হাদীস সংরক্ষনে আইশা (রা)-এর অবদান


[ কুর’আনের ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ হ’ল হাদীস। উম্মাহাতুল মু‘মিনীন (রা) সকলেই ছিলেন প্রখর ও তীক্ষ ধী-শক্তি সম্পন্ন এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলায়হি ওয়াসাল্লামের হাদীসের সংরক। কুর’আন, হাদীস, ব্যবহারিক রীতিনীতি, সমাজ ও সংসারের প্রতিটি ক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ (সা)-এর বাণী ও ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণকে তারা স্মরণ রাখতেন এবং প্রয়োজন অনুসারে তা নারী ও পুরুষ নির্বিশেষে সকলের নিকট তুলে ধরতেন। তাঁরা সকলেই হাদীস বর্ণনায় এক বিশেষ মর্যাদার অধিকারী ছিলেন। ‘আইশা (রা) অধিকাংশ হাদীস রাসূলুল্লাহ্ (সা) থেকে রিওয়ায়াত করেন। এছাড়া পিতা আবূ বকর (রা), ‘ওমার (রা), সা‘দ ইব্ন আবী ওয়াক্কাস (রা), হামযাহ্ ইব্ন ‘আমর (রা), জুমাদাহ্ বিন্ত ওয়াহাব (রা) ও ফাতিমা আয্-যাহরা (রা) থেকে হাদীস রিওয়ায়াত করেন। ইবনুল-জাওযী (র)-এর ‘তালকীহ’ গ্রন্থের বর্ণনা থেকে দেখা যায় যে, রাসূলুল্লা
Justify Fullহ (সা)-এর স্ত্রীগণের মধ্যে নয়জন হাদীস বর্ণনা করেছেন। তাঁরা হলেন, ‘আইশা, উম্মু সালমা, মায়মূনা বিন্ত হারিস, উম্মু হাবীবা, হাফসা বিন্ত ‘ওমার, যায়নাব বিন্ত জাহাশ, সাফিয়্যা বিন্ত হুয়াই, জুওয়াইরিয়া ও সাওদা বিন্ত জামা‘আ (রা)’। উম্মাহাতুল মু’মিনীন (রা) কর্তৃক বর্ণিত মোট হাদীসের সংখ্যা ২৮২৩টি। কারও কারও মতে ২৮৩২টি। ‘আইশা (রা) থেকে ২২১০টি হাদীস বর্ণিত রয়েছে। আর অপর আটজন উম্মাহাতুল মু’মিনীন থেকে ৬১৩টি মতান্তরে ৬২২টি হাদীস বর্ণনার কথা পাওয়া যায়। মুহাদ্দিসগণ হাদীস বর্ণনার ক্ষেত্রে সাহাবীগণকে পাঁচটি স্তরে ভাগ করেছেন। ‘আইশা (রা) প্রথম স্তরের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত।
হাদীস সংরণকারী হিসাবে ‘আইশা (রা)-এর অবদান অপরিসীম। তিনি রাসূলুল্লাহ্ (সা) থেকে হাদীস শিক্ষা লাভ করে তা শিা দান, প্রচার ও প্রসারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর ইন্তিকালের পর ‘আইশা (রা)-এর হাদীস শিা দান করতেন। সাহাবীগণ ও তাবি‘ঈগণের বিভিন্ন দল হাদীস শিক্ষা ও সংরণের প্রয়োজনে বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মদীনায় আগমন করে তাঁর নিকট থেকে হাদীস শিক্ষা লাভ, প্রচার ও প্রসারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। সহীহ বুখারীতে ‘আইশা (রা) থেকে তাকরার ব্যতীত ২৩৪টি হাদীস বর্ণিত হয়েছে। তাঁর বর্ণিত হাদীসগুলো মানুষের জীবনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সংক্রান্ত। আলোচ্য প্রবন্ধে হাদীস সংণে ‘আইশা (রা) অবদান সম্পর্কে সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম আলোচনা করা হয়েছে। ]
হাদীস সংরণে ‘আইশা (রা)-এর জ্ঞান অর্জন
‘আইশা (রা) হাদীস সংরণের জন্য সর্ব প্রথম এ বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করেন। তিনি (রা) রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর স্ত্রীগণের মধ্যে সবচেয়ে বেশি তাঁর নৈকট্য লাভের সুযোগ পেয়েছিলেন। আর এ কারণেই তিনি হাদীস ও জ্ঞানের বিভিন্ন েেত্র সর্বাধিক ব্যুৎপত্তি অর্জন করেছিলেন। এছাড়া ‘আইশা (রা) প্রখর স্মৃতিশক্তির ও বুদ্ধিমত্তার অধিকারী ছিলেন। তিনি কুর’আন, হাদীস, তাফসীর, ফিক্হ, বক্তৃতা, সাহিত্য, কবিতা, চিকিৎসা সহ বিভিন্ন বিষয়ে পারদর্শী ছিলেন। তাঁর জ্ঞানের গভীরতা ও পাণ্ডিত্য সম্পর্কে ইমাম যুহরী (র) বলেন, لَوْ جُمِعَ عِلْمُ النِّاسِ كُلِّهِمْ وَعِلْمُ أَزْوَاجِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَكَانَتْ عَائِشَةُ أَوْسَعَهُمْ عِلْمًا
-‘যদি সকল মানুষ ও রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর স্ত্রীগণের ‘ইলম (জ্ঞান) একত্র করা যেত তাহলে তাদের মধ্যে ‘আইশা (রা)-এর ‘ইলম বা জ্ঞান অধিকতর প্রশস্ত ও বিস্তৃত হ’ত।’ অপর একটি বর্ণনা মতে ইমাম যুহরী (র) বলেন,
لَوْ جُمِعَ عِلْمُ عَائِشَةَ إِلي عِلْمِ جَمِيْعِ أَزْوَاجِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَعِلْمِ جَمِيْعِ النِّسَاءِ لَكَانَ عِلْمُ عَائِشَةَ أَفْضَلَ
-‘যদি ‘আইশা (রা)-এর ‘ইলম এবং নবী করীম (সা)-এর অন্যান্য স্ত্রী ও সমগ্র নারী জাতির ‘ইলম একত্রিত করা হয়, তাহলে ‘আইশা (রা)-এর ‘ইলম অতি উত্তম হবে।’
রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর হাদীস ও সুন্নাহ্র হিফাযত ও সংরণের দায়িত্ব ও কর্তব্য রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর অন্যান্য স্ত্রীগণও করেছেন। তবে তাঁদের কেউই ‘আইশা (রা)-এর স্তরে পৌঁছতে পারেননি। এ সম্পর্কে মাহমূদ ইব্ন লাবীদ বলেন,
كَانَ أَزْوَاجُ النِّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَحْفَظْنَ مِنْ حَدِيْثِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَثِيْراً وَلا مِثْلاً لِعَائِشِةَ وَأُمِّ سَلْمَة.
-‘রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর স্ত্রীগণ বহু হাদীস স্মৃতিতে ধরে রেখেছিলেন। কিন্তু কেউ ‘আইশা (রা) ও উম্মু সালামা (রা)-এর সমকতা অর্জন করতে পারেননি।’
‘আইশা (রা)-এর হাদীস শাস্ত্রে জ্ঞান ছিল সবচেয়ে অধিক। তিনি বিভিন্ন বিষয়ে হাদীস বর্ণনা করেছেন। তবে রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর ঘরোয়া বিষয় সম্পর্কিত হাদীস বেশি বর্ণনা করেছেন। তিনি হাদীস সম্প্রসারণের ল্েয মদীনায় হাদীস পাঠদানে ব্রতী হন। তার সমসাময়িক সময়ে অপরাপর সাহাবীগণ কর্তৃক হাদীস শিাদানের ভিন্ন ভিন্ন কেন্দ্র গড়ে উঠলেও তাঁর শিা কেন্দ্র বিশ্ব বিশ্র“ত কেন্দ্রে পরিণত হয়। আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা নির্বিশেষে সকলেই এ কেন্দ্রের ছাত্র ছিলেন। তাঁর দারসে এত পরিমাণ জ্ঞান পিপাসুদের সমাগম হ’ত যে, তা কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যেত। তিনি সমবেত ছাত্রদেরকে হুজুরার অভ্যন্তরে থেকে হাদীসের শিা দিতেন। ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে যারা মুহরিম ছিলেন তারা গৃহাভ্যন্তরে প্রবেশ করে তাঁর নিকট থেকে হাদীস শ্রবণ করতেন। তিনি পাঠদান কালে ছাত্রদের প্রশ্নের যথাযথ জবাব দিতেন।
‘আইশা (রা) প্রতি বছর হজ্জ করার জন্য মক্কায় আগমন করতেন। এ সময় তিনি বিভিন্ন স্থানে হাদীস-এর দারস প্রদান করতেন। এ সময় তাঁর দারসে ১০/১২ হাজার শিার্থী উপস্থিত থাকত। কখনও উম্মুল মু’মিনীন যমযম কূপের ছাদের নিচে বসতেন। এখানে এসেও প্রায় ২০০ শিার্থী উপস্থিত থাকত। তাঁদের মধ্যে সাহাবী, সাহাবীয়া, তাবি‘ঈ তাঁর নিকট বিভিন্ন প্রশ্ন করতেন। তিনি হাদীস ও কুর’আনের মাধ্যমে তাঁদের প্রশ্নের সামাধান প্রদান করতেন। এমনকি খলীফা ‘ওমার (রা) ও ‘ওসমান (রা)ও তাঁর নিকট থেকে সুন্নাহ্ সম্পর্কিত খুটিনাটি বিষয় জেনে নিতেন। কাসিম ইব্ন মুহাম্মাদ বলেন,
كَانَتْ عَائِشَةُ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا تُفْتِي فِيْ عَهْدِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ وَعُثْمَانَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ فُيَرسِلان اِلَيْهَا فَيَسْئَلاَنِهَا عَنْ السُّنُن.
