তৃতীয় রুকনঃ আসমানী গ্রন্থ সমূহের প্রতি ঈমান
রাসূলগনের উপর আল্লাহর অবতীর্ণ কিতাব সমূহের প্রতি ঈমান আনা, ইহা ঈমানের তৃতীয় রুকন বা স্তম্ভ।
নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা তাঁর রাসূলগণ কে সুস্পষ্ট নিদর্শনসহ প্রেরণ করেছেন। এবং তাঁদের (রাসূলগণের) উপর কিতাব সমূহ অবতীর্ণ করেছেন, মাখলুকাতের হিদায়াত ও রহমত স্বরূপ। যাতে-দুনিয়া ও আখিরাতে সৌভাগ্যশীল হয়। এবং যাতে তাদের চলার একটি সুন্দর পথ হয়। আর মানুষ যে বিষয়ে মতনৈক্যে লিপ্ত, তার সমাধানকারী বা ফায়সালাকারী হয়।
আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ
[سورة الحديد، الآية:25]
অর্থঃ ((আমি আমার রাসূলগণকে সুস্পষ্ট নিদর্শনসহ প্রেরণ করেছি এবং তাদের সাথে অবতীর্ণ করেছি কিতাব ও মিযান (মানদন্ড) যাতে মানুষ ইনসাফ প্রতিষ্টা করে।)) [সূরা আল-হাদীদ,আয়াত-২৫]
তিনি আরো বলেনঃ
كَانَ النَّاسُ أُمَّةً وَاحِدَةً فَبَعَثَ اللّهُ النَّبِيِّينَ مُبَشِّرِينَ وَمُنذِرِينَ وَأَنزَلَ مَعَهُمُ الْكِتَابَ بِالْحَقِّ لِيَحْكُمَ بَيْنَ النَّاسِ فِيمَا اخْتَلَفُواْ فِيهِ
[سورة البقرة، الآية:213]
অর্থঃ ((সকল মানুষ একই জাতি সত্তার অর্ন্তভুক্ত ছিল। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা নাবীদেরকে পাঠালেন সুসংবাদ দাতা ও ভীতি প্রদর্শনকারী হিসেবে। আর তাঁদের সাথে অবতীর্ণ করলেন সত্য কিতাব, যাতে মানুষের মাঝে বিতর্কমূলক বিষয়ে মীমাংসা করতে পারেন।)) [সূরা আল-বাক্বারা,আয়াত-২১৩]
(১) কিতাব সমূহের প্রতি ঈমান আনার মূল কথাঃ
কিতাব সমূহের প্রতি ঈমানঃ এ কথার প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস স্থাপন করা যে, আল্লাহর অনেক কিতাব রয়েছে। যা তিনি তাঁর রাসূলগণের (আলাইহিমুস সালাম) উপর নাযিল করেছেন। আর তা সত্যিকার অর্থে তাঁর (আল্লাহর) বাণী। আর তা হল জ্যোতি ও হিদায়াত। আর নিশ্চয় এ কিতাব সমূহের মধ্যে যা রয়েছে তা সত্য ও ন্যায় সিণ্ঠ, এর অনুসরণ করা ও তদানুযায়ী আমল করা ওয়াজিব। একমাত্র আল্লাহ ছাড়া এ কিতাব সমূহের সংখ্যা কেউ জানেনা।
আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ
وَكَلَّمَ اللّهُ مُوسَى تَكْلِيماً
[سورة النساء، الآية:164]
অর্থঃ ((আর আল্লাহ মূসার সাথে কথোপথন করেছেন সরাসরি।)) [সূরা আন-নিসা,আয়াত-১৬৪]
তিনি আরো বলেনঃ
وَإِنْ أَحَدٌ مِّنَ الْمُشْرِكِينَ اسْتَجَارَكَ فَأَجِرْهُ حَتَّى يَسْمَعَ كَلاَمَ اللّهِ
[سورة التوبة، الآية:6]
অর্থঃ ((আর মুশরিকদের কেউ যদি তোমার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করে, তবে তাকে আশ্রয় দিবে, যাতে সে আল্লাহর বাণী শুনতে পায়।)) [সূরা আত তাওবাহ-আয়াত-৬]
(২) কিতাব সমূহের প্রতি ঈমান আনার বিধানঃ
সকল কিতাবের প্রতি ঈমান আনা যা আল্লাহ তাঁর রাসূলগণের (আলাইহিমুস সালাম) উপর অবতীর্ণ করেছেন, আল্লাহ তা‘বারাকা ও তা‘আলা সত্যিকার অর্থে কিতাব সমূহের মাধ্যমে কথা বলেছেন। এবং তা (আল্লাহর পক্ষহতে) অবতীর্ণ, মাখলুক বা সৃষ্ট নয়,আর যে ব্যক্তি তা (কিতাব সমূহ) অথবা তাঁর কিছুকে অÈীকার করবে সে কাফের হয়ে যাবে।
আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ آمِنُواْ بِاللّهِ وَرَسُولِهِ وَالْكِتَابِ الَّذِي نَزَّلَ عَلَى رَسُولِهِ وَالْكِتَابِ الَّذِيَ أَنزَلَ مِن قَبْلُ وَمَن يَكْفُرْ بِاللّهِ وَمَلاَئِكَتِهِ وَكُتُبِهِ وَرُسُلِهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ فَقَدْ ضَلَّ ضَلاَلاً بَعِيداً
[سورة النساء، الآية:136]
অর্থঃ ((হে ঈমানদারগণ, আল্লাহর উপর পরিপূর্ণ বিশ্বাস স্থাপন কর এবং বিশ্বাস স্থাপন কর তাঁর রাসূল ও তাঁর কিতাবের উপর ,যা তিনি অবতীর্ণ করেছেন Èীয় রাসূলের উপর এবং সে সমস্ত কিতাবের উপর যে গুলো অবতীর্ণ করা হয়েছিল ইতিপূর্বে। যে আল্লাহর উপর,তাঁর ফিরিশতাদের উপর, তাঁর কিতাব সমূহের উপর,এবং রাসূলগণের উপর ও কিয়ামত দিবসের উপর বিশ্বাস করবেনা, সে পথভ্রষ্ট হয়ে বহু দূরে গিয়ে পড়বে।)) [সূরা আন-নিসা,আয়াত-১৩৬]
তিনি আরো বলেনঃ
وَهَـذَا كِتَابٌ أَنزَلْنَاهُ مُبَارَكٌ فَاتَّبِعُوهُ وَاتَّقُواْ لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُونَ
[سورة الأنعام، الآية:155]
অর্থঃ ((এটি এমন একটি গ্রন্থ, যা আমি অবতীর্ণ করেছি, খুব মঙ্গলময়। অতএব এর অনুসরণ কর এবং ভয়কর-যাতে তোমরা করুনা প্রাপ্ত হও।)) [সূরা আল-আনআম,আয়াত-১৫৫]
(৩) এসব কিতাবের প্রতি মানুষের প্রয়োজনীয়তা এবং তা অবতীর্ণ করার পিছনে হিকমাত বা রহস্যঃ
প্রথমতঃ যাতে রাসূল (আলাইহিস সালাম) এর উপর অবতীêণ কিতাব তাঁর উম্মাতের জন্য জ্ঞান কোষ স্বরূপ হয়। ফলে তারা তাদের দ্বীন সম্পর্কে জানার জন্যে এর দিকে প্রত্যাবর্তন করে।
দ্বিতীয়তঃ যাতে রাসূল (আলাইহিস সালাম) এর উপর অবতীêন কিতাব তাঁর উম্মাতের প্রত্যেক মতনৈক্য পূর্ণ বিষয়ে ইনসাফ ভিক্তিক বিচারক হয়।
তৃতীয়তঃ যাতে অবতীêণ কিতাব রাসূল (আলাইহিস সালাম) এর ইন্তেকালের পর দ্বীন বা ধর্ম সংরক্ষণকারী হিসাবে দাঁড়াতে পারে, স্থান ও কালের যতই দুরুত্ব হোকনা কেন। যেমন-আমাদের নাবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর (পরবর্তী)দাওয়াতের অবস্থা।
চতুর্থতঃ যাতে এ অবতীর্ণ কিতাব সমূহ আল্লাহর পক্ষহতে হুজ্জাত (পক্ষ বিপক্ষের দলীল)স্বরূপ হয়। যেন সৃষ্টি জীব এর (কিতাব সমূহের) বিরোধিতা করা এবং এর আনুগত্য হতে বের হয়ে যাওয়ার সমথ্যê না রাখে।
আল্লাহ্ তা'আলা বলেনঃ
كَانَ النَّاسُ أُمَّةً وَاحِدَةً فَبَعَثَ اللّهُ النَّبِيِّينَ مُبَشِّرِينَ وَمُنذِرِينَ وَأَنزَلَ مَعَهُمُ الْكِتَابَ بِالْحَقِّ لِيَحْكُمَ بَيْنَ النَّاسِ فِيمَا اخْتَلَفُواْ فِيهِ
[سورة البقرة، الآية:213]
অর্থঃ ((সকল মানুষ একই জাতি সত্ত্বার অন্তর্ভুক্ত ছিল। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা নাবীদেরকে পাঠালেন সুসংবাদ দাতা ও ভীতি প্রদর্শনকারী হিসাবে। আর তাদের সাথে অবতীর্ণ করলেন সত্য কিতাব,যাতে মানুষের মাঝে বিতর্কমূলক বিষয়ে মীমাংসা করতে পারেন।)) [সূরা আল-বাক্বারা,আয়াত-২১৩]
(৪)কিতাব সমূহের প্রতি ঈমান আনার নিয়মঃ
আল্লাহর কিতাব সমূহের প্রতি সংক্ষিপ্ত ও বিস্তারিত ভাবে ঈমান আনা হয়ে থাকে।
সংক্ষিপ্ত ঈমানঃ এ বিশ্বাস করবে (ঈমান আনা) যে, আল্লাহ তা‘আলা তাঁর রাসূলগণের উপর অনেক কিতাব অবতীর্ণ করেছেন।
বিস্তারিত ভাবে ঈমানঃ ইহা হলো, আল্লাহ কুরআন কারীমে যে সকল কিতাবের নাম উল্লেখ্য করেছেন, তার প্রতি ঈমান আনা। তা হতে আমরা জেনেছি-কুরআন, তাওরাত, যাবুর, ইনজীল, এবং ইব্রাহীম, ও মূসা এর প্রতি অবতীর্ণ পুস্তিকা সমূহ (আলাইহিমুস সালাম)।
আরো ঈমান আনা যে, ঐসকল কিতাব ছাড়াও আল্লাহর অনেক কিতাব রয়েছে, যা তাঁর নাবীগণের উপর অবতীêণ করেছেন।
আর আল্লাহ ছাড়া ঐ সকল কিতাবের নাম ও সংখ্যা কেউ জানেনা।
এ কিতাব গুলো অবতীর্ণ হয়েছে যাবতীয় সতকর্ম ও ইবাদাত একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার নিমিত্তে সম্পাদনের মাধ্যমে তাঁর তাওহীদ (একত্ববাদ) বাস্তবায়ন এবং পৃথিবীতে শিরক ও অন্যায়-অনাচার দূরীভূত করার জন্য। মূলত সকল নাবীদের দাওয়াত এক মূলনীতির (তাওহীদ প্রতিণ্ঠা ও শির্ক বর্জনের) উপর ছিল, যদিও তাঁরা নিয়ম কানুন ও বিধি-বিধানে কিছুটা ভিন্ন রকম ছিলেন।
এ ঈমানও রাখা যে, পূর্ববর্তী রাসূলদের প্রতি (আল্লাহর পক্ষ হতে) কিতাব অবতীর্ণ হয়েছিল । আর আল-কুরআনের প্রতি ঈমান আনা হলো ঃ তা (অন্তরে ও মুখে) স্বীকৃতি দেয়া এবং কুরআনে যা রয়েছে তা অনুসরণ করা।
আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ
آمَنَ الرَّسُولُ بِمَا أُنزِلَ إِلَيْهِ مِن رَّبِّهِ وَالْمُؤْمِنُونَ كُلٌّ آمَنَ بِاللّهِ وَمَلآئِكَتِهِ وَكُتُبِهِ وَرُسُلِهِ
[سورة البقرة، الآية:285]
অর্থঃ ((রাসূল বিশ্বাস রাখেন ঐ সমস্ত বিষয় সম্পর্কে যা তাঁর পালন কর্তার পক্ষ থেকে তাঁর কাছে অবতীর্ণ হয়েছে এবং মু‘মিনরাও। সকলেই বিশ্বাস রাখে আল্লাহর প্রতি, তাঁর ফিরিশতাদের প্রতি, তাঁর গ্রন্থ সমূহের প্রতি এবং তাঁর রাসূলগণের প্রতি।)) [সূরা আল-বাক্বারা,আয়াত-২৮৫]
তিনি আরো বলেনঃ
اتَّبِعُواْ مَا أُنزِلَ إِلَيْكُم مِّن رَّبِّكُمْ وَلاَ تَتَّبِعُواْ مِن دُونِهِ أَوْلِيَاء
[سورة الأعراف، الآية:3]
অর্থঃ তোমরা অনুসরণ কর,যা তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে অবতীর্ণ হয়েছে। আর আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্য সাথীদের অনুসরণ করোনা। [সূরা আল-আ‘রাফ,আয়াত-৩]
পূর্ববতী কিতাবের চেয়ে কুরআনের কিছু ভিন্ন বৈশিষ্ট রয়েছেঃ
(১) আল-কুরআন স্বীয় শব্দ, অর্থ এবং তাতে যে জ্ঞান ও পার্থিব তথ্য রয়েছে তা সর্ব বিষয়ে এক অলৌকিক শক্তি।
(২) আল-কুরআন সর্ব শেষ আসমানী কিতাব, কুরআনের মাধ্যমে আসমানী কিতাবের সমাপ্তি ঘটেছে। যেমন-আমাদের নাবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর রিসালাতের দ্বারা সকল রিসালাতের পরিসমাপ্তি ঘটেছে।
(৩) সকল প্রকার বিকৃতি ও পরিবর্তন হতে আল্লাহ কুরআনকে হেফাজত করবেন। ইহা অন্যান্য কিতাব হতে সতন্ত্র। কেননা সে সব কিতাবে বিকৃতি ও পরিবর্তন পরিবর্ধন ঘটেছে।
(৪) আল-কুরআন পূর্ববর্তী কিতাবের সত্যায়ন ও সংরক্ষণকারী।
(৫) কুরআন পূর্ববর্তী সকল কিতাবের রহিতকারী।
আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ
مَا كَانَ حَدِيثاً يُفْتَرَى وَلَـكِن تَصْدِيقَ الَّذِي بَيْنَ يَدَيْهِ وَتَفْصِيلَ كُلَّ شَيْءٍ وَهُدًى وَرَحْمَةً لِّقَوْمٍ يُؤْمِنُونَ
[سورة يوسف، الآية:111]
অর্থঃ ((এটা কোন মনগড়া কথা নয়, কিন্ত যারা বিশ্বাস স্থাপন করে তাদের জন্য পূর্বেকার কালামের সামর্থন এবং প্রত্যেক বস্তুর বিবরণ রহমত ও হিদায়াত।)) [সূরা ইফসুফ,আয়াত-১১১]
(৫)পূর্ববর্তী কিতাব সমূহের সংবাদ গ্রহণ করাঃ
আমরা নিশ্চিত ভাবে জানি যে, পূর্ববর্তী কিতাবে আল্লাহ তাঁর রাসূলগণের নিকটে ওয়াহীর মাধ্যমে যে সংবাদ দিয়েছেন তা সত্য, তাতে কোন প্রকার সন্দেহ নেই। এর অর্থ এ নয় যে, বর্তমানে আহলে কিতাবদের (ইয়াহুদী ও খৃষ্টানদের) নিকট যে কিতাব রয়েছে তা গ্রহণ করবো। কারণ তা বিকৃত করা হয়েছে, আল্লাহ তাঁর রাসূলগণের নিকট যে ভাবে অবতীর্ণ করেছেন সে ভাবে নেই। পূর্ববর্তী কিতাব হতে আল্লাহ আমাদেরকে তাঁর কিতাবে (কুরআনে) যে সংবাদ দিয়েছেন তা হতে আমরা নিশ্চিত ভাবে জেনেছি যে, কেউ কারও গোনাহ বহন করবে না। মানুষ তাই পায় যা সে করে, তার কর্ম শীঘ্রই দেখানো হবে, অতঃপর তাকে পূর্ণ প্রতিদান দেয়া হবে।
আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ
[سورة النجم، الآيات:36-41]
অর্থঃ ((তাকে কি জানানো হয়নি যা আছে মূসার কিতাবে এবং ইবরাহীমের কিতাবে যে,তার দায়িত্ব পালন করে ছিল ? কিতাবে আছে যে, কেউ কারও গোনাহ বহন করবে না, এবং মানুষ তাই পায় যা সে করে। আর তার কর্ম শীঘ্রই দেখানো হবে, অতঃপর তাকে পূর্ণ-প্রতিদান দেয়া হবে।)) [সূরা আন-নজম,আয়াত-৩৬-৪১]
তিনি আরো বলেনঃ
[سورة الأعلى، الآيات:16-19]
অর্থঃ ((বস্ততঃ তোমরা পার্থিব জীবনকে অগ্রাধিকার দাও,অথচ পরকালের জীবন উতকৃষ্ট ও স্থায়ী। এটা লিখিত রয়েছে পূর্ববর্তী কিতাব সমূহে, ইবরাহীম ও মূসার কিতাব সমূহে।)) [সূরা আল-আ‘লা,আয়াত-১৬-১৯]
পূর্ববর্তী কিতাবের বিধানঃ কুরআনে যে সকল বিধান রয়েছে তা মেনে চলা আমাদের অপরিহার্য। তবে পূর্ববর্তী কিতাবে যা রয়েছে তা নয়। কারণ আমরা দেখবো পূর্ববর্তী কিতাবে যে বিধান রয়েছে তা যদি আমাদের শরিয়াতের পরিপন্থী হয়, তবে আমরা তা আমল করবো না, তা বাতিল এ জন্যে নয়, বরং তা সে সময় সত্য ছিল, এখন তা আমল করা আমাদের উপর অপরিহার্য নয়। কারণ তা আমাদের শরীয়াত দ্বারা রহিত হয়ে গেছে। আর যদি তা আমাদের শরীয়াতের অনুসরণ হয়, তবে তা সত্য বলে বিবেচিত হবে। আমাদের শরীয়াত তা সত্য বলে স্বীকৃতি দিয়েছে।
(৬) কুরআন ও হাদীসে যে সকল আসমানী কিতাবের নাম উল্লেখ্য হয়েছে তা হলোঃ
(১) কুরআন কারীমঃ কুরআন হল আল্লাহর বানী যা তিনি শেষ নাবী ও রাসূল মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর উপর নাযিল করেছেন।
কুরআন সর্ব শেষ অবতীর্ণ কিতাব। আল্লাহ কুরআনকে বিকৃতি ও পরির্বতন হতে হিফাজত করার দায়িত্ব ভার গ্রহণ করেছেন, এবং সকল আসমানী কিতাবের রহিতকারী করেছেন।
আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ
إِنَّا نَحْنُ نَزَّلْنَا الذِّكْرَ وَإِنَّا لَهُ لَحَافِظُونَ
[سورة الحجر، الآية:9]
অর্থঃ ((আমি স্বয়ং এ উপদেশ গ্রন্থ অবতরণ করেছি এবং আমি নিজেই এর সংরক্ষক।)) [সূরা আল-হিজর,আয়াত-৯]
তিনি আরো বলেনঃ
وَأَنزَلْنَا إِلَيْكَ الْكِتَابَ بِالْحَقِّ مُصَدِّقاً لِّمَا بَيْنَ يَدَيْهِ مِنَ الْكِتَابِ وَمُهَيْمِناً عَلَيْهِ فَاحْكُم بَيْنَهُم بِمَا أَنزَلَ اللّهُ
[سورة المائدة، الآية:48]
অর্থঃ ((আমি আপনার প্রতি অবতীর্ন করেছি সত্যগ্রন্থ, যা পূর্ববর্তী গ্রন্থ সমূহের সত্যায়নকারী এবং সে গুলোর বিষয়বস্তর রক্ষণা বেক্ষণকারী। অতএব আপনি তাদের পারস্পারিক ব্যাপারাদিতে আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন তদনুযায়ী ফয়সালা করুন।)) [সূরা আল-মায়িদাহ,আয়াত-৪৮]
(২)তাওরাতঃ তাওরাত ঐ কিতাব যাকে আল্লাহ মূসা (আলাইহিস সালাম) এর উপর নূর (জ্যোতি) ও হিদায়াত স্বরূপ নাযিল করেছিলেন। বানী ইসরাঈলের নাবী ও আলেমগণ এর দ্বারা ফায়সালা করতেন। সুতরাং মূসা (আলাইহিস সালাম) এর উপর আল্লাহর অবতীর্ণ কিতাব তাওরাত এর প্রতি ঈমান আনা ওয়াজিব, বর্তমান তথা কথিত ইয়াহুদীদের হাতে বিকৃত তাওরাতের প্রতি নয়।
আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ
[سورة المائدة، الآية:44]
অর্থঃ ((আমি তাওরাত অবতীর্ণ করেছি, এতে হেদায়াত ও আলো রয়েছে, আল্লাহর আনুগত্যশীল নাবী, আল্লাহভক্ত ও আলেমরা এর মাধ্যমে ইয়াহুদীদের ফায়সালা দিতেন। কেননা তাদেরকে আল্লাহর এই গ্রন্থের দেখা শোনা করার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল।)) [সূরা আল-মায়িদাহ,আয়াত-৪৪]
(৩)ইঞ্জীলঃ ইঞ্জীল ঐ কিতাব যা সত্যিকার অর্থে আল্লাহ ঈসা (আলাইহিস সালাম) এর উপর নাযিল করেছিলেন, যা পুর্ববতীê সকল আসমানী কিতাবের সত্যায়নকারী। সুতরাং ঐ ইঞ্জীলের উপর ঈমান আনা ওয়াজিব, যা সঠিক মূলনীতি সহ আল্লাহ ঈসা (আলাইহিস সালাম) এর উপর নাযিল করেছিলেন। খৃষ্টানদের নিকট বিক্রিত ইঞ্জীল সমূহে নয়।
আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ
وَقَفَّيْنَا عَلَى آثَارِهِم بِعَيسَى ابْنِ مَرْيَمَ مُصَدِّقاً لِّمَا بَيْنَ يَدَيْهِ مِنَ التَّوْرَاةِ وَآتَيْنَاهُ الإِنجِيلَ فِيهِ هُدًى وَنُورٌ وَمُصَدِّقاً لِّمَا بَيْنَ يَدَيْهِ مِنَ التَّوْرَاةِ وَهُدًى وَمَوْعِظَةً لِّلْمُتَّقِينَ
[سورة المائدة، الآية:46]
অর্থঃ ((আমি তাদের পেছনে মারিয়ামের পুত্র ঈসাকে প্রেরণ করেছি। তিনি পূর্ববর্তী গ্রন্থ তাওরাতের সত্যায়নকারী ছিলেন। আমি তাকে ইঞ্জীল প্রদান করেছি। এতে হেদায়াত ও আলো রয়েছে। এটি পূর্ববর্তী গ্রন্থ তাওরাতের-সত্যায়ন করে,পথ প্রদর্শন করে এবং এটি আল্লাহভীরুদের জন্যে হেদায়াত ও উপদেশবানী।)) [সূরা আল-মায়িদাহ,আয়াত-৪৬]
