বিষয়: জুলুমের প্রকৃতি ও পরিণতি
খতীব: শায়খ ইউসুফ ইবন আব্দিল ওয়াহ্হাব
আল্লাহর বান্দাগণ!
পরকালে বান্দা যখন হিসাব দেয়ার পুলসিরাতে দাঁড়াবে যা হবে জাহান্নামের প্রান্তদেশের উপর নির্মিত ছুরির চাইতে ধারালো, চুল থেকেও সূক্ষ্ম, সেদিন জালিমদের কি পরিণতি হবে? তারা কোথায় পালাবে? সেদিন তাদের পরিণতি হবে অত্যন্ত ভয়াবহ। পবিত্র কুরআনে তাদের সম্পর্কে যা এসেছে তা ভালোভাবে জেনে রাখুন। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন: “আপনার পালনকর্তার কসম, আমি অবশ্যই তাদেরকে এবং শয়তানদেরকে একত্রে সমবেত করব, অত:পর অবশ্যই তাদেরকে নতজানু অবস্খায় জাহান্নামের চারপাশে উপস্খিত করব। অত:পর প্রত্যেক সম্প্রদায়ের মধ্যে যে দয়াময় আল্লাহর সর্বাধিক অবাধ্য, আমি অবশ্যই তাকে পৃথক করে নেব। অত:পর তাদের মধ্যে যারা জাহান্নামে প্রবেশের অধিক যোগ্য, আমি তাদের বিষয়ে ভালভাবে জ্ঞাত আছি। তোমাদের মধ্যে এমন কেউ নেই, যে তথায় পৌঁছবে না। এটা আপনার পালনকর্তার অনিবার্য ফয়সালা। অত:পর আমি পরহেজগারদেরকে উদ্ধার করব এবং জালিমদেরকে সেখানে নতজানু অবস্খায় ছেড়ে দেব।” (সূরা মারইয়াম, ৬৮-৭২)
সেদিন তারা সোজা হয়ে দাঁড়াতেও সম হবে না। তাই আল্লাহর বান্দাগণ! জুলুম পরিহার করুন। কেননা ইহকালে জুলুম করা পরকালে অন্ধকারে হাবুডুবু খাওয়ার কারণ হবে। পবিত্র কুরআন হারাম হওয়া জুলুমের বিভিন্ন প্রকারের বর্ণনা প্রদান করেন। তন্মধ্যে:
এক: আল্লাহর বান্দাদের আল্লাহর পথে চলতে তথা মসজিদে প্রবেশে বাধা দেয়া, তাতে জিকর প্রদান ও সালাত আদায় ও উপকারী শিা নেয়ার সুযোগ দেয়া বিরত রাখা। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন: “যে ব্যক্তি আল্লাহর মসজিদসমূহে তাঁর নাম উচ্চারণ করতে বাধা দেয় এবং সেগুলোকে উজাড় করতে চেষ্টা করে, তার চাইতে বড় জালেম আর কে? এদের পে মসজিদসমূহে প্রবেশ করা বিধেয় নয়, অবশ্য ভীত-সন্ত্রস্ত অবস্খায়। ওদের জন্য ইহকালে লাঞ্ছনা এবং পরকালে কঠিন শাস্তি রয়েছে।” (সূরা আল বাকারাহ, ১১৪)
মুমিনগণ!