-‘‘আইশা, (রা) ‘ওমার (রা) ও ‘ওসমান (রা)-এর খিলাফতকালে ফাতাওয়া দিতেন। আর খলীফাদ্বয় তাঁর নিকট দূত পাঠিয়ে হাদীস জেনে নিতেন।’
ছয় বছর বয়সে তাঁর বিবাহ হয়েছিল, নয় বছর বয়সে তাঁর দাম্পত্য জীবন শুরু হয় এবং রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর ইন্তিকালের সময় তাঁর বয়স হয়েছিল মাত্র আঠার বছর। এরপর তিনি দীর্ঘ ৪৮ বছর জীবিত ছিলেন। দাম্পত্য জীবন থেকে শুরু করে ইন্তিকালের পূর্ব পর্যন্ত তিনি ‘ইলমে হাদীসের চর্চা করেন। ফলে তাঁর থেকে বহু সংখ্যক হাদীস বর্ণিত হয়েছে। তাঁর থেকে অধিক সংখ্যক হাদীস বর্ণনার আর একটি কারণ ছিল, রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর স্ত্রী সাওদা (রা) বার্ধক্যের কারণে তাঁর ভাগের দিনটি তিনি ‘আইশা (রা)-কে দান করেছিলেন। এ হিসাবে উম্মাহাতুল মু’মিনীন ৯ দিনের মধ্যে একদিন করে যখন রাসূলুল্লাহ্ (সা)-কে নিজ হুজুরায় পেতেন, তখন শুধু উম্মুল মু’মিনীন ‘আইশা (রা)-ই তাঁকে ২ দিন পেতেন। এছাড়া ‘আইশা (রা)-এর হুজুরা মসজিদে নববীর দরজা-সংলগ্ন ছিল। যখন মসজিদে রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর ওয়াজ ও বক্তৃতা হ’ত, তখন নিজ হুজুরায় বসে ‘আইশা (রা) তা ভাল করে শুনতে পেতেন। এ সকল কারণে রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর অন্য স্ত্রীগণ অপো রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর হাদীস ও অন্যান্য মাস’আলার খুঁটিনাটি বিষয় জানার অধিকতর সুযোগ তাঁরই ছিল এবং নিজ অসাধারণ বুদ্ধিমত্তায় তিনি এই সুযোগ গ্রহণ করেছিলেন।
উম্মুল মু’মিনীন ‘আইশা (রা)-এর হাদীস রিওয়ায়াত এত বেশি যে, শুধু রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর স্ত্রীগণই কেন, বড় বড় প্রবীণ সাহাবীগণও তাঁরচেয়ে অনেক কম সংখ্যক হাদীস জানতেন। খুলাফায়ে রাশেদীন যদিও রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর সাথে অধিক সঙ্গ লাভ করেছিলেন, তথাপিও তাঁরা যা এক বছরে জানতেন, ‘আইশা (রা)-এর এক মাসেই তা জানা হ’ত। এছাড়া রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর ইন্তিকালের পর খুলাফায়ে রাশেদীন রাজ্য-শাসন ও বিভিন্ন কাজ-কর্ম নিয়ে ব্যস্ত থাকায় হাদীস সম্প্রসারণে সম্পূর্ণভাবে আত্মনিয়োগ করতে পারেননি; তবুও তাঁরা খিলাফত সম্পর্কিত, শাসন সংক্রান্ত বিষয়ে, বিচার ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় কার্যের জন্য কতিপয় হাদীস বর্ণনা করেছিলেন। তাঁদের রায়ের ওপর ফিক্হ শাস্ত্রের কতিপয় মাস’আলার ভিত্তি স্থাপন করা হয়েছে। খুলাফায়ে রাশেদীনের অধিক সংখ্যক হাদীস রিওয়ায়াত না করার অন্যান্য কারণও ছিল। তাঁদের যুগে সকলেই সাহাবী ছিলেন। রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর পবিত্র হাদীস সম্পর্কে তখন কাকেও কিছু জিজ্ঞেস করার প্রয়োজন হ’ত না। কিন্তু রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর ইন্তিকালের ২৫-৩০ বছর পর যখন সাহাবীগণের যুগ শেষ হয়ে আসছিল, তখন তাবি‘ঈগণ রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর কার্যকলাপ, আচার-ব্যবহার, চাল-চলন ইত্যাদি বিষয় জানার জন্য অত্যন্ত উৎসুক হয়ে পড়লেন। এই সময় অনেক প্রবীণ সাহাবী নিজ নিজ জীবনের শেষ অবস্থায় উপনীত হয়েছিলেন। এমন কম সাহাবীই ছিলেন, যাঁরা রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর দ্বারা বর্ণিত হাদীসের শিা দিতে পারতেন। আর তাই ‘আইশা (রা)-এর নিকট অসংখ্য সাহাবী ও তাবি‘ঈ হাদীস শিা লাভ করেন।
‘আইশা (রা)-এর হাদীস বর্ণনা
রিজালশাস্ত্রবিদগণ তাঁকে হাদীসের হাফিয বলে উল্লেখ করেছেন। রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর নিকট থেকে যে ছয়জন সাহাবী সর্বাধিক সংখ্যক হাদীস বর্ণনা করেছেন তাঁদের মধ্যে তিনি অন্যতম। তিনি ছিলেন মুকসিরীন তথা অধিক সংখ্যক হাদীস বর্ণনাকারী সাতজন সাহাবীর মধ্যে তৃতীয়। তাঁর নিকট থেকে ২২১০টি হাদীস বর্ণিত হয়েছে। তন্মধ্যে বুখারী ও মুসলিমে ৩১৬টি হাদীস বর্ণিত হয়েছে। মুত্তাফাকুন ‘আলাইহি হাদীসের সংখ্যা ১৭৪টি। এছাড়া ইমাম বুখারী (র) তাঁর সহীহ বুখারীতে এককভাবে ৫৪টি হাদীস উল্লেখ করেছেন। আর ইমাম মুসলিম (র) তাঁর সহীহ মুসলিমে এককভাবে ৬৯টি হাদীস উল্লেখ করেছেন। বদরুদ্দীন ‘আইনী (র) (৭৬২-৮৫৫ হিজরী/১৩৬১-১৪৫১ খ্রীষ্টাব্দ) বলেন, ‘আইশা (রা) থেকে বুখারী ও মুসলিম গ্রন্থদ্বয়ে সমানভাবে ১৭৪টি হাদীস উল্লেখ করা হয়েছে। এতদ্ব্যতীত আলাদাভাবে সহীহ বুখারীতে ৫৪টি এবং মুসলিমে ৫৮টি হাদীস বর্ণিত হয়েছে’। দাইরাতুল মা‘আরিফ গ্রন্থে বর্ণিত আছে যে, ‘আইশা (রা) থেকে বুখারী ও মুসলিম-এ ৩০০টি হাদীস স্থান লাভ করেছে’। এ হিসাবে বুখারীতে ২২৮টি হাদীস ও মুসলিমে ২৩২টি হাদীস রয়েছে। আর বাকী ১৯২৪ টি হাদীস অন্যান্য হাদীস গ্রন্থে লিপিবদ্ধ আছে। ইমাম আহমাদ ইব্ন হাম্বল তাঁর ‘মুসনাদ’-এর ষষ্ঠ খণ্ডে ‘আইশা (রা) থেকে বর্ণিত হাদীস সমূহ ২৯-২৮২ পর্যন্ত মোট ২৫৩ পৃষ্ঠায় সংকলন করেছেন।
এছাড়া গণনায় দেখা যায় ‘আইশা (রা) থেকে বর্ণিত হাদীস পুনরুল্লিখিতসহ সহীহ বুখারীতে ৮১৯টি, সহীহ মুসলিমে ৬০৮টি, জামি‘উত্-তিরমিযীতে ২৬৬টি, সুনানু আবী দাউদে ৪১৭টি, সুনানুন-নাসা’ঈতে ৬৫৬টি, সুনানু ইব্ন মাজায় ৩৯৩টি এবং মুওয়াত্তায় ৩৭০টি হাদীস সংকলিত হয়েছে।
অধিক সংখ্যক হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবীগণের অনেকেই ‘আইশা (রা)-এর ইন্তিকালের পরেও জীবিত ছিলেন। ফলে তাঁদের বর্ণনার ধারাবাহিকতাও তখন অব্যাহত ছিল। পুরুষদের তুলনায় ‘আইশা (রা)-এর হাদীস বর্ণনার েেত্র কিছু প্রতিবন্ধকতাও ছিল। যেমন পর্দার বিধানের কারণে তাঁর বিচরণ সংরতি ছিল। রাসূলুল্লাহ (সা)-এর সকল শিা সমাবেশে তিনি উপস্থিত হতে পারেননি। রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে যাওয়ার সুযোগও ছিল তাঁর সীমিত।
‘আইশা (রা) যাঁদের থেকে হাদীস বর্ণনা করেন
উম্মুল মু‘মিনীন ‘আইশা (রা) প্রধানতঃ রাসূলুল্লাহ (সা) থেকেই হাদীসসহ অন্যান্য সকল বিষয়ে শিা লাভ করেছেন। এছাড়া কুর’আন, তাফসীর, হাদীস ও শরী‘আতের বিভিন্ন বিষয় জ্ঞান অর্জন করেন, পিতা আবূ বকর (রা), ‘ওমার (রা), সা‘দ ইব্ন আবী ওয়াক্কাস (রা), হামযাহ ইব্ন ‘আমর (রা), জুদামাহ বিন্ত ওয়াহাব এবং ফাতিমা আয্-যাহরা (রা) প্রমুখ।



হাদীস সংরণে ‘আইশা (রা)-এর অবদান
‘আইশা (রা) ছিলেন রাসূলুল্লাহ (সা)-এর হাদীসের বিশিষ্ট সংরণকারিণী। তিনি রাসূলুল্লাহ (সা) থেকে হাদীস শিা লাভ করেই শুধুান্ত হননি, বরং সেগুলো অন্যান্যদের শিা দান, প্রচার ও প্রসারেও অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। রাসূলুল্লাহ (সা)-এর নির্দেশ بَلِّغُوْا عَنِّىْ وَلَوْ آيَةْ -‘আমার থেকে একটি বাণী জানা থাকলেও তা অপরের নিকট পৌঁছে দাও।’ فَلْيُبَلِّغُ الشَّاهِدُ الْغَائِبَ -‘উপস্থিত ব্যক্তি অনুপস্থিত ব্যক্তির নিকট যেন (আমার বাণী) পৌঁছে দেয়।’ এ সকল নির্দেশ হাদীস বর্ণনায় সাহাবীগণকে অধিক অনুপ্রাণিত করেছিল। পুরুষ সাহাবীগণ রাসূলুল্লাহ (সা)-এর হাদীসের প্রচার ও প্রসার কল্পে দূর-দুরান্তে ভ্রমণ করেছেন। যেহেতু মহিলা সাহাবীগণের বিচরণ ছিল সংরতি ও সুনিয়ন্ত্রিত, তাই রাসূলের অন্যতম জ্ঞানী মহীয়সী নারী ব্যক্তিত্ব ‘আইশা (রা) মদীনায় অবস্থান করেই রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর হাদীস সংরণে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। সাহাবীগণের মধ্যে কোন বিষয়ে সমস্যা দেখা দিলে তাঁরা ‘আইশা (রা)-এর নিকট এসে তাঁর সমাধান খুঁজে পেতেন। কাবীসা ইব্ন যু‘আয়ব (রা) বলেন, বড় বড় সাহাবীগণ ‘আইশা (রা)-কে মাস’আলা জিজ্ঞেস করতেন। যেমন যিয়াদ ‘আইশা (রা)-এর নিকট পত্রের মাধ্যমে জানতে চান যে, কোন ব্যক্তি হজ্জে না গিয়ে কুরবানীর পশু মক্কার হারাম শরীফে প্রেরণ করলে ঐ পশু যবেহ হওয়া পর্যন্ত ঐ ব্যক্তির জন্য সেই সব বিষয় কি হারাম হবে যা মুহরিম ব্যক্তির জন্য হারাম? একথা শুনে ‘আইশা (রা) বলেন, আমি নিজের হাতে রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর কুরবানীর পশুর রশি পাকিয়েছি। তিনি স্বহস্তে তা কুরবানীর পশুর গলায় পরিয়েছেন। তারপর আমার পিতা সেগুলো নিয়ে মক্কায় গমন করেছেন। তা সত্ত্বেও সবকিছু তাঁর জন্য হালাল ছিল। কোন হালাল বস্তুই কুরবানী পর্যন্ত হারাম হয়নি।
‘আইশা (রা)-এর হাদীস শিা দান
রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর ইন্তিকালের পর ‘আইশা (রা)-এর হাদীস শিা দান করতেন। সাহাবীগণের বিভিন্ন দল হাদীস শিা ও সরংণের প্রয়োজনে মক্কা , মিসর , ....................................................................................................
