ঈমান

পঞ্চম রুকনঃ শেষ দিবসের প্রতি ঈমান

(১) শেষ দিবসের (আখেরাতের) প্রতি ঈমানঃ

এ বিশ্বাস পোষণ করা যে, পার্থিব জীবন শেষ হয়ে মৃতু্য ও কবর জীবনের মাধ্যমে অন্য জগত শুরু হবেএভাবে কিয়ামত সংঘটিত হবে, তার পর পুনরুত্থান, হাশর, নাশর, ও হিসাব নিকাশের পর ফলাফল প্রাপ্ত হয়ে জান্নাতীরা জান্নাতে এবং জাহান্নামীরা জাহান্নামে যাবে

শেষ দিবসের প্রতি ঈমান আনা ঈমানের রুকন সমূহের অন্যতম একটি রুকনযার প্রতি ঈমান আনা ছাড়া কোন বান্দার ঈমান পরিপূর্ণ হবেনাআর যে ব্যক্তি শেষ দিবসকে অস্বীকার করবে সে কাফির হয়ে যাবে

আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ

وَلَـكِنَّ الْبِرَّ مَنْ آمَنَ بِاللّهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ

[سورة البقرة، الآية:177]

অর্থঃ ((বরং সকাজ হল এই যে, ঈমান আনবে আল্লাহর উপর, ও কিয়ামত দিবসের উপর।)) [সূরা আল-বাক্বারাহ্, আয়াত-১৭৭]

জিব্রাঈল (আলাইহিস্ সালাম)এর হাদীসে এসেছে, নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ

فأخبرني عن الإيمان؟ قال: أن تؤمن بالله، وملائكته وكتبه، ورسله واليوم الآخر، وتؤمن بالقدر خيره وشره

[رواه مسلم-1/157]

অর্থঃ ((জিব্রাঈল বলেনঃ হে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে ঈমান সম্পর্কে অবগত করুণনবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ ঈমান হলো- আল্লাহ ও তাঁর ফিরিশ্তা, তাঁর কিতাব সমূহ, তাঁর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহিমুস সালাম) এবং শেষ দিবসের প্রতি ঈমান আনা, আরো ঈমান আনা ভাগ্যের ভাল মন্দের প্রতি। [মুসলিম শরীফ]

শেষ দিবসের পূর্বে কিয়ামতের যে সকল আলামত সংঘঠিত হবে তার প্রতি ঈমান আনা, যে গুলি সম্পর্কে নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম সংবাদ দিয়েছেন

আলেমগণ এ আলামতকে দু'ভাগে বিভক্ত করেছেন-

(ক) ছোট আলামতঃ যা কিয়ামত নিকটে হওয়া বুঝায়, ইহা অনেক রয়েছেঅধিকাংশ সংঘঠিত না হলেও অনেক সংঘঠিত হয়ে গেছেযেমন নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের) প্রেরণআমানতের খিয়ানত করামসজিদ অধিক মাত্রায় সাজ সজ্জা ও তা নিয়ে গর্ভ করাবড় বড় অট্রালিকা নিয়ে রাখালদের গর্ভ করাইয়াহুদীদের সাথে যুদ্ধ ও তাদের নিহত হওয়াসময় নিকটবর্তী হওয়া, আমল কমে যাওয়া, ফিনা-ফাসাদ প্রকাশ পাওয়া, অধিক হত্যা হওয়া, ব্যভিচার ও অন্যায় কাজ অধিক মাত্রায় হওয়া

আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ

اقْتَرَبَتِ السَّاعَةُ وَانشَقَّ الْقَمَرُ

[سورة القمر، الآية:1]

অর্থঃ ((কিয়ামত আসন্ন ও চন্দ্র বিদীর্ণ হয়েছে।)) [সূরা আল-ক্বামার-আয়াত-১]

(খ) বড় আলামতঃ যা কিয়ামতের পূর্ব মূহুর্তে সংঘঠিত হবে এবং কিয়ামত শুরু হওয়ার সতর্ক করবেএমন বড় আলামত দশটিএকটিও প্রকাশিত হয়নি

বড় আলামত সমূহ যেমনঃ ইমাম মাহ্দীর আগমণ, দাজ্জালের আগমণ, ঈসা (আলাইহিস্ সালাম) এর আকাশ হতে ন্যায় বিচারক হিসাবে অবতরণ, তিনি খৃষ্টানদের ক্রুসেড ভেঙ্গে দিবেন, দাজ্জাল ও শুকুরকে হত্যা করবেনকরের আইন রহিত করবেনইসলামী শরীয়াত অনুপাতে বিচার পরিচালনা করবেনইয়াজুজ, মা'জুজ বের হবেতাদের ধ্বংসের দোআ করবেন, অতঃপর তারা মারা যাবেতিনটি বড় ভূমি কম্প হবেপূর্বে একটি, পশ্চিমে একটি, জাজিরাতুল আরবে একটিধোঁয়া বের হবে, তা হল আকাশ হতে প্রচন্ড ধোঁয়া নেমে এসে সকল মানুষকে ঢেকে নিবেকুরআন জমিন হতে আকাশে তুলে নেওয়া হবেপশ্চিম আকাশে সূর্য উদিত হবেএক (অদ্ভুত) চতুস্পদ জন্তু বের হবেইয়ামানের আদন (জায়গার নাম) হতে ভয়ানক আগুন বের হয়ে মানুষদের শামের দিকে নিয়ে আসবেএটাই সর্বশেষ বড় আলামত

হুযাইফা বিন উসাঈদ আল-গিফারী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে, ইমাম মুসলিম বর্ণনা করেনতিনি (হুযাইফা) বলেনঃ

عن حذيفة بن أسيد الغفاري رضي الله عنه قال: اطلع النبي صلى الله عليه وسلم ونحن نتذاكر فقال: ((ما تذكرون؟ قالوا: تذكر الساعة. قال: إنها لن تقوم حتى تروا قبلها عشر آيات.فذكر: الدخان، والدجال، والدابة، وطلوع الشمس من مغربها ،ونزول عيسى بن مريم، ويأجوج، وثلاثة خسوف: خسف بالمشرق، وخسف بالمغرب، وخسف بجزيرة العرب، وآخرذلك نار تخرج من اليمن تطرد الناس إلى محشرهم

[رواه مسلم]

অর্থঃ ((নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নিকট আগমণ করলেন, এমতাবস্থায় আমরা এক বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে ছিলামতিনি বল্লেন তোমরা কি বিষয় আলোচনা করতেছ? তাঁরা বল্লেন আমরা কিয়ামতের ব্যাপারে আলোচনা করতেছিতিনি বললেনঃ কিয়ামত সংঘটিত হবে না যতক্ষন না তোমরা তার পূর্বে দশটি আলামত সংঘঠিত হতে দেখবেঅতঃপর আলামত সমূহ উল্লেখ করলেনঃ ধোঁয়া, দাজ্জাল, চতুস্পদ জন্তু পশ্চিম দিক হতে সূর্য উঠা, ঈসা বিন মারিইয়াম এর আগমণ, ইয়াজুজ-মা'জুজ আগমণ, তিনটি ভূমি কম্প- একটি পূর্বে আর একটি পশ্চিমে, আর একটি জাজিরাতুল আরবে, শেষ আলামত হল ইয়ামান হতে আগুন বের হয়ে মানুষদেরকে হাশরের মাঠের দিকে নিয়ে যাবে।)) [মুসলিম শরীফ]

নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেনঃ

يخرج في آخر أمتي المهدي يسقيه الله الغيث، وتخرج الأرض نباتها، ويعطي المال صحاحاً،وتكثر الماشية،وتعظم الأمة، يعيش سبعاً،أوثمانياً، يعني حججاً

[رواه الحاكم في المستدرك]

অর্থঃ ((আমার উম্মাতের শেষ ভাগে ইমাম মাহ্দী বের হবেন, তার উপর আল্লাহ্ বৃষ্টি বর্ষন করবেনজমিন উদ্ভিত জন্ম দিবেসুস্থ্য ও সচ্ছল লোকদের মাল প্রদাণ করা হবেচতুস্পদ জানুয়ারের সংখ্যা বেড়ে যাবেউম্মাতের সংখ্যা বেড়ে যাবেতিনি সাত অথবা আট বছর বসবাস করবেন।)) (হাকেম)

বর্ণিত আছে যে ঐ নিদর্শন গুলো পর্যায় ক্রমে সংগঠিত হবে, যেমন পুথির মালায় পুথি পর্যায়ক্রমে সাজানো থাকেএগুলোর একটি সংঘঠিত হওয়ার পর পরই অপরটি সংঘঠিত হবেএ দশটি নিদর্শন সংঘঠিত হওয়ার পর পরই আল্লাহর আদেশে কিয়ামত সংঘঠিত হবে

কিয়ামত দ্বারা কি বুঝায়ঃ কিয়ামত দ্বারা উদ্দেশ্য হল ঐ দিন, যে দিন মানুষ আল্লাহর আদেশে তাদের কবর হতে বের হবে, হিসাব নিকাশের জন্য, অতঃপর কর্মশীল সুফল ও শান্তি এবং অস কর্মশীল শাস্তি প্রাপ্ত হবে

আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ

يَوْمَ يَخْرُجُونَ مِنَ الْأَجْدَاثِ سِرَاعاً كَأَنَّهُمْ إِلَى نُصُبٍ يُوفِضُونَ

[سورة المعارج، الآية:43]

অর্থঃ ((সে দিন তারা কবর থেকে দ্রত বেগে বের হবে-যেন তারা কোন এক লক্ষ্যস্থলের দিকে ছুটে যাচ্ছে।)) [সূরা আল-মাআরিজ,আয়াত-৪৩ ]

এ দিনের একাধিক নাম কুরআন কারীমে উল্লেখ্য হয়েছেযেমন-

(يوم القيامة) ইয়াওমুল কি্বয়ামাহ, (القارعة) আল-ক্বারিয়াহ, (يوم الحساب) ইয়াওমুল হিসাব, ) (يوم الدين ইয়াওমুদ্দিন, (الطامة) আত্ত্বামাহ, (الواقعة) আল-ওয়াকি্বয়াহ, (الحاقة) আল-হাক্কাহ, (الصاخة) আস্সাখ্খাহ, (الغاشية) আল-গাশিয়াহ, ইত্যাদি

يوم القيامة - ইয়াওমুল কি্বয়ামাহঃ

আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ

لَا أُقْسِمُ بِيَوْمِ الْقِيَامَةِ

[سورة القيامة، الآية:1]

অর্থঃ ((কিয়ামাত দিবসের শপথ।)) [সূরা আল-কি্বয়ামাহ, আয়াত-১]

القارعة - আল-ক্বারিয়াহঃ

আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ

الْقَارِعَةُ - مَا الْقَارِعَةُ

[سورة القارعة، الآيتان:1-2]

অর্থঃ ((করাঘাতকারী (আল ক্বারিয়াহ্), করাঘাতকারী কি?)) [সূরা আল-ক্বারিয়াহ, আয়াত ১-২]

يوم الحساب - ইয়াওমুল হিসাবঃ

আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ

إِنَّ الَّذِينَ يَضِلُّونَ عَن سَبِيلِ اللَّهِ لَهُمْ عَذَابٌ شَدِيدٌ بِمَا نَسُوا يَوْمَ الْحِسَابِ

[سورة ص، الآية:26]

অর্থঃ ((নিশ্চয় যারা আল্লাহর পথ থেকে বিচু্যত হয়, তাদের জন্য রয়েছে কোঠর শাস্তি, এ কারণে যে, তারা হিসাব দিবসকে ভূলে যায়।)) [সূরা ছোয়াদ, আয়াত-২৬]

يوم الدين - ইয়াওমুদ্ দ্বীনঃ

আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ

وَإِنَّ الْفُجَّارَ لَفِي جَحِيمٍ - يَصْلَوْنَهَا يَوْمَ الدِّينِ

[سورة الانفطار، الآيتان:14-15]

অর্থঃ ((এবং পাপিষ্টরা থাকবে জাহান্নামে, তারা বিচার দিবসে তথায় প্রবেশ করবে।)) [সূরা আল- ইনফিতার, আয়াত ১৪-১৫]

الطّامة - আত্ত্বামাহঃ

আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ

فَإِذَا جَاءتِ الطَّامَّةُ الْكُبْرَى

[سورة النازعات، الآية:34]

অর্থঃ ((অতঃপর যখন মহাসংকট এসে যাবে।)) [সূরা আন্ নাযিআত, আয়াত-৩৪]

الواقعة - আল-ওয়াকি্বয়াহঃ

আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ

إِذَا وَقَعَتِ الْوَاقِعَةُ

[سورة الواقعة، الآية:1]

অর্থঃ ((যখন কিয়ামতের ঘটনা ঘটবে।)) [সূরা আল-ওয়াকিয়াহ্, আয়াত-১]

الحاقة - আল-হাক্কাহঃ

আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ

الْحَاقَّةُ - مَا الْحَاقَّةُ

[سورة الحاقة، الآيتان:1-2]

অর্থঃ ((সু-নিশ্চিত বিষয়, সু নিশ্চিত বিষয় কি?)) [সূরা আল-হাক্কাহ, আয়াত-১-২]

الصّاخة - আসসাখখাহঃ

আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ

فَإِذَا جَاءتِ الصَّاخَّةُ

[سورة عبس، الآية:33]

অর্থঃ ((অতঃপর যে দিন কর্ণ বিদারক আওয়াজ আসবে।)) [সূরা আবাসা, আয়াত-৩৩]

الغاشية - আল-গাশিয়াহঃ

আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ

هَلْ أَتَاكَ حَدِيثُ الْغَاشِيَةِ

[سورة الغاشية، الآية:1]

অর্থঃ ((আপনার কাছে আচ্ছন্নকারী কিয়ামতের বৃত্তান্ত পৌঁছেছে কি?)) [সূরা আল-গাশিয়াহ,আয়াত-১]

(২) শেষ দিবসের প্রতি ঈমান আনার নিয়মঃ শেষ দিবসের প্রতি সংক্ষিপ্ত ও বিস্তারিত ভাবে ঈমান আনা

শেষ দিবসের প্রতি সংক্ষিপ্ত ঈমান আনা হলঃ এ বিশ্বাস পোষণ করা যে, এমন একটি দিন রয়েছে,যে দিন আল্লাহ তা'আলা পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সকলকে একত্রিত করবেনপ্রত্যেকেই স্ব-স্ব কর্মের প্রতিদান প্রদান করবেনএকদল জান্নাতী হবে,অপর দল জাহান্নামী হবে

আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ

قُلْ إِنَّ الْأَوَّلِينَ وَالْآخِرِينَ - لَمَجْمُوعُونَ إِلَى مِيقَاتِ يَوْمٍ مَّعْلُومٍ

