পশ্চাদিক থেকে কুরাইশদের হামলা
খালিদ বিন অলীদ তখন কাফির সৈন্যদের একজন অধিনায়ক। সে এই সুবর্ণ সুযোগ কে পুরোপুরি কাজে লাগানো এবং পাহাড়ের পেছন দিক দিয়ে ঘুরে গিয়ে সুড়ঙ্গ -পথে মুসলমানদের ওপর হামলা করলো।হযরত আবদুল্লাহ এবং তার ক’জন সঙ্গী শেষ পর্যন্ত সুড়ঙ্গ পথের প্রহরায় ছিলেন,তাদের অধিকাংশই এই হামলার মুকাবেলা করলেন।কিন্তু কাফের দের এই প্রচণ্ড হামলাকে তারা প্রতিহত করতে পারলেন না। তারা শহীদ হয়ে গেলেন। অতঃপর দুশমনরা একে একে মুসলমানদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লো। ওদিকে যে সব পলায়নপর কাফির দূর থেকে এই দৃশ্য দেখছিল , তারাও আবার ফিরে এলো।এবার দুদিক দিয়ে মুসলমানদের ওপর হামলা শুরু হলো।এই অভাবিত পরিস্থিতিতে মুসলমানদের মধ্যে এমন আতঙ্কের সঞ্চার হলো যে, যুদ্ধের মোড়ই সম্পূর্ণ ঘুরে গেলো। মুসলমানেরা ছত্রভঙ্গ হয়ে এদিক ওদিক পালাতে লাগলো। এমনকি আতঙ্কের মধ্যেই গুজব ছড়িয়ে পড়লো যে, নবী করীম(সা:) শহীদ হয়ে গেছেন। এই খবরে সাহাবীদের মধ্যে বাকী উদ্যমটুকুও নষ্ট হয়ে গেলো এবং অনেকে সাহস পর্যন্ত হারিয়ে ফেললো।
আল্লাহর সাহায্য এবং বিজয়
এ সময় দশ-বারো জন সাহাবী নবী করীম(সা:) কে ঘিরে রেখেছিলেন। তিনি অবশ্য আহত হয়েছিলেন। সাহাবীরা তাকে একটি পাহাড়ের ওপর নিয়ে এলেন। অতঃপর অন্য মুসলমানরা ও জানতে পারলেন যে, নবী করীম (সা:) সুস্থ ও নিরাপদ আছেন।তাই তারা আবার দলে দলে তার কাছে একত্রিত হতে লাগলেন। কিন্তু এ সময় কি কারণে যেন কাফিরদের মনোযোগ হঠাৎ অন্যদিকে নিবদ্ধ হলো এবং নিজেদের বিজয়কে পূর্ণ পরিণতি পর্যন্ত না পৌঁছিয়েই তারা ময়দান ছেড়ে চলে গেল।
তারা যখন কিছু্টা দূরে চলে গেল, তখন তাদের সম্ভিত ফিরে এলো। তারা পরস্পরকে বললোঃ এ আমরা কি ভুল করলাম ! মুসলমানদের সম্পূর্ণ খতম করে দেবার দুর্লভ সুযোগটিকে নষ্ট করে এমনিই চলে এলাম! এরপর তারা এক জায়গায় থেকে পরস্পর বলাবলি করলোঃ এবার তাহলে মদিনার ওপর আর একবার হামলা করা উচিত । কিন্তু শেষ পর্যন- আর তাদের সাহস হলো না। তারা মক্কায় ফিরে গেলো।
এদিকে নবী করীম (সা:) চিন্তিত ছিলেন যে,শত্রুরা না জানি আবার ফিরে এসে আবার হামলা করে বসে । তাই তিনি সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে মুসলমানদের কে দুশমনদের পশ্চাদ্ধাবন করার নির্দেশ দিলেন। এটা ছিল অত্যন্ত নাজুক সময় । কিন্তু যারা সাচ্চা মুমিন ছিল , তারা আল্লাহর ওপর ভরসা করে পুনরায় জান কুরবান করার জন্যে তৈরি হয়ে গেল । নবী করীম(সা:) হামরা-উল-আসাদ নামক স্থান পর্যন্ত দুশমনদের পশ্চাদ্ধাবন করলেন। এ জায়গাটি মদিনা থেকে ৮ মাইল দূরে অবস্থিত । এখানে পৌঁছে জানা গেল যে, কুরাইশরা মক্কায় ফিরে গেছে। তাই তিনিও মুসলমানদের নিয়ে মদিনায় ফিরে এলেন।
এ যুদ্ধে ৭০ জন সাহাবী শহীদ হলেন। এদের মধ্যে বেশির ভাগই ছিলেন আনসার । তাই মদিনায় ঘরে ঘরে শোকের বন্যা নেমে এলো। এ সময় হযরত (সা:) মুসলমানদের শোক প্রকাশের নিয়মাবলী সম্পর্কে অবহিত করলেন।তিনি বললেনঃ ‘মাতম করা এবং ছাতি পিটিয়ে কান্না-কাটি করা মুসলমানদের পক্ষে মর্যাদা হানিকর ।
বিপর্যয়ের কারণ এবং মুসলমানদের প্রশিক্ষণ
ওহুদের যুদ্ধে মুসলমানদের যে বিপর্যয় ঘটে , তার পেছনে মুনাফিকদের চালবাজি ও কলা কৌশলের প্রভাব ছিল সন্দেহ নেই; কিন্তু সেই সঙ্গে মুসলমানদের নিজস্ব দুর্বলতাও কম দায়ী ছিল না । অবশ্য ইসলামী আন্দোলন যে ধরণের মেজাজ তৈরি করে এবং তার কর্মীদের যে রুপ প্রশিক্ষণ দিতে ইচ্ছুক , তার জন্যে তখনও পুরোপুরি সুযোগ পাওয়া যায় নি। আল্লাহর পথে জীবন উৎসর্গ করার এ ছিল দ্বিতীয় সুযোগ মাত্র । তাই এ ক্ষেত্রে স্বভাবতই কিছু কিছু দুর্বলতা প্রকাশ পেলো। যেমনঃ সম্পদের মোহে কর্তব্য অবহেলা করা , নেতার হুকুম অমান্য করা ,দুশমনকে পুরোপুরি খতম করার আগে গনীমতের মালের দিকে মনোযোগ দেয়া ইত্যাদি। এ কারণেই যুদ্ধ শেষ হবার পর আল্লাহ তাআলা যুদ্ধকালীন পরিস্থিতি অত্যন্ত বিস্তৃত ভাবে পর্যালোচনা করলেন। এ পর্যালোচনা ইসলামের দৃষ্টিতে মুসলমানদের মধ্যে যা কিছু দোষ-ত্রুটি বাকী ছিল , তার প্রতিটি দিককেই তিনি স্পষ্টভাবে তুলে ধরলেন এবং সে সম্পর্কে প্রয়োজনীয় নির্দেশাবলীও প্রদান করলেন।সূরা আল ইমরানের শেষাংশে এই নির্দেশাবলীর কথা বিবৃত হয়েছে। এখানে তার কতিপয় অংশ উদ্ধৃত করা যাচ্ছে। এ থেকে ইসলামী আন্দোলনে যুদ্ধের স্থান কোথায় এবং ইসলামের দৃষ্টিতে যুদ্ধ সংক্রান্ত ঘটনাবলীর ওপর কিভাবে আলোকপাত করতে হয়, তা আর একবার উপলব্ধি করা যাবে।