বসরা , কূফা , দিমাশক , তায়িফ , বাহরাইন সহ বিভিন্ন অঞ্চল ও স্থান হতে মদীনায় আগমন করতেন। মদীনায় এসে তারা ইব্ন ‘আব্বাস, ইব্ন ‘ওমার, আবূ হুরায়রা, যায়দ ইব্ন সাবিত (রা) প্রমুখ প্রসিদ্ধ সাহাবীগণের নিকট পৃথক পৃথক শিা কেন্দ্রে হাদীস শিা লাভ করতেন।
‘আইশা (রা)-এর পরিচালিত তাঁর হুজুরাকেন্দ্রিক মসজিদে নববী সংলগ্ন শিা কেন্দ্রটি ছিল এর মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এস্থানে তিনি নিয়মিত হাদীসের দারস প্রদান করতেন।
উম্মুল মু’মিনীন ‘আইশা (রা) মদীনায় হাদীস শিা দানের কাজে ব্যস্ত ছিলেন। তাঁর নিকট একসাথে শিার্থী লোকদের সংখ্যা দু’শতেরও অধিক ছিল। তন্মধ্যে ৩৮ জন মহিলা ছিলেন। আবূ মূসা আল-আশ‘আরী, ‘আব্দুল্লাহ্ ইব্ন ‘আব্বাস, ‘আমর ইব্ন ‘আস প্রমুখ সাহাবীগণ তাঁর দরসে হাদীসের মজলিসে নিয়মিত উপস্থিত হতেন।
‘আইশা (রা) যতদিন জীবিত ছিলেন, ততদিন মুসলমানগণ রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর পবিত্র রওযা মুবারক যিয়ারত করার উদ্দেশ্যে দলে দলে ‘ইরাক , মিসর, সিরিয়া তথা বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে মদীনায় আগমন করে ‘আইশা (রা)-এর নিকট শরী‘আতের বিভিন্ন বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করার জন্য উপস্থিত হতেন। ‘আইশা (রা) নিজ দরজার পর্দার আড়ালে বসে রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর যিয়ারতের আদব-কায়দা ও সালাম ইত্যাদির বিষয় সুচারুরূপে বুঝিয়ে দিতেন। তারা উম্মুল মু’মিনীন (রা)-কে বিভিন্ন প্রকার মাস’আলার বিশেষত তাদের দেশের মতানৈক্যের মাস’আলার বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞেস করতেন। ‘আইশা (রা) এ সকল মাস’আলার যথাযথ উত্তর প্রদান করতেন। এভাবে আগন্তুকগণ মাস’আলার উত্তর ভালরূপে হৃদয়ঙ্গম করে অত্যন্ত তৃপ্তি পেতেন। এমনকি ‘আইশা (রা)-এর অবর্তমানে তারা উম্মুল মু’মিনীনের ছাত্র ও ছাত্রীদের নিকট হতেও অনেক বিষয় শিা করে নিতেন। উম্মুল মু’মিনীনের ভাগিনী ‘আইশা বিন্ত তালহা (রা) বলেন, ‘দেশ-দেশান্তর হতে বহু লোক উম্মুল মু’মিনীন ‘আইশা (রা)-এর নিকট আসত। তাঁর নিকট আমার যে মর্যাদা ছিল এজন্য প্রবীণগণ আমাকে তাঁদের মেয়েদের মত ভাবতেন এবং যুবকরা তাঁদের ভগ্নির মত দেখতেন। তাঁরা বিভিন্ন প্রকার পত্র ও উপঢৌকন প্রেরণ করত। আবার অনেকে আমার নিকট পত্র লিখে ও বিভিন্ন প্রকার মাস’আলা জানাবার জন্য অনুরোধ করতেন। আমি তা ‘আইশা (রা)-এর নিকটে পেশ করে বলতাম, খালা! এটা অমুকের পত্র ও হাদিয়া। তখন তিনি আমাকে বলতেন, হে বৎস! তুমি এর উত্তর দাও এবং বিনিময়ে কিছু প্রেরণ কর।’
‘আইশা (রা) থেকে হাদীস বর্ণনাকারীগণ
উম্মুল মু‘মিনীন ‘আইশা (রা)-এর নিকট থেকে সাহাবী ও তাবি‘ঈগণের মধ্য হতে অনেকেই হাদীস শিা ও বর্ণনা করেন। শামসুদ্দীন আয্-যাহাবী (র) (মৃত ৭৪৮ হিজরী) ১৭৫ জন (একশত পঁচাত্তর) বর্ণনাকারীর নাম উল্লেখ করার পর বলেছেন, وَطَائِفَةٌ سِوَي هَؤُلاَءِ -এছাড়াও তাঁর থেকে আরও একদল ছাত্র হাদীস বর্ণনা করেন।

হাফিয ইউসুফ আল-মিয্যী (মৃত ৭৪২ হিজরী) ২২২ জন (দু’শত বাইশ) বর্ণনাকারীর নাম উল্লেখ করেন।
ইব্ন হাজার ‘আসকালানী (মৃত ৮৫২ হিজরী) ‘আইশা (রা)-এর হাদীস বর্ণনাকারীগণকে তিন ভাগে বিভক্ত করে এর সংখ্যা উল্লেখ করেন। তাঁর পরিসংখ্যান অনুযায়ী ‘আইশা (রা) থেকে হাদীস বর্ণনাকারীর সংখ্যা নিম্নরূপ,
প্রথমত: আত্মীয় স্বজনদের মধ্য থেকে বার (১২) জন। তারা হলেন, ১. ভগ্নি উম্মু কুলসূম বিন্ত আবী বাকর, ২. দুধ ভাই ‘আওফ ইব্ন হারিস ইব্ন তুফায়ল, ৩. ভ্রাতুষ্পুত্র কাসিম ইব্ন মুহাম্মাদ, ৪. ভ্রাতুষ্পুত্র ‘আব্দুল্লাহ্ ইব্ন মুহাম্মাদ, ৫. মুহাম্মাদ ইব্ন আবী বকর সিদ্দীক, ৬. ভ্রাতুষ্পুত্রী হাফসা বিন্ত ‘আব্দির রহমান, ৭. ভ্রাতুষ্পুত্রী আসমা’ বিন্ত ‘আব্দির রহমান, ৮. ভ্রাতুষ্পৌত্র ‘আব্দুল্লাহ্ ইব্ন ‘আতীক ইব্ন মুহাম্মাদ ইব্ন ‘আব্দির রহমান ইব্ন আবী বকর, ৯. ভাগিনা ‘আব্দুল্লাহ্ ইব্ন ‘ওরওয়াহ্ ইবনুযু-যুবায়র ইবনুল আও‘আম ও ১০. ‘আব্বাদ ইব্ন হাবীব ইব্ন ‘আব্দিল্লাহ্ ইব্ন যুবায়র, ১১. ভাগ্নী পৌত্র ‘আব্বাদ ইব্ন হামযা ইব্ন ‘আব্দিল্লাহ্ ইব্ন যুবায়র, ১২. ভাগ্নী ‘আইশা বিন্ত তালহা। গোলাম তিন (৩) জন। তারা হলেন, আবূ ইউনুস, জাক্ওয়ান আবূ ‘আমর, ইব্ন ফাররুখ।
দ্বিতীয়ত: সাহাবীগণের মধ্য থেকে নয় (৯) জন। তারা হলেন, ১. ‘আমর ইবনুল আস, ২. আবূ মূসা আল-আশ‘আরী, ৩. যায়দ ইব্ন খালিদ আল-জাহনী, ৪. আবূ হুরায়রা, ৫. ইব্ন ‘ওমার, ৬. ইব্ন ‘আব্বাস, ৭. রী‘আহ ইব্ন ‘আমর আল-জারশী, ৮. আস্-সা’ইব ইব্ন য়াযীদ, ও ৯. হারিস ইব্ন ‘আব্দিল্লাহ্ ইব্ন নুওফায়ল ও অন্যান্যরা।
তৃতীয়ত: তাবি‘ঈগণের মধ্য থেকে ঊনষাট (৫৯) জন, তারা হলেন,
১. সা‘ঈদ ইবনুল মুসাইয়্যাব, ২. ‘আব্দুল্লাহ্ ইব্ন ‘আমির ইব্ন রবী‘আহ, ৩. সাফিয়্যা বিন্ত শায়বাহ, ৪. ‘আলকামাহ ইব্ন কায়স, ৫. ‘আমর ইব্ন মায়মূনা, মাতরুফ ইব্ন ‘আব্দিল্লাহ্ ইব্ন আশ্-শাখীর, ৬. হুমাম ইব্নুল হারিস, ৭. আবূ ‘আতিয়্যাহ আল-ওয়াদ‘ঈ, ৮. আবূ ‘উবায়দাহ ইব্ন ‘আব্দিল্লাহ ইব্ন মাস‘উদ, ৯. মাসরূক ইবনুল আজদা‘, ১০. আব্দুল্লাহ্ ইব্ন ‘অকীম, ১১. ‘আব্দুল্লাহ্ ইব্ন শাদ্দাদ ইব্নুল-হাদ, ১২. ‘আব্দুর রহমান ইবনুল হারিস ইব্ন হিশাম, ১৩. আবূ বকর, ১৪. মুহাম্মাদ, ১৫. আবূ সালামাহ ইব্ন ‘আব্দির রহমান ইব্ন ‘আওফ, ১৬. আল-আসওয়াদ ইব্ন য়াযীদ আন্-নাখ‘ঈ, ১৭. আয়মান আল-মাক্কী, ১৮. সামামাহ্ ইব্ন হায্ন আল-কাশয়িরী, ১৯. হারিস ইব্ন ‘আব্দিল্লাহ্ ইব্ন আবী রবী‘আহ, ২০. হামযাহ ইব্ন ‘আব্দিল্লাহ্ ইব্ন ‘ওমার, ২১. খাবাব সাহিবুল মাকসূরাহ্, ২২. সালিম ইব্ন সুবলান, ২৩. সা‘দ ইব্ন হিশাম ইব্ন ‘আমির, ২৪. সুলায়মান ইব্ন য়াসার, ২৫. আবূ ওয়াইল, ২৬. শুরায়হ ইব্ন হানী, ২৭. ওয়াযাররা ইব্ন হুবায়শ, ২৮. আবূ সালিহ আস্-সামান, ২৯. ‘আবিস ইব্ন রবী‘আহ, ৩০. ‘আমির ইব্ন সা‘দ ইব্ন আবী ওয়াক্কাস, ৩১. তালহাহ ইব্ন ‘আব্দিল্লাহ্ ইব্ন ‘ওসমান, ৩২. তাওস, ৩৩. আবূল ওয়ালীদ ‘আব্দিল্লাহ্ ইবনুল হারিস আল-বাসরী, ৩৪. ‘আব্দুল্লাহ্ ইব্ন শাকীক আল-ওকায়লী, ৩৫. ‘আব্দুল্লাহ্ ইব্ন শিহাব আল-খাওলানী, ৩৬. ইব্ন আবী মুলায়কাহ্, ৩৭. ‘আব্দুল্লাহ্ আল-বাহী, ৩৮. ‘আব্দুর রহমান ইব্ন শামসাহ্, ৩৯. ‘উবায়দিল্লাহ্ ইব্ন ওমায়র আল-লায়সী, ৪০. ‘ইরাক ইব্ন মালিক, ৪১. ‘উবায়দুল্লাহ্ ইব্ন ‘আব্দিল্লাহ্ ইব্ন ‘উতবাহ, ৪২. ‘আতা ইব্ন আবী রিবাহ, ৪৩. ‘আতা ইব্ন য়াসার, ৪৪. ‘ইকরামাহ, ৪৫. ‘আলকামাহ ইব্ন ওয়াক্কাস, ৪৬. ‘আলী ইব্নুল হুসায়ন ইব্ন ‘আলী, ৪৭. ‘ইমরান ইব্ন হাতান, ৪৮. মুজাহিদ ইব্ন কায়স ইব্ন মাখযূম, ৪৯. মুহাম্মাদ ইব্নুল মুনতাসির, ৫০. নাফি‘ ইব্ন জুবায়র ইব্ন মুত‘ঈম, ৫১. য়াহ্ইয়া ইব্ন য়া‘মার, ৫২. নাফি‘ মাওলা ইব্ন ‘ওমার, ৫৩. আবূ বুরদাহ ইব্ন আবী মূসা, ৫৪. আবূল জাওযা’ আর-রাব‘ঈ, ৫৫. আবূয্-যুবায়র আল-মাক্কী, ৫৬. খায়রাহ উম্মুল-হাসান, ৫৭. সাফিয়্যাহ্ বিন্ত আবূ ‘উবায়দ, ৫৮. ‘আমরা বিন্ত ‘আব্দির রহমান, ৫৯. মু‘আয আল-‘আদভীয়্যাহ্ এবং অন্যান্যরা।