আজ আপনারা দেখছেন কিভাবে আমাদের যুবসমাজকে মসজিদুল আক্সায় প্রবেশে ও তাতে সালাত ও দ্বীনি প্রোগ্রামসমূহ বাস্তবায়নে বাধা দেয়া হচ্ছে।
দুই: সত্য স্যা গোপন রাখা। এ মর্মে ইরশাদ হচ্ছে: “তার চাইতে অত্যাচারী কে, যে আল্লাহর প থেকে তার কাছে প্রমাণিত স্যাকে গোপন করে? আল্লাহ তোমাদের কর্ম সম্পর্কে বেখবর নন।” (সূরা আল বাকারাহ, ১৪১)
স্যা গোপন করা, মিথ্যা স্যা দেয়া, সত্যকে বাতিলের সাথে পরিবর্তন করা, অন্যের অধিকার নষ্ট করা ভয়ানক গর্হিত কাজ। আমাদের সমাজে কত অধিকারই না ভুলুণ্ঠিত হচ্ছে, আল্লাহর কত বিধানেরই না অমর্যাদা হচ্ছে, মানুষের মান-মর্যাদা কতভাবেই না নষ্ট হচ্ছে, কত নিরাপরাধ ব্যক্তিরই না রক্ত প্রবাহিত হচ্ছে, কত জাতিই না জুলুমের শিকার হচ্ছে। এগুলো সবই সত্যের স্যা গোপন করার জ্যই সংঘটিত হতে দেখা যায়। আমরা যেন কোনভাবেই সত্যের স্যা গোপনকারীদের অন্তর্ভুক্ত না হই সে ব্যাপারে সাবধান থাকি। যাদের সম্পর্কে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন: “যে কেউ তা গোপন করবে, তার অন্তর পাপপূর্ণ হবে, তোমরা যা কর, আল্লাহ সে সম্পর্কে জ্ঞাত।” (সূরা আল বাকারাহ, ২৮৩)
তিন: জুলুমের আরেক প্রকার হল আল্লাহর বিধান ছাড়া অন্যের বিধানে বিচার করা। এদের সম্পর্কে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন: “যেসব লোক আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন, তদনুযায়ী ফয়সালা করে না, তারাই জালিম।” (সূরা আল মায়েদা, ৪৫)
আপনারাই বলতে বাধ্য হবেন আপনাদের শাসকবর্গ ইসলাম বহির্ভূত বিধান দিয়ে কিভাবে শাসনকার্য পরিচালনা করছে ও ইসলামী রাষ্টন্স প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে কোন ভূমিকাই পালন করছে না। অথচ কুফরী রাষ্টন্সসমূহ তাদের উপর বিভিন্নভাবে প্রভাব বিস্তার করে আছে। মুসলিম শাসকদের কেউ কেউ নিজেদের মিথ্যা দোহাই দিয়ে মুসলিম দেশ পরিচালনা করছে অথচ তাদের ভূমিকা অনেক েেত্র সরাসরি ইসলাম বিরোধীতার শামিল বলে বিবেচিত হয়। এসব গর্হিত কাজের অনেকাংশ তাদের ইসলাম সম্পর্কে অজ্ঞতার কারণে সংঘটিত হতে থাকে।
আমাদের পূর্ব পুরুষদের জুলুম থেকে বাঁচার মানসিকতা বিষয়ে একটি সংপ্তি বর্ণনা শুনুন। একদা জনৈক ব্যক্তি হযরত সুফিয়ান সাওরী (রা:)-এর নিকট এসে তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, আমি বাদশার কাপড় সিলাই করে থাকি। এতে আমি কি জালেমের সাহায্যকারী হিসেবে বিবেচিত হব? উত্তরে তিনি বললেন, তুমি সরাসরি জালেমের সাহায্যকারী বলে ধর্তব্য হবে না। বরং সাহায্যকারী হিসেবে ঐ সমস্ত লোক বিবেচিত হবে যারা তোমার নিকট থেকে সুঁই ও সুতা ক্রয় করে থাকে। জুলুমের ভাবার্থ যে কত ব্যাপক তা এই বর্ণনা থেকেই আমাদের সুýপষ্ট হয়ে থাকে।
মুসলিম ভ্রাতৃবৃন্দ!
