বিদয়াত পরিহার করা

বিদয়াত অর্থ -

১. কোনো রুপ পুর্ব নমুনা না দেখে এবং অন্য কোনো কিছুর অনুকরন না করেই কোনো কার্য নতুনভাবে সৃষ্টি করা। একটা প্রতিষ্টিত মতের বিরুদ্ধে নতুন করে কোন মতামত তৈরী করার নাম বিদয়াত।

২. এমন কিছু নতুন আবিষ্কৃত পথ ও মতকে বুঝানো হয় যার সাথে কোরআন ও হাদীসের কোন সম্পর্ক নাই বা নতুন কোন মতামতকে প্রতিষ্টিত করতে কোরান বা হাদীসের সাথে কোন রকম সামঞ্জস্যতা রাখা হয়না।

৩. বিদয়াত অর্থ এমন কোন কাজ বা কথাকে শরিয়ত সম্মত বলিয়া মেনে নেওয়া ,যাহা বাস্তবিক পক্ষে শরিয়তের কোন প্রতিষ্টিত মতের বা দলিলের উপর ভিত্তিশীল নয়।

৪. ইহা সম্পুর্ন নতুন, বাহির হইতে আমদানী করা ও শরীয়তের ভিত্তিহীন জিনিস এবং উহার পরিনাম সুস্পষ্ট গোমরাহী - এই জিনিস গুলির পরিনামও পরিস্কার ভ্রষ্টতা-ইহাতে কোন সন্দেহ নাই।

৫. বিদআত বলতে বুঝায় দ্বিন পরিপুর্ন হওয়ার পর দ্বীনের মধ্যে কোনো নতুন জিনিসের উদ্ভব হওয়া। আর তা হচ্ছে এমন সব জিনিস যার অস্তিত্ব নবী করিম সাঃ এর যুগে বাস্তব কাজ কথা , সমর্থন অনুমোদনের আকারেও বর্তমান ছিলনা এবং শরিয়তের নিয়ম বিধনের দৃষ্টিতেও যে বিষয়ে কোনো অনুমতি পাওয়া যায়না।

৫. বিদআত অর্থ নতুন কথার সৃষ্টি করা , যাহার কোন মুলই বর্তমান নাই। যাহার মুলে শরিয়তের দলিল আছে তাহা বিদআত নয়। তবে শরিয়তের দৃষ্টিতে বিদআত একটি জঘন্য খারাপ কাজ।‍

সমাজে এর প্রভাবঃ

বিশ্বনবী (সাঃ) যে আদর্শ দুনিয়ার মানুষের সামনে উপস্থাপিত করেছেন , এক কথায় তাই হচ্ছে সুন্নত এবং তার বিপরীত যা কিছু তা বিদয়াত হিসাবে গন্য। নবী (সাঃ) দীর্ঘ ২৩ বছর ধরে অবিশ্রান্ত সাধনা ও সংগ্রামের মাধ্যমে যে সমাজ গড়ে তুলেছিলেন , তাকে তিনি মুক্ত করেছিলেন সর্বপ্রকারের বিদয়াত ও জাহিলিয়াতের অক্টোপাশ থেকে এবং প্রতিষ্টিত করেছিলেন সুন্নাতের আলোকোদ্ভাসিত মহান আদর্শের উপর, বিশ্ব মানবতার পক্ষে এ ছিল মহা সৌভাগ্যের ব্যাপার।

পরবর্তীকালে নানা কারনে মুসলিম সমাজ সুন্নাতের আদর্শ থেকে বিচ্যুত হয়ে পড়ে, তাদের আকিদা ও আমলে প্রবেশ করে নানা রকম বিদয়াত। এমন দিন দেখা যায় , যখন মুসলমানরা সুন্নাত ও বিদয়াতের এক জগাখিচুড়ী বিধানকেই ইসলামী আদর্শ বলে মনে করতে ও অনুসরন করতে শুরু করে। ফলে তাদের জীবনে নেমে আসে বিপর্যয়। বর্তমান সময়ও সেই করুন ইতিহাসের ক্রান্তি কাল পার করছে।

