মূল: রেজাউর রহমান
অনুবাদ: মুহাম্মদ আশরাফুল ইসলাম
সকল প্রশংসা ও মহিমা একমাত্র আল্লাহ সুবহানু ওয়া তায়ালার, যিনি এক ও একমাত্র সার্বভৌম রাব্বুল আলামীন। আল্লাহ ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই এবং মুহাম্মদ আল্লাহর বান্দা ও রাসূল, তাঁর ওপর শান্তি ও আল্লাহর রহমাত বর্ষিত হোক। আমরা ঘৃণিত শয়তান থেকে আশ্রয় চাই, আম্মা বা'দ। আস-সালাহ বা নামাজ ইসলামের দ্বিতীয় স্তম্ভ। আস-সালাহ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে বলেছেন:
فَإِذَا قَضَيْتُمُ الصَّلاَةَ فَاذْكُرُواْ اللّهَ قِيَامًا وَقُعُودًا وَعَلَى جُنُوبِكُمْ فَإِذَا اطْمَأْنَنتُمْ فَأَقِيمُواْ الصَّلاَةَ إِنَّ الصَّلاَةَ كَانَتْ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ كِتَابًا مَّوْقُوتًا
“অত:পর যখন তোমরা নামায সম্পন্ন কর, তখন দন্ডায়মান, উপবিষ্ট ও শায়িত অবস্খায় আল্লাহ্কে স্মরণ কর | অত:পর যখন বিপদমুক্ত হয়ে যাও, তখন নামায ঠিক করে পড় | নিশ্চয় নামায মুসলমানদের উপর ফরয নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে | ।” (সূরা নিসা, আয়াত ১০৩)।
اتْلُ مَا أُوحِيَ إِلَيْكَ مِنَ الْكِتَابِ وَأَقِمِ الصَّلَاةَ إِنَّ الصَّلَاةَ تَنْهَى عَنِ الْفَحْشَاء وَالْمُنكَرِ وَلَذِكْرُ اللَّهِ أَكْبَرُ وَاللَّهُ يَعْلَمُ مَا تَصْنَعُونَ
“আপনি আপনার প্রতি প্রত্যাদিষ্ট কিতাব পাঠ করুন এবং আমাকে স্মরণ করার জন্য নামাজ কায়েম কর (আল্লাহর আদেশ)”। (সূরা আন কাবুত, আয়াত ৪৫)
ইসলাম পাঁচটি স্তম্ভের ওপর প্রতিষ্ঠিত: আল্লাহ ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই এবং মুহাম্মদ (সাঃ) আল্লাহর রাসূল- এই মর্মে শাহাদাহ ঘোষণা করা (সাক্ষ্য দেয়া), নামাজ কায়েম করা, যাকাত আদায় করা, হজ্ব করা এবং রমযান মাসে রোযা রাখা। (বুখারী ও মুসলিম)। এটা সুষ্পষ্ট যে, আমাদের ওপর নির্ধারিত সকল আনুষ্ঠানিক ইবাদাতের মধ্যে নামাজ হচ্ছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। যেই মুহূর্তে কোন ব্যক্তি, সে পুরুষ হোক বা নারী, তার তাওহীদ ও রিসালাতের শাহাদাহ (সাক্ষ্য) ঘোষণা করে ঠিক সেই মুহূর্তে সালাহ বা নামাজ তার ওপর অবশ্য কর্তব্য হয়ে পড়ে। তবে উক্ত ব্যক্তি (নারী বা পুরুষ) পাগল বা অপ্রকৃতিস্থ বা অচেতন বা নাবালক বয়সের শিশু হলে তা হবে ব্যতিক্রম। নিশ্চয়ই কিয়ামতের দিনে আল্লাহ সর্বপ্রথম তার বান্দাহকে তার নামাজ সম্পর্কে প্রশ্ন করবেন।
رِجَالٌ لَّا تُلْهِيهِمْ تِجَارَةٌ وَلَا بَيْعٌ عَن ذِكْرِ اللَّهِ وَإِقَامِ الصَّلَاةِ وَإِيتَاء الزَّكَاةِ يَخَافُونَ يَوْمًا تَتَقَلَّبُ فِيهِ الْقُلُوبُ وَالْأَبْصَارُ
“যাদেরকে ব্যবসা ও বেচা-কেনা আল্লাহর স্মরণ, নামাজ কায়েম করা এবং যাকাত আদায় করা হতে গাফিল করে দেয় না, তারা সেই দিনকে (কিয়ামতের দিনের কঠোরতা ও বিভিষীকার দরুণ) ভয় করতে থাকে যেদিন দিল উল্টে যাওয়া এবং চুর্ন পাথর হয়ে যাওয়ার অবস্খা দেখা দেবে।” (সূরা নূর, আয়াত ৩৭)
আমাদের ওপর সকল আনুষ্ঠানিক ইবাদত এই দুনিয়ায় নির্ধারিত হয়েছে, কিন্তু সালাহ এতটাই বিশেষ ধরনের যে, আল্লাহ মিরাজের রাতে মহানবীর (তাঁর ওপর শান্তি ও আল্লাহর রহমত বর্ষিত হোক) আরোহন কালে সপ্তম আসমানে আমাদেরকে পাঁচ ওয়াক্ত বাধ্যতামূলক সালাতের আদেশ দিয়েছেন। মহানবী মহাখুশীর সাথে তাঁর উম্মাহর সালাত কায়েমকারী সদস্যদের জন্য আল্লাহ সুবহানু ওয়া তায়ালার কাছ থেকে জান্নাতের সুসংবাদসহ আমাদের জন্য এই বিশেষ উপহার নিয়ে আসেন।
নামাজ হচ্ছে মুমিনীনের মিরাজ একজন মুমিন সবসময় আল্লাহ সুবহানু ওয়া তায়ালার সাথে সম্পর্কযুক্ত বলে অনুভব করে এবং তার সকল কাজ ও কথায় তা প্রকাশ পায়। নামাজ আল্লাহ ও তাঁর বান্দার মধ্যে সম্পর্ক রক্ষার ব্যাপারে বিশেষভাবে নির্ধারিত ব্যবস্থা, যা আল্লাহ পছন্দ করেন এবং প্রতি ২৪ ঘন্টায় পাঁচবার বিশেষ সময়ে সালাত আদায়ের নির্দেশ দিয়েছেন। আর এই নামাজের মাধ্যমেই সৃষ্টি ও স্রষ্টার মধ্যে যোগাযোগ ঘটে। এটা হচ্ছে একাকী মানবসত্তা (মানব রুহ) এবং এক ও একক সত্তার (আল্লাহ) মধ্যে যোগাযোগ। প্রত্যেক মুসলিমের এই সময়গুলো কাজে লাগানো এবং এই সময়ের জন্য আগ্রহের সাথে অপোয় থাকা উচিৎ। নামাজের সময় একজন মুসলিম পার্থিব বিষয়াদি থেকে বিরতি নিতে পারে এবং একটি বিশেষ নিয়মের মাধ্যমে আল্লাহর সাথে যোগাযোগ করতে পারে। এই নিয়ম হচ্ছে নামাজ যা মহানবীর পার্থিব জীবনের এক মহানতম মুহূর্তে সপ্তম আসমানে আমাদের জন্য বিশেষ উপহার হিসেবে দেয়া হয়েছে।