আমাদের পূর্বসূরীগণ জুলুমের ভাবার্থ যে কত ব্যাপকতর অর্থে বুঝতেন তা উপরোক্ত ঘটনা থেকেই সুýপষ্ট হয়ে উঠেছে। যে ব্যক্তি জালিমকে জুলুম কার্যে সহায়তা করে যাতে কোন নিরাপরাধ মুসলিমের অধিকার ভূলুণ্ঠিত হয়ে থাকে সে আল্লাহর গযবে নিজেকে লিপ্ত করল এবং ঐ জুলুমের পরিণতি তাকেও ভোগ করতে হবে।
চার : যে ব্যক্তি অন্যের এক বিঘত পরিমাণ জমিও জুলুমের বশবর্তী হয়ে গ্রহণ করে তাও বড় ধরনের জুলুম বলে বিবেচিত হবে। বুখারী ও মুসলিম শরীফে হযরত সাঈদ ইবন যায়িদ (রা:) থেকে বর্ণিত, রাসূল (স:) ইরশাদ করেন: যে ব্যক্তি জুলুমের বশবর্তী হয়ে অন্যের এক বিঘত পরিমাণ জমিও গ্রহণ করে, আল্লাহ তার ঘাড়ে কিয়ামতের দিবস সাত স্তবক জমি ঝুলিয়ে দেবেন।” এর অর্থ হল সাত স্তবক জমি ঐদিন তার কাঁধে ঝুলতে থাকবে। আল্লাহর বান্দাগণ, বলুন তো কে এই বোঝা বহন করার সামর্থ রাখে? অতএব আপনারা আল্লাহকে ভয় করত মৃত্যু গ্রাস করার পূর্বেই জুলুমের বিরুদ্ধাচরণ করুন ও তা থেকে মুক্ত থাকুন। এ সাবধানবাণী উল্লেখ করতে আল্লাহ ইরশাদ করেন: “তোমাদের প্রতি অবতীর্ণ উত্তম বিষয়ের অনুসরণ কর তোমাদের কাছে অতর্কিতে ও অজ্ঞাতসারে আযাব আসার পূর্বে যাতে কেউ না বলে, হায় হায়, আল্লাহ সকাশে আমি কর্তব্যে অবহেলা করেছি এবং আমি ঠাট্টা-বিদন্সূপকারীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলাম।” (সূরা আয যুমার, ৫৫)
আল্লাহ আরও ইরশাদ করেন: “জালিমরা যা করে, সে সম্পর্কে আল্লাহকে কখনও বেখবর মনে করো না।” (সূরা ইব্রাহিম, ৪২)
আপনাদের কেউ ইতিমধ্যে জুলুম করে ফেললে, সে ব্যাপারে সজাগ হউন, তার কাছ থেকে মা চেয়ে নিন। ইহকালেই এর ব্যবস্খা করে নিন। পরকালে টাকা-পয়সা, দীনার-দিরহাম দিয়েও তার তিপূরণ করা যাবে না। সেদিন ইহকালীন জীবনের টাকা-কড়ির পরিবর্তে স্বীয় আমল দিয়ে অন্যের তিপুরণের ব্যবস্খা হবে। যেহেতু সেদিন আমরা সবাই রিক্তহস্তে কবর থেকে উথিত হব। তাই বন্ধুরা জীবনবায়ু ফুরানোর পূর্বেই অন্যের হকের ব্যাপারে সাবধান হোন। আপনি কখনো জুলুম করতে মনস্খ করলে তখনই আল্লাহর সামনে দাঁড়ানোর কথা সôরণ করুন এবং যৌবনে অতিশক্তির অধিকারী মনে হলে মহান আল্লাহর শক্তিমত্তার বিষয়ে একটু ভেবে নেবেন, এতে নিজেকে ব্যালেন্স করে চলা সহায়ক হবে।
সর্বাবস্খায় জালেমের সাহায্যকারী হওয়া থেকে বিরত থাকুন ও জালেমদের সংশন্সব ত্যাগ করুন। নতুবা আপনার মনের অগোচরে নিজের নেক আমলগুলো খসে পড়তে থাকবে অথচ আপনি টেরও পাবেন না। আমাদের প্রিয় নবী (স:) তাঁর উমôতদের সাবধান করত ইরশাদ করেন, “মহান আল্লাহ জালেমদের জুলুমের সময় বাধা না দিয়ে সুযোগ দিয়ে থাকেন, অত:পর যখন তাকে পাকড়াও করেন তখন আর কোন অবকাশ দেন না। অত:পর তিনি মহান আল্লাহর বাণী উচ্চারণ করেন, যার ভাবার্থ হলো: “আর তোমার রব যখন কোন পাপপূর্ণ জনপদকে ধরেন, তখন এমনিভাবেই ধরে থাকেন। নিশ্চয়ই তাঁর পাকড়াও খুবই মারাত্মক।” (সূরা হুদ, ১০২) “হে আমাদের পালনকর্তা, আমাদের উপর এ জালেম কাওমের শক্তি পরীক্ষা করিও না। আর আমাদেরকে অনুগ্রহ করে ছাড়িয়ে দাও এই কাফিরদের কবল থেকে।” (সূরা ইউনুস, ৮৫, ৮৬)
আল্লাহর বান্দাগণ!
সর্বদা আল্লাহর সôরণে নিজেদের নিয়োজিত রাখতে চেষ্টা করবেন। আপনারা যেহেতু তাঁর প থেকে দোয়া কবুলের ব্যাপারে ইয়াক্কিন রাখেন তাই তাঁর কাছে প্রার্থনা করুন। আমরা তাওবাহকারীদের সফলতা কামনা করছি। তাই আপনারাও তাওবাহ করুন।
আল্লাহর বান্দাগণ!
