননিশ্চয়ই আল্লাহ পরাক্রমশালী, সুকৌশলী” (সূরা আত-তাওবাহ্, ৭১)

অন্যত্র ইরশাদ হচ্ছে: আর যারা কাফির তারা পারষপরিক সহযোগী বন্ধু, তোমরা যদি এমন ব্যবস্খা না কর, তবে দাঙ্গা-হাঙ্গামা বিস্তার লাভ করবে এবং দেশময় বড়ই অকল্যাণ হবে” (সূরা আল আনফাল, ৭৩)

আমাদের প্রিয় নবী (স) ইরশাদ করেন, “সমস্ত মুসলমানের রক্ত সমানএকজন সাধারণ মুসলিমও যে কোন লোককে নিরাপত্তা দিতে পারেএকইরূপে দূরে অবস্খানকারী মুসলমান পানাহ দিতে পারে, যদি তার নিকটে অবস্খানকারীও মওজুদ থাকেপ্রত্যেক মুসলমান তার প্রতিপরে বিপে অন্য মুসলমানকে সাহায্য করবে” (সুনানে আবু দাউদ)

তিনি আরও ইরশাদ করেন, “এক মুমিন অন্য মু'মিনের জন্য দর্পণ স্বরূপ এবং এক মু'মিন অপর মুমিনের জন্য ভাই স্বরূপকাজেই এক মুসলমানের উচিত অপর মুসলমানের তি হতে রা করা এবং তার অনুপস্খিতিতিতে সে ব্যক্তির জান-মাল রা করা। (সুনানে আবু দাউদ)

সম্মানিত মুসলিম ভ্রাতৃবৃন্দ

পৃথিবীর সর্বত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা মুসলমানগণ জাতি, রং ও দেশে বিভক্ত হলেও তাদের বন্ধন কিন্তু একটি শরীরের মততারা একের খুশীতে আনন্দ ও অন্যে দু:খে ব্যথিত হয়তাদের সবাই ইসলামের ছায়াতলে থাকায় এ বন্ধনের নিয়ামত অনুভব করেতাদের ধর্মগ্রন্থ ও গাইড লাইন হল পবিত্র কুরআন, তাদের নবীও একজন, তিনি হলেন বিশবনেতা মুহাম্মদুর রাসূলুল্লাহ (স)সাহাবী আনাস ইবন মালিক (রা) থেকে বর্ণিত হাদীস থেকে এ কথারই সমর্থন মেলে, তিনি ইরশাদ করেন, “যে ব্যক্তি আমাদের ন্যায় সালাত আদায় করে, আমাদের কিবলামুখী হয় আর আমাদের যবেহ করা প্রাণী খায়, সে-ই মুসলিম যার জন্য আল্লাহ ও তাঁর রাসূল যিম্মাদারসুতরাং তোমরা তার জিম্মাদারীতে খিয়ানত করো না” (সহীহ বুখারী)

অন্য হাদীসে এসেছে রাসূল (স) ইরশাদ করেন, “এক মুমিন অন্য মুমিনের জন্য ইমারত তুল্যযার একটির সাথে অন্যটি দৃঢ়ভাবে সংযুক্ত থাকেরাসূল (স) আরো ইরশাদ করেন, “পারষপরিক ভালবাসা, দয়া-অনুগ্রহ ও মায়া-মমতার দৃষ্টিকোণ থেকে সমস্ত মুমিনগণ একটি দেহের সমতুল্যযদি দেহের কোন অংশ অসুস্খ হয়ে পড়ে তবে অন্যান্য অংগ-প্রত্যংগও তা অনুভব করেসেটা জাগ্রত অবস্খায়ই হোক কিংবা জ্বরের অবস্খায় সর্বাবস্খায় একে অপরের সুখ-দু:খের ভাগী হয়” (সহীহ বুখারী ও মুসলিম)