সহীহ্ আল বুখারীর একটি হাদিসে বলা হয়েছে, জিব্রাইল (আ:) মানুষের বেশে রাসূলের (সা:) কাছে আসেন এবং তাঁকে দ্বীন সম্পর্কে বহু প্রশ্ন করেন। প্রশ্নগুলোর মধ্যে একটি ছিল: “আমাকে ইহসান (উত্তমতা) সম্পর্কে বলুন,” রাসূল (সা:) জবাব দেন: “আপনি এমনভাবে ইবাদত করুন যেন আপনি তাকে (আল্লাহ) দেখতে পাচ্ছেন এবং এমনকি যদিও আপনি তাকে দেখেন না, আপনি জানেন যে, তিনি (আল্লাহ) আপনাকে দেখছেন।” (বুখারীর একটি হাদীসের অংশবিশেষ) একজন মুসলিম যে সময়ের জন্য অপেমান ছিল সেই সময়ে উপনীত হলে তার মানসিক অবস্খা ঠিক এরকমই হওয়া উচিত।
আবু হুরাইরা (রা:) থেকে বর্ণিত একটি হাদিসে কুদসিতে আল্লাহর রাসূল (সা:) সালাতে সূরা আল ফাতিহা তিলাওয়াত সম্পর্কে উল্লেখ করেছেন: যখন আল্লাহর বান্দা বলে: সকল প্রশংসা আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের, তখন আল্লাহ বলেন: আমার বান্দা আমার প্রশংসা করেছে। আর রাহমানির রাহিম, আল্লাহ বলেন: আমার বান্দা আমার সিফাত (গুণাবলী) উল্লেখ করেছে, পুনরুথান দিবসের মালিক, আল্লাহ বলেন: আমার বান্দা আমাকে মহিমানিবত করেছে, যখন সে বলে, আমরা একমাত্র তোমারই ইবাদত করি এবং একমাত্র তোমারই কাছে সাহায্য চাই, আল্লাহ বলেন: এটা আমার ও আমার বান্দার মধ্যকার ব্যাপার এবং আমার বান্দা যা চায় তাই পাবে। তারপর যখন বান্দা বলে, আমাদেরকে সীরাতুল মুস্তাকীমে পরিচালিত কর এবং তাদের পথে নয় যারা তোমার ক্রোধ অর্জন করেছে (অভিশপ্ত) এবং যারা পথভ্রষ্ট, আল্লাহ বলেন: এটা আমার বান্দার জন্যে, আর আমার বান্দা যা চায় তাই পাবে। (মুসলিম, তিরমিজি, আবু দাউদ ও ইবনে মাজাহ)। এটা কার্যত মুমিনীনের জন্য খুবই বিশেষ মুহূর্ত।
পরকালীন সাফল্যের মাধ্যম
قَدْ أَفْلَحَ الْمُؤْمِنُونَ- الَّذِينَ هُمْ فِي صَلَاتِهِمْ خَاشِعُونَ
“নিশ্চিতই কল্যাণ লাভ করেছে ঈমান গ্রহণকারী লোকেরা (মুমিনুন), যারা নিজেদের নামাজ ভীতি ও বিনয় সহকারে আদায় করে।” সূরা মুমিনুন, আয়াত ১-২)।
রাবি ইবনে কা'ব বর্ণনা করেছেন যে, এক রাতে আমি আল্লাহর রাসূলের (সা:) সাথে থাকলাম, এবং তাঁকে পানি এবং তিনি আর যা কিছুর প্রয়োজন বোধ করলেন সেগুলো এনে দিলাম। তিনি আমাকে বললেন, চাও (তুমি যা পছন্দ কর), আমি বললাম, আমি জান্নাতে আপনার সাহচর্য চাই, রাসূল (সা:) বললেন, এছাড়া কি আর কিছু চাও? আমি বললাম, এই আমার সব চাওয়া, তারপর রাসূল (সা:) বললেন, তাহলে প্রচুর সুজুদ (অর্থাৎ সালাহ) আদায় করে এক্ষেত্রে আমাকে সাহায্য কর। (মুসলিম)
إِنَّ الصَّلَاةَ تَنْهَى عَنِ الْفَحْشَاء وَالْمُنكَرِ وَلَذِكْرُ اللَّهِ أَكْبَرُ وَاللَّهُ يَعْلَمُ مَا تَصْنَعُونَ
নি:সন্দেহে সালাহ একজন ব্যক্তিকে ফাহশা (অশ্লীল) ও মুনকার (নিষিদ্ধ কাজ) হইতে বিরত রাখে। (সূরা আনকাবুত, আয়াত ৪৫)
আল্লাহ সালাতের মধ্যদিয়ে আমাদেরকে এমন এক উপায় দিয়েছেন যার মাধ্যমে আমাদের রুহের মধ্যকার নফস-ই-আম্মারা ঐসব কথা ও কাজের দিকে ধাবিত হওয়ার চাপ কাটিয়ে উঠবে যা আল্লাহকে অসন্তুষ্ট করে এবং পরিশেষে একজন মুসলিমের দোযখের আগুনে প্রবেশের বা কবরে বা এমনকি এই পার্থিব জীবনে শাস্তি ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। আবু জার (রা:) বর্ণনা করেছেন: আমি বললাম লাব্বায়েক হে আল্লাহর রাসূল, রাসূল বললেন: যখনই একজন মুসলিম শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করে সালাহ আদায় করে তখনই তার পাপ এই গাছটির পাতার মত ঝরে পড়তে শুরু করে। (মুসনাদে আহমাদ)
مَا سَلَكَكُمْ فِي سَقَرَ- قَالُوا لَمْ نَكُ مِنَ الْمُصَلِّينَ- وَلَمْ نَكُ نُطْعِمُ الْمِسْكِينَ
যখন দোযখের অধিবাসীদের জিজ্ঞেস করা হবে, কোন্ জিনিস তোমাদেরকে এই জাহান্নামে নিয়ে এসেছে? (তারা জবাব দেবে) “আমরা মুসল্লীনের (সালাহ আদায়কারী) মধ্যে শামিল ছিলাম না অথবা মিসকিনদেরকে খাবার খাওয়াতাম না।” (সূরা মুদ্দাস্সির, আয়াত ৪২-৪৩)।
পার্থিব জীবনে সাফল্যের মাধ্যম
إِنَّ الْإِنسَانَ خُلِقَ هَلُوعًا- إِذَا مَسَّهُ الشَّرُّ جَزُوعًا- وَإِذَا مَسَّهُ الْخَيْرُ مَنُوعًا- إِلَّا الْمُصَلِّينَ- الَّذِينَ هُمْ عَلَى صَلَاتِهِمْ دَائِمُونَ
নিশ্চয়ই মানুষ খুবই সংকীর্ণমনা (ছোট আত্মার) হিসেবে সৃষ্ট হয়েছে। তার ওপর যখন বিপদ আসে তখন ঘাবড়ে উঠে, আর যখন সাচ্ছন্দ্য-সচ্ছলতা হাতে আসে তখন সে কার্পণ্য করতে শুরু করে। কিন্তু সেইসব লোক (এই জন্মগত ত্রুটি হইতে মুক্ত) যাহারা সালাহ আদায়কারী। যাহারা নিজেদের সালাত রীতিমত আদায় করে। (সূরা মা'আরিজ, আয়াত ১৯-২৩)।
যারা নিষ্ঠার সাথে সালাত কায়েম করে তাদেরকে শান্তিপূর্ণ মন এবং সাকিনাহ নামে অভিহিত বিশেষ ধরনের প্রশান্তি দেয়া হয়। ভক্তি সহকারে নামাজ আদায়কারীরা তাদের পরিস্খিতিতে সর্বদা সন্তুষ্ট থাকে, সেক্ষেত্রে তারা যতই পার্থিব সমস্যার কঠিন পরীক্ষায় অথবা আল্লাহর কাছ থেকে সম্পদপ্রাপ্ত হয়ে প্রাচুর্যের মধ্যে থাকুক না কেন। তারা সর্বদা তাদের বিশ্লেষণে ও আবেদনে ভারসাম্যপূর্ণ থাকে এবং কখনই তাদের ধৈর্য্য ও আত্ম নিয়ন্ত্রণ হারায় না।