[سورة الواقعة، الآيتان:49-50]

অর্থঃ ((বলুনঃ নিশ্চয় পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সকলেই একটি নির্ধারিত দিনে একত্রিত হবে।)) [সূরা আল-ওয়াকিয়াহ্, আয়াত ৪৯-৫০]

শেষ দিবসের প্রতি বিস্তারিত ঈমান হলঃ মৃতু্যর পর যা কিছু সংঘঠিত হবে তার প্রতি বিস্তারিত ঈমান আনাআর ইহা নিম্নে বর্ণিত বিষয় গুলোকে অন্তর্ভুক্ত করে-

প্রথমতঃ ফিনাতুল কবর বা কবরের পরিক্ষা

আর তা হলো- মৃতু্য ব্যক্তিকে দাফনের পর তাকে তার প্রভু দ্বীন ও নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে জিজ্ঞাসা বা প্রশ্ন করা হবেঅতঃপর যারা ঈমান এনেছিল, তাদেরকে আল্লাহ সত্যের উপর অটল রাখবেন

যেমন হাদীসে এসেছেঃ

ربي الله، وديني الإسلام ونبي محمد صلى الله عليه وسلم

[متفق عليه]

অর্থঃ ((যখন তাঁকে প্রশ্ন করা হবে, সে বলবেঃ আমার প্রভু আল্লাহ আমার দ্বীন আল-ইসলাম, আমার নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম।)) [বুখারী ও মুসলিম]

ফিরিশ্তাদ্বয়ের প্রশ্ন করা ও তাঁর পদ্ধতি, মু'মিনরা ও মুনাফিকরা কি উত্তর দিবেন এ সম্পর্কে বর্ণিত সকল হাদীসের প্রতি ঈমান আনা ওয়াজিব

দ্বিতীয়তঃ কবরের শাস্তি ও শান্তি

কবরের শাস্তি ও শান্তির প্রতি ঈমান আনা ওয়াজিবনিশ্চয় ইহা (কবর) জাহান্নামের গর্তের একটি গভীর গর্ত, অথবা জান্নাতের বাগানের একটি বাগানআর কবর আখিরাতের প্রথম ধাপ বা স্টেশনযে ব্যক্তি কবর হতে মুক্তি পাবে (তার জন্য) কবরের পরে ধাপ গুলো হতে মুক্তি পাওয়া সহজ হবেআর যে ব্যক্তি, কবর হতে মুক্তি পাবেনা তার জন্য এর পরের ধাপ গুলো মুক্তি পাওয়া আরো কঠিন হবেযার মৃতু্য হল তখন হতে তার কিয়ামত শুরু হয়ে গেল

অতঃপর আত্মা ও শরীর, উভয়ে কবরে শাস্তি বা শান্তি ভোগ করবেআর কখনো কখনো শুধু আত্মা ভোগ করবেআর কবরের আযাব বা শাস্তি শুধু মাত্র যালেমদের জন্য, আর শান্তি শুধু মাত্র সত্যবাদী মু'মিনদের জন্যআর মৃতু্য ব্যক্তি কবর জীবনের শাস্তি অথবা শান্তি প্রাপ্ত হবে, চাই ভূ-গর্ভস্ত করা হোক বা নাই হোকযদি ও মৃতু্য ব্যক্তিকে আগুনে জালিয়ে দেওয়া হয়, অথবা পানিতে ডুবিয়ে দেওয়া হয়, অথবা হিংস্র পশু পাখি খেয়ে ফেলে তার পরও সে এ শাস্তি অথবা শান্তি ভোগ করবে

আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ

النَّارُ يُعْرَضُونَ عَلَيْهَا غُدُوّاً وَعَشِيّاً وَيَوْمَ تَقُومُ السَّاعَةُ أَدْخِلُوا آلَ فِرْعَوْنَ أَشَدَّ الْعَذَابِ

[سورة غافر، الآية:46]

অর্থঃ ((সকালে ও সন্ধায় তাদেরকে আগুনের সামনে পেশ করা হয় এবং যেদিন কিয়ামত সংঘটিত হবে, সে দিন আদেশ করা হবে, ফেরাউন গোত্রকে কঠিনতর আযাবে দাখিল কর।)) [সূরা গাফির, আয়াত-৪৬]

রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ

فلو لا أن لا تدافنوا لدعوت الله أن يسمعكم من عذاب القبر

[رواه مسلم]

অর্থঃ ((হায় !! যদি তোমরা (তাদেরকে) দাফন না করতে তা হলে আমি আল্লাহর কাছে দোআ করতাম তোমাদেরকে কবরের আযাব শুনানোর জন্য। [মুসলিম]

তৃতীয়তঃ শিঙ্গায় ফুকার

শিঙ্গা হল বাঁশী স্বরূপ, যাতে ইস্রাফীল (আলাইহিস্ সালাম) ফুকার দিবেনপ্রথম ফুকার দেওয়ার সাথে সাথেই আল্লাহ যা জীবিত রাখবেন তা ছাড়া সকল সৃষ্টজীব মৃতু্যবরণ করবেদ্বিতীয় ফুকার দেওয়ার সাথে সাথেই পৃথিবী সৃষ্টি হতে কিয়ামত পর্যন্ত যত সৃষ্টিজীবের আর্বিভাব হয়েছিল, তারা সকলেই উঠে যাবে

আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ

وَنُفِخَ فِي الصُّورِ فَصَعِقَ مَن فِي السَّمَاوَاتِ وَمَن فِي الْأَرْضِ إِلَّا مَن شَاء اللَّهُ ثُمَّ نُفِخَ فِيهِ أُخْرَى فَإِذَا هُم قِيَامٌ يَنظُرُونَ

[سورة الزمر، الآية:68]

অর্থঃ ((শিঙ্গায় ফুঁক দেয়া হবে, ফলে আসমান ও যমিনে যারা আছে সকলে বেহুঁশ হয়ে যাবে, তবে আল্লাহ যাকে ইচ্ছা করেন সে ব্যতীতঅতঃপর আবার ফুকার দেওয়া হবে, ক্ষনা তারা দন্ডায়মান হয়ে দেখতে থাকবে।)) [সূরা আয্-যুমার, আয়াত-৬৮]

নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ

ثم ينفخ في الصور فلا يسمعه أحد إلا أصغى ليتا ورفع ليتاً ثم لا يبقى أحد إلا صعق ،ثم ينزل الله مطرا كأنه الطل, فتنبت منه أجساد الناس, ثم ينفخ فيه أخرى فإذا هم قيام ينظرون

[رواه مسلم]

অর্থঃ ((অতঃপর শিঙ্গায় ফুকার দেওয়ার সাথে সাথে সকলেই স্কান্ধ উচু করবেঅতঃপর সকলেই জ্ঞানহারা হয়ে পড়ে যাবেতার পর আল্লাহ হালকা বৃষ্টি বর্ষণ করবেনবৃষ্টি হতে মানুষের দেহ তৈরী হবেতার পর সিঙ্গায় দ্বিতীয় ফুকার দেওয়ার সাথে সাথেই সকলে দাঁড়িয়ে তাকাতে থাকবে।)) [মুসলিম]

চতুর্থতঃ পুনরুত্থানতা হলো শিঙ্গায় দ্বিতীয় ফুঁক দেওয়ার সময় আল্লাহ সকল মৃতদের জীবিত করবেনতারা সকলে সমগ্র বিশ্বের প্রতি পালকের উদ্দেশ্যে দাঁড়িয়ে যাবেঅতঃপর আল্লাহ তা'আলা শিঙ্গায় ফোঁকা ও প্রত্যেক আত্মাকে স্ব-শরীরে ফিরে যাওয়ার অনুমতি দিলে সকল মানুষ তাদের কবর হতে দাঁড়িয়ে জুতা বিহীন নাঙ্গাপা, বস্ত্র-বিহীন-উলঙ্গ শরীর, খানা বিহীন ও দাঁড়ি-গোঁফ বিহীন অবস্থায় দ্রুত ময়দানের দিকে ছুটে যাবে

ময়দানের অবস্থান দীর্ঘ হবে, সূর্য তাদের নিকটবর্তী হবে, সূর্যের উত্তাপ বেড়ে যাবেএ উত্তপ্ত ও কঠিন অবস্থান দীর্ঘ হওয়ায় শরীর হতে নির্গত ঘামে হাবু-ডুবু খাবে, কারো ঘাম পায়ের দু'গিঁঠা পর্যন্ত, কারো দু'হাটু পর্যন্ত, কারো মাজা পর্যন্ত, কারো বক্ষ পর্যন্ত, কারো দু'কাঁধ পর্যন্ত পৌঁছবেআর কেউ-সম্পূর্ণ ভাবে হাবুডুবু খাবে, এ সব হলো তাদের (ভাল-মন্দ) কর্ম অনুপাতেপুনরুত্থান সত্য ও নিশ্চিত, যা ইসলামী শরীয়া (কুরআন ও হাদীস) অনুভূতি শক্তি ও বুদ্ধি-বিবেক দ্বারা প্রমাণিত

ইসলামী শরীয়াঃ এর স্বপক্ষে প্রমাণ কুরআনে অনেক আয়াত ও নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে অনেক বিশুদ্ধ হাদীস রয়েছে

আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ

قُلْ بَلَى وَرَبِّي لَتُبْعَثُنَّ

[سورة التغابن، الآية:7]

অর্থঃ ((বলুন, অবশ্যই হবে, আমার পালনকর্তার কসম, তোমরা নিশ্চয় পুনরুত্থিত হবে।)) [সূরা আত্-তাগাবুন, আয়াত-৭]

তিনি আরো বলেনঃ

كَمَا بَدَأْنَا أَوَّلَ خَلْقٍ نُّعِيدُهُ

[سورة الأنبياء، الآية:104]

অর্থঃ ((যেভাবে আমি প্রথমবার সৃষ্টি করেছিলাম, সেভাবে পুনরায় সৃষ্টি করব।)) [সূরা আল-আম্বিয়া, আয়াত-১০৪]

রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ

ثم ينفخ في الصور فلا يسمعه أحد إلا أصغى ليتاً ورفع ليتاُ، ثم لا يبقى أحد إلا صقع، ثم ينزل الله مطراً كأنه الطل أو الظل- شك الراوي-0 فتنبت أجساد الناسن ثم ينفخ فيه أخرى فإذا هم قيام ينظرون

[رواه مسلم]

অর্থঃ ((অতঃপর শিঙ্গায় ফুঁক দেওয়ার সাথে সাথে সকলেই স্কান্ধ উচু করবে অতঃপর সকলেই জ্ঞান হারা হয়ে পড়ে যাবেতার পর আল্লাহ হালকা বৃষ্টি বর্ষণ করবেনবৃষ্টি হতে মানুষের দেহ তৈরী হবেতার পর শিঙ্গায় দ্বিতীয় ফুঁক দেওয়ার সাথে সাথেই সকলে দাঁড়িয়ে তাকাতে থাকবে।)) [মুসলিম]

আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ

قَالَ مَنْ يُحْيِي الْعِظَامَ وَهِيَ رَمِيمٌ - قُلْ يُحْيِيهَا الَّذِي أَنشَأَهَا أَوَّلَ مَرَّةٍ وَهُوَ بِكُلِّ خَلْقٍ عَلِيمٌ

[سورة يس، الآيتان:78-79]

অর্থঃ ((বলে, কে জীবিত করবে অস্থি সমূহকে যখন সে গুলো গলে পচে যাবে? বলুন, যিনি প্রথমবার সে গুলোকে সৃষ্টি করেছেন, তিনিই জীবিত করবেনতিনি সর্ব প্রকার সৃষ্টি সম্পর্কে অবগত।)) [সূরা ইয়াসীন, আয়াত ৭৮-৭৯]

الحس - (আল-হিস্স) বা অনুভূতি হতে দলীল হলঃ

আল্লাহ এই পৃথিবীতে অনেক মৃতু্যকে জীবিত করে তাঁর বান্দাদেরকে দেখিয়েছেনআর এ বিষয়ে সূরা বাক্বারায় পাঁচটি উপমা রয়েছে, মূসা (আলাইহিস্ সালাম) এর সমপ্রদায় যাদেরকে আল্লাহ তাদের মৃতু্যর পর জীবিত করেছিলেন

বানী ইস্রাঈলের এক নিহিত ব্যক্তিকে জীবিত করেছিলেনঐ সমপ্রদায়কে জীবিত করেছিলেন-যারা মৃতু্যর ভয়ে, নিজেদের গ্রাম ত্যাগ করেছিল ব্যক্তিকে যে, জনপদ দিয়ে অতিক্রম করেছিল, ইব্রাহীম (আলাইহিস্ সালাম) এর পাখি সমূহকে

العقل - (আল-আক্বল) বা বিবেক হতে দলীল হলঃ

ইহা দু'ভাবে হতে পারেঃ

(ক) আল্লাহ আসমান ও যমিন এবং এতদ্বয়ের মধ্যে যা রয়েছে সকলকে সৃষ্টি করেছেনআল্লাহ আসমান যমিন প্রথমে সৃষ্টি করেছেনযিনি প্রথম সৃষ্টির উপর ক্ষমতাবান তিনি (তাকে) পূনরায় সৃষ্টি করার ব্যাপারে অপারগ নন

(খ) যমিন শুষ্ক ও নিজীর্ব হয়ে যায়, অতঃপর বৃষ্টি অবতীর্ণ করে যমিনকে সতেজ ও সজীব করে তুলেন, সর্ব প্রকার সবুজ-শ্যামল গাছ পালা উপন্ন হয়, সুতরাং যিনি এ মৃত যমিনকে জীবিত করতে সক্ষম তিনিই মৃতদের পূনরায় জীবিত করাতেও সক্ষম

পঞ্চমতঃ হাশর, হিসাব-নিকাশ এবং প্রতিদান ও প্রতিফলআমরা ঈমান আনবো যে, সকল দেহের হাশর নাশর হবে, তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে, তাদের মাঝে বিচারে ইনসাফ প্রতিষ্ঠিত হবে, এবং সকল সৃষ্টিজীবকে স্বীয় কৃত কর্মের প্রতিদান ও প্রতিফল প্রদান করা হবে

আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ

َحَشَرْنَاهُمْ فَلَمْ نُغَادِرْ مِنْهُمْ أَحَداً

[سورة الكهف، الآية:47]

অর্থঃ ((এবং আমি তাদেরকে একত্রিত করব, অতঃপর তাদের কাউকে ছাড়বনা।)) [সূরা আল-ক্বাহাফ, আয়াত-৭৪]