খোদা-নির্ভরতা
মুসলমানরা যখন যুদ্ধের জন্যে যাত্রা করেছিল ,তখন তাদের সংখ্যা ছিল এক হাজারের মতো। পক্ষান্তরে দুশমনদের সংখ্যা ছিল তিন হাজার। এরপরও কিছুদূর গিয়ে তিন শ’ মুনাফিক আলাদা হয়ে গেল। এবার বাকী থাকলো শুধু সাত শ’ মুসলমান। তদুপরি যুদ্ধের সামান্তপত্র ছিল কম এবং এক তৃতীয়াংশ সৈন্যও গেল বিচ্ছিন্ন হয়ে। এই নাজুক পরিস্থিতিতে কিছু লোকের মনোবল ভেঙ্গে পড়তে লাগলো । এ সময় শুধু আল্লাহর প্রতি ঈমান এবং তার সাহায্যের ওপর ভরসাই মুসলমানদেরকে দুশমনদের মুকাবেলায় এগিয়ে নিয়ে চললো। এ উপলক্ষে হযরত (সা:) মুসলমানদের কে যে সান্ত্বনা প্রদান করেন, আল্লাহ তা নিম্নোক্ত ভাষায় উল্লেখ করেছেনঃ “স্মরণ করো, যখ,তোমাদের মধ্যকার দুটি দল নির্বুদ্ধিতা প্রদর্শনের জন্যে প্রস্তুত হয়েছিল, অথচ আল্লাহ তাদের সাহায্যের জন্যে বর্তমান ছিলেন। আর মুমিনদের তো আল্লাহর ওপরই ভরসা করা উচিত । এর আগে বদরের যুদ্ধে আল্লাহ তোমাদের শোকরী থেকে তোমাদের বেঁচে থাকা উচিত। আশা করা যায়, এবার তোমরা কৃতজ্ঞ হবে। স্মরণ করো, যখন তুমি (হে নবী) মুমিনদের কে বলেছিলঃ তোমাদের জন্যে এটা কি যথেষ্ট নয় যে, আল্লাহ তিন হাজার ফেরেশতা প্রেরণ করে তোমাদের সাহায্য করবেন। তোমরা যাতে খুশি হও এবং তোমাদের হৃদয় নিশ্চিন্ত হয়, সে জন্যেই আল্লাহ তোমাদের কাছে একথা প্রকাশ করলেন। বিজয় বা সাহায্য যা কিছুই হোক , আল্লাহর কাছ থেকেই আসে । তিনি অত্যন্ত শক্তিমান, বিচক্ষণ । (আলে ইমরান আয়াতঃ১২২-১২৬)
এখানে মুসলমানদের কে শেষ বারের মতো বুঝিয়ে দেয়া হলো যে, প্রকৃতপক্ষে বস্তগত শক্তির ওপর ভরসা করা মুসলমানদের কাজ নয়। তাদের শক্তির আসল উৎস হচ্ছে আল্লাহর প্রতি ঈমান এবং তার সাহায্যের ওপর ভরসা।
ধন-সম্পদের মোহ
ওহুদে মুসলমানদের বিপর্যয়ের আর একটি বড় কারণ হলো এই যে, মুসলমানরা যুদ্ধের ঠিক মাঝখানেই সম্পদের মোহে আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছিল এবং দুশমনকে সম্পূর্ণরূপে নির্মূল করার আগেই সম্পদের দিকে আকৃষ্ট হয়েছিল । এমনকি , যারা সুড়ঙ্গ-পথের প্রহরায় নিযুক্ত ছিল,তাদের মধ্যে পযর্ন্ত দুর্বলতা প্রকাশ পেল। এভাবে যুদ্ধের মোড় সম্পূর্ণ ঘুরে গেল। তাই আল্লাহ তাআলা মুসলমানদের হৃদয় থেকে ধনের মোহ দূরীভূত করার জন্যে আ সময়ই মোহ সৃষ্টির একটি বড় কারণকে নিশ্চিহ্ন করে দিলেন। অর্থাৎ এ সময় সূদকে হারাম ঘোষণা করা হলো। যারা সূদী কারবার করে , তাদের হৃদয়ে ধনের মোহ এমনি বদ্ধমূল হয়ে যায় যে, তা আর কোন মহৎ কাজের উপযোগী থাকে না।সূদের ফলেই এক শ্রেণীর মনে লালসা, কার্পণ্য , আত্মকেন্দ্রিকতা এবং ধনের মোহ সৃষ্টি হয়। আর এক শ্রেণীর মধ্যে জাগ্রত হয় হিংসা দ্বেষ ও ক্রোধ-বিক্ষোভ।
সাফল্যের চাবিকাঠি
যদি মনোবলকে সমুন্নত রাখার জন্যে কোন ক্রিয়াশীল শক্তি বর্তমান না থাকে , তাহলে পরাজয়ের পর তা হ্রাস পেতে থাকবেই । ওহুদে মুসলমানদের যে পরাজয় ঘটেছিল , তাতে কিছু লোকের মনোবল ভেঙ্গে পড়ার আশংকা ছিল। কিন্তু এ সময় মুসলমানদের কে এই বলে আশ্বাস দেয়া হলো যে, “ তোমাদের না নিরুৎসাহ হওয়া উচিত আর না দুঃখ প্রকাশ করা উচিত । তোমাদেরই হবে, যদি তোমরা খাঁটি মুমিন হও, ঈমানের ওপর অবিচল থাকো এবং তার দাবি সমূহ পূর্ণ করতে থাকো। তোমাদের কাজ শুধু এটুকুই ; এরপর তোমাদের সমুন্নত করা এবং দুঃখ ও দুশ্চিন্তা থেকে মুক্ত করার দায়িত্ব আল্লাহর । এরপর রইলো তোমাদের এই সাময়িক দুঃখ- ক্লেশ ও পরাজয়ের প্রশ্ন। এটা শুধু তোমাদেরই ব্যাপার নয়, তোমাদের বিরুদ্ধ দলের ওপরও এরকম দুঃখ-মুসিবত এসে থাকে । তারা যখন মিথ্যার ওপর দাঁড়িয়েও নিরুৎসাহিত হয়না, তখন তোমরা কেন সত্যের ওপর দাঁড়িয়ে চিন্তা-ভাবনা করো ?তোমরা তো জান্নাতের প্রত্যাশী । তোমরা কি মনে করো, এমনিই তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করবে ? অথচ তোমাদের ভেতর কে আল্লাহর পথে জীবন উৎসর্গ করেছে আর কে তার জন্যে প্রতিকূল অবস্থায়ও ধৈর্য অবলম্বন করতে ইচ্ছুক, আল্লাহ তা এখন পর্যন্ত যাচাই-ই করেননি।(আল -ইমরানঃআয়াত১৩৯-১৪২)
ইসলামী আন্দোলনের প্রাণবস্ত
