নবী (সাঃ)- ০৩।

মিরাজ

মিরাজ অর্থ ঊর্ধে আরোহণ করাযেহেতু হযরত (সা:) তার এক মহাকাশ ভ্রমণ সম্পর্কে এই শব্দটি ব্যবহার করেছেন, এজন্যে তার এই ভ্রমণ কে মিরাজ বলা হয়এর অপর নাম হচ্ছে ইসরা অর্থা রাতের পর রাত ভ্রমণ করা ভ্রমণ যেহেতু রাতের পর রাত অব্যাহত ছিল , সে জন্যে একে ইসরাও বলা হয়কুরআন পাকে এই শব্দটিই ব্যবহৃত হয়েছেআল্লাহর নবীদেরকে দাওয়াত , তাবলীগ , ও ইকামতের দ্বীনের যে বিরাট খেদমত আঞ্জাম দিতে হয়, সে জন্যে অত্যন্ত উচু দরের ঈমান ও সুদৃঢ় বিশ্বাসের প্রয়োজনএ কারণেই তারা যে অদৃশ্য সত্যের প্রতি ঈমান আনার জন্যে আহ্বান জানিয়ে থাকেন , তা অন্তত তাদের নিজের চোখে প্রত্যক্ষ করা দরকারকারণ তাদেরকে সারা দুনিয়ার সামনে এ কথা দৃপ্ত কণ্ঠে ঘোষণা করতে হয় যে, তোমরা শুধু আন্দাজ অনুমানের ভিত্তিতে একটা জিনিসকে অস্বীকার করছো; অথচ আমরা নিজ চোখে দেখা সত্যকেই বিবৃত করছিতোমাদের কাছে আছে শুধু আন্দাজ-অনুমান, আমাদের কাছে আছে ইলম ও জ্ঞানএজন্যে অধিকাংশ নবীর কাছেই ফেরেশতা আত্মপ্রকাশ করেছে, তাদেরকে আসমান ও জমিনের বিশাল রাজত্ব প্রত্যক্ষ করানো হয়েছে, স্বচক্ষে বেহেশত ও দোযখ দেখানো হয়েছে এবং এ জীবনেই মৃত্যুর পরবর্তী অবস্হা সম্পর্কে অবহিত করানো হয়েছে মিরাজ বা ইসরা এ ধরণেরই একটা ঘটনা মাত্র এতে একজন মুমিনকে যে সব অদৃশ্য সত্যের প্রতি ঈমান আনতে হয়, হযরত (সা:)-কে তা স্বচক্ষে দেখানো হয়েছে

মিরাজের ঘটনা কোন তারিখে ঘটেছিল, এ সম্পর্কে হাদিসে বিভিন্ন রুপ বর্ণনা পাওয়া যায়অবশ্য সমস্ত বর্ণনা সামনে রেখে ঐতিহাসিকগণ এ তথ্যকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন যে, এ ঘটনা হিজরতের প্রায় বছর দেড়েক আগে ঘটেছিলএ সম্পর্কে বুখারী এবং মুসলিমের বর্ণনা সামনে রাখলে যে মোটামুটি বিবরণ পাওয়া যায়, তা নিম্নরূপঃ একদিন সকাল বেলা হযরত (সা:) প্রকাশ করেনঃগত রাতে আমার প্রভু আমায় অত্যন্ত সম্মানিত করেনআমি শুয়ে বিশ্রাম করছিলাম, এমন সময় জিবরাঈল এসে আমাকে জাগিয়ে কাবা মসজিদে নিয়ে যানসেখানে তিনি আমার বক্ষ বিদীর্ণ করেন এবং তা জমজমের পানি দ্বারা ধুয়ে ফেলেন অত:পর তাকে ঈমান ও হিকমত দ্বারা পূর্ণ করে বিদীর্ণ স্থান পূর্বের ন্যায় জুড়ে দেনএরপর তিনি আমার আরোহণের জন্যে খচ্চরের চেয়ে কিছু ছোট একটি সাদা জানোয়ার উপস্থিত করেনতার নাম ছিল বুরাকএটি অত্যন্ত দ্রুতগতি সম্পন্ন জানোয়ার ছিলআমি তার ওপর আরোহণ করতেই বায়তুল মুকাদ্দাস গিয়ে উপনীত হলামএখানে বুরাকটি মসজিদে আকসার দরজার সাথে বেঁধে রেখে আমি মসজিদে প্রবেশ করে দুরাকায়াত নামাজ পড়লামএই সময় জিবরাঈল আমার সামনে দুটি পেয়ালা উপস্থিত করলেনতার একটিতে শরাব এবং অপরটিতে দুধ ছিলআমি দুধের পেয়ালাটি গ্রহণ করে শরাবেরটি ফেরত দিলামএটা দেখে জিবরাঈল বললেনঃআপনি দুধের পেয়ালাটি গ্রহণ করে স্বভাব ধর্মকেই (দ্বীনে ফিতরাত) অবলম্বন করেছেনএর পর মহাকাশ ভ্রমণ শুরু হলআমরা যখন পথম আকাশ পর্যন্ত পৌঁছলাম, তখন জিবরাঈল পাহারাদার ফেরেশতা কে দরজা খুলে দিতে বললেনসে জিজ্ঞেস করলো, তোমার সাথে কে আছেন?’ জিবরাঈল বললেন,‘মুহাম্মদফেরেশতা আবার জিজ্ঞেস করলো, ‘একে কি ডাকা হয়েছে ?’ জিবরাঈল বললেন, ‘হ্যাঁ ডাকা হয়েছেএকথা শুনে ফেরেশতা দরজা খুলতে খুলতে বললো, ‘এমন ব্যক্তিত্বের আগমন মুবারক হোকআমরা ভেতরে ঢুকতেই হযরত আদম(আ:)-এর সঙ্গে সাক্ষাত হলোজিবরাঈল আমায় বললেন, ‘ইনি আমার পিতা আদমআপনি একে সালাম করুনআমি সালাম করলামতিনি সালামের জবাবদান প্রসঙ্গে বললেন, ‘ খোশ আমদেদ! হে নেক পুত্র , হে সত্য নবী! এর পর আমরা দ্বিতীয় আকাশে পৌঁছলাম এবং প্রথম আকাশের ন্যায় সওয়াল -জওয়াবের পর দরজা খুলে দেওয়া হলোআমরা ভেতরে গেলাম হযরত ইয়াহইয়া ও হযরত ঈসা(আ:)- এর সঙ্গে সাক্ষাত হলোজিবরাঈল তাদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়ে বললেন, ‘খোশ আমদেদ, হে নেক ভ্রাতা, হে সত্য নবী! অত:পর আমরা তৃতীয় আকাশে পৌঁছলামএখানে হযরত ইউসুফ (আ:) এর সঙ্গে দেখা হলোআগের মতই তার সঙ্গে সালাম কালাম হলোঅনুরুপভাবে চতুর্থ আকাশে হযরত ইদরীস (আ:) এর সঙ্গে , পঞ্চম আকাশে হযরত হারুন (আ:) এর সঙ্গে এবং ষষ্ঠ আকাশে হযরত মূসা(আ:) এর সঙ্গে সাক্ষাত হলোসর্বশেষ সপ্তম আকাশে হযরত ইবরাহীম (আ:) এর সঙ্গে সাক্ষাত হলো এবং তিনিও সালামের জবাব দান প্রসঙ্গে বললেন,‘খোশ আমদেদ ! হে নেক পুত্র,হে নেক নবী! এরপর আমাকেসিদরাতুল মুনতাহানামক একটি সমুন্নত বরই গাছ পর্যন্ত পৌঁছিয়ে দেয়া হলোএর ওপর অগনিত ফেরেশতা জোনাকির মতো ঝিকমিক করছিল