وَاسْتَعِينُواْ بِالصَّبْرِ وَالصَّلاَةِ وَإِنَّهَا لَكَبِيرَةٌ إِلاَّ عَلَى الْخَاشِعِينَ
“তোমরা ধৈর্য্য ও সালাতের মারফতে সাহায্য চাও। সালাহ নি:সন্দেহে একটি শক্ত কাজ, তবে সেই অনুগত বান্দাদের পক্ষে তা মোটেই কঠিন নয়।” (সূরা বাকারা, আয়াত ৪৫)। আমাদের সকল প্রয়োজনের জন্য আমাদেরকে সালাতের মাধ্যমে আল্লাহর সাহায্য চাইতে হবে। রাসূল (সা:) তার বেশিরভাগ সমস্যা (সেটা বৃষ্টির জন্যই হোক না কেন) অথবা শত্রুর বিরুদ্ধে সাহায্য অথবা এমনকি আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জ্ঞাপনের জন্য সালাহ আদায় করতেন।
নামাজ আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশের মাধ্যম
فَاذْكُرُونِي أَذْكُرْكُمْ وَاشْكُرُواْ لِي وَلاَ تَكْفُرُونِ
তোমরা আমাকে স্মরণ রাখ, আমিও তোমাদের স্মরণে রাখব এবং আমার শোকর আদায় কর, আমার নিয়ামতের কুফরি করো না। (সূরা বাকারা, আয়াত ১৫২) আল্লাহ আমাদের স্বাভাবিক শরীর থেকে শুরু করে আমাদের স্বাস্খ্য, অথবা সম্পদ, আমাদের সন্তান, আমাদের পরিবার ইত্যাদি যা কিছু আমাদেরকে দিয়েছেন এবং সর্বোপরি আমাদেরকে সীরাতুল মুস্তাকীমে পরিচালিত করেছেন সেজন্য আমরা আল্লাহর কাছে আমাদের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ (শোকর) করতে বাধ্য। রাসূলকে (সা:) একবার জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, আল্লাহ যখন তার অতীত ও বর্তমান সকল গুনাহ মা করে দিয়েছেন তখন তিনি কেন (পা ফুলে যাওয়া পর্যন্ত) দীর্ঘ সময় ধরে রাত্রিকালীন সালাহ (তাহাজ্জুদ) আদায় করেন। তিনি জবাব দেন: আমি কি একজন কৃতজ্ঞ বান্দা হবো না? আসুন আমরাও আমাদেরকে প্রশ্ন করি আমরা কি আল্লাহর কৃতজ্ঞ বান্দা হবো না? সকল নবীই কৃতজ্ঞ বান্দাহ ছিলেন এবং তাদেরকে নামাজ কায়েম করার আদেশ দেয়া হয়েছিল। নবী ইব্রাহীম (আ:) কা'বা ঘর পুন:নির্মাণের পর আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেছিলেন:
رَبِّ اجْعَلْنِي مُقِيمَ الصَّلاَةِ وَمِن ذُرِّيَّتِي رَبَّنَا وَتَقَبَّلْ دُعَاء
হে আমার রব, আমাকে নামাজ আদায়কারী বানাও, আর আমার সন্তানদের মধ্য হতেও (এমন লোক বের কর, যারা এই কাজ করবে), হে আমাদের রব, অনুগ্রহ করে আমাদের দোয়া কবুল কর। (সূরা ইব্রাহীম, আয়াত ৪০)।
رَّبَّنَا إِنِّي أَسْكَنتُ مِن ذُرِّيَّتِي بِوَادٍ غَيْرِ ذِي زَرْعٍ عِندَ بَيْتِكَ الْمُحَرَّمِ رَبَّنَا لِيُقِيمُواْ الصَّلاَةَ فَاجْعَلْ أَفْئِدَةً مِّنَ النَّاسِ تَهْوِي إِلَيْهِمْ وَارْزُقْهُم مِّنَ الثَّمَرَاتِ لَعَلَّهُمْ يَشْكُرُونَ
হে আমাদের রব, আমি পানি ও তরুলতা শূন্য এক মরু প্রাপ্তরে আমার সন্তানদের একটি অংশকে তোমার মহাসম্মানিত ঘরের নিকটে এনে পুনর্বাসিত করলাম। হে আল্লাহ, এটি আমি এই জন্য করেছি যে, তারা এখানে নামাজ কায়েম করবে। (সূরা ইব্রাহীম, আয়াত ৩৭) মুসলিম মিল্লাতের পিতা ইব্রাহীম (আ:) সালাহ কায়েমের জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেছিলেন এবং মিল্লাতে ইব্রাহীমের অংশ হিসেবে আমাদের প্রধান দায়িত্ব হচ্ছে নামাজ কায়েম করা। ঈসা (আ:) তার জন্মের পরপরই বনী ইসরাইলকে বলেছিলেন:
وَجَعَلَنِي مُبَارَكًا أَيْنَ مَا كُنتُ وَأَوْصَانِي بِالصَّلَاةِ وَالزَّكَاةِ مَا دُمْتُ حَيًّا
“আর আমি যেখানেই থাকি না কেন তিনি আল্লাহ আমাকে করুণা করেছেন এবং যতদিন আমি জীবিত থাকি ততদিন নামাজ আদায় ও যাকাত দেয়ার নিয়ম পালনের হুকুম করেছেন। (সূরা মরিয়ম, আয়াত ৩১) তারপর ইসমাঈল (যার থেকে কুরাইশ বংশ এবং নবী মুহাম্মদের (সা:) পরিবার এসেছে) সম্পর্কে বলা হয়েছে:
وَاذْكُرْ فِي الْكِتَابِ إِسْمَاعِيلَ إِنَّهُ كَانَ صَادِقَ الْوَعْدِ وَكَانَ رَسُولًا نَّبِيًّا- وَكَانَ يَأْمُرُ أَهْلَهُ بِالصَّلَاةِ وَالزَّكَاةِ وَكَانَ عِندَ رَبِّهِ مَرْضِيًّا
“এই কিতাবে ইসমাঈলকেও স্মরণ কর। সে ছিল ওয়াদার সত্যতা বিধানকারী। আর নবী-রাসূলও ছিল সে। সে তার ঘরের লোকদেরকে নামাজ ও যাকাতের হুকুম দিতো। সর্বোপরি তার রবের নিকট এক পছন্দনীয় ব্যক্তি ছিল সে। (সূরা মরিয়ম, আয়াত ৫৪-৫৫)।
আর আমাদের নবী মুহাম্মদকে (সা:), একথা বলার আদেশ দেয়া হয়েছে যে,
قُلْ إِنَّ صَلاَتِي وَنُسُكِي وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِي لِلّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ- لاََ شَرِيكَ لَهُ وَبِذَلِكَ أُمِرْتُ وَأَنَاْ أَوَّلُ الْمُسْلِمِينَ