তিনি আরো বলেনঃ

فَهُوَ فِي عِيشَةٍ رَّاضِيَةٍ - إِنِّي ظَنَنتُ أَنِّي مُلَاقٍ حِسَابِيهْ - فَأَمَّا مَنْ أُوتِيَ كِتَابَهُ بِيَمِينِهِ فَيَقُولُ هَاؤُمُ اقْرَؤُوا كِتَابِيهْ

[سورة الحاقة، الآيات:19-21]

অর্থঃ ((অতঃপর যার আমল নামা ডান হাতে দেয়া হবে, সে বলবেঃ নাও, তোমরা ও আমলনামা পড়ে দেখআমি জানতাম যে, আমাকে হিসাবের সম্মুখীন হতে হবেঅতঃপর সে সুখী জীবন-যাপন করবে।)) [সূরা আল-হাক্কাহ, আয়াত ১৯-২১]

তিনি আরো বলেনঃ

وَلَمْ أَدْرِ مَا حِسَابِيهْ - وَأَمَّا مَنْ أُوتِيَ كِتَابَهُ بِشِمَالِهِ فَيَقُولُ يَا لَيْتَنِي لَمْ أُوتَ كِتَابِيهْ

[سورة الحاقة، الآيتان:25-26]

অর্থঃ ((অতঃপর যার আমলনামা তার বাম হাতে দেয়া হবে, সে বলবেঃ হায় আমায় যদি আমার আমলনামা না দেয়া হতোআমি যদি না জানতাম আমার হিসাব।)) [সূরা আল-হাক্কাহ, আয়াত ২৫-২৬]

অতঃপর হাশর হলঃ মানুষদেরকে তাদের হিসাব-নিকাশের জন্য ময়দানে একত্রিত করা

হাশর ও পুনরুত্থানের মধ্যে পার্থক্য-

পুনরুত্থান হলঃ দেহ সমূহকে পুনরুজ্জীবিত করা

হাশর হলঃ পুনরুত্থিত ব্যক্তিদেরকে অবস্থান ময়দানে একত্রিত করা

হিসাব, নিকাশ ও প্রতিফলঃ আল্লাহু তা'বারাকা ও তা'আলা তাঁর বান্দাদেরকে তাঁর সামনে দাঁড় করাবেন, ও তাদেরকে তাদের সম্পাদিত কর্ম সম্পর্কে অবগত করবেন

অতঃপর মু'মিন মুত্তাকীনদের হিসাব নিকাশ হল, শুধু মাত্র তাদের নিকট তাদের কর্ম পেশ করা হবেযাতে তারা তাদের উপর আল্লাহর অনুগ্রহ বুঝতে পারে, যা (অনুগ্রহ) আল্লাহ তাদের নিকট হতে দুনিয়াতে গোপন রেখেছিলেনআর আল্লাহ আখিরাতে তাদেরকে মাফ করে দিয়েছেনআর তাদের হাশর হবে তাদের ঈমান অনুপাতেফিরিশ্তারা তাদেরকে স্বাগত জানাবে ও জান্নাতে প্রবেশের সুসংবাদ প্রদান করবে, আর তাদেরকে অস্থিরতা ও সকল প্রকার ভয়-ভীতি এবং এ কঠিন দিনের ভয়াবহতা হতে নিরাপত্তা দিবে,অতঃপর তাদের মূখমন্ডল উজ্জল হবেআর মুখমন্ডল সে দিন হাসি-খুশী, আনন্দ-উফুল্ল সুসংবাদ প্রাপ্ত হবেঅতঃপর বিমুখ মিথ্যাবাদীদের (কাফেরদের) হিসাব নিকাশ অত্যান্ত কঠিনভাবে হবেশুক্ষ্ন প্রত্যেকটি ছোট বড় কর্মেরকিয়ামত দিবসে তাদেরকে তাদের মুখের উপর টেনে হেঁচড়ে জাহান্নামে ফেলা হবে, তাদেরকে লাঞ্চিত করার জন্য ও তাদের কৃত কর্মের ফল হিসাবে এবং তাদের মিথ্যা বলার কারণে

কিয়ামত দিবসে সর্ব প্রথম হিসাব নেওয়া হবে আমাদের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উম্মাতের, তাদের সাথে সত্তর হাজার লোক তাদের পূর্ণ তাওহীদের বদৌলাতে বিনা হিসাবে ও বিনা শাস্তিতে জান্নাতে প্রবেশ করবেতারা ঐ সকল লোক নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের ভাষায় যাদের গুণ বর্ণনা করেছেন, তারা কারো নিকট ঝাড় ফুঁক অনুসন্ধান করেননি লৌহ্ জাতীয় কোন কিছুর ছেঁক দিয়ে চিকিসা নেননিকোন দিন বদ ও নেক ফল গ্রহণ করেননিআর তারা তাদের প্রভুর উপরেই ভরসা করতেনআর তাঁদের মধ্যে হলেন প্রসিদ্ধ সাহাবী উক্কাশা বিন মিহসান (রাযিয়াল্লাহু আনহু)আর বান্দার সর্ব প্রথম হিসাব নেওয়া হবে আল্লাহর হক্ব-সালাতের (নামাযের)এবং মানুষের মাঝে সর্ব প্রথম ফায়সালা করা হবে রক্তপাতের

ষষ্ঠতঃ হাউজ

নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হাউজের প্রতি ঈমান আনবোআর ইহা বিশাল হাউজ ও সম্মানিত অবতরণ স্থানকিয়ামতের মাঠে জান্নাতের আল-কাউসার নামক নদী হতে শরাব প্রবাহিত হবেএতে অবতরণ করবে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মু'মিন উম্মাতেরা

হাউজের কিছু বৈশিষ্ট্যঃ ইহার শারাব দুধের চাইতে সাদা, বরফের চাইতে ঠান্ডা, মধুর চাইতে অধিক মিষ্টিমিশকের চাইতে সুগন্ধি, ইহা সুপ্রসস্ত যার দৈর্ঘ ও প্রস্থ সমান, এর প্রতিটি প্রান্তের আয়তন এক মাসের পথের সমানএতে জান্নাত হতে প্রবাহিত দু'টি নালা রয়েছেআর এর পানি পাত্র আকাশের তারকা রাজির চাইতে অধিক যে ব্যক্তি ইহা হতে একবার পানি পান করবে, সে আর কখনও পিপাসিত হবে না

নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ

حوضي مسيرة شهر، ماؤه أبيض من اللبن وريحه أطيب من المسك، وكيزانه كنجوم السماء، من شرب منه فلا يظمأ أبداً

[رواه البخاري]

অর্থঃ ((আমার হাউজের আয়তন এক মাসের পথ সমতুল্য, তার পানি দুধের চাইতে সাদা ও তার ঘ্রাণ মিশকের চাইতে সুগন্ধি, তার পানি পাত্র আকাশের তারকা রাজির সংখ্যার ন্যায়যে ব্যক্তি ইহা হতে একবার পানি পান করবে সে আর কখনও পিপাসিত হবেনা।)) [বুখারী]

সপ্তমতঃ শাফায়াহ্

যখন সেই মহান প্রান্তরে মানুষের বিপদ কঠিন হয়ে দাঁড়াবে এবং সেথায় তাদের অবস্থান দীর্ঘ হবেতখন তারা এ প্রান্তরের ভয়াবহ বিপদ হতে মুক্তি পাওয়ার জন্যে তাদের প্রভুর নিকট সুপারিশ করা হোক এর প্রচেষ্টা করবেরাসূলদের মধ্য হতে যারা উলুল আজম (নূহ, ইব্রাহীম, মূসা ও ঈসা) (আলাইহিমুস সালাম) তাঁরা অপারগতা স্বীকার করবেনপরে ইহা সর্ব শেষ রাসূল আমাদের নবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়াসাল্লাম) এর নিকটে পৌঁছাবে যার আগের ও পরের গুনাহ্ আল্লাহ মাফ করে দিয়েছেনঅতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন স্থানে দাঁড়াবেন যে স্থানে আগের ও পরের সকলেই তাঁর প্রশংসা করবেএবং এর দ্বারা তাঁর সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম মহা সম্মান ও উঁচু মর্যাদা প্রকাশিত হবেতার পর আরশের নিচে সিজ্দা করবেন, আল্লাহ তাঁর নিকট অনেক প্রশংসা, উপযুক্ত আদেশ ইলহাম করবেনতিনি সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দ্বারা তাঁর (আল্লাহর) প্রশংসা করবেন ও তাঁর মর্যাদা বর্ণনা করবেনতার পর নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর প্রভুর নিকট (তাদের জন্য) সুপারিশ করার অনুমতি চাইবেনআল্লাহ তা'আলা নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে সৃষ্টিজীবের সুপারিশ করার জন্য ঐ অনুমতি দিবেনযাতে বান্দাদের মাঝে অসহনীয় দুঃখ-কষ্ট ও চিন্তা ভোগের পর সুষ্ট ফায়সালা করা হয়

নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ

إن الشمس تدنو يوم القيامة حتى يبلغ العرق نصف الأذن فبينما هم كذلك، استغاثوا بآدم، ثم بإبراهيم، ثم بموسى، ثم بعسيى، ثم بمحمد صلى الله عليه وسلم. فيشفع ليقضي بين الخلق، فيمشى حتى يأخذ بحلقة الباب، فيؤمئذ يبعثه الله مقاماً محموداً يحمده أهل الجمع كلهم

[رواه البخاري]

অর্থঃ ((কিয়ামত দিবসে সূর্য নিকটে হবেএমনকি ঘাম অর্ধ কান পর্যন্ত পৌঁছে যাবেতারা এই অবস্থাতেই থাকবেফলে তারা আদম (আলাইহিস্ সালাম) অতঃপর ইব্রাহীম (আলাইহিস্ সালাম) অতঃপর মূসা (আলাইহিস্ সালাম) অতঃপর ঈসা (আলাইহিস্ সালাম) অতঃপর মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মাধ্যমে প্রার্থনা করবেঅতঃপর মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম সুপারিশ করবেনযাতে সৃষ্টিজীবের মাঝে ফায়সালা সুসম্পূর্ণ করা হয়অতঃপর তিনি জান্নাতের দিকে অগ্রসর হবেন, ও জান্নাতের দরজার কড়া (খোলার জন্য) ধরবেনআল্লাহ তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে প্রশংসিত স্থানে অবতরণ করাবেনসে স্থানের সকলে প্রশংসা করবে। [বুখারী]

এ মহান শাফায়াত আল্লাহ একমাত্র রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্য নির্দিষ্ট করেছেনএ ছাড়া তিনি আরো অনেক শাফায়াতের অধিকারী হবেন

(১) জান্নাতীদের জান্নাতে প্রবেশের অনুমুতির জন্যে তাঁর সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর শাফায়াততার প্রমা-

নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ

آتي باب الجنة يوم القيامة فاستفتح،فيقول الخازن من أنت؟ قال فأقول محمد فيقول بك أمرت لا أفتح لأحد قبلك

[رواه مسلم]

অর্থঃ ((আমি কিয়ামত দিবসে জান্নাতের দরজার নিকটে আসবো, দরজা খোলার অনুমতি চাবোঅতঃপর জান্নাতের প্রহরী বলবেন, আপনি কে? আমি উত্তরে বলবঃ আমি মুহাম্মাদ, অতঃপর প্রহরী বলবেঃ আপনার জন্যই শুধু দরজা খোলার আদেশ প্রাপ্ত হয়েছি, আপনার পূর্বে কারো জন্য (দরজা) খুলিনি।)) [মুসলিম]

(২) তাঁর সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর শাফায়াত ঐ সকল ব্যক্তির জন্য যাদের নেকী ও বদী বা স কাজ ও অস কাজ সমান হয়েগেছেতাদের জান্নাতে প্রবেশের ব্যাপারে শাফায়াত করবেনইহা কিছু বিদ্যানদের অভিমতকিন্তু এ ব্যাপারে নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবায়ে কেরাম হতে কোন সহীহ্ হাদীস বর্ণিত হয়নি

(৩) তাঁর সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম শাফায়াত, ঐ সমপ্রদায়ের জন্যে যারা জাহান্নামের অধিকারী হয়ে গেছে, তাদেরকে জাহান্নামে না দেওয়ার ব্যাপারেএর প্রমাণ হলো-

নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হাদীসঃ

شفا عتي لأهل الكبائر من أمتي

[أبوا داود]

অর্থঃ ((আমার উম্মাতের মধ্যে যারা কাবীরাহ্ গোনাহ্ করেছে তাদের জন্য আমার শাফায়াত। [আবু দাউদ]

(৪) তাঁর সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম শাফায়াত, জান্নাতে জান্নাতীদের মর্যাদা বৃদ্ধির ব্যাপারেতার প্রমাণ-

নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হাদীসঃ

اللهم اغفر لأبي سلمة وأرفع درجته في المهديين

[رواه مسلم]

অর্থঃ ((হে আল্লাহ আবূ সালমাকে মাফ কর এবং সঠিক পথ প্রাপ্তদের সাথে তাঁর মর্যাদা বাড়িয়ে দাও।)) [মুসলিম]

(৫) তাঁর সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম শাফায়াত, ঐ সকল সমপ্রদায়ের জন্য যারা জান্নাতে প্রবেশ করবে বিনা হিসাবে ও বিনা শাস্তিতেএর প্রমাণ-

উক্কাশাহ্ বিন মিহ্সান (রাযিয়াল্লাহু আনহু) এর হাদীসঃ

সত্তর হাজার লোকের ব্যাপারে, যারা বিনা হিসাবে ও বিনা শাস্তিতে জান্নাতে প্রবেশ করবেঅতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম তারউক্কাশাহ্) জন্য দোআ করলেনঃ (

اللهم اجعله منهم

[متفق عليه]

অর্থঃ ((হে আল্লাহ্ তাকে (উক্কাশাকে) তাদের অন্তর্ভুক্ত করে দাও।)) [বুখারী ও মুসলিম]

(৬) নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামএর উম্মাতের মধ্যে হতে যারা কাবীরাহ্ গোনাহ করায় জাহান্নামে প্রবেশ করবে, তাদেরকে জাহান্নাম হতে বের করার ব্যাপারে তাঁর সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম শাফায়াতএর প্রমাণ হলো-

নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হাদীসঃ

شفاعتي لأهل الكبائر من أمتي

[رواه أبو دواد]

অর্থঃ ((আমার উম্মাতের কাবীরাহ্ গোনাহ্ কারীদের জন্য আমার শাফায়াত।)) [আবু দাউদ]

নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আরো একটি হাদীস হলোঃ

يخرج قوم من النار بشفاعة محمد صلى الله عليه وسلم فيدخلون الجنة يسمون الجهنميين

[رواه البخاري]