তাওরাত ও ইঞ্জীলে যা রয়েছে তন্মধ্যে আমাদের নাবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর রিসালাতের সুসংবাদ রয়েছে।
আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ
الَّذِينَ يَتَّبِعُونَ الرَّسُولَ النَّبِيَّ الأُمِّيَّ الَّذِي يَجِدُونَهُ مَكْتُوباً عِندَهُمْ فِي التَّوْرَاةِ وَالإِنْجِيلِ يَأْمُرُهُم بِالْمَعْرُوفِ وَيَنْهَاهُمْ عَنِ الْمُنكَرِ وَيُحِلُّ لَهُمُ الطَّيِّبَاتِ وَيُحَرِّمُ عَلَيْهِمُ الْخَبَآئِثَ وَيَضَعُ عَنْهُمْ إِصْرَهُمْ وَالأَغْلاَلَ الَّتِي كَانَتْ عَلَيْهِمْ
[سورة الأعراف، الآية:157]
অর্থঃ ((যারা আনুগত্য করে এ রাসূলের, যিনি নিরক্ষর নাবী,যার সম্পর্কে তাদের নিজেদের কাছে রক্ষিত তাওরাত ও ইঞ্জীলে লিখা দেখতে পায়, তিনি তাদেরকে নির্দেশদেন সতকর্মের, বারণ করেন অসতকর্ম থেকে, তাদের জন্য যাবতীয় পবিত্র বস্তু হালাল ঘোষনা করেন ও নিষিদ্ধ করেন নিকৃষ্ট বুæসমূহ, আর তাদের উপর থেকে সে বোঝা নামিয়েছেন এবং বন্দীত্ব অপসারণ করেন যা তাদের উপর বিদ্যমান ছিল।)) [সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত-১৫৭]
(৪)যাবুরঃ যাবুর ঐ কিতাব যা আল্লাহ দাউদ (আলাইহিস সালাম) এর উপর নাযিল করেছিলেন। সুতরাং ঐ যাবুরের প্রতি ঈমান আনা ওয়াজিব যা আল্লাহ দাউদ (আলাইহিস সালাম) এর উপর নাযিল করেছিলেন। সে যাবুর নয় যা ইয়াহুদীরা বিকৃত করে ফেলেছে।
আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ
وَآتَيْنَا دَاوُودَ زَبُوراً
[سورة النساء، الآية:163]
অর্থঃ ((আর দাউদকে দান করেছি যাবুর।)) [সূরা আন-নিসা,আয়াত-১৬৩]
(৫) ইবরাহীম ও মূসা (আলাইহিস সালাম)এর সুহুফ বা পুস্তিকা সমূহঃ
তা ঐ সকল পুস্তিকা যা আল্লাহ ইবরাহীম ও মূসা (আলাইহিস সালাম)কে দিয়েছিলেন। কুরআন ও হাদীসে যা উল্লেখ্য হয়েছে তা ছাড়া এ সকল পুস্তিকা নিরুদ্দেশ।
আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ
[سورة النجم، الآيات:36-41]
অর্থঃ ((তাকে কি জানানো হয়নি যা আছে মূসার কিতাবে এবং ইবরাহীমের কিতাবে যে,তার দায়িত্ব পালন করে ছিল ? কিতাবে আছে যে, কেউ কারও গোনাহ বহন করবে না, এবং মানুষ তাই পায় যা সে করে। আর তার কর্ম শীঘ্রই দেখানো হবে, অতঃপর তাকে পূর্ণ-প্রতিদান দেয়া হবে।)) [সূরা আন-নজম,আয়াত-৩৬-৪১]
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেনঃ
[سورة الأعلى، الآيات:16-19]
অর্থঃ ((বস্ততঃ তোমরা পার্থিব জীবনকে অগ্রাধিকার দাও,অথচ পরকালের জীবন উতকৃষ্ট ও স্থায়ী। এটা লিখিত রয়েছে পূর্ববর্তী কিতাব সমূহে, ইবরাহীম ও মূসার কিতাব সমূহে।)) [সূরা আল-আ‘লা,আয়াত-১৬-১৯]
চতুর্থ রুকনঃ রাসূলদের প্রতি ঈমান ।
(১) রাসূল (আলাইহিমুস্ সালাম) দের প্রতি ঈমান আনাঃ ইহা ঈমানের রুকন সমূহের একটি রুকন, যার প্রতি ঈমান আনা ছাড়া কোন ব্যক্তির ঈমান পরিপূর্ণ হবেনা।
রাসূলগণের প্রতি ঈমান হলঃ এ কথার দৃঢ় বিশ্বাস করা যে, আল্লাহর অনেক রাসূল রয়েছে যাদেরকে তিনি তাঁর রিসালাত প্রচার করার জন্য নির্বাচন করেছেন। যারা তাঁদের অনুসরণ করবে, তারা হেদায়াত (সঠিক পথ) পাবে। আর যারা তাঁদের অনুসরণ করবেনা তারা পথভ্রষ্ট হবে। আল্লাহ তাদের নিকট যে কিতাব অবতীর্ণ করেছেন তা সুস্পষ্ট ভাবে প্রচার করেছেন। তারা অর্পিত আমানত আদায় করেছেন, এবং স্বীয় উম্মাতকে কল্যাণের উপদেশ দিয়েছেন। তাঁরা আল্লাহর পথে যথাযথ জিহাদ করেছেন। এবং যা সহ প্রেরিত হয়েছেন তার কোন অংশ পরিবর্তন, পরিবর্ধন ও গোপন না করে স্বজাতির উপর হুজ্জাত (পক্ষ-বিপক্ষের দলীল) কায়েম করেছেন। আল্লাহ যে সকল রাসূলদের নাম আমাদের কাছে উল্লেখ্য করেছেন, আর যাদের নাম উল্লেখ্য করেন নাই তাদের সকলের প্রতি আমরা ঈমান আনবো।
প্রত্যেক রাসূলই তাঁর পূর্ববতর্ী রাসূল আগমনের সুসংবাদ দিতেন, এবং পরবর্তী রাসূল পূর্ববতী রাসূলের সত্যায়ন করতেন।
আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ
سورة البقرة، الآية:136]]
অর্থঃ ((তোমরা বলঃ আমরা ঈমান এনেছি আল্লাহর উপর এবং যা অবতীর্ণ হয়েছে আমাদের প্রতি এবং যা অবতীর্ণ হয়েছে ইব্রাহীম, ইসমাঈল, ইসহাক, ইয়াকুব, এবং তদীয় বংশধরের প্রতি এবং মূসা, ঈসা ও অন্যান্য নবীকে তাঁদের পালন কর্তার পক্ষ হতে যা দান করা হয়েছে, তৎসমূদয়ের উপর। আমরা তাঁদের মধ্যে পার্থক্য করিনা। আর আমরা তাঁরই আনুগত্যকারী।))
[সূরা আল-বাক্বারা,আয়াত-১৩৬]
আর যে ব্যক্তি কোন রাসূলকে মিথ্যা জানল, সে যেন অস্বীকার করল যা সত্য বলে বিশ্বাস করেছিল। এবং যে ব্যক্তি তাঁর (রাসূলের) অবাধ্য হলো, সে মূলত তাঁর অবাধ্য হলো যিনি তাকে আনুগত্যের আদেশ করেছেন। (অর্থাৎ, আল্লাহর)।
আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ
إِنَّ الَّذِينَ يَكْفُرُونَ بِاللّهِ وَرُسُلِهِ وَيُرِيدُونَ أَن يُفَرِّقُواْ بَيْنَ اللّهِ وَرُسُلِهِ وَيقُولُونَ نُؤْمِنُ بِبَعْضٍ وَنَكْفُرُ بِبَعْضٍ وَيُرِيدُونَ أَن يَتَّخِذُواْ بَيْنَ ذَلِكَ سَبِيلاً - أُوْلَـئِكَ هُمُ الْكَافِرُونَ حَقّاً وَأَعْتَدْنَا لِلْكَافِرِينَ عَذَاباً مُّهِيناً
[سورة النساء، الآيتان:150-151]
অর্থঃ ((যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলগণকে অস্বীকার করে তারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলগণের প্রতি বিশ্বাসে তারতম্য করতে চায় আর বলে যে, আমরা কতককে বিশ্বাস করি ও কতককে অস্বীকার করি এবং এরাই মধ্যবর্তী কোন পথ অবলম্বন করতে চায়। প্রকৃত পক্ষে এরাই সত্য অস্বীকারকারী। আর যারা সত্য অস্বীকার কারী তাদের জন্য তৈরী করে রেখেছি অপমান জনক শাস্তি।))
[সূরা আন-নিসা,আয়াত-১৫০-১৫১]
(২) নবুওয়াতের হাকীকতঃ
নবুওয়াত হলোঃ স্রষ্টা (আল্লাহ) ও সৃষ্টজীবের (বান্দার ) মাঝে তাঁর শরিয়াত প্রচারের মাধ্যম। আল্লাহ স্বীয় বান্দাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা নবুওয়াতের জন্য মনোনীত করেন এবং নবুওয়াত দিয়ে সম্মানিত করেন। এতে আল্লাহ্ ছাড়া কারো কোন প্রকার ইখতিয়ার নেই।
আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ
اللَّهُ يَصْطَفِي مِنَ الْمَلَائِكَةِ رُسُلاً وَمِنَ النَّاسِ إِنَّ اللَّهَ سَمِيعٌ بَصِيرٌ
[سورة الحج، الآية:75]
অর্থঃ ((আল্লাহ ফিরিশ্তা ও মানুষের মধ্য থেকে রাসূল মনোনীত করেন, নিশ্চয় আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা।))
[সূরা আল-হাজ্ব,আয়াত-৭৫]
নবুওয়াত (আল্লাহ কতৃর্ক) প্রদত্ত,কারো অর্জিত নয়, অধিক ইবাদাত বা আনুগত্যের মাধ্যমে পাওয়া যায় না। কোন নবীর ইচ্ছায় বা তাঁর চাওয়ার মাধ্যমে ও আসেনা। ইহা শুধু মাত্র মহান আল্লাহর নির্বাচন ও মনোনয়ন।
আল্লাহ্ তা'আলা বলেনঃ
اللَّهُ يَجْتَبِي إِلَيْهِ مَن يَشَاءُ وَيَهْدِي إِلَيْهِ مَن يُنِيبُ
[سورة الشورى، الآية:13]
অর্থঃ ((আল্লাহ যাকে ইচ্ছা মনোনীত করেন এবং যে তাঁর অভিমূখী হয়, তাকে পথ প্রদর্শন করেন।))
[সূরা আশ্-শূরা,আয়াত-১৩]
(৩) রাসূল প্রেরণের হিকমত বা রহস্যঃ
রাসূলগণের (আলাইহিমুস্ সালাম) প্রেরণের হিকমত বা রহস্য নিম্নরূপঃ
প্রথমতঃ বান্দাদেরকে বান্দার ইবাদাত করা হতে মুক্ত করে বান্দার প্রতিপালকের (আল্লাহর) ইবাদাতে নিয়ে যাওয়া এবং সৃষ্টিজীবের দাসত্বের বন্ধন থেকে মুক্ত করে স্বীয় প্রতিপালকের (আল্লাহর) স্বাধীন ইবাদাতের পথ দেখানো।
আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ
وَمَا أَرْسَلْنَاكَ إِلَّا رَحْمَةً لِّلْعَالَمِينَ
[سورة الأنبياء، الآية:107]
অর্থঃ ((আমি আপনাকে বিশ্ববাসীর জন্যে রহমত স্বরূপই প্রেরণ করেছি।))
[সূরা আল-আম্বিয়া, আয়াত-১০৭]
দ্বিতীয়তঃ যে উদ্দেশ্যে আল্লাহ সৃষ্টিজীব সৃষ্টি করেছেন, সে উদ্দেশ্যের সাথে (মানুষকে) পরিচয় করা। সে উদ্দেশ্য হলো তাঁর একত্ববাদ বিশ্বাস ও ইবাদাত করা। ইহা এক মাত্র রাসূলগণের মাধ্যমে জানা যায়। যাদেরকে আল্লাহ তাঁর সৃষ্টজীব হতে মনোনয়ন করেছেন এবং সকলের উপর প্রাধান্য দিয়েছেন।
আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ
وَلَقَدْ بَعَثْنَا فِي كُلِّ أُمَّةٍ رَّسُولاً أَنِ اعْبُدُواْ اللّهَ وَاجْتَنِبُواْ الطَّاغُوتَ
[سورة النحل، الآية:36]
অর্থঃ ((আমি প্রত্যেক উম্মাতের মধ্যেই রাসূল প্রেরণ করেছি এই মর্মে যে, তোমরা আল্লাহর ইবাদাত কর এবং তাগূত (আল্লাহ ব্যতীত অন্যের ইবাদাত) থেকে নিরাপদ থাক।))
[সূরা আন-নহল,আয়াত-৩৬]
তৃতীয়তঃ রাসূলগণ প্রেরণের মাধ্যমে মানুষের উপর হুজ্জাত (পক্ষ-বিপক্ষের দলীল) প্রতিষ্ঠিত করা।
আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ
رُّسُلاً مُّبَشِّرِينَ وَمُنذِرِينَ لِئَلاَّ يَكُونَ لِلنَّاسِ عَلَى اللّهِ حُجَّةٌ بَعْدَ الرُّسُلِ وَكَانَ اللّهُ عَزِيزاً حَكِيماً
[سورة النساء، الآية:165]
অর্থঃ ((সুসংবাদদাতা ও ভীতি-প্রদর্শনকারী রাসূলগণকে প্রেরণ করেছি, যাতে রাসূলগণের পরে আল্লাহর প্রতি অপবাদ আরোপ করার মত কোন অবকাশ মানুষের জন্য না থাকে, আল্লাহ পরাক্রমশীল, প্রজ্ঞাময়।))
[সূরা আন-নিসা,আয়াত-১৬৫]
চতুর্থতঃ কিছু অদৃশ্যের বিষয় বর্ণনা করা, যা মানুষ তাদের জ্ঞান দ্বারা উপলদ্ধী করতে পারেনা। যেমন-আল্লাহর নাম সমূহ ও তাঁর গুনসমূহ এবং ফিরিশ্তাদের ও শেষ দিবস সম্পর্কে জানা ইত্যাদি।
পঞ্চমতঃ যাতে তাঁরা (রাসূলরা) অনুসরণীয় উত্তম আদর্শ হয় কেননা আল্লাহ তাঁদেরকে উত্তম চরিত্রে পূর্ণ করেছেন। এবং তাঁদেরকে সংশয় ও প্রবৃত্তির অনুসরণ হতে মুক্ত রেখেছেন।
আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ
[سورة الأنعام، الآية:90]
অর্থঃ ((তারা এমন ছিলেন, যাদেরকে আল্লাহ পথ-প্রদর্শন করে ছিলেন, অতএব আপনিও তাদের পথ অনুসরণ করুন।))
[সূরা আল-আনআম,আয়াত-৯০]
তিনি আরো বলেনঃ
لَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِيهِمْ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ
[سورة الممتحنة، الآية:6]
অর্থঃ ((তোমাদের জন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মধ্যে উত্তম আদর্শ-রয়েছে।))
[সূরা আল-আযহাব, আয়াত-২১]
ষষ্ঠতঃ আত্মশুদ্ধি ও পবিত্র করণ এবং আত্ম বিনষ্টকারী হতে সর্তক-সাবধান করা।
আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ
هُوَ الَّذِي بَعَثَ فِي الْأُمِّيِّينَ رَسُولاً مِّنْهُمْ يَتْلُو عَلَيْهِمْ آيَاتِهِ وَيُزَكِّيهِمْ وَيُعَلِّمُهُمُ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ
[سورة الجمعة، الآية:2]
অর্থঃ ((তিনি নিরক্ষরদের মধ্য থেকে একজন রাসূল প্রেরণ করেছেন, যিনি তাদের কাছে পাঠকরেন তাঁর আয়াত সমূহ, তাদেরকে পবিত্র করেন এবং শিক্ষাদেন কিতাব ও হিকমত।))
[সূরা আল-জুমু'আহ, আয়াত-২]
রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ
إنما بعثت لأتمم مكارم الأخلاق
[رواه أحمد، والحاكم]
অর্থঃ ((আমি উত্তম আদর্শ পরিপূর্ণ করার জন্যেই প্রেরিত হয়েছি।))
[আহমাদ ও হাকেম]
(৪) রাসূলগণের (আলাইহিমুস্ সালাম) দায়িত্ব সমূহঃ
রাসূলগণের ( আলাইহিমুস্ সালাম) অনেক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব রয়েছে, তা নিম্নে বর্ণিত হলঃ
(ক) শরীয়াত প্রচার করা, মানুষকে এক আল্লাহর ইবাদাত করতে এবং তিনি ব্যতীত অন্যের ইবাদাত হতে মুক্ত হওয়ার আহ্বান করা।
আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ
الَّذِينَ يُبَلِّغُونَ رِسَالَاتِ اللَّهِ وَيَخْشَوْنَهُ وَلَا يَخْشَوْنَ أَحَداً إِلَّا اللَّهَ وَكَفَى بِاللَّهِ حَسِيباً
[سورة الأحزاب، الآية:39]
অর্থঃ ((তাঁরা (নবীগণ) আল্লাহর রিসালাত প্রচার করতেন ও তাঁকে ভয় করতেন। তাঁরা আল্লাহ ব্যতীত অন্য কাউকে ভয় করতেন না। হিসাব গ্রহণের জন্য আল্লাহই যথেষ্ট।)) [সূরা আল-আহ্যাব,আয়াত-৩৯]
(খ) দ্বীনের অবতীর্ণ বিধান বর্ণনা করা।
আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ
وَأَنزَلْنَا إِلَيْكَ الذِّكْرَ لِتُبَيِّنَ لِلنَّاسِ مَا نُزِّلَ إِلَيْهِمْ وَلَعَلَّهُمْ يَتَفَكَّرُونَ
[سورة النحل، الآية:44]
অর্থঃ ((আপনার কাছে আমি উপদেশ ভান্ডার (কুরআন) অবতীর্ণ করেছি। যাতে আপনি লোকদের সামনে ঐ সব বিষয় বিবৃত করেন, যে গুলো তাদের প্রতি অবতীর্ণ করা হয়েছে, যাতে তারা চিন্তা ভাবনা করে।)) [সূরা আন-নাহাল,আয়াত-৪৪]
(গ) উম্মাতকে কল্যাণের পথ প্রদর্শণ ও অকল্যাণ হতে সতর্ক সাবধান করা, এবং তাদেরকে পূণ্যের সুসংবাদ ও তাদেরকে শাস্তির ভীতি-প্রদর্শন করা।
আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ
رُّسُلاً مُّبَشِّرِينَ وَمُنذِرِينَ
[سورة النساء، الآية:165]
অর্থঃ ((সুসংবাদ্দাতা ও ভীতি-প্রদর্শনকারী রাসূলগণকে প্রেরণ করেছি। [সূরা আন-নিসা,আয়াত-১৬৫]
(ঘ) মানুষকে কথায় ও কাজে সুন্দর চরিত্র ও উত্তম আদর্শবান করে তুলা।
(ঙ) আল্লাহর শরীয়াত বান্দাদের মাঝে প্রতিষ্ঠা ও বাস্তবায়ণ করা।
(চ) রাসূলগণের (আলাইহিস্ সালাম) স্বীয় উম্মাতের বিপক্ষে শেষ দিবসে এ স্বাক্ষ্য দেওয়া যে তাঁরা তাদের নিকট স্পষ্ট ভাবে দ্বীনের দাওয়াত পৌঁছায়েছেন।
আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ
فَكَيْفَ إِذَا جِئْنَا مِن كُلِّ أمَّةٍ بِشَهِيدٍ وَجِئْنَا بِكَ عَلَى هَـؤُلاء شَهِيداً
[سورة النساء، الآية:41]
অর্থঃ ((আর তখন কি অবস্থা দাঁড়াবে, যখন আমি প্রতিটি উম্মাতের মধ্য থেকে সাক্ষী উপস্থাপন করব এবং আপনাকে তাদের উপর সাক্ষী উপস্থাপন করব।)) [সূরা আন-নিসা,আয়াত,৪১]
(৫) ইসলাম সকল নবীদের ধর্মঃ ইসলাম সকল নবী ও রাসূলগণের ধর্ম।
আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ
إِنَّ الدِّينَ عِندَ اللّهِ الإِسْلاَمُ
[سورة آل عمران، الآية:19]
অর্থঃ ((নিঃসন্দেহে আল্লাহর নিকট গ্রহনযোগ্য দ্বীন বা ধর্ম একমাত্র ইসলাম।)) [সূরা-আলে-ইমরান,আয়াত-১৯]
তাঁরা সকলেই এক আল্লাহর ইবাদাত করার দিকে, এবং আল্লাহ ছাড়া অন্যের ইবাদাত বর্জন করার আহবান জানাতেন। যদি ও তাদের শরীয়াত ও বিধি-বিধান ভিন্ন রকম ছিল, কিন্তু তাঁরা সকলেই মূলনীতীতে একমত ছিলন, তা হলো তাওহীদ বা আল্লাহর একত্ববাদ।
নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ
الأنبياء إخوة لعلات
[رواه البخاري]
অর্থঃ ((নবীরা (আলাইহিমুস্ সালাম) একে অপরে বৈমাত্রেয় ভাই ছিলেন।)) [বুখারী]
(৬) রাসূলগণ মানুষ তাঁরা গায়েব জানেন নাঃ
ইলমে গায়েব জানা উলুহীয়াতের (আল্লাহর) বৈশিষ্ট, নবীগণের গুণ নয়। কারণ তাঁরা অন্যান্য মানুষের মত মানুষ। তাঁরা পানাহার করেন, বৈবাহিকসূত্রে আবদ্ধ হন, নিদ্রা যান, অসুস্থ হন ও ক্লান্ত হন।
আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ
وَما أَرْسَلْنَا قَبْلَكَ مِنَ الْمُرْسَلِينَ إِلَّا إِنَّهُمْ لَيَأْكُلُونَ الطَّعَامَ وَيَمْشُونَ فِي الْأَسْوَاقِ
[سورة الفرقان، الآية:20]
অর্থঃ ((আপনার পূর্বে যত রাসূল প্রেরণ করেছি, তাঁরা সবাই খাদ্য গ্রহণ করত এবং হাটে বাজারে চলা ফেরা করত।)) [সূরা আল-ফুরকান,আয়াত-২০]
আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ
وَلَقَدْ أَرْسَلْنَا رُسُلاً مِّن قَبْلِكَ وَجَعَلْنَا لَهُمْ أَزْوَاجاً وَذُرِّيَّةً
[سورة الرعد، الآية:38]
অর্থঃ ((আপনার পূর্বে আমি অনেক রাসূল প্রেরণ করেছি, এবং তাঁদেরকে স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততি দিয়েছি।)) [সূরা আর-রা'দ,আয়াত-৩৮]
তাঁদেরকে ও চিন্তা, দুঃখ আনন্দ ও কর্ম প্রেরণা স্পর্শ করে যেমন-সাধারণ মানুষকে পেয়ে থাকে। কিন্তু আল্লাহ তাঁদেরকে তাঁর দ্বীন প্রচার করার জন্য মনোনয়ন করেছেন। আল্লাহ তাঁদেরকে (রাসূলদেরকে ইলমে গায়েব হতে) যা অবগত করান তা ব্যতীত কোন ইলমে গায়েব জানেন না।
আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ
[سورة الجن، الآيتان 26-27]
অর্থঃ ((তিনি অদৃশ্ব্যের জ্ঞানী, পরন্ত তিনি অদৃশ্যের বিষয় কারও কাছে প্রকাশ করেন না। তাঁর মনোনীত রাসূল ব্যতীত। তখন তিনি তার অগ্রেও পশ্চাতে প্রহরী নিযুক্ত করেন।)) [সূরা আল-জি্বন,আয়াত-২৬-২৭]
(৭) রাসূলগণ মা'সূম বা নিস্পাপঃ
আল্লাহ তা'আলা তাঁর রিসালাত প্রদান ও প্রচার করার জন্য তাঁর সৃষ্টজীব হতে উত্তম জাতীকে নির্বাচন করেছেন।
যারা সৃষ্টিগত ও চরিত্র গত দিক হতে পরিপূর্ণ, আল্লাহ তাঁদেরকে কবীরাহ্ গুনাহ হতে নিরাপদে রেখেছেন। সকল ক্রটি হতে তাঁদেরকে মুক্ত করেছেন। যাতে তাঁরা আল্লাহর ওয়াহী স্বীয় উম্মাতের নিকট পৌঁছাতে সক্ষম হন। আল্লাহর পক্ষ হতে তাঁর (আল্লাহর) রিসালাত প্রচারের ব্যাপারে যে সংবাদ দিয়েছেন, তাতে তাঁরা যে মা'সূম তা সর্বজন সিদ্ধ।
আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ
يَا أَيُّهَا الرَّسُولُ بَلِّغْ مَا أُنزِلَ إِلَيْكَ مِن رَّبِّكَ وَإِن لَّمْ تَفْعَلْ فَمَا بَلَّغْتَ رِسَالَتَهُ وَاللّهُ يَعْصِمُكَ مِنَ النَّاسِ
[سورة المائدة، الآية:67]
অর্থঃ ((হে রাসূল, পৌঁছে দিন আপনার প্রতি পালকের পক্ষ থেকে আপনার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে। আর যদি আপনি এরূপ না করেন,তবে আপনি তাঁর রিসালাত কিছুই পৌঁছালেন না, আল্লাহ আপনাকে মানুষের কাছ থেকে নিরাপদে রাখবেন।)) [সূরা আল-মায়িদাহ,৬৭]
তিনি আরো বলেনঃ
الَّذِينَ يُبَلِّغُونَ رِسَالَاتِ اللَّهِ وَيَخْشَوْنَهُ وَلَا يَخْشَوْنَ أَحَداً إِلَّا اللَّهَ
[سورة الأحزاب، الآية:39]
অর্থঃ ((তাঁরা (নবীগণ) আল্লাহর রিসালাত প্রচার করতেন ও তাঁকে ভয় করতেন,তাঁরা আল্লাহ ব্যতীত অন্য কাউকে ভয় করতেন না।)) [সূরা আল-আহ্যাব,আয়াত-৩৯]
তিনি আরো বলেনঃ
لِيَعْلَمَ أَن قَدْ أَبْلَغُوا رِسَالَاتِ رَبِّهِمْ وَأَحَاطَ بِمَا لَدَيْهِمْ وَأَحْصَى كُلَّ شَيْءٍ عَدَداً
[سورة الجن، الآية:28]
অর্থঃ ((যাতে আল্লাহ তা'আলা জেনে নেন যে, রাসূলগণ তাঁদের পালনকর্তার রিসালাত পৌঁছিয়েছেন কিনা। রাসূলগণের কাছে যা আছে, তা তাঁর জ্ঞান-গোচর। তিনি সব কিছুর সংখ্যার হিসাব রাখেন।)) [সূরা আল-জিন,আয়াত-২৮]
এবং যখন তাঁদের কারো পক্ষ হতে এমন কোন ছোট পাপ কর্ম প্রকাশিত হয় যা তাবলীগের (দ্বীন প্রচারের) সাথে সম্পৃক্ত নয়। নিশ্চয় তখন তা তাঁদের নিকট বর্ণনা করা হবে। আল্লাহর কাছে তাওবাহ্ ও তাঁর দিকে ধাবমান হওয়ার সাথে সাথেই মনে হবে যেন (এই পাপ) তাঁদের কাছ থেকে প্রকাশ পায় নাই, এবং এর বিনমিয়ে তাঁরা তাঁদের পূর্বের মর্যাদার চেয়ে আরো উচ্চ মর্যাদা লাভ করবেন। ইহা এ জন্য যে, আল্লাহ তাঁর নবীদেরকে (আলাইহিমুস্ সালাম) পূর্ণ সৎ চরিত্রে ও ভাল গুণে বিশেষিত করেছেন। এবং তাঁদের মান মর্যাদা সুউচ্চ অবস্থান ক্ষুন্ন করে এমন সকল জিনিস হতে তাঁদেরকে আল্লাহ পবিত্র রেখেছেন।
(৮) নবী ও রাসূলগণের সংখ্যা ও তাঁদের মধ্যে যারা উত্তমঃ
রাসূলগণের সংখ্যা তিন শত দশের কিছু বেশী প্রমাণিত হয়েছে। নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে যখন রাসূলগণের সংখ্যা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়; তখন তিনি বলেনঃ
ثلاثمائة وخمس عشرة جماً وغفيراً
[رواه الحاكم]
অর্থঃ ((তিনশত পনের জনের বিরাট এক দল।)) [হাকিম]
আর নবীদের সংখ্যা এর চেয়ে অনেক বেশী। আল্লাহ তাঁদের কারোও কথা তাঁর কিতাবে আমাদের জন্য বর্ণনা করেছেন, আর কারোও কথা বর্ণনা করেন নাই। আল্লাহ তাঁর কিতাবে পঁচিশ জন নবী ও রাসূলের নাম উল্লেখ করেছেন।
আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ
وَرُسُلاً قَدْ قَصَصْنَاهُمْ عَلَيْكَ مِن قَبْلُ وَرُسُلاً لَّمْ نَقْصُصْهُمْ عَلَيْكَ
[سورة النساء، الآية:164]
অর্থঃ ((আর এমন কতক রাসূল প্রেরণ করেছি যাদের ইতিবৃত্ত আমি আপনাকে বর্ণনা করেছি ইতি পূর্বে, এবং এমন কতক রাসূল প্রেরণ করেছি যাদের বৃত্তান্ত আপনাকে বর্ণনা করিনি।)) [সূরা আন-নিসা,আয়াত১৬৪]
তিনি আরো বলেনঃ
وَتِلْكَ حُجَّتُنَا آتَيْنَاهَا إِبْرَاهِيمَ عَلَى قَوْمِهِ نَرْفَعُ دَرَجَاتٍ مَّن نَّشَاء إِنَّ رَبَّكَ حَكِيمٌ عَلِيمٌ - وَوَهَبْنَا لَهُ إِسْحَاقَ وَيَعْقُوبَ كُلاًّ هَدَيْنَا وَنُوحاً هَدَيْنَا مِن قَبْلُ وَمِن ذُرِّيَّتِهِ دَاوُودَ وَسُلَيْمَانَ وَأَيُّوبَ وَيُوسُفَ وَمُوسَى وَهَارُونَ وَكَذَلِكَ نَجْزِي الْمُحْسِنِينَ - وَزَكَرِيَّا وَيَحْيَى وَعِيسَى وَإِلْيَاسَ كُلٌّ مِّنَ الصَّالِحِينَ - وَإِسْمَاعِيلَ وَالْيَسَعَ وَيُونُسَ وَلُوطاً وَكُلاًّ فضَّلْنَا عَلَى الْعَالَمِينَ - وَمِنْ آبَائِهِمْ وَذُرِّيَّاتِهِمْ وَإِخْوَانِهِمْ وَاجْتَبَيْنَاهُمْ وَهَدَيْنَاهُمْ إِلَى صِرَاطٍ مُّسْتَقِيمٍ
[سورة الأنعام، الآيات:83-87]
অর্থঃ ((এটি ছিল আমার যুক্তি, যা আমি ইব্রাহীমকে তাঁর সম্প্রদায়ের বিপক্ষে প্রদান করেছিলাম। আমি যাকে ইচ্ছা মর্যাদায় সমুন্নত করি। আপনার পালনকর্তা প্রজ্ঞাময়, মহাজ্ঞানী। আমি তাঁকে দান করেছি ইসহাক ও ইয়াকুব। প্রত্যেককেই আমি পথ-প্রদর্শন করেছি এবং পূর্বে আমি নূহকে পথ-প্রদর্শন করেছি-তাঁর সন্তানদের মধ্যে দাউদ, সোলায়মান,আইউব, ইউসুফ, মূসা ও হারুনকে। এমনি ভাবে আমি সৎকর্মীদের প্রতিদান দিয়ে থাকি। আরও যাকারিয়া, ইয়াহ্ইয়া, ঈসা এবং ইলিয়াসকে। তাঁরা সবাই পূণ্যবানদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। এবং ইসমাঈল, ঈসা, ইউনুস, লূতকে প্রত্যেককেই আমি সারা বিশ্বের উপর গৌরবান্বিত করেছি। আরো তাঁদের কিছু সংখ্যক পিতৃপুরুষ,সন্তান-সন্ততি ও ভ্রাতাদেরকে, আমি তাঁদেরকে মনোনীত করেছি এবং সরল পথ প্রদর্শন করেছি।)) [সূরা আল-আনআম, আয়াত ৮৩-৮৭]
আল্লাহ নবীদের কাউকে অন্যদের উপর শ্রেষ্টত্ব দান করেছেন।
আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ
وَلَقَدْ فَضَّلْنَا بَعْضَ النَّبِيِّينَ عَلَى بَعْضٍ
[سورة الإسراء، الآية:55]
অর্থঃ ((আমি নবীদেরকে কতককে কতকের উপর শ্রেষ্টত্ব দান করেছি।)) [সূরা আল-ইসরা,আয়াত-৫৫]
এবং আল্লাহ রাসূলদের কাউকে কারো উপর শ্রেষ্টত্ব দান করেছেন।
আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ
تِلْكَ الرُّسُلُ فَضَّلْنَا بَعْضَهُمْ عَلَى بَعْضٍ
[سورة البقرة، الآية:253]
অর্থঃ ((এ রাসূলগণ আমি তাদের কাউকে কারো উপর মর্যাদা দান করেছি।)) [সূরা আল-বাক্বারাহ্, আয়াত-২৫৩]
রাসূলগণের মধ্যে যারা উলুলআয্ম (উচ্চ অভিলাষী) তাঁরা সর্ব উত্তম। তাঁরা হলেন নূহ, ইব্রাহীম, মূসা, ঈসা, ও আমাদের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম।
আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ
[سورة الأحقاف، الآية:35]
অর্থঃ ((অতএব আপনি ধৈর্য ধরুন, যেমন উলুল আয্ম (উচ্চ অভিলাষী) রাসূলগণ ধৈর্য ধরেছেন।)) [সূরা আল-আহক্বাফ, আয়াত-৩৫]
তিনি আরো বলেনঃ
وَإِذْ أَخَذْنَا مِنَ النَّبِيِّينَ مِيثَاقَهُمْ وَمِنكَ وَمِن نُّوحٍ وَإِبْرَاهِيمَ وَمُوسَى وَعِيسَى ابْنِ مَرْيَمَ وَأَخَذْنَا مِنْهُم مِّيثَاقاً غَلِيظاً
[سورة الأحزاب، الآية:7]
অর্থঃ ((যখন আমি নবীগণের কাছ থেকে, আপনার কাছ থেকে এবং নূহ, ইব্রাহীম মূসা ও মারিইয়ামের পুত্র ঈসার কাছ থেকে অঙ্গীকার নিলাম, আরো অঙ্গীকার নিলাম তাদের কাছ থেকে দৃঢ় অঙ্গীকার।)) [সূরা আল-আহযাব,আয়াত-৭]
মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাসূলদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ও সর্ব শেষ নবী, মুত্তাকীনদের ইমাম, আদম সন্তানের সরদার। নবীরা যখন একত্রিত হন তখন তিনি তাঁদের ইমাম। যখন তাঁরা কোন জায়গাহ হতে প্রতিনিধি দল হিসাবে আগমণ করেন তখন তিনি তাঁদের প্রবক্তা হন। তিনি মাকামে মাহমুদের (প্রশংসিত স্থানের) মালিক, যে স্থানকে নিয়ে পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সকলেই ঈর্ষা করবে।
অবতরণ স্থান, হাউজ ও হামদ-বা প্রশংসার ঝান্ডার মালিক। শেষ দিবসে সমস্ত সৃষ্টজীবের সুপারিশকারী, জান্নাতের ওয়াসীলা নামক স্থান ও মর্যাদার মালিক। আল্লাহ তাকে তাঁর দ্বীনের সর্বোত্তম শরীয়াত বিধি-বিধান দিয়ে প্রেরণ করেছেন। এবং তাঁর উম্মাতকে সর্ব উত্তম উম্মত রূপে এই পৃথিবীতে মানুষের কল্যানের জন্য পাঠানো হয়েছে। নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর উম্মাতের জন্য বহু মর্যাদা ও উত্তম বৈশিষ্ট দিয়েছেন। যা তাদের পূর্ববর্তীদের হতে সতন্ত্র। সৃষ্টির দিক দিয়ে তাঁরা সর্ব শেষ উম্মত আর পুনরুত্থানে তাঁরা সর্ব প্রথম উম্মত।
রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ
فضلت على الأنبياء بست
[رواه مسلم]
অর্থঃ ((আমি ছয়টি বৈশিষ্টে সকল নবীদের উপর প্রাধান্য পেয়েছি।)) [মুসলিম]
নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেনঃ
أنا سيد ولد آدم يوم القيامة وبيدي لواء الحمد ولا فخر. وما من نبي يومئذ آدم فمن سواه إلا تحت لوائي يوم القيامة
[رواه أحمد والترمذي]
অর্থঃ ((আমি কিয়ামত দিবসে আদম সন্তানের সর্দার, আমারই হাতে হামদের পতাকা থাকবে। ইহা কোন গর্ভের বিষয় নয়। কিয়ামত দিবসে আদম (আলাইহিস্ সালাম) ছাড়া সকলেই আমার পতাকার অধিনে থাকবে।)) [তিরমিযী ও আহমাদ]
মর্যাদার দিক দিয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পরে যিনি তিনি হলেন ইব্রাহীম খালীলুর রহমান (আলাইহিস্ সালাম) সুতরাং (আল্লাহর) দু'বন্ধু-মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও ইব্রাহীম (আলাইহিস্ সালাম) উলুল আযমদের সর্ব শ্রেষ্ট। অতঃপর তিন জন (নূহ, মূসা ও ঈসা) সর্ব শ্রেষ্ট (অন্য সব নবীদের চেয়ে)।
(৯) নবীদের (আলাইহিমুস্ সালাম) মু'জিযাহঃ
আল্লাহ্ তাঁর রাসূলদের সহযোগিতা করেছেন বড় বড় নিদর্শন ও উজ্জ্বল মু'জিযার (অলৌকিক শক্তির) দ্বারা। যাতে হুজ্জাত প্রতিষ্ঠিত হয় অথবা প্রয়োজন সাধন হয়। যেমন- কুরআন কারীম, চন্দ্র বিদীর্ণ হওয়া, লাঠি ভয়ানক সাঁপে পরিণত হওয়া, ইত্যাদি। অতঃপর মু'জিযাহ্ (স্বাভাবিক নীতি ভঙ্গকারী-অলৌকিক শক্তি) নবুওয়াতের সত্যতা প্রমাণের দালীল,আর কারামাহ্ (অলীদের জন্যও অলৌকিক শক্তি) নবুওয়াতের সত্যতা সাক্ষ্যকারী প্রমান স্বরূপ।
আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ
لَقَدْ أَرْسَلْنَا رُسُلَنَا بِالْبَيِّنَاتِ
[سورة الحديد، الآية:25]
অর্থঃ ((আমি আমার রাসূলদেরকে সুস্পষ্ট নিদর্শণাবলী সহ প্রেরণ করেছি।)) [সূরা আল-হাদীদ, আয়াত-২৫]
নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ
ما من نيي من الأنبياء إلا وقد أوتي من الآيات ما آمن على مثله البشر وإنما كان الذي أوتيته وحياً أوحاه إلي فأرجو أن أكون أكثرهم تابعاً يوم القيامة
[متفق عليه]
অর্থঃ ((প্রত্যেক নবীই নিদর্শন বা মু'জিযাহ প্রাপ্ত হয়েছেন কিন্তু মু'জিযার তুলনায় মানুষ ঈমান আনে নাই। আর আমি যা প্রাপ্ত হয়েছি তা সেই ওয়াহী যা আমার নিকট (আল্লাহ) অবতীর্ণ করেছেন। ফলে আমি আশাবাদী যে, কিয়ামত দিবসে তাঁদের চেয়ে আমার অনুসারী বেশী হবে।)) [বুখারী ও মুসলিম ]
(১০) আমাদের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নবুওয়াতের প্রতি ঈমানঃ
তাঁর সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম নবুওয়াতের প্রতি ঈমান আনা-ঈমানের মূলনীতি সমূহের একটি অন্যতম মূলনীতি। এর উপর ঈমান আনা ছাড়া কারোও ঈমান পরিপূর্ণ হবে না।
আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ
وَمَن لَّمْ يُؤْمِن بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ فَإِنَّا أَعْتَدْنَا لِلْكَافِرِينَ سَعِيراً
[سورة الفتح، الآية:13]
অর্থঃ ((যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আনে না, আমি সেসব কাফিরের জন্য জ্বলন্ত অগ্নি প্রস্তুত রেখেছি।)) [সূরা আল-ফাত্হ, আয়াত-১৩]
নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ
أمرت أن أقاتل الناس حتى يشهدوا أن لا إلا إله إلا الله وإني رسول الله
[رواه مسلم]
অর্থঃ ((আমি আদেশ প্রাপ্ত হয়েছি যে,মানুষের সাথে যুদ্ধ করব যতক্ষন না তারা-আল্লাহ ছাড়া সত্যিকার কোন মা'বুদ নেই, এবং আমি আল্লাহর রাসূল-এ কথার সাক্ষ্য দিবে।)) [মুসলিম]
নিম্নে বর্ণিত বিষয়ের উপর ঈমান আনার মাধ্যমে নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি ঈমান আনা পরিপূর্ণ হবে।
প্রথমতঃ আমাদের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করা বা জানা। তিনি হলেন মুহাম্মাদ বিন আব্দুল্লাহ বিন আব্দুল মুত্তালিব বিন হাশিম, হাশিম কুরাইশ বংশ, আর কুরাইশ আরব বংশ আর আরব ইসমাঈল বিন ইব্রাহীম আল-খলীল এর বংশধর, তাঁর ও আমাদের নবীর উপর সর্ব উত্তম দরুদ ও সালাম বর্ষিত হউক। তাঁর তেষট্টি বছর বয়স হয়েছিল। নবুয়াতের পূর্বে চল্লিশ বৎসর, নবী ও রাসূল হওয়ার পরে তেইশ বৎসর।
দ্বিতীয়তঃ নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে বিষয়ে সংবাদ দিয়েছেন সে বিষয়ে তাঁকে বিশ্বাস করা, যে বিষয় তিনি আদেশ করেছেন, তার অনুসরণ করা। যে বিষয় হতে তিনি নিষেধ করেছেন ও সতর্ক করেছেন তা হতে বিরত থাকা। তিনি যে বিধান দান করেছেন সে অনুযায়ী আল্লাহর ইবাদাত করা।
তৃতীয়তঃ তিনি জিন-ইনসান সকলের নিকট প্রেরিত আল্লাহর রাসূল এ কথার বিশ্বাস রাখা। সবাইকে তাঁর সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম অনুসরণ করতে হবে।
আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ
قُلْ يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنِّي رَسُولُ اللّهِ إِلَيْكُمْ جَمِيعاً
[سورة الأعراف، الآية:158]
অর্থঃ ((আপনি বলুন হে মানব সকল ! আমি তোমাদের সকলের প্রতি আল্লাহর রাসূল হিসেবে প্রেরিত হয়েছি।)) [সূরা আল-আ'রাফ, আয়াত-১৫৮]
চতুর্থতঃ তাঁর রিসালাতের প্রতি ঈমান আনা, তিনি সর্বশ্রেষ্ট ও শেষ নবী।
আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ
وَلَكِن رَّسُولَ اللَّهِ وَخَاتَمَ النَّبِيِّينَ
[سورة الأحزاب، الآية:40]
অর্থঃ ((বরং তিনি আল্লাহর রাসূল ও শেষ নবী।)) [সূরা আল-আহযাব, আয়াত-৪১]
এবং তিনি আল্লাহর খলীল ও আদম সন্তানের সর্দার বা নেতা। তিনি মহান শাফায়াতের মালিক এবং জান্নাতে সুউচ্চ অয়াসীলা নামক স্থান তাঁরই জন্য। তিনি হউযে কাউসারের মালিক। তাঁর উম্মাত সর্বশ্রেষ্ট বা উত্তম।
আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ
كُنتُمْ خَيْرَ أُمَّةٍ أُخْرِجَتْ لِلنَّاسِ
[سورة آل عمران، الآية:110]
অর্থঃ ((তোমরাই শ্রেষ্ট উম্মত যা মানুষের (কল্যাণের)জন্য সৃজিত হয়েছে।)) [সূরা আলে-ইমরান, আয়াত-১১০]
অধিকাংশ জান্নাতবাসী হবে তাঁরই উম্মত এবং তাঁর রিসালাত পূর্ববর্তী সকল রিসালাতের রহিত কারী।
পঞ্চমতঃ আল্লাহ তাঁকে মহান মু'জিযাহ্ ও সুস্পষ্ট নিদর্শন দ্বারা সহযোগিতা করেছেন। তা হল মহাগ্রন্থ আল-কুরআন আল্লাহর বাণী যা পরিবর্তন ও পরিবর্ধন হতে সংরক্ষীত।
আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ
قُل لَّئِنِ اجْتَمَعَتِ الإِنسُ وَالْجِنُّ عَلَى أَن يَأْتُواْ بِمِثْلِ هَـذَا الْقُرْآنِ لاَ يَأْتُونَ بِمِثْلِهِ وَلَوْ كَانَ بَعْضُهُمْ لِبَعْضٍ ظَهِيراً
[سورة الإسراء، الآية:88]
অর্থঃ ((বলুনঃ যদি মানব ও জি্বন এই কুরআনের অনুরূপ রচনা করে আনয়নের জন্য একত্রিত হয়, এবং তারা পরস্পরের সাহায্যকারী হয়,তবুও তারা এর অনুরূপ রচনা করে আনতে পারবে না।)) [সূরা আল-ইসরা, আয়াত-৮৮]
তিনি আরো বলেনঃ
إِنَّا نَحْنُ نَزَّلْنَا الذِّكْرَ وَإِنَّا لَهُ لَحَافِظُونَ
[سورة الحجر، الآية:9]
অর্থঃ ((আমি স্বয়ং এ উপদেশ গ্রন্থ অবতরণ করেছি এবং আমি নিজেই এর সংরক্ষক।)) [সূরা আল-হিজর, আয়াত-৯]
ষষ্টতঃ নিশ্চয় রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম রিসালাত প্রচার করেছেন, আমানত আদায় করেছেন, উম্মাতদেরকে উপদেশ দিয়েছেন। সকল প্রকার কল্যাণের সন্ধান দিয়েছেন, ও তার প্রতি উৎসাহিত করেছেন। সকল প্রকার অকল্যাণ হতে তাঁর উম্মাতকে নিষেধ করেছেন ও তা হতে তাদেরকে সাবধান করেছেন।
আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ
لَقَدْ جَاءكُمْ رَسُولٌ مِّنْ أَنفُسِكُمْ عَزِيزٌ عَلَيْهِ مَا عَنِتُّمْ حَرِيصٌ عَلَيْكُم بِالْمُؤْمِنِينَ رَؤُوفٌ رَّحِيمٌ
[سورة التوبة، الآية:128]
অর্থঃ ((তোমাদের কাছে এসেছে তোমাদের মধ্য থেকেই একজন রাসূল। তোমাদের দুঃখ-কষ্ট তাঁর পক্ষে-দুঃসহ। তিনি তোমাদের মঙ্গলকামী,মু'মিনদের প্রতি স্নেহশীল,দয়াময়।)) [সূরা আত্-তাওবাহ, আয়াত-১২৮]
নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ
ما من نبي بعثه الله في أمة قبلي إلا كان حقاً عليه أن يدل أمته على خير ما يعلمه لهم ويحذر أمته من شرما يعلمه لهم
[رواه مسلم]
অর্থঃ ((আমার উম্মাতের পূর্বে আল্লাহ যত নবী (আলাইহিস্ সালাম) প্রেরণ করেছেন, তাদের উপর দায়িত্ব ছিল নিজ উম্মাতের জন্য যা কল্যানকর তাদেরকে তার সন্ধান দেওয়া। আর যা কল্যাণকর নয় তা হতে তাদেরকে সতর্ক করা।)) [মুসলিম শরীফ]
সপ্তমতঃ তাঁকে (নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ভাল বাসা, ও তাঁর ভালোবাসাকে নিজের জানের ও সকল সৃষ্টিজীবের ভালবাসার উপর প্রাধান্য দেওয়া। তাঁকে সম্মান করা, মর্যাদা দেয়া, ইহ্তেরাম করা, ও তাঁর আনুগত্য করা। নিশ্চয় ইহা সে হক্ব বা অধিকার যা আল্লাহ তাঁর কিতাবে তাঁর নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্য সাবস্ত করেছেন। কারণ তাঁর ভালবাসা প্রকৃত পক্ষে আল্লাহর ভালবাসা, এবং তাঁর আনুগত্য প্রকৃত পক্ষে আল্লাহর আনুগত্য।
আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ
قُلْ إِن كُنتُمْ تُحِبُّونَ اللّهَ فَاتَّبِعُونِي يُحْبِبْكُمُ اللّهُ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوبَكُمْ وَاللّهُ غَفُورٌ رَّحِيمٌ
[سورة آل عمران، الآية:31]
অর্থঃ ((বলুন, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালবাস, তাহলে আমাকে অনুসরণ কর,যাতে আল্লাহও তোমাদিগকে ভাল বাসেন এবং তোমাদিগকে তোমাদের পাপ মার্জনা করে দেন। আর আল্লাহ হলেন ক্ষমাকারী দয়ালু।)) [সূরা আলে-ইমরান, আয়াত-৩১]
নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ
لا يؤمن أحدكم حتى أكون أحب إليه من ولده ووالده والناس أجمعين
[متفق عليه]
অর্থঃ ((তোমাদের কেহই ততক্ষন পর্যন্ত মু'মিন হতে পারেনা যতক্ষন পর্যন্ত আমি তাদের নিকট তাদের ছেলে সন্তান, পিতামাতা, ও সকল মানুষের চেয়ে প্রিয়তম না হবো।)) [বুখারী ও মুসলিম]
অষ্টমতঃ নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর দরুদ ও সালাম বেশী বেশী পাঠ করা। কারণ কৃপণ ঐ ব্যক্তি যার নিকট নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নাম উল্লেখ্য হওয়ার পরও তাঁর উপর দরুদ পাঠ করেনা।
আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ
إِنَّ اللَّهَ وَمَلَائِكَتَهُ يُصَلُّونَ عَلَى النَّبِيِّ يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا صَلُّوا عَلَيْهِ وَسَلِّمُوا تَسْلِيماً
[سورة الأحزاب، الآية:56]
অর্থঃ ((আল্লাহ ও তাঁর ফিরিশ্তাগণ নবীর প্রতি রহমত বর্ষণ করেন। হে মু'মিনগণ ! তোমরা নবীর উপর দরুদ ও সালাম পাঠ কর।)) [সূরা আল-আহযাব, আয়াত-৫৬]
নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ
من صلى عليّ واحدة صلى الله عليه بها عشرا
[رواه مسلم]
অর্থঃ ((যে, ব্যক্তি আমার উপর একবার দরুদ পাঠ করবে আল্লাহ তার উপর এর বিনিময়ে দশবার রহম করবেন।)) [মুসলিম শরীফ]
নিম্নের স্থান গুলোতে তাঁর (নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) উপর দরুদ পাঠ করা অত্যান্ত গুরুত্ব পূর্ণ। নামাযের তাশাহুদে, বিতির নামাযের দোআয় কুনুতে, জানাযার নামাযে, জুম'আর খুৎবাতে। আযানের পর, মাসজিদে প্রবেশ ও মাসজিদ হতে বের হওয়ার সময়। দোআর সময় এবং যখন (নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর নাম উল্লেখ্য করা হয়, আরো অন্যান্য স্থানে।
নবমতঃ নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সকল নবী (আলাইহিমুস্ সালাম) তাঁদের প্রভুর নিকট জীবিত। শহীদদের কবরের জীবন হতে তাঁদের (আলাইহিমুস্ সালাম) কবরের জীবন আরো বেশী পরিপূর্ণ ও উচ্চ। তবে তাঁদের কবরের জীবন, পৃথিবীর জীবনের মত নয়। তা এমন জীবন যার বিবরণ সম্পর্কে আমরা জানি না, সে জীবন তাঁদের হতে মৃত্যুর নামও দূর করেনা।
নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ
إن الله حرم على الأرض أن تأكل أجساد الأنبياء
[رواه أبو داود والنسائي]
অর্থঃ ((আল্লাহ জমিনের জন্য নবীদের লাশ ভক্ষণ কে হারাম করে দিয়েছেন।)) [আবু দাউদ ও নাসায়ী]
নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেনঃ
ما من مسلم يسلم عليّ إلا رد الله عليّ روحي كي أرد عليه السلام
[رواه أبو داود]
অর্থঃ ((যখনই কোন মুসলমান আমাকে সালাম দেয় তখনই আল্লাহ আমার রুহ্ বা আত্মা আমার নিকট ফিরিয়ে দেন তার সালামের উত্তর দেওয়ার জন্য।)) [আবু দাউদ]
দশমতঃ তাঁর জীবদ্দশায় তাঁর সামনে উচু আওয়াজ না করা, অনুরুপ তাঁর কবরে তাঁর উপর সালাম দেওয়ার সময় উচু আওয়াজ না করা নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এহতেরামের অন্তর্ভুক্ত।
আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَرْفَعُوا أَصْوَاتَكُمْ فَوْقَ صَوْتِ النَّبِيِّ وَلَا تَجْهَرُوا لَهُ بِالْقَوْلِ كَجَهْرِ بَعْضِكُمْ لِبَعْضٍ أَن تَحْبَطَ أَعْمَالُكُمْ وَأَنتُمْ لَا تَشْعُرُونَ
[سورة الحجرات، الآية:2]
অর্থঃ ((হে মু'মিনগণ ! তোমরা নবীর কন্ঠস্বরের উপর তোমাদের কন্ঠস্বর-উঁচু করনা,এবং তোমরা একে অপরের সাথে যেরূপ উঁচু স্বরে কথা বল, তাঁর সাথে সেরূপ উঁচু স্বরে কথা বলোনা। এতে তোমাদের কর্ম নিষ্ফল হয়ে যাবে এবং তোমরা টেরও পাবেনা।)) [সূরা আল-হুজরাত, আয়াত-২]
দাফনের পর তাঁকে সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্মান করা, তাঁর জীবিত অবস্থায় সম্মান করার ন্যায়। অতঃপর তাঁকে আমরা সম্মান করবো যে ভাবে সাহাবায়ে কেরাম তাঁকে সম্মান করতেন। কারণ তাঁরা (রাযিয়াল্লাহু আনহুম) সকল মানুষের চেয়ে তাঁর সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম অধিক অনুসরণকারী ছিলেন। তাঁরা (রাযিয়াল্লাহু আনহুম) তাঁর সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিরুধিতা করা হতে এবং দ্বীনের অন্তর্ভুক্ত নয় এমন কিছু দ্বীনের মাঝে সংযোজন করা হতে অধিক দূরে থাকতেন।
একাদশতমঃ তাঁর সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবাদেরকে, পরিবার-পরিজনকে ও স্ত্রীদেরকে ভাল বাসা ও তাঁদের সকলের সাথে বন্ধুত্ব রাখা। তাঁদের মর্যাদাহানী হতে বা তাঁদেরকে গালী দেওয়া হতে ও তাঁদের চরিত্রে কোন প্রকার আঘাত হানা হতে সাবধান থাকা। কারণ আল্লাহ তাঁদের প্রতি রাজি হয়েছেন, ও তাঁদেরকে তাঁর নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম সহচর হিসাবে নির্বাচন করে নিয়েছেন। এই উম্মাতের উপর তাদের সাথে বন্ধুত্ব রাখা ওয়াজিব করে দিয়েছেন।
আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ
وَالسَّابِقُونَ الأَوَّلُونَ مِنَ الْمُهَاجِرِينَ وَالأَنصَارِ وَالَّذِينَ اتَّبَعُوهُم بِإِحْسَانٍ رَّضِيَ اللّهُ عَنْهُمْ وَرَضُواْ عَنْهُ
[سورة التوبة، الآية:100]
অর্থঃ ((আর যারা সর্ব প্রথম হিজরত কারী ও আনছারদের মাঝে পুরাতন, এবং যারা তাদের অনুসরণ করেছে, আল্লাহ সে সমস্ত লোকদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন, এবং তারাও তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছে।)) [সূরা আত্-তাওবাহ, আয়াত-১০০]
নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ
لا تسبوا أصحابي فوالذي نفسي بيده لو أنفق أحدكم مثل أحد ذهبا ما بلغ مد أحدهم ولا نصيفه
[رواه البخاري]
অর্থঃ ((তোমরা আমার সাহাবাদেরকে গালী দিওনা, সেই সত্যার শপথ যার হাতে আমার প্রাণ, তোমাদের কেউ যদি উহুদ পর্বতের সমপরিমান (আল্লাহর পথে) ব্যায় করে, তবুও তাদের এ বিশাল ব্যায় সাহাবাদের আল্লাহর রাস্তায় এক মুদ্ (প্রায় ৭০০গ্রাম) বা অর্ধ মুদ্ ব্যায় করার সমান হবে না।)) [বুখারী]
সুতরাং পরবর্তী লোকদের উচিত সাহাবাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা এবং নিজেদের মনে তাঁদের ব্যাপারে যাতে কোন প্রকার কুটিলতা না থাকে এ জন্য আল্লাহর কাছে দোআ করা।
আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ
وَالَّذِينَ جَاؤُوا مِن بَعْدِهِمْ يَقُولُونَ رَبَّنَا اغْفِرْ لَنَا وَلِإِخْوَانِنَا الَّذِينَ سَبَقُونَا بِالْإِيمَانِ وَلَا تَجْعَلْ فِي قُلُوبِنَا غِلّاً لِّلَّذِينَ آمَنُوا رَبَّنَا إِنَّكَ رَؤُوفٌ رَّحِيمٌ
[سورة الحشر، الآية:10]
অর্থঃ ((যারা তাঁদের পরে আগমন করেছে তাঁরা বলেঃ হে আমাদের পালনকর্তা! আমাদেরকে এবং ঈমানে অগ্রণী আমাদের ভাইদেরকে ক্ষমা কর এবং ঈমানদারদের বিরুদ্ধে আমাদের অন্তরে কোন বিদ্বেষ রেখনা। হে আমাদের পালনকর্তা, আপনি দয়ালু পরম করুণাময়।)) [সূরা আল-হাশর, আয়াত-১০]
দ্বাদশতমঃ তাঁর সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম ব্যাপারে অতিরঞ্জিত করা হতে বিরত থাকা। কারণ অতিরঞ্জিত করা তাঁকে সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বড় কষ্ট দেওয়ার অন্তর্ভুক্ত। কারণ নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর উম্মাতকে তাঁর ব্যাপারে অতিরঞ্জিত করা হতে ও তাঁর প্রশংসা করার সময় সীমা লংঘন করা হতে সতর্ক করেছেন। আল্লাহ তা'আলা তাঁকে যে মর্যাদা দিয়েছেন, তাঁকে তার চেয়ে মর্যাদা দেয়া হতে সতর্ক করেছেন। কারণ ইহা একমাত্র আল্লাহর জন্য খাস।
নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ
إنما أنا عبد فقولوا عبد الله ورسوله، لا أحب أن تر فعوني فوق منزلتي
অর্থঃ ((আমি একজন বান্দা বা দাস, সুতরাং তোমরা আমাকে আল্লাহর বান্দা ও আল্লাহর রাসূল বল। তোমরা আমাকে আমার মর্যাদার চেয়ে উচু করনা এটা আমি ভাল বাসিনা।))
নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেনঃ
لا تطروني كما أطرت النصارى ابن مريم
[رواه البخاري]
অর্থঃ ((তোমরা আমার ব্যাপারে অতিরঞ্জিত করনা যেমন খৃষ্টানরা ঈসা বিন মারইয়াম (আলাইহিস্ সালাম) এর ব্যাপারে অতিরঞ্জিত করেছিল।)) [বুখারী]
তাঁকে (নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আহ্বান করা, ও তাঁর কাছে ফরিয়াদ করা। তাঁর কবরের পাশ দিয়ে ত্বাওয়াফ করা, তাঁর নামে নজর মানা, পশু জবেহ্ করা বৈধ নয়। এ সকল কাজ আল্লাহর সাথে শরীক করার নামান্তর, অথচ আল্লাহ অন্যের ইবাদাত করা হতে নিষেধ করেছেন। অনুরূপ ভাবে তাঁকে ইহতেরাম না করায় তাঁর প্রতি অনিহা প্রকাশ পায়। তাঁর মান হানি করা,তাঁকে তুচ্ছ জানা তাঁর ব্যাপারে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করা, ইসলাম হতে মুর্তাদ বা বের হয়ে যাওয়া ও আল্লাহর সাথে কুফুরী করা।
আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ
لاَ تَعْتَذِرُواْ قَدْ كَفَرْتُم بَعْدَ إِيمَانِكُمْ - قُلْ أَبِاللّهِ وَآيَاتِهِ وَرَسُولِهِ كُنتُمْ تَسْتَهْزِئُونَ
[سورة التوبة، الآية: 66 ، 67]
অর্থঃ ((আপনি বলুনঃ তোমরা কি আল্লাহর সাথে, তাঁর হুকুম-আহকামের সাথে এবং তাঁর রাসূলের সাথে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করেছিলে? ছলনা করোনা, তোমরা যে কাফের হয়ে গেছ ঈমান প্রকাশ করার পর।)) [সূরা আত্-তাওবাহ্, আয়াত-৬৫-৬৬]
রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে সত্যিকার ভালবাসা তাঁর নীতির ও সুন্নাতের অনুসরণ ও অনুকরণ, তাঁর সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম পথের বিরোধিতা না করার দিকে প্রেরণা যোগায়।
আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ
قُلْ إِن كُنتُمْ تُحِبُّونَ اللّهَ فَاتَّبِعُونِي يُحْبِبْكُمُ اللّهُ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوبَكُمْ وَاللّهُ غَفُورٌ رَّحِيمٌ
[سورة آل عمران، الآية:31]
অর্থঃ ((বলুন, যদি তোমরা আল্লাহকে ভাল বাস, তাহলে আমাকে অনুসরণ কর যাতে আল্লাহও তোমাদিগকে ভাল বাসেন এবং তোমাদিগকে তোমাদের পাপ মার্জনা করে দেন। আর আল্লাহ হলেন ক্ষমাকারী দয়ালু।)) [সূরা আলে-ইমরান, আয়াত-৩১]
রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সম্মানের ব্যাপারে বেশী-কমে সীমালংঘন না করা ওয়াজিব। তাই তাঁকে উলুহীয়াতের (মা'বুদের) গুণে গুনাম্বিত করা যাবে না। তাঁর মর্যাদা সম্মান ও ভালবাসার অধিকার কমানোও যাবেনা, যার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল তার শরীয়াতের অনুসরণ করা, তার নীতির উপর চলা ও তাঁর সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম অনুকরণ করা।
ত্রয়দশতমঃ নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি ঈমান আনা পূর্ণাঙ্গ হবে তাঁকে সত্যায়িত ও তিনি যে শরীয়াত নিয়ে এসেছেন তার উপর আমল করার মাধ্যমে, এটা তাঁর সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম আনুগত্য করার অর্থ। তাঁর আনুগত্য বস্তুত আল্লাহরই আনুগত্য, আর তাঁর সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম নাফারমানী বস্তুত আল্লাহরই নাফারমানী। আর তাঁকে পূর্ণভাবে বিশ্বাস ও অনুসরণের মাধ্যমেই তাঁর প্রতি পরিপূর্ণভাবে ঈমান আনা হয়ে থাকে।