সমাজে নব্য আবিষ্কৃত অনেক রুসুম ও রেওয়াজের প্রচলন আছে যা ধর্মের বানী রুপে অতি সহজে চালিয়ে দেওয়া হয় । সরল সহজ মনের মানুষেরা এ ধরনের কুপ্রচরনার ফাদে আটকা পড়ে। কারন তাদের অনেকেই জানেনা কোনটা বিদয়াত আর কোনটা সুন্নাত।

এক্ষেত্রে আমাদের ধর্ম প্রচারকারীরা শত চেষ্টার পরও তাদেরকে সমুলে রুখে দিতে পারেনা । কোরাআন ও সুন্নাত যখন তাদেরকে রুখে দিতে চায় বেদয়াতীরা তখন বেহায়া ও নির্লজ্জের মত আরেকটি বিদআতের সুচনা করে এবং মানুষকে সে পথের দিকে আহবান করে । সেক্ষেত্রে আমাদের করনীয় সম্পর্কে রাসুল সাঃ এর নির্দেশনা আছে । যেমন, ইরবাদ ইবনে সারিয়া (রাঃ) থেকে বর্নিত, রাসুল (সাঃ) বলেন, কোন হাবশী গোলাম ও যদি তোমাদের আমীর নিযুক্ত হয়, আমি তোমাদেরকে তাকওয়া অবলম্বন করতে,তার কথা শ্রবন করতে ও তার আনুগত্য করতে উপদেশ দিচ্ছি। কেননা তোমাদের মধ্যে যারা জীবিত থাকবে তারা অসংখ্য ব্যপারে মতভেদ দেখতে পাবে। এইরুপ অবস্থায় তোমাদের বিদআত হইতে বাচতে হবে। কেননা বিদআত সুষ্পষ্ট গোমরাহী । তোমাদের মাঝে যারা এ যুগে পৌছাবে তারা যেন আমার ও খোলাফায়ে রাশেদিনের সুন্নাতকে দাত দিয়ে আকড়ে ধরে।

আজকের সমাজ ব্যবস্থায় বিদয়াতের প্রচলন পরিলক্ষত হয় , সত্যিকার অর্থে এটা ভয়াবহ । কারন আল্লাহ ও রাসুল সাঃ এর পথ থেকে দুরে সরে যাচ্ছে মানুষেরা। সুষ্পষ্ট গোমরাহী আচ্ছন্ন করছে সমাজ ব্যবস্থাকে । শুরু হয়ে যাচ্ছে নানা রকম কলহ , ঝগড়া, ফাসাদ আর মারামারি। যারা আল্লাহ ও তার রাসুলের পথে থেকে নিজেকে ধন্য করতে পারেনি তারাই চেয়েছে জীবনের প্রতিটি দিক থেকে আল্লাহ ও তার রাসুলের অনুসরন উঠে যাক। বিনময়ে চালু হইক বিদায়াতের যত অকল্যান । আর অকল্যানের দাবানল অশান্তির আকারে ছড়িয়ে পড়ুক সর্বত্র । সেই অশান্তি ভোগ করুক মানুষ । আজকের সমাজে যতপ্রকার বিশৃঙ্খলা এ অশান্তি তার পিছনে কাজ করে বিদয়াতের মত নব্য উদ্ভাবিত জিনিসগুলো।

বিদয়াতের পরিচয় ঃ

বিদয়াত এর পরিচয় এর ক্ষেত্রে মুল যে কথাটি আমাদের জানা দরকার আর তা হলো যে, ইসলামী শরিয়তের ভিত্তি যে কাজ বা কথার মাঝে নাই তাই বেদয়াত । তারপর ও বেদয়াত এর কিছূ পরিচয় তুলে ধরা দরকার । নিম্মের বিষয়গুলি যে বেদয়াত সে ব্যপারে কোন সন্দেহ নাই। আসুন আমরা জেনে নিই আমাদের সমাজের প্রচলিত কয়েকটি গুরুত্বপুর্ন বেদয়াত ।