এখানে হযরত (সা:) অনেক গোপন রহস্য প্রত্যক্ষ করলেনতিনি আল্লাহ তাআলার সঙ্গেও কথাবার্তা বললেনএ সময় আল্লাহ তাআলা তার উম্মতের জন্যে মোট পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামাজ ফরয করে দিলেনএ সব প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার পর তিনি যখন প্রত্যাবর্তন করছিলেন, তখন আবার হযরত মূসা(আ)এর সঙ্গে সাক্ষাত হলোতিনি জিজ্ঞেস করলেনঃবলুন খোদার দরবার থেকে কি উপহার নিয়ে যাচ্ছেন ?’ হযরত (সা:) বললেন, ‘দিন-রাত পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামাজ ?’ মূসা(আ:) বললেন, ‘আপনার উম্মত এত বড় বোঝা বহন করতে পারবে না; কাজেই আপনি ফিরে যান এবং এটা কম করে আনুনহযরত (সা:) আবার ফিরে গেলেন এবং নামাজের ওয়াক্ত কমানোর জন্যে আবেদন জানালেনফলে ওয়াক্তের সংখ্যা কিছুটা কমিয়ে দেয়া হলোকিন্তু মূসা(আ:) হযরত (সা:) কে বারবার পাঠালেন এবং প্রত্যেক বারই সংখ্যা কমতে লাগলোঅবশেষে কমতে কমতে সংখ্যা মাত্র পাঁচটি রয়ে গেলএতেও হযরত মূসা(আ:) নিশ্চিত হলেন না, বরং তিনি আরো কম করানোর কথা বললেনকিন্তু হযরত (সা:) বললেন :আমার আর কিছু বলতে লজ্জা করছেএ সময় আল্লাহ তাআলার তরফ থেকে এই মর্মে ঘোষণা এলো :যদিও আমি নামাজের সংখ্যা পঞ্চাশ থেকে পাঁচ করে দিয়েছিম তবুও তোমার উম্মতের মধ্যে যারা নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করবে, তাদেরকে পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামাজেরই পুরস্কার দান করা হবে

পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ছাড়া এই উপলক্ষে আল্লাহর নিকট থেকে আরও দুটি উপহার পাওয়া গেলএকটি হচ্ছে সূরা বাকারার শেষ আয়াত সমষ্টি, যাতে ইসলামের মৌল আকিদাগুলো এবং ঈমানের পূর্ণতার বিষয় বিবৃত করার পর এই মর্মে সুসংবাদ দেয়া হয়েছে যে, মুসিবতের দিন এখন সমাপ্ত প্রায়দ্বিতীয় হচ্ছে এই সুসংবাদ যে, উম্মতে মুহাম্মদীর যারা অন্তত শিরক থেকে বেঁচে থাকবে, তারা ক্ষমাপ্রাপ্ত হবেএই ভ্রমণকালে হযরত (সা:) স্বচক্ষে বেহেশত এবং দোযখও পরিদর্শন করেনমৃত্যুর পর আপন কৃত কর্মের দৃষ্টিতে মানুষকে যে সমস্ত পর্যায় অতিক্রম করতে হয়, তার কয়েকটি দৃশ্যও তার সামনে উপস্থাপন করা হয়

মহাকাশ থেকে প্রত্যাবর্তনের পর তিনি আবার বায়তুল মুকাদ্দাস গিয়ে দেখেন যে, অন্যান্য নবীগণ সেখানে সমবেত হয়েছেনতিনি নামাজ পড়লেন এবং সবাই তার পেছনে নামাজ আদায় করলেনএরপর তিনি নিজের জায়গায় ফিরে আসেন এবং ভোর বেলা সেখান থেকে সজাগ হন

মিরাজের গুরুত্ব ভবিষ্যতের জন্যে ইঙ্গিত

সকাল বেলা হযরত (স) মহাকাশ ভ্রমণের এই ঘটনার কথা জনসমক্ষে বিবৃত করলেনবিরুদ্ধবাদী কাফের কুরাইশরা তাকে মিথ্যাবাদী (নাউযুবিল্লাহ) বলে অভিহিত করলোপক্ষান্তরে যাদের হৃদয়ে তার সত্যতা ও সত্যবাদিতা সম্পর্কে আস্থা ছিল, তারা এর প্রতিটি হরফকেই সত্য বলে মেনে নিলতারা বললোঃ হযরত যখন নিজেই এ ঘটনার কথা বলেছেন,তখন এর সবটাই সত্যএভাবে মিরাজের ঘটনা একদিকে ছিল ঈমান ও নবুয়্যাত স্বীকারের পরীক্ষাস্বরুপ, অন্যদিকে ছিল খোদ হযরত (সা:) এর পক্ষে অসংখ্য গায়েবী রহস্য প্রত্যক্ষ করার উপায়সেই সঙ্গে এ ছিল সেই অনাগত বিপ্লবের প্রতিও এক সুস্পষ্ট ইঙ্গিত যা ইসলামী আন্দোলনকে অনতিকালের মধ্যেই সংঘটিত করতে হয়েছিলএই ইঙ্গিতের বিস্তৃত বিবরণ কুরআন পাকের সূরা বনী ইসরাঈলে (মিরাজ সম্পর্কিত আলোচনায়) বিবৃত হয়েছেএই সূরার বিষয়বস্ততে যেসব সুস্পষ্ট ইঙ্গিত রয়েছে, তা নিম্নরুপঃ

নেতৃত্ব থেকে ইহুদীদের অপসারণ

বনী ইসরাঈল গণ এই পর্যন্ত আল্লাহর দ্বীনের উত্তরাধিকার আল্লাহর বাণীর সাথে বিশ্ববাসীকে পরিচিত করানোর মহান দায়িত্বে অধিষ্ঠিত ছিলকিন্তু তারা এ খেদমত আঞ্জাম দেয়া তো দূরের কথা, বরং নিজেরাই অসংখ্য প্রকার পাপাচারে লিপ্ত হয়ে আল্লাহর দ্বীনের খেদমত করার অযোগ্য হয়ে পড়েছিলসুতরাং এ খেদমতের দায়িত্ব এবার বনী ইসমাঈলের ওপর ন্যস্ত করার সিদ্ধান্ত নেয়া হলো এবং হযরত (সা:)- কে এই খান্দানের মধ্যেই প্রেরণ করা হলোইতঃপূর্বে বনী ইসরাঈলকে সরাসরি উদ্দেশ্য করে কিছু বলা হয় নি; কিন্তু এবার সূরা বনী ইসরাঈলে তাদের কে বলে দেয়া হলো যে, এ পর্যন্ত তোমরা যা ভুলভ্রান্তি করেছো তাতো করেছোইএর আগে তোমাদেরকে দুদুবার যাচাই করা হয়েছে; কিন্তু তোমরা আপন দোষ-ত্রুটি সংশোধন করোনিএবার বনী ইসমাঈলের এই নবীকে পাঠানোর পর তোমাদেরকে শেষ বারের মতো সুযোগ দেয়া হচ্ছেযদি তোমরা এর আনুগত্য করো, আবার তোমরা উন্নতির পথে চলতে পারবে