পৃথিবীর যেকোন আন্দোলনেই তার প্রাণবস্ত কিংবা চালিকা-শক্তিরুপে একজন কেন্দ্রীয় ব্যক্তিত্ব বর্তমান থাকে। কিন্তু আদর্শবাদী আন্দোলনের উন্নতি বা স্থায়িত্ব কোন ব্যক্তিত্বের ওপর নির্ভরশীল নয়, বরং যে নীতি ও আদর্শের ভিত্তিতে এ আন্দোলন উত্থিত হয়, তার দৃঢ়তা ও সত্যতার ওপরই এর সবকিছু নির্ভর করে। ইসলামী আন্দোলনের জন্যে নবীদের ব্যক্তিত্ব কতোখানি গুরুত্বপূর্ণ , তা সহজেই অনুমেয়। কিন্তু তা স্বত্ত্বেও এটি একটি আদর্শবাদী আন্দোলন এবং এর উন্নতি ও স্থায়িত্ব সম্পূর্ণত ইসলামের উপস্থাপিত নীতিমালার ওপর নির্ভরশীল। এ কারণে মুসলমানদের এ কথা জানিয়ে দেয়া প্রয়োজন হলো যে, নবীর মহান ব্যক্তিত্ব তাদের ভেতর বর্তমান থাকলেই কেবল তারা আল্লাহর দ্বীনের ঝাণ্ডা সমুন্নত করবে এবং নবীর প্রত্যক্ষ নেতৃত্ব থেকে বঞ্চিত হলে অমনি তারা এ পথ ছেড়ে দিয়ে অন্য কোন পথ অবলম্বন করবে, এরুপ ধারণা যেনো তাদের মনের কোণেও ঠাঁই পায়। ইতঃপূর্বে ওহুদের ময়দানে যখন এই মর্মে গুজব প্রচারিত হলো যে, হযরত (সা:) শহীদ হয়ে গেছেন, তখন কিছু মুসলমানের মনোবল একেবারে ভেঙ্গে পড়েছিল। তারা ভেবেছিল : হযরতের ছায়াই যখন চলে গেল, তখন আর যুদ্ধ করে কি হবে! এই ভুল ধারণা দূর করার জন্যেই এই সময় মুসলমানদের বুঝিয়ে দেয়া হলোঃ “দেখো,মুহাম্মদ (সা:) একজন রাসূল বৈ কিছুই নন। তার আগেও অনেক রাসূল চলে গেছেন। এখন তিনি যদি মরে যান কিংবা নিহত হন, তাহলে তোমরা কি পশ্চাদপসরণ করবে ? মনে রেখো, যে ব্যক্তি পশ্চাদপসরণ করবে সে আল্লাহর কোনই ক্ষতি করবে না । পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি আল্লাহর কৃতজ্ঞ বান্দাহ হিসেবে জীবন যাপন করবে, তাকে তিনি পুরস্কৃত করবেন।”(আল ইমরানঃআয়াত১৪৪)
আরো বলা হলোঃ ‘তোমরা যে দ্বীনকে বুঝে-শুনে গ্রহণ করেছো, তার ওপর অবিচল থাকার এবং তাকে প্রতিষ্ঠিত করবার জন্যে তোমাদের মধ্যে হামেশা নবীর উপস্থিত মাত্র ।এর ওপর অবিচল থাকলে তোমরা নিজেরাই সুফল পাবে। এ দ্বীনের আসল শক্তি হচ্ছে এর উপস্থাপিত সত্যতা। এর সমুন্নতি না তোমাদের শক্তি -সামর্থের ওপর আর না কোনো বিশেষ ব্যক্তিত্বের ওপর নির্ভরশীল।’
দুর্বলতার উৎস-১
মানুষের সমস্ত দুর্বলতার উৎস হচ্ছে মৃত্যু-ভয়।তাই এ সময় মুসলমানদের স্মরণ করিয়ে দেয়া হলো যে, তোমাদের মৃত্যু-ভয়ে পলায়ন করা নিতান্তই অর্থহীন। কারণ মৃত্যুর জন্যে নির্ধারিত সময় না আসা পর্যন্ত কোন প্রাণীরই মৃত্যু হতে পারে না। অন্য কথায় , আল্লাহর নির্ধারিত সময়ের আগে না কেউ মরতে পারে আর না তারপর এক মুহূর্তও কেউ বেঁচে থাকতে পারে। অতএব, তোমাদের মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচবার চিন্তা করার প্রয়োজন নেই ; বরং জীবনের যেটুকু অবকাশ পাওয়া গেছে, তা কি দুনিয়াদারিতে ব্যয়িত হচ্ছে না আখিরাতের কাজে ,তা-ই শুধু চিন্তা করা উচিত। কারণ যে ব্যক্তি শুধু দুনিয়াদারির জন্যে তার শ্রম-মেহনত নিয়োজিত করে, তার যা কিছু প্রাপ্য তা দুনিয়ায়ই পেয়ে থাকে।আর যে ব্যক্তি আখিরাতের কল্যাণের জন্যে কাজ করে ,আল্লাহ তাকে আখিরাতেই প্রতিফল দান করবেন।কাজেই যারা আল্লাহর দ্বীন কবুল করার ,এর ওপর কায়েম থাকার এবং একে হারাম করবার চেষ্টা-সাধনার সুযোগ পেয়েছে, তাদের পক্ষে এই মহা মূল্যবান নিয়ামতটিরই কদর করা এবং এর জন্যেই নিজেদের সবকিছু নিয়োজিত করা উচিত । এর ফলাফল অবশ্যই তাদের পক্ষে কল্যাণপ্রদ হবে; আখিরাতের স্থায়ী সাফল্য তারা অর্জন করবে। আর এই নিয়ামতের যারা শোকর আদায় করবে, আল্লাহ তাদেরকে সর্বোত্তম নিয়ামত দ্বারা কৃতার্থ করবেন। তারা আপন মালিকের কাছ থেকে সর্বোত্তম পুরস্কারে ভূষিত হবে।
ওহুদের বিপর্যয়ের পর
আগেই বলা হয়েছে যে, আরবের দু-একটি গোত্র ছাড়া বাদবাকী সমস্ত গোত্রই এই নবোত্থিত ইসলামী আন্দোলনের বিরোধী ছিলো। কারণ, এ আন্দোলন তাদের পৈত্রিক ধর্ম ও রসম-রেওয়াজের ওপর প্রচণ্ডভাবে আঘাত হানছিলো। সেই সঙ্গে মানুষ নৈতিক দিক থেকে উন্নত হোক এবং জুয়া, ব্যভিচার, মদ্যপান, লুটতরাজ ইত্যাকার প্রচলিত দুষ্কৃতি পরিত্যাগ করুক, এ-ও ছিলো এ আন্দোলনের দাবি। তাই বদর যুদ্ধের আগে এই নয়া আন্দোলনকে ধ্বংস করার বিষয়ে অনেক গোত্রই চিন্তা-ভাবনা করছিলো। কিন্তু বদরে কুরাইরশরা শোচনীয়ভাবে পরাজিত হবার ফলে তারা কিছুটা হতোদ্যম হয়ে পড়লো এবং এর পরবর্তী কর্মপন্থা সম্পর্কে তাদের মধ্যে দ্বিধা-দ্বন্দ্ব দেখা দিলো। কিন্তু ওহুদের যুদ্ধের পর পুনরায় অবস্থার পরিবর্তন ঘটলো। এবার আরবের বহু গোত্রই ইসলামের বিরুদ্ধে মাথা তুলে দাঁড়ালো। এ ধরণের কয়েকটি গোত্রের ভূমিকা এখানে উল্লেখ করা যাচ্ছে।