َ
রাসূলগনের উপর আল্লাহর অবতীর্ণ কিতাব সমূহের প্রতি ঈমান আনা, ইহা ঈমানের তৃতীয় রুকন বা স্তম্ভ।
নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা তাঁর রাসূলগণ কে সুস্পষ্ট নিদর্শনসহ প্রেরণ করেছেন। এবং তাঁদের (রাসূলগণের) উপর কিতাব সমূহ অবতীর্ণ করেছেন, মাখলুকাতের হিদায়াত ও রহমত স্বরূপ। যাতে-দুনিয়া ও আখিরাতে সৌভাগ্যশীল হয়। এবং যাতে তাদের চলার একটি সুন্দর পথ হয়। আর মানুষ যে বিষয়ে মতনৈক্যে লিপ্ত, তার সমাধানকারী বা ফায়সালাকারী হয়।
আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ
[سورة الحديد، الآية:25]
অর্থঃ ((আমি আমার রাসূলগণকে সুস্পষ্ট নিদর্শনসহ প্রেরণ করেছি এবং তাদের সাথে অবতীর্ণ করেছি কিতাব ও মিযান (মানদন্ড) যাতে মানুষ ইনসাফ প্রতিষ্টা করে।)) [সূরা আল-হাদীদ,আয়াত-২৫]
তিনি আরো বলেনঃ
كَانَ النَّاسُ أُمَّةً وَاحِدَةً فَبَعَثَ اللّهُ النَّبِيِّينَ مُبَشِّرِينَ وَمُنذِرِينَ وَأَنزَلَ مَعَهُمُ الْكِتَابَ بِالْحَقِّ لِيَحْكُمَ بَيْنَ النَّاسِ فِيمَا اخْتَلَفُواْ فِيهِ
[سورة البقرة، الآية:213]
অর্থঃ ((সকল মানুষ একই জাতি সত্তার অর্ন্তভুক্ত ছিল। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা নাবীদেরকে পাঠালেন সুসংবাদ দাতা ও ভীতি প্রদর্শনকারী হিসেবে। আর তাঁদের সাথে অবতীর্ণ করলেন সত্য কিতাব, যাতে মানুষের মাঝে বিতর্কমূলক বিষয়ে মীমাংসা করতে পারেন।)) [সূরা আল-বাক্বারা,আয়াত-২১৩]
(১) কিতাব সমূহের প্রতি ঈমান আনার মূল কথাঃ
কিতাব সমূহের প্রতি ঈমানঃ এ কথার প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস স্থাপন করা যে, আল্লাহর অনেক কিতাব রয়েছে। যা তিনি তাঁর রাসূলগণের (আলাইহিমুস সালাম) উপর নাযিল করেছেন। আর তা সত্যিকার অর্থে তাঁর (আল্লাহর) বাণী। আর তা হল জ্যোতি ও হিদায়াত। আর নিশ্চয় এ কিতাব সমূহের মধ্যে যা রয়েছে তা সত্য ও ন্যায় সিণ্ঠ, এর অনুসরণ করা ও তদানুযায়ী আমল করা ওয়াজিব। একমাত্র আল্লাহ ছাড়া এ কিতাব সমূহের সংখ্যা কেউ জানেনা।
আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ
وَكَلَّمَ اللّهُ مُوسَى تَكْلِيماً
[سورة النساء، الآية:164]
অর্থঃ ((আর আল্লাহ মূসার সাথে কথোপথন করেছেন সরাসরি।)) [সূরা আন-নিসা,আয়াত-১৬৪]
তিনি আরো বলেনঃ
وَإِنْ أَحَدٌ مِّنَ الْمُشْرِكِينَ اسْتَجَارَكَ فَأَجِرْهُ حَتَّى يَسْمَعَ كَلاَمَ اللّهِ
[سورة التوبة، الآية:6]
অর্থঃ ((আর মুশরিকদের কেউ যদি তোমার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করে, তবে তাকে আশ্রয় দিবে, যাতে সে আল্লাহর বাণী শুনতে পায়।)) [সূরা আত তাওবাহ-আয়াত-৬]
(২) কিতাব সমূহের প্রতি ঈমান আনার বিধানঃ
সকল কিতাবের প্রতি ঈমান আনা যা আল্লাহ তাঁর রাসূলগণের (আলাইহিমুস সালাম) উপর অবতীর্ণ করেছেন, আল্লাহ তা‘বারাকা ও তা‘আলা সত্যিকার অর্থে কিতাব সমূহের মাধ্যমে কথা বলেছেন। এবং তা (আল্লাহর পক্ষহতে) অবতীর্ণ, মাখলুক বা সৃষ্ট নয়,আর যে ব্যক্তি তা (কিতাব সমূহ) অথবা তাঁর কিছুকে অÈীকার করবে সে কাফের হয়ে যাবে।
আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ آمِنُواْ بِاللّهِ وَرَسُولِهِ وَالْكِتَابِ الَّذِي نَزَّلَ عَلَى رَسُولِهِ وَالْكِتَابِ الَّذِيَ أَنزَلَ مِن قَبْلُ وَمَن يَكْفُرْ بِاللّهِ وَمَلاَئِكَتِهِ وَكُتُبِهِ وَرُسُلِهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ فَقَدْ ضَلَّ ضَلاَلاً بَعِيداً
[سورة النساء، الآية:136]
অর্থঃ ((হে ঈমানদারগণ, আল্লাহর উপর পরিপূর্ণ বিশ্বাস স্থাপন কর এবং বিশ্বাস স্থাপন কর তাঁর রাসূল ও তাঁর কিতাবের উপর ,যা তিনি অবতীর্ণ করেছেন Èীয় রাসূলের উপর এবং সে সমস্ত কিতাবের উপর যে গুলো অবতীর্ণ করা হয়েছিল ইতিপূর্বে। যে আল্লাহর উপর,তাঁর ফিরিশতাদের উপর, তাঁর কিতাব সমূহের উপর,এবং রাসূলগণের উপর ও কিয়ামত দিবসের উপর বিশ্বাস করবেনা, সে পথভ্রষ্ট হয়ে বহু দূরে গিয়ে পড়বে।)) [সূরা আন-নিসা,আয়াত-১৩৬]
তিনি আরো বলেনঃ
وَهَـذَا كِتَابٌ أَنزَلْنَاهُ مُبَارَكٌ فَاتَّبِعُوهُ وَاتَّقُواْ لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُونَ
[سورة الأنعام، الآية:155]
অর্থঃ ((এটি এমন একটি গ্রন্থ, যা আমি অবতীর্ণ করেছি, খুব মঙ্গলময়। অতএব এর অনুসরণ কর এবং ভয়কর-যাতে তোমরা করুনা প্রাপ্ত হও।)) [সূরা আল-আনআম,আয়াত-১৫৫]
(৩) এসব কিতাবের প্রতি মানুষের প্রয়োজনীয়তা এবং তা অবতীর্ণ করার পিছনে হিকমাত বা রহস্যঃ
প্রথমতঃ যাতে রাসূল (আলাইহিস সালাম) এর উপর অবতীêণ কিতাব তাঁর উম্মাতের জন্য জ্ঞান কোষ স্বরূপ হয়। ফলে তারা তাদের দ্বীন সম্পর্কে জানার জন্যে এর দিকে প্রত্যাবর্তন করে।
দ্বিতীয়তঃ যাতে রাসূল (আলাইহিস সালাম) এর উপর অবতীêন কিতাব তাঁর উম্মাতের প্রত্যেক মতনৈক্য পূর্ণ বিষয়ে ইনসাফ ভিক্তিক বিচারক হয়।
তৃতীয়তঃ যাতে অবতীêণ কিতাব রাসূল (আলাইহিস সালাম) এর ইন্তেকালের পর দ্বীন বা ধর্ম সংরক্ষণকারী হিসাবে দাঁড়াতে পারে, স্থান ও কালের যতই দুরুত্ব হোকনা কেন। যেমন-আমাদের নাবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর (পরবর্তী)দাওয়াতের অবস্থা।
চতুর্থতঃ যাতে এ অবতীর্ণ কিতাব সমূহ আল্লাহর পক্ষহতে হুজ্জাত (পক্ষ বিপক্ষের দলীল)স্বরূপ হয়। যেন সৃষ্টি জীব এর (কিতাব সমূহের) বিরোধিতা করা এবং এর আনুগত্য হতে বের হয়ে যাওয়ার সমথ্যê না রাখে।
আল্লাহ্ তা'আলা বলেনঃ
كَانَ النَّاسُ أُمَّةً وَاحِدَةً فَبَعَثَ اللّهُ النَّبِيِّينَ مُبَشِّرِينَ وَمُنذِرِينَ وَأَنزَلَ مَعَهُمُ الْكِتَابَ بِالْحَقِّ لِيَحْكُمَ بَيْنَ النَّاسِ فِيمَا اخْتَلَفُواْ فِيهِ
[سورة البقرة، الآية:213]
অর্থঃ ((সকল মানুষ একই জাতি সত্ত্বার অন্তর্ভুক্ত ছিল। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা নাবীদেরকে পাঠালেন সুসংবাদ দাতা ও ভীতি প্রদর্শনকারী হিসাবে। আর তাদের সাথে অবতীর্ণ করলেন সত্য কিতাব,যাতে মানুষের মাঝে বিতর্কমূলক বিষয়ে মীমাংসা করতে পারেন।)) [সূরা আল-বাক্বারা,আয়াত-২১৩]
(৪)কিতাব সমূহের প্রতি ঈমান আনার নিয়মঃ
আল্লাহর কিতাব সমূহের প্রতি সংক্ষিপ্ত ও বিস্তারিত ভাবে ঈমান আনা হয়ে থাকে।
সংক্ষিপ্ত ঈমানঃ এ বিশ্বাস করবে (ঈমান আনা) যে, আল্লাহ তা‘আলা তাঁর রাসূলগণের উপর অনেক কিতাব অবতীর্ণ করেছেন।
বিস্তারিত ভাবে ঈমানঃ ইহা হলো, আল্লাহ কুরআন কারীমে যে সকল কিতাবের নাম উল্লেখ্য করেছেন, তার প্রতি ঈমান আনা। তা হতে আমরা জেনেছি-কুরআন, তাওরাত, যাবুর, ইনজীল, এবং ইব্রাহীম, ও মূসা এর প্রতি অবতীর্ণ পুস্তিকা সমূহ (আলাইহিমুস সালাম)।
আরো ঈমান আনা যে, ঐসকল কিতাব ছাড়াও আল্লাহর অনেক কিতাব রয়েছে, যা তাঁর নাবীগণের উপর অবতীêণ করেছেন।
আর আল্লাহ ছাড়া ঐ সকল কিতাবের নাম ও সংখ্যা কেউ জানেনা।
এ কিতাব গুলো অবতীর্ণ হয়েছে যাবতীয় সতকর্ম ও ইবাদাত একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার নিমিত্তে সম্পাদনের মাধ্যমে তাঁর তাওহীদ (একত্ববাদ) বাস্তবায়ন এবং পৃথিবীতে শিরক ও অন্যায়-অনাচার দূরীভূত করার জন্য। মূলত সকল নাবীদের দাওয়াত এক মূলনীতির (তাওহীদ প্রতিণ্ঠা ও শির্ক বর্জনের) উপর ছিল, যদিও তাঁরা নিয়ম কানুন ও বিধি-বিধানে কিছুটা ভিন্ন রকম ছিলেন।
এ ঈমানও রাখা যে, পূর্ববর্তী রাসূলদের প্রতি (আল্লাহর পক্ষ হতে) কিতাব অবতীর্ণ হয়েছিল । আর আল-কুরআনের প্রতি ঈমান আনা হলো ঃ তা (অন্তরে ও মুখে) স্বীকৃতি দেয়া এবং কুরআনে যা রয়েছে তা অনুসরণ করা।
আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ
آمَنَ الرَّسُولُ بِمَا أُنزِلَ إِلَيْهِ مِن رَّبِّهِ وَالْمُؤْمِنُونَ كُلٌّ آمَنَ بِاللّهِ وَمَلآئِكَتِهِ وَكُتُبِهِ وَرُسُلِهِ
[سورة البقرة، الآية:285]
অর্থঃ ((রাসূল বিশ্বাস রাখেন ঐ সমস্ত বিষয় সম্পর্কে যা তাঁর পালন কর্তার পক্ষ থেকে তাঁর কাছে অবতীর্ণ হয়েছে এবং মু‘মিনরাও। সকলেই বিশ্বাস রাখে আল্লাহর প্রতি, তাঁর ফিরিশতাদের প্রতি, তাঁর গ্রন্থ সমূহের প্রতি এবং তাঁর রাসূলগণের প্রতি।)) [সূরা আল-বাক্বারা,আয়াত-২৮৫]
তিনি আরো বলেনঃ
اتَّبِعُواْ مَا أُنزِلَ إِلَيْكُم مِّن رَّبِّكُمْ وَلاَ تَتَّبِعُواْ مِن دُونِهِ أَوْلِيَاء
[سورة الأعراف، الآية:3]
অর্থঃ তোমরা অনুসরণ কর,যা তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে অবতীর্ণ হয়েছে। আর আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্য সাথীদের অনুসরণ করোনা। [সূরা আল-আ‘রাফ,আয়াত-৩]
পূর্ববতী কিতাবের চেয়ে কুরআনের কিছু ভিন্ন বৈশিষ্ট রয়েছেঃ
(১) আল-কুরআন স্বীয় শব্দ, অর্থ এবং তাতে যে জ্ঞান ও পার্থিব তথ্য রয়েছে তা সর্ব বিষয়ে এক অলৌকিক শক্তি।
(২) আল-কুরআন সর্ব শেষ আসমানী কিতাব, কুরআনের মাধ্যমে আসমানী কিতাবের সমাপ্তি ঘটেছে। যেমন-আমাদের নাবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর রিসালাতের দ্বারা সকল রিসালাতের পরিসমাপ্তি ঘটেছে।
(৩) সকল প্রকার বিকৃতি ও পরিবর্তন হতে আল্লাহ কুরআনকে হেফাজত করবেন। ইহা অন্যান্য কিতাব হতে সতন্ত্র। কেননা সে সব কিতাবে বিকৃতি ও পরিবর্তন পরিবর্ধন ঘটেছে।
(৪) আল-কুরআন পূর্ববর্তী কিতাবের সত্যায়ন ও সংরক্ষণকারী।
(৫) কুরআন পূর্ববর্তী সকল কিতাবের রহিতকারী।
আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ
مَا كَانَ حَدِيثاً يُفْتَرَى وَلَـكِن تَصْدِيقَ الَّذِي بَيْنَ يَدَيْهِ وَتَفْصِيلَ كُلَّ شَيْءٍ وَهُدًى وَرَحْمَةً لِّقَوْمٍ يُؤْمِنُونَ
[سورة يوسف، الآية:111]
অর্থঃ ((এটা কোন মনগড়া কথা নয়, কিন্ত যারা বিশ্বাস স্থাপন করে তাদের জন্য পূর্বেকার কালামের সামর্থন এবং প্রত্যেক বস্তুর বিবরণ রহমত ও হিদায়াত।)) [সূরা ইফসুফ,আয়াত-১১১]
(৫)পূর্ববর্তী কিতাব সমূহের সংবাদ গ্রহণ করাঃ
আমরা নিশ্চিত ভাবে জানি যে, পূর্ববর্তী কিতাবে আল্লাহ তাঁর রাসূলগণের নিকটে ওয়াহীর মাধ্যমে যে সংবাদ দিয়েছেন তা সত্য, তাতে কোন প্রকার সন্দেহ নেই। এর অর্থ এ নয় যে, বর্তমানে আহলে কিতাবদের (ইয়াহুদী ও খৃষ্টানদের) নিকট যে কিতাব রয়েছে তা গ্রহণ করবো। কারণ তা বিকৃত করা হয়েছে, আল্লাহ তাঁর রাসূলগণের নিকট যে ভাবে অবতীর্ণ করেছেন সে ভাবে নেই। পূর্ববর্তী কিতাব হতে আল্লাহ আমাদেরকে তাঁর কিতাবে (কুরআনে) যে সংবাদ দিয়েছেন তা হতে আমরা নিশ্চিত ভাবে জেনেছি যে, কেউ কারও গোনাহ বহন করবে না। মানুষ তাই পায় যা সে করে, তার কর্ম শীঘ্রই দেখানো হবে, অতঃপর তাকে পূর্ণ প্রতিদান দেয়া হবে।
আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ
[سورة النجم، الآيات:36-41]
অর্থঃ ((তাকে কি জানানো হয়নি যা আছে মূসার কিতাবে এবং ইবরাহীমের কিতাবে যে,তার দায়িত্ব পালন করে ছিল ? কিতাবে আছে যে, কেউ কারও গোনাহ বহন করবে না, এবং মানুষ তাই পায় যা সে করে। আর তার কর্ম শীঘ্রই দেখানো হবে, অতঃপর তাকে পূর্ণ-প্রতিদান দেয়া হবে।)) [সূরা আন-নজম,আয়াত-৩৬-৪১]
তিনি আরো বলেনঃ
[سورة الأعلى، الآيات:16-19]
অর্থঃ ((বস্ততঃ তোমরা পার্থিব জীবনকে অগ্রাধিকার দাও,অথচ পরকালের জীবন উতকৃষ্ট ও স্থায়ী। এটা লিখিত রয়েছে পূর্ববর্তী কিতাব সমূহে, ইবরাহীম ও মূসার কিতাব সমূহে।)) [সূরা আল-আ‘লা,আয়াত-১৬-১৯]
পূর্ববর্তী কিতাবের বিধানঃ কুরআনে যে সকল বিধান রয়েছে তা মেনে চলা আমাদের অপরিহার্য। তবে পূর্ববর্তী কিতাবে যা রয়েছে তা নয়। কারণ আমরা দেখবো পূর্ববর্তী কিতাবে যে বিধান রয়েছে তা যদি আমাদের শরিয়াতের পরিপন্থী হয়, তবে আমরা তা আমল করবো না, তা বাতিল এ জন্যে নয়, বরং তা সে সময় সত্য ছিল, এখন তা আমল করা আমাদের উপর অপরিহার্য নয়। কারণ তা আমাদের শরীয়াত দ্বারা রহিত হয়ে গেছে। আর যদি তা আমাদের শরীয়াতের অনুসরণ হয়, তবে তা সত্য বলে বিবেচিত হবে। আমাদের শরীয়াত তা সত্য বলে স্বীকৃতি দিয়েছে।
(৬) কুরআন ও হাদীসে যে সকল আসমানী কিতাবের নাম উল্লেখ্য হয়েছে তা হলোঃ
(১) কুরআন কারীমঃ কুরআন হল আল্লাহর বানী যা তিনি শেষ নাবী ও রাসূল মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর উপর নাযিল করেছেন।
কুরআন সর্ব শেষ অবতীর্ণ কিতাব। আল্লাহ কুরআনকে বিকৃতি ও পরির্বতন হতে হিফাজত করার দায়িত্ব ভার গ্রহণ করেছেন, এবং সকল আসমানী কিতাবের রহিতকারী করেছেন।
আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ
إِنَّا نَحْنُ نَزَّلْنَا الذِّكْرَ وَإِنَّا لَهُ لَحَافِظُونَ
[سورة الحجر، الآية:9]
অর্থঃ ((আমি স্বয়ং এ উপদেশ গ্রন্থ অবতরণ করেছি এবং আমি নিজেই এর সংরক্ষক।)) [সূরা আল-হিজর,আয়াত-৯]
তিনি আরো বলেনঃ
وَأَنزَلْنَا إِلَيْكَ الْكِتَابَ بِالْحَقِّ مُصَدِّقاً لِّمَا بَيْنَ يَدَيْهِ مِنَ الْكِتَابِ وَمُهَيْمِناً عَلَيْهِ فَاحْكُم بَيْنَهُم بِمَا أَنزَلَ اللّهُ
[سورة المائدة، الآية:48]
অর্থঃ ((আমি আপনার প্রতি অবতীর্ন করেছি সত্যগ্রন্থ, যা পূর্ববর্তী গ্রন্থ সমূহের সত্যায়নকারী এবং সে গুলোর বিষয়বস্তর রক্ষণা বেক্ষণকারী। অতএব আপনি তাদের পারস্পারিক ব্যাপারাদিতে আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন তদনুযায়ী ফয়সালা করুন।)) [সূরা আল-মায়িদাহ,আয়াত-৪৮]
(২)তাওরাতঃ তাওরাত ঐ কিতাব যাকে আল্লাহ মূসা (আলাইহিস সালাম) এর উপর নূর (জ্যোতি) ও হিদায়াত স্বরূপ নাযিল করেছিলেন। বানী ইসরাঈলের নাবী ও আলেমগণ এর দ্বারা ফায়সালা করতেন। সুতরাং মূসা (আলাইহিস সালাম) এর উপর আল্লাহর অবতীর্ণ কিতাব তাওরাত এর প্রতি ঈমান আনা ওয়াজিব, বর্তমান তথা কথিত ইয়াহুদীদের হাতে বিকৃত তাওরাতের প্রতি নয়।
আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ
[سورة المائدة، الآية:44]
অর্থঃ ((আমি তাওরাত অবতীর্ণ করেছি, এতে হেদায়াত ও আলো রয়েছে, আল্লাহর আনুগত্যশীল নাবী, আল্লাহভক্ত ও আলেমরা এর মাধ্যমে ইয়াহুদীদের ফায়সালা দিতেন। কেননা তাদেরকে আল্লাহর এই গ্রন্থের দেখা শোনা করার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল।)) [সূরা আল-মায়িদাহ,আয়াত-৪৪]
(৩)ইঞ্জীলঃ ইঞ্জীল ঐ কিতাব যা সত্যিকার অর্থে আল্লাহ ঈসা (আলাইহিস সালাম) এর উপর নাযিল করেছিলেন, যা পুর্ববতীê সকল আসমানী কিতাবের সত্যায়নকারী। সুতরাং ঐ ইঞ্জীলের উপর ঈমান আনা ওয়াজিব, যা সঠিক মূলনীতি সহ আল্লাহ ঈসা (আলাইহিস সালাম) এর উপর নাযিল করেছিলেন। খৃষ্টানদের নিকট বিক্রিত ইঞ্জীল সমূহে নয়।
আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ
وَقَفَّيْنَا عَلَى آثَارِهِم بِعَيسَى ابْنِ مَرْيَمَ مُصَدِّقاً لِّمَا بَيْنَ يَدَيْهِ مِنَ التَّوْرَاةِ وَآتَيْنَاهُ الإِنجِيلَ فِيهِ هُدًى وَنُورٌ وَمُصَدِّقاً لِّمَا بَيْنَ يَدَيْهِ مِنَ التَّوْرَاةِ وَهُدًى وَمَوْعِظَةً لِّلْمُتَّقِينَ
[سورة المائدة، الآية:46]
অর্থঃ ((আমি তাদের পেছনে মারিয়ামের পুত্র ঈসাকে প্রেরণ করেছি। তিনি পূর্ববর্তী গ্রন্থ তাওরাতের সত্যায়নকারী ছিলেন। আমি তাকে ইঞ্জীল প্রদান করেছি। এতে হেদায়াত ও আলো রয়েছে। এটি পূর্ববর্তী গ্রন্থ তাওরাতের-সত্যায়ন করে,পথ প্রদর্শন করে এবং এটি আল্লাহভীরুদের জন্যে হেদায়াত ও উপদেশবানী।)) [সূরা আল-মায়িদাহ,আয়াত-৪৬]