১. খিলাফতকে উত্তরাধিকার সুত্রে রাজত্বে পরিনত করা ।

২. কুরআন ও হাদিসের মুলনীতি বাদ দিয়ে শাসন কার্য পরিচালনা করা।

৩. কোরানে বর্নিত উত্তরাধিকার আইন অনুযায়ী পরিত্যাক্ত সম্পত্তি বন্টন না করা।

৪. সুদ জুয়ার প্রচলন করা ।

৫. ব্যক্তিগত মালিকানা অধিকার হরন করা।

৬. বর্ন গোত্র শ্রেনীতে মানুষের মাঝে ভেদাভেদ সৃষ্টি করা।

৭. মুসলমানদের মাঝে আল্লাহভীতি সৃষ্টির লক্ষে সাহিত্য ও সংষ্কৃতির সৃষ্টি না করা।

৮. নারী পুরুষের অবাধ সংমিশ্রন।

৯. নৃত্য গীত অভিনয়।

১০. কবর পুজা ।

১১. আল্লাহ ছাড়া অপর কারো নিকট সাহায্য কামনা করা।

১২. আল্লাহ ছাড়া অপর কারো নামে মানত করা।

১৩.কবরে মোমবাতী বা আগরবাতি প্রদান করা

১৪.মৃত মানুষের নিকট কোন কিছু কামনা করা।

১৫.কবরে সেজদা করা।

১৬.কোন মানুষকে নাজাতের ওসিলা মনে করা।

প্রতিকার ও কোরাআন হাদীসের বক্তব্য ঃ

দ্বীনে নতুন জিনিস উদ্ভব করার কোনো অধিকার কারো থাকতে পারেনা । আর কেউ যদি এমন বিষয়ের শুরু করেও থাকে, তা হবে চরম ভ্রান্তি। এমন ভ্রান্তি খেকে আমাদেরকে বাচতে হবে। এ ব্যাপারে আল্লাহ পাক সুরা ইউনুস এর ২২ নং আয়াতে বলেছেন ," فماذا بعد الحق إلا الضلال " অথ্যাৎ - হক কথার পর আর সব ভ্রান্তি।

আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে যে যে নির্দেশনা এসেছে সবই মানবতার কল্যানে নিবেদিত। সে কথার সত্যায়ন করা হয়েছে শুধুমাত্র রাসুল (সাঃ) এর মাধ্যমে। তাই দ্বীন পুর্ন হয়ে যাওয়র পরে তাতে কোনো জিনিসের বৃদ্ধি করা বা কোনো নতুন জিনিসকে দ্বীন মনে করা এবং তদানুযায়ী আমল করা - আমল করলে সওয়াব হবে বলে মনে করা এবং আমল না করলে আল্লার আজাব হবে বলে ভয় করাই হচ্ছে বিদয়াতের মুল কথা। অতএব এই দ্বীনে না কোনো জিনিস বৃদ্ধি করা যেতে পারে, না পারা যায় তা থেকে কোনো কিছু বাদ দেওয়া। কারন আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে হক কথা আমাদের কাছে এসে গেছে । আর আমরা তার অনুসরন করছি। সুষ্পষ্ট নির্দেশনা আসার পর আমরা অন্য পথের বা মতের অনুসরন করতে চাইনা । কারন আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে যে গ্রন্থ এসেছে সেখানে এমন কোন বিষয় বাদ দেওয়া হয়নি যে কারনে অন্য কোন পথ খুজতে হবে।

সে প্রসংগে মহান আল্লাহ সুরা আল আনয়ামের ৮ নং আয়াতে বলেছেন যে, "ما فرطنا في الكتاب من شيء " অর্থ্যাৎ, আমি এ কিতাবে কোন কিছু বাদ দেয়নি। দ্বীনের মধ্যে বিদয়াতের প্রচলনের কারনে মুল দ্বীনের বিকৃতি বা নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়ার কারন নিহিত রয়েছে। ইবাদতের কাজ কর্মে যদি আজ মন গড়া নিয়ম , শর্ত ও অনুষ্ঠানাদিকে

