শিরক: বাংলাদেশের মুসলিম সমাজে এর ধরন ও প্রকৃতি

ইসলাম একটি পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্খা। এই জীবন দর্শনের ভিত্তি তাওহীদ। যুগে যুগে নবী-রাসূলগণের সকল আহ্বানই ছিল তাওহীদের ওপর ভিত্তি করে। আর তা হলো- অদ্বিতীয় এক আল্লাহর উপর বিশবাস স্খাপন করা এবং একমাত্র তাঁরই ইবাদত করা। পাশাপাশি শয়তানের প্ররোচনায় বিভ্রান্ত মানবগোষ্ঠী যে পথে যাত্রা করেছে তা হয়তো নাস্তিকতা, নয়তো শিরকের অন্ধকার পথ। তাওহীদের পথ যতটা আলোকময় ও পরিচ্ছন্ন, শিরকের পথ ততটাই অন্ধকারাচ্ছন্ন ও বিভ্রান্তিকর। কারণ শিরক তাওহীদের সম্পূর্ণ বিপরীত। এর ধরন ও প্রকৃতির মধ্যে কোথাও কোথাও সামান্য তারতম্য পরিলতি হলেও ল্য-উদ্দেশ্য এক ও অভিন্ন। বাংলাদেশের মুসলিম সমাজেও এর অস্তিত্ব বিদ্যমান।
আমাদের সমাজের অনেকে নিররতা, স্বল্প শিা এবং দারিদেন্সর কারণে জীবন সম্পর্কে অসচেতন। ধর্মীয় জীবনের েেত্রও একই অবস্খা। সমাজের মুসলমানরা ‘আলিম-উলামা, পীর-মাশায়েখ, ধর্মীয় মুরব্বীগণের মুখে শুনে এবং তাদের দেখে ইসলাম পালন করতে চেষ্টা করে। তাছাড়া তারা পূর্বপুরুষদের আচরিত জীবনাচরণও গতানুগতিকভাবে গ্রহণ করেছে। কোন কোন কুসংস্কারকে তারা বিশবাসগতভাবে পাপ জানলেও কার্যত তাকে ুদন্স ভাবেন। আবার এর কোনটাকে ইবাদত বানিয়ে ছেড়েছে। আনন্দ, খুশী বা দু:খ-কষ্ট প্রকাশে মনগড়া রেওয়াজ পালনে এতবেশি যতîবান হয়ে পড়েছে যে, ফরয, ওয়াজিব বাদ দিয়ে হলেও রেওয়াজটি নির্দিষ্ট সময়ে পালনে আবশ্যক বোধ করে। এর মধ্যে অন্যতম শিরক বিদ্যমান। এর পেছনে তাদের সঠিক জ্ঞানগত ধারণা ও বুঝ অনুপস্খিত। এখানে হযরত ‘উমর (রা)-এর একটি বাণী সôরণযোগ্য। তাঁর নিকট এক লোকের প্রশংসায় বলা হলো, লোকটি এমনই পূণ্যবান যে, সে পাপ সম্পর্কে কোন জ্ঞানই রাখে না।” জবাবে তিনি বললেন, “এ অবস্খা হলে লোকটির পাপের মধ্যে জড়িয়ে পড়ার আশংকা খুবই বেশি। কারণ যে লোক পাপ ও পুণ্যের মধ্যে পার্থক্য করতে জানে না, তার যে কোন সময় পাপের মধ্যে জড়িয়ে পড়া স্বাভাবিক।” সুতরাং ঈমানের দাবী পূরণে সে জাহিলিয়াতের ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ জানা খুবই গুরুত্বপূর্ণ যা আল কুরআনে শিরক বা বড় যুলুম নামে আখ্যায়িত করা হয়েছে।
শিরকের পরিচয়