বিভিন্ন গোত্রের বিশ্বাসঘাতকতা
১. চতুর্থ হিজরীর মুহাররম মাসে কাতান এলাকার জুফায়দ নামক একটি গোত্র মদীনা আক্রমণের পরিকল্পনা করলো। হযরত (স) এদের মুকাবিলার জন্যে একটি ক্ষুদ্র বাহিনী নিয়ে হযরত আবু সালামাকে প্রেরণ করলেন। শেষ পর্যন্ত আক্রমণকারীরা পালিয়ে গেলো।
২. এরপর ঐ মাসেই লেহইয়ান নামক কুহিস্থান আ‘রনার একটি গোত্র মদীনা আক্রমণের সিদ্ধান্ত করলো। তাদের মুকাবিলার জন্যে হযরত আব্দুল্লাহ বিন্ আনীস (রা)-কে প্রেরণ করা হলো। অবশেষে তাদের সর্দার সুফিয়ান নিহত হলো এবং আক্রমণকারীরা ফিরে গেলো।
৩. একই বছর সফর মাসে কালাব গোত্রের প্রধান আবু বারাআ হযরত (স)-এর খেদমতে হাযির হয়ে বললোঃ ‘আমার সঙ্গে কতিপয় লোক পাঠিয়ে দিন; আমার কওমের লোকেরা ইসলামের দাওয়াত শুনতে চায়।’ হযরত (স) তার সঙ্গে সত্তর জন সাহাবী পাঠিয়ে দিলেন। এদের অনেকেই ছিলেন সুফ্ফার৪২ সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। কিন্তু ঐ ২ গোত্রের শাসনকর্তা আ'মের বিন্ তুফাইল এদেরকে ঘেরাও করে হত্যা করলো। এই ঘটনায় হযরত (স) যারপরনাই মনোকষ্ট পেলেন। তিনি সমগ্র মাসব্যাপী ফজরের নামাযের পর ঐ জালিমদের জন্য বদদোয়া করলেন। এই সত্তর জন সাহাবীর মধ্যে মাত্র হযরত আ’মর বিন উমাইয়া নামক একজন সাহাবীকে আ'মের এই বলে মুক্তি দিলো যে, ‘আমার মা একটি গোলাম মুক্ত করার মান্নত করেছিলো; যা এই মান্নত হিসেবে তোকেই আমি মুক্তি দিলাম।’
হযরত আম’র বিন উমাইয়া যখন ফিরে আসছিলেন তখন আ'মের গোত্রের দুজন লোকের সঙ্গে তাঁর পথে দেখা হলো। তিনি তাদেরকে হত্যা করলেন। মনে মনে ভাবলেন, আ'মের গোত্রের বিশ্বাসঘাতকতার কিছু প্রতিশোধ তো গ্রহণ করা হলো। কিন্তু হযরত (স) এ ঘটনার কথা জানতে পেরে খুব অসন্তোষ প্রকাশ করলেন। কারণ এই গোত্রের লোকদের তিনি ইতোমধ্যে ক্ষমা করে দিয়েছিলেন এবং এ ঘটনা ছিল সেই প্রতিশ্রুতির খেলাফ। তাই হযরত (স) এ দু’জন লোকের হত্যার ক্ষতিপূরণ দানের কথা ঘোষণা করলেন।
এভাবে আরো দু’টি গোত্র বিশ্বসঘাতকতা করলো। হযরত (স) তাদের কথা অনুযায়ী দ্বীনী শিক্ষা বিস্তারের জন্যে দশজন সাহাবীকে প্রেরণ করলেন। কিন্তু ঐ জালিমরা বিশ্বাসঘাতকতা করলো। এর মধ্যে সাতজন সাহাবী কাফিরদের সঙ্গে লড়াই করে শহীদ হলেন। বাকী তিনজন বন্দী হলেন। এদের মধ্যে হযরত খুবাইব (র) এবং হযরত জায়েদ (রা) ও ছিলেন। দুশমনরা এদেরকে মক্কায় নিয়ে বিক্রি করে দিলো। হযরত খুবাইব (সা) ওহুদের যুদ্ধে হারেস বিন আ'মের নামক এক ব্যক্তিকে হত্য করেছিলেন। হারেসের পুত্রগণ পিতৃহত্যার বদলা নেবার জন্যে হযরত খুবাইব (রা)-কে কিনে নিলো। কয়েকদিন পর কাফিরদের হাতে তিনি শহীদ হলেন। অনুরূপভাবে সুফিয়ান বিন্ উমাইয়া নামক এক এক ব্যক্তি হযরত জায়ে (রা)-কে নিয়ে হত্যা করলো।
এভাবে আরবের বিভিন্ন গোত্রের সঙ্গে মুসলমানদের নিয়মিত সংঘর্ষ চলছিলো। এতে বিরুদ্ধবাদীরাই একতরফাভাবে নির্মমতার পরিচয় দিচ্ছিলো আর মুসলমানরা তাদের উৎপীড়ন সয়ে যাচ্ছিলো। এই সময় ইহুদীদের সঙ্গেও সম্পর্কের অবনতি মুসলমানদের জন্যে যথেষ্ট দুশ্চি্ন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ালো।
ইহুদী আলেম ও পীরদের বিরোধিতা
পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে যে, মদীনায় আসার পর হযরত (স) ইহুদী গোত্রগুলোর সঙ্গে নানারূপ চুক্তি সম্পাদন করেছিলেন এবং তাদের জান-মালের কোনো ক্ষতি না করার ও তাদেরকে সর্বপ্রকার ধর্মীয় স্বাধীনতা প্রদানের নিশ্চয়তা দিয়েছিলেন। তথাপি ইসলামী আন্দোলনের ক্রমবর্ধমান উন্নতিতে ইহুদী আলেম ও পীরগণ বিশেষভাবে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত চিলো। এর অবশ্য কতকগুলো কারণও ছিলো। নিম্নে তার কয়েকটি কারণ উল্লেখ করা যাচ্ছে।
১. ধর্মীয় দিক থেকে এ পর্যন্ত ইহুদীদের এক প্রকার অহমিকা ছিলো। খোদাপরস্তি ও দ্বীনদারির দিক দিয়ে সবাই তাদেরকে শ্রদ্ধার পাত্র বলে গণ্য করতো। কিন্তু ইসলামী আন্দোলনের প্রসারের ফলে তাদের এই ভ্রান্ত ধার্মিকতা ও পেশাদারী খোদাপরস্তির মুখোশ খসে পড়লো। সত্যিকার ধার্মিকতা কাকে বলে এবং যথার্থ খোদাপরস্তির তাৎপর্য কি, হযরত (স) -এর বক্তব্য শুনে লোকেরা তা জানতে পরলো। ফলে ইহুদী আলেম ও পীরদের ‘ধর্ম ব্যবসায়ে’ মন্দাভাব দেখা দিলো।