বরদাশত করে নেওয়া হয় । তাহলে নতুন নতুন জিনিস এত বেশী শামিল হয়ে যাবে যে, কোনটি আসল এবং কোনটি নকল তা পার্থক্য করা সম্ভব হবেনা। দ্বীন তো আল্লাহর দেওয়া এবং রাসুল (সাঃ) এর উপস্থাপিত জিনিস। তাতে যখন কেউ নতুন কিছু শামিল করে তখন তার অর্থ এই হয় যে আল্লাহ ও তার রাসুল সাঃ বুঝতে পারে নাই যে দ্বীন কেমন হওয়া উচিত! অথচ দ্বীন যে পরিপুর্নতা লাভ করেছে তার ঘোষনা আল্লাহ সুবহানাহু সুরা মায়েদার ৩ নং আয়তে দিয়েছেন

الْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِي وَرَضِيتُ لَكُمُ الإِسْلاَمَ

"আজকের দিনে তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পুর্ন করে করে দিলাম, তোমাদের প্রতি আমার নিযামতকে সম্যক ভাবে পরিপুর্ন করলাম এবং তোমাদের জন্য দ্বীন ইসলামকে দ্বীন হিসাবে পছন্দ করলনাম।"

তাই দ্বীনকে নিজের মত করে সাজিয়ে নেওযার দরকার আর হয়না। নিজের স্বল্প বুদ্ধিতার কারনে যদি সঠিক দ্বীন বুঝতে কারো কোন সমস্যা হয় এবং ধর্মের কোনো কথা তার কোন ব্যাক্তির কাছ থেকে শুনতে ভাল না লাগে, কারো সাথে যদি মতবিরোধ হয়, তার জন্য পথ বলে দেওয়া আছে কোরানে হাকিমে। সুরা নিসার ৫৯ নং আয়াতে বলা হয়েছে যে, " فإن تنازعتم في شيء فردوه إلى الله والرسول " তোমরা কখনো কোন বিষয়ে মত বিরোধ করলে - তখন তার সমাধানের জন্য সরাসরি তা আল্লাহ ও তার রাসুলের ( কিতাব ও সুন্নাতের দিকে রুজু কর)। এখানে কোন মানুষের কারনে দল মত সৃষ্টি করে নতুন কোনো কিছু সৃষ্টি করা যাবেনা । বরং মজবুত ভাবে মানতে হবে আল্লাহ ও তার রাসুলের কথা আর আকড়ে ধরতে হবে দাত দিয়ে। মুক্তির একমাত্র পথ হচ্ছে, আল্লাহ ও তার রাসুলের পথকে দৃড়ভাবে ধারন করা। তাই সুরা আল আনয়ামের ১৫৩ নং আয়াতে আল্লাহ পাক ঘোষনা করেন-যে,

" وأن هذا صراطي مستقيما فاتبعوه ولا تتبعوا السبل فتفرق بكم عن سبيله "

আর আমার এ রাস্তা সরল ও মজবুত । কাজেই তোমরা এ রাস্তায় চলো। এ ছাড়া অন্য রাস্তায় চলোনা, তা তোমাদের কে তার রাস্তা থেকে বিছিন্ন করে দিবে রাসুলের সুন্নাত সহজ সরল আর সত্যের এ পথকে সমুদ্ধশালী করেছে বহুগুনে। আল্লাহকে ভালবাসার সাথে সাথে তার রাসুলকে ভালবাসতে হবে, আর রাসুলকে ভালবাসার কোনো বিকল্প নাই। এজন্য যে, কোরানের মুল কথা কারো পক্ষে বুঝা সম্ভব হয়না তখন তাকে সরাসরি সুন্নাতে রাসুলের অনুসরন করতে হয় । রাসূল (সাঃ) কে অনুসরনের মাধ্যমে পাওয়া যায় আল্লাহকে পাওয়ার একমাত্র পথ। যারা বিদয়াত করে এবং তা বরদাশত করে তারা একনিষ্ট ভাবে আল্লাহর নিকট আর্তসমর্পন করতে পারেনি এবং নিজেদেরকে অনুগত বানাতে পারেনি রাসুল (সাঃ) এর। বস্তুত রাসুল (সাঃ) এর ভালবাসা অর্জনের মাধ্যমে বেদয়াত কে প্রতিরোধ করা সম্ভব।