মানুষের চিন্তা ও কর্মে শিরকের অনুপ্রবেশ অত্যন্ত সূক্ষ্মভাবে হয়ে থাকে। অনেক সচেতন মানুষও ঘটনাচক্রে এ ভুল করে বসেন। শিরকের শাব্দিক অর্থ আমরা অংশী সাব্যস্ত করাকে বুঝি। বিশেষত আল্লাহ তা'আলার সাথে কাউকে সমক বিবেচনা করা অর্থে। ড· ইব্রাহীম ইব্ন মুহামôদ আল বারিকান বলেন, শিরক বলতে, “গায়রুল্লাহকে আল্লাহর সাথে তাঁর বৈশিষ্ট্যের দিক থেকে সমক বিবেচনা করা বুঝায়।” বিশেষ অর্থে “গায়রুল্লাহকে আল্লাহর সাথে ইলাহ্, মা'বুদ ও আনুগত্যের প্রাপক হিসেবে বিবেচনা করাকে বুঝায়।” শায়ক সুলাইমান ইব্ন আবদুল্লাহ আল্ শায়খ বলেন, “শিরক, মহান ও পবিত্রতম আল্লাহর বৈশিষ্ট্যাবলীর সাথে সৃষ্টির সাদৃশ্য করা, উলুহিয়্যাতের েেত্র, ভাল-মন্দের মতার েেত্র, প্রদান ও নিষিদ্ধ করার েেত্র, প্রার্থনা, ভয়, প্রত্যাশা, নির্ভরতা ও তাঁর উদ্দেশ্যে সম্পাদিত সকল প্রকার ইবাদতের সাথে সম্পর্কিত।”

বাংলাদেশের মুসলিম সমাজে শিরক ও তার ধরন
আমাদের দেশের সাধারণ মানুষ ধর্মপ্রাণ। তারা ইচ্ছাকৃতভাবে স্বভাবত কোন শিরকী কাজে লিপ্ত হয় না। তবে অজ্ঞতা ও অসচেতনতার কারণে অনেক সময় শিরকে লিপ্ত হয়ে পড়ে। সেটা কখনও ব্যক্তিগত কাজের নামে, কখনও সামাজিক লোকাচারের নামে, কখনও রাষ্টন্সীয় কার্যাদির নামে, আবার কখনও ধর্মীয় কাজের নামে। তার ধরন ও প্রকৃতি সম্পর্কে অতি সংেেপ এ পর্যায়ে আলোচনা করা হলো:

এক· চিন্তা ও বিশবাসগত শিরক:
মানুষ যে কোন কাজ তার চিন্তা ও বিশবাস থেকে করে থাকে। এ থেকেই সে কাজের অনুপ্রেরণালাভ করে। নিজেকে করে কর্মতৎপর। শিরকের েেত্রও বিষয়টি সমভাবে প্রযোজ্য। যেমন, আল্লাহ তা'আলার রূবুবিয়্যাত ও ব্যবস্খাপনা সংক্রান্ত শিরক। তাঁর রব্ব বা সৃষ্টিকর্তা ও ব্যবস্খাপক হওয়া একটা অনস্বীকার্য সত্যরূপে চিরকালই স্বীকৃত হয়ে আসছে- আল্লাহকে এভাবে মক্কার কাফিরদেরও মেনে নেয়ার কথা কুরআনে ঘোষিত হয়েছে। তাদের অনেকেরই বিশবাস ছিল, “বিশবলোকের সন্সষ্টা এক আল্লাহ হলেও তিনি একাই এর ব্যবস্খাপনা পরিচালনা করছেন না, তার একার পে সম্ভবও নয়। এই কাজে তার সাথে অন্যান্য শক্তি ও শরীক রয়েছে। আবার অনেকে বিশবাস করত আল্লাহ তা'আলা পৃথিবী সৃষ্টির পরে এ থেকে বিচ্ছিন্ন ও নি:স্বার্থ হয়ে গেছেন; এখন তা আপনাতেই চলছে।অসিলা ও শাফা'আত সংক্রান্ত শিরক।আল্লাহর নাম ও গুণ সম্পর্কিত শিরক। তাঁর কোন সৃষ্টিকে ঐ গুণে গুনানিবত করা যা কেবল আল্লাহর জন্যই নির্দিষ্ট। যেমন গায়েবের জ্ঞান।আল্লাহর গুণাবলী সংক্রান্ত শিরক। যেমন, তিনি যে সব গুণাবলীর অধিকারী অন্য কাউকে তেমন গুণাবলীর মালিক মনে করা ইত্যাদি।আল্লাহ তা'আলার উলুহিয়্যাত সংক্রান্ত শিরক। নবী-রাসূলগণের দাওয়াত ‘ইবাদতে তাওহীদ প্রতিষ্ঠা করা এবং শিরক ও মূর্তিপূজার শৃকôখল ছিন্ন করার উপরই নিবন্ধ। আল্লাহ তা'আলার উলুহিয়্যাতের সাথে মানুষ ‘ইবাদতের নামে সবচেয়ে বেশি শিরক করে থাকে। যেমন, আল্লাহর ইবাদত সংক্রান্ত শিরক। কেউ যদি নবী-রাসূলগণের দিক নির্দেশনার বাইরে নিজস্ব ধ্যান ধারনায় ‘ইবাদত করতে চেষ্টা করে তা অবশ্যই বর্জনীয় অথবা শিরক বা কুফরের পর্যায়ে পড়বে।