২. কুরআন শরীফে ইহুদি জনগোষ্ঠী, বিশেষভাবে তাদের আলেম ও ধার্মিক শ্রেণীর লোকদের নৈতিকতা ও আচার-ব্যবহার সম্পর্কে খোলাখুলি সমালোচনামূলক আয়াত নাযিল হচ্ছিলো। যেমন : ‘তারা মিথ্যা কথা শ্রবণকারী এবং হারাম মাল ভক্ষণকারী’ (সূরা মায়েদা : ৪২), ‘তুমি এদের অধিকাংশকেই দেখবে পাপাচার ও সীমালংঘনের দিকে দ্রুত এগিয়ে চলছে’ (সূরা মায়েদা : ৬২), ‘এরা সূদখোর, অথচ এদের জন্যে সূদ নিষিদ্ধ করা হয়েছিলো’, ‘এরা লোকদের ধন-মাল খেয়ে ফেলে’ (সূরা নিসা : আয়াত ১৬১) ইত্যাদি। এছাড়া বাকারা, মায়েদা, আলে-ইমরান প্রভৃতি সূরায় এ ধরনের আরো বহু মন্তব্য বিধৃত হয়েছে। এসব মন্তব্য শুনে মাত্র কতিপয় সত্যসন্ধ লোক ছাড়া তাদের বেশির ভাগ লোকই অত্যন- ক্ষুদ্ধ হলো এবং অন্ধভাবে ইসলামী আন্দোলনের বিরোধিতায় লেগে গেলো।
৩. ইসলামের ক্রমবর্ধমান শক্তি দেখে তারা স্পষ্টত আশংকাবোধ করছিলো যে, একদিন না একদিন এর সামনে তাদের মাথা নত করতে হবেই।
এসব কারণেই ইহুদীরা ইসলামী আন্দোলনের ঘোরতর দুশমন বনে গেলো।
বনী কায়নুকার যুদ্ধ
বদরের মুসলমানদের জয়লাভের পরই ইহুদীদের সর্বপ্রথম চৈতন্যোদয় হলো। তারা গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করলো যে, ইসলাম একটি অপরাজেয় শক্তির রূপ পরিগ্রহ করে চলেছে। তাই বদর যুদ্ধের অব্যবহিত পরই- দ্বিতীয় হিজরীর শাওয়াল মাসে- ইহুদীদের বনী কায়নুকা গোত্র মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করলো এবং হযরত (স) - এর সাথে সম্পাদিত চুক্তি ভেঙে দিলো। এই যুদ্ধের একটি মুখ্য কারণ ছিলো এইঃ এক ইহুদী জনৈক মুসলিম মহিলার শ্লীলতাহানি করে। এ ঘটনায় উক্ত মহিলার স্বামী ক্রুদ্ধ হয়ে একজন ইহুদীকে মেরে ফেলে। এরপর ইহুদীরা একজন মুসলমানকে হত্যা করে। হযরত (স) বিষয়টির আপোষ-রফার চেষ্টা করলেন। কিন্তু ইহুদীরা ঔদ্ধত্যের সঙ্গে বললো : ‘আমরা বদরে পরাজিত কুরাইশ নই। আমাদের সঙ্গে যখন বেধে গেছেই, তখন যুদ্ধ কাকে বলে তা আমরা দেখিয়ে দেবো।’
এভাবে চুক্তির অমর্যাদা করে ইহুদীরা যখন যুদ্ধের হুংকার ছাড়লো, তখন হযরত (স)-ও যুদ্ধের জন্যে প্রস্তুতি নিলেন। ইহুদীরা একটি কিল্লার মধ্যে ঢুকে আত্নরক্ষার ব্যবস্থা করলো। কিল্লাটি পনেরো দিন অপরাধের পর স্থির করা হলো যে, ইহুদীদের নির্বাসিত করা হবে। ফলে সাত শ’ ইহুদীকে নির্বাসিত করা হলো।
কা’ব বিন আশরাফের হত্যা
কা’ব বিন আশরাফ ছিলো ইহুদীদের একজন খ্যাতনামা কবি। সে যুগে কবিদের অত্যন্ত প্রভাব ছিলো। তাই বদর যুদ্ধের পর এই লোকটি এমন উত্তেজনাপূর্ণ কবিতা রচনা করতে লাগলো যে, মক্কায় মুসলমানদের বিরুদ্ধে আগুন জ্বলে উঠলো। বদর যুদ্ধে নিহতদের সম্পর্কে সে অত্যন্ত দরদপূর্ণ মার্সিয়া রচনা করলো এবং মক্কায় গিয়ে তা লোকদের শুনাতে লাগলো। অতঃপর সে মদীনায় এসে হযরত (স)-কে হত্যা করার নানারূপ আপত্তিকর কবিতা রচনা করলো এবং তাঁর বিরুদ্ধে লোকদেরকে উত্তেজিত করতে লাগলো। এমন কি, একবার একটি নিমন্ত্রণের ভাব করে সে হযরত (স)-কে হত্যা করার ষড়যন্ত্র পর্যন্ত করলো। এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে লোকটি সম্বন্ধে কি ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়, সে সম্পর্কে হযরত (স) সাহাবীদের সাথে পরামর্শ করলেন। অবশেষে তাঁর সম্মতিক্রমে তৃতীয় হিজরীর রবিউল আউয়াল মাসে মুহাম্মদ বিন মুসলিমা (রা) কা’ব বিন আশরাফকে হত্যা করেন।৪৩
বনু নযীরের নির্বাসন
বনু নযীর গোত্রের ইহুদীগণ কয়েকটি ব্যাপারে বিশ্বাসঘাতকতা করলো। তারাও হযরত (স)-কে হত্যা করার উদ্দেশ্যে কয়েকবার গোপন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হলো। এ উদ্দেশ্যে মক্কার কুরাইশরাও তাদেরকে উস্কানি দিলো। তাদের এই আচরণ যখন সীমা অতিক্রম করে গেলো, তখন হযরত (স) তাদের কিল্লা অবরোধ করে ফেললেন। এই অবরোধ ১৫৫ দিন পর্যন্ত অব্যাহত রইলো। অবশেষে তারা এই মর্মে সন্ধি করলো যে, উটের পিঠে চাপিয়ে যতটুকু সম্ভব, ততোটুকু মাল-পত্র নিয়ে তারা মদীনা ছেড়ে চলে যাবে। এই সন্ধি অনুযায়ী তাদের বহু সর্দার খায়বর চলে গেলো। তারা নিজেদের সঙ্গে বহু সামান্তপত্র নিয়ে গেলো। যে সব সামান তারা নিতে পারেনি তা-ই শুধু ফেলে গেলো।