“বল আমার নামাজ আমার সর্বপ্রকার ইবাদত অনুষ্ঠান, আমার জীবন ও আমার মৃত্যু সবকিছুই সারা জাহানের রব আল্লাহরই জন্য। তার কোন শরীক নেই, আর আমাকে এরই আদেশ দেয়া হয়েছে এবং আমি মুসলিমীনের মধ্যে প্রথম।” (সূরা আনআম, আয়াত ১৬২-১৬৩)।
সকল মুসলিম শাসক নামাজ কায়েম করতে বাধ্য। নবীদের উত্তরাধিকারী হিসেবে মতাসীন সকল শাসক প্রয়োজন হলে বল প্রয়োগে তাদের মা'মুরদের ওপর নামাজ কায়েম করতে বাধ্য।
الَّذِينَ إِن مَّكَّنَّاهُمْ فِي الْأَرْضِ أَقَامُوا الصَّلَاةَ وَآتَوُا الزَّكَاةَ وَأَمَرُوا بِالْمَعْرُوفِ وَنَهَوْا عَنِ الْمُنكَرِ وَلِلَّهِ عَاقِبَةُ الْأُمُورِ
এরা (মুসলিম শাসকগণ) সেই লোক যে, তাদেরকে আমরা যদি জমিনে মতা দান করি তবে তারা নামাজ কায়েম করবে, যাকাত দেবে, মারুফের (ভাল কাজের) হুকুম দিবে এবং মুনকারের (মন্দ কাজের) নিষেধ করবে। আর সব ব্যাপারে চূড়ান্ত পরিণতি আল্লাহর হাতে। (সুরা হজ্ব, আয়াত ৪১)
মা'জ ইবনে জাবালকে ইয়েমেনের গবর্ণর হিসেবে নিয়োগ করার সময় রাসূল (সা:) তাকে কতিপয় বিশেষ আদেশ দিয়েছিলেন এবং আদেশগুলোর মধ্যে একটি ছিল তার শাসনাধীন লোকদের ওপর সালাহ কায়েম করা। বেশ কয়েকটি হাদিসে রাসূল (সা:) মুসলিমদের প্রতি মুসলিম শাসকরা যতদিন সালাহ কায়েম করে ততদিন তাদের বিরুদ্ধে বিদেন্সাহ না করার আদেশ দিয়েছেন। ফরজ নামাজ এতই গুরুত্বপূর্ণ যে, আমরা যুদ্ধ বা ভীতির মধ্যে থাকলেও আমাদেরকে তা আদায় করতে হবে। আমরা ভীতিকর অবস্খা বা চরম দুর্দশা বা এমনকি পীড়িত ইত্যাদি যে অবস্খায়ই থাকি না কেন আমাদেরকে আমাদের ফরজ নামাজ আদায় করতে হবে। সুরা নিসায় এবং হাদিসেও বেতেরের নামাজ সম্পর্কে বর্ণনা দেয়া হয়েছে। রাসূল (সা:) তাঁর অসুস্খতার শেষ দিনগুলোতে বহু কষ্ট করে মসজিদে আসেন এবং নিশ্চিত হন যে, তার পিছনে তার সাহাবাদের নামাজ আদায় অব্যাহত রয়েছে। তাঁর (রাসূল সা:) শেষ কথাও ছিল নামাজ সম্পর্কে। সুন্নত নামাজ উপেক্ষা করা যাবে না। আমাদেরকে দোযখের আগুন থেকে নিজেদেরকে রক্ষা এবং জান্নাতে প্রবেশের লক্ষে সকল সুযোগকে কাজে লাগাতে হবে। সুন্নত ও নফল নামাজের বিনিময়ে আদায়ের বহু গুনাহ মা এবং ফরজ নামাজের ত্রুটিসমূহ দূর করা হতে পারে। যে ব্যক্তি ১২ রাকাত নফল নামাজ আদায় করে তার জন্য একটি প্রাসাদ নির্মিত হয়। তাহাজ্জুদ হচ্ছে আল্লাহর নৈকট্য লাভের মাধ্যম। রাসূল (সা:) এমনকি সফরে থাকলেও বেতের নামাজের মাধ্যমে তার রাত শেষ করতেন।
وَإِن نَّكَثُواْ أَيْمَانَهُم مِّن بَعْدِ عَهْدِهِمْ وَطَعَنُواْ فِي دِينِكُمْ فَقَاتِلُواْ أَئِمَّةَ الْكُفْرِ إِنَّهُمْ لاَ أَيْمَانَ لَهُمْ لَعَلَّهُمْ يَنتَهُونَ
যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে নামাজ ত্যাগ করে (তারিকুস সালাহ) তবে যদি তারা তওবা করে, নামাজ কায়েম করে ও যাকাত দেয় তাহলে তারা তোমাদের দ্বীনি ভাই। (সূরা তওবা, আয়াত ১১)
সহীহ আল বুখারীতে বর্ণিত একটি হাদিসে বলা হয়েছে- রাসূল (সা:) বলেন, লোকের আল্লাহ ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই এবং আমি আল্লাহর রাসূল এই মর্মে সাক্ষ্য না দেওয়া, নামাজ কায়েম না করা ও যাকাত না দেয়া পর্যন্ত আমাকে তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করার আদেশ দেয়া হয়েছে, আর তারা এগুলো করলেই তাদের সম্পদ ও রক্ত আমার থেকে নিরাপদ। সহিহ মুসলিমের একটি হাদিসে রাসূল (সা:) বলেন, নিশ্চয় একজন মানুষ এবং শিরক ও কুফরের মধ্যে রয়েছে নামাজ পরিত্যাগ। একটি হাদিসে উল্লেখ করা হয়েছে, যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে নামাজ ত্যাগ করে সে কুফরী করে।
দারুল ইসলামে যে ব্যক্তি নামাজ আদায় করে না সে আদৌ মুসলিম হিসেবে বিবেচিত হতে পারে না, যদি না সে (নারী বা পুরুষ) পাগল বা অচেতন বা নাবালক বা গায়ের মুকাল্লাফ হয়। যে ব্যক্তি শাহাদাহ ঘোষণা করে এবং তারপর প্রার্থনা করে না বা নামাজ ত্যাগ করে তাকে কর্তৃপরে মাধ্যমে বৈধভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে এবং পর্যবেণে রাখতে হবে, তারপর তারা নামাজ আদায়ে ফিরে না গেলে তাদেরকে শরিয়া অনুযায়ী শাস্তি দিতে হবে। অধিকাংশ ফকিহগণ একমত হয়েছেন যে, এরকম লোকদের জন্য কোন জানাজা নেই এবং তাদেরকে মুসলিম গোরস্তানে দাফন করা যাবে না।
দারুল কুফরে কোন ব্যক্তি বা দল বা গ্রাম বা শহরের মুসলিম হিসেবে বিবেচিত হওয়ার প্রথম লণ হবে তারা নামাজ আদায় করে কিনা। তারপর যদি তাদের মধ্যে শাহাদাহ অকার্যকর করার মতো অন্য কোন উপাদান থাকে তাহলে সেগুলো বিবেচনায় নিতে হবে।
আল্লাহ আমাদের নামাজ কবুল এবং আমাদেরকে মুসলিমীনের মধ্যে গণ্য করুন। আমীন ।