অর্থঃ ((এক দল লোক নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর শাফায়াতে জাহান্নাম হতে বের করা হবে, অতঃপর তারা জান্নাতে যাবেতাদেরকে জাহান্নামী বলে নাম করণ করা হবে।)) [বুখারী]

(৭) যারা শাস্তির হক্বদার হবে তাদের শাস্তি হালকা করার ব্যাপারে তাঁর শাফায়াত, যেমন-তাঁর সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম চাচা আবু তালেবের জন্য শাফায়াতএর প্রমাণ-

নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হাদীস হলোঃ

لعله تنفعه شفاعتي يوم القيامة فيجعل في ضحضاح من النار يبلغ كعبيه يغلي منه دماغه

[متفق عليه]

অর্থঃ ((সম্ভবত কিয়ামতের দিবসে আমার শাফায়াত তার শাস্তি লাঘবে উপকারে আসবে, তাই শাস্তি হিসাবে শুধু পায়ের গিঠা পর্যন্ত দু'টি জুতা পরিয়ে দেয়া হবে,ফলে মাথার মগজ ফুটতে থাকবে।)) [বুখারী ও মুসলিম]

আল্লাহর নিকট শাফায়াত গ্রহণ হওয়ার জন্য দু'টি শর্ত রয়েছে-

(ক) শাফায়াত কারীর ও শাফায়াত কৃত ব্যক্তির প্রতি আল্লাহর সনু্তষ্টি থাকতে হবে

(খ) শাফায়াত কারীর শাফায়াত করার ব্যাপারে আল্লাহর অনুমতি থাকতে হবে

আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ

وَلَا يَشْفَعُونَ إِلَّا لِمَنِ ارْتَضَى

[سورة الأنبياء، الآية:28]

অর্থঃ ((তারা শুধু তাদের জন্যে সুপারিশ করে, যাদের প্রতি, আল্লাহ সন্তুষ্ট।)) [সূরা আল-আম্বিয়া, আয়াত-২৮]

তিনি আরো বলেনঃ

مَن ذَا الَّذِي يَشْفَعُ عِنْدَهُ إِلاَّ بِإِذْنِهِ

[سورة البقرة، الآية:255]

অর্থঃ ((তাঁর (আল্লাহর) অনুমতি ব্যতীত সুপারিশ করার কে অধিকার রাখে?)) [সূরা আল-বাক্বারা, আয়াত-২৫৫]

অষ্টমতঃ মিযান বা মানদন্ডমীযান বা মানদন্ড সত্য এর প্রতি ঈমান আনা ওয়াজিবআর ইহা (মীযান বা মানদন্ড) আল্লাহ্ কিয়ামত দিবসে স্থাপন করবেন, বান্দাদের আমল মাপার ও তাদের কর্মের প্রতিদান প্রদানের জন্যইহা বাস্তব মিযান বা মানদন্ড কাল্পনিক নয়, এর দু'টি পাল্লা ও রশি রয়েছে, এর দ্বারা কর্ম অথবা আমলনামা অথবা স্বয়ং কর্ম সম্পাদন কারীকে মাপা হবেসবই মাপা হবে, তবে ওজন ভারি-হালকার বিষয়বসু্ত হবে শুধু কর্মকর্ম সম্পাদনকারী ও আমল নামা নয়

আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ

وَنَضَعُ الْمَوَازِينَ الْقِسْطَ لِيَوْمِ الْقِيَامَةِ فَلَا تُظْلَمُ نَفْسٌ شَيْئاً وَإِن كَانَ مِثْقَالَ حَبَّةٍ مِّنْ خَرْدَلٍ أَتَيْنَا بِهَا وَكَفَى بِنَا حَاسِبِينَ

[سورة الأنبياء، الآية:47]

অর্থঃ ((আমি কিয়ামত দিবসে ন্যায় বিচারের মিযান বা মানদন্ড স্থাপন করবসুতরাং কারও প্রতি জুলুম হবে নাযদি কোন আমল সরিষার দানা পরিমানও হয় আমি তা উপস্থিত করব এবং হিসাব গ্রহনের জন্য আমিই যথেষ্ট।)) [সূরা আল-আম্বিয়া, আয়াত-৪৮]

তিনি আরো বলেনঃ

وَمَنْ خَفَّتْ مَوَازِينُهُ فَأُوْلَـئِكَ الَّذِينَ خَسِرُواْ أَنفُسَهُم بِمَا كَانُواْ بِآيَاتِنَا يِظْلِمُونَ - وَالْوَزْنُ يَوْمَئِذٍ الْحَقُّ فَمَن ثَقُلَتْ مَوَازِينُهُ فَأُوْلَـئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ

[سورة الأعراف، الآيتان:8-9]

অর্থঃ ((আর সে দিন যথার্থই ওজন হবেঅতঃপর যাদের পাল্লা ভারি হবে, তারাই সফলকাম হবেএবং যাদের পাল্লা হাল্কা হবে, তারাই এমন হবে, যারা নিজেদের ক্ষতি করেছেকেননা,তারা আমার আয়াত সমূহ অস্বীকার করতো।)) [সূরা আল-আ'রাফ, আয়াত ৮-৯]

নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ

الطهور شطر الإيمان، والحمد لله تملأ الميزان

[رواه مسلم]

অর্থঃ ((পবিত্রতা অর্জন করা ঈমানের অর্ধেকআল-হামদুলিল্লাহ্ (সকল প্রশংসা একমাত্র আল্লাহর জন্য) বাক্যটি ওজনের পাল্লাকে পরিপূর্ণ করে দেয়।)) [মুসলিম]

নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেনঃ

يوضع الميزان يوم القيامة فلو وزن فيه السماوات والأرض لوسعت

[رواه الحاكم]

অর্থঃ ((কিয়ামত দিবসে এমন মিযান বা মানদন্ড স্থাপন করা হবে, তাতে যদি সাত আসমান ও সাত জমিনও মাপা হয় সম্ভব হবে।))

নবমতঃ আস্ সিরাত বা পুল সিরাত

আর আমরা পুল সিরাতের প্রতি ঈমান আনবোআর তা হলো জাহান্নামের পিঠের উপর স্থাপিত পুল, যা ভয়-ভীতি সন্ত্রস্ত অতিক্রম স্থল বা পথএর উপর দিয়ে মানুষ জান্নাতের দিকে অতিক্রম করবেকেউ অতিক্রম করবে চক্ষের পলকের ন্যায়কেউ অতিক্রম করবে বিজলীর ন্যায়কেউ বাতাসের ন্যায়কেউ পাখির ন্যায়কেউ ঘোড়ার ন্যায় চলবেকেউ মুসাফিরের ন্যায় চলবেকেউ ঘন ঘন পা রেখে চলবেসর্ব শেষ যারা অতিক্রম করবে তাদেরকে টেনে ফেলা হবেসকলেই অতিক্রম করবে তাদের কর্মের ফলাফল অনুপাতেএমন কি যার আলো তার পায়ের বৃদ্ধা আঙ্গুলের পরিমাণ হবে সেও অতিক্রম করবেকাউকে থাবা মেরে জাহান্নামে ফেলে দেওয়া হবেআর যে ব্যক্তি পুল সিরাত অতিক্রম করতে পারবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে

সর্ব প্রথম আমাদের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম অতঃপর তাঁর উম্মাত পুল সিরাত পাড়ি দিবেনআর সে দিন একমাত্র রাসূলগণ কথা বলবেনরাসূল (আলাইহিমুস সালাম) দের কথা হবে

اللهم سلم سلم

অর্থঃ ((হে আল্লাহ্ মুক্তি দাও, মুক্তি দাও।))

জাহান্নামে পুল সিরাতের দু'ধারে হুকের ন্যায় কন্টক থাকবে, এর সংখ্যা আল্লাহ ছাড়া কেহ্ জানেনাসৃষ্টি-জীব হতে আল্লাহ যাকে ইচ্ছা করবেন তাকে থাবা মেরে (জাহান্নামে) ফেলে দেয়া হবে

পুল সিরাতের কিছু বর্ণনাঃ ইহা তরবারীর চাইতে ধারালো ,আর চুলের চাইতে সূক্ষ্ন ও পিচ্ছিল জাতীয়ইহাতে আল্লাহ্ যাদের পা স্থীর রাখবেন, শুধু মাত্র তাদেরই পা স্থীর থাকবে, আর ইহা অন্ধকারে স্থাপিত হবেআমানত ও আত্নীয়তা বন্ধনকে পুল সিরাতের দু'পার্শে দন্ডায়মান অবস্থায় রাখা হবে, যারা ইহা সংরক্ষন করেছেন তাদের স্বপক্ষে, আর যারা সংরক্ষন করেনি তাদের বিপক্ষে সাক্ষী দেওয়ার জন্য

আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ

ثُمَّ نُنَجِّي الَّذِينَ اتَّقَوا وَّنَذَرُ الظَّالِمِينَ فِيهَا جِثِيّاً - وَإِن مِّنكُمْ إِلَّا وَارِدُهَا كَانَ عَلَى رَبِّكَ حَتْماً مَّقْضِيّا

[سورة مريم، الآيتان:71-72]

অর্থঃ ((তোমাদের মধ্যে এমন কেউ নেই, যে তথায় (পুল সিরাতে) পৌঁছুবেনা এটা আপনার পালনকর্তার অনিবার্য ফায়সালাঅতঃপর আমি পরহেযগারদেরকে উদ্ধার করব এবং জালেমদেরকে সেখানে নতজানু অবস্থায় ছেড়ে দিব।)) [সূরা মারইয়াম, আয়াত ৭১-৭২]

নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামবলেনঃ

ويضرب الصراط بين ظهراني جنهم فأكون أنا وأمتي أول من يجيزه

[رواه مسلم]

অর্থঃ ((জাহান্নামের পিঠের উপর পুল সিরাত স্থাপন করা হবে, আর সর্ব প্রথম আমি ও আমার উম্মাত তা অতিক্রম করবো।)) [মুসলিম]

নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরো বলেনঃ

ويضرب جسر جهنم..فأكون أول من يجيز ودعاء الرسل يومئذ اللهم سلم سلم

[متفق عليه]

অর্থঃ ((জাহান্নামের পুল স্থাপন করা হবে, অতঃপর আমিই সর্ব প্রথম অতিক্রম করবোআর সে দিন রাসূলদের দোআ হবে, আল্লাহুম্মা সালি্লম, সালি্লম, (হে আল্লাহ ! মুক্তি দাও, মুক্তি দাও)।)) [বুখারী, মুসলিম]

আবু সাঈদ খুদরী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেনঃ

بلغني أن الجسر أدق من الشعر وأحد من السيف

[رواه مسلم]

অর্থঃ ((আমি সংবাদ প্রাপ্ত হয়েছি যে, পুল-সিরাত চুলের চাইতে সূক্ষ্ন আর তরবারীর চাইতে ধারালো হবে।)) [মুসলিম]

নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ

وترسل الأمانة والرحم فتقوم على جنبي الصراط يميناً وشمالاً، فيمر أولكم كالبرق... ثم كمر الريح، ثم كمر الطير وشد الرحال، تجزي بهم أعمالهم، ونبيكم قائم على الصراط يقول: رب سلم سلم، حتى تعجز أعمال العباد ،حتى يجئ الرجل فلا يستطيع السير إلا زحفاً قال وعلى حافتي الصراط كلاليب معلقة مأمورة بأخذ من أمرت به فمخدوش ناج ومكدوس في النار

[رواه مسلم]

অর্থঃ ((আমানত ও আত্নীয়তার বন্ধনকে প্রেরণ করা হবে, অতঃপর পুল সিরাতের ডানে ও বামে দাঁড়াবে, তোমাদের মধ্যে সর্ব প্রথম যারা অতিক্রম করবে, তারা বিজলীর ন্যায় অতিক্রম করবে, তার পর যারা অতিক্রম করবে তারা বাতাসের ন্যায়তার পর পাখির ন্যায় অতিক্রম করবে, তার পর মুসাফিরের ন্যায় অতিক্রম করবে, তাদের কর্ম তাদেরকে অতিক্রম করাবেআর তোমাদের নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম পুল সিরাতের পার্শ্বে দন্ডায়মান থাকবেন, এবং বলবেনঃ হে প্রভু মুক্তি দাও, মুক্তি দাওএভাবে বান্দাদের কর্ম অপারগ হয়ে যাবে, এমন কি কিছু লোক হামাগুড়ি দিয়ে অতিক্রম করবেপুল সিরাতের দু'ধারে ঝুলন্ত হুকের ন্যায় কন্টক থাকবে, যাদেরকে গ্রেফতার করার আদেশ প্রাপ্ত হয়েছে তাদেরকে গ্রেফতার করবেঅতঃপর কিছু আহত হয়ে মুক্তি পাবে, আর কিছু চাপাচাপি করে জাহান্নামে পড়ে যাবে। [মুসলিম ]

দশমতঃ আল-কানত্বারাহ্

আমরা ঈমান আনবো এ কথার প্রতি যে, মু'মিনেরা পুল সিরাত অতিক্রম করে কানতারাতে অবস্থান করবে বা দাঁড়াবেআর ইহা (কানত্বারাহ্) হল জান্নাত ও জাহান্নামের মধ্যবর্তী স্থান, এখানে ঐ সকল মু'মিনদেরকে দাঁড় করানো হবে, যারা পুল সিরাত অতিক্রম করে এসেছে এবং জাহান্নাম হতে মুক্তি পেয়েছে, জান্নাতে যাওয়ার পূর্বে একে অপরের কাছ থেকে প্রতিশোধ গ্রহণের জন্যে (এখানে দাঁড় করানো হবে)অতঃপর তাদের পরি-শুদ্ধির পর জান্নাতে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে

নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ

يخلص المؤمنون من النار فيحبسون على قنطرة بين الجنة والنار، فيقتص لبعضهم من بعض مظالم كانت بينهم في الدنيا حتى إذا هذبوا ونقوا أذن لهم في دخول الجنة، فوالذي نفس محمد بيده لأحدهم أهدي بمنزله في الجنة منه بمزله كان في الدنيا

[رواه البخاري]

অর্থঃ ((মু'মিনেরা জাহান্নাম হতে মূক্তি পাবে, তার পর তাদেরকে জান্নাত ও জাহান্নামের মধ্যবর্তী কানত্বারাহ্ নামক স্থানে একত্রিত করা হবেতার পর দুনিয়াতে তাদের মাঝে যে জুলুম নির্যাতন ঘটেছিল একে অপরের পক্ষ হতে তার প্রতিশোধ গ্রহণ করা হবেযখন তারা এসব হতে মূক্ত হবে তখন তাদেরকে জান্নাতে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হবেঅতঃপর শপথ সেই সত্তার যার হাতে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রাণ, নিশ্চয় তাদের প্রত্যেকের দুনিয়ার বাসস্থান হতে জান্নাতের বাসস্থান উত্তম। [বুখারী]