এবার মুসলমানদের উভয় দুশমন অর্থাৎ মুশরিক আরব (বিশেষত মক্কার কুরাইশ) এবং ইহুদীগণ মিলে ইসলামকে ধ্বংস করার বিষয়ে চিন্তা করতে লাগলো। অবশেষে তারা সবাই মিলে মদীনা আক্রমণের সিদ্ধান্ত নিল এবং এর জন্যে প্রস্তুতি গ্রহণ শুরু করে দিলো। প্রথম দিকে হযরত (স) এই প্রস্তুতির কথা জানতে পেরে তাদের মুকাবিলার জন্যে মুসলমানদের একটি কাহিনী নিয়ে কিছু দূর অগ্রসরও হয়েছিলেন। কিন্তু দুশমানরা মুকাবিলা না করে পালিয়ে গেলো। এভাবে পঞ্চম হিজরীর মুহররম মাসে একবার তিনি ‘জাতুরাকা’ এবং রবিউল আউয়াল মাসে আর একবার ‘দমমাতুল জুনদাল’ পর্যন্ত অভিযান চালালেন।
খন্দকের যুদ্ধ
মদীনা থেকে বেরিয়ে গিয়ে বনু নযীর গোত্রের লোকেরা ইসলামের বিরুদ্ধে এক বিরাট ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হলো। তারা আশপাশের গোত্রগুলো মুসলমানদের বিরুদ্ধে উত্তেজিত করে তুললো। মক্কায় গিয়ে কুরাইশদেরকে তারা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করলো এবং এই মর্মে প্রস্তাব দিলো যে, সবাই মিলে এক সংগে হামলা করলে এই নয়া আন্দোলনকে খুব সহজে ধ্বংস করে দেয়া যাবে। কুরাইশরা এরূপ প্রস্তাবের জন্যে আগে থেকেই প্রস্তুত ছিলো। অবশেষে ইহুদী ও কুরাইশদের সমবায়ে প্রায় দশ হাজার লোকের এক বিরাট বাহিনী গঠিত হলো।
হযরত (স) মদীনা আক্রমণের এই বিপুল আয়োজন সম্পর্কে সাহাবীদের সঙ্গে পরামর্শ করলেন। হযরত সালমান ফারেসীর (রা) পরামর্শ দিলেন যে, এতো বড়ো বাহিনীর সঙ্গে খোলা ময়দানে মুকাবিলা করা সমীচীন হবে না। আমাদের সৈন্যদেরকে মদীনার নিরাপদ স্থানেই থাকতে হবে এবং দুশমনরা যাতে সরাসরি হামলা করতে না পারে, সেজন্যে নগরীর চারদিকে পরিখা (খন্দক) খনন করতে হবে। ৪৪ এই অভিমতটি সবার মনোপুত হলো এবং পরিখা খননের প্রস্তুতি চলতে লাগলো।
খন্দকের প্রস্তুতি
মদীনার তিন দিক ঘর-বাড়ি ও খেজুর বাগান দ্বারা পরিবেষ্টিত আর একদিক মাত্র উন্মুক্ত ছিলো। হযরত (স) তিন হাজার সাহাবী নিয়ে সে উন্মুক্ত দিকেই পরিখা খননের আদেশ দিলেন। পঞ্চম হিজরীর ৮ জিলকদ এই খনন কার্য শুরু হলো। হযরত (স) নিজে পরিখার খনন কাজ উদ্বোধন করলেন এবং প্রতি দশজন লোকের মধ্যে দশ গজ ভূমি বন্টন করে দিলেন। পরিখার প্রস্ত পাঁচ গজ এবং গভীরতা পাঁচ গজ। বিশ দিনে তিন হাজার মুসলমান এ বিরাট পরিখা খনন করে ফেললেন। পরিখা খননকালে হযরত (স) সকল লোকের সঙ্গে কাজে ব্যস্ত রইলেন। ঘটনাক্রমে এক জায়গায় একটি বিরাটাকার পাথর সামনে পড়লে। সেটাকে কোনো প্রকারেই ভাঙা যাচ্ছিলো না। হযরত (স) সেখানে গিয়ে এরূপ জোরে কোদাল মারলেন যে, পাথরটি ভেঙে চুরমার হয়ে গেলো। এ ঘটনাও নবী করীম (স)-এর একটা বিশিষ্ট মু’জিজা।
কাফিরদের হামলা
কাফিরদের সৈন্য বাহিনী তিন দলে বিভক্ত হয়ে তিন দিক থেকে মদীনার ওপর হামলা করলো। এই হামলা ছিলো অত্যন্ত প্রচণ্ড ও ভয়াবহ। কুরআন পাকের সূরা আহযাব এর ১০ এবং ১১ নং আয়াতে নিম্নোক্ত ভাষায় এই হামলার চিত্র আঁকা হয়েছেঃ
যখন দুশমনরা ওপর (পূর্ব) ও নীচের (পশ্চিম) দিক থেকে তোমাদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লো, যখন চক্ষু ফেটে যাবার উপক্রম হলো এবং কলিজা মুখের কাছে আসতে লাগলো আর তোমরা খোদা সম্পর্কে নানারূপ সন্দেহ করতে লাগলে, ঠিক তখন মুমিনদের পরীক্ষার সময় এলো বেং তীব্রভাবে ভূ-কম্পন সৃষ্টি হলো।
এটা ছিলো বাস্তবিকই অত্যন্ত কঠিন পরীক্ষার সময়। একদিকে প্রচণ্ড শীতকাল, খাদ্য-দ্রব্যের অভাব, উপর্যুপরি কয়েক বেলা অনশন, রাতের নিদ্রা আর দিনের বিশ্রাম উধাও, প্রতিটি মুহূর্ত জীবনের ভয়, মালমাত্তা ও সন্তানাদি দুশমনের আঘাতের মুখে আর অন্যদিকে বেশুমার শত্রু সৈন্য । এমনিতরো সংকটাবস্থায় যাদের ঈমান ছিলো সাচ্চা ও সুদৃঢ়, কেবল তারাই সত্যের পথে অবিচল থাকতে পারছিলো। দুর্বল ঈমানদার ও মুনাফিকগণ এ পরিস্থিতির আদৌ মুকাবিলা করতে পারছিলো না; বরং মুসলমানদের সমাজ-সংগঠনে যে সব মুনাফিক অনুপ্রবেশ করেছিলো, তারা এ সময় খোলাখুলিভাবে আত্নপ্রকাশ করলো। তারা বলতে শুরু করলো : ‘আল্লাহ ও তাঁর রাসূল আমাদের কাছে বিজয় ও সাহায্যের যে ওয়াদা করেছিলেন, তা সম্পূর্ণ ধোকা।’ (আহযাব:আয়াত ১২) । এর পাশাপাশি তারা নিজেদের জান বাঁচানোর জন্যে নানারূপ বাহানা তালাশ করতে লাগলো এবং : ‘হে মদীনাবাসী! ফিরে চলো, আজ আর তোমাদের রক্ষা নেই।’ তারা নবী করীম (স) -এ সামনে এসে বলতে শুরু করলোঃ ‘আমাদেরকে ঘর-বাড়িতে থেকে আত্নরক্ষা করার অনুমতি দিন; আমাদের বাড়ি-ঘর সম্পূর্ণ অরক্ষিত।’ (আহযাব : আয়াত ১৪)।