আত্মীয়-স্বজন, গোলাম, সাহাবী ও তাবি‘ঈসহ সর্বমোট তিরাশি (৮৩) জন।
উল্লিখিত প্রসিদ্ধ ছাত্র/ছাত্রী ব্যতীতও নিজ পরিবারের প্রায় ৭০/৮০ জন উম্মুল মু’মিনীনের নিকট শিা অর্জন করেছেন। ‘আইশা (রা)-এর ছাত্রী সংখ্যা অন্যান্য সাহাবা ও উম্মাহাতুল মু’মিনীনের ছাত্রীগণের চেয়ে অনেক বেশি ছিল। তাঁরা তাবি‘ঈয়া নামে অভিহিত হন।
উম্মুল মু’মিনীনের ছাত্র ও ছাত্রীগণের মধ্যে যাঁরা মুহাদ্দিসীন ও মুফাস্সিরীনের মাহ্ফিলে উচ্চ-সম্মানে সম্মানিত হতেন এবং যাঁরা বাস্তবিকই উম্মুল মু’মিনীনের জ্ঞান-ভাণ্ডারের কুঞ্জিকা-স্বরূপ ছিলেন তাঁদের মধ্যে কয়েকজনের সংপ্তি পরিচিতি নিম্নে বর্ণনা করা হ’ল,
‘আইশা (রা) থেকে সাহাবীগণের মধ্যে যারা হাদীস শুনেছেন তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন, ১. ‘আমর ইবনুল-আস (রা), ২. আবূ হুরায়রা (রা), ৩. আবূ মূসা আল-আশ‘আরী , ......................................................................
৪. যায়দ ইব্ন খালেদ , ৫.‘আব্দুল্লাহ ইব্ন ‘ওমার , ৬. ‘আব্দুল্লাহ ইব্ন ‘আব্বাস , ৭. ‘আব্দুল্লাহ ইব্ন মুহাম্মদ , ..........

৮. রবী‘আহ ইব্ন ‘আমর , ৯. হারিস , ১০. ‘আউফ , ১১. আসমা বিন্ত ‘আব্দুর রহমান , ১২. ‘আইশা বিন্ত তালহা , ১৩. যাকওয়ান , ১৪. সায়িব ইব্ন য়াযীদ , ১৫. ‘আব্দুল্লাহ ইব্ন যুবায়র (রা) প্রমুখ।
তাবি‘ঈগণের মধ্যে ১. আসওয়াদ ইব্ন ইয়াযীদ কায়স আন্-নাখ‘ঈ , ২. র্যিরা ইব্ন হুবায়শ , ৩. সা‘দ ইব্ন হিশাম , ৪. সালিম ইব্ন ‘আব্দিল্লাহ্ আল-আনসারী ৫. শুরাইহ্ ইব্ন হানী , ৬. সা‘ঈদ ইবনুল-মুসাইয়্যাব , ৭. ‘আব্দুল্লাহ্ ইব্ন শাকীক , ৮. ‘আব্দুল্লাহ্ ইব্ন শিহাব , ‘আব্দুল্লাহ্ ইব্ন ‘আমির আল-আনযী , ১০. ‘উরওয়া ইব্ন যুবায়র , ১১. ‘উবায়দুল্লাহ্ ইব্ন ‘ইয়ায , ১২. ‘আমর ইব্ন সা‘ঈদ ইবনুল ‘আস ইব্ন উমায়্যাহ ইব্ন ‘আব্দিস্- সাম্স , ১৩. কাসিম ইব্ন মুহাম্মদ , ...
১৪. আবূ সালামা ইব্ন ‘আব্দির রহমান , ১৫. মাসরূক ইব্ন আজদা’ , ১৬. আবুল ‘আলীয়া রিয়াহী , ১৭. ‘আতা ইব্ন আবী রাবাহ আল-মাক্কী , ১৮. ‘ইকরাম আল-বারবারিয়ী আবূ ‘আব্দিল্লাহ্ আল-মাদানী , ১৯. ‘আলকামা ইব্ন কায়স , ২০. মুজাহিদ ইব্ন জাবর , ২১. য়াযীদ ইব্ন আবী মানসূর আল-আযদী , ২২. ‘আইশা বিন্ত তালহা , ২৩. সাফিয়্যা বিন্ত আল-আবদারিয়্যা , ২৪. ‘আমরা বিন্ত ‘আব্দির রহমান , ২৫. মা‘আয বিন্ত ‘আব্দিুল্লাহ্ আল-আদাভিয়্যাহ্ আল-বাসরিয়্যাহ্ (র) প্রমুখ হাদীস বর্ণনা করেন।
উম্মুল মু’মিনীন ‘আইশা (রা) ছাত্র-ছাত্রীগণকে অত্যন্ত স্নেহ ও যতœ করতেন। ‘উরওয়া, কাসিম, আবূ সালামা মাসরূক, ‘আমরা এবং সাফিয়্যা প্রমুখের শিা-দীা তিনি নিজেই দিয়েছিলেন। তিনি তাঁদেরকে পালক সন্তান-সন্ততিরূপে নিজের কাছেই রাখতেন। অন্যান্য ছাত্র-ছাত্রীর প্রতি ‘আইশা (রা)-এর স্নেহ ও ভালবাসা দেখে তাঁর নিজ পরিবারের ছেলে-মেয়েগণের মধ্যে চাঞ্চল্যের ভাব দেখা
দিয়েছিল। নিজ ভাগিনা ‘আব্দুল্লাহ্ ইব্ন যুবায়র আসওয়াদ নামক জনৈক ছাত্রকে বলেছিলেন যে, উম্মুল মু’মিনীন তাঁকে (আসওয়াদ) তাঁর (‘আব্দুল্লাহ্) চেয়ে বেশি যতœ ও স্নেহ করেন।
‘আইশা (রা)-এর ছাত্র-ছাত্রীরা তাঁকে অত্যন্ত ভক্তি ও সম্মান করতেন। ‘আমরা আনসারীয়া ‘আইশা (রা)-কে ‘খালা আম্মা’ বলে আহ্বান করতেন। তাবি‘ঈ মাসরূক ইব্ন আজদা‘ ‘আইশা (রা)-এর নাম এভাবে বলতেন, اَلصِّدِّيْقَةُ بِنْتُ الصِّدِّيْقِ حَبِيْبَةُ حَبِيْبِ اللهِ اَلْمُبَرَّاَةُ مِنَ السَّمَاءِ. -‘সিদ্দীক তনয়া সিদ্দীকা, হাবিবুল্লাহ্র হাবীব, ওহীর দ্বারা যাঁর সতীত্ব প্রমাণ হয়েছে’।
প্রতি বছর প্রায় ৪০০ ছাত্র ও ছাত্রী ‘আইশা (রা)-এর ‘দারসে’ উপস্থিত থাকত। ছাত্র-ছাত্রীগণ যে শুধু নীরবেই উম্মুল মু’মিনীনের শিা বিনা বাক্যব্যয়ে গ্রহণ করে নিতেন তা নয়, অনেক ছাত্র ও ছাত্রী শিাগ্রহণকালে শিয়িত্রীর সাথে তর্কযুদ্ধেও লিপ্ত হয়ে যেত। ‘আইশা (রা) তাঁদেরকে সমালোচনার জন্য অভয় দিতেন। এ ছাত্রগণের সংখ্যা সাহাবী, তাবি‘ঈ ও তাবি‘ঈয়া, গোলাম, আযাদ, আত্মীয়-স্বজন, দেশী-বিদেশীসহ প্রত্যেক স্তরের লোকই অন্তর্ভুক্ত ছিলেন।
উপর্যুক্ত বর্ণনা দ্বারা একথা দিবালোকের ন্যায় সুস্পষ্ট যে, উম্মুল মু’মিনীন ‘আইশা (রা) হাদীস সংরণে অনন্য ভূমিকা পালন করেছিলেন। ‘আইশা (রা)-এর ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা অন্যান্য সাহাবা ও উম্মাহাতুল মু’মিনীনের ছাত্র-ছাত্রীর চেয়ে অনেক বেশি। তাঁর নিকট থেকে হাদীস শিা গ্রহণ করার জন্য এত সংখ্যক সাহাবী ও তাবি‘ঈ গমন করেন যারা পরবর্তীতে হাদীসের হাফিয ও মুহাদ্দিস হিসাবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেন। ‘আইশা (রা) এভাবেই হাদীস সংরণে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন।
তাজরীদুল বুখারীতে ‘আইশা (রা)-এর বর্ণিত হাদীস সংখ্যা
আমরা তাজরীদুল বুখারীর অদ্যোপান্ত অধ্যয়ন করে বুখারীর মূল কিতাবের সাথে মিলিয়ে দেখতে পাই যে, ‘আইশা (রা) থেকে সহীহ বুখারীতে তাকরার ব্যতীত ২৩৪টি হাদীস বর্ণিত হয়েছে।
‘আইশা (রা)-এর বর্ণিত হাদীসের উদাহরণ
‘আইশা (রা) থেকে বর্ণিত হাদীসগুলোতে মানুষের জীবনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সমূহ স্থান লাভ করেছে। বিশেষ করে মহিলাদের জীবনের বিভিন্ন বিষয়ের সামাধান হাদীসের মাধ্যমে দিয়েছেন। এছাড়া রাসূলুল্লাহ (সা)-এর ব্যক্তিসত্ত্বা, পারিবারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, শিা-সংস্কৃতি, চিকিৎসা, পবিত্রতা, শরী‘আতের বিধি-বিধান, ‘ইবাদাত, পরকাল প্রভৃতি বিষয়েও তিনি হাদীস বর্ণনা করেছেন। নিম্নে উদাহরণ স্বরূপ কিছু হাদীস বর্ণনা করা হ’ল,