রাসূল (সাঃ) কে ভালবাসা কারো ইচ্ছা বা অনিচ্ছার বিষয় নয়। ভালবাসার মাপকাটি নির্ধারন করা হয়েছে এবং আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে আমাদেরকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। রাসুলের ভালবাসা, তার আনুগত্য এবং সুন্নাতের বাস্তবায়ন এর মাধ্যমে বিদয়াত মুক্ত সমাজ গঠন সম্ভব। আর এ ভালবাসার মাধ্যমে অর্জিত হবে আল্লাহ তায়ালার কৃপা, মাফ হয়ে যাবে সকল গুনাহ। পরকালে নাজাতের জন্য কোন রকম চিন্তা করার প্রয়োজন হবেনা। সুরা আল ইমরানের ৩১ নং আয়াতে বলা হয়েছে যে, " قل إن كنتم تحبون الله فاتبعوني يحببكم الله ويغفر لكم ذنوبكم "

‍" তুমি বলে দাও তোমরা যদি আল্লাহকে ভালবাস তবে আমার (আমি রাসুল সাঃ এর) অনুসরন করো । তাহলে আল্লাহ তোমাদেরকে ভালবাসবেন এবং তোমাদের গোনাহ সমুহ মাফ করে দিবেন

ভালবাসার ধরনটা আল্লাহকে খুশি করার জন্য হতেই হবে। তার ব্যতিক্রম ঘটলে মনের মাঝে নানা রকম জল্পনা কল্পনা বাসা বাধে । রাসুল (সাঃ) এর আদেশকে মানতে তখন বেশ কষ্ট হয়। সে সুযোগ অন্তত মুসলমানের নাই। কল্পনার বশিভুত হয়ে বা আবেগের বশে পড়ে নিজের মতন করে দ্বীনের প্রচলন করা যাবেনা, করলে ও তা কারো কাছে গ্রহন যোগ্যও হবেনা ।

নিশ্চয় আল্লার কথার চেয়ে অন্য কারো কথা এবং রাসুল (সাঃ) এর পথের চেয়ে অন্য কারো দেখানো পথ ভালো হতে পারেনা। এ কথা বাদ দিয়ে যখনই অন্য কারো কথাকে বেশী প্রাধান্য দিতে হয় , তখনই অশান্তির দাবানল ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র । আর এ পথে চলা যে ভ্রান্তি তা আমরা হজরত জাবির রাঃ থেকে বর্নিত নিম্মের হাদিস থেকে জানতে পারি।

فإن خير الحديث كتاب الله وخير الهدى هدي محمد صلى الله عليه وسلم وشر الأمور محدثاتها وكل بدعة ضلالة

রাসুল (সাঃ) বলেন, সবচেয়ে ভাল কথা হচ্ছে আল্লাহ তায়ালার কথা আর সবচেয়ে ভাল পথ হচ্ছে মোহাম্মদ (সাঃ) এর পথ। দ্বীনের ব্যাপারে নতুন বিষয় (বিদয়াত) সৃস্টি করা সবচেয়ে খারাপ এবং সব নতুন বিষয় (বিদয়াতই) ভ্রান্তি