ঈমান আনা সংক্রান্ত শিরক। যদি কেউ আল্লাহ ব্যতীত কাউকে অন্তর্ভূক্ত করে তাহলে তা অবশ্যই শিরকের পর্যায়ভুক্ত হবে।

মুহাব্বত বা ভালবাসার মধ্যেও শিরক সূক্ষ্ম পর্যায়ে অবস্খান করে। কারণ ভালবাসা ও প্রেম একমাত্র আল্লাহর উদ্দেশ্যে শরী'আতসম্মত পন্থায় হতে হবে।
আওলিয়া কিরাম, পীর মাশায়েখ ও নেককার মানুষদের ব্যাপারে ধারনা পোষণ সংক্রান্ত শিরক। তাঁদের ব্যাপারে এমন ধারণা পোষণ করে যে, “এ পৃথিবীতে অনেক সমôানিত অলী-দরবেশ, কুতুব ও সালেহ, মনীষী আছেন যাঁরা মানব সমাজ পরিচালনার ক্ষেত্রে বিশেষ শক্তি মতার অধিকারী। তাঁরা মানুষের জীবনে উন্নতি-অবনতি, সুখ-দু:খ, জয়-পরাজয় ও লাভ-তি ইত্যাদি বিষয়ে উক্ত মতা ব্যবহার করেন।”আওলিয়া কিরাম, পীর-মাশায়েখ ও নেককার মানুষদের প্রতি সমôান প্রদর্শন সংক্রান্ত শিরক। অনেকে বিশবাস করে যে, আওলিয়া, মাশায়িখ ও সালেহীন মনীষীগণকে কৃতজ্ঞতামূলক সাজদা করাতে কোন দোষ নেই। বরং এটা পালনযোগ্য শিষ্টাচার। অনেকে তাঁদের লাঠি, টুপী, জুব্বা, পাগড়ী, তাছবীহ, বসার চেয়ার, খাটসহ ব্যবহার্য জিনিসপত্রকে সংরতি স্খানে রেখে সে স্খানকে যিয়ারতের স্খানে পরিণত করে। জ্বীন সম্প্রদায়ের প্রভাব সংক্রান্ত শিরক। যেমন, কেউ নতুন বাড়ি তৈরি করার সময় সেখানে জ্বীনের ভয় অপসারণের ল্েয কুরবানী মানত করে, ভিতের নীচে মিষ্টি ও সোনা দিয়ে থাকে ইত্যাদি।

দুই· কুসংস্কারগত শিরক: আমরা জানি মানব সমাজে শিরকের সূচনা ও প্রসারের অন্যতম কারণ প্রচলিত সামাজিক বা ধর্মীয় কুসংস্কার। যুগে যুগে মানুষ এ কুসংস্কারের বেড়াজালে বা মায়াজালে আবদ্ধ হয়ে অনেক সময় শিরকের মত জঘন্য পাপে লিপ্ত হয়েছে। আমাদের সমাজের ক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রম হয়নি। নিম্নে কয়েকটি তুলে ধরা হলো:
মতাধর ব্যক্তিদের সম্মান প্রদর্শন সংক্রান্ত শিরক। সমাজে শাসক কিংবা দায়িত্বশীল রাষ্টন্সীয় কর্মকর্তাকে সাধারণ নিয়মে সম্মান প্রদর্শন করাতে কোন দোষ নেই। কিন্তু অনেকে ব্যক্তিগত স্বার্থ লাভের মানসে তাদেরকে অতিরিক্ত ভালবাসা অথবা অনাকাকিôখত সম্ভাষণ, হালালকে হারাম এবং হারামকে হালাল বলে ঘোষণা করতেও দ্বিধা করে না। নি:সন্দেহে এ ধরনের কাজ কুফর ও শিরকের পর্যায়ভুক্ত।জন্ম-মৃত্যু, বিয়ে-শাদীসহ ব্যক্তিক, পারিবারিক, সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদিতে অমুসলিম আনুষ্ঠানিকতা অব্যাহত থাকে।সন্তান কামনা ও রোগ মুক্তির আকাংখা কোন পীরের দরগাহ, খানকাহ বা মাযারে ও মসজিদে মানত করা।