কিন্তু যাদের ভেতর যথার্থ ঈমান ছিলো এবং যারা ঈমানের দাবিতে ছিলো সত্যবাদী, এ সময় তাদের অবস্থা ছিলো সম্পূর্ণ ভিন্ন। তারা কাফিরদের সৈন্য-সামন্ত দেখে স্বতঃস্ফূর্তভাবে বলে উঠলো :
‘আল্লাহ এবং রাসূল তো আমাদের সঙ্গে এরই (অবস্থার) ওয়াদা করেছিলেন। পরন্ত এ অবস্থা দেখে তাদের ভেতর ঈমানের ভাবধারা আরো সতেজ হয়ে উঠলো এবং অধিকতর আনুগত্য ও আজ্ঞানুবর্তিতার জন্যে তারা প্রস্তত হলো। এই কঠিন অবস্থা তাদের ভেতরে অনু পরিমাণও পরিবর্তন ঘটাতে পারলো না। (সূরা আহযাব : ২২ ও ২৩ আয়াত)
দুশমনরা প্রায় এক মাসকাল মদীনা অবরোধ করে রইলো। এই অবরোধ এতো কঠিন ছিল যে, মুসলমানদেরকে একাধিক্রমে তিন-চার বেলা পর্যন্ত অনশনে কাটাতে হলো। এভাবে অবরোধ অত্যন্ত কঠিন ও বিপজ্জনক রূপ পরিগ্রহ করলো। কিন্তু তা সত্ত্বেও অবরোধকারীরা কিছুতেই পরিখা পার হতে পারলো না। এ কারণে তারা অপর পারেই অবস্থান করতে লাগলো। হযরত (স) তাঁর সৈন্যদেরকে পরিখার বিভিন্ন স্থানে মোতায়েন করলেন। কাফিররা বাহির থেকে পাথর ও তীর ছুঁড়তে লাগলো। এদিক থেকেও তার প্রত্যুত্তর দেয়া হলো। এরই ভেতর বিক্ষিপ্তভাবে দু-একটি হামলাও চলতে লাগলো। কখনো কখনো কাফিরদের আক্রমণ এতো তীব্রতর রূপ ধারণ করতে লাগলো যে, তাদেরকে পরিখার এপার থেকে প্রতিহত করার জন্যে পূর্ণ দৃঢ়তর সাথে মুকাবিলা করতে হলো। এমন কি এর ফলে দু-একবার নামায পর্যন্ত কাযা হয়ে গেলো।
আল্লাহর সাহায্য
অবরোধ যতো দীর্ঘায়িত হলো, হানাদাদের উৎসাহও ততোটা হ্রাস পেতে লাগলো। দশ-বারো হাজার লোকের খানাপিনার ব্যবস্থা করা মোটেই সহজ কাজ ছিলো না। তদুপরি ছিলো প্রচণ্ড শীত। এরই মধ্যে একদিন এমনি প্রচণ্ড বেগে ঝড় বইলো যে, কাফিরদে সমস্ত ছাউনি উড়ে গেলো। তাদের সৈন্য-সামন্ত ছিন্ন-ভিন্ন হয়ে গেলো। তাদের ওপর যেন খোদার মূর্তিমান আযাব নেমে এলো। আর বাস্তবিকই আল্লাহ তা’আলা মুসলমানদের জন্যে রহমত এবং কাফিরদের জন্যে আযাব হিসেবেই এ ঝড় প্রেরণ করেছিলেন। এই ঘটনাকে আল্লাহ তাঁর একটি অনুগ্রহরূপে আখ্যায়িত করে বলেছেনঃ
‘হে মুমিনগণ! খোদার সেই অনুগ্রহের কথা স্মরণ করো, যখন তোমদের ওপর সম্মিলিত বাহিনী ঝাঁপিয়ে পড়েছিলো আর আমি তাদের ওপর প্রচণ্ড ঝঞ্ঝা বইয়ে দিলাম এবং এমন সৈন্য (ফেরেশতা) পাঠালাম, যা তোমরা দেখতে পাওনি। (সূরা আহযাব : আয়াত ৯)
তাই কাফিরগণ এ পরিসি'তির মুকাবিলা করতে পারলো না। তাদের মেরুদণ্ড অচিরেই ভেঙে পড়লো। অবস্থা বেগতিক দেখে ইহুদীরা আগেই কেটে পড়েছিলো। এখন বাকী রইলো শুধু কুরাইশরা। তাই তাদেরও ফিরে যাওয়া ছাড়া গত্যন্তর রইলো না। এভাবে শুধু আল্লাহর অনুগ্রহ এবং তাঁর অদৃশ্য সাহায্যে মদীনার আকাশে ঘনীভূত ঘনঘটা আপনা-আপনি কেটে গেলো। কুরআন মজীদে এই যুদ্ধের কাহিনী যে ভঙ্গিতে বর্ণিত হয়েছে এবং তাতে মুসলমানদের প্রশিক্ষণের জন্যে যে সব উপাদান রয়েছে, তার কয়েকটি উল্লেখযোগ্য বিষয় নিম্নে উদ্ধৃত করা যাচ্ছে।
আল্লাহর অনুগ্রহের ওপর ভরসা
মুমিনের প্র্যয় হচ্ছে এই যে, প্রকৃত শক্তি আল্লাহর হাতে নিবদ্ধ। বিশ্বজাহানে যা কিছু ঘটে, তা শুধু তাঁরই অভিপ্রায় ও হুকুম অনুসারে ঘটে থাকে। মুমিন তার কোনো সাফল্যকেই আপন চেষ্ট-সাধনা বা নিজস্ব শক্তির ফল মনে করে না; বরং তাকে মনে করে আল্লাহ তা’আলার অনুগ্রহ (ফযল)। দৃষ্টন্ত স্বরূপ বলা যায়ঃ খন্দক যুদ্ধের সময় দশ-বারো হাজার কাফির সৈন্য তিন হাজার মুসলমানের কোনোই ক্ষতি করতে পারলো না; বরং তাদেরকে দিশেহার হয়ে ফিরে যেতে হলো। এই পরিস্থিতিকে কিছু মুসলমান হয়তো নিজেদের চেষ্টা-তদবিরের (পরিখা খননের) ফল মনে করতে পরতো। কিন্তু আল্লাহ তা’আলা তাদেরকে এই দুর্বলতা থেকে বাঁচানোর জন্যে পূর্বাহ্নে ইরশাদ করলেনঃ ‘হে ঈমানদারগণ! আল্লাহর সেই অনুগ্রহের কথা স্মরণ করো, যখন তোমাদের ওপর সম্মিলিত বাহিনী ঝাঁপিয়ে পড়েছিলো এবং আমরা তাদের ওপর প্রচণ্ড ঝড় বইয়ে দিলাম আর এমন সৈন্য পাঠালাম, যা তোমরা দেখতে পাওনি’। (আহযাবঃ ৯)
বস্তত ইসলামী আন্দোলনের অনুবর্তীদের জন্যে এরূপ নৈতিক প্রশিক্ষণই একান্ত প্রয়োজন। তাদের প্রতি মুহূর্ত এটা স্মরণরাখা আবশ্যক যে, প্রতিদ্বন্দ্বী শক্তি যতো বড়োই হোক না কেন, তারা শুধু আল্লাহর অনুগ্রহের ওপরই ভরসা করবে এবং তাঁকেই সমস্ত কাজের নিয়ামক মনে করে দ্বীন-ইসলামের জন্যে সর্বাত্নক চেষ্টা চালিয়ে যেতে থাকবে।
ঈমানের দাবি যাচাই