বস্তত মক্কার চরম উপীড়ন ও পেরেশানীময় জীবনে এই ইঙ্গিত ছিল একটি মস্তবড় সুসংবাদ, যা পরবর্তীকালে হুবহু সত্য প্রমাণিত হয়েছিল

মক্কার কাফিরদের প্রতি সতর্কবাণী

মক্কার কাফিরদের জুলুম-পীড়ন এবং হঠকারিতা ইতোমধ্যে চরমে পৌঁছেছিলতারা বারবার চ্যালেঞ্জ দিতে লাগলোঃমুহাম্মদ যদি আল্লাহর রাসূলই হবে তাহলে আমাদের অবিশ্বাসের কারণে আমাদের ওপর কেন আযাব নাযিল হয় না? তাহলে তো সে আমাদেরকে ভয় দেখাতে পারতোএর জবাবে তাদেরকে বলা হলোঃ আল্লাহ তাআলার শাশ্বত নীতি এই যে, যতক্ষণ পর্যন্ত না কোন জাতির মধ্যে আল্লাহর রাসূল আসেন, ততক্ষণ তার ওপর কোন আযাব নাযিল হয় নাযখন রাসূল আগমন করেন, তখন জাতির বিত্তবান ও প্রভাবশালী লোকেরা তার সত্য প্রচারের পথ রোধ করার জন্যে কোমর বেঁধে লেগে যায়অন্যদিকে সাধারণ ও নির্যাতিত লোকেরা তার সহযোগিতা করার জন্যে এগিয়ে আসেঅবশ্য প্রথমোক্তদের মধ্যে সত্যকে গ্রহণ করার জন্যে যোগ্যতাসম্পন্ন কিছু লোকও বর্তমান থাকে এবং তারা এগিয়ে এসে সত্যকে গ্রহণও করেএরপর এই দুই দলের মধ্যে দ্বন্দ্ব-সংঘর্ষ শুরু হয়ে যায় এবং পরিণামে মজলুমের জন্যে আল্লাহর সাহায্য আসেএই সাহায্যের একটা নির্দিষ্ট সময় আছেকিন্তু মানুষ স্বভাবতই তাড়াহুড়া প্রবণ বলে কখনো কখনো সে অকল্যাণকর জিনিসকেও ভালো মনে করে দাবি করতে থাকেতার এটা খেয়ালই হয় না যে,আল্লাহ তাআলার প্রত্যেকটি কাজই তার নিজস্ব সময়ের জন্য নির্ধারিতদিন-রাতের আবর্তনের বিষয়টির প্রতিই লক্ষ করো :এর ভেতর আল্লাহ তাআলার কতবড় নিদর্শন রয়েছে এবং একটি বাঁধা-ধরা নিয়ম অনুযায়ী কিরুপ একের পর এক দিন-রাত ঘুরে আসছেঅতীত ইতিহাস লক্ষ করে দেখঃ নূহ(আ:) এর পর থেকে এ পর্যন্ত কত জাতিকে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছেবস্তত আল্লাহ তার বান্দাদের অবস্থা পুরাপুরি অবগত রয়েছেনতিনি প্রত্যেকের কৃত কর্ম অনুযায়ী প্রতিফল দিয়ে থাকেনসুতরাং মক্কার কাফিরদেরও জানা উচিত যে, তারা প্রথম আল্লাহর রাসূলের দাওয়াতের মুকাবেলায় যে ভূমিকা গ্রহণ করবে, তার পরিপ্রেক্ষিতেই তাদের সঙ্গে ব্যবহার করা হবেআর চূড়ান্ত ফয়সালার সময় এখন খুবই নিকটবর্তী

ইসলামী সমাজের বুনিয়াদ

এবার মুসলমানদের জীবন থেকে দুঃখ-রজনীর অবসান ঘটায় এবং ইসলামী নীতির ভিত্তিতে পূর্ণাঙ্গ একটি সমাজ গঠিত হবার সময় ঘনিয়ে এলোমিরাজের ঘটনা থেকে এই ইসলামী সমাজের বুনিয়াদী নীতিসমূহও উপহার পাওয়া গেলযে নীতিসমূহ ভবিষ্যতে ইসলামী জীবন পদ্ধতির জন্যে নির্দেশক নীতিমালা হিসেবে কাজ করবে, তার সংক্ষিপ্ত সার হচ্ছে :

১.আল্লাহর সাথে আর কাউকে প্রভু ও মাবুদ বানানো যাবেনাইবাদত-বন্দেগী, আনুগত্য ও আজ্ঞানুবর্তিতাও তার সাথে কাউকে শরীক করা চলবে না

২.পিতামাতা কে সম্মান এবং তাদের আনুগত্য করে চলতে হবেকোথাও তাদের আনুগত্য খোদার আনুগত্যের প্রতিকূল হলে সেখানে তাদের আনুগত্য বর্জন করতে হবে

৩.আত্মীয়-কুটুম্ব,মিসকীন ও মুসাফিরদের হক আদায় করতে হবেসমাজের নাগরিকদের পরস্পরের ওপর যে অধিকার রয়েছে, তার প্রতি উপেক্ষা বা ঔদাসিন্য দেখানো যাবে নাসমস্ত অধিকার সঠিক ভাবে আদায় করতে হবেনচেত কোন সামাজিক ব্যবস্থা শোধরানো যেতে পারে না

৪. অপব্যয় ও অপচয় করা যাবে না;কেননা খোদার দেয়া সম্পদকে অনর্থক ব্যয় করা শয়তানের কাজ যে সমাজের লোকেরা নির্বিচারে অর্থ ব্যয় করে অর্থের মায়ায় সম্পূর্ণরুপে হাত গুটিয়ে বসে ,তা কখনো সুস্থ বা সমৃদ্ধ হতে পারে নাঅর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রে মধ্যম পন্থা অবলম্বন করতে হবে

৫.দারিদ্র্য ও অনটনের ভয়ে সন্তান হত্যা করো না; কেননা জীবিকার ব্যবস্থা করা খোদার কাজ এবং তিনি তার ইন্তেজাম করেই থাকেনকাজেই খাদ্যাভাবের আশংকায় ভবিষ্যত বংশধর ধ্বংস করো নাএটা অত্যন্ত গুনাহর কাজ এবং সামাজিক আত্মহত্যার নামান্তর

৬.ব্যভিচারের নিকটবর্তী হয়ো নাএই নোংরা কাজটি থেকে শুধু বেঁচে থাকাই নয় , বরং এই ঘৃন্য কাজে উসাহজনক প্রত্যেকটি তপরতায় খতম করে দাওযে সমাজ এই লানত থেকে মুক্ত না হবে, সে নিজেই নিজের মূলোচ্ছেদ করবে এবং শীগগীরই ধ্বংসের মুখে নিক্ষিপ্ত হবে

৭.অন্যায় ভাবে কাউকে হত্যা করো নাযে সমাজে লোকদের জীবন-প্রাণ নিরাপদ নয়, তা কখনো সমৃদ্ধ হতে পারে নাশান্তিপূর্ণ অবস্থা ছাড়া কোন সমাজেরই উন্নতি লাভ করা সম্ভব নয়কাজেই সর্বপ্রথম জান-মালের নিরাপত্তা বিধান করা আবশ্যক