একাদশতমঃ জান্নাত ও জাহান্নাম

আমরা ঈমান আনবো যে, জান্নাত ও জাহান্নাম সত্য, এ দু'টি (জান্নাত ও জাহান্নাম) বর্তমান বিদ্যমান রয়েছে, আর ইহা কখনো ধ্বংস হবে না এবং চিরস্থায়ীও নয়, বরং সর্বদায় রয়েছেআর জান্নাতবাসীদের নি'আমত শেষ ও ঘাটতি হবে না, অনুরূপ জাহান্নামীদের মধ্যে যার ব্যাপারে আল্লাহ চিরস্থায়ী শাস্তির ফায়সালা করেছেন তার শাস্তি কখনও বিরত ও শেষ হবে না

তবে তাওহীদ পন্থীরাঃ আল্লাহর রহমতে ও শাফায়াত কারীদের শাফায়াতে জাহান্নাম হতে মুক্তি পাবেন

আর জান্নাত হলঃ অতিথীশালা, যা আল্লাহ্ কিয়ামতে মুত্তাকীনদের জন্য তৈরী করে রেখেছেনতথায় রয়েছে প্রবাহিত নদী উন্নত ও সুউচ্চ কক্ষ, মনোলোভা রমণী, সমূহতথায় আরো রয়েছে মনঃপূত-মনোহর সামগ্রী যা কোন দিন কোন চক্ষু দেখেনি, কোন কর্ন শ্রবণ করেনি, আর কোন মানুষের অন্তরেও কোন দিন কল্পনায় আসেনি

জান্নাতের নি'আমত চিরস্থায়ী কোন দিন শেষ হবেনাজান্নাতে কোড়া সমতুল্য জায়গাহ্ দুনিয়া ও দুনিয়ার সব কিছুর চাইতে উত্তমআর জান্নাতের সুগন্ধী চলি্লশ বসর দূরত্বের রাস্তা হতে পাওয়া যায়জান্নাতে মু'মিনদের জন্য সব চাইতে বড় নি'আমত হলো আল্লাহকে সরাসরি স্বচক্ষে দর্শনলাভ করা

কিন্তু কাফেররা আল্লাহর দর্শনলাভ হতে বঞ্চিত হবেঃ আর যারা মু'মীনদের জন্য তাদের প্রভুর দর্শনকে অস্বীকার করলো সে বস্তুত এই বঞ্চিত হওয়াতে মু'মিনদেরকে কাফেরদের সমকক্ষ করলোআর জান্নাতে একশতটি ধাপ রয়েছে, এক ধাপ হতে অপর ধাপের দূরুত্ব আসমান হতে জমিনের দূরত্ব অনুরূপআর সবচেয়ে উন্নত ও উত্তম জান্নাত হল, জান্নাতুল ফিরদাউস আল-আলাএর ছাদ হল আল্লাহর আরশআর জান্নাতের আটটি দরজা রয়েছে, প্রত্যেক দরজার পার্শ্বের দৈর্ঘ "মক্কা "হতে "হাজার" এর দূরত্বের সমানআর এমন দিন আসবে যে দিনে ইহা ভিড়ে পরিপূর্ণ হবে, আর জান্নাতে নূন্যতম মর্যাদার অধিকারী যে হবে তার দুনিয়া ও আরো দশ দুনিয়ার পরিমান জায়গা হবে

আল্লাহ তা'আলা জান্নাত সম্পর্কে বলেনঃ

أُعِدَّتْ لِلْمُتَّقِينَ

[سورة آل عمران، الآية:133]

অর্থঃ (পরহেজগার মু'মিনদের জন্য তৈরী করা হয়েছে।)) [সূরা আলে-ইমরান, আয়াত-১৩৩]

জান্নাত বাসীদের চিরস্থায়ী ও জান্নাত ধ্বংস হবে নাএই সম্পর্কে তিনি বলেনঃ

جَزَاؤُهُمْ عِندَ رَبِّهِمْ جَنَّاتُ عَدْنٍ تَجْرِي مِن تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا أَبَداً رَّضِيَ اللَّهُ عَنْهُمْ وَرَضُوا عَنْهُ ذَلِكَ لِمَنْ خَشِيَ رَبَّهُ

[سورة البينة، الآية:8]

অর্থঃ ((তাদের পালন কর্তার কাছে রয়েছে তাদের প্রতিদান চিরকাল বসবাসের জান্নাত, যার তলদেশে নির্ঝরিণী প্রবাহিততারা সেখানে থাকবে অনন্তকালআল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট এবং তারা আল্লাহর প্রতি সনু্তষ্টএটা তার জন্যে, যে তার পালনকর্তাকে ভয় করে।)) [সূরা আল-বাইয়্যেনাহ, আয়াত-৮]

আর জাহান্নামঃ ইহা শাস্তির ঘর যা আল্লাহ্ কাফের ও অবাদ্ধদের জন্য তৈরী করে রেখেছেনতথায় বিভিন্ন প্রকার কঠিন শাস্তি রয়েছেতার পাহারাদার হবে নিষ্ঠুর ও নির্দয় ফিরিশতারাআর কাফেররা তথায় চিরস্থায়ী থাকবেতাদের খাদ্য হবে যাক্কুম (কাঁটা যুক্ত) আর পানিয় হবে পুঁজ, দুনিয়ার আগুনের তাপ জাহান্নামের আগুনের তাপ মাত্রার সত্তর ভাগের এক ভাগ মাত্রজাহান্নামের আগুন দুনিয়ার আগুনের চাইতে ৬৯ (উনসত্তর) গুন বেশী, এর প্রত্যেকটি অংশ দুনিয়ার আগুনের ন্যায় বা তার চাইতে আরো উত্তাপ, আর এই জাহান্নাম তার অধিবাসী নিয়ে পরিতুষ্ট হবেনা বরং বলবে যে, আরো আছে কি ? তার সাতটি দরজা হবেপ্রত্যেকটি দরজার জন্য নির্ধারিত জাহান্নামীমের অংশ থাকবে

আল্লাহ তা'আলা জাহান্নাম সম্পর্কে বলেনঃ

أُعِدَّتْ لِلْكَافِرِينَ

[سورة آل عمران، الآية:131]

অর্থঃ ((কাফিরদের জন্য তৈরী করা হয়েছে।)) [সূরা আলে-ইমরান, আয়াত-১৩১]

জাহান্নামীরা চিরস্থায়ী এবং তা ধ্বংস হবেনাএ সম্পর্কে তিনি আরো বলেনঃ

خَالِدِينَ فِيهَا أَبَداً - ِنَّ اللَّهَ لَعَنَ الْكَافِرِينَ وَأَعَدَّ لَهُمْ سَعِيراً

[سورة الأحزاب، الآيتان:64-65]

অর্থঃ ((নিশ্চয় আল্লাহ কাফেরদেরকে অভিসম্পাত করেছেন, এবং তাদের জন্যে জ্বলন্ত অগি্ন প্রস্তুত রেখেছেনতথায় তারা অনন্তকাল থাকবে।)) [সূরা আল-আহযাব, আয়াত ৬৪-৬৫]

(৩) শেষ দিবসের প্রতি ঈমান আনার ফলাফলঃ

শেষ দিবসের প্রতি ঈমান আনার অনেক সূফল রয়েছে-

(১) ছাওয়াবের আশায় আনুগত্য ও কর্ম সম্পাদনে আগ্রহী ও উসাহী হওয়া

(২) এ দিবসের শাস্তির ভয়ে অবাদ্ধতায় লিপ্ত ও ততপ্রতি সন্তষ্ট থাকা হতে ভয় করা

(৩) আখেরাতে মু'মিনরা যে নি'আমত ও ছাওয়াব পাবে এ আশা- আকাঙ্খায় দুনিয়ার ছুটে যাওয়া জিনিস হতে নিজের শান্তনা লাভ করা

(৪) ব্যক্তি ও সমাজিক জীবনে সৌভাগ্যের মূল উস হল শেষ দিবসের প্রতি ঈমান আনাকারণ মানুষ যখন এ কথার প্রতি ঈমান আনবে যে, নিশ্চয় আল্লাহ তা'আলা সৃষ্টজীবকে তাদের মৃতু্যর পর পুনরুজ্জীবিত করবেন ও তাদের হিসাব নিকাশ নিবেন, এবং তাদের কর্মের প্রতিদান প্রদান করবেনমায্লুমের (অত্যাচারিত) পক্ষে যালিম (অত্যাচার কারী) ব্যক্তির কাছ থেকে প্রতিশোধ নিবেনতখন সে আল্লাহর আনুগত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত হবে, সকল অকল্যাণের জড় নিঃশেষ হয়ে যাবেসমাজে কল্যাণ বিস্তার লাভ করবে, এবং সর্বত্র সম্মান-মর্যাদা,শাস্তি ও নিরাপত্তা ছড়িয়ে পড়বেপ্রশান্তি ও নিরাপত্তা বেড়ে যাবে

ষষ্ঠ রুকনঃ ভাগ্যের প্রতি ঈমান

(১) কদরের (ভাগ্যের) সংজ্ঞা ও তার প্রতি ঈমান আনার গুরুত্বঃ

কদর বা (ভাগ্য) হলঃ আল্লাহর অনন্ত জ্ঞান ও হিকমাত অনুযায়ী সৃষ্টি কূলের জন্য ভাগ্য নির্ধারণআর ইহা আল্লাহর কুদরতের উপর নির্ভলশীল,আর তিনি সর্ব বিষয় ক্ষমতাশীল তিনি যা ইচ্ছা তাহাই করেনআর ভাগ্যের প্রতি ঈমান আনা আল্লাহ্ তা'আলার রুবুবীয়াতের (প্রভুত্তের) প্রতি ঈমান আনার অন্তভুর্ক্তআর ইহা ঈমানের ছয়টি রুক্নের অন্যতম একটি রুকন, এর প্রতি ঈমান আনা ছাড়া এই ছয়টি রুক্নের প্রতি ঈমান আনা পরিপূর্ণ হবে না

আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ

إِنَّا كُلَّ شَيْءٍ خَلَقْنَاهُ بِقَدَرٍ

[سورة القمر، الآية:49]

অর্থঃ ((নিশ্চয় আমি প্রত্যেক বসত্তকে পরিমিত রুপে সৃষ্টি করেছি।)) [সূরা আল-ক্বামার, আয়াত-৪৯]

নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ

كل شيء بقدر حتى العجز والكيس، أوالكيس والعجز

[رواه مسلم]

অর্থঃ ((প্রত্যেক জিনিসই পরিমিত, এমনকি অপারগতা ও অলসতা অথবা অলসতা ও অপারগতাও।)) [মুসলিম]

(২) ভাগ্যের স্তরঃ

চারটি স্তর বাস্তবায়নের মাধ্যমে ভাগ্যের প্রতি ঈমান আনা পরিপূর্ণ হবে-

প্রথমতঃ আল্লাহর অনন্ত জ্ঞানের প্রতি ঈমান আনা, যা সকল বস্তুকে পরিবেষ্টন করে রেখেছে

আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ

أَلَمْ تَعْلَمْ أَنَّ اللَّهَ يَعْلَمُ مَا فِي السَّمَاء وَالْأَرْضِ إِنَّ ذَلِكَ فِي كِتَابٍ إِنَّ ذَلِكَ عَلَى اللَّهِ يَسِيرٌ

[سورة الحج، الآية:70]

অর্থঃ ((তুমি কি জাননা যে,নিশ্চয় আল্লাহ্ অবগত যা কিছু আসমান ও জমিনে রয়েছে,নিশ্চয় ইহা কিতাবে লিখিত আছে আর নিশ্চয় ইহা আল্লাহর নিকট সহজ।)) [সূরা আল-হাজ্ব, আয়াত-৭০]

দ্বিতীয়তঃ লাউহে মাহ্ফুজে আল্লাহর জানা মোতাবেক ভাগ্য সমূহ লিখে রাখার প্রতি ঈমান আনা

আল্লাহ্ তা'আলা বলেনঃ

مَّا فَرَّطْنَا فِي الكِتَابِ مِن شَيْءٍ

[سورة الأنعام، الآية:38]

অর্থঃ ((আমি কোন কিছু লিখতে ছাড়িনি।)) [সূরা আন'আম, আয়াত-৩৮]

নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ

كتب الله مقادير الخلائق قبل أن يخلق السموات والأرض بخمسين ألف سنة

[رواه مسلم]

অর্থঃ ((আসমান-জমিন সৃষ্টির ৫০(পঞ্চাশ) হাজার বসর পূর্বে আল্লাহ্ তা'আলা সৃষ্টজীবের ভাগ্য সমূহ লিখে রেখেছেন।)) [মুসলিম]

তৃতীয়তঃ আল্লাহর কার্যকরী ইচ্ছা ও তাঁর ব্যাপক শক্তির প্রতি ঈমান আনা

আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ

وَمَا تَشَاؤُونَ إِلَّا أَن يَشَاءَ اللَّهُ رَبُّ الْعَالَمِينَ

[سورة التكوير، الآية:29]

অর্থঃ ((জগত সমূহের প্রভু আল্লাহর ইচ্ছার বাইরে অন্য কিছুই ইচ্ছা করতে পার না।)) [সূরা আত্-তাকভীর, আয়াত-২৯]

নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঐ ব্যক্তিকে বলেনঃ যে ব্যক্তি তাঁকে সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম লক্ষ করে বলেছিলেনঃ

ما شاء الله وشئت

"আল্লাহ এবং আপনি যাহা চেয়েছেন (ওয়াও দ্বারা আত্বফ করে)।"

أجعلتني لله نداً بل ما شاء الله وحده

[رواه أحمد]

অর্থঃ ((তুমি কি আমাকে আল্লাহর সমকক্ষ বানিয়ে দিলে ? বরং তিনি একাই চেয়েছেন।)) [আহমাদ]

চতুর্থতঃ নিশ্চয় আল্লাহ্ সকল বস্তুর সৃষ্টি কর্তা ইহার প্রতি ঈমান আনা

আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ

اللَّهُ خَالِقُ كُلِّ شَيْءٍ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ وَكِيلٌ

[سورة الزمر، الآية:62]

অর্থঃ ((আল্লাহ সব কিছুর স্রষ্টা এবং তিনি সব কিছুর অভিবাবক।)) [সূরা-আয্-যুমার, আয়াত-৬২]

তিনি আরো বলেনঃ

وَاللَّهُ خَلَقَكُمْ وَمَا تَعْمَلُونَ

[سورة الصافات، الآية:96]