মহিলাদের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান
১. عَنْ عَائِشَةَ، قَالَتْ قَالَ: النَّبِيُّ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا أَقْبَلَتِ الْحَيْضَةُ فَدَعِي الصَّلَاةَ وَإِذَا أَدْبَرَتْ فَاغْسِلِي عَنْكِ الدَّمَ وَصَلِّي.
১. ‘আইশা (রা) থেকে বর্ণিত। নবী করীম (সা) বলেন, ঋতু আসলে নামায ছেড়ে দিবে এবং ঋতু চলে গেলে শরীর হতে রক্ত ধুয়ে নামায আদায় করবে।
২. عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا: أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يَتَّكِئُ فِي حَجْرِي وَأَنَا حَائِضٌ ثُمَّ يَقْرَأُ الْقُرْآنَ.
২. ‘আইশা (রা) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী করীম (সা) আমার মাসিক ঋতু অবস্থায় আমার কোলে হেলান দিয়ে কুর’আন পাঠ করতেন।
৩. عَنْ عَائِشَةَ، قَالَتْ: كَانَ إِحْدَانَا، إِذَا كَانَتْ حَائِضًا، أَمَرَهَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنْ تَأْتَزِرَ فِي فَوْرِ حَيْضَتِهَا، ثُمَّ يُبَاشِرُهَا، قَالَتْ: وَأَيُّكُمْ يَمْلِكُ إِرْبَهُ كَمَا كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَمْلِكُ إِرْبَهُ؟.
৩. ‘আইশা (রা) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমাদের (নবী পতœী) কেউ যখন ঋতুবতী হয়ে পড়ত, তখন তার পূর্ণ হায়যের সময় রাসূলুল্লাহ (সা) তাকে পরিধেয় বস্ত্র বেঁধে নেওয়ার হুক্ম দিতেন। তারপর তার সাথে মেলামেশা করতেন। তিনি [(‘আইশা) (রা)] বলেন, তোমাদের মধ্যে কে তার কামভাব সেরূপ আয়ত্তে রাখতে সম, রাসূলুল্লাহ্ (সা) যেরূপ তাঁর কামভাব আয়ত্তে রাখতে সম ছিলেন?
রাসূলুল্লাহ (সা)-এর ব্যক্তিসত্ত্বা
১. عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا: أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ إِذَا دَخَلَ بَيْتَهُ بَدَأَ بِالسِّوَاكِ.
১. ‘আইশা (রা) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ্ (সা) যখন তাঁর ঘরে প্রবেশ করতেন তখন প্রথমেই মিস্ওয়াক করতেন।
২. عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا، قَالَتْ: كَانَ شَعْرُ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَوْقَ الْوَفْرَةِ وَدُونَ الْجُمَّةِ.
২. ‘আইশা (রা) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা)-এর মাথার চুল কানের লতির উপরে এবং ঘাড়ের নীচ পর্যন্ত থাকতো।
৩. عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا، قَالَتْ: أَنَّ النَّبِيَّ كَانَ يَعْتَكِفُ الْعَشْرَ الأَوَاخِرَ مِنْ رَمَضَانَ حَتَّى قَبَضَهُ الله.
৩. ‘আইশা (রা) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) মৃত্যুর আগ পর্যন্ত প্রতি রমযানের শেষ দশকে ই‘তিকাফ করতেন।
পারিবারিক বিষয়
১. عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا، أَنَّهَا قَالَتْ: كُنْتُ أَكُونُ نَائِمَةً وَرِجْلاَيَ بَيْنَ يَدَيْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: وَهُوَ يُصَلِّي مِنَ اللَّيْلِ، فَإِذَا أَرَادَ أَنْ يَسْجُدَ ضَرَبَ رِجْلَيَّ، فَقَبَضْتُهُمَا فَسَجَدَ.
১. ‘আইশা (রা) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ঘুমিয়ে থাকতাম। আমার পা দু’টি রাসূলুল্লাহ (সা)-এর সামনে থাকতো। তিনি রাতের নামায পড়তেন। যখন সিজদা করতে চাইতেন আমার পায়ে খুচা দিতেন। আমি পা গুটিয়ে নিতাম। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সা) সিজদা করতেন।
২. عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا: أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: وَكَانَ إِذَا دَخَلَ الْعَشْرُ أَحْيَا اللَّيْلَ وَشَدَّ الْمِئْزَرَ وَأَيْقَظَ أَهْلَهُ.
২. ‘আইশা (রা) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রমযান মাসের শেষ দশক আসলেই নবী (সা) রাত্রি জেগে ‘ইবাদত করতেন, তাঁর কোমর শক্তভাবে বেঁধে নিতেন এবং তাঁর পরিবার-পরিজনকে (‘ইবাদতের জন্য) জাগাতেন।
৩. عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا، قَالَتْ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: خَيْرُكُمْ خَيْرُكُمْ لأَهْلِهِ، وَأَنَا خَيْرُكُمْ لأَهْلِي.
৩. ‘আইশা (রা) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন, তোমাদের মধ্যে ঐ ব্যক্তিই উত্তম যে তার পরিবারের কাছে উত্তম। আর আমি আমার পরিবারের নিকট উত্তম।
৪. عَنْ عَائِشَةَرَضِيَ اللهُ عَنْهَا: أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: نَهَى أَنْ يُقَامَ عَنِ الطَّعَامِ حَتَّى يُرْفَعَ.
৪. ‘আইশা (রা) বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ (সা) মেযবানকে মেহমানের খাওয়া শেষ হওয়ার পূর্বে খাওয়া শেষ করে উঠে দাঁড়াতে নিষেধ করেছেন।
সামাজ বিষয়ক
১. عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا: عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: كُلُّ شَرَابٍ أَسْكَرَ فَهُوَ حَرَامٌ.
১. ‘আইশা (রা) নবী (সা) থেকে বর্ণনা করেন, প্রত্যেক নেশাকর পানীয়ই হারাম।
২. أَنَّ عَائِشَةَ رَضِي اللَّه عَنْهَا، زَوْجَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم، قَالَتْ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ((مَا مِنْ مُصِيبَةٍ تُصِيْبُ الْمُسْلِمَ إِلاَّ كَفَّرَ اللَّهُ بِهَا عَنْهُ، حَتَّى الشَّوْكَةِ يُشَاكُهَا)).
২. ‘আইশা (রা) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেন, কোন মুসলমানের উপর আপতিত বিপদ তার গোনা‏হ্ মাফের কাফ্ফারা হয়ে থাকে। এমনকি একটা কাঁটা ফুটলেও।
৩. كَانَ بَيْنَ أَبِيْ سَلَمَةَ وَبَيْنَ قَوْمِهِ خُصُومَةٌ فِي أَرْضٍ. وَأَنَّهُ دَخَلَ عَلَى عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا: فَذَكَرَ ذَلِكَ لَهَا، فَقَالَتْ: يَا أَبَا أَبَا الْقَاسِم! اجْتَنِبِ الْأَرْضَ، فَإِنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: ((مَنْ ظَلَمَ قِيدَ شِبْرٍ مِنَ الأَرْضِ طُوِّقَهُ مِنْ سَبْعِ أَرَضِينَ)).