পরকালে বান্দা যখন হিসাব দেয়ার পুলসিরাতে দাঁড়াবে যা হবে জাহান্নামের প্রান্তদেশের উপর নির্মিত ছুরির চাইতে ধারালো, চুল থেকেও সূক্ষ্ম, সেদিন জালিমদের কি পরিণতি হবে? তারা কোথায় পালাবে? সেদিন তাদের পরিণতি হবে অত্যন্ত ভয়াবহ। পবিত্র কুরআনে তাদের সম্পর্কে যা এসেছে তা ভালোভাবে জেনে রাখুন। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন: “আপনার পালনকর্তার কসম, আমি অবশ্যই তাদেরকে এবং শয়তানদেরকে একত্রে সমবেত করব, অত:পর অবশ্যই তাদেরকে নতজানু অবস্খায় জাহান্নামের চারপাশে উপস্খিত করব। অত:পর প্রত্যেক সম্প্রদায়ের মধ্যে যে দয়াময় আল্লাহর সর্বাধিক অবাধ্য, আমি অবশ্যই তাকে পৃথক করে নেব। অত:পর তাদের মধ্যে যারা জাহান্নামে প্রবেশের অধিক যোগ্য, আমি তাদের বিষয়ে ভালভাবে জ্ঞাত আছি। তোমাদের মধ্যে এমন কেউ নেই, যে তথায় পৌঁছবে না। এটা আপনার পালনকর্তার অনিবার্য ফয়সালা। অত:পর আমি পরহেজগারদেরকে উদ্ধার করব এবং জালিমদেরকে সেখানে নতজানু অবস্খায় ছেড়ে দেব।” (সূরা মারইয়াম, ৬৮-৭২)
সেদিন তারা সোজা হয়ে দাঁড়াতেও সম হবে না। তাই আল্লাহর বান্দাগণ! জুলুম পরিহার করুন। কেননা ইহকালে জুলুম করা পরকালে অন্ধকারে হাবুডুবু খাওয়ার কারণ হবে। পবিত্র কুরআন হারাম হওয়া জুলুমের বিভিন্ন প্রকারের বর্ণনা প্রদান করেন। তন্মধ্যে:
এক: আল্লাহর বান্দাদের আল্লাহর পথে চলতে তথা মসজিদে প্রবেশে বাধা দেয়া, তাতে জিকর প্রদান ও সালাত আদায় ও উপকারী শিা নেয়ার সুযোগ দেয়া বিরত রাখা। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন: “যে ব্যক্তি আল্লাহর মসজিদসমূহে তাঁর নাম উচ্চারণ করতে বাধা দেয় এবং সেগুলোকে উজাড় করতে চেষ্টা করে, তার চাইতে বড় জালেম আর কে? এদের পে মসজিদসমূহে প্রবেশ করা বিধেয় নয়, অবশ্য ভীত-সন্ত্রস্ত অবস্খায়। ওদের জন্য ইহকালে লাঞ্ছনা এবং পরকালে কঠিন শাস্তি রয়েছে।” (সূরা আল বাকারাহ, ১১৪)
মুমিনগণ!