৮.ইয়াতিমের সঙ্গে সদ্ব্যবহার করোঅক্ষম, দুর্বল, অসহায় লোকদের সাহায্য করোযে সমাজে দুর্বল ও অক্ষম লোকদের অধিকার সংরক্ষণ না করা হবে, তা কখনো প্রগতি অর্জন করতে পারবে না

৯.আপন অঙ্গিকার পূর্ণ করোকারণ অঙ্গীকার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবেঅঙ্গীকার বলতে লোকদের পারস্পরিক চুক্তি ও প্রতিশ্রুতি যেমন বুঝায়, তেমনি ঈমান আনার সময় খোদার সাথে মুমিন বান্দাহর কৃত ওয়াদাকে বুঝায়

১০. ওজন ও মাপ-জোখের সময় দাঁড়িপাল্লা ও মাপকাঠি ঠিক রেখোলেন-দেনের ব্যাপারে সততা ও ন্যায়পরায়ণতা বজায় রাখা এবং পরের অধিকার সংরক্ষণ করা সমাজের শান্তি ও শৃঙ্খলার জন্যে অতীব প্রয়োজনযেখানে লোকদের পরস্পরের প্রতি আস্থা না থাকবে এবং সাধারণভাবে লোকেরা পরের হক মেরে খাবার ফিকিরে থাকবে, সেখানে কোন সুস্থ সামাজিক পরিবেশ গড়ে

হিজরত

হিজরত শব্দের সাধারণ অর্থ হচ্ছে পরিত্যাগ কিংবা পরিবর্জন কিন্তু ইসলামী পরিভাষায় হিজরত বলতে বুঝায় : দ্বীন ইসলামের খাতিরে নিজের দেশ ছেড়ে এমন স্থানে গমন করা যেখানে প্রয়োজন সমূহ পূর্ণ হতে পারেকারণ ইসলামী জীবন যাপন করার এবং আল্লাহর দ্বীনের দিকে আহ্বান জানানোর আজাদী যে দেশে নেই, সে দেশকে শুধু আয়-উপার্জন ,ঘর-বাড়ি ,ধন-সম্পত্তি কিংবা আত্মীয়-স্বজনের খাতিরে আঁকড়ে থাকা মুসলমানদের পক্ষে আদৌ জায়েয নয়

প্রসঙ্গত একটি কথা জেনে রাখা দরকার যে,আল্লাহর দ্বীনের প্রতি ঈমান পোষণকারীর পক্ষে কোনো কুফরী রাষ্ট্র ব্যবস্থার অধীনে জীবন যাপন করা কেবল দুটি অবস্থায়ই সঙ্গত হতে পারেএকঃ সংশ্লিষ্ট দেশে ইসলামের কতৃত্ব প্রতিষ্ঠা এবং কুফরী ব্যবস্থাকে ইসলামী ব্যবস্থায় রুপান্তরিত করার জন্যে সে ক্রমাগত চেষ্টা-সাধনা করতে থাকবে - এ যাবত মক্কায় থেকে মুসলমানেরা যেরূপ চেষ্টা-সাধনা করে আসছিল এবং সে জন্যে সর্বপ্রকার দুঃখ-মুসিবত সহ্য করেছিলদুই :সংশ্লিষ্ট দেশ থেকে তার বেরোবার কোন পথ যদি সত্যই না থাকে কিংবা ইসলামী ধারায় জীবন যাপন ও ইসলামী ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার নিমিত্ত চেষ্টা-সাধনা করার উপযোগী কোন জায়গা যদি সে খুঁজে না পায়কিন্তু দ্বীনের প্রয়োজন পূর্ণ হবার উপযোগী জায়গা যখনি পাওয়া যাবে - এবার মদিনা থেকে যেমন প্রত্যাশা করা গিয়েছিল - তখন অবশ্যই তাদের হিজরত করে সেখানে চলে যেতে হবেতবে এক্ষেত্রে যারা নিতান্তই অক্ষম ও পঙ্গু এবং যারা অসুস্থতা কিংবা দারিদ্র্যের কারণে কোন প্রকারেই হিজরতের জন্যে সফর করতে সক্ষম নয়, কেবল তারাই ক্ষমা পাবার যোগ্য

মদিনায় সাধারণ মুসলমানদের হিজরত

মদিনায় ইতোমধ্যেই ইসলাম বেশ কিছুটা প্রচারিত হয়েছিলএই অবস্থায় মক্কায় যে সব মুসলমান কাফিরদের হাতে পীড়িত হচ্ছিল, হযরত(সা:) তাদেরকে মদিনায় হিজরত করার নির্দেশ দিলেনএটা টের পেয়েই কাফিররা মুসলমানদেরকে বিরত রাখার জন্যে জুলুমের মাত্রা আরো বাড়িয়ে দিল এবং যাতে মুঠো থেকে বেরিয়ে যেতে না পারে, সে জন্যে সর্বোত ভাবে চেষ্টা করতে লাগলোকিন্তু মুসলমানেরা তাদের ধন প্রাণ ও সন্তান-সন্ততির জীবন বিপন্ন করেও নিছক দ্বীনের খাতিরে দেশ ত্যাগ করাকেই পছন্দ করলোকোন প্রলোভন বা ভয়-ভীতিই তাদেরকে এই সংকল্প থেকে বিরত রাখতে পারলো নাক্রমান্বয়ে বহু সাহাবী মদিনায় চলে গেলেনএখন হযরত(সা:)এর সঙ্গে থেকে গেলেন শুধু হযরত আবু বকর(রা:) এবং হযরত আলী(রা:)আর থাকলো দারিদ্র্য ও শারীরিক অক্ষমতা হেতু সফর করতে অসমর্থ এমন কিছূ সংখ্যক মুসলমান