বিদয়াত এমন একটা জঘন্য বা ভ্রান্ত মতবাদ যা ফরজ-ওয়াজিবকে অস্বিকার করে। শরিয়তের ফরজ ও ওয়াজিবের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করার ইচ্ছাটুকু ও অন্তরে থাকেনা । অন্তর বিগড়ে যায়। এর ফলে শুরু করে নানা রকম নতুন কাজ আর ভাবতে থাকে এটাই উত্তম কাজ। আসলে সেটা কোনো কল্যানকর বা আসল কাজ নয়। এ ব্যাপারে শরিয়তের প্রধান ব্যক্তিগন সদা সর্বদা সতর্ক থাকার পরামর্শ পেশ করেছেন। যেমন , হজরত হুজায়ফা (রাঃ) বলেছেন - যে ইবাদাত সাহাবায়ে কিরাম করেননি , সে ইবাদত তোমরা করোনা। কেনানা অতীতের লোকেরা সামনের লোকদের জন্য কিছু বাকী রেখে যাননি। অতএব হে মুসলিম সমাজ, তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং পুর্ববর্তীদের রীতিনীতি তোমরা গ্রহন করো ( যদি তা হয় আল্লাহ এবং তার রাসুলের আদর্শ অনুযায়ী)


সমাপনি সুন্নাত ও বিদয়াতের আলোচনা থেকে একথা প্রমানিত যে, ইসলামের পুর্নাংগ আদশ হচ্ছে সুন্নাত এবং এরই বিপরীতকে বলা হয় বিদআত। সুন্নাত হচ্ছে উসওয়ায়ে হাসানা নিখুত ,উৎকৃষ্টতম ও উন্নততর আদর্শ যা আল্লাহ ও পরকালের প্রতি ঈমানদার প্রত্যেকটি মানুষের জন্যই একান্তভাবে অনুসরনীয়। বস্তুত ইসলামী আদর্শকে মনে মগজে ও কাজে কর্মে যে পুরোপরিভাবে গ্রহন ও অনুসরন করে চলে। সেই হচ্ছে প্রকৃত মুসলিম। পক্ষান্তরে ইসলামের বিপরীত চিন্তা -বিশ্বাস ও বাস্তব রীতি-নীতি যাই গ্রহন করা হবে তাই ববে বিদয়াত বা জাহিলিয়াত , যা খতম করার জন্য দুনিয়ায় এসেছিলেন মহানবী (সাঃ)। তিনি নিজে তার নবুয়তের জীবন ব্যাপী অবিশ্রান্ত সাধনার ফলে জাহিলিয়াতের বুনিয়াদ চুর্ন করেছেন এবং বিদয়াতের পথ রুদ্ধ করেছেন। মুসলিম সমাজের কোনো লোকের মনেই অপর লোকের বিরুদ্ধে কোনোরুপ হিংসা বা বিদ্বেষের স্থান দেয়না। এ হিংসা বা বিদ্বেষ যে ঈমান ও আমলের পক্ষে এবং পারষ্পরিক সম্পর্ক ও সামাজিক শান্তি শৃঙ্খলার দৃষ্টিতে । অতএব পরিচ্ছন্ন মন নিয়ে কাল যাপন করাই রাসুল (সাঃ) এর আদর্শ ।

বিদয়াত পালনে শুধু আল্লার সাথে শরিক করা বুঝায় না , রাসুল (সাঃ) এর রিসালাতেও শিরক করা হয়। কেননা আল্লার নাজিল করা শরিয়ত রাসুলই পেশ করে গেছেন পুর্ন ভাবেই-রাসুল পাঠাবার উদ্দেশ্য তাই। আল্লাহ এবং দ্বীন কি, তা আল্লাহর অনুমতিক্রমে রাসুলই নির্দেশ করে গেছেন। রাসুলের (সাঃ) দ্বারাই আদেশ নিষেধ, হালাল হারাম , জায়েজ নাজায়েজ , সওয়াব ও আজাবের সীমা নির্ধারিত হয়েছে।