অর্থঃ ((আল্লাহ তোমাদের ও তোমাদের কর্মকে সৃষ্টি করেছেন।)) [সুরা আস্-সাফফাত, আয়াত-৯৬]

নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ

إن الله يصنع كل صانع وصنعته

[رواه البخاري]

অর্থঃ ((নিশ্চয় আল্লাহ্ সকল আবিস্কারক ও তার আবিস্কারকে সৃষ্টি করেন।)) [বুখারী]

(৩) ভাগ্যের প্রকারঃ

১) সকল সৃষ্টজীবের সাধারণ ভাগ্য লিপিবদ্ধ করণআর ইহাই আসমান জমিন সৃষ্টির পঞ্চাশ হাজার বসর আগে লাউহে মাহ্ফুজে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে

২) সারা জীবনের ভাগ্য লিপিবদ্ধ করণআর তা হল বান্দার মাঝে রুহ্ বা আত্মা ফুঁকে দেওয়ার সময় হতে তার শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত যা কিছু সংঘটিত হবে নির্ধারণ করা

৩) বাসরিক ভাগ্য নির্ধারণ করাইহা হল, প্রত্যেক বসর যা কিছু সংঘটিত হবে তা নির্ধারণ করাআর ইহা প্রত্যেক বসরের মহিমান্বিত রজনীতে হতে থাকে

আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ

فِيهَا يُفْرَقُ كُلُّ أَمْرٍ حَكِيمٍ

[سورة الدخان، الآية:4]

অর্থঃ ((এ রাতে প্রত্যেক প্রজ্ঞাপূর্ণ বিষয় স্থিরীকৃত হয়।)) [সূরা আদ্-দুখান, আয়াত-৪]

৪) দৈনন্দিন ভাগ্য নির্ধারণ করণ, আর তা হল সম্মান, অপমান, (কিছু) দেয়া না দেওয়া জীবিত করা, মৃত্যু দান ইত্যাদি যা দৈনন্দিন সংঘটিত হবে, তা নির্ধারণ করা

আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ

يَسْأَلُهُ مَن فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ كُلَّ يَوْمٍ هُوَ فِي شَأْنٍ

[سورة الرحمن، الآية:29]

অর্থঃ ((আসমান ও যমিনে বিচরণশীল সকলেই তাঁর কাছে প্রার্থী, প্রত্যেকদিন (সময়) কোন না কোন কর্মেরত রয়েছেন।)) [সূরা আর-রাহমান, আয়াত-২৯]

(৪) ভাগ্যের ব্যাপারে সালাফদের আকিদাহ বা বিশ্বাস হলঃ

নিশ্চয় আল্লাহ সকল বস্তুর সৃষ্টিকর্তা প্রভু তার মালিক বা অধিকারীনিশ্চয় আল্লাহ সকল সৃষ্টিজীবকে সৃষ্টির পূর্বে তাদের ভাগ্য সমূহ লিপিবদ্ধ করে রেখেছেনতাদের বয়স, রুযী, কর্ম সমূহ নির্ধারণ করে রেখেছেনআরো লিখে রেখেছেন যে, সুখ অথবা দুঃখের দিকে তারা ধাবিত হবে

প্রত্যেক জিনিসই স্পষ্ট কিতাবে হিসাব করে রেখেছেনঅতঃপর আল্লাহ্ যা চান তা হয়, আর যা চান না তা হয় নাআর যা হয়েছে ও হবে তা সবই জানেনআর যা হয় নাই যদি তা হতো কি ভাবে হতো তাও জানেনআর তিনি প্রত্যেক বস্তুর উপর ক্ষমতাশীলযাকে ইচ্ছা হেদায়াত দান করেন,আর যাকে ইচ্ছা তাকে পথভ্রষ্ট করেনআর নিশ্চয় বান্দার ইচ্ছা ও শক্তি রয়েছে, যা দ্বারা তাদেরকে যে সকল কাজের সমর্থবান করেছেন তা সম্পাদন করে এই বিশ্বাস রেখে যে আল্লাহ্ যা চান শুধু মাত্র তাই হয়

আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ

وَالَّذِينَ جَاهَدُوا فِينَا لَنَهْدِيَنَّهُمْ سُبُلَنَا

[سورة العنكبوت، الآية:69]

অর্থঃ ((যারা আমার পথে সংগ্রাম করে আমি অবশ্যই তাদেরকে আমার পথে পরিচালিত করবো।)) [সূরা আল-আনকাবুত, আয়াত-৬৯]

আর নিশ্চয় আল্লাহ্ বান্দার ও তার কর্মের সৃষ্টি কর্তা আর তারাই এই কর্ম গুলো প্রকৃত পক্ষে সম্পাদন কারীওয়াজেব ছাড়াতে ও হারাম কাজ করাতে আল্লাহর বিরুদ্ধে কারো কোন হুজ্জাত বা দলীল দাঁড় করানোর সুযোগ নেই, বরং বান্দাদের বিরুদ্ধে আল্লাহর পূর্ণ দলীল রয়েছেবিপদ-আপদে ভাগ্যকে কারণ হিসেবে গ্রহণ করা বৈধ হলেও নিন্দনীয় ও পাপের কাজে ভাগ্যের অজুহাত দেয়া বৈধ নয়যেমন-নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম আদম ও মূসা (আলাইহিমাস সালাম) এর পরস্পর বিতর্কের ব্যাপারে বলেনঃ

تحاج آدم وموسى، فقال موسى: أنت آدم الذي أخرجتك خطيئتك من الجنة، فقال له آدم: أنت موسى الذي اصتفاك الله برسالاته وبكلامه ثم تلومني على أمر قد قدّر عليّ قبل أن أخلق فحج آدم موسى.

[رواه مسلم]

অর্থঃ ((আদম ও মূসা (আলাইহিমাস সালাম) বিতর্কে লিপ্ত হয়েছিলেন, অতঃপর মূসা (আলাইহিস্ সালাম) বললেনঃ হে আদম (আলাইহিস্ সালাম) তোমাকেই তো তোমার পাপ জান্নাত হতে বহিস্কার করেছিলতার পর আদম (আলাইহিস্ সালাম) তাঁকে বললেনঃ হে মূসা ! (আলাইহিস্ সালাম) তোমাকেই তো আল্লাহ্ তাঁর রিসালাত ও কথোপকথনের জন্য নির্বাচন করে নিয়েছিলেন? তারপরও তুমি আমাকে এমন বিষয়ের উপর দোষারোপ করছ যা আল্লাহ্ আমার সৃষ্টির পূর্বেই আমার উপর নির্বাচন করে রেখেছেনঅতঃপর আদম (আলাইহিস্ সালাম) মূসা (আলাইহিস্ সালাম) এর উপর জয়ী হলেন। [মুসলিম শরীফ]

(৫) বান্দাদের কর্ম সমূহঃ

যে সকল কাজ আল্লাহ তা'আলা এই নিখিল বিশ্ব্যে সৃষ্টি করেছেন তা দু' ভাগে বিভক্ত-

প্রথমঃ আল্লাহ্ তা'আলার কর্ম সমূহের মধ্যে যে সকল কর্ম তাঁর সৃষ্টজীবের মাঝে পরিচালনা করেন, তাতে কাহারো কোন প্রকার ইচ্ছা ও ইখ্তিয়ার নেইবস্তুর সকল ইচ্ছা আল্লাহর জন্যযেমন জীবিত করা মৃতু্য দান করা সুস্থ্য ও অসুস্থ্য করা

আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ

وَاللَّهُ خَلَقَكُمْ وَمَا تَعْمَلُونَ

[سورة الصافات، الآية:96]

অর্থঃ ((আর আল্লাহই তোমাদের ও তোমাদের কর্মকে সৃষ্টি করেছেন।)) [সূরা আস্-সাফফাত, আয়াত-৯৬]

তিনি আরো বলেনঃ

الَّذِي خَلَقَ الْمَوْتَ وَالْحَيَاةَ لِيَبْلُوَكُمْ أَيُّكُمْ أَحْسَنُ عَمَلاً

[سورة الملك، الآية:2]

অর্থঃ ((যিনি মরণ ও জীবন সৃষ্টি করেছেন যাতে তোমাদেরকে পরিক্ষা করেন- কে তোমাদের মধ্যে কর্মে শ্রেষ্ট?)) [সুরা আল-মুলক্, আয়াত-২]

দ্বিতীয়ঃ আর যে সকল কর্ম সৃষ্টিজীব সম্পাদন করে থাকে, তা সবই ইচ্ছার সাথে সম্পর্কিতআর ইহা সম্পাদন কারীর ইখ্তিয়ার ও ইচ্ছায় সংঘঠিত হয়, কারণ ইহা আল্লাহ্ তাদের উপর অর্পণ করেছেন

আল্লাহ্ তা'আলা বলেনঃ

لِمَن شَاء مِنكُمْ أَن يَسْتَقِيمَ

[سورة التكوير، الآية:28]

অর্থঃ ((যে তোমাদের মধ্যে সোজা পথে চলতে চায়।)) [সূরা আত্-তাকভীর, আয়াত-২৫]

তিনি আরো বলেনঃ

. . . فَمَن شَاء فَلْيُؤْمِن وَمَن شَاء فَلْيَكْفُرْ . . .

[سورة الكهف، الآية:29]

অর্থঃ ((অতএব যার ইচ্ছা হয় ঈমান আনুক এবং যার ইচ্ছা কুফুরী করুক।)) [সূরা আল-ক্বাহাফ, আয়াত-২৯]

ভাল কাজ সম্পাদনের জন্য তারা প্রশংসার হক্বদার ,আর খারাপ কাজ করার জন্য তারা অপমানের হক্বদারআল্লাহ্ শুধু মাত্র ঐ কাজ করার জন্য শাস্তি দিবেন, যাতে বান্দার পূর্ণ ইখতিয়ার রয়েছে

আল্লাহ্ তা'আলা বলেনঃ

وَمَا أَنَا بِظَلَّامٍ لِّلْعَبِيدِ

[سورة ق، الآية:29]

অর্থঃ ((আর আমি বান্দাদের উপর জুলুমকারী নই।)) [সূরা ক্বাফ, আয়াত-২৯]

আর মানুষ ইচ্ছা ও নিরুপায়ের পার্থক্য জানেযেরূপ কেহ ছাদ হতে সিঁড়ি বেয়ে নিজ ইচ্ছায় অবতরণ করেন, আর কখনো কেহ্ তাকে ছাদ হতে ফেলে দিতে পারেপ্রথম উদাহরণ হল ইচ্ছার, আর দ্বিতীয় উদাহরণ হল নিরুপায়ের

(৬) আল্লাহর সৃষ্টি ও বান্দার কর্মের মাঝে সমঝতাঃ

আল্লাহ্ বান্দাকে সৃষ্টি করেছেন ও তার (বান্দার) কর্ম সমূহকে সৃষ্টি করেছেনও তাকে ইচ্ছা ও শক্তি দিয়েছেনতাই বান্দাই প্রকৃত পক্ষে তার কর্মের সম্পাদন কারীসারাসরি তা আদায় কারী,কারণ তার ইচ্ছা ও শক্তি রয়েছেঅতঃপর সে যদি ঈমান আনে তবে সে তার ইচ্ছায় ও ইরাদায় ঈমান আনলোআর সে যদি কুফুরী করে তবে সে তার ইচ্ছায় ও পূর্ণ ইরাদায় কাফের হলযেমন আমরা বলে থাকি যে, এই ফল এই গাছের আর এই ফসল এই ক্ষেতেরঅর্থ হলঃ নিশ্চয় ইহা হতে উপন্ন হয়েছেআর আল্লাহর দিক হতে, এর অর্থ হবেঃ নিশ্চয় আল্লাহ্ ইহাকে ইহা হতে সৃষ্টি করেছেনএই দুইয়ের মাঝে কোন প্রকারের বিরোধ নেইআর এর দ্বারা (শারউল্লাহ) আল্লাহর প্রনয়ণ ও তাঁর নির্ধারণ এক বলে বিবেচিত হয়

আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ

وَاللَّهُ خَلَقَكُمْ وَمَا تَعْمَلُونَ

[سورة الصافات، الآية:96]

অর্থঃ ((অথচ আল্লাহ্ তোমাদেরকে এবং তোমাদের কর্ম সমূহকে সৃষ্টি করেছেন।)) [সূরা আস্-সফফাত, আয়াত-৯৬]

তিনি আরো বলেনঃ

فَأَمَّا مَن أَعْطَى وَاتَّقَى - وَصَدَّقَ بِالْحُسْنَى - َسَنُيَسِّرُهُ لِلْيُسْرَى - وَأَمَّا مَن بَخِلَ وَاسْتَغْنَى - وَكَذَّبَ بِالْحُسْنَى - فَسَنُيَسِّرُهُ لِلْعُسْرَى

[سورة الليل، الآيات:5-10]

অর্থঃ ((অতএব যে দান করে এবং আল্লাহ্ ভীরু হয়, এবং উত্তম বিষয়কে সত্য মনে করে,আমি তাকে সুখের বিষয়ের জন্যে সহজ পথ দান করব,আর যে কৃপণতা করে ও বেপরওয়া হয়, এবং উত্তম বিষয়কে মিথ্যা মনে করে,আমি তাকে কষ্টের জন্যে সহজ পথ দান করব।)) [সূরা আল-লাইল, আয়াত ৫-১০]

(৭) ভাগ্যের ব্যাপারে বান্দার করণীয়ঃ

ভাগ্যের ব্যাপারে বান্দার করণীয় কাজ হল দু'টি-

প্রথমঃ সাম্ভব্য কাজ সম্পাদনের ও সতর্কিত কাজ থেকে বেঁচে থাকার জন্য আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করাতাঁর কাছে (আল্লাহর কাছে) আরো চাইবে যেন তাকে সহজ সাধ্য কাজ সহজ করেদেন, আর কঠিন সাধ্য কাজ হতে তাকে বিরত রাখেনআর তাঁর উপর ভরসা করবে ও তাঁর কাছে আশ্রয় চাইবেঅতঃপর কল্যাণ অর্জনের জন্য ও অকল্যাণ বর্জনের জন্য তাঁর নিকটেই মুখাপেক্ষী হবে

আর তাই রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ

احرص على ما ينفك واستعن بالله ولا تعجز وإن أصابك شيء فلا تقل لو أني فعلت كذا لكان كذا ولكن قل قدر الله وما شاء فعل، فإن لو تفتح عمل الشيطان