হযরত (সা:) কে হত্যা করার সলা-পরামর্শ

এভাবে নবুয়্যাতের ত্রয়োদশ বছরের সুচনা পর্যন্ত বহূ সাহাবী মদীনায় হিজরত করলেনকুরাইশরা দেখতে পেল মুসলমানরা একে একে মদীনায় গিয়ে শক্তি সঞ্চয় করছে এবং সেখানে ইসলাম ক্রমশ প্রসার লাভ করছেএর ফলে তারা অত্যন্ত শংকিত হয়ে উঠলো এবং ইসলামকে চিরতরে খতম করে ফেলার পন্থা সর্ম্পকে চিন্তা-ভাবনা করলে লাগলোসাধারন জাতীয় সমস্যাবলী সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা ও সলা-পরামর্শ করার জন্যেদারুন্নদ্‌ওয়ানামে তাদের একটি জায়গা নির্দিষ্ট ছিলোসেখানে প্রত্যেক গোত্রের প্রধান ব্যক্তিগণ জমায়েত হলো এবং এই আন্দোলনকে পর্যুদস্ত করার জন্যে কি পন্থা অবলম্বন করা যায়, সে সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা শুরু করলোকেউ কেউ পরামর্শ দিলো : মুহাম্মদ (সাঃ)-কে শৃংখলিত করে কোন ঘরের মধ্যে বন্দী করে রাখা উচিতকিন্তু কেউ কেউ মত প্রকাশ করলো যে, মুহাম্মদ (সাঃ) - এর সঙ্গী-সাথীগণ হয়তো আমাদের কাছ থেকে তাঁকে ছিনিয়ে নিয়ে যাবে এবং তার ফলে আমাদের পরাজয়ও ঘটতে পারে; এজন্যে উক্ত পরামর্শ প্রত্যাখ্যান করা হলোকেউ কেউ আবার পরামর্শ দিলো যে, তাঁকে নির্বাসিত করা উচিতকিন্তু মুহাম্মদ (সাঃ) যেখানে যাবেন সেখানেই তাঁর অনুগামী বাড়তে থাকবে এবং তাঁর আন্দোলনও যথারীতি সামনে অগ্রসর হবে; এ আশংকায় উক্ত পরামর্শও নাকচ করা হলোঅবশেষে আবু জেহেল পরামর্শ দিলো : প্রত্যেক গোত্র থেকে একজন করে যুবক মনোনীত করা হবে; এরা সবাই এক সঙ্গে মুহাম্মদ (সাঃ)-এর ওপর হামলা করবে এবং তাঁকে হত্যা করে ফেলবেএর ফলে তাঁর রক্ত সকল গোত্রের মধ্যে বিভক্ত হয়ে যাবেআর সমস্ত গোত্রের সঙ্গে একাকী লাড়াই করা হাশিমী খান্দানের পক্ষে কিছুতেই সম্ভবপর হবে নাএ অভিমতটি সবাই পছন্দ করলো এবং শেষ পর্যন্ত এ কাজের জন্যে একটি রাত ও নির্দিষ্ট করা হলোসিদ্ধান্ত করা হলো যে নির্দিষ্ট রাতে মনোনীত ব্যক্তিগণ হযরত (সা:) এর বাসভবন ঘেরাও করে থাকবেভোরে তিনি যখন বাইরে বেরোবেন ,তখন তারা আপন কর্তব্য সমাধা করবেএরুপ সিদ্ধান্ত গ্রহণের কারণ এই যে, আরবরা রাতের বেলায় অন্য কারো ঘরে প্রবেশ করাকে পছন্দ করতো না

কিন্তু আল্লাহ তাআলার কৃপায় দুশমনদের ঐসব গোপন অভিসন্ধির কথা হযরত (সা:) এর কাছে যথারীতি পৌঁছতে থাকেঅতঃপর সেই প্রতিক্ষিত সময়টি এলো,যখন তিনি মক্কা ছেড়ে মদিনায় গমন করার জন্যে ওহী যোগে নির্দেশ পেলেনএই পরিপ্রেক্ষিতে হিজরতের দুদিন আগে থেকেই তিনি আবু বকর সিদ্দিক (রা:) এর সঙ্গে এ সম্পর্কে পরামর্শ করেন এবং এই মর্মে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন যে, তার সাথে হযরত আবু বকর(রা:) ও গমন করবেনসফরের জন্যে দুটি উষ্ট্রী ঠিক করা হলো এবং কিছু পাথেয়ও তৈরি করা হলো

মক্কা থেকে রওয়ানা

কাফির কুরাইশগণ হযরত(সা:) কে হত্যা করার জন্যে যে রাতটি নির্দিষ্ট করেছিল, সেই রাতেই তিনি আলী(রা:) কে ডেকে বললেন :আমি হিজরতের নির্দেশ পেয়েছি এবং আজ রাতেই মদিনা রওয়ানা হয়ে যাচ্ছি আমার কাছে বহু লোকের আমানত জমা রয়েছেএগুলো তুমি প্রত্যুষে লোকদের কাছে প্রত্যার্পণ করে দিয়োআর আজ রাতে তুমি আমার বিছানায় থেকো,যেন আমি ঘরে আছি ভেবে লোকেরা নিশ্চিন্ত থাকে

কুরাইশরা ইসলাম বৈরিতার কারণে হযরত(সা:) এর রক্তের নেশায় উন্মাদ হয়ে উঠেছিল; কিন্তু এ অবস্থায়ও তারা হযরত(সা:) কে এতোখানি আমানতদার ও বিশ্বাসভাজন মনে করতো যে, তাদের নিজ নিজ আমানত ও মাল-মাত্তা এনে তার কাছে জমা রাখতো

নির্দিষ্ট রাতে কাফিররা হযরত(সা:) এর গৃহ ঘেরাও করলোরাত যখন গভীর হলো , হযরত(সা:) নিরবে ও নিশ্চিন্তে ঘর থেকে বের হলেন সে সময় তিনি সূরা ইয়াছিনের একটি আয়াত (فَأَغْشَيْنَاهُمْ فَهُمْ لاَ يُبْصِرُونَ) পাঠ করছিলেনতিনি এক মুঠো মাটি হাতে নিয়ে শাহাতিল ওজুহ ’(মুখমন্ডল আচ্ছন্ন হয়ে যাক) কথাটি বলে কাফিরদের দিকে ছুঁড়ে মারলেন এবং তাদের ব্যূহ ভেদ করে নিবিঘ্নে বেরিয়ে গেলেনসে সময় আল্লাহর কুদরতে অবরোধকারি গণ যেন তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়েছিলো; ফলে তারা হযরত(সা:) কে বেরিয়ে যেতে দেখতে পেলো নাপ্রথমে তিনি হযরত আবু বকর (রা:) এর গৃহে গমন করলেনএবং সেখান থেকে তাকে নিয়ে মক্কার বাইরে গিয়ে সওর পর্বত গুহায় আশ্রয় নিলেন

ভোরবেলা কাফিরগণ দেখতে পেলো, হযরত (স) মক্কা ছেড়ে চলে গেছেনতারা অত্যন্ত চিন্তিত হয়ে পড়লো এবং তাঁর সন্ধানে চারদিকে ছুটাছুটি শুরু করলোএকবার তারা খুঁজতে খুঁজতেসওরর্পবত তাদের পদধ্বনি শুনে হযরত আবু বকর (রা) কিছুটা বিচলিতও হয়ে উঠলেনতার কারণ,তার নিজের জীবন সম্পর্কে তার কোন ভয় ছিল না;বরং হযরত(সা:)- এর ওপর না জানি কোন বিপদ এসে যায় এই ছিল তার আশংকা তার এই অস্থিরতা লক্ষ্য করে হযরত(স)অত্যন্ত প্রশান্ত চিত্তে বললেনঃলা তাহযান ইন্নাল্লাহা মাআনা’ - ঘাবড়িও না,আল্লাহ আমাদের সঙ্গে রয়েছেনকার্যত তা-ই হলো

আল্লাহ তাআলার অনুগ্রহে গুহামুখে এমন কতকগুলো নিদর্শন ফুটে উঠলে যে, তা দেখে কাফিররা বিভ্রান্ত হয়ে পড়লোতাদের মনে ধারণা জন্মালো যে , এ গুহার ভেতরে কেউ প্রবেশ করে নি

হযরত আবু বকর(রা:)-এর পুত্র হযরত আব্দুল্লাহ তখন বয়সে নবীনতিনি রাতের বেলায় হযরত(সা:) ও সিদ্দিক (রা:)-এর কাছে থাকতেন এবং ভোরে মক্কায় এসে কাফিরদের শলা-পরামর্শ সম্পর্কে খোঁজ-খবর নিয়ে গুহায় ফিরে গিয়ে বুজর্গদ্বয়কে অবহিত করতেনকয়েক রাত যাবত হযরত আবু বকর(রা:)-এর গোলাম বকরীর দুধ নিয়ে যেত, কখনো বা ঘর থেকে কিছু খাবার নিয়ে পৌঁছতোএভাবে তিন রাত পর্যন্ত হযরত(সা:) ও সিদ্দিক(রা:) সেখানে অবস্থান করলেন