অনুবাদ: মুহাম্মদ আশরাফুল ইসলাম
সকল প্রশংসা ও মহিমা একমাত্র আল্লাহ সুবহানু ওয়া তায়ালার, যিনি এক ও একমাত্র সার্বভৌম রাব্বুল আলামীন। আল্লাহ ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই এবং মুহাম্মদ আল্লাহর বান্দা ও রাসূল, তাঁর ওপর শান্তি ও আল্লাহর রহমাত বর্ষিত হোক। আমরা ঘৃণিত শয়তান থেকে আশ্রয় চাই, আম্মা বা'দ। আস-সালাহ বা নামাজ ইসলামের দ্বিতীয় স্তম্ভ। আস-সালাহ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে বলেছেন:
فَإِذَا قَضَيْتُمُ الصَّلاَةَ فَاذْكُرُواْ اللّهَ قِيَامًا وَقُعُودًا وَعَلَى جُنُوبِكُمْ فَإِذَا اطْمَأْنَنتُمْ فَأَقِيمُواْ الصَّلاَةَ إِنَّ الصَّلاَةَ كَانَتْ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ كِتَابًا مَّوْقُوتًا
“অত:পর যখন তোমরা নামায সম্পন্ন কর, তখন দন্ডায়মান, উপবিষ্ট ও শায়িত অবস্খায় আল্লাহ্কে স্মরণ কর | অত:পর যখন বিপদমুক্ত হয়ে যাও, তখন নামায ঠিক করে পড় | নিশ্চয় নামায মুসলমানদের উপর ফরয নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে | ।” (সূরা নিসা, আয়াত ১০৩)।
اتْلُ مَا أُوحِيَ إِلَيْكَ مِنَ الْكِتَابِ وَأَقِمِ الصَّلَاةَ إِنَّ الصَّلَاةَ تَنْهَى عَنِ الْفَحْشَاء وَالْمُنكَرِ وَلَذِكْرُ اللَّهِ أَكْبَرُ وَاللَّهُ يَعْلَمُ مَا تَصْنَعُونَ
“আপনি আপনার প্রতি প্রত্যাদিষ্ট কিতাব পাঠ করুন এবং আমাকে স্মরণ করার জন্য নামাজ কায়েম কর (আল্লাহর আদেশ)”। (সূরা আন কাবুত, আয়াত ৪৫)
ইসলাম পাঁচটি স্তম্ভের ওপর প্রতিষ্ঠিত: আল্লাহ ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই এবং মুহাম্মদ (সাঃ) আল্লাহর রাসূল- এই মর্মে শাহাদাহ ঘোষণা করা (সাক্ষ্য দেয়া), নামাজ কায়েম করা, যাকাত আদায় করা, হজ্ব করা এবং রমযান মাসে রোযা রাখা। (বুখারী ও মুসলিম)। এটা সুষ্পষ্ট যে, আমাদের ওপর নির্ধারিত সকল আনুষ্ঠানিক ইবাদাতের মধ্যে নামাজ হচ্ছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। যেই মুহূর্তে কোন ব্যক্তি, সে পুরুষ হোক বা নারী, তার তাওহীদ ও রিসালাতের শাহাদাহ (সাক্ষ্য) ঘোষণা করে ঠিক সেই মুহূর্তে সালাহ বা নামাজ তার ওপর অবশ্য কর্তব্য হয়ে পড়ে। তবে উক্ত ব্যক্তি (নারী বা পুরুষ) পাগল বা অপ্রকৃতিস্থ বা অচেতন বা নাবালক বয়সের শিশু হলে তা হবে ব্যতিক্রম। নিশ্চয়ই কিয়ামতের দিনে আল্লাহ সর্বপ্রথম তার বান্দাহকে তার নামাজ সম্পর্কে প্রশ্ন করবেন।
رِجَالٌ لَّا تُلْهِيهِمْ تِجَارَةٌ وَلَا بَيْعٌ عَن ذِكْرِ اللَّهِ وَإِقَامِ الصَّلَاةِ وَإِيتَاء الزَّكَاةِ يَخَافُونَ يَوْمًا تَتَقَلَّبُ فِيهِ الْقُلُوبُ وَالْأَبْصَارُ
“যাদেরকে ব্যবসা ও বেচা-কেনা আল্লাহর স্মরণ, নামাজ কায়েম করা এবং যাকাত আদায় করা হতে গাফিল করে দেয় না, তারা সেই দিনকে (কিয়ামতের দিনের কঠোরতা ও বিভিষীকার দরুণ) ভয় করতে থাকে যেদিন দিল উল্টে যাওয়া এবং চুর্ন পাথর হয়ে যাওয়ার অবস্খা দেখা দেবে।” (সূরা নূর, আয়াত ৩৭)
আমাদের ওপর সকল আনুষ্ঠানিক ইবাদত এই দুনিয়ায় নির্ধারিত হয়েছে, কিন্তু সালাহ এতটাই বিশেষ ধরনের যে, আল্লাহ মিরাজের রাতে মহানবীর (তাঁর ওপর শান্তি ও আল্লাহর রহমত বর্ষিত হোক) আরোহন কালে সপ্তম আসমানে আমাদেরকে পাঁচ ওয়াক্ত বাধ্যতামূলক সালাতের আদেশ দিয়েছেন। মহানবী মহাখুশীর সাথে তাঁর উম্মাহর সালাত কায়েমকারী সদস্যদের জন্য আল্লাহ সুবহানু ওয়া তায়ালার কাছ থেকে জান্নাতের সুসংবাদসহ আমাদের জন্য এই বিশেষ উপহার নিয়ে আসেন।
নামাজ হচ্ছে মুমিনীনের মিরাজ একজন মুমিন সবসময় আল্লাহ সুবহানু ওয়া তায়ালার সাথে সম্পর্কযুক্ত বলে অনুভব করে এবং তার সকল কাজ ও কথায় তা প্রকাশ পায়। নামাজ আল্লাহ ও তাঁর বান্দার মধ্যে সম্পর্ক রক্ষার ব্যাপারে বিশেষভাবে নির্ধারিত ব্যবস্থা, যা আল্লাহ পছন্দ করেন এবং প্রতি ২৪ ঘন্টায় পাঁচবার বিশেষ সময়ে সালাত আদায়ের নির্দেশ দিয়েছেন। আর এই নামাজের মাধ্যমেই সৃষ্টি ও স্রষ্টার মধ্যে যোগাযোগ ঘটে। এটা হচ্ছে একাকী মানবসত্তা (মানব রুহ) এবং এক ও একক সত্তার (আল্লাহ) মধ্যে যোগাযোগ। প্রত্যেক মুসলিমের এই সময়গুলো কাজে লাগানো এবং এই সময়ের জন্য আগ্রহের সাথে অপোয় থাকা উচিৎ। নামাজের সময় একজন মুসলিম পার্থিব বিষয়াদি থেকে বিরতি নিতে পারে এবং একটি বিশেষ নিয়মের মাধ্যমে আল্লাহর সাথে যোগাযোগ করতে পারে। এই নিয়ম হচ্ছে নামাজ যা মহানবীর পার্থিব জীবনের এক মহানতম মুহূর্তে সপ্তম আসমানে আমাদের জন্য বিশেষ উপহার হিসেবে দেয়া হয়েছে।