মুসলিম ভাইগণ

প্রতিটি মুসলিমেরই মান-সম্মান ও মর্যাদা রয়েছেআমরা যখনই কোন বিপদাপদ ও বালা-মুসিবতের পরীক্ষার সম্মুখীন হই, তখনই আমাদের অতীতের ভুল-ভ্রান্তির জন্য আল্লাহর নিকট মা চেয়ে নেব, আমরা আল্লাহর নিষিদ্ধ কার্যাবলী থেকে নিজেদের বিরত রাখব, বিশেষত অন্য মুসলিমের মান মর্যাদা ও ইজ্জত আবরুর প্রতি সবিশেষ ল্য রাখব যাতে কোনভাবেই তার কোন প্রকার তি না করিতিরমিযি শরীফে সাহাবী আবদুল্লাহ ইবন উমর (রা) থেকে বর্ণিত হাদীস থেকে আল্লাহর নবী (স) মিম্বরে আরোহণ করত উচ্চস্বরে আমাদের সাবধান করে ইরশাদ করেন, “হে ঐ সকল মুসলিম যারা ইসলামের দাবিদার হলেও অন্তরের মণিকোঠায় এখনও ঈমান প্রবেশ করেনি, ইসলামের সৌন্দর্য এখনো যাদের নিকট অýপষ্ট, তোমরা কখনো মুসলিমদের কষ্ট দেবে না, তাদের গোপনীয়তার পেছনে ছুটবে নাকেননা যারা অপর মুসলিমের গোপনীয়তা নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করে মহান আল্লাহও তার গোপনীয়তা নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করবেনআর আল্লাহ এ ব্যাপারে যার পেছনে লাগবেন সে যেখানে থাকুক না কেন তাকে লজ্জিত করে ছাড়বেন

মুসলিমদের মান ইজ্জত নিয়ে বাড়াবাড়িকারীদের ভীতিপ্রদর্শন সম্পর্কে আল্লাহর রাসূল আরো ইরশাদ করেন, “মুসলমানকে গালি দেয়া গুনাহের কাজ এবং তার সাথে মারামারিতে লিপ্ত হওয়া কুফরী” (সহীহ মুসলিম)

মুসলিম ভ্রাতৃবৃন্দ

রাসূল (স)-এর একটি হাদীসের প্রতি গভীরভাবে লক্ষ্য করুন, তিনি অপর মুসলিমকে হত্যার ব্যাপারে কঠোর বাণী উচ্চারণ করত ইরশাদ করেন: কোন মুসলমানকে অন্যায়ভাবে হত্যা করা আল্লাহর কাছে পৃথিবী ধ্বংস অপো কঠোর পাপ

আল্লাহর বান্দাগণ

আপনারা আল্লাহকে ভয় করে চলুন, রাসূলের নির্দেশাবলী পালন করুন ও তাঁর নিষেধাবলী ও সাবধান বাণী থেকে নিজেদের মুক্ত রাখুনএভাবে জীবন পরিচালনা করলে আপনার জীবনে সফলতা লাভ করতে পারেবিশেবর বিভিন্ন স্খানে মুসলিমরা আজ নানাপ্রকার বিপদ-মুসিবতে জর্জরিত অবস্খায় আছেকিছু কিছু ব্যাপার এতই হৃদয়বিদারক যা বর্ণনাতীতআন্তর্জাতিক বিশবাসঘাতক ইয়াহুদী চক্র মুসলিম জনপদে বিশেষত ফিলিস্তিনে এতই লোমহর্ষক ঘটনা সংঘটিত করছে যা ভাষায় প্রকাশ করার মত নয়তারা নির্বিচারে নারী-পুরুষ হত্যা করে চলছে, তাদের উদ্দেশ্য হল ভয়-ভীতি সৃষ্টি করে মুসলিম জনপদ দখল করত তাদের দেশের সীমানা বৃদ্ধিসহ আন্তর্জাতিকভাবে প্রভাব সৃষ্টি করা ও জাতিসংঘসহ সকল মহলে তাদের একচেটিয়া প্রভাব খাটানো