৩. আবূ সালমা ও তাঁর জাতির সাথে ভূমি সংক্রান্ত বিষয়ে বিরোধ ছিল। আবূ সালমা (রা) ‘আইশা (রা)-এর কাছে এসে তাঁকে এ বিষয়টি অবহিত করলে তিনি বললেন, হে আবূ সালমা, ঐ জমি হতে বিরত থাক। কেননা রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন, যে ব্যক্তি এক বিঘত পরিমাণ জমি অন্যায় ভাবে দখল করবে, কিয়ামতের দিন উহার সাত স্তবক জমিন তার কাঁধে ঝুলিয়ে দেওয়া হবে।
রাজনীতি বিষয়ক
রাজনীতি বলতে এখানে দীন প্রতিষ্ঠাকল্পে কাফির-মুশরিকদের বিরুদ্ধে পরিচালিত বিভিন্ন যুদ্ধাভিযান ও খিলাফত সংক্রান্ত বর্ণনাকে বুঝানো হয়েছে। এ েেত্রও ‘আইশা (রা) হাদীস বর্ণনা করেছেন।
১. عَنْ عَائِشَةَ رَضِي اللَّه عَنْهَا قَالَتْ: لَمَّا رَجَعَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِنَ الْخَنْدَقِ، وَوَضَعَ السِّلَاحَ وَاغْتَسَلَ، أَتَاهُ جِبْرِيلُ عَلَيْهِ السَّلاَم، فَقَالَ: قَدْ وَضَعْتَ السِّلَاحَ، وَاللَّهِ مَا وَضَعْنَاهُ، فَاخْرُجْ إِلَيْهِمْ. قَالَ: ((فَإِلَى أَيْنَ))؟ قَالَ: هَا هُنَا. وَأَشَارَ إِلَى بَنِي قُرَيْظَةَ، فَخَرَجَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَيْهِمْ.
১. ‘আইশা (রা) বলেন, নবী (সা) যখন খন্দক যুদ্ধ হতে ফিরে এসে যুদ্ধাস্ত্র খুলে গোসল করতে লাগলেন। তখন জিবরীল (আ) এসে বললেন, আপনি যুদ্ধের অস্ত্র খুলে ফেলেছেন। অথচ আল্লাহ্র শপথ! আমরা তা খুলিনি। আপনি তাদের দিকে বের হোন। নবী (সা) বললেন, কোন দিকে বের হব? জিবরীল (আ) বনূ কুরায়যার প্রতি ইঙ্গিত করে বললেন, ঐদিকে। অতঃপর নবী (সা) তাদের দিকে বের হয়ে পড়লেন।
২. عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا، قَالَتْ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِذَا أَرَادَ اللَّهُ بِالأَمِيْرِ خَيْرًا جَعَلَ لَهُ وَزِيْرَ صِدْقٍ، إِنْ نَسِيَ ذَكَّرَهُ وَإِنْ ذَكَرَ أَعَانَهُ. وَإِذَا أَرَادَ اللَّهُ بِهِ غَيْرَ ذَلِكَ جَعَلَ لَهُ وَزِيْرَ سُوْءٍ إِنْ نَسِيَ لَمْ يُذَكِّرْهُ وَإِنْ ذَكَرَ لَمْ يُعِنْهُ.
২. ‘আইশা (রা) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন, আল্লাহ্ যখন কোন নেতার মঙ্গল চান তখন তাকে একজন সত্যবাদী মন্ত্রী (উযীর) দান করেন। যিনি তাঁকে কিছু ভুলে গেলে স্মরণ করিয়ে দেন। আর কিছু স্মরণ করলে তাকে সহায়তা করেন। অপর পে আল্লাহ্ যে নেতার অমঙ্গল চান, তাকে একজন খারাপ উযীর দান করেন যে, তাকে ভুলে গেলেও স্মরণ করিয়ে দেয় না। আর কিছু স্মরণ করলেও তাকে সহায়তা করে না।
৩. عَنْ عُرْوَةَ عَنْ عَائِشَةَ: أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ خَرَجَ إِلَى بَدْرٍ حَتَّى إِذَا كَانَ بِحَرَّةِ الْوَبَرَةِ لَحِقَهُ رَجُلٌ مِنَ الْمُشْرِكِينَ يَذْكُرُ مِنْهُ جُرْأَةً وَنَجْدَةً، فَقَالَ لَهُ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: أَلَسْتَ ((تُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ؟ قَالَ: لاَ، قَالَ: ارْجِعْ فَلَنْ أَسْتَعِيْنَ بِمُشْرِكٍ)).
৩. ‘আইশা (রা) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সা) বদর যুদ্ধে যাবার পথে হাররাতুল ওয়াবার নামক স্থানে যখন পৌঁছালেন, তখন একজন মুশরিক ব্যক্তি তাঁর সাথে সাাত করে নিজের শক্তি ও সাহসের পরিচয় দিল। অতঃপর নবী (সা) বললেন, তুমি কি আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান রাখ? সে বলল আজ্ঞে না। নবী (সা) বললেন, আমি কোন মুশরিকের নিকট সাহায্য সহযোগিতা চাব না।
অর্থনীতি বিষয়ক
১. عَنْ عَائِشَةِ أَنَّهَا ذَكَرَتْ عِدَّةً مِنْ مَسَاكِيْنَ. أَوْ عِدَّةً مِنْ صَدَقَةٍ، فَقَالَ لَهَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ:((أَعْطِي وَلَا تُحْصِي فَيُحْصَى عَلَيْكِ)).
১. ‘আইশা (রা) হতে বর্ণিত। তিনি কিছু মিসকীন কিংবা কিছু সাদকা প্রসঙ্গে উল্লেখ করলেন। রাসূলুল্লাহ (সা) তাঁকে বললেন, দান করে দাও, গুণে গুণে দিবে না, তাহলে তোমাকেও সাওয়াব গুণে গুণে দেওয়া হবে।
২. عَنْ عَائِشَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَّهُ قَالَ: ((إِذَا تَصَدَّقَتِ الْمَرْأَةُ مِنْ بَيْتِ زَوْجِهَا كَانَ لَهَا بِهِ أَجْرٌ، وَلِلزَّوْجِ مِثْلُ ذَلِكَ وَلِلْخَازِنِ مِثْلُ ذَلِكَ وَلَا يَنْقُصُ كُلُّ وَاحِدٍ مِنْهُمْ مِنْ أَجْرِ صَاحِبِهِ شَيْئًا، لَهُ بِمَا كَسَبَ، وَلَهَا بِمَا أَنْفَقَتْ)).
২. ‘আইশা (রা) হতে বর্ণিত। নবী (সা) বলেন, স্ত্রী যখন স্বামীর ঘর থেকে কিছু দান করে-এতে তার সাওয়াব হয়। স্বামীর জন্যও সমপরিমাণ সাওয়াব হয় এবং ভাণ্ডারীর জন্যও সমপরিমাণ হয়। এতে একজন অপরজনের সাওয়াবের কিছুই কমাতে পারে না। স্বামীকে উপার্জন করার কারণে এবং স্ত্রীকে খরচ করার কারণে সাওয়াব দেয়া হয়।
৩. عَنْ عَائِشَةَ، قَالَتْ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: ((لاَ زَكَاةَ فِي مَالٍ، حَتَّى يَحُولَ عَلَيْهِ الْحَوْلُ)).
৩. ‘আইশা (রা) হতে বর্ণিত। আমি রাসূলুল্লাহ (সা)-কে বলতে শুনেছি, বছর পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত কোন মালের যাকাত নেই।
শিা-সংস্কৃতি বিষয়ক
১. عَائِشَةَ قَالَتْ: لَمَّا أُنْزِلَتِ الْآيَاتُ مِنْ سُورَةِ الْبَقَرَةِ فِي الرِّبَا، خَرَجَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَى الْمَسْجِدِ فَقَرَأَهُنَّ عَلَى النَّاسِ، ثُمَّ حَرَّمَ تِجَارَةَ الْخَمْرِ.
১. ‘আইশা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, সূরা বাকারার সুদ সম্পর্কীয় আয়াত অবতীর্ণ হলে নবী (সা) মসিজদে গিয়ে তা লোকদেরকে পড়ে শুনালেন। তারপর তিনি মদের ব্যবসা হারাম করে দিলেন।
২. عَنْ عَائِشَةَ، قَالَتْ: سُئِلَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنْ هَذِهِ الْآيَةِ ( هُوَ الَّذِي أَنْزَلَ عَلَيْكَ الْكِتَابَ مِنْهُ آيَاتٌ مُحْكَمَاتٌ ) إِلَى آخِرِ الْآيَةِ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا رَأَيْتُمُ الَّذِينَ يَتَّبِعُوْنَ مَا تَشَابَهَ مِنْهُ فَأُولَئِكَ الَّذِينَ سَمَّاهُمُ اللَّهُ فَاحْذَرُوْهُمْ.
২. ‘আইশা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সা)-কে এ আয়াত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হ’ল, ‘তিনিই তোমাদের প্রতি এ কিতাব অবতীর্ণ করেছেন যার কতক আয়াত মুহকাম, এগুলো কিতাবের মূল এবং অন্যগুলো মুতাশাবিহাত। যাদের মনে কুটিলতা আছে, তারাই ফিতনা সৃষ্টি এবং ভুল ব্যাখ্যার উদ্দেশ্যে মুতাশাবিহাতের অনুসরণ করে...কেবল বোধসম্পন্ন বক্তিরাই শিা গ্রহণ করে’ [সূরা আলে-‘ইমরান: ৪: ৭] রাসূলুল্লাহ্ (সা) বলেন, তোমরা কুর’আনের মুতশাবিহ আয়াতসমূহের অনুসারীদের দেখলে বুঝে নিবে যে, আল্লাহ্ তা‘আলা এদেরই নামোল্লেখ করেছেন। কাজেই তোমরা তাদের পরিহার করবে।
৩. عَنْ عَائِشَةَ: أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ إِذَا أَوَى إِلَى فِرَاشِهِ كُلَّ لَيْلَةٍ جَمَعَ كَفَّيْهِ ثُمَّ نَفَثَ فِيهِمَا فَقَرَأَ فِيهِمَا (قُلْ هُوَ اللَّهُ أَحَدٌ) وَ (قُلْ أَعُوذُ بِرَبِّ الْفَلَقِ) وَ (قُلْ أَعُوذُ بِرَبِّ النَّاسِ) ثُمَّ يَمْسَحُ بِهِمَا مَا اسْتَطَاعَ مِنْ جَسَدِهِ: يَبْدَأُ بِهِمَا عَلَى رَأْسِهِ وَوَجْهِهِ وَمَا أَقْبَلَ مِنْ جَسَدِهِ، يَفْعَلُ ذَلِكَ ثَلَاثَ مَرَّاتٍ.