অর্থঃ ((তোমার কল্যাণকর কাজের প্রতি আগ্রহবান হও, আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা কর, আর অপারগতা প্রকাশ করিওনাআর তুমি যদি কোন কষ্টের সম্মখীন হও তবে এই রুপ বলিওনা যে আমি যদি এই কাজ করতাম তাহলে এই হতবরং বল যে, আল্লাহ্ যা নির্ধারণ করেছেন ও চেয়েছেন তাই করেছেন, কারণ যদি কথাটি শায়তানের কর্ম খুলে দেয়।))

দ্বিতীয়ঃ বান্দা তার জন্য নির্ধারিত বিষয়ের উপর ধৈর্য ধারণ করবে, ঘাবড়াবেনাঅতঃপর জানবে যে, নিশ্চয় ইহা আল্লাহর পক্ষ হতে, সুতরাং সন্তোষ্ট চিত্তে মেনে নিবেআরো জ্ঞাত হবে-যে বিপদ তাকে আক্রমন করেছে তা ভূল করে আসেনিআর যে বিপদ তোমাকে আক্রমন করেনি তা তার জন্য আসার ছিলনা

নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ

وأعلم أن ما أصابك لم يكن ليخطئك وأن ما أخطأك لم يكن ليصيبك

অর্থঃ ((আরো জ্ঞাত হবে-যে বিপদ তোমাকে আক্রমন করেছে তা তোমাকে ভুল করে আসেনিআর যে বিপদ তোমাকে আক্রমন করেনি তা তোমার জন্য আসার ছিলনা।))

(৮) ভাগ্য ও ফায়সালার প্রতি সন্তুষ্ট থাকাঃ

ভাগ্যের প্রতি সন্তুষ্ট থাকা অপরিহার্যকেননা ইহা আল্লাহর প্রভুত্ত্বের প্রতি সন্তুষ্ট থাকা অন্তর্ভুক্ততাই সকল মু'মিনের পক্ষে আল্লাহর ফায়সালার উপর সন্তুষ্ট থাকা অপরিহার্যকারণ আল্লাহর কর্ম ও ফায়সালা সকলই ভাল (ন্যায় পরায়ণ) ইনসাফ ভিক্তিক হিকমত পূর্ণসুতরাং যার আস্থা থাকবে যে, নিশ্চয় যা (সুখ-দুঃখ) তাকে পৌঁছিয়াছে তা তাকে ভূল করার ছিলনা আর যা তাকে ভূল করেছে তা তাকে পৌঁছার ছিলনা সে প্রেশানী ও সন্দেহ্ হতে বেঁচে থাকবেআর তার জীবন হতে ব্যাকুলতা ও দোদুল্যমানতা দূর হবেচলে বা হারিয়ে যাওয়া বস্তুর উপর চিন্তিত হবে নাআর তার ভবিষ্য কে ভয় পাবেনাআর এর মাধ্যমে সে সব চাইতে সৌভাগ্য পূর্ণ হবে, আত্মার দিক দিয়ে সব চাইতে পবিত্র হবে, আর সব চাইতে শান্ত হবে

আর যে জানতে পারবে যে, তার বয়স সীমিত, রুযী পরিমিত, সে নিশ্চিত ভাবে বুঝতে পারবে যে, কাপুরুষত্বা বয়স বাড়াতে পারে নাকার্পন্নতা রুয বাড়াতে পারে নাতাহলে সবই লিখিত রয়েছেবিপদের উপর ধৈর্য ধারণ করবে, পাপ ও ক্রটি পূর্ণ কর্ম সম্পাদন করার কারনে ক্ষমা চাইবেআর আল্লাহ্ যা (তার জন্য) নির্ধারণ করেছেন তার প্রতি সন্তুষ্ট থাকবেতবেই আদেশের আনুগত্য আর বিপদের উপর ধৈর্য ধারণের মাঝে সম্বন্নয় গড়তে সক্ষম হবে

আল্লাহ্ তা'আলা বলেনঃ

مَا أَصَابَ مِن مُّصِيبَةٍ إِلَّا بِإِذْنِ اللَّهِ وَمَن يُؤْمِن بِاللَّهِ يَهْدِ قَلْبَهُ وَاللَّهُ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيمٌ

[سورة التغابن، الآية:11]

অর্থঃ ((আল্লাহর অনুমতি ব্যতিরেকে কোন প্রকার বিপদ আসে না,এবং যে ব্যক্তি আল্লাহর প্রতি ঈমান আনবে, আল্লাহ্ তার অন্তরকে সপথ প্রদর্শন করবেনআল্লাহ সর্ব বিষয়ে সম্যক পরিজ্ঞাত।)) [সূরা আত্-তাগাবুন, আয়াত-১১]

তিনি আরো বলেনঃ

فَاصْبِرْ إِنَّ وَعْدَ اللَّهِ حَقٌّ وَاسْتَغْفِرْ لِذَنبِكَ

[سورة غافر، الآية:55]

অর্থঃ ((অতএব আপনি ধৈর্য ধারণ করুননিশ্চয় আল্লাহর প্রতিশ্রতি সত্যআপনি আপনার পাপের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুন।)) [সূরা গাফের, আয়াত-৫৫]

(৯) হেদায়াত দু'প্রকারঃ (হেদায়াতের দু'টি অর্থ)

প্রথমঃ হেদায়াত অর্থ- সত্যের সন্ধান দেওয়া,পথ প্রর্দশন করাআর সকল সৃষ্টজীবই এর মালিকআর সকল রাসূল ও তাঁদের অনুসারীগণ এরই মালিক

আল্লাহ্ তা'আলা বলেনঃ

وَإِنَّكَ لَتَهْدِي إِلَى صِرَاطٍ مُّسْتَقِيمٍ

[سورة الشورى، الآية:52]

অর্থঃ ((নিশ্চয় আপনি সরল পথ প্রদর্শন করেন।)) [সূরা আশ্শুরা, আয়াত-৫২]

দ্বিতীয়ঃ হেদায়াত এর অর্থ আল্লাহ কর্তৃক বান্দাদেরকে (ভাল কাজের) তাওফীক প্রদান করা ও সঠিক পথে প্রতিষ্ঠা বা অটল রাখা, (আর ইহা) তাঁর মুত্তাকীন বান্দাদের জন্য দয়া ও অনুগ্রহ স্বরূপআর এই হেদায়াতের একমাত্র মালিক হলেন আল্লাহ

আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ

إِنَّكَ لَا تَهْدِي مَنْ أَحْبَبْتَ وَلَكِنَّ اللَّهَ يَهْدِي مَن يَشَاءُ

[سورة القصص، الآية:56]

অর্থঃ ((আপনি যাকে ভালবাসেন,তাকে সপথে আনতে পারবেন না, তবে আল্লাহ্ তা'আলাই যাকে ইচ্ছা সপথে আনয়ন করেন।)) [সূরা আল-ক্বসাস, আয়াত-৫৬]

(১০) (আল্লাহর) কুরআনে বর্ণিত ইরাদা দু' প্রকারঃ

প্রথমঃ ইরাদা কাউনিয়া ক্বাদারিয়া, তা হল সকল সৃষ্টিকূলের তরে নির্ধারিত ঘটনীয় ইচ্ছা, সুতরাং আল্লাহ্ যা চান তা হয়, আর যা চান না তা হয় নাআর ইহা (ইরাদা কাউনিয়া ক্বাদারিয়া) অবশ্যই পতিত হবেকিন্তু ইরাদা শারয়ীয়া এর সাথে মিলিত না হওয়া পর্যন্ত (ইহাকে) ভালবাসা ও এর প্রতি সন্তুষ্ট হওয়া জরুরী নয়

আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ

فَمَن يُرِدِ اللّهُ أَن يَهْدِيَهُ يَشْرَحْ صَدْرَهُ لِلإِسْلاَمِ

[سورة الأنعام، الآية:125]

অর্থঃ ((আল্লাহ্ যাকে হেদায়াত করার ইচ্ছা করেন,তার বক্ষকে ইসলামের জন্য খুলে দেন।)) [সূরা আনআম, আয়াত-১২৫]

দ্বিতীয়ঃ ইরাদা দ্বীনিয়া শারয়ীয়া, তা হল দ্বীনী নির্দেশ বা উদ্দেশ্য ও তার আহল অনুসারী কে ভালবাসা ও তাদের প্রতি সন্তষ্ট থাকাইরাদা দ্বীনিয়া শারয়ীয়া বাস্তবায়িত হবে না,যতক্ষণ পর্যন্ত এর সাথে ইরাদা কাউনিয়া সংযুক্ত না হবে

আল্লাহ্ তা'আলা বলেনঃ

يُرِيدُ اللّهُ بِكُمُ الْيُسْرَ وَلاَ يُرِيدُ بِكُمُ الْعُسْرَ

[سورة البقرة، الآية:185]

অর্থঃ ((আল্লাহ্ তোমাদের জন্য সহজ চান, তোমাদের জন্য কঠিনতা চান না।)) [সূরা আল-বাক্বারা, আয়াত-১৮৫]

আর ইরাদা কাউনিয়া অধিক ব্যাপক, কারণ সকল শারয়ী উদ্দেশ্য যা বাস্তবায়িত হয় তা সৃষ্টিগত দিক হতেও বাস্তবায়িত হওয়ার জন্য উদ্দেশ্যিতআর পতিত সকল কাওনী উদ্দেশ্য বা ঘটমান ইচ্ছা শরীয়াতে তা উদ্দেশ্যিত নয়যেমন আবু বকর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) এর ঈমানের মাঝে উভয় প্রকার ইরাদা বা ইচ্ছা বাস্তবায়িত হয়েছিলআর আবু জাহল এর কুফুরীতে শুধুমাত্র ইরাদা কাওনিয়া বা ঘটমান ইচ্ছা ছিলআর যাতে ইরাদা কাউনিয়া পাওয়া যাবে না, যদিও তা শারীয়াতের দিক থেকে প্রত্যাশিত, যেমন আবু জাহেলের ঈমানসুতরাং যদি ও আল্লাহ্ নাফারমানী পূর্ণ ইচ্ছা করেন ঘটবার দিক থেকে, এবং সৃষ্টিগত দিক থেকে তা চান কিন্তু তা দ্বীন হিসাবে পছন্দ করেন না, ভাল বাসেন না, ও তার প্রতি নির্দেশ ও দেন নাবরং তার প্রতি বিদ্বেষ রাখেন, অপছন্দ করেন, তা হতে নিষেধ (বান্দাদেরকে) করেন ও তা সম্পাদন কারীকে সাবধান করেন

আর এসব তাঁরই নির্ধারণ তবে আনুগত্য পূর্ণ কর্ম ও ঈমান আনা নিশ্চয় আল্লাহ্ তা'আলা ইহাকে ভাল বাসেন,এবং এর নির্দেশ দেন, এবং এর সম্পাদন কারীকে নেকী ও সুন্দর প্রতি দানের ওয়াদা (প্রতিশ্রতি) দিয়েছেন, তাঁর ইরাদা ছাড়া তাঁর নাফারমানী করা যায় নাআর আল্লাহ্ তা'আলা যা চান শুধু তাই পতিত হয়

আল্লাহ্ তা'আল বলেনঃ

وَلَا يَرْضَى لِعِبَادِهِ الْكُفْرَ

[سورة الزمر، الآية:7]

অর্থঃ (( (আল্লাহ্) তাঁর বান্দাদের জন্য কুফুরী পছন্দ করেন না।)) [সূরা আয্-যুমার, আয়াত-৬]

তিনি আরো বলেনঃ

وَاللّهُ لاَ يُحِبُّ الفَسَادَ

[سورة البقرة، الآية:205]

অর্থঃ ((আল্লাহ্ ফাসাদ (অশান্তি) পছন্দ করেন না।)) [সূরা আল-বাক্বারা, আয়াত-২০৫]

(১১) ঐ সকল আস্বাব বা কারণ সমূহ যা ভাগ্য পরিবর্তন করেঃ

আল্লাহ্ এই ভাগ্যের জন্য কিছু কারণ তৈরী করে রেখেছেন যা ইহাকে পরিবর্তন ও প্রতিরোধ করেযেমন-দোআ, সাদাকাহ্ ঔষধ, সতর্কতা অবলম্বন, (নিজের) কর্ম দক্ষতা ব্যাবহার করা,কারণ সবই আল্লাহর ফায়সালা ও তাঁর ভাগ্য নির্ধারণ, এমনকি অপারগতা- অক্ষমতা ও বিজ্ঞতা-বুদ্ধিমত্তা

(১২) ভাগ্যের মাস্আলা বা বিষয়টি আল্লাহর সৃষ্টজীবের মাঝে তাঁর একটি রহস্যময় বিষয়ঃ

ভাগ্য নির্ধারণ আল্লাহর গোপন রহস্য, তাঁর সৃষ্টজীবের মাঝে এ কথাটি শুধু মাত্র ভাগ্যের গোপন দিকের জন্য প্রয়োজয্যকারণ সকল জিনিসের হাকীকাত শুধুমাত্র আল্লাহ্ জানেনমানুষ তা অবগত হতে পারে নাযেমন আল্লাহ্ পথ ভ্রষ্ট করেন,হেদায়াত করেন, মৃতু্য দান করেন, জীবিত করেন, নিষেধ করেন, কিছু প্রদান করেন

যেমন নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ

إذا ذكر القدر فأمسكوا [رواه مسلم].

অর্থঃ ((যখন ভাগ্যের কথা স্বরণ হবে তখন তোমরা তা নিয়ে তর্ক বির্তকে লিপ্ত না হয়ে চুপ থাকবে।)) [মুসলিম]

তবে ভাগ্যের অন্যান্য দিক ও তাঁর মহা হিকমত স্তর, মর্যাদা ও তাঁর প্রভাব মানুষের নিকট বর্নণা করাও তা তাদেরকে জানানো বৈধ রয়েছেকারণ ভাগ্যের প্রতি ঈমান আনা ঈমানের রুকন সমূহের একটি অন্যতম রুকন,যা শিক্ষা করাও জানা একান্ত কর্তব্য

যেমন রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন জিব্রীল (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর নিকট ঈমানের রুকন সমূহ উল্লেখ করেন তখন বলেনঃ

هذا جبريل أتاكم يعلمكم دينكم [رواه مسلم].