মানুষের ঈমানের পরীক্ষা হয় দুঃখ-কষ্ট ও মুসিবতের সময়। তখন সে নিজে যেমন নিজের অবস্থাটা উপলব্ধি করতে পারে, তেমনি অপরেও আন্দাজ করতে পারে যে, এই পথে সে কতোখানি অবিচল থাকতে সক্ষম। স্বাভাবিক অবস্থায় বহু লোক সম্পর্কেই এটা অনুমান করা যায় না যে , উদ্দেশ্যের প্রতি স্বাভাবিক ভালবাসা এ জীবন পণ করার সংকল্পে তারা বাস্তবিকই কতোটা প্রস্তুত, বরং কখনো কখনো তারা নিজেরাই নিজেদের সম্পর্কে একটা ধোকায় পড়ে থাকে। কিন্তু যখন কোনো সংকটকাল আসে, তখন আসল ও মেকীর পার্থক্যটা অত্যন্ত সুস্পষ্ট হয়ে উঠে। খন্দক যুদ্ধ এই কাজটিই করেছে। মদীনার মুসলমানদের দলে এক বিরাট সংখ্যক মুনাফিক ও মেকী ঈমানদার ঢুকে পড়েলিলো। তাদের সত্যিকার পরিচয়টা সাধারণ মুসলমানদের সামনে উদঘাটন করার প্রয়োজন ছিলো। তাই এই সংকটের মাধ্যমে তাদের মুখোসটি খসে পড়লো। ক্রমাগত পরিখা খনন করা, খানাপিনা ও আরাম-আয়েশ ত্যাগ করে রাত-দিন একাকার করে দেয়া, একটি বিরাট বাহিনীর মুকাবিলার জন্যে জীবন হাতে নিয়ে তৈরী থাকা, সর্বোপরি কুড়ি-বাইশ দিন পর্যন্ত ক্রমাগত ভীতি ও শংকার মধ্যে রাতের ঘুম ও দিনের বিশ্রাম হারাম করে দেয়া কোনো সহজ কাজ ছিলোনা। তাদের অনেকেই বরং বলতে লাগলো : ‘রাসূল আমাদের কাছে বিজয় ও সাহায্যের ওয়াদা করেছিলেন; কিন্তু এখন তো দেখছি হাওয়া ঘুরে যাচ্ছে। আমরা বুঝতে পেরেছি, আল্লাহ ও রাসূল আমাদের কাছে যে ওয়াদা করেছিলেন তা নিছক একটি ধোকা মাত্র।’ (আহযাব)। কিছু লোক আবার নানারকম বাহানা তালাশ করে ফিরছিলো। তারা আপন ঘর-বাড়ির হেফাজতের বাহানায় ময়দান থেকে সরে পড়লো। পক্ষান্তরে আল্লাহর যে সব বান্দাহ সাচ্চা ঈমানের অধিকারী ছিলো, তারা এ অবস্থায় স্বতন্ত্র ভূমিকা গ্রহণ করলো। তারা শত্রু সৈন্যদেরকে এগিয়ে আসতে দেখেই বলতে লাগলো : ‘ঠিক ঠিক এমনি অবস্থার কথাই আল্লাহ এবং রাসূল আমাদেরকে আগে জানিয়েছিলেন, আল্লাহ ও রাসূল তো এরই ওয়াদা করেছিলেন আমাদের কাছে। আল্লাহ ও রাসূল তো সত্য কথাই বলেছেন। এই অবস্থায় তাদের ভেতর ঈমানের শক্তি আরো বৃদ্ধি পেলো এবং তারা অধিকতর আনুগত্য ও ফর্মাবরদারির জন্যে প্রস্তুত হলো।’ (আহযাব)
দুর্বলতার উৎস-২
জান ও মালের ক্ষতির আশঙ্কা হচ্ছে মানুষের সবচাইতে বড়ো দুর্বলতা; বরং বলা চলে, সমস্ত দুর্বলতার মূল উৎস। আল্লাহর সত্ত্বা ও তাঁর গুণাবলী সম্পর্কে ইসলাম যে ধরণের ঈমান আনার দাবি জানায়, তাতে মূলগতভাবে এই আকীদা শামিল রয়েছে যে, জীবন-মৃত্যু, লাভ-ক্ষতি ইত্যাদি সবকিছুই আল্লাহর হাতে নিবদ্ধ। অপর কোনো শক্তি মৃত্যুকে বিলম্বিত করতে পারে না। এমনি প্রত্যয় এবং এমনি ঈমানই হচ্ছে শক্তির মূল ভিত্তি। এই ভিত্তি যতোটা দুর্বল হবে, মুসলমানের প্রতিটি কাজে ততোটা দুর্বলতাই প্রকাশ পাবে। তাই এই দুর্বলতাকে দূর করার জন্যে সুস্পষ্টভবে জানিয়ে দেয়া হলোঃ ‘হে নবী! তাদেরকে বলে দিন যে, তোমরা যদি মৃত্যু বা হত্যার ভয়ে পালাতে চাও তো পালিয়ে দেখ; এরূপ পলায়নে তোমাদের কোনোই ফায়দা হবে না। তাদেরকে আরো বলে দিন যে, (তারা চিন্তা করে দেখুব) আল্লাহ যদি তাদের কোনো ক্ষতি করার সিদ্ধান্ত নেন, তাহলে তাদেরকে আর কে বাঁচাতে পারে? আর যদি আল্লাহ সিদ্ধান্ত নেন তাদের কোনো উপকার করার, তাহলে তাঁকে আর কে প্রতিরোধ করতে পারে? (তাদের স্মরণ রাখা উচিত যে,) আল্লাহ ছাড়া আর কাউকে না পাবে পৃষ্ঠপোষক আর না পাবে মদদ্গার।’ (আহযাব : আয়াত ১৭)
রাসূলের অনুকরণীয় আদর্শ
এই যুদ্ধ সংক্রান্ত আলোচনার মধ্যেই মুসলমানদেরকে এ কথা জানিয়ে দেয়া হলো যে, রাসূল (স) -এর জীবন হচ্ছে তোমাদের জন্যে অনুকরণীয় আদর্শ। তবে যারা আল্লাহ তা’আলার দীদার এবং আখিরাতের প্রাপ্য পুরস্কারের প্রত্যাশা করে এবং আল্লাহকে খুব বেশি পরিমাণ স্মরণ করে, এ আদর্শ থেকে কেবল তারাই ফায়দা হাসিল করতে পারে। এ প্রসঙ্গে ইসলামপন্থীদের মনোবল বজায় রাখা এবং চরম সংকটকালে তাদের অন্তরকে সুদৃঢ় রাখার জন্যে পূর্ণ ধৈর্য-স্থৈর্য, কঠোর সংকল্প ও খোদা-নির্ভরতার কিছু নমুনা পেশ করা হলো। যারা আল্লাহর দ্বীনকে বাস্তবে কায়েম কতে ইচ্ছুক এবং এ উদ্দেশ্যেই এ পথের অগ্রপথিক, খোদার সেইসব বান্দার জন্যে এ নমুনা কিয়ামত পর্যন্ত অনুকরণযোগ্য হয়ে থাকবে। তাই জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই এ নমুনা তাদের সামনে রাখা উচিত। কারণ এ-ই হচ্ছে তাদের জন্যে প্রকৃত আলোকবর্তিকা।