চতুর্থ দিন হযরত(সা:) সওর পর্বত গুহা থেকে বেরোলেন এবং পুরো এক রাত এক দিন তারা সমানে পথ চললেনসফরের জন্যে আবু বকর(রা:) আগে থেকেই দুটি উষ্ট্রী ঠিক করে রেখেছিলেনপথ বাতলানোর জন্যে একশো জানাশোনা লোকও নির্দিষ্ট করে রেখেছিলেনপরদিন দুপুর বেলা রোদের তেজ প্রখর হয়ে উঠলে বিশ্রামের জন্যে একটি বৃহদাকার পাথরের ছায়ায় তারা কিছুক্ষণ অবস্থান করলেনঅদূরেই একটি গোয়ালা ছিল ; তার বকরী থেকে হযরত(সা:) দুধ পান করলেনঅতঃপর সেখান থেকে তিনি আবার যাত্রা শুরু করলেনতিনি সামনে পা বাড়াতেই সোরাকা বিন জাশিম নামক জনৈক্য কুরাইশ হঠা তাকে দেখে ফেললোএই লোকটি পুরস্কারের লোভে হযরত(সা:) এর সন্ধানে বেরিয়েছিলসে হযরত(সা:) কে দেখতে পেয়েই ঘোড়া ছুটিয়ে দিলকিন্তু ঘোড়াটি হোঁচট খেয়ে মাটিতে পড়ে গেলসে আবার নিজেকে সামলে নিল এবং হযরত(সা:) এরওপর হামলাকরার জন্যে তৈরি হলোকিন্তু এবারও সামনে এগুতেই তার ঘোড়া হাঁটু পর্যন্ত মাটিতে বসে গেলএবার সোরাকা শংকিত হয়ে উঠলো এবং বুঝতে পারলোব্যাপারটা মোটেই সুবিধাজনক নয়তার পক্ষে মুহাম্মদ(সা:) এর ওপর হামলা করা কিছুতেই সম্ভবপর নয়সে অত্যন্ত ভীত হয়ে পড়লো এবং হযরত(সা:) এর কাছে আত্মসমার্পণ করে ক্ষমা ভিক্ষা চাইলোহযরত(সা:) তাকে ক্ষমা করে দিলেনএও ছিল হযরত(সা:) এর একটি মুজিযা

মদিনায় শুভাগমন

হযরত(সা:) এর আগমন বার্তা পূর্বেই পৌঁছেছিল গোটা শহরই তার শুভাগমনের জন্যে প্রতিক্ষমান ছিলছোট-বড় সবাই প্রতিদিন সকালে শহরের বাইরে গিয়ে জমায়েত হতো এবং দুপুর পর্যন্ত ইন্তেজার করে ফিরে আসতোঅবশেষে একদিন তাদের সেই প্রতিক্ষিত শুভ মুহূর্তটি এসেই পড়লোদূর থেকে হযরত (সা:) এর আসবার আলামত দেখে গোটা শহরটি তকবীর ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে উঠলোপ্রতিটি প্রতিক্ষাকারী হৃদয় উজার করে তাকে স্বাগত জানালোমদিনা থেকে তিন মাইল দূরে কুবানামক স্থানে আনসারদের অনেকগুলো খান্দান বসবাস করতোএদের মধ্যে আমর ইবনে আওফের খান্দান টি ছিল সবচেয়ে শীর্ষস্থানীয়কুলসুম বিন আল হাদাম ছিলেন এদের প্রধান ব্যক্তিএর পরম সৌভাগ্য যে, দো-জাহানের নেতা সবার আগে এরই আতিথ্য কবুল করেন এবং কুবাই এর গৃহেই অবস্থান করেনহযরত (সা:) এর রওয়ানার তিন দিন পর হযরত আলী(রা:) মক্কা থেকে যাত্রা করেছিলেন ; তিনিও এখানে এসে হযরত (সা:) এর সঙ্গে মিলিত হলেন

কুবায় হযরত (সা:) শুভাগমন করেন নবুয়্যাতের ত্রয়োদশ বছরের ৮ রবিউল আওয়াল (মুতাবেক ২০সেপ্টেম্বর , ৬২২ খ্রিষ্টাব্দ)এখানে অবস্থানকালে তার পয়লা কাজ ছিল একটি মসজিদ নির্মাণ করা তিনি তার পবিত্র হস্ত দ্বারা এইমসজিদের ভিত্তি স্থাপন করেন এবং অন্যসাহাবীদের সঙ্গে নিয়ে এর নির্মানকাজ সম্পূর্ণ করেনকয়েকদিন অবস্থান করে তিনি শহরের দিকে রওয়ানা করলেনদিনটি ছিল শুক্রবার পথে বনী সালেমের মহল্লা পর্যন্ত পৌঁছলে জুহর নামাজের সময় হলোএখানে তিনি সর্বপ্রথম জুমআর খুতবা প্রদান করেন এবং প্রথম বার জুমআর নামাজ পড়ালেন

মদিনায় প্রবেশকালে প্রতিটি আত্মোসর্গী মুসলিমের হৃদয়েই তার মেহমানদারীর সৌভাগ্য লাভের আকাঙ্খা জাগলোতাই প্রত্যেক গোত্রের লোকই তার সামনে এসে আবেদন জানাতে লাগলো :হুযুর, এই হচ্ছে আপনার ঘর, অনুগ্রহ করে এখানে আপনি অবস্থান করুনলোকদের মধ্যে এতখানি আগ্রহ-উদ্দীপনার সঞ্চার হলো যে প্রতিটি হৃদয়ই যেন পথের ফরাশে পরিণত হলো; প্রতিটি হৃদয়ই উসর্গীকৃত হবার জন্যে অস্থির হয়ে উঠলোএমনকি মেয়েরা পর্যন্ত গৃহের ছাদে উঠে গাইতে লাগলোঃ

চন্দ্র উদিত হয়েছে,

বিদা পর্বতের ঘাঁটি থেকে, খোদার শোকর আমাদের কর্তব্য,

যতক্ষণ প্রার্থনাকারীরা প্রার্থনা করে

কিশোরী বালিকারা দফ বাজিয়ে বাজিয়ে গাইতে লাগলোঃ

আমরা নাজ্জার খান্দানের বালিকা ,

(আর) মুহাম্মদ(সা:) আমাদের কত উত্তম পড়োশী! ,

হযরত(সা:) বালিকাদের জিজ্ঞেস করলেন তোমরা কি আমায় ভালোবাস ?তারা বললো ,হ্যাঁতিনি বললেনঃ আমিও তোমাদের ভালোবাসি