৩. ‘আইশা (রা) বলেন, প্রতি রাতে বিছানায় শুয়ার সময় নবী (সা) দু’হাতের তালু একত্রিত করে তাতে সূরা ইখলাস, ফালাক ও নাস পড়ে ফুক দিয়ে মাথা ও মুখমণ্ডল হতে সারা শরীর তিনবার মাসহ করতেন।
চিকিৎসা বিষয়ক
১. عَنْ عَائِشَةَ رَضِي اللَّه عَنْهَا: أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يَنْفُثُ عَلَى نَفْسِهِ فِي الْمَرَضِ الَّذِي مَاتَ فِيهِ بِالْمُعَوِّذَاتِ، فَلَمَّا ثَقُلَ كُنْتُ أَنْفِثُ عَلَيْهِ بِهِنَّ، وَأَمْسَحُ بِيَدِ نَفْسِهِ لِبَرَكَتِهَا. فَسَأَلْتُ ابْنَ شَهَابٍ: كَيْفَ يَنْفِثُ؟ قَالَ: كَانَ يَنْفِثُ عَلَى يَدَيْهِ ثُمَّ يَمْسَحُ بِهِمَا وَجْهَهُ.
১. ‘আইশা (রা) থেকে বর্ণিত আছে যে, নবী (সা) যেই অসুখে ইন্তিকাল করলেন তাতে আশ্রয় প্রার্থনার দু’আ দ্বারা নিজের উপর ঝাড়-ফুক দিতেছিলেন। অতঃপর তিনি যখন ভারী (শক্তিহীন বিহ্বল) হয়ে গেলেন তখন আমি ঐ গুলোর দ্বারা ঝাড়-ফুক দিচ্ছিলাম এবং তিনি ঐসবের বরকত হাসিলের জন্য নিজের হাত বুলাচ্ছিলেন। একজন বর্ণনাকারী বলেন যে, আমি ইব্ন শিহাবকে জিজ্ঞেস করলাম, তাঁর ঝাড়-ফূক কেমন ছিল? তিনি উত্তর দিলেন যেমন, তিনি তাঁর দু’হাতে ফুক দিতেন। তারপর উহা দ্বারা মুখমণ্ডল মুছতেন।
২. عَائِشَةَ أَنَّهَا سَمِعَتِ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ إِنَّ هَذِهِ الْحَبَّةَ السَّوْدَاءَ شِفَاءٌ مِنْ كُلِّ دَاءٍ إِلَّا مِنَ السَّامِ قُلْتُ وَمَا السَّامُ قَالَ الْمَوْتُ.
২. ‘আইশা (রা) বলেন, তিনি রাসূলুল্লাহ্ (সা)-কে বলতে শুনেছেন, এ কালো জিরায় একমাত্র মৃত্যু ব্যতীত আর সব রোগের প্রতিষেধক হয়।
৩. عَنْ عَائِشَةَ رَضِي اللَّه عَنْهَا قَالَتْ: أَمَرَنِي رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّم، أَوْ: أَمَرَ، أَنْ يُسْتَرْقَى مِنَ الْعَيْنِ.
৩. ‘আইশা (রা) বলেছেন, রাসূলুল্লাহ্ (সা) আমাকে অথবা অন্য কাউকে বদনযর লাগলে ঝাড়-ফুক করতে হুক্ম দিয়েছেন।
৪. عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا أَخَذَ أَهْلَهُ الْوَعَكُ أَمَرَ بِالْحِسَاءِ فَصُنِعَ، ثُمَّ أَمَرَهُمْ فَحَسَوْا مِنْهُ، وَكَانَ يَقُولُ: ((إِنَّهُ لَيَرْتُقُ فُؤَادَ الْحَزِينِ وَيَسْرُو عَنْ فُؤَادِ السَّقِيمِ كَمَا تَسْرُو إِحْدَاكُنَّ الْوَسَخَ بِالْمَاءِ عَنْ وَجْهِهَا)).
৪. ‘আইশা (রা) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) পরিবারের লোকদের জ্বর হলে তিনি দুধ ও ময়দা সহযোগে তরল পথ্য তৈরী করার নির্দেশ দিতেন। তা তৈরী করা হলে তিনি পরিবারের লোকদের নির্দেশ দিতেন এ থেকে রোগীকে পান করাতে। তিনি বলতেন, এটা দুশ্চিন্তাগ্রস্থ মনে শক্তি যোগায় এবং রোগীর মনের কেশ ও দুঃখ দূর করে। যেমন তোমাদের কোন মহিলা পািন দিয়ে তার চেহারার ময়লা দূর করে থাকে।
পবিত্রতা বিষয়ক
১. عَنْ عَائِشَةَ زَوْجِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهم عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهم عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ إِذَا اغْتَسَلَ مِنَ الْجَنَابَةِ بَدَأَ فَغَسَلَ يَدَيْهِ ثُمَّ يَتَوَضَّأُ كَمَا يَتَوَضَّأُ لِلصَّلَاةِ ثُمَّ يُدْخِلُ أَصَابِعَهُ فِي الْمَاءِ فَيُخَلِّلُ بِهَا أُصُولَ شَعَرِهِ ثُمَّ يَصُبُّ عَلَى رَأْسِهِ ثَلَاثَ غُرَفٍ بِيَدَيْهِ ثُمَّ يُفِيضُ الْمَاءَ عَلَى جِلْدِهِ كُلِّهِ.
১. ‘আইশা (রা) থেকে বর্ণিত। নবী (সা) যখন জানাবাতের গোসল করতেন, তখন প্রথমে হাত দুটি ধুইতেন। তারপর নামাযের ওযূর ন্যায় ওযূ করতেন। তারপর তিনি তাঁর আঙ্গুলগুলো পানিতে ডুবিয়ে তা দিয়ে চুলের গোড়া খেলাল করতেন। তারপর দু’হাত দিয়ে তিন আঁজলা পানি নিজের মাথায় ঢালতেন। পরিশেষে সারা শরীরে পানি প্রবাহিত করতেন।
২. عَنْ عَائِشَةَ: ((أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ لَا يَتَوَضَّأُ بَعْدَ الْغُسْلِ)).
২. ‘আইশা (রা) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী (সা) গোসলের পর আর ওযূ করতেন না।
৩. عَنْ عَائِشَةَ، قَالَتْ: كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُعْجِبُهُ التَّيَمُّنُ فِي تَنَعُّلِهِ وَتَرَجُّلِهِ، وَطُهُورِهِ، وَفِي شَأْنِهِ كُلِّهِ.
৩. ‘আইশা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী (সা) জুতা পরা, চুল আঁচড়ান, পবিত্রতা অর্জন করা (ওযূ-গোসল) এবং এ ধরণের প্রত্যেক কাজ ডান দিক থেকে আরম্ভ করা পছন্দ করতেন।
‘ইবাদাত বিষয়ক
১. عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ: لَقَدْ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُصَلِّي الْفَجْرَ، فَيَشْهَدُ مَعَهُ نِسَاءٌ مِنَ الْمُؤْمِنَاتِ، مُتَلَفِّعَاتٍ فِي مُرُوطِهِنَّ، ثُمَّ يَرْجِعْنَ إِلَى بُيُوتِهِنَّ، مَا يَعْرِفُهُنَّ أَحَدٌ.
১. ‘আইশা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) ফজরের নামায পড়তেন এবং তাঁর সাথে কিছু সংখ্যক মহিলা চাদর জড়িয়ে নামাযে শরীক হ’ত। তারা এত অন্ধকার থাকতে নামায থেকে বাড়ী ফিরত যে কেউ তাদেরকে চিনতে পারত না।
২. عَنْ عَائِشَةَ، قَالَتْ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ((مَنْ أَدْرَكَ مِنَ الْعَصْرِ سَجْدَةً قَبْلَ أَنْ تَغْرُبَ الشَّمْسُ، أَوْ مِنَ الصُّبْحِ قَبْلَ أَنْ تَطْلُعَ، فَقَدْ أَدْرَكَهَا)). وَالسَّجْدَةُ إِنَّمَا هِيَ: الرَّكْعَةُ.
২. ‘আইশা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী (সা) বলেছেন, যে বক্তি সূর্যাস্তের পূর্বে ‘আসরের এক রাকা‘আত এবং সূর্যোদয়ের পূর্বে ফজরের এক রাকা‘আত নামায পেলো, সে যেন পূর্ণ ফজরের ও ‘আসরের নামাযই পেলো।
৩. عَنْ عَائِشَةَ رَضِي اللَّه عَنْهَا: ((أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يَدْعُو بِهَؤُلَاءِ الْكَلِمَاتِ: اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ فِتْنَةِ النَّارِ، وَعَذَابِ النَّارِ وَمِنْ شَرِّ الْغِنَى وَالْفَقْرِ)).
৩. ‘আইশা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী (সা) নিম্নের বাক্যগুলো দ্বারা দু‘আ করতেন, ‘হে আল্লাহ্! আমি তোমার কাছে দোযখের ফিতনা ও ‘আযাব হতে এবং ধনাট্য ও দারিদ্রতার অপকারিতা থেকে আশ্রয় চাই।
৪. عَنْ عَائِشَةَ رَضِي اللَّه عَنْهَا، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: ((إِذَا أَكَلَ أَحَدُكُمْ فَلْيَذْكُرِ اسْمَ اللَّهِ تَعَالَى فَإِنْ نَسِيَ أَنْ يَذْكُرَ اسْمَ اللَّهِ تَعَالَى فِي أَوَّلِهِ فَلْيَقُلْ: بِسْمِ اللَّهِ أَوَّلَهُ وَآخِرَهُ)).
৪. ‘আইশা (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা) বলেন, যখন তোমাদের কেউ খাবার শুরু করে সে যেন প্রথমে আল্লাহ্র নাম স্মরণ করে। প্রথমে তা ভুলে গেলে পরে বলবে بِسْمِ اللَّهِ أَوَّلَهُ وَآخِرَهُ ।
পরকাল বিষয়ক
১. عَنْ عَائِشَةَ رَضِي اللَّه عَنْهَا، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَّهُ قَالَ: ((يَا أُمَّةَ مُحَمَّدٍ، وَاللَّهِ لَوْ تَعْلَمُونَ مَا أَعْلَمُ لَبَكَيْتُمْ كَثِيرًا وَلَضَحِكْتُمْ قَلِيلاً)).
১. ‘আইশা (রা) নবী (সা) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, হে মুহাম্মাদ (সা)-এর উম্মত! আল্লাহ্র শপথ! আমি যা জানি তা যদি তোমারা জানতে, তবে তোমরা বেশি কাঁদতে এবং কম হাসতে।
২. عَنْ عَائِشَةَ، قَالَتْ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ((مَنْ أَحَبَّ لِقَاءَ اللَّهِ أَحَبَّ اللَّهُ لِقَاءَهُ وَمَنْ كَرِهَ لِقَاءَ اللَّهِ، كَرِهَ اللَّهُ، لِقَاءَهُ)).