সহীহ্ আল বুখারীর একটি হাদিসে বলা হয়েছে, জিব্রাইল (আ:) মানুষের বেশে রাসূলের (সা:) কাছে আসেন এবং তাঁকে দ্বীন সম্পর্কে বহু প্রশ্ন করেন। প্রশ্নগুলোর মধ্যে একটি ছিল: “আমাকে ইহসান (উত্তমতা) সম্পর্কে বলুন,” রাসূল (সা:) জবাব দেন: “আপনি এমনভাবে ইবাদত করুন যেন আপনি তাকে (আল্লাহ) দেখতে পাচ্ছেন এবং এমনকি যদিও আপনি তাকে দেখেন না, আপনি জানেন যে, তিনি (আল্লাহ) আপনাকে দেখছেন।” (বুখারীর একটি হাদীসের অংশবিশেষ) একজন মুসলিম যে সময়ের জন্য অপেমান ছিল সেই সময়ে উপনীত হলে তার মানসিক অবস্খা ঠিক এরকমই হওয়া উচিত।
আবু হুরাইরা (রা:) থেকে বর্ণিত একটি হাদিসে কুদসিতে আল্লাহর রাসূল (সা:) সালাতে সূরা আল ফাতিহা তিলাওয়াত সম্পর্কে উল্লেখ করেছেন: যখন আল্লাহর বান্দা বলে: সকল প্রশংসা আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের, তখন আল্লাহ বলেন: আমার বান্দা আমার প্রশংসা করেছে। আর রাহমানির রাহিম, আল্লাহ বলেন: আমার বান্দা আমার সিফাত (গুণাবলী) উল্লেখ করেছে, পুনরুথান দিবসের মালিক, আল্লাহ বলেন: আমার বান্দা আমাকে মহিমানিবত করেছে, যখন সে বলে, আমরা একমাত্র তোমারই ইবাদত করি এবং একমাত্র তোমারই কাছে সাহায্য চাই, আল্লাহ বলেন: এটা আমার ও আমার বান্দার মধ্যকার ব্যাপার এবং আমার বান্দা যা চায় তাই পাবে। তারপর যখন বান্দা বলে, আমাদেরকে সীরাতুল মুস্তাকীমে পরিচালিত কর এবং তাদের পথে নয় যারা তোমার ক্রোধ অর্জন করেছে (অভিশপ্ত) এবং যারা পথভ্রষ্ট, আল্লাহ বলেন: এটা আমার বান্দার জন্যে, আর আমার বান্দা যা চায় তাই পাবে। (মুসলিম, তিরমিজি, আবু দাউদ ও ইবনে মাজাহ)। এটা কার্যত মুমিনীনের জন্য খুবই বিশেষ মুহূর্ত।
পরকালীন সাফল্যের মাধ্যম
قَدْ أَفْلَحَ الْمُؤْمِنُونَ- الَّذِينَ هُمْ فِي صَلَاتِهِمْ خَاشِعُونَ
“নিশ্চিতই কল্যাণ লাভ করেছে ঈমান গ্রহণকারী লোকেরা (মুমিনুন), যারা নিজেদের নামাজ ভীতি ও বিনয় সহকারে আদায় করে।” সূরা মুমিনুন, আয়াত ১-২)।
রাবি ইবনে কা'ব বর্ণনা করেছেন যে, এক রাতে আমি আল্লাহর রাসূলের (সা:) সাথে থাকলাম, এবং তাঁকে পানি এবং তিনি আর যা কিছুর প্রয়োজন বোধ করলেন সেগুলো এনে দিলাম। তিনি আমাকে বললেন, চাও (তুমি যা পছন্দ কর), আমি বললাম, আমি জান্নাতে আপনার সাহচর্য চাই, রাসূল (সা:) বললেন, এছাড়া কি আর কিছু চাও? আমি বললাম, এই আমার সব চাওয়া, তারপর রাসূল (সা:) বললেন, তাহলে প্রচুর সুজুদ (অর্থাৎ সালাহ) আদায় করে এক্ষেত্রে আমাকে সাহায্য কর। (মুসলিম)
إِنَّ الصَّلَاةَ تَنْهَى عَنِ الْفَحْشَاء وَالْمُنكَرِ وَلَذِكْرُ اللَّهِ أَكْبَرُ وَاللَّهُ يَعْلَمُ مَا تَصْنَعُونَ
নি:সন্দেহে সালাহ একজন ব্যক্তিকে ফাহশা (অশ্লীল) ও মুনকার (নিষিদ্ধ কাজ) হইতে বিরত রাখে। (সূরা আনকাবুত, আয়াত ৪৫)
আল্লাহ সালাতের মধ্যদিয়ে আমাদেরকে এমন এক উপায় দিয়েছেন যার মাধ্যমে আমাদের রুহের মধ্যকার নফস-ই-আম্মারা ঐসব কথা ও কাজের দিকে ধাবিত হওয়ার চাপ কাটিয়ে উঠবে যা আল্লাহকে অসন্তুষ্ট করে এবং পরিশেষে একজন মুসলিমের দোযখের আগুনে প্রবেশের বা কবরে বা এমনকি এই পার্থিব জীবনে শাস্তি ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। আবু জার (রা:) বর্ণনা করেছেন: আমি বললাম লাব্বায়েক হে আল্লাহর রাসূল, রাসূল বললেন: যখনই একজন মুসলিম শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করে সালাহ আদায় করে তখনই তার পাপ এই গাছটির পাতার মত ঝরে পড়তে শুরু করে। (মুসনাদে আহমাদ)
مَا سَلَكَكُمْ فِي سَقَرَ- قَالُوا لَمْ نَكُ مِنَ الْمُصَلِّينَ- وَلَمْ نَكُ نُطْعِمُ الْمِسْكِينَ
যখন দোযখের অধিবাসীদের জিজ্ঞেস করা হবে, কোন্ জিনিস তোমাদেরকে এই জাহান্নামে নিয়ে এসেছে? (তারা জবাব দেবে) “আমরা মুসল্লীনের (সালাহ আদায়কারী) মধ্যে শামিল ছিলাম না অথবা মিসকিনদেরকে খাবার খাওয়াতাম না।” (সূরা মুদ্দাস্সির, আয়াত ৪২-৪৩)।
পার্থিব জীবনে সাফল্যের মাধ্যম
إِنَّ الْإِنسَانَ خُلِقَ هَلُوعًا- إِذَا مَسَّهُ الشَّرُّ جَزُوعًا- وَإِذَا مَسَّهُ الْخَيْرُ مَنُوعًا- إِلَّا الْمُصَلِّينَ- الَّذِينَ هُمْ عَلَى صَلَاتِهِمْ دَائِمُونَ
নিশ্চয়ই মানুষ খুবই সংকীর্ণমনা (ছোট আত্মার) হিসেবে সৃষ্ট হয়েছে। তার ওপর যখন বিপদ আসে তখন ঘাবড়ে উঠে, আর যখন সাচ্ছন্দ্য-সচ্ছলতা হাতে আসে তখন সে কার্পণ্য করতে শুরু করে। কিন্তু সেইসব লোক (এই জন্মগত ত্রুটি হইতে মুক্ত) যাহারা সালাহ আদায়কারী। যাহারা নিজেদের সালাত রীতিমত আদায় করে। (সূরা মা'আরিজ, আয়াত ১৯-২৩)।
যারা নিষ্ঠার সাথে সালাত কায়েম করে তাদেরকে শান্তিপূর্ণ মন এবং সাকিনাহ নামে অভিহিত বিশেষ ধরনের প্রশান্তি দেয়া হয়। ভক্তি সহকারে নামাজ আদায়কারীরা তাদের পরিস্খিতিতে সর্বদা সন্তুষ্ট থাকে, সেক্ষেত্রে তারা যতই পার্থিব সমস্যার কঠিন পরীক্ষায় অথবা আল্লাহর কাছ থেকে সম্পদপ্রাপ্ত হয়ে প্রাচুর্যের মধ্যে থাকুক না কেন। তারা সর্বদা তাদের বিশ্লেষণে ও আবেদনে ভারসাম্যপূর্ণ থাকে এবং কখনই তাদের ধৈর্য্য ও আত্ম নিয়ন্ত্রণ হারায় না।