তাওরাত ও ইঞ্জীলে যা রয়েছে তন্মধ্যে আমাদের নাবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর রিসালাতের সুসংবাদ রয়েছে।
আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ
الَّذِينَ يَتَّبِعُونَ الرَّسُولَ النَّبِيَّ الأُمِّيَّ الَّذِي يَجِدُونَهُ مَكْتُوباً عِندَهُمْ فِي التَّوْرَاةِ وَالإِنْجِيلِ يَأْمُرُهُم بِالْمَعْرُوفِ وَيَنْهَاهُمْ عَنِ الْمُنكَرِ وَيُحِلُّ لَهُمُ الطَّيِّبَاتِ وَيُحَرِّمُ عَلَيْهِمُ الْخَبَآئِثَ وَيَضَعُ عَنْهُمْ إِصْرَهُمْ وَالأَغْلاَلَ الَّتِي كَانَتْ عَلَيْهِمْ
[سورة الأعراف، الآية:157]
অর্থঃ ((যারা আনুগত্য করে এ রাসূলের, যিনি নিরক্ষর নাবী,যার সম্পর্কে তাদের নিজেদের কাছে রক্ষিত তাওরাত ও ইঞ্জীলে লিখা দেখতে পায়, তিনি তাদেরকে নির্দেশদেন সতকর্মের, বারণ করেন অসতকর্ম থেকে, তাদের জন্য যাবতীয় পবিত্র বস্তু হালাল ঘোষনা করেন ও নিষিদ্ধ করেন নিকৃষ্ট বুæসমূহ, আর তাদের উপর থেকে সে বোঝা নামিয়েছেন এবং বন্দীত্ব অপসারণ করেন যা তাদের উপর বিদ্যমান ছিল।)) [সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত-১৫৭]
(৪)যাবুরঃ যাবুর ঐ কিতাব যা আল্লাহ দাউদ (আলাইহিস সালাম) এর উপর নাযিল করেছিলেন। সুতরাং ঐ যাবুরের প্রতি ঈমান আনা ওয়াজিব যা আল্লাহ দাউদ (আলাইহিস সালাম) এর উপর নাযিল করেছিলেন। সে যাবুর নয় যা ইয়াহুদীরা বিকৃত করে ফেলেছে।
আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ
وَآتَيْنَا دَاوُودَ زَبُوراً
[سورة النساء، الآية:163]
অর্থঃ ((আর দাউদকে দান করেছি যাবুর।)) [সূরা আন-নিসা,আয়াত-১৬৩]
(৫) ইবরাহীম ও মূসা (আলাইহিস সালাম)এর সুহুফ বা পুস্তিকা সমূহঃ
তা ঐ সকল পুস্তিকা যা আল্লাহ ইবরাহীম ও মূসা (আলাইহিস সালাম)কে দিয়েছিলেন। কুরআন ও হাদীসে যা উল্লেখ্য হয়েছে তা ছাড়া এ সকল পুস্তিকা নিরুদ্দেশ।
আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ
[سورة النجم، الآيات:36-41]
অর্থঃ ((তাকে কি জানানো হয়নি যা আছে মূসার কিতাবে এবং ইবরাহীমের কিতাবে যে,তার দায়িত্ব পালন করে ছিল ? কিতাবে আছে যে, কেউ কারও গোনাহ বহন করবে না, এবং মানুষ তাই পায় যা সে করে। আর তার কর্ম শীঘ্রই দেখানো হবে, অতঃপর তাকে পূর্ণ-প্রতিদান দেয়া হবে।)) [সূরা আন-নজম,আয়াত-৩৬-৪১]
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেনঃ
[سورة الأعلى، الآيات:16-19]
অর্থঃ ((বস্ততঃ তোমরা পার্থিব জীবনকে অগ্রাধিকার দাও,অথচ পরকালের জীবন উতকৃষ্ট ও স্থায়ী। এটা লিখিত রয়েছে পূর্ববর্তী কিতাব সমূহে, ইবরাহীম ও মূসার কিতাব সমূহে।)) [সূরা আল-আ‘লা,আয়াত-১৬-১৯]
চতুর্থ রুকনঃ রাসূলদের প্রতি ঈমান ।
(১) রাসূল (আলাইহিমুস্ সালাম) দের প্রতি ঈমান আনাঃ ইহা ঈমানের রুকন সমূহের একটি রুকন, যার প্রতি ঈমান আনা ছাড়া কোন ব্যক্তির ঈমান পরিপূর্ণ হবেনা।
রাসূলগণের প্রতি ঈমান হলঃ এ কথার দৃঢ় বিশ্বাস করা যে, আল্লাহর অনেক রাসূল রয়েছে যাদেরকে তিনি তাঁর রিসালাত প্রচার করার জন্য নির্বাচন করেছেন। যারা তাঁদের অনুসরণ করবে, তারা হেদায়াত (সঠিক পথ) পাবে। আর যারা তাঁদের অনুসরণ করবেনা তারা পথভ্রষ্ট হবে। আল্লাহ তাদের নিকট যে কিতাব অবতীর্ণ করেছেন তা সুস্পষ্ট ভাবে প্রচার করেছেন। তারা অর্পিত আমানত আদায় করেছেন, এবং স্বীয় উম্মাতকে কল্যাণের উপদেশ দিয়েছেন। তাঁরা আল্লাহর পথে যথাযথ জিহাদ করেছেন। এবং যা সহ প্রেরিত হয়েছেন তার কোন অংশ পরিবর্তন, পরিবর্ধন ও গোপন না করে স্বজাতির উপর হুজ্জাত (পক্ষ-বিপক্ষের দলীল) কায়েম করেছেন। আল্লাহ যে সকল রাসূলদের নাম আমাদের কাছে উল্লেখ্য করেছেন, আর যাদের নাম উল্লেখ্য করেন নাই তাদের সকলের প্রতি আমরা ঈমান আনবো।
প্রত্যেক রাসূলই তাঁর পূর্ববতর্ী রাসূল আগমনের সুসংবাদ দিতেন, এবং পরবর্তী রাসূল পূর্ববতী রাসূলের সত্যায়ন করতেন।
আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ
سورة البقرة، الآية:136]]
অর্থঃ ((তোমরা বলঃ আমরা ঈমান এনেছি আল্লাহর উপর এবং যা অবতীর্ণ হয়েছে আমাদের প্রতি এবং যা অবতীর্ণ হয়েছে ইব্রাহীম, ইসমাঈল, ইসহাক, ইয়াকুব, এবং তদীয় বংশধরের প্রতি এবং মূসা, ঈসা ও অন্যান্য নবীকে তাঁদের পালন কর্তার পক্ষ হতে যা দান করা হয়েছে, তৎসমূদয়ের উপর। আমরা তাঁদের মধ্যে পার্থক্য করিনা। আর আমরা তাঁরই আনুগত্যকারী।))
[সূরা আল-বাক্বারা,আয়াত-১৩৬]
আর যে ব্যক্তি কোন রাসূলকে মিথ্যা জানল, সে যেন অস্বীকার করল যা সত্য বলে বিশ্বাস করেছিল। এবং যে ব্যক্তি তাঁর (রাসূলের) অবাধ্য হলো, সে মূলত তাঁর অবাধ্য হলো যিনি তাকে আনুগত্যের আদেশ করেছেন। (অর্থাৎ, আল্লাহর)।
আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ
إِنَّ الَّذِينَ يَكْفُرُونَ بِاللّهِ وَرُسُلِهِ وَيُرِيدُونَ أَن يُفَرِّقُواْ بَيْنَ اللّهِ وَرُسُلِهِ وَيقُولُونَ نُؤْمِنُ بِبَعْضٍ وَنَكْفُرُ بِبَعْضٍ وَيُرِيدُونَ أَن يَتَّخِذُواْ بَيْنَ ذَلِكَ سَبِيلاً - أُوْلَـئِكَ هُمُ الْكَافِرُونَ حَقّاً وَأَعْتَدْنَا لِلْكَافِرِينَ عَذَاباً مُّهِيناً
[سورة النساء، الآيتان:150-151]
অর্থঃ ((যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলগণকে অস্বীকার করে তারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলগণের প্রতি বিশ্বাসে তারতম্য করতে চায় আর বলে যে, আমরা কতককে বিশ্বাস করি ও কতককে অস্বীকার করি এবং এরাই মধ্যবর্তী কোন পথ অবলম্বন করতে চায়। প্রকৃত পক্ষে এরাই সত্য অস্বীকারকারী। আর যারা সত্য অস্বীকার কারী তাদের জন্য তৈরী করে রেখেছি অপমান জনক শাস্তি।))
[সূরা আন-নিসা,আয়াত-১৫০-১৫১]
(২) নবুওয়াতের হাকীকতঃ
নবুওয়াত হলোঃ স্রষ্টা (আল্লাহ) ও সৃষ্টজীবের (বান্দার ) মাঝে তাঁর শরিয়াত প্রচারের মাধ্যম। আল্লাহ স্বীয় বান্দাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা নবুওয়াতের জন্য মনোনীত করেন এবং নবুওয়াত দিয়ে সম্মানিত করেন। এতে আল্লাহ্ ছাড়া কারো কোন প্রকার ইখতিয়ার নেই।
আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ
اللَّهُ يَصْطَفِي مِنَ الْمَلَائِكَةِ رُسُلاً وَمِنَ النَّاسِ إِنَّ اللَّهَ سَمِيعٌ بَصِيرٌ
[سورة الحج، الآية:75]
অর্থঃ ((আল্লাহ ফিরিশ্তা ও মানুষের মধ্য থেকে রাসূল মনোনীত করেন, নিশ্চয় আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা।))
[সূরা আল-হাজ্ব,আয়াত-৭৫]
নবুওয়াত (আল্লাহ কতৃর্ক) প্রদত্ত,কারো অর্জিত নয়, অধিক ইবাদাত বা আনুগত্যের মাধ্যমে পাওয়া যায় না। কোন নবীর ইচ্ছায় বা তাঁর চাওয়ার মাধ্যমে ও আসেনা। ইহা শুধু মাত্র মহান আল্লাহর নির্বাচন ও মনোনয়ন।
আল্লাহ্ তা'আলা বলেনঃ
اللَّهُ يَجْتَبِي إِلَيْهِ مَن يَشَاءُ وَيَهْدِي إِلَيْهِ مَن يُنِيبُ
[سورة الشورى، الآية:13]
অর্থঃ ((আল্লাহ যাকে ইচ্ছা মনোনীত করেন এবং যে তাঁর অভিমূখী হয়, তাকে পথ প্রদর্শন করেন।))
[সূরা আশ্-শূরা,আয়াত-১৩]
(৩) রাসূল প্রেরণের হিকমত বা রহস্যঃ
রাসূলগণের (আলাইহিমুস্ সালাম) প্রেরণের হিকমত বা রহস্য নিম্নরূপঃ
প্রথমতঃ বান্দাদেরকে বান্দার ইবাদাত করা হতে মুক্ত করে বান্দার প্রতিপালকের (আল্লাহর) ইবাদাতে নিয়ে যাওয়া এবং সৃষ্টিজীবের দাসত্বের বন্ধন থেকে মুক্ত করে স্বীয় প্রতিপালকের (আল্লাহর) স্বাধীন ইবাদাতের পথ দেখানো।
আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ
وَمَا أَرْسَلْنَاكَ إِلَّا رَحْمَةً لِّلْعَالَمِينَ
[سورة الأنبياء، الآية:107]
অর্থঃ ((আমি আপনাকে বিশ্ববাসীর জন্যে রহমত স্বরূপই প্রেরণ করেছি।))
[সূরা আল-আম্বিয়া, আয়াত-১০৭]
দ্বিতীয়তঃ যে উদ্দেশ্যে আল্লাহ সৃষ্টিজীব সৃষ্টি করেছেন, সে উদ্দেশ্যের সাথে (মানুষকে) পরিচয় করা। সে উদ্দেশ্য হলো তাঁর একত্ববাদ বিশ্বাস ও ইবাদাত করা। ইহা এক মাত্র রাসূলগণের মাধ্যমে জানা যায়। যাদেরকে আল্লাহ তাঁর সৃষ্টজীব হতে মনোনয়ন করেছেন এবং সকলের উপর প্রাধান্য দিয়েছেন।
আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ
وَلَقَدْ بَعَثْنَا فِي كُلِّ أُمَّةٍ رَّسُولاً أَنِ اعْبُدُواْ اللّهَ وَاجْتَنِبُواْ الطَّاغُوتَ
[سورة النحل، الآية:36]
অর্থঃ ((আমি প্রত্যেক উম্মাতের মধ্যেই রাসূল প্রেরণ করেছি এই মর্মে যে, তোমরা আল্লাহর ইবাদাত কর এবং তাগূত (আল্লাহ ব্যতীত অন্যের ইবাদাত) থেকে নিরাপদ থাক।))
[সূরা আন-নহল,আয়াত-৩৬]
তৃতীয়তঃ রাসূলগণ প্রেরণের মাধ্যমে মানুষের উপর হুজ্জাত (পক্ষ-বিপক্ষের দলীল) প্রতিষ্ঠিত করা।
আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ
رُّسُلاً مُّبَشِّرِينَ وَمُنذِرِينَ لِئَلاَّ يَكُونَ لِلنَّاسِ عَلَى اللّهِ حُجَّةٌ بَعْدَ الرُّسُلِ وَكَانَ اللّهُ عَزِيزاً حَكِيماً
[سورة النساء، الآية:165]
অর্থঃ ((সুসংবাদদাতা ও ভীতি-প্রদর্শনকারী রাসূলগণকে প্রেরণ করেছি, যাতে রাসূলগণের পরে আল্লাহর প্রতি অপবাদ আরোপ করার মত কোন অবকাশ মানুষের জন্য না থাকে, আল্লাহ পরাক্রমশীল, প্রজ্ঞাময়।))
[সূরা আন-নিসা,আয়াত-১৬৫]
চতুর্থতঃ কিছু অদৃশ্যের বিষয় বর্ণনা করা, যা মানুষ তাদের জ্ঞান দ্বারা উপলদ্ধী করতে পারেনা। যেমন-আল্লাহর নাম সমূহ ও তাঁর গুনসমূহ এবং ফিরিশ্তাদের ও শেষ দিবস সম্পর্কে জানা ইত্যাদি।
পঞ্চমতঃ যাতে তাঁরা (রাসূলরা) অনুসরণীয় উত্তম আদর্শ হয় কেননা আল্লাহ তাঁদেরকে উত্তম চরিত্রে পূর্ণ করেছেন। এবং তাঁদেরকে সংশয় ও প্রবৃত্তির অনুসরণ হতে মুক্ত রেখেছেন।
আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ
[سورة الأنعام، الآية:90]
অর্থঃ ((তারা এমন ছিলেন, যাদেরকে আল্লাহ পথ-প্রদর্শন করে ছিলেন, অতএব আপনিও তাদের পথ অনুসরণ করুন।))
[সূরা আল-আনআম,আয়াত-৯০]
তিনি আরো বলেনঃ
لَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِيهِمْ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ
[سورة الممتحنة، الآية:6]
অর্থঃ ((তোমাদের জন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মধ্যে উত্তম আদর্শ-রয়েছে।))
[সূরা আল-আযহাব, আয়াত-২১]
ষষ্ঠতঃ আত্মশুদ্ধি ও পবিত্র করণ এবং আত্ম বিনষ্টকারী হতে সর্তক-সাবধান করা।
আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ
هُوَ الَّذِي بَعَثَ فِي الْأُمِّيِّينَ رَسُولاً مِّنْهُمْ يَتْلُو عَلَيْهِمْ آيَاتِهِ وَيُزَكِّيهِمْ وَيُعَلِّمُهُمُ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ
[سورة الجمعة، الآية:2]
অর্থঃ ((তিনি নিরক্ষরদের মধ্য থেকে একজন রাসূল প্রেরণ করেছেন, যিনি তাদের কাছে পাঠকরেন তাঁর আয়াত সমূহ, তাদেরকে পবিত্র করেন এবং শিক্ষাদেন কিতাব ও হিকমত।))
[সূরা আল-জুমু'আহ, আয়াত-২]
রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ
إنما بعثت لأتمم مكارم الأخلاق
[رواه أحمد، والحاكم]
অর্থঃ ((আমি উত্তম আদর্শ পরিপূর্ণ করার জন্যেই প্রেরিত হয়েছি।))
[আহমাদ ও হাকেম]
(৪) রাসূলগণের (আলাইহিমুস্ সালাম) দায়িত্ব সমূহঃ
রাসূলগণের ( আলাইহিমুস্ সালাম) অনেক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব রয়েছে, তা নিম্নে বর্ণিত হলঃ
(ক) শরীয়াত প্রচার করা, মানুষকে এক আল্লাহর ইবাদাত করতে এবং তিনি ব্যতীত অন্যের ইবাদাত হতে মুক্ত হওয়ার আহ্বান করা।
আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ
الَّذِينَ يُبَلِّغُونَ رِسَالَاتِ اللَّهِ وَيَخْشَوْنَهُ وَلَا يَخْشَوْنَ أَحَداً إِلَّا اللَّهَ وَكَفَى بِاللَّهِ حَسِيباً
[سورة الأحزاب، الآية:39]
অর্থঃ ((তাঁরা (নবীগণ) আল্লাহর রিসালাত প্রচার করতেন ও তাঁকে ভয় করতেন। তাঁরা আল্লাহ ব্যতীত অন্য কাউকে ভয় করতেন না। হিসাব গ্রহণের জন্য আল্লাহই যথেষ্ট।)) [সূরা আল-আহ্যাব,আয়াত-৩৯]
(খ) দ্বীনের অবতীর্ণ বিধান বর্ণনা করা।
আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ
وَأَنزَلْنَا إِلَيْكَ الذِّكْرَ لِتُبَيِّنَ لِلنَّاسِ مَا نُزِّلَ إِلَيْهِمْ وَلَعَلَّهُمْ يَتَفَكَّرُونَ
[سورة النحل، الآية:44]
অর্থঃ ((আপনার কাছে আমি উপদেশ ভান্ডার (কুরআন) অবতীর্ণ করেছি। যাতে আপনি লোকদের সামনে ঐ সব বিষয় বিবৃত করেন, যে গুলো তাদের প্রতি অবতীর্ণ করা হয়েছে, যাতে তারা চিন্তা ভাবনা করে।)) [সূরা আন-নাহাল,আয়াত-৪৪]
(গ) উম্মাতকে কল্যাণের পথ প্রদর্শণ ও অকল্যাণ হতে সতর্ক সাবধান করা, এবং তাদেরকে পূণ্যের সুসংবাদ ও তাদেরকে শাস্তির ভীতি-প্রদর্শন করা।
আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ
رُّسُلاً مُّبَشِّرِينَ وَمُنذِرِينَ
[سورة النساء، الآية:165]
অর্থঃ ((সুসংবাদ্দাতা ও ভীতি-প্রদর্শনকারী রাসূলগণকে প্রেরণ করেছি। [সূরা আন-নিসা,আয়াত-১৬৫]
(ঘ) মানুষকে কথায় ও কাজে সুন্দর চরিত্র ও উত্তম আদর্শবান করে তুলা।
(ঙ) আল্লাহর শরীয়াত বান্দাদের মাঝে প্রতিষ্ঠা ও বাস্তবায়ণ করা।
(চ) রাসূলগণের (আলাইহিস্ সালাম) স্বীয় উম্মাতের বিপক্ষে শেষ দিবসে এ স্বাক্ষ্য দেওয়া যে তাঁরা তাদের নিকট স্পষ্ট ভাবে দ্বীনের দাওয়াত পৌঁছায়েছেন।
আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ
فَكَيْفَ إِذَا جِئْنَا مِن كُلِّ أمَّةٍ بِشَهِيدٍ وَجِئْنَا بِكَ عَلَى هَـؤُلاء شَهِيداً
[سورة النساء، الآية:41]
অর্থঃ ((আর তখন কি অবস্থা দাঁড়াবে, যখন আমি প্রতিটি উম্মাতের মধ্য থেকে সাক্ষী উপস্থাপন করব এবং আপনাকে তাদের উপর সাক্ষী উপস্থাপন করব।)) [সূরা আন-নিসা,আয়াত,৪১]
(৫) ইসলাম সকল নবীদের ধর্মঃ ইসলাম সকল নবী ও রাসূলগণের ধর্ম।
আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ
إِنَّ الدِّينَ عِندَ اللّهِ الإِسْلاَمُ
[سورة آل عمران، الآية:19]
অর্থঃ ((নিঃসন্দেহে আল্লাহর নিকট গ্রহনযোগ্য দ্বীন বা ধর্ম একমাত্র ইসলাম।)) [সূরা-আলে-ইমরান,আয়াত-১৯]
তাঁরা সকলেই এক আল্লাহর ইবাদাত করার দিকে, এবং আল্লাহ ছাড়া অন্যের ইবাদাত বর্জন করার আহবান জানাতেন। যদি ও তাদের শরীয়াত ও বিধি-বিধান ভিন্ন রকম ছিল, কিন্তু তাঁরা সকলেই মূলনীতীতে একমত ছিলন, তা হলো তাওহীদ বা আল্লাহর একত্ববাদ।
নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ
الأنبياء إخوة لعلات
[رواه البخاري]
অর্থঃ ((নবীরা (আলাইহিমুস্ সালাম) একে অপরে বৈমাত্রেয় ভাই ছিলেন।)) [বুখারী]
(৬) রাসূলগণ মানুষ তাঁরা গায়েব জানেন নাঃ
ইলমে গায়েব জানা উলুহীয়াতের (আল্লাহর) বৈশিষ্ট, নবীগণের গুণ নয়। কারণ তাঁরা অন্যান্য মানুষের মত মানুষ। তাঁরা পানাহার করেন, বৈবাহিকসূত্রে আবদ্ধ হন, নিদ্রা যান, অসুস্থ হন ও ক্লান্ত হন।
আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ
وَما أَرْسَلْنَا قَبْلَكَ مِنَ الْمُرْسَلِينَ إِلَّا إِنَّهُمْ لَيَأْكُلُونَ الطَّعَامَ وَيَمْشُونَ فِي الْأَسْوَاقِ
[سورة الفرقان، الآية:20]
অর্থঃ ((আপনার পূর্বে যত রাসূল প্রেরণ করেছি, তাঁরা সবাই খাদ্য গ্রহণ করত এবং হাটে বাজারে চলা ফেরা করত।)) [সূরা আল-ফুরকান,আয়াত-২০]
আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ
وَلَقَدْ أَرْسَلْنَا رُسُلاً مِّن قَبْلِكَ وَجَعَلْنَا لَهُمْ أَزْوَاجاً وَذُرِّيَّةً
[سورة الرعد، الآية:38]
অর্থঃ ((আপনার পূর্বে আমি অনেক রাসূল প্রেরণ করেছি, এবং তাঁদেরকে স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততি দিয়েছি।)) [সূরা আর-রা'দ,আয়াত-৩৮]
তাঁদেরকে ও চিন্তা, দুঃখ আনন্দ ও কর্ম প্রেরণা স্পর্শ করে যেমন-সাধারণ মানুষকে পেয়ে থাকে। কিন্তু আল্লাহ তাঁদেরকে তাঁর দ্বীন প্রচার করার জন্য মনোনয়ন করেছেন। আল্লাহ তাঁদেরকে (রাসূলদেরকে ইলমে গায়েব হতে) যা অবগত করান তা ব্যতীত কোন ইলমে গায়েব জানেন না।
আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ
[سورة الجن، الآيتان 26-27]
অর্থঃ ((তিনি অদৃশ্ব্যের জ্ঞানী, পরন্ত তিনি অদৃশ্যের বিষয় কারও কাছে প্রকাশ করেন না। তাঁর মনোনীত রাসূল ব্যতীত। তখন তিনি তার অগ্রেও পশ্চাতে প্রহরী নিযুক্ত করেন।)) [সূরা আল-জি্বন,আয়াত-২৬-২৭]
(৭) রাসূলগণ মা'সূম বা নিস্পাপঃ
আল্লাহ তা'আলা তাঁর রিসালাত প্রদান ও প্রচার করার জন্য তাঁর সৃষ্টজীব হতে উত্তম জাতীকে নির্বাচন করেছেন।
যারা সৃষ্টিগত ও চরিত্র গত দিক হতে পরিপূর্ণ, আল্লাহ তাঁদেরকে কবীরাহ্ গুনাহ হতে নিরাপদে রেখেছেন। সকল ক্রটি হতে তাঁদেরকে মুক্ত করেছেন। যাতে তাঁরা আল্লাহর ওয়াহী স্বীয় উম্মাতের নিকট পৌঁছাতে সক্ষম হন। আল্লাহর পক্ষ হতে তাঁর (আল্লাহর) রিসালাত প্রচারের ব্যাপারে যে সংবাদ দিয়েছেন, তাতে তাঁরা যে মা'সূম তা সর্বজন সিদ্ধ।
আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ
يَا أَيُّهَا الرَّسُولُ بَلِّغْ مَا أُنزِلَ إِلَيْكَ مِن رَّبِّكَ وَإِن لَّمْ تَفْعَلْ فَمَا بَلَّغْتَ رِسَالَتَهُ وَاللّهُ يَعْصِمُكَ مِنَ النَّاسِ
[سورة المائدة، الآية:67]
অর্থঃ ((হে রাসূল, পৌঁছে দিন আপনার প্রতি পালকের পক্ষ থেকে আপনার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে। আর যদি আপনি এরূপ না করেন,তবে আপনি তাঁর রিসালাত কিছুই পৌঁছালেন না, আল্লাহ আপনাকে মানুষের কাছ থেকে নিরাপদে রাখবেন।)) [সূরা আল-মায়িদাহ,৬৭]
তিনি আরো বলেনঃ
الَّذِينَ يُبَلِّغُونَ رِسَالَاتِ اللَّهِ وَيَخْشَوْنَهُ وَلَا يَخْشَوْنَ أَحَداً إِلَّا اللَّهَ
[سورة الأحزاب، الآية:39]
অর্থঃ ((তাঁরা (নবীগণ) আল্লাহর রিসালাত প্রচার করতেন ও তাঁকে ভয় করতেন,তাঁরা আল্লাহ ব্যতীত অন্য কাউকে ভয় করতেন না।)) [সূরা আল-আহ্যাব,আয়াত-৩৯]
তিনি আরো বলেনঃ
لِيَعْلَمَ أَن قَدْ أَبْلَغُوا رِسَالَاتِ رَبِّهِمْ وَأَحَاطَ بِمَا لَدَيْهِمْ وَأَحْصَى كُلَّ شَيْءٍ عَدَداً
[سورة الجن، الآية:28]
অর্থঃ ((যাতে আল্লাহ তা'আলা জেনে নেন যে, রাসূলগণ তাঁদের পালনকর্তার রিসালাত পৌঁছিয়েছেন কিনা। রাসূলগণের কাছে যা আছে, তা তাঁর জ্ঞান-গোচর। তিনি সব কিছুর সংখ্যার হিসাব রাখেন।)) [সূরা আল-জিন,আয়াত-২৮]
এবং যখন তাঁদের কারো পক্ষ হতে এমন কোন ছোট পাপ কর্ম প্রকাশিত হয় যা তাবলীগের (দ্বীন প্রচারের) সাথে সম্পৃক্ত নয়। নিশ্চয় তখন তা তাঁদের নিকট বর্ণনা করা হবে। আল্লাহর কাছে তাওবাহ্ ও তাঁর দিকে ধাবমান হওয়ার সাথে সাথেই মনে হবে যেন (এই পাপ) তাঁদের কাছ থেকে প্রকাশ পায় নাই, এবং এর বিনমিয়ে তাঁরা তাঁদের পূর্বের মর্যাদার চেয়ে আরো উচ্চ মর্যাদা লাভ করবেন। ইহা এ জন্য যে, আল্লাহ তাঁর নবীদেরকে (আলাইহিমুস্ সালাম) পূর্ণ সৎ চরিত্রে ও ভাল গুণে বিশেষিত করেছেন। এবং তাঁদের মান মর্যাদা সুউচ্চ অবস্থান ক্ষুন্ন করে এমন সকল জিনিস হতে তাঁদেরকে আল্লাহ পবিত্র রেখেছেন।
(৮) নবী ও রাসূলগণের সংখ্যা ও তাঁদের মধ্যে যারা উত্তমঃ
রাসূলগণের সংখ্যা তিন শত দশের কিছু বেশী প্রমাণিত হয়েছে। নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে যখন রাসূলগণের সংখ্যা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়; তখন তিনি বলেনঃ
ثلاثمائة وخمس عشرة جماً وغفيراً
[رواه الحاكم]
অর্থঃ ((তিনশত পনের জনের বিরাট এক দল।)) [হাকিম]
আর নবীদের সংখ্যা এর চেয়ে অনেক বেশী। আল্লাহ তাঁদের কারোও কথা তাঁর কিতাবে আমাদের জন্য বর্ণনা করেছেন, আর কারোও কথা বর্ণনা করেন নাই। আল্লাহ তাঁর কিতাবে পঁচিশ জন নবী ও রাসূলের নাম উল্লেখ করেছেন।
আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ
وَرُسُلاً قَدْ قَصَصْنَاهُمْ عَلَيْكَ مِن قَبْلُ وَرُسُلاً لَّمْ نَقْصُصْهُمْ عَلَيْكَ
[سورة النساء، الآية:164]
অর্থঃ ((আর এমন কতক রাসূল প্রেরণ করেছি যাদের ইতিবৃত্ত আমি আপনাকে বর্ণনা করেছি ইতি পূর্বে, এবং এমন কতক রাসূল প্রেরণ করেছি যাদের বৃত্তান্ত আপনাকে বর্ণনা করিনি।)) [সূরা আন-নিসা,আয়াত১৬৪]
তিনি আরো বলেনঃ
وَتِلْكَ حُجَّتُنَا آتَيْنَاهَا إِبْرَاهِيمَ عَلَى قَوْمِهِ نَرْفَعُ دَرَجَاتٍ مَّن نَّشَاء إِنَّ رَبَّكَ حَكِيمٌ عَلِيمٌ - وَوَهَبْنَا لَهُ إِسْحَاقَ وَيَعْقُوبَ كُلاًّ هَدَيْنَا وَنُوحاً هَدَيْنَا مِن قَبْلُ وَمِن ذُرِّيَّتِهِ دَاوُودَ وَسُلَيْمَانَ وَأَيُّوبَ وَيُوسُفَ وَمُوسَى وَهَارُونَ وَكَذَلِكَ نَجْزِي الْمُحْسِنِينَ - وَزَكَرِيَّا وَيَحْيَى وَعِيسَى وَإِلْيَاسَ كُلٌّ مِّنَ الصَّالِحِينَ - وَإِسْمَاعِيلَ وَالْيَسَعَ وَيُونُسَ وَلُوطاً وَكُلاًّ فضَّلْنَا عَلَى الْعَالَمِينَ - وَمِنْ آبَائِهِمْ وَذُرِّيَّاتِهِمْ وَإِخْوَانِهِمْ وَاجْتَبَيْنَاهُمْ وَهَدَيْنَاهُمْ إِلَى صِرَاطٍ مُّسْتَقِيمٍ
[سورة الأنعام، الآيات:83-87]
অর্থঃ ((এটি ছিল আমার যুক্তি, যা আমি ইব্রাহীমকে তাঁর সম্প্রদায়ের বিপক্ষে প্রদান করেছিলাম। আমি যাকে ইচ্ছা মর্যাদায় সমুন্নত করি। আপনার পালনকর্তা প্রজ্ঞাময়, মহাজ্ঞানী। আমি তাঁকে দান করেছি ইসহাক ও ইয়াকুব। প্রত্যেককেই আমি পথ-প্রদর্শন করেছি এবং পূর্বে আমি নূহকে পথ-প্রদর্শন করেছি-তাঁর সন্তানদের মধ্যে দাউদ, সোলায়মান,আইউব, ইউসুফ, মূসা ও হারুনকে। এমনি ভাবে আমি সৎকর্মীদের প্রতিদান দিয়ে থাকি। আরও যাকারিয়া, ইয়াহ্ইয়া, ঈসা এবং ইলিয়াসকে। তাঁরা সবাই পূণ্যবানদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। এবং ইসমাঈল, ঈসা, ইউনুস, লূতকে প্রত্যেককেই আমি সারা বিশ্বের উপর গৌরবান্বিত করেছি। আরো তাঁদের কিছু সংখ্যক পিতৃপুরুষ,সন্তান-সন্ততি ও ভ্রাতাদেরকে, আমি তাঁদেরকে মনোনীত করেছি এবং সরল পথ প্রদর্শন করেছি।)) [সূরা আল-আনআম, আয়াত ৮৩-৮৭]
আল্লাহ নবীদের কাউকে অন্যদের উপর শ্রেষ্টত্ব দান করেছেন।
আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ
وَلَقَدْ فَضَّلْنَا بَعْضَ النَّبِيِّينَ عَلَى بَعْضٍ
[سورة الإسراء، الآية:55]
অর্থঃ ((আমি নবীদেরকে কতককে কতকের উপর শ্রেষ্টত্ব দান করেছি।)) [সূরা আল-ইসরা,আয়াত-৫৫]
এবং আল্লাহ রাসূলদের কাউকে কারো উপর শ্রেষ্টত্ব দান করেছেন।
আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ
تِلْكَ الرُّسُلُ فَضَّلْنَا بَعْضَهُمْ عَلَى بَعْضٍ
[سورة البقرة، الآية:253]
অর্থঃ ((এ রাসূলগণ আমি তাদের কাউকে কারো উপর মর্যাদা দান করেছি।)) [সূরা আল-বাক্বারাহ্, আয়াত-২৫৩]
রাসূলগণের মধ্যে যারা উলুলআয্ম (উচ্চ অভিলাষী) তাঁরা সর্ব উত্তম। তাঁরা হলেন নূহ, ইব্রাহীম, মূসা, ঈসা, ও আমাদের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম।
আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ
[سورة الأحقاف، الآية:35]
অর্থঃ ((অতএব আপনি ধৈর্য ধরুন, যেমন উলুল আয্ম (উচ্চ অভিলাষী) রাসূলগণ ধৈর্য ধরেছেন।)) [সূরা আল-আহক্বাফ, আয়াত-৩৫]
তিনি আরো বলেনঃ
وَإِذْ أَخَذْنَا مِنَ النَّبِيِّينَ مِيثَاقَهُمْ وَمِنكَ وَمِن نُّوحٍ وَإِبْرَاهِيمَ وَمُوسَى وَعِيسَى ابْنِ مَرْيَمَ وَأَخَذْنَا مِنْهُم مِّيثَاقاً غَلِيظاً
[سورة الأحزاب، الآية:7]
অর্থঃ ((যখন আমি নবীগণের কাছ থেকে, আপনার কাছ থেকে এবং নূহ, ইব্রাহীম মূসা ও মারিইয়ামের পুত্র ঈসার কাছ থেকে অঙ্গীকার নিলাম, আরো অঙ্গীকার নিলাম তাদের কাছ থেকে দৃঢ় অঙ্গীকার।)) [সূরা আল-আহযাব,আয়াত-৭]
মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাসূলদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ও সর্ব শেষ নবী, মুত্তাকীনদের ইমাম, আদম সন্তানের সরদার। নবীরা যখন একত্রিত হন তখন তিনি তাঁদের ইমাম। যখন তাঁরা কোন জায়গাহ হতে প্রতিনিধি দল হিসাবে আগমণ করেন তখন তিনি তাঁদের প্রবক্তা হন। তিনি মাকামে মাহমুদের (প্রশংসিত স্থানের) মালিক, যে স্থানকে নিয়ে পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সকলেই ঈর্ষা করবে।
অবতরণ স্থান, হাউজ ও হামদ-বা প্রশংসার ঝান্ডার মালিক। শেষ দিবসে সমস্ত সৃষ্টজীবের সুপারিশকারী, জান্নাতের ওয়াসীলা নামক স্থান ও মর্যাদার মালিক। আল্লাহ তাকে তাঁর দ্বীনের সর্বোত্তম শরীয়াত বিধি-বিধান দিয়ে প্রেরণ করেছেন। এবং তাঁর উম্মাতকে সর্ব উত্তম উম্মত রূপে এই পৃথিবীতে মানুষের কল্যানের জন্য পাঠানো হয়েছে। নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর উম্মাতের জন্য বহু মর্যাদা ও উত্তম বৈশিষ্ট দিয়েছেন। যা তাদের পূর্ববর্তীদের হতে সতন্ত্র। সৃষ্টির দিক দিয়ে তাঁরা সর্ব শেষ উম্মত আর পুনরুত্থানে তাঁরা সর্ব প্রথম উম্মত।
রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ
فضلت على الأنبياء بست
[رواه مسلم]
অর্থঃ ((আমি ছয়টি বৈশিষ্টে সকল নবীদের উপর প্রাধান্য পেয়েছি।)) [মুসলিম]
নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেনঃ
أنا سيد ولد آدم يوم القيامة وبيدي لواء الحمد ولا فخر. وما من نبي يومئذ آدم فمن سواه إلا تحت لوائي يوم القيامة
[رواه أحمد والترمذي]
অর্থঃ ((আমি কিয়ামত দিবসে আদম সন্তানের সর্দার, আমারই হাতে হামদের পতাকা থাকবে। ইহা কোন গর্ভের বিষয় নয়। কিয়ামত দিবসে আদম (আলাইহিস্ সালাম) ছাড়া সকলেই আমার পতাকার অধিনে থাকবে।)) [তিরমিযী ও আহমাদ]
মর্যাদার দিক দিয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পরে যিনি তিনি হলেন ইব্রাহীম খালীলুর রহমান (আলাইহিস্ সালাম) সুতরাং (আল্লাহর) দু'বন্ধু-মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও ইব্রাহীম (আলাইহিস্ সালাম) উলুল আযমদের সর্ব শ্রেষ্ট। অতঃপর তিন জন (নূহ, মূসা ও ঈসা) সর্ব শ্রেষ্ট (অন্য সব নবীদের চেয়ে)।
(৯) নবীদের (আলাইহিমুস্ সালাম) মু'জিযাহঃ
আল্লাহ্ তাঁর রাসূলদের সহযোগিতা করেছেন বড় বড় নিদর্শন ও উজ্জ্বল মু'জিযার (অলৌকিক শক্তির) দ্বারা। যাতে হুজ্জাত প্রতিষ্ঠিত হয় অথবা প্রয়োজন সাধন হয়। যেমন- কুরআন কারীম, চন্দ্র বিদীর্ণ হওয়া, লাঠি ভয়ানক সাঁপে পরিণত হওয়া, ইত্যাদি। অতঃপর মু'জিযাহ্ (স্বাভাবিক নীতি ভঙ্গকারী-অলৌকিক শক্তি) নবুওয়াতের সত্যতা প্রমাণের দালীল,আর কারামাহ্ (অলীদের জন্যও অলৌকিক শক্তি) নবুওয়াতের সত্যতা সাক্ষ্যকারী প্রমান স্বরূপ।
আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ
لَقَدْ أَرْسَلْنَا رُسُلَنَا بِالْبَيِّنَاتِ
[سورة الحديد، الآية:25]
অর্থঃ ((আমি আমার রাসূলদেরকে সুস্পষ্ট নিদর্শণাবলী সহ প্রেরণ করেছি।)) [সূরা আল-হাদীদ, আয়াত-২৫]
নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ
ما من نيي من الأنبياء إلا وقد أوتي من الآيات ما آمن على مثله البشر وإنما كان الذي أوتيته وحياً أوحاه إلي فأرجو أن أكون أكثرهم تابعاً يوم القيامة
[متفق عليه]
অর্থঃ ((প্রত্যেক নবীই নিদর্শন বা মু'জিযাহ প্রাপ্ত হয়েছেন কিন্তু মু'জিযার তুলনায় মানুষ ঈমান আনে নাই। আর আমি যা প্রাপ্ত হয়েছি তা সেই ওয়াহী যা আমার নিকট (আল্লাহ) অবতীর্ণ করেছেন। ফলে আমি আশাবাদী যে, কিয়ামত দিবসে তাঁদের চেয়ে আমার অনুসারী বেশী হবে।)) [বুখারী ও মুসলিম ]
(১০) আমাদের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নবুওয়াতের প্রতি ঈমানঃ
তাঁর সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম নবুওয়াতের প্রতি ঈমান আনা-ঈমানের মূলনীতি সমূহের একটি অন্যতম মূলনীতি। এর উপর ঈমান আনা ছাড়া কারোও ঈমান পরিপূর্ণ হবে না।
আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ
وَمَن لَّمْ يُؤْمِن بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ فَإِنَّا أَعْتَدْنَا لِلْكَافِرِينَ سَعِيراً
[سورة الفتح، الآية:13]
অর্থঃ ((যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আনে না, আমি সেসব কাফিরের জন্য জ্বলন্ত অগ্নি প্রস্তুত রেখেছি।)) [সূরা আল-ফাত্হ, আয়াত-১৩]
নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ
أمرت أن أقاتل الناس حتى يشهدوا أن لا إلا إله إلا الله وإني رسول الله
[رواه مسلم]
অর্থঃ ((আমি আদেশ প্রাপ্ত হয়েছি যে,মানুষের সাথে যুদ্ধ করব যতক্ষন না তারা-আল্লাহ ছাড়া সত্যিকার কোন মা'বুদ নেই, এবং আমি আল্লাহর রাসূল-এ কথার সাক্ষ্য দিবে।)) [মুসলিম]
নিম্নে বর্ণিত বিষয়ের উপর ঈমান আনার মাধ্যমে নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি ঈমান আনা পরিপূর্ণ হবে।
প্রথমতঃ আমাদের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করা বা জানা। তিনি হলেন মুহাম্মাদ বিন আব্দুল্লাহ বিন আব্দুল মুত্তালিব বিন হাশিম, হাশিম কুরাইশ বংশ, আর কুরাইশ আরব বংশ আর আরব ইসমাঈল বিন ইব্রাহীম আল-খলীল এর বংশধর, তাঁর ও আমাদের নবীর উপর সর্ব উত্তম দরুদ ও সালাম বর্ষিত হউক। তাঁর তেষট্টি বছর বয়স হয়েছিল। নবুয়াতের পূর্বে চল্লিশ বৎসর, নবী ও রাসূল হওয়ার পরে তেইশ বৎসর।
দ্বিতীয়তঃ নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে বিষয়ে সংবাদ দিয়েছেন সে বিষয়ে তাঁকে বিশ্বাস করা, যে বিষয় তিনি আদেশ করেছেন, তার অনুসরণ করা। যে বিষয় হতে তিনি নিষেধ করেছেন ও সতর্ক করেছেন তা হতে বিরত থাকা। তিনি যে বিধান দান করেছেন সে অনুযায়ী আল্লাহর ইবাদাত করা।
তৃতীয়তঃ তিনি জিন-ইনসান সকলের নিকট প্রেরিত আল্লাহর রাসূল এ কথার বিশ্বাস রাখা। সবাইকে তাঁর সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম অনুসরণ করতে হবে।
আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ
قُلْ يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنِّي رَسُولُ اللّهِ إِلَيْكُمْ جَمِيعاً
[سورة الأعراف، الآية:158]
অর্থঃ ((আপনি বলুন হে মানব সকল ! আমি তোমাদের সকলের প্রতি আল্লাহর রাসূল হিসেবে প্রেরিত হয়েছি।)) [সূরা আল-আ'রাফ, আয়াত-১৫৮]
চতুর্থতঃ তাঁর রিসালাতের প্রতি ঈমান আনা, তিনি সর্বশ্রেষ্ট ও শেষ নবী।
আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ
وَلَكِن رَّسُولَ اللَّهِ وَخَاتَمَ النَّبِيِّينَ
[سورة الأحزاب، الآية:40]
অর্থঃ ((বরং তিনি আল্লাহর রাসূল ও শেষ নবী।)) [সূরা আল-আহযাব, আয়াত-৪১]
এবং তিনি আল্লাহর খলীল ও আদম সন্তানের সর্দার বা নেতা। তিনি মহান শাফায়াতের মালিক এবং জান্নাতে সুউচ্চ অয়াসীলা নামক স্থান তাঁরই জন্য। তিনি হউযে কাউসারের মালিক। তাঁর উম্মাত সর্বশ্রেষ্ট বা উত্তম।
আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ
كُنتُمْ خَيْرَ أُمَّةٍ أُخْرِجَتْ لِلنَّاسِ
[سورة آل عمران، الآية:110]
অর্থঃ ((তোমরাই শ্রেষ্ট উম্মত যা মানুষের (কল্যাণের)জন্য সৃজিত হয়েছে।)) [সূরা আলে-ইমরান, আয়াত-১১০]
অধিকাংশ জান্নাতবাসী হবে তাঁরই উম্মত এবং তাঁর রিসালাত পূর্ববর্তী সকল রিসালাতের রহিত কারী।
পঞ্চমতঃ আল্লাহ তাঁকে মহান মু'জিযাহ্ ও সুস্পষ্ট নিদর্শন দ্বারা সহযোগিতা করেছেন। তা হল মহাগ্রন্থ আল-কুরআন আল্লাহর বাণী যা পরিবর্তন ও পরিবর্ধন হতে সংরক্ষীত।
আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ
قُل لَّئِنِ اجْتَمَعَتِ الإِنسُ وَالْجِنُّ عَلَى أَن يَأْتُواْ بِمِثْلِ هَـذَا الْقُرْآنِ لاَ يَأْتُونَ بِمِثْلِهِ وَلَوْ كَانَ بَعْضُهُمْ لِبَعْضٍ ظَهِيراً
[سورة الإسراء، الآية:88]
অর্থঃ ((বলুনঃ যদি মানব ও জি্বন এই কুরআনের অনুরূপ রচনা করে আনয়নের জন্য একত্রিত হয়, এবং তারা পরস্পরের সাহায্যকারী হয়,তবুও তারা এর অনুরূপ রচনা করে আনতে পারবে না।)) [সূরা আল-ইসরা, আয়াত-৮৮]
তিনি আরো বলেনঃ
إِنَّا نَحْنُ نَزَّلْنَا الذِّكْرَ وَإِنَّا لَهُ لَحَافِظُونَ
[سورة الحجر، الآية:9]
অর্থঃ ((আমি স্বয়ং এ উপদেশ গ্রন্থ অবতরণ করেছি এবং আমি নিজেই এর সংরক্ষক।)) [সূরা আল-হিজর, আয়াত-৯]
ষষ্টতঃ নিশ্চয় রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম রিসালাত প্রচার করেছেন, আমানত আদায় করেছেন, উম্মাতদেরকে উপদেশ দিয়েছেন। সকল প্রকার কল্যাণের সন্ধান দিয়েছেন, ও তার প্রতি উৎসাহিত করেছেন। সকল প্রকার অকল্যাণ হতে তাঁর উম্মাতকে নিষেধ করেছেন ও তা হতে তাদেরকে সাবধান করেছেন।
আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ
لَقَدْ جَاءكُمْ رَسُولٌ مِّنْ أَنفُسِكُمْ عَزِيزٌ عَلَيْهِ مَا عَنِتُّمْ حَرِيصٌ عَلَيْكُم بِالْمُؤْمِنِينَ رَؤُوفٌ رَّحِيمٌ
[سورة التوبة، الآية:128]
অর্থঃ ((তোমাদের কাছে এসেছে তোমাদের মধ্য থেকেই একজন রাসূল। তোমাদের দুঃখ-কষ্ট তাঁর পক্ষে-দুঃসহ। তিনি তোমাদের মঙ্গলকামী,মু'মিনদের প্রতি স্নেহশীল,দয়াময়।)) [সূরা আত্-তাওবাহ, আয়াত-১২৮]
নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ
ما من نبي بعثه الله في أمة قبلي إلا كان حقاً عليه أن يدل أمته على خير ما يعلمه لهم ويحذر أمته من شرما يعلمه لهم
[رواه مسلم]
অর্থঃ ((আমার উম্মাতের পূর্বে আল্লাহ যত নবী (আলাইহিস্ সালাম) প্রেরণ করেছেন, তাদের উপর দায়িত্ব ছিল নিজ উম্মাতের জন্য যা কল্যানকর তাদেরকে তার সন্ধান দেওয়া। আর যা কল্যাণকর নয় তা হতে তাদেরকে সতর্ক করা।)) [মুসলিম শরীফ]
সপ্তমতঃ তাঁকে (নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ভাল বাসা, ও তাঁর ভালোবাসাকে নিজের জানের ও সকল সৃষ্টিজীবের ভালবাসার উপর প্রাধান্য দেওয়া। তাঁকে সম্মান করা, মর্যাদা দেয়া, ইহ্তেরাম করা, ও তাঁর আনুগত্য করা। নিশ্চয় ইহা সে হক্ব বা অধিকার যা আল্লাহ তাঁর কিতাবে তাঁর নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্য সাবস্ত করেছেন। কারণ তাঁর ভালবাসা প্রকৃত পক্ষে আল্লাহর ভালবাসা, এবং তাঁর আনুগত্য প্রকৃত পক্ষে আল্লাহর আনুগত্য।
আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ
قُلْ إِن كُنتُمْ تُحِبُّونَ اللّهَ فَاتَّبِعُونِي يُحْبِبْكُمُ اللّهُ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوبَكُمْ وَاللّهُ غَفُورٌ رَّحِيمٌ
[سورة آل عمران، الآية:31]
অর্থঃ ((বলুন, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালবাস, তাহলে আমাকে অনুসরণ কর,যাতে আল্লাহও তোমাদিগকে ভাল বাসেন এবং তোমাদিগকে তোমাদের পাপ মার্জনা করে দেন। আর আল্লাহ হলেন ক্ষমাকারী দয়ালু।)) [সূরা আলে-ইমরান, আয়াত-৩১]
নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ
لا يؤمن أحدكم حتى أكون أحب إليه من ولده ووالده والناس أجمعين
[متفق عليه]
অর্থঃ ((তোমাদের কেহই ততক্ষন পর্যন্ত মু'মিন হতে পারেনা যতক্ষন পর্যন্ত আমি তাদের নিকট তাদের ছেলে সন্তান, পিতামাতা, ও সকল মানুষের চেয়ে প্রিয়তম না হবো।)) [বুখারী ও মুসলিম]
অষ্টমতঃ নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর দরুদ ও সালাম বেশী বেশী পাঠ করা। কারণ কৃপণ ঐ ব্যক্তি যার নিকট নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নাম উল্লেখ্য হওয়ার পরও তাঁর উপর দরুদ পাঠ করেনা।
আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ
إِنَّ اللَّهَ وَمَلَائِكَتَهُ يُصَلُّونَ عَلَى النَّبِيِّ يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا صَلُّوا عَلَيْهِ وَسَلِّمُوا تَسْلِيماً
[سورة الأحزاب، الآية:56]
অর্থঃ ((আল্লাহ ও তাঁর ফিরিশ্তাগণ নবীর প্রতি রহমত বর্ষণ করেন। হে মু'মিনগণ ! তোমরা নবীর উপর দরুদ ও সালাম পাঠ কর।)) [সূরা আল-আহযাব, আয়াত-৫৬]
নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ
من صلى عليّ واحدة صلى الله عليه بها عشرا
[رواه مسلم]
অর্থঃ ((যে, ব্যক্তি আমার উপর একবার দরুদ পাঠ করবে আল্লাহ তার উপর এর বিনিময়ে দশবার রহম করবেন।)) [মুসলিম শরীফ]
নিম্নের স্থান গুলোতে তাঁর (নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) উপর দরুদ পাঠ করা অত্যান্ত গুরুত্ব পূর্ণ। নামাযের তাশাহুদে, বিতির নামাযের দোআয় কুনুতে, জানাযার নামাযে, জুম'আর খুৎবাতে। আযানের পর, মাসজিদে প্রবেশ ও মাসজিদ হতে বের হওয়ার সময়। দোআর সময় এবং যখন (নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর নাম উল্লেখ্য করা হয়, আরো অন্যান্য স্থানে।
নবমতঃ নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সকল নবী (আলাইহিমুস্ সালাম) তাঁদের প্রভুর নিকট জীবিত। শহীদদের কবরের জীবন হতে তাঁদের (আলাইহিমুস্ সালাম) কবরের জীবন আরো বেশী পরিপূর্ণ ও উচ্চ। তবে তাঁদের কবরের জীবন, পৃথিবীর জীবনের মত নয়। তা এমন জীবন যার বিবরণ সম্পর্কে আমরা জানি না, সে জীবন তাঁদের হতে মৃত্যুর নামও দূর করেনা।
নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ
إن الله حرم على الأرض أن تأكل أجساد الأنبياء
[رواه أبو داود والنسائي]
অর্থঃ ((আল্লাহ জমিনের জন্য নবীদের লাশ ভক্ষণ কে হারাম করে দিয়েছেন।)) [আবু দাউদ ও নাসায়ী]
নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেনঃ
ما من مسلم يسلم عليّ إلا رد الله عليّ روحي كي أرد عليه السلام
[رواه أبو داود]
অর্থঃ ((যখনই কোন মুসলমান আমাকে সালাম দেয় তখনই আল্লাহ আমার রুহ্ বা আত্মা আমার নিকট ফিরিয়ে দেন তার সালামের উত্তর দেওয়ার জন্য।)) [আবু দাউদ]
দশমতঃ তাঁর জীবদ্দশায় তাঁর সামনে উচু আওয়াজ না করা, অনুরুপ তাঁর কবরে তাঁর উপর সালাম দেওয়ার সময় উচু আওয়াজ না করা নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এহতেরামের অন্তর্ভুক্ত।
আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَرْفَعُوا أَصْوَاتَكُمْ فَوْقَ صَوْتِ النَّبِيِّ وَلَا تَجْهَرُوا لَهُ بِالْقَوْلِ كَجَهْرِ بَعْضِكُمْ لِبَعْضٍ أَن تَحْبَطَ أَعْمَالُكُمْ وَأَنتُمْ لَا تَشْعُرُونَ
[سورة الحجرات، الآية:2]
অর্থঃ ((হে মু'মিনগণ ! তোমরা নবীর কন্ঠস্বরের উপর তোমাদের কন্ঠস্বর-উঁচু করনা,এবং তোমরা একে অপরের সাথে যেরূপ উঁচু স্বরে কথা বল, তাঁর সাথে সেরূপ উঁচু স্বরে কথা বলোনা। এতে তোমাদের কর্ম নিষ্ফল হয়ে যাবে এবং তোমরা টেরও পাবেনা।)) [সূরা আল-হুজরাত, আয়াত-২]
দাফনের পর তাঁকে সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্মান করা, তাঁর জীবিত অবস্থায় সম্মান করার ন্যায়। অতঃপর তাঁকে আমরা সম্মান করবো যে ভাবে সাহাবায়ে কেরাম তাঁকে সম্মান করতেন। কারণ তাঁরা (রাযিয়াল্লাহু আনহুম) সকল মানুষের চেয়ে তাঁর সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম অধিক অনুসরণকারী ছিলেন। তাঁরা (রাযিয়াল্লাহু আনহুম) তাঁর সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিরুধিতা করা হতে এবং দ্বীনের অন্তর্ভুক্ত নয় এমন কিছু দ্বীনের মাঝে সংযোজন করা হতে অধিক দূরে থাকতেন।
একাদশতমঃ তাঁর সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবাদেরকে, পরিবার-পরিজনকে ও স্ত্রীদেরকে ভাল বাসা ও তাঁদের সকলের সাথে বন্ধুত্ব রাখা। তাঁদের মর্যাদাহানী হতে বা তাঁদেরকে গালী দেওয়া হতে ও তাঁদের চরিত্রে কোন প্রকার আঘাত হানা হতে সাবধান থাকা। কারণ আল্লাহ তাঁদের প্রতি রাজি হয়েছেন, ও তাঁদেরকে তাঁর নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম সহচর হিসাবে নির্বাচন করে নিয়েছেন। এই উম্মাতের উপর তাদের সাথে বন্ধুত্ব রাখা ওয়াজিব করে দিয়েছেন।
আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ
وَالسَّابِقُونَ الأَوَّلُونَ مِنَ الْمُهَاجِرِينَ وَالأَنصَارِ وَالَّذِينَ اتَّبَعُوهُم بِإِحْسَانٍ رَّضِيَ اللّهُ عَنْهُمْ وَرَضُواْ عَنْهُ
[سورة التوبة، الآية:100]
অর্থঃ ((আর যারা সর্ব প্রথম হিজরত কারী ও আনছারদের মাঝে পুরাতন, এবং যারা তাদের অনুসরণ করেছে, আল্লাহ সে সমস্ত লোকদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন, এবং তারাও তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছে।)) [সূরা আত্-তাওবাহ, আয়াত-১০০]
নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ
لا تسبوا أصحابي فوالذي نفسي بيده لو أنفق أحدكم مثل أحد ذهبا ما بلغ مد أحدهم ولا نصيفه
[رواه البخاري]
অর্থঃ ((তোমরা আমার সাহাবাদেরকে গালী দিওনা, সেই সত্যার শপথ যার হাতে আমার প্রাণ, তোমাদের কেউ যদি উহুদ পর্বতের সমপরিমান (আল্লাহর পথে) ব্যায় করে, তবুও তাদের এ বিশাল ব্যায় সাহাবাদের আল্লাহর রাস্তায় এক মুদ্ (প্রায় ৭০০গ্রাম) বা অর্ধ মুদ্ ব্যায় করার সমান হবে না।)) [বুখারী]
সুতরাং পরবর্তী লোকদের উচিত সাহাবাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা এবং নিজেদের মনে তাঁদের ব্যাপারে যাতে কোন প্রকার কুটিলতা না থাকে এ জন্য আল্লাহর কাছে দোআ করা।
আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ
وَالَّذِينَ جَاؤُوا مِن بَعْدِهِمْ يَقُولُونَ رَبَّنَا اغْفِرْ لَنَا وَلِإِخْوَانِنَا الَّذِينَ سَبَقُونَا بِالْإِيمَانِ وَلَا تَجْعَلْ فِي قُلُوبِنَا غِلّاً لِّلَّذِينَ آمَنُوا رَبَّنَا إِنَّكَ رَؤُوفٌ رَّحِيمٌ
[سورة الحشر، الآية:10]
অর্থঃ ((যারা তাঁদের পরে আগমন করেছে তাঁরা বলেঃ হে আমাদের পালনকর্তা! আমাদেরকে এবং ঈমানে অগ্রণী আমাদের ভাইদেরকে ক্ষমা কর এবং ঈমানদারদের বিরুদ্ধে আমাদের অন্তরে কোন বিদ্বেষ রেখনা। হে আমাদের পালনকর্তা, আপনি দয়ালু পরম করুণাময়।)) [সূরা আল-হাশর, আয়াত-১০]
দ্বাদশতমঃ তাঁর সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম ব্যাপারে অতিরঞ্জিত করা হতে বিরত থাকা। কারণ অতিরঞ্জিত করা তাঁকে সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বড় কষ্ট দেওয়ার অন্তর্ভুক্ত। কারণ নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর উম্মাতকে তাঁর ব্যাপারে অতিরঞ্জিত করা হতে ও তাঁর প্রশংসা করার সময় সীমা লংঘন করা হতে সতর্ক করেছেন। আল্লাহ তা'আলা তাঁকে যে মর্যাদা দিয়েছেন, তাঁকে তার চেয়ে মর্যাদা দেয়া হতে সতর্ক করেছেন। কারণ ইহা একমাত্র আল্লাহর জন্য খাস।
নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ
إنما أنا عبد فقولوا عبد الله ورسوله، لا أحب أن تر فعوني فوق منزلتي
অর্থঃ ((আমি একজন বান্দা বা দাস, সুতরাং তোমরা আমাকে আল্লাহর বান্দা ও আল্লাহর রাসূল বল। তোমরা আমাকে আমার মর্যাদার চেয়ে উচু করনা এটা আমি ভাল বাসিনা।))
নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেনঃ
لا تطروني كما أطرت النصارى ابن مريم
[رواه البخاري]
অর্থঃ ((তোমরা আমার ব্যাপারে অতিরঞ্জিত করনা যেমন খৃষ্টানরা ঈসা বিন মারইয়াম (আলাইহিস্ সালাম) এর ব্যাপারে অতিরঞ্জিত করেছিল।)) [বুখারী]
তাঁকে (নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আহ্বান করা, ও তাঁর কাছে ফরিয়াদ করা। তাঁর কবরের পাশ দিয়ে ত্বাওয়াফ করা, তাঁর নামে নজর মানা, পশু জবেহ্ করা বৈধ নয়। এ সকল কাজ আল্লাহর সাথে শরীক করার নামান্তর, অথচ আল্লাহ অন্যের ইবাদাত করা হতে নিষেধ করেছেন। অনুরূপ ভাবে তাঁকে ইহতেরাম না করায় তাঁর প্রতি অনিহা প্রকাশ পায়। তাঁর মান হানি করা,তাঁকে তুচ্ছ জানা তাঁর ব্যাপারে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করা, ইসলাম হতে মুর্তাদ বা বের হয়ে যাওয়া ও আল্লাহর সাথে কুফুরী করা।
আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ
لاَ تَعْتَذِرُواْ قَدْ كَفَرْتُم بَعْدَ إِيمَانِكُمْ - قُلْ أَبِاللّهِ وَآيَاتِهِ وَرَسُولِهِ كُنتُمْ تَسْتَهْزِئُونَ
[سورة التوبة، الآية: 66 ، 67]
অর্থঃ ((আপনি বলুনঃ তোমরা কি আল্লাহর সাথে, তাঁর হুকুম-আহকামের সাথে এবং তাঁর রাসূলের সাথে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করেছিলে? ছলনা করোনা, তোমরা যে কাফের হয়ে গেছ ঈমান প্রকাশ করার পর।)) [সূরা আত্-তাওবাহ্, আয়াত-৬৫-৬৬]
রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে সত্যিকার ভালবাসা তাঁর নীতির ও সুন্নাতের অনুসরণ ও অনুকরণ, তাঁর সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম পথের বিরোধিতা না করার দিকে প্রেরণা যোগায়।
আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ
قُلْ إِن كُنتُمْ تُحِبُّونَ اللّهَ فَاتَّبِعُونِي يُحْبِبْكُمُ اللّهُ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوبَكُمْ وَاللّهُ غَفُورٌ رَّحِيمٌ
[سورة آل عمران، الآية:31]
অর্থঃ ((বলুন, যদি তোমরা আল্লাহকে ভাল বাস, তাহলে আমাকে অনুসরণ কর যাতে আল্লাহও তোমাদিগকে ভাল বাসেন এবং তোমাদিগকে তোমাদের পাপ মার্জনা করে দেন। আর আল্লাহ হলেন ক্ষমাকারী দয়ালু।)) [সূরা আলে-ইমরান, আয়াত-৩১]
রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সম্মানের ব্যাপারে বেশী-কমে সীমালংঘন না করা ওয়াজিব। তাই তাঁকে উলুহীয়াতের (মা'বুদের) গুণে গুনাম্বিত করা যাবে না। তাঁর মর্যাদা সম্মান ও ভালবাসার অধিকার কমানোও যাবেনা, যার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল তার শরীয়াতের অনুসরণ করা, তার নীতির উপর চলা ও তাঁর সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম অনুকরণ করা।
ত্রয়দশতমঃ নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি ঈমান আনা পূর্ণাঙ্গ হবে তাঁকে সত্যায়িত ও তিনি যে শরীয়াত নিয়ে এসেছেন তার উপর আমল করার মাধ্যমে, এটা তাঁর সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম আনুগত্য করার অর্থ। তাঁর আনুগত্য বস্তুত আল্লাহরই আনুগত্য, আর তাঁর সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম নাফারমানী বস্তুত আল্লাহরই নাফারমানী। আর তাঁকে পূর্ণভাবে বিশ্বাস ও অনুসরণের মাধ্যমেই তাঁর প্রতি পরিপূর্ণভাবে ঈমান আনা হয়ে থাকে।
َ