মদিনায় অবস্থান

হযরত(সা:) এর মেহমানদারীর সৌভাগ্য কে লাভ করবে? এমন একটি প্রশ্ন যে এর মিমাংসা মোটেই সহজসাধ্য ছিল নাহযরত বললেন যে, আমার উষ্ট্রী যার গৃহের সামনে দাঁড়াবে , এ খেদমত সেই আজ্ঞাম দিবেঘটনাক্রমে এ সৌভাগ্য টুকু হযরত আবু আইয়ুব আনসারী (রা) এর ভাগ্যে পড়লোবর্তমানে যেখানে মসজিদে নববী অবস্থিত , তার নিকটেই ছিল তার গৃহগৃহটি ছিল দ্বিতল বিশিষ্ট তিনি হযরত (সা:) এর থাকবার জন্যে ওপরের তলাটি পেশ করেনকিন্তু লোকদের আসা-যাওয়ার সুবিধার্থে হযরত (সা:) নিচের তলায় থাকা পছন্দ করলেন্‌ হযরত আবু আইয়ুব এবং তার স্ত্রী নিচের তলা ছেড়ে ওপরের তলায় চলে গেলেনএখানে হযরত(সা:) সাত মাস কাল অবস্থান করলেনএরপর তার বসবাসের জন্যে মসজিদে নববীর নিকটে একটি কোঠা নির্মিত হলো এবং সেখানেই তিনি স্থানান-রিত হলেনকয়েক দিনের মধ্যে তার খান্দানের অন্যান্য লোকও মদিনায় চলে এলো

মসজিদে নববীর নির্মাণ

মদিনায় আগমনের পর সবচেয়ে প্রথম ও গুরুত্বপূর্ণ কাজ ছিল একটি মসজিদ নির্মাণ করাহযরত (সা:) যেখানে অবস্থান করছিলেন, তার নিকটেই দুই ইয়াতিমের কিছু অনাবাদী জমি ছিলনগদ মূল্যে তাদের কাছ থেকে এই জমিটি খরিদ করা হলোতারই ওপর মসজিদের নির্মাণ কাজ শুরু হলোএবারও হযরত(সা:) সাধারণ মজুরের ন্যায় সবার সাথে মিলে কাজ করলেনস্বহস্থে তিনি ইট-পাথর বয়ে আনলেনমসজিদটি অত্যন্ত সাদাসাদি ভাবে নির্মিত হলোকাঁচা ইটের দেয়াল, খেজুর গাছের খুঁটি এবং খেজুর পাতার ছাদ - এই ছিল এর উপকরণমসজিদের কিবলা হলো বায়তুল মুকাদ্দিসের দিকেকেননা, তখন পর্যন্ত মুসলমানদের কিবলা ছিল ‌ঐ দিকেঅতঃপর কিবলা কাবামুখী হলে তদনুযায়ী মসজিদের সংস্কার করা হলোমসজিদের একপাশে একটি উঁচু চত্বর নির্মিত হলোএর নাম রাখা হলো সুফফাযে সব নও মুসলিমের কোন বাড়ি-ঘর ছিলো নাএটি ছিল তাদের থাকবার জায়গা

মসজিদের নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হলে তার নিকটেই হযরত (সা:) তার স্ত্রীদের জন্যে কয়েকটি কোঠা তৈরি করে নিলেনএগুলো কাঁচা ইট এবং খেজুর গাছ দ্বারা নির্মিত হলোএই ঘরগুলো ছয়-সাত হাত করে চওড়া এবং দশ হাত করে লম্বা ছিলএর ছাদ এতোটা উঁচু ছিল যে, একজন লোক দাঁড়ালে তা স্পর্শ করতে পারতোদরজায় ঝুলানো ছিল কম্বলের পর্দা

হযরত(সা:) এর গৃহের নিকটে যে সব আনসার বাস করতো, তাদের ভিতরকার স্বচ্ছল লোকেরা তার খেদমতে কখনো তরকারী , কখনো বা অন্য কিছু পাঠাতোএর দ্বারাই তার দিন গুজরান হতো; অর্থা সংকটের ভেতর দিয়েই তার জীবন-যাত্রা নির্বাহ হতো

ভাই ভাই সম্বন্ধ

মক্কা থেকে যে সব মুসলমান ঘর-বাড়ি ত্যাগ করে মদিনায় চলে এসেছিল, তাদের প্রায় সবাই ছিল সহায় সম্বলহীনতাদের মধ্যে যারা স্বচ্ছল ছিল, তারাও নিজেদের মাল-পত্র মক্কা থেকে আনতে পারেন নিতাদের সবকিছু ছেড়ে-ছুঁড়ে একদম রিক্ত হস্তেই আসতে হয়েছিলএই সব মুহাজির যদিও মুসলমানদের (আনসার) মেহমান ছিলো, তথাপি এদের স্থায়ী বসবাসের ব্যবস্থা করার প্রয়োজনীয়তা তীব্রভাবে অনুভূত হচ্ছিল তাছাড়া এরা নিজেরাও স্বহস্থে পরিশ্রম করে জীবিকা নির্বাহ করতে ভালবাসতোতাই মসজিদে নববীর নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হলে একদিন হযরত (সা:) আনসারদের মধ্যে থেকে এক ব্যক্তি এবং মুহাজিরদের ভেতর থেকে এক ব্যক্তিকে ডেকে বললেন, ‘আজ থেকে তোমরা পরস্পর ভাই এভাবে সমস- মুহাজিরকে তিনি আনসারদের ভাই বানিয়ে দিলেনতার ফলেই আল্লাহর এই খাঁটি বান্দাগণ শুধু ভাই-ই নয়, পরস্পরে ভাইয়ের চেয়েও ঘনিষ্ঠ বন্ধুতে পরিণত হলেনআনসারগণ মুহাজিরদেরকে নিজ নিজ বাড়িতে নিয়ে গেল এবং তাদের সামনে নিজেদের সমস্ত সম্পত্তি ও সামান-পত্রের হিসাব করে বললো : এর অর্ধেক তোমাদের আর অর্ধেক আমাদেরএভাবে বাগানের ফল, ঘরের সামান, বাসগৃহ, সম্পত্তি - মোটকথা, প্রতিটি জিনিসই সহোদর ভাইদের মতো বিভক্ত হলোফলে আশ্রয়হীন মুহাজিরগণ সব দিক থেকে নিশ্চিন্ত হলোতারা যথারীতি ব্যবসা-বাণিজ্য শুরু করলো, দোকান-পাট খুললো এবং অন্যান্য কাজে নিযুক্ত হলোএভাবে মুহাজির পুনর্বাসনের কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পাদিত হলো এবং এদিক দিয়ে সবাই নিশ্চিন্ত হলো