বাংলাদেশের দণিাঞ্চলের বিশেষ করে বৃহত্তর খুলনা এলাকার লোক নৌকা পথে কাঠ ও মধু সংগ্রহের জন্য জঙ্গলে যায়, তখন নৌকাটি দুধ দিয়ে ধুয়ে ফেলা হয়। কেউ তেল, ডাবের পানি অথবা পানি দ্বারা ধুয়ে বলে থাকে মা কাষ্ঠদেবী রূজীতে বরকত দিও এবং বিপদ-আপদ হতে রা করো। এটা সুস্পষ্ট শিরক।দেশের বহুলোক মনে করে বাঁশ, সুপারী, নারিকেল গাছ রোপন করলে বংশ বিনাশ হয় বা ব্যধিগ্রস্খ হয়। শনি, মঙ্গল ও বৃহýপতিবারে বাঁশের গায়ে জ্বর থাকে বিধায় উক্ত বাঁশ কাটলে সে জ্বর বাঁশ কর্তনকারীর গায়ে হলে তার মৃত্যু নিশ্চিত হয় ইত্যাদি। মানুষ মারা গেলে এক বছরের মধ্যে সে বাড়িতে চাউল ও হলুদ কোটে না, সূর্যাস্তের পরে হলুদ, চিটেগুড় বিক্রি করে না, জ্বীন ভূতের আক্রমণ হতে রা পাওয়ার জন্য ছেলেমেয়ের মাথায় হলুদের গুড়া দেয়া হয়। বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে হলুদ কুটলে প্রথম সন্তান মারা যায়, কল্যাণের উদ্দেশ্যে সন্ধ্যাবাতি জ্বালানো, কল্যাণের আশায় কোন খাদ্য-শস্য মাপার পূর্বে ‘বরকত' শব্দ বলা, বাসার রান্না করা খাবার পুরুষ লোককে না খাওয়ায়ে ফকির বা স্ত্রী লোককে না দেয়া, ধান-চাল মাপার দাঁড়িতে বা পাত্রে পা লাগলে সালাম করা ইত্যাদি।আমাদের দেশের অনেক মানুষের ধারণা ভাল নাম রাখলে সন্তান বাঁচে না সে জন্য সন্তানের নাম রাখে পঁচা, প্যাচা, ফেলী, কালু ইত্যাদি। এ ছাড়া আবদুল নবী, আবদুর রসূল ইত্যাদি নাম রাখা হয়।

তিন· বিবিধ কর্মগত শিরক: সূত্রধররা মুখে বিশবকর্মার নাম নিয়ে কাজ আরম্ভ করে, সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার ষষ্ঠ রাতে আতুর ঘরে দোয়াত-কলম ইত্যাদি রেখে দেয়া, সকালে কিংবা কোন রোগ শোকে বিপন্নকালে কাক, পেঁচা ও কুকুর ডাকলে অশুভ লণ বলে বোধ করা হয়, কোন আত্মীয়-স্বজন মারা গেছেন বলে ধারণা করা হয়। জ্বীন ভূতের আক্রমণ, সাপের কামড় কিংবা ছোট ছোট ছেলে-মেয়েদের গায়ে বাও-বাতাস লাগার ভয়ে কুফরী মন্ত্র পাঠকারীদের নিকট থেকে তাবিজ-তদবীর নেয়া শিরক। কোন ব্যক্তি দূরদেশে যাত্রাকালে তার পেছন থেকে ডাক দিলে, পায়ে হোঁচট খেলে কিংবা খালি কলস সামনে পড়লে যাত্রা অশুভ হয়। পঞ্জিকার হিসাব অনুযায়ী যাত্রা শুভ অশুভ, বিবাহের দিন ও লগ্ন নির্ধারণ, পুকুর কিংবা ঘরবাড়ি পত্তন করতে উক্ত চিন্তা করা, গ্রাম বন্ধ করে নেয়া, ছাগলের চামড়ার মধ্যে খড় ভর্তি করে ছাগলে প্রতিকৃতি তৈরি করে গ্রামের বহু রাস্তার মাথায় বাঁশের মাথায় উঁচু করে রাখা শিরক। কোন ব্যক্তি এক জায়গায় দাঁড়িয়ে কোন ব্যক্তিকে নিয়ে আলোচনাকালে উক্ত ব্যক্তি উপস্খিত হলে বলা হয়, আপনি দীর্ঘজীবী হবেন, ব্যবসায়ী নগদ বিক্রি না হওয়া পর্যন্ত কোন মাল বাকিতে বিক্রি করেন না এ ধারনায় যে, সারাদিন তাকে বাকিতেই বিক্রি করতে হবে প্রথম বিক্রির টাকাটা মাথা, দাঁড়িপাল্লায় ও ক্যাশ বাক্সের গায়ে লাগানো ও সালাম করা হয় এ উদ্দেশ্যে যে, ব্যবসায় লাভবান হওয়া যাবে। “উপরে আল্লাহ নিচে মা খাকি” এ জাতীয় কথা শিরক।” রাশিফলে বিশবাস করা শিরক।