আজ আপনারা দেখছেন কিভাবে আমাদের যুবসমাজকে মসজিদুল আক্সায় প্রবেশে ও তাতে সালাত ও দ্বীনি প্রোগ্রামসমূহ বাস্তবায়নে বাধা দেয়া হচ্ছে।
দুই: সত্য স্যা গোপন রাখা। এ মর্মে ইরশাদ হচ্ছে: “তার চাইতে অত্যাচারী কে, যে আল্লাহর প থেকে তার কাছে প্রমাণিত স্যাকে গোপন করে? আল্লাহ তোমাদের কর্ম সম্পর্কে বেখবর নন।” (সূরা আল বাকারাহ, ১৪১)
স্যা গোপন করা, মিথ্যা স্যা দেয়া, সত্যকে বাতিলের সাথে পরিবর্তন করা, অন্যের অধিকার নষ্ট করা ভয়ানক গর্হিত কাজ। আমাদের সমাজে কত অধিকারই না ভুলুণ্ঠিত হচ্ছে, আল্লাহর কত বিধানেরই না অমর্যাদা হচ্ছে, মানুষের মান-মর্যাদা কতভাবেই না নষ্ট হচ্ছে, কত নিরাপরাধ ব্যক্তিরই না রক্ত প্রবাহিত হচ্ছে, কত জাতিই না জুলুমের শিকার হচ্ছে। এগুলো সবই সত্যের স্যা গোপন করার জ্যই সংঘটিত হতে দেখা যায়। আমরা যেন কোনভাবেই সত্যের স্যা গোপনকারীদের অন্তর্ভুক্ত না হই সে ব্যাপারে সাবধান থাকি। যাদের সম্পর্কে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন: “যে কেউ তা গোপন করবে, তার অন্তর পাপপূর্ণ হবে, তোমরা যা কর, আল্লাহ সে সম্পর্কে জ্ঞাত।” (সূরা আল বাকারাহ, ২৮৩)
তিন: জুলুমের আরেক প্রকার হল আল্লাহর বিধান ছাড়া অন্যের বিধানে বিচার করা। এদের সম্পর্কে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন: “যেসব লোক আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন, তদনুযায়ী ফয়সালা করে না, তারাই জালিম।” (সূরা আল মায়েদা, ৪৫)
আপনারাই বলতে বাধ্য হবেন আপনাদের শাসকবর্গ ইসলাম বহির্ভূত বিধান দিয়ে কিভাবে শাসনকার্য পরিচালনা করছে ও ইসলামী রাষ্টন্স প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে কোন ভূমিকাই পালন করছে না। অথচ কুফরী রাষ্টন্সসমূহ তাদের উপর বিভিন্নভাবে প্রভাব বিস্তার করে আছে। মুসলিম শাসকদের কেউ কেউ নিজেদের মিথ্যা দোহাই দিয়ে মুসলিম দেশ পরিচালনা করছে অথচ তাদের ভূমিকা অনেক েেত্র সরাসরি ইসলাম বিরোধীতার শামিল বলে বিবেচিত হয়। এসব গর্হিত কাজের অনেকাংশ তাদের ইসলাম সম্পর্কে অজ্ঞতার কারণে সংঘটিত হতে থাকে।
আমাদের পূর্ব পুরুষদের জুলুম থেকে বাঁচার মানসিকতা বিষয়ে একটি সংপ্তি বর্ণনা শুনুন। একদা জনৈক ব্যক্তি হযরত সুফিয়ান সাওরী (রা:)-এর নিকট এসে তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, আমি বাদশার কাপড় সিলাই করে থাকি। এতে আমি কি জালেমের সাহায্যকারী হিসেবে বিবেচিত হব? উত্তরে তিনি বললেন, তুমি সরাসরি জালেমের সাহায্যকারী বলে ধর্তব্য হবে না। বরং সাহায্যকারী হিসেবে ঐ সমস্ত লোক বিবেচিত হবে যারা তোমার নিকট থেকে সুঁই ও সুতা ক্রয় করে থাকে। জুলুমের ভাবার্থ যে কত ব্যাপক তা এই বর্ণনা থেকেই আমাদের সুýপষ্ট হয়ে থাকে।
মুসলিম ভ্রাতৃবৃন্দ!
আমাদের পূর্বসূরীগণ জুলুমের ভাবার্থ যে কত ব্যাপকতর অর্থে বুঝতেন তা উপরোক্ত ঘটনা থেকেই সুýপষ্ট হয়ে উঠেছে। যে ব্যক্তি জালিমকে জুলুম কার্যে সহায়তা করে যাতে কোন নিরাপরাধ মুসলিমের অধিকার ভূলুণ্ঠিত হয়ে থাকে সে আল্লাহর গযবে নিজেকে লিপ্ত করল এবং ঐ জুলুমের পরিণতি তাকেও ভোগ করতে হবে।