২. ‘আইশা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ্র সাাৎ পছন্দ করে আল্লাহও তাঁর সাাৎ পছন্দ করেন। আর যে আল্লাহ্র সাাৎ অপছন্দ করেন, আল্লাহ্ও তার সাাৎ অপছন্দ করেন।
৩. عَنْ عَائِشَةَ، قَالَتْ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: ((يُحْشَرُ النَّاسُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ حُفَاةً عُرَاةً غُرْلاً)). قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ! النِّسَاءُ وَالرِّجَالُ جَمِيعًا، يَنْظُرُ بَعْضُهُمْ إِلَى بَعْضٍ؟! قَالَ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ((يَا عَائِشَةُ! الْأَمْرُ أَشَدُّ مِنْ أَنْ يَنْظُرَ بَعْضُهُمْ إِلَى بَعْضٍ)).
৩, ‘আইশা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা) কে বলতে শুনেছি। তিনি বলেছেন, কিয়ামতের দিন সমস্ত মানুষকে নগ্ন পায়ে উলঙ্গ অবস্থায় এবং তাদের পুংলিঙ্গের অগ্রভাগসহ (যা খাতনার সময় কাটা হয়ে থাকে) একত্রিত করা হবে। ‘আইশা (রা) বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহ্র রাসূল! পুরুষ ও নারী সবাইকেই কি এ ভাবে একত্রিত করা হবে? ......।
৪. عَنْ عَائِشَةَ: ((أَنَّهَا ذَكَرَتِ النَّارَ فَبَكَتْ، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَا يُبْكِيكِ؟ قَالَتْ: ذَكَرْتُ النَّارَ فَبَكَيْتُ، فَهَلْ تَذْكُرُونَ أَهْلِيكُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ؟ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: أَمَّا فِي ثَلَاثَةِ مَوَاطِنَ فَلاَ يَذْكُرُ أَحَدٌ أَحَدًا عِنْدَ الْمِيزَانِ حَتَّى يَعْلَمَ أَيَخِفُّ مِيزَانُهُ أَوْ يَثْقُلُ، وَعِنْدَ الْكِتَابِ حِينَ يُقَالُ ( هَاؤُمُ اقْرَءُوا كِتَابِيَهْ ) [الحاقة: ১৯]. حَتَّى يَعْلَمَ أَيْنَ يَقَعُ كِتَابُهُ، أَفِي يَمِينِهِ أَمْ فِي شِمَالِهِ أَمْ مِنْ وَرَاءِ ظَهْرِهِ، وَعِنْدَ الصِّرَاطِ إِذَا وُضِعَ بَيْنَ ظَهْرَيْ جَهَنَّمَ)).
৪. ‘আইশা (রা) থেকে বর্ণিত আছে, তিনি একদা জাহান্নামের আগুনের কথা স্মরণ করতঃ কাঁদছিলেন। রাসূলুল্লাহ (সা) বললেন, তোমাকে কে কাঁদাল? তিনি বললেন, আমি জাহান্নামের আগুন স্মরণ করছিলাম, তাই কাঁদছি। আচ্ছা আপনি কি কিয়ামতের দিনে আমাদের পরিবার-পরিজনদের কথা মনে রাখবেন? রাসূলুল্লাহ (সা) বললেন, এমন তিনটি জায়গা আছে যেখানে কেউ কাউকে মনে রাখবে না। ১. ‘আমল ওজন করার সময়, যতণ না সে নিশ্চিত হবে যে, তার ওজন ভারী হ’ল না হালকা হ’ল। ২. যখন আমলনামা দেওয়া হবে এই বলে যে, এসো তোমাদের ‘আমলনামা পড়ে দেখ। যতণ না সে নিশ্চিত হবে তার ‘আমলনামা ডান হাতে পাচ্ছে, না বাম হাতে, নাকি পৃষ্ঠদেশে। ৩. জাহান্নামের উপর রাখা কঠিন পথ (পুলসিরাত) পার হবার সময়।
শরী‘আতের বিধি-বিধান
ইসলামী শরী‘আতের বিভিন্ন বিধি-বিধান সম্পর্কিত বিষয়ে ‘আইশা (রা) অনেক হাদীস বর্ণনা করেছেন।
১. عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ لَمَّا أُنْزِلَتِ الْآيَاتُ مِنْ سُورَةِ الْبَقَرَةِ فِي الرِّبَا خَرَجَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَى الْمَسْجِدِ فَقَرَأَهُنَّ عَلَى النَّاسِ ثُمَّ حَرَّمَ تِجَارَةَ الْخَمْرِ.
১. ‘আইশা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, সূরা বাকারার সূদ সম্পর্কীয় আয়াত অবতীর্ণ হলে নবী (সা) মসজিদে গিয়ে তা লোকদের পড়ে শুনালেন। তারপর তিনি মদের ব্যবসা হারাম করে দিলেন।
২. عَنْ عَائِشَةَ، قَالَتْ: قَالَ لِي رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ:(( يَحْرُمُ مِنَ الرَّضَاعَةِ مَا يَحْرُمُ مِنَ الْوِلَادَةِ)).
২. ‘আইশা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন, যাদের সাথে বিবাহ বন্ধন হারাম হয় দুধ পানের কারণেও তাদের বিবাহ হরাম হয় ।
৩. عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهم عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا أَحْدَثَ أَحَدُكُمْ فِي صَلَاتِهِ فَلْيَأْخُذْ بِأَنْفِهِ ثُمَّ لِيَنْصَرِفْ.
৩. ‘আইশা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন, তোমাদের কারোর নামাযে ওযূ ছুটে গেলে (হদস) সে যেন তাঁর নাক ধরে পিছনে চলে আসে।
৪. عَنْ عَائِشَةَ رَضِي اللَّه عَنْهَا، زَوْجِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: أَنَّ حَمْزَةَ بْنَ عَمْرٍو الْأَسْلَمِيَّ، قَالَ لِلنَّبِيِّ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ:أَصُومُ فِي السَّفَرِ؟ وَكَانَ كَثِيرَ الصِّيَامِ، فَقَالَ: ((إِنْ شِئْتَ فَصُمْ، وَإِنْ شِئْتَ فَأَفْطِرْ)).
৪. ‘নবী (স)-এর স্ত্রী ‘আইশা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হামযা ইব্ন ‘আমর আসলামী অধিক মাত্রায় রোযা রাখতে অভ্যস্ত ছিলেন। তিনি নবী (সা)-কে বললেন, আমি সফরেও রোযা রেখে থাকি। নবী (স) বললেন, সফর অবস্থায় তুমি ইচ্ছা করলে রোযা রাখতে পার আবার ইচ্ছা করলে নাও রাখতে পার। (অর্থাৎ সফরে দু’টিরই অনুমতি আছে।)
৫. عَنْ عَائِشَةَ، قَالَتْ: إِنَّمَا نَهَاى رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنْ لُحُوْمِ الأَضَاحِيِّ لِجَهْدِ النَّاسِ، ثُمَّ رَخَّصَ فِيْهَا.
৫.‘আইশা (রা) বলেন, কুরবানীর গোশত সংরণ করতে রাসূলুল্লাহ (সা) নিষেধ করেছিলেন জনগণের অভাব-অনটনের কারণে। এ অবস্থা উত্তরণের পর তিনি তা পূনরায় সংরণের অনুমতি দান করেন।
৬. عَنْ عَائِشَةَ رَضِي اللَّه عَنْهَا: أَنَّ رِفَاعَةَ الْقُرَظِيَّ تَزَوَّجَ امْرَأَةً ثُمَّ طَلَّقَهَا، فَتَزَوَّجَتْ آخَرَ، فَأَتَتِ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهم عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَذَكَرَتْ لَهُ أَنَّهُ لَا يَأْتِيهَا، وَأَنَّهُ لَيْسَ مَعَهُ إِلَّا مِثْلُ هُدْبَةٍ، فَقَالَ: ((لاَ))، حَتَّى تَذُوقِي عُسَيْلَتَهُ وَيَذُوقَ عُسَيْلَتَكِ)).
৬. ‘আইশা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রিফা‘আতাল কুরাযী এক মহিলাকে বিবাহ করে তালাক দেয়। তারপর সে মহিলা অন্য এক পুরুষকে বিবাহ করে। মহিলাটি নবী (সা)-এর কাছে এসে বলল, তার স্বামী তার কাছে আসে না। কারণ সে পুরুষত্বহীন ছিল। রাসূলুল্লাহ্ (সা) বললেন, যতণ তুমি তার মধু এবং সে তোমার মধু পান না করবে, ততণ অন্যত্র বিবাহ বসতে পারবে না।
উপসংহার
উম্মুল মু’মিনীন ‘আইশা (রা) ছিলেন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলায়হি ওয়া সাল্লামের প্রিয়তম সহধর্মিনী ও ইসলামের প্রথম খলীফাহ্ আবূ বকর সিদ্দীক (রা)-এর কন্যা। স্বামী গৃহে এসে তিনি ইসলামের বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে যেরুপ জ্ঞান লাভ করেছিলেন অন্য কারও পে সেরুপ জানা সম্ভব হয়নি। বিশেষ করে রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর হাদীস সম্পর্কে সবচেয়ে বেশি জ্ঞান অর্জন করেছিলেন। হাদীস সংরণে উম্মাহাতুল মু’মিনীনের মধ্যে ‘আইশা (রা)-এর স্থান সবার ঊর্ধ্বে। তিনি একাই দু’হাজার দু’শত দশটি (২২১০) হাদীস বর্ণনা করেন। তিনিই সবচেয়ে বেশি রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর সান্নিধ্য লাভ করেছিলেন। এছাড়া তিনি প্রখর স্মৃতিশক্তি, অনন্য মেধা, অসাধারণ ধী-শক্তি, হাদীসের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ ও শরী‘আতের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে অতুলনীয় পর্যবেণ ও মতার অধিকারী ছিলেন। তিনি ছিলেন মুকসিরীন তথা অধিক সংখ্যক হাদীস বর্ণনাকারী সাতজন সাহাবীর মধ্যে তৃতীয়। ‘আইশা (রা) থেকে বর্ণিত হাদীসগুলোতে মানুষের জীবনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সমূহ স্থান লাভ করেছে। বিশেষ করে মহিলাদের জীবনের বিভিন্ন বিষয়ের সামাধান হাদীসের মাধ্যমে দিয়েছেন। এছাড়া রাসূলুল্লাহ (স)-এর ব্যক্তিসত্ত্বা, পারিবারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, শিা-সংস্কৃতি, চিকিৎসা, পবিত্রতা, শরী‘আতের বিধি-বিধান, ‘ইবাদাত, পরকাল প্রভৃতি বিষয়েও তিনি হাদীস বর্ণনা করেছেন।