এরুপ অবস্থায় কেউ যদি রাসুলের পেশ করা শরিয়তের বাইরে কোনো জিনিষকে শরিয়তের জিনিস বলে পেশ করে এবং তা মেনে নেয়, সে আল্লার সাথে শিরক করে , শরিক বানায় রাসুলের সাথেও। সে তো রাসুলের (সাঃ) দায়িত্ব ও মর্যাদা নিজের দখলে নিতে চায় কিংবা রাসুল (সাঃ) ছাড়া এ মর্যাদা আর অন্য কাউকে দিতে চায়।

বিশ্বনবী সাঃ যে আদর্শ দুনিয়ার মানুষের সামনে উপস্থাপিত করেছেন , এক কথায় তাই হচ্ছে সুন্নত এবং তার বিপরীত যা কিছু তা বিদয়াত হিসাবে গন্য। নবী (সাঃ) দীর্ঘ ২৩ বছর ধরে অবিশ্রান্ত সাধনা ও সংগ্রামের মাধ্যমে যে সমাজ গড়ে তুলেছিলেন , তাকে তিনি মুক্ত করেছিলেন সর্বপ্রকারের বিদয়াত ও জাহিলিয়াতের অক্টোপাশ থেকে এবং প্রতিষ্টিত করেছিলেন সুন্নাতের আলোকোদ্ভাসিত মহান আদর্শের উপর বিশ্ব মানবতার পক্ষে এ ছিল মহা সৌভাগ্যের ব্যাপার।

পরবর্তীকালে নানা কারনে মুসলিম সমাজ সুন্নাতের আদর্শ থেকে বিচ্যুত হয়ে পড়ে, তাদের আকিদা ও আমলে প্রবেশ করে নানা রকম বিদয়াত। এমন দিন দেখা যায় , যখন মুসলমানরা সুন্নাত ও বিদয়াতের এক জগাখিচুড়ী বিধানকেই ইসলামী আদর্শ বলে মনে করতে ও অনুসরন করতে শুরু করে। ফলে তাদের জীবনে নেমে আসে বিপর্যয়। বর্তমান সময় সেই দারুন করুন ইতিহাসের ক্রান্তি কাল অতিক্রম করছি আমরা সকলে।

দীর্ঘদিন ধরে মুসলিম সমাজে বিদয়াতের প্রভাব প্রচন্ড ভাবে দেখা যাচ্ছে, বিদয়াতের অনুপ্রবেশ ঘটেছে এখানে অবাধে। প্রতিবাদ হচ্ছে না তা নয়, কিন্তু বিদয়াত যে প্রবল শক্তিতে বলিয়ান হয়ে আসছে, প্রতিবাদ হচ্ছে তার তুলনায় অন্ত্যান্ত ক্ষীন কন্ঠে, অসংবদ্ধভাবে প্রায় ব্যাক্তিগত পর্যায়ে। অথচ প্রয়োজন সুসংবদ্ধ এক প্রবল প্রতিরোধের । শুধু নেতিবাচক প্রতিরোধই নয়, প্রয়োজন হচ্ছে ইতিবাচক সুন্নাত প্রতিষ্টার এক সামগ্রিক ও সর্বাত্নক প্রচেষ্টার। এরুপ এক সর্বাত্নক প্রচেষ্টাই মুসলিম সমাজ রক্ষা করতে পারে বিদয়াতের এ সয়লাব স্রোতের মুখ থেকে। বিদয়াত প্রতিরুদ্ধ হোক , প্রতিরুদ্ধ হোক কেবল আংশিক বেদয়াত নয় বিদায়াতের কতগুলো ছোট খাট অনুষ্টান নয়, প্রতিরুদ্ধ হোক সম্পর্নরুপে সর্বাত্নকভাবে। আর সে সাথে প্রতিষ্টিত হোক সুন্নাত।

পরিশেষে ইমাম গাজ্জালীর কথায় শেষ করতে চাই যে, বিদয়াত যতো রকমেরই হোক , সবগুলোই দ্বার রুদ্ধ করতে হবে, আর বিদয়াতীদের মুখের ওপর নিক্ষেপ করতে হবে তাদের বিদয়াত সমুহ-তারা তাকে যতোই হক বলে বিশ্বাস করুক না কেন