যদি কেউ আল্লাহর সাথে কাউকে ভয়ের ব্যাপারে সম্পৃক্ত করে অথবা কোন শাসক কিংবা প্রভাবশালী ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গ ভয় করে সৎকাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ হতে দূরে থাকে, তা হলে এটি অবশ্যই অপরাধের বিষয় হিসেবে গণ্য হবে।

দোয়া সংক্রান্ত শিরক: আল্লাহ ছাড়া মানুষ কারো চাইলে অবশ্যই তা হবে শিরক। বিপদগ্রস্খ অথবা প্রত্যাশার প্রাপ্তি নিয়ে মানুষ ধৈর্যহারা হয়ে অনেক সময় এ জাতীয় শিরকে লিপ্ত।

মানত সংক্রান্ত শিরক: কোন গায়রুল্লাহর নামে মানত করা যাবে না, এটা হারাম।যবেহ ও কুরবানী সংক্রান্ত শিরক: যেমন, আকীকা, হজ্জ, আলিমা ও ঈদ-কুরবানী ইত্যাদি অবশ্যই আল্লাহর নামে হতে হবে। অন্যথায় শিরক হবে।
রুকু ও সাজদা সংক্রান্ত শিরক: অন্যকারো জন্য রুকু সিজদা করা সম্পূর্ণ হারাম।
আল্লাহর অধিকারে শিরক: যেমন আল্লাহর পরিবর্তে অন্য কারো দাসত্ব বা আনুগত্য করা ইত্যাদি।
মুসলমান হিসেবে আজ আমাদেরকে দীপ্ত কণ্ঠে ঘোষণা দিতে হবে; যেমন ঘোষণা দিয়েছিলেন তাওহীদ ও একত্ববাদের ইমাম হযরত ইবরাহীম (আ), “তোমাদের সাথে এবং তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে যার ইবাদাত কর তার সাথে আমাদের কোন সম্পর্ক নেই। আমরা তোমাদেরকে মানি না। তোমাদের ও আমাদের মধ্যে সৃষ্টি হলো শত্রুতা ও বিদ্বেষ চিরকালের জন্য; যদি না তোমরা এক আল্লাহতে ঈমান আন।” এ সকল ভ্রান্ত পূজার উৎস হলো প্রবৃত্তিপূজা তথা আল্লাহর আইন ও বিধানকে তুচ্ছ জ্ঞান করে নফস ও প্রবৃত্তির ইচ্ছানুযায়ী চলা। এটাই সকল শিরক সমস্ত অন্যায় ও সীমালংঘনের ভিত্তি। এ দিক থেকে সবচেয়ে বড় উপাস্য হলো নফস্ বা প্রবৃত্তি। অতএব, আমাদেরকে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ'-এর ঘোষণার মাধ্যমে সে সকল বস্তুকে অস্বীকার করতে হবে যাকে ইলাহ মনে করার সামান্যতম আশংকা রয়েছে এবং নিজেকে সকল প্রকার ও সকল স্তরের শিরক হতে সম্পূর্ণ মুক্ত ও পূত-পবিত্র রাখতে হবে। নিজের অন্তরে তাওহীদ ও একত্ববাদের বিশবাসকে পরিপূর্ণ ও নির্ভেজাল করার জন্য সদা সচেষ্ট থাকতে হবে। শিরক যেমন মহান আল্লাহর নিকট সর্বাধিক নিন্দিত বিষয়; তাওহীদও তেমনি তাঁর নিকট সর্বাধিক নন্দিত বিষয় এবং সমগ্র দীনের রূহ ও প্রাণশক্তি।
ড· মীর মন্জুর মাহমুদ
লেখক: উপ-রেজিস্টন্সার, জাতীয় বিশববিদ্যালয়, গাজীপুর