وَاسْتَعِينُواْ بِالصَّبْرِ وَالصَّلاَةِ وَإِنَّهَا لَكَبِيرَةٌ إِلاَّ عَلَى الْخَاشِعِينَ
“তোমরা ধৈর্য্য ও সালাতের মারফতে সাহায্য চাও। সালাহ নি:সন্দেহে একটি শক্ত কাজ, তবে সেই অনুগত বান্দাদের পক্ষে তা মোটেই কঠিন নয়।” (সূরা বাকারা, আয়াত ৪৫)। আমাদের সকল প্রয়োজনের জন্য আমাদেরকে সালাতের মাধ্যমে আল্লাহর সাহায্য চাইতে হবে। রাসূল (সা:) তার বেশিরভাগ সমস্যা (সেটা বৃষ্টির জন্যই হোক না কেন) অথবা শত্রুর বিরুদ্ধে সাহায্য অথবা এমনকি আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জ্ঞাপনের জন্য সালাহ আদায় করতেন।
নামাজ আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশের মাধ্যম
فَاذْكُرُونِي أَذْكُرْكُمْ وَاشْكُرُواْ لِي وَلاَ تَكْفُرُونِ
তোমরা আমাকে স্মরণ রাখ, আমিও তোমাদের স্মরণে রাখব এবং আমার শোকর আদায় কর, আমার নিয়ামতের কুফরি করো না। (সূরা বাকারা, আয়াত ১৫২) আল্লাহ আমাদের স্বাভাবিক শরীর থেকে শুরু করে আমাদের স্বাস্খ্য, অথবা সম্পদ, আমাদের সন্তান, আমাদের পরিবার ইত্যাদি যা কিছু আমাদেরকে দিয়েছেন এবং সর্বোপরি আমাদেরকে সীরাতুল মুস্তাকীমে পরিচালিত করেছেন সেজন্য আমরা আল্লাহর কাছে আমাদের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ (শোকর) করতে বাধ্য। রাসূলকে (সা:) একবার জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, আল্লাহ যখন তার অতীত ও বর্তমান সকল গুনাহ মা করে দিয়েছেন তখন তিনি কেন (পা ফুলে যাওয়া পর্যন্ত) দীর্ঘ সময় ধরে রাত্রিকালীন সালাহ (তাহাজ্জুদ) আদায় করেন। তিনি জবাব দেন: আমি কি একজন কৃতজ্ঞ বান্দা হবো না? আসুন আমরাও আমাদেরকে প্রশ্ন করি আমরা কি আল্লাহর কৃতজ্ঞ বান্দা হবো না? সকল নবীই কৃতজ্ঞ বান্দাহ ছিলেন এবং তাদেরকে নামাজ কায়েম করার আদেশ দেয়া হয়েছিল। নবী ইব্রাহীম (আ:) কা'বা ঘর পুন:নির্মাণের পর আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেছিলেন:
رَبِّ اجْعَلْنِي مُقِيمَ الصَّلاَةِ وَمِن ذُرِّيَّتِي رَبَّنَا وَتَقَبَّلْ دُعَاء
হে আমার রব, আমাকে নামাজ আদায়কারী বানাও, আর আমার সন্তানদের মধ্য হতেও (এমন লোক বের কর, যারা এই কাজ করবে), হে আমাদের রব, অনুগ্রহ করে আমাদের দোয়া কবুল কর। (সূরা ইব্রাহীম, আয়াত ৪০)।
رَّبَّنَا إِنِّي أَسْكَنتُ مِن ذُرِّيَّتِي بِوَادٍ غَيْرِ ذِي زَرْعٍ عِندَ بَيْتِكَ الْمُحَرَّمِ رَبَّنَا لِيُقِيمُواْ الصَّلاَةَ فَاجْعَلْ أَفْئِدَةً مِّنَ النَّاسِ تَهْوِي إِلَيْهِمْ وَارْزُقْهُم مِّنَ الثَّمَرَاتِ لَعَلَّهُمْ يَشْكُرُونَ
হে আমাদের রব, আমি পানি ও তরুলতা শূন্য এক মরু প্রাপ্তরে আমার সন্তানদের একটি অংশকে তোমার মহাসম্মানিত ঘরের নিকটে এনে পুনর্বাসিত করলাম। হে আল্লাহ, এটি আমি এই জন্য করেছি যে, তারা এখানে নামাজ কায়েম করবে। (সূরা ইব্রাহীম, আয়াত ৩৭) মুসলিম মিল্লাতের পিতা ইব্রাহীম (আ:) সালাহ কায়েমের জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেছিলেন এবং মিল্লাতে ইব্রাহীমের অংশ হিসেবে আমাদের প্রধান দায়িত্ব হচ্ছে নামাজ কায়েম করা। ঈসা (আ:) তার জন্মের পরপরই বনী ইসরাইলকে বলেছিলেন:
وَجَعَلَنِي مُبَارَكًا أَيْنَ مَا كُنتُ وَأَوْصَانِي بِالصَّلَاةِ وَالزَّكَاةِ مَا دُمْتُ حَيًّا
“আর আমি যেখানেই থাকি না কেন তিনি আল্লাহ আমাকে করুণা করেছেন এবং যতদিন আমি জীবিত থাকি ততদিন নামাজ আদায় ও যাকাত দেয়ার নিয়ম পালনের হুকুম করেছেন। (সূরা মরিয়ম, আয়াত ৩১) তারপর ইসমাঈল (যার থেকে কুরাইশ বংশ এবং নবী মুহাম্মদের (সা:) পরিবার এসেছে) সম্পর্কে বলা হয়েছে:
وَاذْكُرْ فِي الْكِتَابِ إِسْمَاعِيلَ إِنَّهُ كَانَ صَادِقَ الْوَعْدِ وَكَانَ رَسُولًا نَّبِيًّا- وَكَانَ يَأْمُرُ أَهْلَهُ بِالصَّلَاةِ وَالزَّكَاةِ وَكَانَ عِندَ رَبِّهِ مَرْضِيًّا
“এই কিতাবে ইসমাঈলকেও স্মরণ কর। সে ছিল ওয়াদার সত্যতা বিধানকারী। আর নবী-রাসূলও ছিল সে। সে তার ঘরের লোকদেরকে নামাজ ও যাকাতের হুকুম দিতো। সর্বোপরি তার রবের নিকট এক পছন্দনীয় ব্যক্তি ছিল সে। (সূরা মরিয়ম, আয়াত ৫৪-৫৫)।
আর আমাদের নবী মুহাম্মদকে (সা:), একথা বলার আদেশ দেয়া হয়েছে যে,
قُلْ إِنَّ صَلاَتِي وَنُسُكِي وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِي لِلّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ- لاََ شَرِيكَ لَهُ وَبِذَلِكَ أُمِرْتُ وَأَنَاْ أَوَّلُ الْمُسْلِمِينَ