সম্মানিত মুসলিম জনতা

এমন এক ভয়াবহ পরিস্খিতিতে যেখানে প্রতিনিয়ত নিরপরাধ মুসলিমের রক্ত ঝরানো ও বন্দী করা হচ্ছে একজন খাঁটি মুসলিম কি করে আরামে নির্বিকার ও আনন্দে দিন কাটাতে পারে? যদি এ উম্মাত নিজেরা নিজেদের অবস্খার পরিবর্তনের লক্ষে নিজেদের প্রবৃত্তি পূজা, কাপুরুষতাসহ আল্লাহর বিধান পরিত্যাগ করার পরিবর্তে সর্বত্র তাঁর বিধান বাস্তবায়নে এগিয়ে আসে মহান আল্লাহর সাহায্য তাদের প্রতি অবধারিতএ মর্মে ছাওবান (রা) থেকে বর্ণিত রাসূল (স)-এর একটি সহীহ হাদীস ও উম্মতের আলোর দিশা বিকিরণ করছে, তিনি ইরশাদ করেন: অদূর ভবিষ্যতে অন্য জাতির লোকেরা তোমাদের উপর বিজয়ী হবে, যেমন খাদ্য গ্রহণকারী বড় পাত্রের দিকে আসেতখন জনৈক ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করে: আমাদের সংখ্যা কি কম হবে? তিনি বলেন: না, বরং সে সময় তোমরা সংখ্যায় অধিক হবেকিন্তু তোমাদের অবস্খা হবে সমুদেন্সর ফেনার মতআল্লাহ তোমাদের শত্রুদের অন্তর হতে তোমাদের প্রভাব প্রতিপত্তি দূর করে দেবেন এবং তোমাদের হৃদয়ে অলসতার সৃষ্টি করে দেবেনতখন জনৈক সাহাবী বরেন: ইয়া রাসূলুল্লাহ! অলসতার সৃষ্টি কেন হবে? তিনি বলেন, দুনিয়ার মহব্বত ও মৃত্যু ভয়ের জন্য” (সুনানে আবু দাউদ)

সম্মানিত উপস্খিতি

মুসলিম মিল্লাত যদি তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব পালনে এগিয়ে না আসে তাহলে তাদের উপর ভয়াবহ শাস্তি অবধারিত হতে পারেএ বিষয়টি আল্লাহ পবিত্র কুরআনে পূর্বেই ঘোষণা করে বলেন, “যদি তোমরা মুখ ফিরিয়ে নাও, তবে তিনি তোমাদের পরিবর্তে অন্য জাতিকে প্রতিষ্ঠিত করবেন, এরপর তারা তোমাদের মত হবে না” (সূরা মুহাম্মদ, ৩৮)

এ মর্মে আরো ইরশাদ হচ্ছে, “হে মুমিনগণ, তোমাদের মধ্যে যে স্বীয় ধর্ম থেকে ফিরে যাবে, অচীরে আল্লাহ এমন এক সম্প্রদায় সৃষ্টি করবেন, যাদেরকে তিনি ভালবাসেন এবং তারা তাঁকে ভালবাসবেতারা মুমিনদের প্রতি বিনয়-নমন্স হবে এবং কাফেরদের প্রতি কঠোর হবেতারা আল্লাহর পথে জিহাদ করবে এবং কোন তিরস্কারকারীর তিরস্কারে ভীত হবে নাএটি আল্লাহর অনুগ্রহ- তিনি যাকে ইচ্ছা দান করেনআল্লাহ প্রাচুর্য দানকারী, মহাজ্ঞানী। (সূরা আল মায়িদাহ, ৫৪)

একথাগুলো বলে আমি খুবার পরিসমাপ্তি টানছিমহান আল্লাহর নিকট আমি নিজের, আপনাদের ও সকল মুসলিম নর-নারীর সকল প্রকার গুনাহ থেকে মাফ চেয়ে নিচ্ছি, আপনারাও তাঁর নিকট মা প্রার্থনা করবেননিশ্চয়ই তিনি ক্ষমাশীল ও দয়ালু

ভাষান্তর: ড· মুহাম্মদ ওয়ালি উল্লাহ

সহযোগী অধ্যাপক, দারুল ইহসান বিশববিদ্যালয়, ঢাকা