নবপর্যায়ে ইসলামী আন্দোলন

হিজরতের আগে ইসলামের দাওয়াত পেশ করা হচ্ছিল মক্কার মুশরিকদের কাছেতাদের কাছে এটা ছিল একটি অভিনব জিনিসকিন্তু হিজরতের পর সমস্যা দেখা দিল মদিনার ইহুদীদের নিয়েএরা তাওহীদ, রিসালাত, আখিরাত, ফেরেশতা, ওহী ইত্যাদি বিশ্বাস করতো এবং একজন পয়গম্বরের (হযরত মূসার ) উম্মত হিসাবে খোদার তরফ থেকে আগত একটি শরীয়াতের অনুগামী হবারও দাবিদার ছিলনীতিগত ভাবে হযরত মুহাম্মদ (সা:) যে দ্বীন-ইসলামের দিকে আহ্বান জানাচ্ছিলেন, তাদেরও প্রকৃত দ্বীন ছিল তা-ইকিন্তু শতাব্দী কালের অনাচার ও বেপরোয়া আচরণের ফলে তাদের ভেতর নানারকমের দোষ-ত্রুটি দেখা দিয়েছিল তাদের জীবন প্রকৃত খোদায়ী শরীয়ত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল এবং তাদের ভেতর অসংখ্য কুসংস্কার , বিদয়াত ,ও কুপ্রথার অনুপ্রবেশ ঘটেছিল তাদের কাছে তওরাত কিতাব ছিল বটে, কিন্তু তার মধ্যে তারা বহু মানবীয় কালাম শামিল করে নিয়েছিলতবুও তার মধ্যে খোদায়ী বিধি-বিধান যা কিছু বাকী ছিল , তাও মনগড়া ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের ছাঁচে ফেলে তারা ওলট-পালট করে দিয়েছিলএভাবে খোদার দ্বীনের সাথে তাদের সম্পর্ক অত্যন্ত দুর্বল হয়ে পড়েছিলসামাজিক দিক দিয়ে তাদের ভেতর মারাত্মক সব দোষ-ত্রুটি শিকড় গেড়ে বসেছিলআল্লাহর কোন বান্দাহ যদি তাদেরকে সঠিক পথ দেখাতে চাইতো, তার কোন কথা পর্যন্ত তারা শুনতে প্রস্তুত ছিল নাবরং তাকে তারা ঘোরতর দুশমন বলে মনে করতো এবং তার কণ্ঠকে স্তব্ধ করে দেওয়ার জন্যে সর্বোতভাবে চেষ্টা চালাতোযদিও তারা মিলগতভাবে মুসলিমই ছিল, তবুও তাদের এতখানি পতন ঘটেছিল যে, তাদের আসল দ্বীন কি ছিল , তা তাদের নিজেদেরই স্মরণ ছিল না

এদিক দিয়ে ইসলামী আন্দোলনের সামনে শুধু দ্বীন-ইসলামের মূলনীতি সংক্রান্ত বুনিয়াদী প্রচারের কাজই ছিলনা, বরং ঐসব বিভ্রান্ত মুসলমানের ভেতর পুনরায় দ্বীনি ভাবাদর্শ জাগ্রত করার দায়িত্বও বর্তমান ছিলতাছাড়া হযরত (সা:) এর আগমনের পর মুসলমানেরা ক্রমান্বয়ে চারদিক থেকে এসে মদিনায় জমায়েত হচ্ছিল এবং এই সব মুহাজির ও মদিনার আনসার গণ মিলে একটি ক্ষুদ্রাকৃতির ইসলামী রাষ্ট্রেরও ভিত্তি পত্তন করেছিল৩৭ এ কারণে আন্দোলনকে এ যাবত শুধু আদর্শ প্রচার, আকীদা-বিশ্বাসের সংস্কারে এবং কিছু নৈতিক শিক্ষা সংক্রান্ত নির্দেশ প্রদান করতে হলেও, এখন সামাজিক জবিনধারার সংস্কার, প্রশাসনিক আইন-কানুন প্রণয়ন এবং পারস্পরিক সম্পর্ক-সম্বন্ধ বিষয়ক বিধি-ব্যবস্থা জারির প্রয়োজন দেখা দিলোসুতরাং এবার এদিকে পুরোপুরি মনোযোগ দেয়া হলো

এ সময় আরো একটি বিরাট পরিবর্তন সাধিত হলোএই পর্যন্ত কুফরী পরিবেশেই ইসলামী দাওয়াত পেশ করা হচ্চিলো এবং এরই ভেতর থেকে মুসলমানরা কাফিরদের জুলুম-পীড়ন বরদাশত করছিরোকিন্তু এবার তারা ক্ষুদ্রাকৃতির হলেও একটি স্বাধীন রাষ্ট্র লাভ করলো যা চারদিকে দিয়েই ছিলো কাফিরদের দুর্গ দ্বারা পরিবেষ্টিততাই ব্যাপারটি এখন আর শুধু উপীড়ন আর হয়রানির মধ্যেই সীমাবদ্ধ রইলো না, বরং গোটা আরব উপদ্বীপই এবার সংকল্পগ্রহণ করলো যে, এই নগন্য দলটিকে যতো শীঘ্র সম্ভব খতম করে দিতে হবে; নচে ইসলামের এই কেন্দ্রটি শক্তি অর্জন করতে শুরু করলে তাদের জন্যে দাঁড়াবার স্থান পর্যন্ত থাকবে নাতাই নিজেদের এবং আন্দোলনের নিরাপত্তার তাগিদে এই নয়া ইসলামী দলের সামনে জরুরী কর্তব্য হয়ে দেখা দিলো :

১. পূর্ণ উসাহ-উদ্দীপনার সাথে জিদের আদর্শ প্রচার করা, দলিল প্রমাণ দ্বারা তার সত্যতা প্রতিপন্ন করা এবং যতো বেশি সম্ভব লোকদেরকে এর সমর্থক বানানোর চেষ্টা করা;

২. বিরুদ্ধবাদীগণ যে সব আকীদা-বিশ্বাসকে আঁকড়ে ধরেছিলো, যুক্তি-প্রমাণের সাহায্যে তার অসারতা প্রমাণ করা, যেনো বিবেকের আলোয় কেউ কিছু বুঝতে চাইলে প্রকৃত সত্য পর্যন্ত পৌঁছতে তাকে কোনো বেগ পেতে না হয়:

৩. ঘরবাড়ি ও ব্যবসায়-বাণিজ্য নষ্ট করে যারা এই নতুন রাষ্ট্রে এসে আশ্রয় গ্রহণ করেছে, তাদের জন্যে শুধু বসবাসের ব্যবস্থাই নয়, বরং তাদেরকে উন্নত মানের নৈতিক ও ঈমানী শিক্ষা দান করা, যেনো চরম দুঃখ-দারিদ্র্য এবং অনিশ্চয়তার মধ্যেও তারা পূর্ণ ধৈর্যের সাথে পরিস্থিতির মুকাবিলা করতে পারে এবং কোনো কঠিনতর অবস্থায়ও তাদের পা কেঁপে না ওঠে;

৪. মুসলমানদেরকে চরম প্রতিকূল অবস্থার মুকাবিলার জন্যে প্রস্তুত করা, যাতে করে তাদের নিশ্চিহ্ন করার উদ্দেশ্যে বিরুদ্ধবাদীগণ কোনো সশস্ত্র হামলা চালালে নিজেদের দুর্বলতা ও অস্ত্রপাতির দৈন্য সত্ত্বেও তারা পূর্ণ দৃঢ়তার সাথে শত্রুর মুকাবিলা করতে পারে এবং আপন লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের সত্যতা সম্পর্কে গভীরতর প্রায় ও খোদার প্রতি ঐকান্তিক নির্ভরতার কারণে ময়দান থেকে কখনো পশ্চাদপসারণ না করে;

৫. যে সব লোক নানাভাবে বুঝানো সত্ত্বেও ইসলামের কাঙ্খিত জীবন পদ্ধতির প্রতিষ্ঠার পথে বাদ সাধবে, তাদেরকে প্রয়োজন হলে শক্তি প্রয়োগ করে ময়দান থেকে তাড়িয়ে দেয়ার জন্যে আন্দোলনের অনুবর্র্তীদের মধ্যে পূর্ণ হিম্মত ও স সাহস পয়দা করা