“বল আমার নামাজ আমার সর্বপ্রকার ইবাদত অনুষ্ঠান, আমার জীবন ও আমার মৃত্যু সবকিছুই সারা জাহানের রব আল্লাহরই জন্য। তার কোন শরীক নেই, আর আমাকে এরই আদেশ দেয়া হয়েছে এবং আমি মুসলিমীনের মধ্যে প্রথম।” (সূরা আনআম, আয়াত ১৬২-১৬৩)।
সকল মুসলিম শাসক নামাজ কায়েম করতে বাধ্য। নবীদের উত্তরাধিকারী হিসেবে মতাসীন সকল শাসক প্রয়োজন হলে বল প্রয়োগে তাদের মা'মুরদের ওপর নামাজ কায়েম করতে বাধ্য।
الَّذِينَ إِن مَّكَّنَّاهُمْ فِي الْأَرْضِ أَقَامُوا الصَّلَاةَ وَآتَوُا الزَّكَاةَ وَأَمَرُوا بِالْمَعْرُوفِ وَنَهَوْا عَنِ الْمُنكَرِ وَلِلَّهِ عَاقِبَةُ الْأُمُورِ
এরা (মুসলিম শাসকগণ) সেই লোক যে, তাদেরকে আমরা যদি জমিনে মতা দান করি তবে তারা নামাজ কায়েম করবে, যাকাত দেবে, মারুফের (ভাল কাজের) হুকুম দিবে এবং মুনকারের (মন্দ কাজের) নিষেধ করবে। আর সব ব্যাপারে চূড়ান্ত পরিণতি আল্লাহর হাতে। (সুরা হজ্ব, আয়াত ৪১)
মা'জ ইবনে জাবালকে ইয়েমেনের গবর্ণর হিসেবে নিয়োগ করার সময় রাসূল (সা:) তাকে কতিপয় বিশেষ আদেশ দিয়েছিলেন এবং আদেশগুলোর মধ্যে একটি ছিল তার শাসনাধীন লোকদের ওপর সালাহ কায়েম করা। বেশ কয়েকটি হাদিসে রাসূল (সা:) মুসলিমদের প্রতি মুসলিম শাসকরা যতদিন সালাহ কায়েম করে ততদিন তাদের বিরুদ্ধে বিদেন্সাহ না করার আদেশ দিয়েছেন। ফরজ নামাজ এতই গুরুত্বপূর্ণ যে, আমরা যুদ্ধ বা ভীতির মধ্যে থাকলেও আমাদেরকে তা আদায় করতে হবে। আমরা ভীতিকর অবস্খা বা চরম দুর্দশা বা এমনকি পীড়িত ইত্যাদি যে অবস্খায়ই থাকি না কেন আমাদেরকে আমাদের ফরজ নামাজ আদায় করতে হবে। সুরা নিসায় এবং হাদিসেও বেতেরের নামাজ সম্পর্কে বর্ণনা দেয়া হয়েছে। রাসূল (সা:) তাঁর অসুস্খতার শেষ দিনগুলোতে বহু কষ্ট করে মসজিদে আসেন এবং নিশ্চিত হন যে, তার পিছনে তার সাহাবাদের নামাজ আদায় অব্যাহত রয়েছে। তাঁর (রাসূল সা:) শেষ কথাও ছিল নামাজ সম্পর্কে। সুন্নত নামাজ উপেক্ষা করা যাবে না। আমাদেরকে দোযখের আগুন থেকে নিজেদেরকে রক্ষা এবং জান্নাতে প্রবেশের লক্ষে সকল সুযোগকে কাজে লাগাতে হবে। সুন্নত ও নফল নামাজের বিনিময়ে আদায়ের বহু গুনাহ মা এবং ফরজ নামাজের ত্রুটিসমূহ দূর করা হতে পারে। যে ব্যক্তি ১২ রাকাত নফল নামাজ আদায় করে তার জন্য একটি প্রাসাদ নির্মিত হয়। তাহাজ্জুদ হচ্ছে আল্লাহর নৈকট্য লাভের মাধ্যম। রাসূল (সা:) এমনকি সফরে থাকলেও বেতের নামাজের মাধ্যমে তার রাত শেষ করতেন।
وَإِن نَّكَثُواْ أَيْمَانَهُم مِّن بَعْدِ عَهْدِهِمْ وَطَعَنُواْ فِي دِينِكُمْ فَقَاتِلُواْ أَئِمَّةَ الْكُفْرِ إِنَّهُمْ لاَ أَيْمَانَ لَهُمْ لَعَلَّهُمْ يَنتَهُونَ
যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে নামাজ ত্যাগ করে (তারিকুস সালাহ) তবে যদি তারা তওবা করে, নামাজ কায়েম করে ও যাকাত দেয় তাহলে তারা তোমাদের দ্বীনি ভাই। (সূরা তওবা, আয়াত ১১)
সহীহ আল বুখারীতে বর্ণিত একটি হাদিসে বলা হয়েছে- রাসূল (সা:) বলেন, লোকের আল্লাহ ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই এবং আমি আল্লাহর রাসূল এই মর্মে সাক্ষ্য না দেওয়া, নামাজ কায়েম না করা ও যাকাত না দেয়া পর্যন্ত আমাকে তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করার আদেশ দেয়া হয়েছে, আর তারা এগুলো করলেই তাদের সম্পদ ও রক্ত আমার থেকে নিরাপদ। সহিহ মুসলিমের একটি হাদিসে রাসূল (সা:) বলেন, নিশ্চয় একজন মানুষ এবং শিরক ও কুফরের মধ্যে রয়েছে নামাজ পরিত্যাগ। একটি হাদিসে উল্লেখ করা হয়েছে, যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে নামাজ ত্যাগ করে সে কুফরী করে।
দারুল ইসলামে যে ব্যক্তি নামাজ আদায় করে না সে আদৌ মুসলিম হিসেবে বিবেচিত হতে পারে না, যদি না সে (নারী বা পুরুষ) পাগল বা অচেতন বা নাবালক বা গায়ের মুকাল্লাফ হয়। যে ব্যক্তি শাহাদাহ ঘোষণা করে এবং তারপর প্রার্থনা করে না বা নামাজ ত্যাগ করে তাকে কর্তৃপরে মাধ্যমে বৈধভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে এবং পর্যবেণে রাখতে হবে, তারপর তারা নামাজ আদায়ে ফিরে না গেলে তাদেরকে শরিয়া অনুযায়ী শাস্তি দিতে হবে। অধিকাংশ ফকিহগণ একমত হয়েছেন যে, এরকম লোকদের জন্য কোন জানাজা নেই এবং তাদেরকে মুসলিম গোরস্তানে দাফন করা যাবে না।
দারুল কুফরে কোন ব্যক্তি বা দল বা গ্রাম বা শহরের মুসলিম হিসেবে বিবেচিত হওয়ার প্রথম লণ হবে তারা নামাজ আদায় করে কিনা। তারপর যদি তাদের মধ্যে শাহাদাহ অকার্যকর করার মতো অন্য কোন উপাদান থাকে তাহলে সেগুলো বিবেচনায় নিতে হবে।
আল্লাহ আমাদের নামাজ কবুল এবং আমাদেরকে মুসলিমীনের মধ্যে গণ্য করুন। আমীন ।