চার : যে ব্যক্তি অন্যের এক বিঘত পরিমাণ জমিও জুলুমের বশবর্তী হয়ে গ্রহণ করে তাও বড় ধরনের জুলুম বলে বিবেচিত হবে। বুখারী ও মুসলিম শরীফে হযরত সাঈদ ইবন যায়িদ (রা:) থেকে বর্ণিত, রাসূল (স:) ইরশাদ করেন: যে ব্যক্তি জুলুমের বশবর্তী হয়ে অন্যের এক বিঘত পরিমাণ জমিও গ্রহণ করে, আল্লাহ তার ঘাড়ে কিয়ামতের দিবস সাত স্তবক জমি ঝুলিয়ে দেবেন।” এর অর্থ হল সাত স্তবক জমি ঐদিন তার কাঁধে ঝুলতে থাকবে। আল্লাহর বান্দাগণ, বলুন তো কে এই বোঝা বহন করার সামর্থ রাখে? অতএব আপনারা আল্লাহকে ভয় করত মৃত্যু গ্রাস করার পূর্বেই জুলুমের বিরুদ্ধাচরণ করুন ও তা থেকে মুক্ত থাকুন। এ সাবধানবাণী উল্লেখ করতে আল্লাহ ইরশাদ করেন: “তোমাদের প্রতি অবতীর্ণ উত্তম বিষয়ের অনুসরণ কর তোমাদের কাছে অতর্কিতে ও অজ্ঞাতসারে আযাব আসার পূর্বে যাতে কেউ না বলে, হায় হায়, আল্লাহ সকাশে আমি কর্তব্যে অবহেলা করেছি এবং আমি ঠাট্টা-বিদন্সূপকারীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলাম।” (সূরা আয যুমার, ৫৫)
আল্লাহ আরও ইরশাদ করেন: “জালিমরা যা করে, সে সম্পর্কে আল্লাহকে কখনও বেখবর মনে করো না।” (সূরা ইব্রাহিম, ৪২)
আপনাদের কেউ ইতিমধ্যে জুলুম করে ফেললে, সে ব্যাপারে সজাগ হউন, তার কাছ থেকে মা চেয়ে নিন। ইহকালেই এর ব্যবস্খা করে নিন। পরকালে টাকা-পয়সা, দীনার-দিরহাম দিয়েও তার তিপূরণ করা যাবে না। সেদিন ইহকালীন জীবনের টাকা-কড়ির পরিবর্তে স্বীয় আমল দিয়ে অন্যের তিপুরণের ব্যবস্খা হবে। যেহেতু সেদিন আমরা সবাই রিক্তহস্তে কবর থেকে উথিত হব। তাই বন্ধুরা জীবনবায়ু ফুরানোর পূর্বেই অন্যের হকের ব্যাপারে সাবধান হোন। আপনি কখনো জুলুম করতে মনস্খ করলে তখনই আল্লাহর সামনে দাঁড়ানোর কথা সôরণ করুন এবং যৌবনে অতিশক্তির অধিকারী মনে হলে মহান আল্লাহর শক্তিমত্তার বিষয়ে একটু ভেবে নেবেন, এতে নিজেকে ব্যালেন্স করে চলা সহায়ক হবে।
সর্বাবস্খায় জালেমের সাহায্যকারী হওয়া থেকে বিরত থাকুন ও জালেমদের সংশন্সব ত্যাগ করুন। নতুবা আপনার মনের অগোচরে নিজের নেক আমলগুলো খসে পড়তে থাকবে অথচ আপনি টেরও পাবেন না। আমাদের প্রিয় নবী (স:) তাঁর উমôতদের সাবধান করত ইরশাদ করেন, “মহান আল্লাহ জালেমদের জুলুমের সময় বাধা না দিয়ে সুযোগ দিয়ে থাকেন, অত:পর যখন তাকে পাকড়াও করেন তখন আর কোন অবকাশ দেন না। অত:পর তিনি মহান আল্লাহর বাণী উচ্চারণ করেন, যার ভাবার্থ হলো: “আর তোমার রব যখন কোন পাপপূর্ণ জনপদকে ধরেন, তখন এমনিভাবেই ধরে থাকেন। নিশ্চয়ই তাঁর পাকড়াও খুবই মারাত্মক।” (সূরা হুদ, ১০২) “হে আমাদের পালনকর্তা, আমাদের উপর এ জালেম কাওমের শক্তি পরীক্ষা করিও না। আর আমাদেরকে অনুগ্রহ করে ছাড়িয়ে দাও এই কাফিরদের কবল থেকে।” (সূরা ইউনুস, ৮৫, ৮৬)
আল্লাহর বান্দাগণ!
সর্বদা আল্লাহর সôরণে নিজেদের নিয়োজিত রাখতে চেষ্টা করবেন। আপনারা যেহেতু তাঁর প থেকে দোয়া কবুলের ব্যাপারে ইয়াক্কিন রাখেন তাই তাঁর কাছে প্রার্থনা করুন। আমরা তাওবাহকারীদের সফলতা কামনা করছি। তাই আপনারাও তাওবাহ করুন।