অর্থঃ ((উনি হলেন জিব্রীল তোমাদেরকে তোমাদের দ্বীন শিক্ষা দেওয়ার জন্য আগমণ করেছেন।))

(১৩) ভাগ্যের দ্বারা দলীল দেওয়াঃ

ভবিষ্যতে কি হবে বা না হবে এই সম্পর্কে আল্লাহর পূর্ব জ্ঞান, (ইহা) অদৃশ্য ইহা তিনি ব্যতীত কেহ জানেনা। (ইহা) মানুষ ও জি্বনদের অজানাএতে কোন ব্যক্তিরই স্বীয় পক্ষ গ্রহণের দলীল নেইআর যে বিষয় ফায়সালা হয়েগেছে তার উপর ভরসা করে কর্ম ত্যাগ করা ঠিক নয়সুতরাং ভাগ্য আল্লাহর বিরুদ্ধে ও তাঁর সৃষ্টির কাহারো জন্য দলীল বা হুজ্জাত নয়যদি খারাপ কাজ করার উপর ভাগ্যের দ্বারা দলীল দেওয়া বৈধ হতো,তাহলে অত্যাচারী শাস্তি প্রাপ্ত হতনা, মুশরিক ব্যক্তি হত্যা হতো না, হদ্ বা বিধান প্রতিষ্ঠিত হতনা, আর কেহ্ অত্যাচার করা হতে বিরত থাকতো নাআর ইহা দ্বীন ও দুনিয়াতে অশান্তি সৃষ্টি করার মাধ্যম হত, যার ভয়াবহতা সকলের জানা

আর যারা ভাগ্য দ্বারা দলীল দেয়, তাদেরকে আমরা বলবো তুমি জান্নাতী না জাহান্নামী এ ব্যাপারে তোমার নিকট নিশ্চিত জ্ঞান নেইআর যদি তোমার নিকট এই ব্যাপারে নিশ্চিত জ্ঞান থাকত অবশ্যই আমরা তোমাকে সকাজের আদেশ দিতাম না ও অন্যায় থেকে নিষেধও করতাম নাবরং তুমি কর্ম সম্পাদন কর নিশ্চয় আল্লাহ্ তোমাকে তাওফীক প্রদান করবেন, আর তুমি জান্নাত বাসীদের অন্তর্ভুক্ত হবেকিছু কিছু সাহাবা যখন ভাগ্যের হাদীস সমূহ শুনতেন তখন বলতেনঃ এখন তুমি আমার চাইতে বেশী প্রচেষ্টাকারী নও। (অর্থা, আমি বেশী প্রচেষ্টাকারী)

নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে আত্ম পক্ষ সমর্থনে ভাগ্যের দ্বারা দলীল দেওয়া সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেনঃ

اعملوا فكل ميسر لما خلق له فمن كان من أهل السعادة فسييسر لعمل أهل السعادة، ومن كان من أهل الشقاوة فسييسر لعمل أهل الشقاوة،

অর্থঃ ((তোমরা কর্ম সম্পাদন করতে থাকো যাকে যার জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে তা তার জন্য সহজ সাধ্য হবে, সুতরাং যারা সৌভাগ্যবান হবে তাদেরকে সৌভাগ্যবান ব্যক্তিদের যে কাজ সেই কাজ তার জন্য সহজ করে দেওয়া হবেআর যারা দুর্ভাগা হবে, তাদেরকে তাদের দুর্ভাগা ব্যক্তিদের যে কাজ সেই কাজ সহজ করে দেওয়া হবেঅতঃপর নিম্নের আয়াত পাঠ করলেনঃ

فَأَمَّا مَن أَعْطَى وَاتَّقَى - وَصَدَّقَ بِالْحُسْنَى - َسَنُيَسِّرُهُ لِلْيُسْرَى - وَأَمَّا مَن بَخِلَ وَاسْتَغْنَى - وَكَذَّبَ بِالْحُسْنَى - فَسَنُيَسِّرُهُ لِلْعُسْرَى

[سورة الليل، الآيات:5-10]

অর্থঃ ((অতএব, যে দান করে এবং আল্লাহভীরু হয়, এবং উত্তম বিষয়কে সত্য মনে করে, আমি তাকে সুখের বিষয়ের জন্য সহজ পথ দান করবআর যে কৃপণতা করে ও বেপরওয়া হয়, এবং উত্তম বিষয়কে মিথ্যা মনে করে, আমি তাকে কষ্টের বিষয়ের জন্য সহজ পথ দান করব।)) [সূরা আল্-লাইল, আয়াত ৫-১০]))

(১৪) আসবাব বা (মাধ্যম সমূহ) গ্রহণ করাঃ

বান্দার নিকট দু' প্রকার কাজ উপস্থিত হয়-

(১) এমন কর্ম যাতে বাহানা বা অজুহাত রয়েছে তা সম্পাদনে সে অপারগ নয়

(২) এমন কর্ম যাতে বাহানা ও অজুহাতের অবকাশ নেই, তা পালনে সে ধৈর্য ধারণ করে নাআল্লাহ্ তা'আলা বিপদ পতিত হওয়ার পূর্বেই বিপদ সম্পর্কে জানেন

তাঁর (আল্লাহর) বিপদ সম্পর্কে জ্ঞান রয়েছে এর অর্থ এই নয় যে, তিনিই বিপদ গ্রস্ত ব্যক্তিকে বিপদে পতিত করেছেন, বরং এই বিপদ পতিত হয়েছে এর নির্ধারিত কারণ সমূহের দ্বারাইযদি বিপদ হতে রক্ষাকারী মাধ্যম যা ব্যবহার ও গ্রহণ করার জন্য ইসলামী শরীয়াত অনুমতি দিয়েছেন পরিত্যাগ করার কারণে পতিত হয়, তবে সে নিজেকে হেফাযত না করার কারণে ও তাঁকে বিপদ হতে রক্ষাকারী মাধ্যম গ্রহণ না করার কারণে দোষী হবেআর যদি এই বিপদ প্রতিরোধ করার তার ক্ষমতা না থাকে তবে সে মা'জুর হবেসুতরাং মাধ্যম গ্রহণ করা ভাগ্য ও ভরসার পরিপন্থী নয় বরং ইহা (মাধ্যম গ্রহণ করা) এরই (ভাগ্য ও ভরসারই) অন্তভর্ুক্তআর যখন ভাগ্য পতিত হয়ে যায় তখন তার প্রতি সন্তষ্ট থাকা ও তা মেনে নেয়া ওয়াজিব হয়ে যায় ও নিম্নের কথার দ্বারা আশ্রয় গ্রহণ করবে

قدّر الله وما شاء فعل

অর্থঃ আল্লাহ্ যা নির্ধারণ করেছেন ও চেয়েছেন তাই করেছেনতবে ভাগ্য পতিত হওয়ার পূর্বে মানুষের দায়িত্ব হল বৈধ মাধ্যম গ্রহণ করা ও ভাগ্যের দ্বারা ভাগ্যের প্রতিরোধ করানবীগণ নিজেদেরকে নিজেদের শত্রু থেকে হেফাযতকারী পদ্ধতি ও মাধ্যম গ্রহণ করেছিলেন, অথচ তাঁরা আল্লাহর ওয়াহীও নিরাপত্তা দ্বারা সাহায্য প্রাপ্ত ছিলেনআর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম সকল ভরসা কারীদের নেতা ছিলেন, তা সত্বে ও তিনি মাধ্যম গ্রহণ করতেন আল্লাহর প্রতি পূর্ণ ভরসা থাকার পরও

আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ

وَأَعِدُّواْ لَهُم مَّا اسْتَطَعْتُم مِّن قُوَّةٍ وَمِن رِّبَاطِ الْخَيْلِ تُرْهِبُونَ بِهِ عَدْوَّ اللّهِ وَعَدُوَّكُمْ

[سورة الأنفال، الآية:60]

অর্থঃ ((আর প্রসত্তত কর তাদের সাথে যুদ্ধের জন্য যাই কিছু সংগ্রহ করতে পার নিজের শক্তি সামর্থের মধ্য থেকে এবং পালিত ঘোড়া থেকে, যেন প্রভাব পড়ে আল্লাহর শত্রুদের উপর এবং তোমাদের শত্রুদের উপর।)) [সূরা আল-আনফাল, আয়াত-৬০]

তিনি আরো বলেনঃ

هُوَ الَّذِي جَعَلَ لَكُمُ الْأَرْضَ ذَلُولاً فَامْشُوا فِي مَنَاكِبِهَا وَكُلُوا مِن رِّزْقِهِ وَإِلَيْهِ النُّشُورُ

[سورة الملك، الآية:15]

অর্থঃ ((তিনি তোমার জন্য যমিনকে সুগম করেছেন, অতএব তোমরা তার কাঁধে বিচরণ কর এবং তাঁর দেয়া রিযিক আহার করতাঁরই কাছে পুনরুজ্জীবন হবে।)) [সূরা আল-মূলক, আয়াত-১৫]

নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ

المؤمن القوي خير وأحب إلى الله من المؤمن الضعيف وفي كل خير، احرص على ما ينفعك واستعن بالله ولا تعجز وإن أصابك شيء فلا تقل لو أني فعلت كذا لكان كذا وكذا، ولكن قل قدر الله ما شاء فعل فإن لو تفتح عمل الشيطان. [رواه مسلم].

অর্থঃ ((দুর্বল মু'মিন অপেক্ষা, সবল মু'মিন আল্লাহর কাছে অধিক উত্তম ও প্রিয়, তবে উভয়ের মাঝে কল্যাণ নিহত রয়েছেযা তোমাকে উপকার করবে তা আদায়ে তুমি অগ্রশীল হওআর আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা কর অপারগতা প্রকাশ করিওনাতোমাকে কোন বিপদ স্পর্শ করলে তুমি বলিওনা যে নিশ্চয় আমি এই কাজ করলে এই এই হতো বরং তুমি বলঃ আল্লাহ্ যা নির্ধারণ করেছেন ও চেয়েছেন তাই করেছেনকারণ (لو) লাও বর্ণটি শয়তানের কর্মকে খুলে দেয়।)) [মুসলিম]

(১৫) ভাগ্যকে অস্বীকার কারীর বিধানঃ

যে ব্যক্তি ভাগ্যকে অস্বীকার করল সে ইসলামী শরীয়াতের মূলনীতি সমূহের একটি অন্যতম মূলনীতিকে অস্বীকার করলোআর এর মাধ্যমে সে কুফুরী করলোকিছু কিছু সালাফ সালেহ্ বলেনঃ

ناظروا القدرية بالعلم، فإن جحدوه كفروا، وإن أقروابه خصموا.

অর্থঃ তোমরা কাদরীয়াহ সমপ্রদায়ের সাথে জ্ঞান দ্বারা মুনাযারা কর তারা যদি অস্বীকার করে তাহলে তারা কুফুরী করলো আর যদি তারা স্বীকার করে তাহলে তারা (তোমাদের সাথে) ঝগড়া করলো

(১৬) ভাগ্যের প্রতি ঈমান আনার ফলাফলঃ ফায়সালা ও ভাগ্যের প্রতি ঈমান আনার অনেক শুভ-পরিনাম সুন্দর প্রতিক্রিয়া বা প্রভাব রয়েছে যা জাতীয় ও ব্যক্তি জীবনে কল্যাণ নিয়ে আসে

(ক) নিশ্চয় ইহা (ভাগ্যের প্রতি ঈমান) বিভিন্ন প্রকার নেক আমল ও ভাল গুণ অর্জন করার সুযোগ জন্ম দেয়যেমন আল্লাহর ইখলাস বা এক নিষ্ঠতা, তাঁর উপর ভরসা করা, তাঁকে ভয় করা, তাঁর কাছে কিছু পাওয়ার আশা করা, তাঁর প্রতি ভাল ধারণা রাখা ধৈর্য ধারণ করা, প্রখর সহনশীলতা, নৈরাশ্যতা দূর করা, আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট থাকা, একমাত্র আল্লাহর শুকরিয়া করা, তাঁর অনুগ্রহ দয়া পেয়ে খুশী হওয়াএকমাত্র আল্লাহর জন্য বিনয় নম্রতা প্রকাশ করা, উদাসিনতা ও অহংকার ত্যাগ করাআল্লাহর প্রতি ভরসা করতঃ ভাল পথে ব্যায় করার মন মানুষিকতা ও সৃষ্টি করেবীরত্ব সৃষ্টি করে, ভাল কাজ করার দিকে অগ্রসর করে, অল্পে তুষ্ট থাকার গুন তৈরী করে, আত্ম সম্মানী করে, উচ্চাভিলাশী করে, কর্ম দক্ষতা সৃষ্টি করে, কর্ম সম্পাদনের প্রচেষ্টা তৈরী করে সুখে-দুখে মধ্য পথ অবলম্বন কারী তৈরী করে, হিংসা ও প্রতিবাদ করা থেকে নিরাপদে রাখেবাজে গাল- গল্প বাতিল কাজ হতে বিবেককে মূক্ত রাখেআত্মার প্রশান্তি ও তৃপ্তির ব্যবস্থা করে

(খ) ভাগ্যের প্রতি ঈমান ওয়ালা ব্যক্তি তার জীবনে সঠিক ও সরল পথে পরিচালিত হয়অধিক নি'য়ামত তাকে পথ ভ্রষ্ট করতে পারে না,আর বিপদে নৈরাশ হয় নাআর সে নিশ্চিত বিশ্বাস রাখে যে,তাকে যে বিপদ সর্্পশ করেছে তা (তার জন্য) আল্লাহর নির্ধারণ মাত্র, তার পরিক্ষা স্বরুপঘাবড়ায় না বিচলিত হয় নাবরং ধৈর্য ধারণ করে ও নেকীর আশা রাখে

(গ) নিশ্চয় ইহা পথ ভ্রষ্টের কারণ সমূহ ও জীবনের অশুভ সমাপনী হতে হেফাজত করেইহা তার জন্য (মু'মিনের জন্য) সঠিক পথে প্রতিষ্ঠা থাকার স্থায়ী প্রচেষ্টা, নেক কাজ বেশী বেশী করার সুযোগ, নাফারমানী পূর্ণ ও ধ্বংসাক্ত কাজ থেকে বিরত থাকার সুযোগ করে দেয়

(ঘ) নিশ্চয় ইহা মু'মিনদের জন্য সুদৃঢ় অন্তর ও পূর্ণ বিশ্বাসের দ্বারা ভয়ানক ও কঠিন কর্মকে প্রতিহত করার মনভাব তৈরী করে দেয়, মাধ্যম বা উপকরণ গ্রহণ করার সাথে

নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ

عجبا لأمر المؤمن إن أمره كله له خير وليس ذلك إلا للمؤمن، إن أصابته سراء شكر فكان خيرا له، وإن أصابته ضراء صبر فكان خيرا له.

[رواه مسلم]

অর্থঃ ((কি আর্শ্চয্য ! নিশ্চয় মু'মিনের সকল কর্মই ভাল, আর ইহা শুধু মু'মিনদের জন্য খাস, যদি তাকে কোন আনন্দ স্পর্শ করে সে প্রশংসা করে, ফলে তা তাঁর জন্য কল্যাণ হয়আর যদি তাকে কোন বিপদ স্পর্শ করে সে ধৈর্য ধারণ করে, ফলে তা তার জন্য কল্যাণ হয়।)) [মুসলিম]